"পুরুষকে এরা মাত্র একটা ভূমিকাতেই চেনে। খদ্দের। পিতা, রক্ষক, পুত্র, পালক, ভাই, বন্ধু আর কোনও পরিচয়েই নয়। যেসব মেয়েরা বাইরে থেকে এসেছে, কেউ স্বামীর অত্যাচারে পালিয়ে এসেছে, কেউ ভালবাসার লোকের কাছে ঠকে এসেছে, কেউ পিতা বা পিতৃতূল্য কারো কাছ থেকে বিক্রি হয়ে এসেছে। এদের সবারই কাছে পুরুষ এক ভয়াবহ বিপজ্জনক প্রবঞ্চক, চতুর ক্রেতা।"
পড়ছিলাম বানী বসুর "খারাপ ছেলে। এই ভয়ানক মন খারাপ করা লাইনটা সেখান থেকেই নেয়া। পাঠক বুঝতেই পারছেন, উপন্যাসটির একটি মুল বিষয় পতিতাবৃত্তি। এই লাইন পড়ে মন খারাপ করার মত বিলাসিতা আমার আছে। তাই আমি মন খারাপ করি, ওদের বাস্তবতা বোঝার ভান করি। কিন্তু আসলেই কী বুঝতে পারি? না পারি না। কারণ প্রথমত, আমি পুরুষের খারাপ রূপ দেখিনি। ওরিয়ানা ফালাচ্চির মত আমার কাছেই "একজন পুরুষ মানে সম্মুখভাগে লেজবিশিষ্ট একটি মানুষ নয়- একজন পুরুষ মানে একজন ব্যক্তি।" এমনকি কেউ যদি আমাকে বলে একজন পুরুষ একজন নারীর চেয়ে কম আবেগপ্রবণ, আমি সেটাও বিশ্বাস করি না। কারণ আমি আব্বুকে দেখেছি, এই লোকটা তার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া সন্তানদের মুখে তুলে খাইয়ে দেন। আমার ছোট ভাইটার কথা ধরা যাক, ও জন্মের পর আমি সারাক্ষণ বাজে রকম দুশ্চিন্তায় ভুগতাম এইটুকুন বাচ্চা নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিভাবে, সকালে ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে পরীক্ষা করে আসতাম এই রাতটাও এতটুকুন বাচ্চাটা বেঁচে গেল কিনা, সেই ভাই এখন জীবনের ছোট ছোট প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে সাহায্য করে। শৈশবের একান্নবর্তী পরিবারে ছিল চাচারা, পরিবার আলাদা হলেও তাদের কেউ কেউ এখনও ভুল করে নিজের সন্তানদের আমার নামে সম্বোধন করে বসেন। যাই হোক, ওরা তো বাবা-চাচা-ভাই, ওদের স্নেহের উপর আমার অধিকার জন্মগত, ওদের কথা বাদ দিলাম। আমি আমার চলার পথে পেয়েছি অনেক বন্ধুদের। কী মমতায় ওরা আমার পাশে পথ চলে, প্রত্যেকবার পিছিয়ে পড়াকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে, যেকোনো জায়গায় কোনও রকম অস্বস্তি ছাড়া আমি নির্ভার হয়ে ওদের সাথে সময় কাটিয়ে দিতে পারি। আমি বড়জোর বুঝতে পারি এই লাইনটা মানে সেই প্রিয় এবং অতিপ্রয়োজনীয় মুখগুলোর অনুপস্থিতি। জীবন কী ভয়ানক মনে হয়। সংখ্যা রেখায় আমার অবস্থান ধনাত্মক আর ওদের অবস্থান ঋণাত্মক। অনেক কষ্টে বড়জোর শূন্য পর্যন্ত নিজের বোধটা নিয়ে যেতে পারি। আর পারি না...। দ্বিতীয়ত, আমি এতটা নির্মল পরিবেশে থাকি, যেখানে বসে যৌনতায় ভরপুর একটা পরিবেশের মানুষদের সাফারিং সম্পর্কে বোঝা সম্ভব না। হতে পারে ওদের মন খারাপ করার মনটাই আর বাকি নেই এখনও। খদ্দেররা খুবলে খেয়েই নিয়েছে...। এই উপন্যাস পড়তে গিয়ে আমার অভিঘাতের প্রথম স্তরে আমি বাজে ভাবে আহত।
যারা যায় তারা তো আর নিঃসম্পর্ক নয় রে বাবা। কারও না কারও ছেলে তো বটেই। বাবা-কাকা, ভাই বেরাদর তো বটে!
চেষ্টা করেছিলাম কল্পনায় আমার পরিবেশ থেকে দুই-একটা মুখ উঠিয়ে সেই যৌনতায় ভরপুর পরিবেশে পাঠাবো। অনেক কষ্ট করেও সে কাজটা করতে ব্যর্থ হলাম। আমি জানিনা এই লাইনটা যাদের ক্ষেত্রে সত্য বলে আবিষ্কৃত হয় এরপরে কি হওয়া সম্ভব। তবে এইটুক বুঝতে পারি এই লাইনটার মানে তাদের পৃথিবী ভেঙ্গে যাওয়া। শুধু ভেঙ্গে যাওয়া নয় সমস্ত ভার নিয়ে ভাঙ্গা অংশগুলো তাদের উপরেই পড়া। আচ্ছা, আর সেটা যদি নিজের জীবনসঙ্গী হয়? তাহলে? উপন্যাসটি আমাকে অভিঘাতের দ্বিতীয় স্তরে নিয়ে যায়। এই স্তরে বসেই আমি জিনার অবস্থানকে শ্রদ্ধা এবং সমর্থন করি।
নারীত্বকে খুবলে খাওয়া নিয়ে বইগুলো পড়লে আমার জ্বর জ্বর লাগে। অনেকক্ষণ স্বাভাবিক হতে পারি না। নিজের চিন্তা থেকে পালিয়ে যাবার পথ খুঁজি, পারি না। উপরন্তু এই বইয়ের বিষয়বস্তু শুধু যৌনকর্মী, পতিতালয়, তাদের নিয়ে নানা উন্নয়ন কর্মসূচি, তাদের খদ্দের এবং খদ্দেরদের পরিবারেই আবদ্ধ ছিলনা। আরেকটি আরও অন্ধকার দিক খানিকটা উঠে এসেছে এই বইতে, সেটা হল পরিবারের সদস্য কর্তৃক ধারাবাহিক ধর্ষণের ঘটনা। মেয়েরা যেটা সহ্য করে যায় দিনের পর দিন। আমি সেই সব পুরুষদের চিনি না যাদের উপর যৌনতা এতটাই ভর করে যে...। আমি সেসব নারীদের ও চিনি না যারা দিনের পর দিন টু শব্দটা করে না। কিভাবে?? কিভাবে সম্ভব?? উপন্যাস আমাকে সহ পদার্পণ করে অভিঘাতের তৃতীয় স্তরে। যে অতি সামান্য বোধ-বুদ্ধি-চিন্তার ক্ষমতার দিয়ে প্রকৃতি আমাকে গড়েছে সেটাও কাজ করতে অস্বীকার করে তখন। তাই এখানেই শেষ।
পুনশ্চ: যে বইয়ের চরিত্রদের থট প্রসেস ব্যক্ত থাকে, সেই বইগুলোর একটা বিশেষ অ্যাপিল আমার কাছে সবসময় রয়েছে। এই বইটিতে সেটা ব্যক্ত আছে। কিন্তু 'খারাপ ছেলে'র থট প্রসেসটা অব্যক্তই থেকে গেছে এবং চরিত্রটিও পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছা হয় ওরা কিভাবে চিন্তা করে, কেন পৃথিবীটা ওদের কাছে বিশাল একটা সেক্সটয় মনে হয়, তাই আমার কাছে বইটার অপূর্ণতা শুধু সেখানেই।
পৃষ্ঠাঃ ১৩৪
প্রকাশনীঃ আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
নাবিলা
মন্তব্য
১। দেখতে হবে তো, কে রেকমেন্ড করেছিলো পড়ার জন্য! হুঁ হুঁ বাবা।
২। 'খারাপ ছেলে' গত বছর পাঁচ-ছয়ের মধ্যে পড়া এবং নাড়িয়ে দেয়া দ্বিতীয় বই। প্রথমটা ছিলো 'কালো বরফ'।
৩। মুল > মূল, টু > টুঁ, ভেঙ্গে > ভেঙে, মন খারাপ করার মত > মতো।
গুডরিডসে অতো খেয়াল করা হয় না, নীড়পাতায় হলে চোখ আটকে যায়।
আরেকটু মনোযোগ দিলে ভাল হয় আর কী।
৪। লেখা চলুক, নিয়মিত।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
১/ ভেবেছিলাম আপনার রিকমেন্ডশন, আর ষষ্ঠ পাণ্ডবের আমার পিছে ক্রমাগত লেগে থাকার অবদান ধন্যবাদ সহকারে স্বীকার করবো। কিন্তু সেটা আর হল কই। ব্লগের শিরোনাম কী হবে সেটা ভাবতেই এত পরিশ্রম হল যে এটা এবং আরও কী সব যেন যুক্ত করবো সব ভুলে গেছি।
২/ কালো বরফ ভয়ানক। ওটা পড়ে আমার কোনও পাঠ প্রতিক্রিয়া হয়নি। বইটাই আমাকে আস্ত গিলে ফেলেছিল।
৩/ বানানে আমি খুবই দুর্বল। আমার ড্রাফট করা একটা খুবই ইম্পরট্যান্ট ডকুমেন্ট পড়ে আমার এক বন্ধু ৩২ দাঁত বের করে বলেছিল "কোটি কোটি বানান ভুল"। এরপর থেকে বেশ খানিকটা মনোযোগ দেবার চেষ্টা করি, তবুও ছুটে যায়। আমার সমস্যা ঠিক মনোযোগে না, আরও গভীরে। আমি আসলে ঠিক বানানটাই জানি না। যেমন উপরের 'মূল' শুধু মনোযোগের অভাবে ছুটে যাওয়া, বাকিগুলো আমি নিশ্চিত ভাবে জানি-ই না যে সঠিক বানান কোনটি। ধন্যবাদ আপু, এটলিস্ট এগুলো আজকে থেকে ভুল না করার চেষ্টা করবো।
৪/ ষষ্ঠ পাণ্ডব দীর্ঘায়ু হোক।
নাবিলা
১। পোস্ট করার আগে ড্রাফটটা খুঁতখুঁতে কিসিমের কাউকে দেখিয়ে নিতে পারো।
যেহেতু অতিথি লেখকদের সম্পাদনার সুযোগ নেই।
২। বাণী বসুর এই খানাও চমৎকার! বুদ্ধিবৃত্তিক ঘাটতিবশত মৈত্রেয় জাতকে দাঁত ফোটাতে পারিনি।
৩। ষষ্ঠ পাণ্ডব দীর্ঘায়ু হন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপু মনে হয় কাজ বাড়ায়ে ফেললেন!
নাবিলা
২। গান্ধর্বী নিয়ে আলোচনা হোক। বহু আগে পড়া বই। তবু এক আধটা খটকার কথা মনে পড়ে। মৈত্রেয় জাতক পড়েছিলাম মুগ্ধতা নিয়ে তাই ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতাগুলো চোখে পড়েনি। আবার পড়ার মতো সময় করতে পারলে আবার পড়বো। বাণী বসু যেসব উপন্যাসের জন্য আলোচিত থাকবেন তার মধ্যে শ্বেত পাথরের থালা, মৈত্রেয় জাতক আর মুম্ অবশ্যই থাকবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মৈত্রেয় জাতক অসাধারণ, দুর্দান্ত একটা উপন্যাস। বহু আগে - প্রথম প্রকাশের পরপরই পড়েছিলাম দারুন মুগ্ধতায়। তবে একমাত্র যেটা ভাল লাগেনি তখন (এদ্দিন পরে যট্টুক মনে পড়ে আরকি) তা হলো, লেখিকার বিশ শতকীয় সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক চেতনা আর ইডিয়লজি দিয়ে তার কাহিনির সময়কালকে মূল্যায়ন করা এবং সেই ফিল্টার দিয়ে তার রূপায়ন করা। এটা না করলে হয়তো তিনি ঐ সময়ের বা কাহিনির মহত্তর পোটেনশিয়াল ডাইমেনশন(-গুলি) এক্সপ্লোর করতে পারতেন - আর 'অসাধারণ' থেকে 'মহৎ' বা 'এপিক' উপন্যাস হয়ে উঠতে পারত বইটা।
এইটা লিখতে লিখতে হঠাৎ একটা আজব কথা মনে হলো - এই কাহিনিটা রবীন্দ্রনাথের হাতে পড়লে কেমন চেহারা নিত?
****************************************
আপনার কথায় তো মৈত্রেয় জাতক আবার পড়ার কথা ভাবতে হচ্ছে। বেশিরভাগ লেখক নিজের চিন্তা-বিশ্বাস-ধারণার চশমা দিয়ে কাল আর পৃথিবীকে দেখেন। এজন্য অতীত (বিশেষত সুদূর অতীত) নিয়ে লেখা বেশিরভাগ লেখা বিশুদ্ধ ট্র্যাশ হয়।
আপনার আজব ভাবনাটা ভাবতে গিয়ে আমার মনে হলো - ভাগ্যিস গুরুদেব অমন চেষ্টা করেননি! এমনটা কেন মনে হলো সে প্রশ্ন করবেন না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
নাবিলা
বুক রিভিউতে । বইটা পড়ার আগ্রহ জন্মাল।
এই রকম একটা ব্যর্থ চেষ্টা সচলায়তনের নারী সপ্তাহ উপলক্ষে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি লেখা পড়ার পর করেছিলাম । বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ঐ বদমাশগুলি আমাদের আশেপাশেই থাকে, আমার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে খুঁজলে ঐ রকম কাউকে পেয়ে যেতে পারি !!!
আমি তোমাদের কেউ নই
হয়তো পেয়ে যেতেও পারি। কিন্তু আমি লেখার সময় তাদের কথাই শুধু ভাবছিলাম যাদের মনোজগতে আমার প্রবেশাধিকার আছে।
নাবিলা
বইটা পড়ে নিই আগে...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নাবিলা
বছরখানেক আগে অতিথি লেখক রূপে সচলায়তনেই একটি লেখা পোস্ট করেছিলাম সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়েরি নিয়ে, যেটি আগে একটি ফেসবুক গ্রুপে(ক্লোজড গ্রুপ, তাও) প্রকাশিত হয়েছিল বলে একজন অভিযোগ তোলায় এডমিনরা পোস্টটি সরিয়ে দেন। যাহোক, আপনার এই লেখাটিও আপনিই গুডরিডসে পোস্ট করেছেন দেখতে পাচ্ছি এখানে পোস্ট করার একদিন আগে। যে কারণ দেখিয়ে আমার পোস্টটি মুছে দেওয়া হয়েছিল, সেই কারণ আপনার এই লেখাটির ক্ষেত্রেও তাই প্রযোজ্য। এডমিনরা আশা করি এটিও দেখবেন। ধন্যবাদ।
_______________
মূর্খ থাকি, সামাজিক নয়।
গুডরিডস তো ব্যাক্তিগত বইয়ের ডেটাবেইজ টাইপ সাইট। ওখানে পোস্ট করা ফেইসবুকে নিজের ওয়ালে পোস্ট করার মতোই ব্যাপার, তাই না?
(যদিও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। আমার নাক গলানোর কারণ হচ্ছে, এরকম হলে আমার দুইটা পোস্টও রিমুভ করতে হবে। )
- ইমতিয়াজ।
আপনার সেই পোস্টটা তো বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। এডমিনরা মুছে দিলে এখনো দেখতে পাচ্ছি কী করে!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বহু বড় বড় লেখকের বহুল আলোচিত রচনা শুধু এমন সব সীমাবদ্ধতার জন্য অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এই অসম্পূর্ণতার জন্য দায়ী লেখকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথেষ্ট গ্রাউন্ডওয়ার্ক না করা। এই বইটাতে 'খারাপ ছেলে'র ভাবনা কি কিছুই নেই?
বাকি যা কিছু বললেন নারী সপ্তাহ জুড়ে অমন ঘটনা পড়তে পড়তে লজ্জা-ঘৃণা-ক্রোধে-ক্ষোভে-হতাশায়-অক্ষম আক্রোশে কেবল বার বার ফেটে পড়েছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চিন্তা-ভাবনা একেবারেই নেই। দুই-তিনবার কিছু কথোপকথনে চরিত্রের অন্যান্য দিকগুলো খানিকটা প্রকাশিত হয়। আর কর্মকাণ্ড যা, তা প্রকাশ পায় ভিক্টিমদের চোখে।
নাবিলা
এর মানে হচ্ছে লেখিকা খারাপ ছেলে বলে যাকে (যাদেরকে) চিহ্নিত করতে চাইছেন তাদের ব্যাপারে তিনি কোন গ্রাউন্ডওয়ার্ক করেননি। গ্যুন্টার গ্রাস হওয়া এতো সোজা না!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
"চিন্তা-ভাবনা একেবারেই নেই। দুই-তিনবার কিছু কথোপকথনে চরিত্রের অন্যান্য দিকগুলো খানিকটা প্রকাশিত হয়। আর কর্মকাণ্ড যা, তা প্রকাশ পায় ভিক্টিমদের চোখে।" - নাবিলার এই মন্তব্যর সাথে পূর্ণ সহমত। এই লেখিকার কাছে থেকে এত অন্তঃসারশূন্য লেখা আসবে এটা ভাবা কঠিন। কিন্তু, সেটাই স্বাভাবিক। গণ্ডী ভেঙ্গে বের হতে না পারা মধ্যবিত্ত মানুষ-এর ভাঁড়ার ফাঁকা হতে বেশী সময় লাগে না। প্রচুর পড়াশোনা, গবেষণা করে কেউ কেউ ঘাটতিটা কখনো কখনো পূরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে মহৎ না হলেও গুরূত্বপূর্ণ সৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। কিন্তু ক্রমাগত লিখে যাওয়া লেখকের সেই সময়টুকুওতো অকুলান হয়ে যায়। তখন এই রকম-ই হয়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপনার কমেন্টে পাঁচ তারা!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সাদরে গৃহীত হবে
নাবিলা।
এইটা কী হইল রে! পাঠ প্রতিক্রিয়া শুরু হতে না হতেই শেষ! বইটা পড়েছি
খারাপ ছেলের চরিত্রকে পাঠকের কাছ থেকে আলগোছে দূরে রাখার বিষয়টা বইটার একটা দুর্বলতা বটে।
তবে পতিতাদের ঘিরে দাতাগোষ্ঠীর মহত্ত্বের পাশাপাশি এই পেশাটাকে টিকিয়ে রাখার কৌশলের বিষয়টা চমৎকার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অনেকদিন হয় পড়েছি তো সবটা মনে নাই। নইলে জমিয়ে আলুচনা করা যেতো।
-----
'জন্মভূমি মাতৃভূমি' বইটা দিয়ে আমার বাণী বসুকে পড়া শুরু। বইটার প্রতি একটা দুর্বলতা আছে কেন জানি।
এখন পর্যন্ত ওঁর লেখা বইয়ের মধ্যে গান্ধর্বী আর শ্বেত পাথরের থালা সবচে' ভালো লেগেছে। মৈত্রেয় জাতক পড়িনি।
সচলে তোমার লেখালিখি জোরেশোরে চলুক। শুভকামনা
দাতাগোষ্ঠির মত পেশা টিকিয়ে রাখার এই কৌশলটা আলোচনা না করাটা আসলে ফাঁকিবাজি ছিল। বই পড়ে রিভিউ লেখার আগে বাকিদের রিভিউ পড়ছিলাম, সেখানে একটা রিভিউতে এই ব্যাপারটা এত ভালোভাবে আলোচনা করা হয়েছিল যে অলসতাকে খানিকটা লাই দিয়ে বসলাম। বেসিকাল্লী পতিতাবৃত্তিকে ঘিরেই যে শুধু এই কৌশল তা নয়। কৌশলটা মোটামুটি দাতাগোষ্ঠীর সিগনেচার কৌশল, যেখানেই দাতা, তারা এই কৌশল এপ্লাই না করে পারেই না।
আমার এক বন্ধু আছে, জোকারের ফ্যান। নিচের কোট বলে বলে আমার কান পঁচায়ে ফেলছে, এখন এটাই মনে পড়লো।
Batman: Then why do you want to kill me?
Joker: I don’t want to kill you! What would I do without you? Go back to ripping off mob dealers? No, no, NO! No. You… you… complete me.
নাবিলা।
হেরে চিনি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হে হে জানি। মাঝেমাঝে হেরও বানান ভুল ধরতে আপ্নেরে দেখি।
নাবিলা
সুলতানা সাদিয়া সম্ভবত খারাপ ছেলে না ছেলেদের মনস্তত্ব নিয়ে লিখছেন, কবে শেষ হবে জানিনা যদিও। তবে কাজটা কিন্তু তৃতীয় পক্ষের জন্য করা কঠিন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে কাউকে টাইটেলে রেখে তার মনস্তত্ব একদম দূরে সরিয়ে রাখলে একটা অপূর্ণতা সৃষ্টি হয়, সেটাই বললাম।
নাবিলা।
আপনার সুন্দর শৈশব, কৈশোর এবং বর্তমানের জন্য ভাল লাগা। আলো আঁধারির কম বেশিতে আমার বেড়ে ওঠা। পুরুষকে নানারূপে দেখেছি তবে দেখতে গিয়ে একটা লাভ হয়েছে, নিজে চাবুক চালাতে শিখেছি, ভালবাসতে শিখেছি, পুরুষের বন্ধুও হয়ে উঠতে পেরেছি। যাই হোক অপ্রাসঙ্গিক কথা বললাম বোধহয়। বইটা অনেক আগে পড়েছি। খুব ভাল মনে নেই। রিভউ পড়ে একটা ছটফটে অনুভূতি জাগল বইটা আবার পড়ায়।
আপনি কিন্তু খুব ভাল পাঠক এবং সমঝদার। নিয়মিত লিখছেন না কেন?
প্রিয় মরুদ্যান ঠিকই বলেছেন, কাজটা তৃতীয় পক্ষের জন্য কঠিন। চেষ্টা করছি। কয়েকটা পর্ব লিখে আটকে গেছি। আমার ছেলে বড় হওয়ার সাথে সাথে লেখাটা বড় হবে মনে হচ্ছে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আমাকে পুরুষদের আঁধার চেহারা দেখতে না হলেও পুরুষের বন্ধু হয়ে উঠতে সমস্যা হয়নি। আমিও খুব কাছাকাছি আমার বয়েসী বেশ কয়েকজনের চিন্তাভাবনা দেখেছি। যৌনতা সম্পর্কে তাদের ভাবনাও কিছুটা জানি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তাদের কেউ ই "ওড়না গলায় তবে আমার হাত দিতে দোষ নাই" ধারণা পোষণ করে না। করলে তাদের সাথে বন্ধুত্ব হতো না।
আমি মোটেই সমঝদার পাঠক নই। অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ ধাঁচের পাঠক। সবকিছুর সাথে নিজেকে, নিজের চিন্তা-ভাবনা-আবেগকে মিলিয়ে মিশিয়ে গুবলেট বানিয়ে ফেলি।
আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকলাম।
নাবিলা
'খারাপ ছেলে' ছাড়া বানী বসুর আর কোন বই পড়িনি। এটি পড়েছি অনেকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শুনে। কিন্তু সত্যি বলতে কি বইটা আমাকে হতাশ করেছে। হয়তো অতিরিক্ত প্রশংসা শুনেছি বলেই। তাঁর আরো ভালো বই আছে। তাই এই বইটাকে দিয়ে তাঁর লেখার মান যাচাই করাটা উচিত হবে না। আমি শুধু এই বইটি নিয়েই কয়েকটা লাইন লিখছি।
যে ইস্যুটা নিয়ে তিনি লিখতে চেয়েছেন সেই ইস্যুটাকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। অধিকাংশ চরিত্রকে সিনেমাটিক, অবাস্তব আরোপিত মনে হয়েছে। উপন্যাসের চরিত্রসমূহের মধ্যে কেউ খুব ভালো, কেউ খুব খারাপ। টিপিকাল বাংলা সিনেমা ফরমেট। তাই এই বইটি বড়জোর বাণিজ্যিক সিনেমার সফল চিত্রনাট্য হতে পারলেও বাস্তব ইস্যুভিত্তিক উপন্যাস হতে ব্যর্থ হয়েছে এটি। আমার চোখে অসংগতিগুলো বলি-
১. প্রথমত 'খারাপ ছেলে' চরিত্রটা একেবারেই ফোটাতে পারেননি গোটা বই জুড়ে। এমনকি তাকে একটা তৃতীয় চরিত্রের অবস্থানে ফেলে রাখা হয়েছে। সমস্ত বই জুড়ে খারাপ ছেলের কর্মকাণ্ডগুলো আড়ালে রেখে, তাকে শুধু শেষবেলার নাটকীয়তায় এনে নামকরণের সার্থকতা কুড়োনো হয়েছে বইটিতে। এ ধরণের জিনিস মানায় সস্তা সিনেমাতেই। শুরু থেকে পাঠক হিসেবে আমি খারাপ ছেলেকে খুজেছি, কিন্তু শুধু ভালো মেয়েগুলোকেই কেটে গেছে উপন্যাসের সময়।
২. দ্বিতীয়ত পতিতাদের সন্তানদের নিয়ে ঋত্বিক ও মুকুটের যে প্রকল্প সেটাকে ইউটোপিয়া মনে হয়েছে। কেননা ওই ধরনের প্রকল্প বাস্তবে হতে হলে যে ধরনের সমস্যা আসার কথা, সেরকম কোন ঝামেলা দেখিনি। টুকটাক মাস্তানী বাদে আর কোন সমস্যাকে আনা হয়নি। প্রকল্পের জমি দিয়েছেন তাকে একদম পাত্তা নিয়ে ঋত্বিক আর মুকুট যেভাবে প্রকল্পটা দাড় করিয়ে ফেলছে তাকে একটি রূপকথা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। লেখক এই বিষয়ে বাস্তব কোন ধারণা রাখেন বলে মনে হয় না। অথবা যে ধরণের হোমওয়ার্ক করার দরকার ছিল তা করেননি।
৩. মল্লিকার স্বামী ভদ্রলোক তাসখেলা বাদে সংসারের আর কিছুতে নেই, তাঁর সাথে বউয়ের সম্পর্কটা কিরকম তাও বোঝার উপায় নেই। এরকম একটা চরিত্রের প্রতি এতটা অবহেলা গ্রহনযোগ্য মনে হয়নি।
৪. জিনা দিনের পর দিন কাজ করে যায় মুকুটের প্রকল্পে, অথচ নিখিল তা একদম জানে না, একই ঘরে থেকেও। নিখিলের মতো ধূর্তলোক এতটা চোখ বুজে থাকে, বিশ্বাস হতে চায় না। তাছাড়া শেষ দিকে নিখিল জিনার হাতে ধরা পড়ার পর নিখিলের অফিসের বস ইত্যাদি জিনার কথায় নিখিলের চাকরীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এটাও অবাস্তব লাগে। জিনাকে সুপারওমেন সাজানোটাও আরোপিত হয়েছে।
এরকম আরো অসংগতির কথা লেখা যায়। কিন্তু আর লিখে কাজ নেই। শুধু এটা বলি একটা চরম ইস্যুকে লেখক যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন চরিত্র ও ঘটনাগুলোর নাটকীয়তাপনার কারণে। একজন আম পাঠক হিসেবে বলবো, এই উপন্যাসটি যথেষ্ট মনোযোগ বা যত্নের সাথে লেখা হয়নি।
তবে আপনার রিভিউটা ভালো হয়েছে। বইয়ের রিভিউ পড়লেই আলোচনার সুযোগ ঘটে। সময়াভাবে আলোচনায় যোগ দিতে দেরী হয়ে গেল। আরো লিখুন, বই আলোচনা আসুক আরো।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনি এই পয়েন্টগুলো বলার পর আমি অনেকবারের মত আরও একবার আবিষ্কার করলাম আমি আসলে আবেগপ্রবণ পাঠক।
এখানে একটু সামান্য ডিফেন্ড করি। শুধুমাত্র জিনার কথায় না। ব্যাপারটা প্রচ্ছন্ন থাকলেও আমার ধারণা কিছু লিগ্যাল ব্যাপার জড়িয়ে গেলে বসদের মাঝে ঝামেলায় না জড়িয়ে এমপ্লয়ি স্যাক করার করার টেনডেন্সি আসতেই পারে।
নাবিলা
নতুন মন্তব্য করুন