মিডওয়ের যুদ্ধ (শেষ পর্ব)
প্রথম পর্বের লিংকঃ http://www.sachalayatan.com/guest_writer/54694
এখনও জাপানিদের পক্ষে যুদ্ধ জয় করা সম্ভব।
একমাত্র টিকে থাকা জাপানি ক্যারিয়ার হিরিয়ুর ডেক থেকে জঙ্গিবিমানের বহর উড়ে গেল।
ইউএসএস ইয়র্কটাউন
তাদের লক্ষ সব থেকে কাছে থাকা মার্কিন ক্যারিয়ার ‘ইউএসএস ইয়র্কটাউন’।
তারা তিনটি বোমা ফেলতে সক্ষম হল। কয়েকজন নাবিক নিহত হলেন।
জাপানিরা ১৩ টি জঙ্গিবিমান এবং ৩ টি এসকোর্ট বিমান হারাল।
কিন্তু সবথেকে বড় কথা হল মার্কিন ক্যারিয়ারের ডেকে নেই কোন বোমা, টর্পেডো বা ফুয়েল বিস্ফোরণের অপেক্ষায়।
এত আগুন আর ধোঁয়ার পরের ১৯ নট গতিতে ইয়র্কটাউন সাগরের বুকে ভেসে বেড়াতে পারল।
২ ঘণ্টা পর……….
ইয়র্কটাউনের নাবিকরা যখন তার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যস্ত………..শত্রুবিমানের দ্বিতীয় বহর আক্রমণ করলো। ইয়র্কটাউনের ফাইটার পাইলটরা শত্রুবিমানের মুখোমুখি হতে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়লো। তার বিমান বিধ্বংসী কামান আকাশের দিকে গর্জে উঠতে থাকল।
একের পর এক জাপানি টর্পেডো বম্বার ধ্বংস হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলে তলিয়ে যেতে থাকল।
ধেয়ে আসছে টর্পেডো। ভালো করে দেখুন ছবিতে
কিন্তু তারপরও শত্রুরা আসতে লাগলো এবং কোন এক জাপানি টর্পেডো বম্বার থেকে টর্পেডো নিক্ষেপ করা হল। ইয়র্কটাউনের নাবিকেরা দেখলেন এক মৃত্যুদূত এঁকেবেকে ধেয়ে আসছে তাদের দিকে…………এক ঘোর অমনিশা নিয়ে।
একটি মার্কিন ক্যারিয়ার অকেজো হয়ে গিয়েছে।
এডমিরাল ফ্লেচার তার কম্যান্ড সেন্টার ডেস্ট্রয়ার এসটোরিয়াতে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
যুদ্ধের শুরুতে ছিল জাপান ৪ আমেরিকা ৩।
এখন আমেরিকা ২ জাপান ১।
জাপানি ক্যারিয়ার হিরিয়ুকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠেকাতে হবে।
হোরনেট এবং এন্টারপ্রাইজের বুক থেকে ডিক বেস্টের নেতৃত্বে একদল ডাইভ বম্বার উড়ে গেল।
ডাইভ বম্বারের পাইলট রা। ডিক বেস্ট মাঝে বসে আছেন
যখন তারা হিরিয়ুকে পেলেন তারা আক্রমণ করলেন।
হিরিয়ুর বিমান বিধ্বংসী কামান তাদের ঠেকাতে পারল না। ডিক বেস্টের বিমান থেকে ফেলা বোমা সোজা আঘাত হানল। সাথে আরও ৮ মার্কিন বিমানের বোমা।
হিরুয়ুতে যেন নরক নেমে আসল। কি আশ্চর্য এরাই ছয় মাস আগে পার্ল হারবারে প্রলয় ঘটিয়ে এসেছে। ডিক বেস্ট পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সে সময় নিজেকে সৃষ্টির রাজা মনে হচ্ছিল। প্রতিশোধের আগুন যত মধুর হতে পারে আজ বুঝলাম।”
হিরিয়ুতে আটকা পড়ে রয়েছেন তাইসুকি মারিয়ামা- যে জাপানি পাইলট কিছুক্ষণ আগে ক্যারিয়ার ইয়র্কটাউনকে অকেজো করে দিয়ে এসেছেন।
তিনি পরে বলেছিলেন যে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেকে মারা যান। ডেকের উপর হাত পা হারিয়ে অনেকে কাতরাচ্ছিল। মেডিকেল কোরের ডাক্তাররা রক্তে ভিজে ডেকের উপর সার্জারি করছিলেন। অনেকে পুড়ে কালো কয়লা হয়ে গিয়েছিল।
হিরিয়ু
সরিয়ু
আকাগি
কাগা
১৯৪২ সালের ৪ জুন সন্ধ্যার আগেই সব জাপানি ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেল। শত শত জাপানি সৈন্য মারা গিয়েছে। অনেকে সমুদ্রে ভাসছে মারা যাওয়ার জন্য।
৫ জুন। আঘাত পাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও ইয়র্কটাউন তখনও ডুবে যায় নাই। তাকে এসকোর্ট করে নিয়ে যাচ্ছিল ডেস্ট্রয়ার হ্যামেন।
কেউ জানে না প্রশান্ত মহাসাগরের জলের নিচ থেকে শত্রু সাবমেরিন তাদের দেখছে। তাদের পেরিস্কোপে দুটো শিকার………………………
জাপানি সাবমেরিনের টর্পেডো হ্যামেনকে দুই টুকরো করে দিল এবং ৮৪ জন নাবিকসহ সলিল সমাধি ঘটালো। আর ইয়র্কটাউন ভয়ংকরভাবে ক্ষতির শিকার হল। সেই দিন ইয়র্কটাউন যুদ্ধ করলো টিকে থাকার জন্য। কিন্তু আসতে আসতে করে তার সলিলি সমাধি ঘটলো। তার কামানগুলো আকাশপানে চেয়ে ছিল তখনও যেন কোন দুর্জয় যোদ্ধার শেষ প্রতিরোধের জন্য এবং এক গর্বিত বীরের মত তার চিরবিদায় ঘটল।
ইউএসএস হ্যামেনের সলিল সমাধি
যুদ্ধের শেষে আমেরিকা ১ টি ক্যারিয়ার, ১ টি ডেস্ট্রয়ার এবং ১৫০ টির মত বিমান হারাল। ৩০৭ জন সৈন্য নিহত হয়েছেন।
এদিকে জাপান হারাল ৪ টি ক্যারিয়ার, ২ টি ক্রুজার এবং ২৫০ টি বিমান। কিন্তু ভাওয়াবহ বিষয় হল ৩০৫৭ জন জাপানি নাবিক এবং সৈন্য নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধ শেষের ৫০ বছর পর দুই যোদ্ধা পাশপাশি। বাম দিকে জাপানি পাইলট তাইসুকি মারিয়ামা। ডান দিকে মার্কিন পাইলট ডিক বেস্ট এবং মাঝে একজন সাংবাদিক যিনি ঐ যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী।
আর তিন বছর পর জাপান আত্মসমর্পণ করবে এবং বিজ্ঞানের অপব্যবহার দেখবে বিশ্ব।
যে জাপান ছিল যুগ যুগ ধরে নৌযুদ্ধে অজেয় তার পতন শুরু হল মিডওয়ের মাধ্যমে।
একাকী মানব
মন্তব্য
তিন গোয়েন্দার "কালো জাহাজ" বইটার কথা মনে পড়ে গেল...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ছবিগুলোর সূত্র দিলে ন্যায্য হতো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ছবিগুলো বেসাইজ হয়ে গেছে গো দাদা ৷
আর ছবিগুলোর সাথে আরেকটু বর্ণনা থাকলে ভালো হতো - মনে হচ্ছে বাংলাপিডিয়ার কোনো এন্ট্রি পড়ছি ৷
মরুচারী
আহারে আরেকটু কম তাড়াহুড়া করে লেখা গেলে তোফা হইতো!
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
একটা ভালো লেখা হতে হতেও হলো না। এতো এতো তথ্য, কিন্তু আপনি গাথুনিটা ঠিকমতো দিলেন না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন