গরমের ছুটিতে দেশে ফেরার সবচেয়ে বড় আনন্দ মনে হয় বিয়ে বাড়ির নেমন্তন্ন খাওয়া।
তিনু মাসি বাসায় আসা মানেই কোনো একটা উপলক্ষ আছে।
তাই মাসি “চল, নিমন্ত্রণ আছে।“ বলতেই মাথার ভেতর সানাই বেজে উঠলো। আহা, মুরগির রোস্ট, খাসির রেজালা, পোলাও। সুন্দর করে সেজে আসা... ইয়ে মানে, যাই হোক - বিয়ে বাড়ির মজাই আলাদা।
তো চটপট পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে গেলাম।
কার বিয়ে? রিক্সায় উঠে জিজ্ঞেস করলাম।
বিয়ে মানে? তোর মায়ের মামার ভায়রার শ্রাদ্ধ। তোর বাপ-মা তো এইসবে যায় না। তাই তোদের ফ্যামিলি থেকে তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
ভাবলাম রিক্সা থেকে একটা লাফ দেই।
টেবিলে কিছু পরিচিত, কিছু অপরিচিত আত্মীয়দের মাঝখানে বসলাম। কোথায় খাসির মাংস, কোথায় মুরগির রান! সুক্তো, মুগ ডাল, রুই মাছের কালিয়া, আলুর ঝুরিভাজা, পাবদা মাছ, চাটনি, আর দই মিষ্টি।
বিপত্তিটা ঘটল পাবদা মাছ খেতে গিয়ে। মাছটা বেশ বড়সড় ছিল, কিন্তু বেশি ফ্রেশ ছিল না মনে হয়, কাঁটাগুলো ছিল শক্ত শক্ত। আশেপাশে লোকজনদের গল্প শুনছিলাম। তিনুমাসী এতটুকু একটা মানুষ, কিন্তু গলার আওয়াজ একটা টি-রেক্সের সমান। নিজেই কথা বলে, আবার নিজেই হাসতে থাকে।
নিজের মনেই ভাবছি মানুষ এতসব শ্রাদ্ধ-ফাদ্ধ , চল্লিশা-ফল্লিশা করে কেন। যে মরে গেছে তার কি আসে যায়? সে তো স্বর্গে গিয়ে মহা ফুর্তিতে আছে, বা পুড়ে ছাই, বা মাটি হয়ে গেছে, দশ বিশটা অনুষ্ঠান করে তার কি লাভ?
দাদু যখন মারা গেল তখনের কথা মনে পড়ল। শোনার সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা কেমন যেন অফ হয়ে গেছিল। বদ্ধ, নিস্তব্ধ। মা কাঁদছিল হাউমাউ করে। মাকে কি বলব তাও ভেবে পাচ্ছিলাম না।
এ জন্যই বোধয় মানুষ নিয়মগুলো করে গেছে। স্নান কর, দাড়ি রাখো , উপোষ করো, দান কর , আত্মীয়দেরকে খাওয়াও, মাথা ন্যাড়া কর। আবার একদিন নিজের জীবনে ফিরে যাও। কিপ অন মুভিং। ইংরেজিতে যেটাকে বলে ক্লোজার। বাংলায় কি বলে ?
কিছুদিন পরে নিয়মগুলো থেকে যায়, কারণগুলো উবে যায়। এখন যেমন বেশ খোশগল্প চলছে। সবাই এতদিন পরে কাছাকাছি এসেছে, সবাই বেশ খুশি।
হঠাৎ করে তিনুমাসী কি একটা বলে খুব জোরে হেসে উঠতেই চমকে উঠে বিষম খেলাম। ঘ্যাক করে গলায় একটা কাঁটা আটকে গেল। ফর্মুলা অনুযায়ী ভাত দিয়ে সেটা গেলার চেষ্টা করলাম। হলো না। খচখচ করতে লাগলো।
কি হয়েছে? মাসি জিজ্ঞেস করলো।
কিছু না, গলায় একটা কাঁটা আতকেছে।
গরম ভাত গেল তাড়াতাড়ি ! মাসি তার টি-রেক্স গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।
এমন চিৎকার, যে পুরো ঘরের সব লোকজন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ভাত দলা পাকিয়ে গিলে ফেল। আরেকজন বলল।
একটা রসগোল্লা খা ।
ঢক করে ঢোক গিলে বললাম , নেমে গেছে।
বাকি সময়টা সবার অলক্ষ্যে একটু করে ভাত গিলতে শুরু করলাম কাটা নামানোর জন্য। কোনও লাভ হলো না. ভাবলাম কি আর হবে, একটু পরে নিজেই নেমে যাবে।
খাওয়া দাওয়া, কথা বার্তা হচ্ছে, মাঝে মাঝে যার শ্রাদ্ধ তার ছেলে এসে সবার খবর নিচ্ছে, জিগ্যেস করছে সব ঠিক আছে নাকি, একজন আরেকজনকে প্রণাম করছে। ক-বছর আগেও এরকম কোনও অনুষ্ঠানে এলে গুরুজনদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে করতে কোমরে ব্যথা হয়ে যেত। আজকাল দেখলাম একটা আপগ্রেড হয়েছে। দাদু-দিদাদের হ্যান্ডশেক করলেই আশীর্বাদ দিয়ে দিচ্ছে।
আমি ভাবছি গলার কাঁটার কথা। আচ্ছা, কাঁটা কি গলার সামনে আটকায়, না জিভে আটকায়? জিভ নাড়ালে ব্যথা করে কেন? কিছুক্ষণ পর মনে হলো গলার পেছনেই আটকায়। আচ্ছা, মাছ জিনিষটা খাওয়ার কি দরকার? নড়াচড়া করলেই সেটাকে খেতে হবে? কেউ কখনো শুনেছে কারো গলায় লালশাক বা টমেটো আটকে গেছে? ছাগলের হাড়ও তো গলায় আটকে না।
মোটামুটি অনন্তকাল পরে দেখলাম লোকজন যাই যাই করছে। যাক, মা-বাবা ডাক্তার, ঘরে গেলেই একটা চিমটা দিয়ে কাঁটা বের করে আনবে। গেটের কাছে আসতেই হঠাৎ আরেক দাদুর সাথে দেখা।
আরে দাদু, এতদিন পরে দেশে আইসো, আমার বাড়িতে আসবা না ? হে হে করতে করতে বাড়িতে গেলাম। আরেক রাউন্ড আড্ডা শুরু হলো। কাটাটাও করতে লাগলো খঁচ , খঁচ , খঁচ ।
একসময় দেখলাম একজন একটা স্প্রাইটের বোতল খুলছে।
আটকে উঠলাম। সলিড কিছু যদিও কষ্টমষ্ট করে গিলতে পারি, তরল কিছু খেলেই কাঁটাটা ঈশের মত এটেনশন হয়ে দাঁড়াচ্ছে ।
না না , দাদু। কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবো না এখন।
আরে খাও খাও, ক্লিয়ার জিনিস। কোনও রং নাই।
কোনরকম চোখের জল আটকে গিলে ফেললাম।
মাঝখানে বাথরুমে গিয়ে কিছুক্ষণ গলা খাঁকারি দিয়ে এলাম। লাভ হলো না কিচ্ছু।
আরও মোটামুটি এক জীবন পর ছাড়া পেলাম।
ঘরে যাওয়ার পথে একটা চায়ের দোকানে থামলাম। রিকশাওয়ালারা বেশ চা, কলা, বিস্কিট খাচ্ছে। এই দোকানের চায়ের স্বাদই আলাদা। কিন্তু আজকে কিনলাম কলা ।
চারটা কলা দ্যান মামা।
খাবেন, না বাসায় নিবেন?
এখানেই খাব।
এত্তগুলা কলা খাবেন ?
গলায় কাঁটা আটকেছে।
কলা খাইয়া কি হইব? মুড়ি খান. শুকনা মুড়ি। পয়সা লাগব না।
কলার পর মুড়ি খেলাম একমুঠ। কোনও লাভ হলো না। কিন্তু এত যত্ন করে খাওয়ালো, কি আর বলব , বললাম নেমে গেছে।
দেখলেন, মুড়ির উপর ওষুধ নাই। এখন এককাপ চা খান। কাটা নামার পরে চায়ের উপর জিনিস নাই।
চা খেতেই কাঁটাটা আবার খঁচ করে লাফিয়ে উঠলো। চোখে জল এসে গেল ।
দেখলেন, কি আরাম? দোকানদার হাসিমুখে বলল।
মনে হলো ব্যাটার গলা টিপে ধরি।
(চলবে)
- সো
মন্তব্য
মজা পেলাম খুব। পরের র্পবগুলো চাই ঝটপট।
থাঙ্কু।
পর্ব রেডি আছে, সময়মত পেয়ে যাবেন।
-সো
আরে বাহ, আপনি তো মজা করে লেখেন!
সচলে নিয়মিত হন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমি তো নিয়মিতই লিখি। কবে যে সচল হবো...
-সো
আমাদের পুরো পরিবার আমার বদনাম আছে, কাঁটাওয়ালা মাছ না খেতে পারার
গল্পের বর্ণনা চমৎকার হয়েছে।
শুভেচ্ছা
আমার বাবা আর ছোট ভাইয়ের একই সমস্যা। ইলিশ থেকে চিংড়ি মাছ, এমন মাছ নাই যে গলায় কাঁটা আটকায়নি।
-সো
মজারু লেখা! পাবদামাবদার চেয়ে চিংড়িই ভালু। কাঁটামাটার ঝামেলা নাই।
যাইহোক কাঁটা নামলো? পরের পর্ব সময় মতো দেবেন ভাই।
সবুরে মেওয়া ফলে।
-সো
হৈল! কাঁটা এখন পাঠকের গলায়! পরের পর্ব তৈরী আছে ত? এইটা প্রথম পাতা থেকে সরবার পর আর দেরী কইরেন না!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
লেখক দেড় দিন গলায় কাঁটা নিয়ে বসে ছিল, পাঠক দিন চারেক না বসলে হবে ?
-সো
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনি চমৎকার লেখেন। এক পর্বে শেষ করতে পারলে আরো ভালো লাগতো। গল্পটা তরতর করে পড়তে পড়তে (চলবে) অংশে এসে খচ করে কাঁটা বিঁধে গেল। পরের পর্ব জলদি নামান।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হুঁ হুঁ হুঁ-আজ অফিসে মাছ খাওয়ার পর্ব আছে যে! কী করব বলুন তো, যদি কাঁটা বেঁধে? দারুণ লেখা
দেবদ্যুতি
খুব ঝরঝরে মজার লেখা। পরের লেখা গুলোর জন্য মুখিয়ে থাকলাম।
--------------------------------------------------
ইচ্ছে মত লিখি
http://icchemotolikhi.blogspot.in/2015/06/blog-post.html
- সো
মাছলি মোবারক।
গল্পটা পর্বে ভাগ করতে গেলেন কেন? গল্প যেভাবে তর তর করে আগাচ্ছিলো তাতে এক পর্বেই সারতে পারতেন। পাঠক গল্প পড়তে পড়তে বুঝতেই পারতো না কত বড় কাঁটা থুক্কু গল্প পার করে ফেললো।
নিয়মিত লিখুন, হাত খুলে লিখুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আসলেই, লেখার সময় মনে হচ্ছিলো আরো বড় হবে। কেমন হুট করে শেষ হয়ে গেল।
-সো
দারুণ লেখার হাত আপনার। বেশ ভালো লেগেছে। বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম। আশাকরি নিয়মিত লিখবেন সচলে।
(চরম উদাসের রম্য গল্পে সাধারণত ইংলিশ টাইটেল থাকে, সেখানে একটা পাঞ্চও থাকে। আপনার গল্পেও দেখছি ইংলিশ টাইটেল আছে, যদিও টাইটেলের পাঞ্চটা ধরতে পারিনি।)
আমি টাইটেল দেখে ভেবেছিলাম চউ-ই মশকরা করে অতিথি লেখক হিসেবে পোস্ট দিলেন কী না।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আরে! সত্যি বলতে কী, আমিও প্রথমে তাই ভাবছিলাম! পেইজটা লোড হতে হতে ভাবছিলাম, এই বার না জানি কি পচানিটা কারে দিতেছে যে নিজের ব্লগ বাদ দিয়ে অতিথি একাউন্ট থেকে লিখতে হইলো।
ভাগ্য ভালো কোনো পাঁচ পাননি। পেলেই বরং বিপদে পরতাম। ইংলিশে টাইটেল দেওয়ার আরেক গল্প আছে। আরেকদিন কমুনে।
-সো
ঝরঝরে লেখা। হুট করে ব্রেক কষে দিলেন, এটা কি ঠিক হলো? তাড়াতাড়ি পরের পর্ব আসুক।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
পর্ব রেডি। আপনি আরেকটা লেখা দিয়ে এইটাকে পিছনে পাঠান।
-সো
হেহে ভালো বুদ্ধি দিছেন তো। কিন্তু লেখা বের হচ্ছে না অনেকদিন, কাটার মতো আটকে গেছে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
গরম ভাত এক মুঠো করে খেলে কাঁটা নেমে যায়। এইভাবে কত কাঁটা নামিয়েছি। খাবার সময় কাঁটা বিঁধলে অস্বস্তি লাগে। লেখা ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ।
থিওরেটিকালি গরম ভাতের উপর ওষুধ নাই। এইবার কাজ হচ্ছিল না দেখেই এত কান্ড।
-সো
মাছ খেতে ভাল পাই, কাঁটার ভয়ে খাই না।
মহা আগ্রহে পড়ছি কাঁটা নামার গপ্প
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আর একটু বাকি আছে।
সবুর...
-সো
পরের পর্বের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
কাঁটা লাগা
কি মিয়াঁ কাঁটা নামছে?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ইয়ে কাঁটাটা না নামলে আরো ঘটনা ঘটতে থাকবে লেখাও আসতে থাকবে তো রাখবেন নাকি আরো কিছুদিন!? মজা পেলাম লেখা চলতে থাকুক।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
এইবার একটা টাসকি দিয়া এইটারে পরের পাতায় পাঠায় দেন। কাঁটাটা নামান।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন