বিবাহ ! বন্ধন নাকি নারীর দাসত্ব !

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/০৭/২০১৫ - ১২:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের সমাজে "বিবাহ" জিনিসটা আসলে কি ? ছোট বেলা থেকেই আমাদের শিখিয়ে দেয়া হয় বিয়ে হলে তাতে একটি ছেলে থাকবে এবং মেয়ে থাকবে। ছেলে হবে স্বামী আর মেয়ে হবে স্ত্রী। এছাড়া আর কোনভাবেই বিবাহ হয় না। কেন একজন মানুষের জীবনে বিবাহ জিনিসটার প্রয়োজন সেটা নিয়েও আছে বিভিন্ন মত। কেউ বলেন মানুষ একা থাকতে পারে না। তাই শেষ বয়সে তার একজন সঙ্গী প্রয়োজন হয়। তাই বিবাহ জরুরী। আবার কেউ বলেন এটা একটা সামাজিক রীতি। বিবাহ না করে কোন অনাত্মীয় ছেলে মেয়ে এক সাথে থাকতে পারবে না। তাই বিবাহ জরুরী। কেউ বলেন,সংসার ধর্ম পালন করা আমাদের দায়িত্ব। বংশের উত্তরসুরী থাকতে হবে। বিবাহ ছাড়া বংশের বাতি আসবে না। তাই বিবাহ জরুরী। আছে আরো অনেক মতামত।

ছোট বেলা থেকেই আমাদের বলা হয় বিয়ের আগে কোন ধরনের শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা অবৈধ। সেটা করতে হলে বিয়ে করতে হবে। বিয়ের পরে যৌনতা বৈধ। প্রেম করাটাও এখনো আমাদের সমাজে কিছু মানুষের কাছে অবৈধ বলেই বিবেচিত হয়। বিয়ের আগে আবার কিসের প্রেম ? প্রেম করতে হলে বিয়ের পরে করবে। বিয়ের আগে কেউ চুমু খেলেও সেই মেয়েটিকে কলঙ্কিনী বানিয়ে সমাজ ছাড়া করার মত অবস্থার সৃষ্টি হয়। একজন নারী যদি বিয়ে না করে সন্তান পেতে চায়,নিজের পরিচয়ে সন্তানকে মানুষ করতে চায় তাহলে সেটাও আমাদের সমাজে অবৈধ। সমাজ সেটাকে বিয়ে ছাড়া স্বীকৃতি দেয় না। একজন পুরুষের ক্ষেত্রে অবশ্য সেটা তেমন তোয়াক্কা করে না এই সমাজ।

এক কথায় বলা যায়,আমাদের সমাজে যৌন সম্পর্ককে বৈধতা দেয়া,সন্তানের জন্মকে বৈধতা দেয়ার নামই হচ্ছে বিবাহ। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করা হলেও আমাদের সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এটাই বাস্তব।

এই বিবাহ নামক চুক্তিতে যে পুরুষ সে হবে স্বামী আর নারী হবে স্ত্রী। স্বামী শব্দের অর্থ হচ্ছে 'প্রভু' আর স্ত্রী হচ্ছে 'সেবিকা'। মানে এই চুক্তি অনুযায়ী পুরুষ হবে প্রভু আর নারী হবে সেই প্রভুর সেবিকা। সেই হিসাবে বিবাহ নামক চুক্তির মাধ্যমে একজন পুরুষ তার সারা জীবনের জন্য একজন বৈধ সেবিকা কিনে নিল। যেখানে সমাজের কোন বাঁধা থাকবে না। প্রভু যাই বলবে সেবিকাকে তাই করতে হবে। তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছা বলতে কিছুই থাকবে না।

মূলত পুরুষতান্ত্রীক সমাজ ব্যবস্থা নিজেদের সুবিধার জন্য,আরাম আয়েসের জন্য নারীকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করার জন্যই এই বিবাহ নামক চুক্তির প্রচলন করেছে। যেখানে সকল ধরনের সুবিধা ভোগ করবে কেবল প্রভু মানে পুরুষ। আর নারীর কাজ হবে প্রভুকে তুষ্ট রাখা,সেবা করা,বছর বছর সন্তান জন্ম দিয়ে প্রভুর জন্য উত্তরসুরী তৈরি করা। এই উত্তরসুরীর মাঝেও আছে ভেদাভেদ। নারীকে অবশ্যই ভবিষ্যতে প্রভুত্ব করার জন্য আরেক ছোট প্রভুর জন্ম দিতে হবে। না পারলে আনা হবে আরেকজন সেবিকা বা দাসী। সে না পারলে আসবে আরেকজন। এক কথায় সেবিকা বদলের বৈধতা শুধু প্রভুদেরকেই দিয়েছে এই সমাজ। সমাজে সেবিকাদের ইচ্ছার কোন বৈধতা নেই।

আমাদের সমাজে হবু সেবিকা নির্বাচনের প্রক্রিয়াও আরো হাস্যকর। তাকে সুন্দর হতে হবে,শিক্ষিত হতে হবে,সংসার সামলানো জানতে হবে,আর সবচেয়ে বড় কথা কুমারী হতে হবে। প্রভু হিসেবে সে কতোটুকু যোগ্য সেটা দেখার প্রয়োজন নেই। শুধু নারীকে কুমারী হতে হবে। সেই মেয়েকে আবার কুমারী প্রমাণ করার জন্য তার বাবা মা'র চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকে না। কুমারী না হলে তাদের মেয়ে যে সমাজ নামক বাজারে অচল মাল। তার জন্য অধিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। কিন্তু কুমারী হলে মালের কাটতি ভাল। কম বিনিয়োগে কাজ চলে যায়। আবার গ্রাম্য সমাজে বাল্য বিবাহ দেয়ার একটা চর্চা আছে যা আরো মারাত্মক। প্রভুর বয়স যতই হোক না কেন দাসী হতে হবে অল্প বয়সের। যত কম বয়সের হবে ততোই ভাল। কিশোরী থেকে যতো বালিকা হতে থাকবে ততোই তার চাহিদা কমে আসবে প্রভুদের কাছে তথা আমাদের সমাজের কাছে। আইবুড়ি মেয়ে বিয়ে হবে না। মেয়েকে বিয়ের বাজারে চালাতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

যদি কোন কারণে সমাজপতিদের এইসব চালবাজির বিরোধীতা করতে যায় কেউ তখনই হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য টেনে আনা হয় ধর্মকে,ধর্মীয় বিধি বিধানকে। বলা হয় ধর্মে এই বলা হয়েছে,সেই বলা হয়েছে। এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আসা হয় যার বিরুদ্ধে আমাদের দেশের ধর্মভীরু মানুষ কিছু বলার সাহস পায় না। ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যায়,প্রচলিত সকল ধর্মেই ঘুরে ফিরে পুরুষতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপন চেষ্টা করা হয়েছে। নারীর বেলায় বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে পাপ কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে একাধিক বিয়েতে কোন সমস্যা নেই। স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর স্বর্গ বলে নারীকে সারা জীবন স্বামীর কাছে দাসী বানিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিটা ধর্মে। সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে,বলে সংসারের যাবতীয় দায়ভার স্ত্রীর কাঁধে দিয়ে দেয়া হয়। স্বামীর কোন দায় নেই। সংসারে কোন সমস্যা হলেই সকল দোষ স্ত্রীর উপর। কিন্তু সংসার যদি ভাল ভাবে চলে তখন উদাহরণ হিসেবে পরিবারের কর্তা তথা প্রভুর নামই নেয়া হয়। কোন নারীকে তালাক দেয়া হলে তাকে আবার হিল্লা বিবাহের মাধ্যমে আগের স্বামীর কাছে ফিরে আসার ধর্মীয় ফতোয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু স্বামী বা প্রভুর জন্য কিন্তু কোন ব্যবস্থা বা শাস্তির বিধান রাখা হয় নি এসব ফতোয়াতে। যদিও প্রচলিত আইনে এই ফতোয়াকে বৈধতা দেয়া হয় নি বরং এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজ থেকে এই রীতি কিন্তু এখনো উঠে যায় নি।

স্বামীর মৃত্যুর পর সাধারণত স্ত্রীকে বিধবা হিসাবে সাজসজ্জা বিহীন অবস্থায় থাকতে হয়। রঙ্গীন কাপড়,অলংকার সব কিছুই ত্যাগ করতে হয়। একটা সময় ছিল যখন হিন্দু রীতিতে স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্ত্রীকেও স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারা হত। সেই সতীদাহ প্রথা এখন আর নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে বিধবাদের দুর্ভোগের ভয়াবহতা এখনো আছে। অনেকে বলতে পারেন শহুরে সমাজে এখন ওসব কেউ মানে না। আমিও বলি শহুরে সমাজ ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশ কিন্তু গ্রাম প্রধান দেশ। শহরের চেয়ে গ্রামের সংখ্যাই বেশি। তাই উদাহরণ হিসেবে গ্রাম্য সমাজটাই তুলে আনা বাঞ্ছনীয়। খেয়াল করলে দেখবেন, স্ত্রীর মৃত্যুর পর কিন্তু স্বামীর ক্ষেত্রে কোন ধরনের বিধি নিষেধ থাকে না। স্বামী যা খুশি করতে পারে। সমাজ তাতে বাধা দেয় না। কারণ সে প্রভু। একটা দাসী গেলে প্রভুরা আরো দাসী নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু দাসীরা সর্বদাই সর্ব সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

আমাদের দেশে নারী অধিকার,নারীর ক্ষমতায়ন,সম অধিকার নিয়ে কথা বলা হয়। নারীকে পুরুষের সমকক্ষ বলে দাবি করা হয়। কিন্তু বিবাহ নামক চুক্তির মাধ্যমে সেই নারীকেই দাসী বানিয়ে বসিয়ে রাখা হয় পুরুষের পায়ের নিচে। পুরুষকে যৌন সুখ দেয়ার একটা বৈধ পন্থা হিসেবে সমাজ বিবাহকে ব্যবহার করে। যেখানে একজন নারীর সুখ স্বাচ্ছন্দকে কখনো সমাজের নামে,কখনো ধর্মের নামে,কখনো লোকলজ্জার নামে বলি দেয়া হয়। স্রেফ একটি চুক্তির মাধ্যমে মানুষ থেকে হয়ে যায় দাসী বা সেবিকা। সন্তান জন্মানোর মেশিন। এই যদি হয় আমাদের সমাজে বিবাহের বাস্তব চিত্র,তাহলে শুধুমাত্র পুরুষের দাসত্ব করার জন্য,যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য,সন্তান জন্মানোর যন্ত্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য, একজন নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার নামে ব্যবহৃত এই বিবাহ প্রথার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে আমাদের সমাজে,আমাদের দেশে ???

- মিস্টার জিরো


মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

সব বিয়েই কি এরকম হয়?
কিছু বিয়েতেতো দম্পতি সঙ্গীর মতো একজন আরেকজনকে ধারন করেন।

এদের কথাও আসতে পারতো।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মিষ্টার জিরো এর ছবি

মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যযোগ আপু।
হ্যাঁ আপু, এমন দম্পতিও আছেন। তবে সংখ্যা অনুপাতে অনেক নগন্য। আমিও ভেবেছিলাম এদের কথা লিখবো। লিখলে হয়তো ভাল মন্দের তফাৎটা দেখানো যেত। কিন্তু পরে ভাবলাম শতকরা ৮০-৮৫ ভাগের কাছে এই ১০-১৫ ভাগ মানুষকে এনে তুলনা করাটা কতোটা যৌক্তিক হবে ! তাই লিখিনি।

তবে এই দম্পতিরা কিন্তু অধিকাংশই শহুরে সমাজের। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি গ্রাম্য সমাজদের বিভৎসা তুলে আনতে। শহরের লোকজন অনেক মডারেট হয়েছেন ঠিকই কিন্তু শতকরা ১-২ ভাগের বেশি কিন্তু উদার চিন্তা ধারণ করতে পারেন নি এখনো।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

কি জানি আমি এত ফাইনাল সমাপ্তিতে আসিনি কখনো।

স্রেফ একটি চুক্তির মাধ্যমে মানুষ থেকে হয়ে যায় দাসী বা সেবিকা। সন্তান জন্মানোর মেশিন। এই যদি হয় আমাদের সমাজে বিবাহের বাস্তব চিত্র,তাহলে শুধুমাত্র পুরুষের দাসত্ব করার জন্য,যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য,সন্তান জন্মানোর যন্ত্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য, একজন নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার নামে ব্যবহৃত এই বিবাহ প্রথার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে আমাদের সমাজে,আমাদের দেশে ???

নিজেকে কখনো পাইনি তো এভাবে। অনেক বন্ধুকেও দেখেছি সম্মতি, বন্ধুত্ব সব নিয়ে সংসার করতে। তার মানে ব্যতিক্রমও আছে।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মিষ্টার জিরো এর ছবি

হ্যাঁ আপু,ব্যতিক্রম নেই সেটা কিন্তু আমি বলি নি। ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু সেটা শহরে। যেখানে আধুনিকতা,শিক্ষা,আধুনিক চিন্তা ভাবনার ছোঁয়া লেগেছে। বাকিটা কিন্তু এইরকমই।
আমি আমার পরিবারে এরকম দেখি নি। কিন্তু শুনেছি আমার দাদুর আমলে এমনটি হয়েছে ঠিকই। পরিচিত বন্ধুদের দেখেছি সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা মিশিয়ে সম্পর্ককে মিষ্টি করতে। কিন্তু কতটুকু মিষ্টি করতে পেরেছে ? হয়তো শুধুমাত্র যৌনতা বা সন্তান জন্মানোর জন্য বিয়ে করেনি,ভালোও বেসেছে। কিন্তু কথা বলার,সিদ্ধান্ত নেয়ার,সত্যিকারের অধিকার বলতে যা যা বুঝায় তা কি দিয়েছে বা দিতে পেরেছে ? যদি পেরে থাকে তাহলে তা কতোজন ?

সত্যপীর এর ছবি

হাল্কা রিভার্সের গন্ধ পেলাম মনে হয়।

..................................................................
#Banshibir.

মিষ্টার জিরো এর ছবি

হ্যাঁ ভাই, একটু রিভার্স করে ভাবলাম। সবাইতো মূল শ্রোতে গা ভাসায়। তাই একটু উলটো ভাবে বিশ্লেষণ করলাম। চোখ টিপি

এক লহমা এর ছবি

"একজন নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার নামে ব্যবহৃত এই বিবাহ প্রথার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে আমাদের সমাজে,আমাদের দেশে ???" - এই রকম বিবাহ প্রথার দরকার নেই নিশ্চয়ই, তাই বলে বিবাহ প্রথাটার-ই দরকার নেই এমন সিদ্ধান্তেও কি পৌঁছাতে চাইছিলেন? সেটা কিন্তু ভিন্ন আলোচনার বিষয়।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মিষ্টার জিরো এর ছবি

অবশ্যই না ভাই। আমিও বিবাহের পক্ষের মানুষ। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন আমি শুধু সেই সমাজ ব্যবস্থার কথা বলেছি যেখানে একজন নারীকে বিয়ের মাধ্যমে দাসী ছাড়া আর কিছুই হতে দেয়া হয় না। আমি শুধু সেই বিবাহ প্রথার বিরোধীতা করছি যেখানে সমাজ বাধ্য করে একজন নারীকে নিজের ইচ্ছা,শখ,আহ্লাদের গলা টিপে হত্যা করে একজন পুরুষের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে। আর সমাজে এই যদি বিবাহের সংজ্ঞা বা অবস্থা, তাহলে এমন বিবাহের বিরুদ্ধে আমি।
শহরাঞ্চল থেকে চোখ ফিরিয়ে একটু বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখেন, আশা করি আমার লেখার মূল সুর ধরতে পারবেন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

স্রেফ একটি চুক্তির মাধ্যমে মানুষ থেকে হয়ে যায় দাসী বা সেবিকা। সন্তান জন্মানোর মেশিন। এই যদি হয় আমাদের সমাজে বিবাহের বাস্তব চিত্র,তাহলে শুধুমাত্র পুরুষের দাসত্ব করার জন্য,যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য,সন্তান জন্মানোর যন্ত্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য, একজন নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার নামে ব্যবহৃত এই বিবাহ প্রথার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে আমাদের সমাজে,আমাদের দেশে ??
আপনি একটা সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন তাই এভাবে আপনার নজরে এসেছে।বাস্তবতা কিন্তু এটা নয়। পরিবার হলো নির্ভরতা ও বিশ্বাসের জায়গা।
মা হননি, সেবিকা নন, যৌন চাহিদা মেটাতে পারেননা এমন অনেক গৃহকর্ত্র্র্রী আছেন।

মিষ্টার জিরো এর ছবি

আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
আমিও মোটেও সংকীর্ণতা নিয়ে দেখছি না। পরিবার নির্ভরতা আর বিশ্বাসের জায়গাটা কোন সমাজে ? একটু ভেবে বলুনতো গ্রামে যখন একটি মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয় তখন তার উপর ঠিক কতোটুকু নির্ভরতা দেখায় তার স্বামী ? সারাদিন ঐ মেয়েটার অধিকার ঠিক কোন জায়গায় থাকে ? বেডরুম আর রান্নাঘর ছাড়া আর কোথায় অধিকার নিয়ে টিকে থাকে একজন নারী ?
ঘুম থেকে উঠার পর থেকে তার বিচরণ ক্ষেত্রটা কি ? সবাইকে খুশি রেখে চলতে হয় সারাটা দিন। রাতে স্বামী বাসায় আসলে সেবা করার কাজে ব্যস্ত হতে হয়। আর সব শেষে স্বামী যদি বলে সঙ্গম করতে তখন কি স্ত্রীর ইচ্ছার বা অনিচ্ছার কথা মাথায় থাকে স্বামীর ?
পরিবারের কোন সিদ্ধান্তটা স্ত্রী নেন ? পরিবারের কোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্ত্রীর মতামত নেয়া হয় ? এমনকি বাচ্চার নাম রাখার ক্ষেত্রেও কি বাচ্চার মায়ের মত নেয়া হয় ? কতোজন বাচ্চার নাম তার মা রেখেছেন আমাদের সমাজে ?
এবার আসি শহুরে সমাজে। কতজ়োন স্ত্রীকে দেখেছেন স্বামীর আগে ভাত খেতে বা কতোজন স্বামীকে দেখেছেন স্ত্রীকে খেতে দিয়ে তারপর নিজে খেতে ? কতজন কর্মজীবি নারীকে দেখেছেন সারাদিন কাজ করে এসে খাবার রেডি পেতে ? বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পেতে ? কতোজন গৃহিনীকে দেখেছেন নিজের সংসারে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে ?
শুধু নিজের পরিবার বা আত্মিয় স্বজনের বাইরে একটু চোখ রাখুন। দেখবেন নির্ভরতা আর বিশ্বাসটা শুধুই কাগজে কলমে। বাস্তবে তার প্রয়োগটা ঠিক কতটুকু হচ্ছে।
একটু কষ্ট করে আদালতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন,প্রতিদিন কতোগুলো পারিবারিক নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয়, কতোজন নারী নির্যাতিত হয়ে এসে আদালতের দ্বারস্ত হন।
আনুরোধ থাকবে লিখাটা কষ্ট করে এরেকবার পড়ার। আশা করি তখন আসল কথাটা ধরতে পারবেন। ধন্যবাদ হাসি

হিমু এর ছবি

বিরাম চিহ্নের আগে স্পেস হয় না, পরে হয়।

মিষ্টার জিরো এর ছবি

ধন্যযোগ ভাই। শিক্ষনীয় উপদেশ শিরধার্য হাসি

সিদ্ধার্থ মাঝি  এর ছবি

লেখাটায় বিবাহ সম্পর্কিত সমাজে জারীকৃত ধারণাগুলি কি কি সেটার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেলাম, কিন্তু লেখকের নিজের উপলব্দি অনুপস্থিত। কয়েকটা জায়গায় সরলীকরণ/সাধারণীকরণ আছে, আবার কিছু জায়গায় আলোচনাটা সুনির্দিষ্ট না। বিবাহ সম্পর্কিত অনেকগুলি বিষয় এক সাথে আসায় কোন একটা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত এবং কার্যকর আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনে কমে গেলো। তাই আশা করবো, ইস্যুগুলি সুনির্দিষ্ট করে লেখাটা একটা ধারাবাহিকতা পাবে যাতে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটা কার্যকর আলোচনা তৈরি হবে।

মিষ্টার জিরো এর ছবি

মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাই। একটু সুনির্দিষ্ট করে ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে আরেকটু বাধিত হতাম। নিজের জ্ঞান বৃদ্ধির স্বার্থে জিনিসটা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি


স্রেফ একটি চুক্তির মাধ্যমে মানুষ থেকে হয়ে যায় দাসী বা সেবিকা। সন্তান জন্মানোর মেশিন। এই যদি হয় আমাদের সমাজে বিবাহের বাস্তব চিত্র,তাহলে শুধুমাত্র পুরুষের দাসত্ব করার জন্য,যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য,সন্তান জন্মানোর যন্ত্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য, একজন নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার নামে ব্যবহৃত এই বিবাহ প্রথার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে আমাদের সমাজে,আমাদের দেশে ???

ভালো বলেছেন। সুন্দর ভাবনার সুন্দর উপস্থাপন চালিয়ে যান। শুভ কামনা

মিষ্টার জিরো এর ছবি

সাথে থাকার জন্য ধন্যযোগ হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

লেখাটা পড়ে মনে হইল রচনা পড়তেসি, লেখায় কোন প্রাণ বা লেখকের নিজস্ব উপলব্ধি নাই। মাইণ্ড খাইয়েন না, যা মনে হইল বললাম।

লিখতে থাকেন।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মিষ্টার জিরো এর ছবি

মাইন্ড খাবো কেন ভাই ? আমি নেতিবাচক কথা বার্তা বেশি পছন্দ করি। কারণ তা থেকে শিক্ষা নেয়া যায়। আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এই যদি হয় আমাদের সমাজে বিবাহের বাস্তব চিত্র,তাহলে শুধুমাত্র পুরুষের দাসত্ব করার জন্য,যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য,সন্তান জন্মানোর যন্ত্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য, একজন নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার নামে ব্যবহৃত এই বিবাহ প্রথার কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে আমাদের সমাজে,আমাদের দেশে ???

আপনি 'বাস্তব চিত্র' বলে যেটা দাবী করছেন সেটা তো সার্বজনীন সত্য নয়। আপনি যা যা বলেছেন ত সমাজে ঘটছে -এটা যেমন সত্য। তেমনি, আপনার বলার বাইরেও অনেক কিছু ঘটছে -সেটাও সত্য। আপনি অতি সরলীকরণ করেছেন বলে মনে হয়েছে।

একটা তুলনামূলক উদাহরণ টানি: বাংলাদেশে ব্যবসায় করতে গেলে অনেক অন্যায় করতে হয়। দুনম্বরি করতে হয়, সিমেন্ট কম দিয়ে বালি বেশি দিতে হয় -এসব বলে আমাদের দেশে ব্যবসায় পেশায় থাকার আদৌ দরকার আছে কি? -এরকম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়াটা খুব একটা যুক্তিসঙ্গত শোনায় কি?

ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা হাসি

মিষ্টার জিরো এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কথা হচ্ছে আমি পরিস্কার করেই কয়েকটি কথা উল্লেখ করেছি, "শুধুমাত্র পুরুষের দাসত্ব করার জন্য, যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য, সন্তান জন্মানোর যন্ত্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য, একজন নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার নামে ব্যবহৃত এই বিবাহ প্রথার" বলে আলাদা করে দিয়েছি। বিবাহ মানে যদি এটাই হয় তাহলে এমন বিয়ের কি প্রয়োজন আছে ?
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝি তাতে ব্যবসা আর বিয়ে এক না। ব্যবসাতে মুনাফার একটা বিষয় থাকে। যে জিনিসের লোভে মানুষ দু'নাম্বারি করে। কিন্তু বিয়েতে কি লাভ লোকসানের কোন বিষয় থাকে ?
তবুও আমরা চাইলে পারি দু'নাম্বারি না করে সৎ ভাবে ব্যবসা করতে। ঠিক যেমনটা পারি স্ত্রীকে এইসব হাবি জাবি না ভেবে মানুষ ভাবতে এবং নিজের সমকক্ষ ভাবতে। আমার কথাটা আশা করি এখন বুঝাতে পেরেছি।
আমি যেমনটা দেখিয়েছি সেটার পাশাপাশি যে ভাল কিছু ঘটছে না তা কিন্তু আমি বলিনি। আমি কিন্তু উপরে উল্লেখ করেছি ভালও হচ্ছে। কিন্তু সেটা অতি নগন্য। একটু খেয়াল করে দেখবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

মেয়েদের বিয়ের আগে বাবার বাড়ি, বিয়ের পর সামীর বাড়ি, বৃদ্ধ কালে ছেলের বাড়ি। আদৌ কি নিজেদের পায়ের নিচে মাটি আছে? শুধু মৃত্যুর পর ওই সাড়ে তিন হাত ঈ নিজের। শুধু যে সংসারে দাসত্ব করা তাও নয়। ঘরের বাইরে কাজ করা মেয়েরাও কি আসলেই কিছু নিজের দাবী করতে পারে? কষ্ট করে উপার্জন করতে দেওয়াটাও এক রকমের করুণা মনে করেন শ্রদ্ধেয় প্রভুরা।
- আকাশবানী

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আপনার সাথে একমত , বাংলাদেশের অধিকাংশ দম্পতির ক্ষেত্রে দেখা যায় শুধু মাত্র দেহের মিলন হয় মনের মিলন হয় না । মনের মিলনটা আগে প্রয়োজন ।
মনোমিলন ছাড়া দেহ মিলন--- ওটা একেবারে অরণ্যের আদিম অন্ধকার জীবনে উপনীত করে দিয়ে বলে--- তুমি জন্তু, তুমি জন্তু।
--- তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়।

-- shohan4556

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি সন্তান জন্ম দানকে এত নিচু করে দেখেন কেন ??!! আর বললেন অফিস থেকে স্বামী আসলে তার খেদমতকে দাসীর সাথে তুলনা করলেন । এই স্বামী কি আপনার আর পরিবারের অন্ন বস্ত্রের জন্য আর একজনের দাস , চাকর হিসেবে অফিস থেকে খেটে বাসায় আসে নয় কি ??!!! শুধু এলো মেলো ভাবে নিজের বিচ্ছিন্ন চিন্তা ধারা লিখলেই হয় না। একটু গভিরে চিন্তা করাটা কাম্য আমাদের ।।।।।।।।।।।।।।।। আপনার লেখার সাথে আমার মনে হয় সব মেয়েরাই দ্বিমত পোষন করবে।।।।।।।।।।

অভ্র নীল এর ছবি

জ্ঞানীগুনিজনের মাঝে অর্বাচীনের কথন। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আসাকরি। যোগ্যতমের গ্রহন যোগ্যতা সম্পর্কে একটা মতবাদ আছে। অাদিম যুগথেকে শ্রমবন্টন হয়ে আসছে। প্রকৃতি যাকে নির্বাচন সে সেই দায়িত্ব নিয়েছে। প্রানীকুলের দিকে তাকান ব্যপারটা বুঝবেন আশাকরি। হাতেগোনা কয়েকটি প্রজাতি বাদে সকল পুরুষ শক্তসমর্থ অধিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন। কি আকার আকৃতিতে কি আচার আচরনে।রেফারেন্স দিলাম না। তর্কপটু দের জন্য ক্রমগতি। খোলা চোখে দেখুন তো বিয়ে কেনো হয়। সন্তান কার? উপোভোগের কথা যদি বলেন তাহলে কি সেটা একমাত্র পুরুষই করে?একজন পুরুষ কেন সারাজীবনের ভরনপোষণ সহ যাবতীয় দায় নেবে?একটা মেয়ে কোনন যোগ্যতায় একটা নতুন পরিবারের যাবতীয় তন্ডুলাদি সহ যাবতীয় সবকিছু ব্যবহারের অধিকার পায়?একটা মেয়ের কি নিজের কোন পরিবার বা সম্পত্তি থাকে? ব্যতিক্রম অগ্রাহ্য। কি নিয়ে একটা মেয়ে নতুন সংসার শুরু করে? ফ্রিজ,টিভি, ওয়াসিংমেসিন,এসি,ওভেন সহ যাবতীয় ব্যবহার্য পুরুষটিকে যোগাড় করতে হয়। কাজের মেয়ের মাসিক বেতন সহ তাকেই জোগাড় করতে হয়।আপনি তাহলে করেন টা কি? ছেলের দেখাশুনা?ছেলে আপনাকে মা বলে না বুয়া। সরি ওটা তো আপনার স্বামীর ব্যক্তিগত উৎপাদন। আপানার সুন্দর বা অসুন্দর মুখশ্রী যা ঈশ্বর প্রদত্ত আপনার কোন যোগ্যতা থাক বা না থাক সারা জীবনের যাবতীয় চাহিদা পুরন একেবারে নিশ্চিত। মাধ্যম বিবাহ। সংযুক্তি যদি কোন মেয়ে আমার ভরনপোষন সহ যাবতীয় মৌলিক চাহিদা মেটাতে সমর্থ হয় আমি তার ঘরকন্না সহ সন্তান পালন করবো।

দময়ন্তী এর ছবি

আপনি যাদের কথা বলছেন সেইসব বরে পোষা ঘরে পোষা মেয়েদের বাইরেও একটা বিরাট সংখ্যক মেয়ে আছে ভাগ্যিস!

যেসব কাজের কথা বলছেন সেগুলো পয়সা দিয়ে করাতে (অন্যের গর্ভে সন্তান উৎপাদনসহ) বাংলাদেশে কিরকম খরচ হয়?

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।