মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যে অত্যাচার চলছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিজের দেশের মানুষের উপর এরকম অত্যাচার যারা করতে পারে তারা হিন্দু- মুসলমান- বৌদ্ধ যাই হোক মানুষ নয়। কিন্তু এইরকম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে, অপ্রাসঙ্গিক ফটো শেয়ার করে যারা অন্যান্য দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তারা এদের চেয়েও ঘৃণ্য! আপনারা পরোক্ষভাবে মূল ঘটনাগুলোর গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছেন কিনা কখনো ভেবেছেন!
এই প্রসঙ্গে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। তুমি যখন মায়ানমারের মানূষগুলোর কথা বলো তখন তাদের পরিচয় দাও রোহিঙ্গা মুসলমান হিসেবে। তাদের জন্য সাহায্যের আবেদন করো, ফটো শেয়ার করো মুসলমানদের উপর নির্যাতন হচ্ছে বলে। কেনো তাদের মানুষ বলো না! কেনো মানুষ হিসেবে মানবিকতা প্রার্থনা করো না তাদের জন্য! মুসলমান ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের মানুষের কি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত নয়! আর তোমার প্রতিবাদের ধরণ এমন কেনো- নিজের দেশের সকল বৌদ্ধদের মেরে ফেলার কথা বলো! ভারতের কোথাও একজন অচেনা মুসলমানের উপর আঘাত এলে তুমি কেনো তোমার চিরচেনা সেই হিন্দু বন্ধুটিকে জবাই করো! কেনো ভাবো না ভারতেও যেমন তোমার হাতেও তেমন মানবতার মৃত্যু হলো! দু'জনের পার্থক্য রইলো কোথায়! কেনো চোখের সামনে দুর্বলের উপর অত্যাচার দেখেও চুপ থাকো! তারা নাহয় মুসলমান নয়, তাই বলে কি মানুষও নয়!!! রামুতে ভিত্তিহীন অভিযোগে যখন বৌদ্ধপল্লী জ্বালিয়ে দেয়া হয় তখন কি করে তুমি খুশি হও! মানুষের কষ্ট কেনো দ্যাখো না, শুধু মুসলমানের কষ্ট কেনো দ্যাখো! সৌদি আরব যখন ইয়েমেনে নিরীহ মানুষের উপর বোমা হামলা করে তখন তুমি প্রতিবাদ করো না কেনো! পাকিস্তানে স্কুলে বোমা মেরে নিষ্পাপ শিশুদের যখন হত্যা করা হয় তখন কোনো ফটো শেয়ার করো না কেনো!
করো না কারণ তুমি- তোমরা সবাই ধর্মীয় উন্মাদ। আর তোমাদের এই উন্মাদনা দিন দিন বাড়বে, ধরনী বুকও মানুষের রক্তে রঞ্জিত হতেই থাকবে। মানুষের পরিচয়টা শুধু ভিন্ন হবে- কোথাও হিন্দু, কোথাও মুসলমান, কোথাও ইহুদি, কোথাও খৃস্টান। তোমরা একজন হিন্দুর মৃত্যু দেখবে, একজন মুসলমানের মৃত্যু দেখবে কিন্তু মানবতার- মানুষের মৃত্যুটা দেখবে না...
আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা মানুষ, ধর্মটা আমদের পরিচয় নয়- কিছু নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ যেগুলো সব ধর্মেই প্রায় এক। আর একটা মানুষের জন্য ধর্ম- বর্ণ- জাতি পরিচয় বাদ দিয়ে অন্য একটা মানুষের সহানুভূতিশীল হওয়াই মানবিকতা। আর সহানুভূতিশীল হওয়া যায় আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে, যা প্রতিরোধের ক্ষমতা মানুষের খুব সামান্যই আছে। কিন্তু এই ধরণের ঘটনায় যেটা করতে হবে সেটা হলো প্রতিবাদ, যে যার অবস্থান থেকে সাধ্যমতো। অত্যাচার-নির্যাতন আর আসুরিক প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে একজন মানুষের প্রতিবাদ। তাই মুসলমান হিসেবে শুধু সহানুভুতি, লাইক, শেয়ার না চেয়ে সকলকে মানুষ হিসেবে প্রতিবাদ করার দাবি জানান।
এরকম কিছু একটা দেখতে চাই...
মানবতার জয় হোক, অমানুষগুলোর শুভবুদ্ধির উদয় হোক। অবিলম্বে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিপীড়ন বন্ধ হোক...
- সুজন ভৌমিক।
মন্তব্য
ভাস্কর চৌধুরীর একটা কবিতার লাইন মনে পড়ছে-
"তুমি দুষ্কৃতি মারো, বাঙ্গালী মারো, হিন্দু-মুসলমান মারো,
গেরিলা তামিল মারো, এভাবে যেখানে যাকেই মারোনা কেন ইতিহাস লিখবে যে এতো মানুষ মরেছে"
@জিল্লুর রহমান সোহাগ
সেটাই ভাই।
আজ এখানে হিন্দু মরছে, কাল ওখানে মুসলিম মরবে, পরশু কোথাও ইহুদি মরবে।
তিন দিনে তিন গোষ্ঠী তাদের জাতিভাইদের মৃত্যুর বদলা নেবে, ফটো শেয়ার করবে, প্রতিবাদ জানাবে আর বাকি দুইদিন চুপ থাকবে! কারন যারা মরেছে তারা অন্য ধর্মের।
তিনদিনে তিনটে মানুষ মরলো, তিনবার করে মানবতার বলি হলো সেটা ক'জন ভাবে!!!
স্ট্রিপটা অত্যন্ত পছন্দ হলো!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
পড়ে একজনেরও যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হয় তাহলেই লেখক স্বার্থক।
- সুজন ভৌমিক
আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা মানুষ।
অনেক ভাল লাগলো!!!!
জোছনা
ধন্যবাদ জোছনা
- সুজন ভৌমিক।
ধন্যবাদ লেখককে সময়োপযোগী লেখার জন্য । এ বিষয়ে সচলে আরো আগে পোষ্ট আশা করেছিলাম, নিজেও লেখার অপচেষ্টা করেছিলাম তবে হয়ে উঠেনি । সমস্যা হচ্ছে আমরা বাঙ্গালী এবং হুজুগে আর সেখানেই সমস্যার শুরু । কেউ ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই না করেই শেয়ার দিচ্ছে এবং সাথে জ্বালাময়ী কিছু বক্তব্য আর তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো শেয়ার আর ইভেন্ট । বেশিরভাগ ছবিই ফেব্রিকেটেড । হায় যদি কেউ একটু নূন্যতম পরিশ্রম করে গুগল করতো ছবিগুলো শেয়ার করার আগে
মোস্তফা কামাল
ধন্যবাদ আপনাকেও। আপনার কথার সাথেই যুক্ত করতে চাই- আমাদের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে আমরা সমালোচনা করতে পারি কিন্তু আলোচনায় যেতে চাই না।
সুজন ভৌমিক।
কি বলবেন খুঁজে পাচ্ছেন না! @ সাক্ষী সত্যানন্দ
সুজন ভৌমিক
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভাবতে লজ্জা হয় সভ্য পৃথিবীকে মনে করিয়ে দিতে হয়- "মানুষের পরিচয় হোক শুধুই মানুষ"!!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এটাই সভ্য আর সভ্যতার নমুনা!!!
- সুজন ভৌমিক।
নতুন মন্তব্য করুন