তুলনা করা আর তুলনা বুঝতে পারা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রসেসেরই একটা অংশ। মনে আছে ছোটবেলায় আমরা নানান টপিকের মাঝে পার্থক্য পড়তাম?
আপাততভাবে মনে হতে পারে, ১৯৭১ এর সম্মানিত শহীদেরা, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা, পেট্রোল বোমায় নিহতরা, খুন হওয়া লেখকেরা চারটি ভিন্ন প্রসংগ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে তুলনা করা যায় কোন পয়েন্টে? ঠিক কোন ব্যাপারে এই চার প্রসংগ মিউচুয়াল্লি কনক্লুসিভ?
সেই পয়েন্টটা হচ্ছে এইসব মৃত্যুতে জাতীয় জীবনে কার কতটুকু প্রভাব। কোনও শ্রমই অসম্মনের না। তারপরও একজন রিকশাওয়ালার সাথে মুহম্মদ জাফর ইকবালের পার্থক্য কোথায়? পার্থক্য হচ্ছে অবদানে। একজন জাফর ইকবাল জাতীয় জীবনে ও সভ্যতায় যে অবদানটুকু রাখতে পারেন সেটা একজন রিকশাওয়ালা পারেননা। একজন কার্ল মার্ক্স যে অবদান রেখেছেন সেটা একজন শ্রমিক রাখতে পারেন না।
এই হিসেবেই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সাথে জড়িতরা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এবং তাদের মৃত্যুও তাই বেশী ক্ষতিকর। মনে রাখতে হবে, পশুর সাথে আমাদের পার্থক্য এই বুদ্ধির চর্চাতেই।
একজন মানুষ মায়ের পেট থেকে পড়েই যোগ্য হয়ে উঠে না। অনেক অনেক পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের পরেই তারা সেই অবস্থানটা অর্জন করেন। তখন তারা ঠিক ব্যক্তি পর্যায়েই থাকেন না, নিজেরাই এক একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হন। জাফর ইকবাল তেমনি একজন প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১০ টা বই লিখে ফেলা অভিজিৎ নিজেও তাঁর লেখা ও কর্ম দ্বারা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন।
একজন হুমায়ূন আজাদ হারানোর ক্ষতি আমাদের দেশ এখনও পূরণ করতে পারেনি। আজাদ তো পরে, হুমায়ূন আহমদের শূন্যস্থান কি পূরণ হয়েছে? ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবীরদের হারানোর ক্ষতি জাতি এখনও পূরণ করতে পারেনি বলেই মনে করি।
প্রতিটা মানুষের মৃত্যুই দুঃখের। একজন রিকশাওয়ালা মরলেও তাঁর পরিবার কষ্ট পাবে, আবার জাফর ইকবাল মরলে তাঁর পরিবারও কষ্ট পাবে। যার যার পরিবারের কষ্ট তার তার। কিন্তু জাফর ইকবাল মারা গেলে ক্ষতিটা জাতীয়। এই দিক থেকেই মৃত্যুগুলোর মেরিট আলাদা। বঙ্গবন্ধু মরেছেন আজ ৪০ বছর অথচ বাংলাদেশের রাজনীতি এখনও তাকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর মেরিট কতখানি।
অন্যান্য পেশাজীবীদের তুলনায় লেখকদের গুরুত্ব এখানেই। এইটা জানে বলেই জংগীরা সবার আগে লেখকদের মারছে। জাতিকে মেধাশূণ্য করতে পারলে বাকিদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবেনা।
একশ্রেণীর দলকানা আওয়ামীলিগার পরিস্থিতির গুরুত্ব ঢাকতেই লেখকদের মৃত্যুকে অন্য মৃত্যুগুলোর সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু অন্য মৃত্যুগুলোর চাইতে এই খুনগুলো বেশী কষ্টের, বেশী ক্ষতির।
-আহমদ রনি
মন্তব্য
"জাতিকে মেধাশূণ্য করতে পারলে বাকিদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবেনা।" -
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মৃত্যু বনাম মৃত্যুর তুলনা গণতান্ত্রিক হয় না। তবে বিবিধ 'হত্যা'-র ইমপ্যাক্ট তুলনাযোগ্য।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যে কোন গুণী ব্যক্তির মৃত্যু একটা প্রতিষ্ঠানের মৃত্যুর মতো। একেকজন লেখক একেকটা প্রতিষ্ঠান। সুতরাং যত বড় লেখক মারা যাবেন তত বড় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হবে। সাধারণ মানুষদের তুলনায় প্রতিষ্ঠানের মৃত্যুর আপেক্ষিক গুরত্ব তো অবশ্যই বেশী হবে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
লেখার মূল সুরের সাথে একমত।
কিন্তু লেখাটা আরেকটু বিশদ হওয়া উচিত ছিল।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
, আমি নিজের মনে দেশে মৃত্যুর মিছিল নিয়ে ভাবলে এই কথাটাই ভাবি ঘুরে ফিরে। আমার নিজের মরে যাওয়ার থেকে একজন সৎ লেখকের মরে যাওয়া দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতি...
দেবদ্যুতি
নতুন মন্তব্য করুন