ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল এস্ট্রোনট হয়ে মঙ্গলগ্রহে যাব। কিছু বড় হওয়ার পরেই বুঝলাম ইহা সম্ভব নহে। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম ফাইটার প্লেনের পাইলট হব। আরও কিছুদিন যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম ইহাও সম্ভব নহে। শেষ অবলম্বন হিসাবে সিদ্ধান্ত নিলাম ইবনে বতুতার মত পর্যটক হব। চাকরি জীবনে প্রবেশ করে বুঝতে পারলাম বাংলাদেশে প্রাইভেট চাকরি করে পর্যটক হওয়া এস্ট্রোনট কিংবা ফাইটার প্লেনের পাইলট হওয়া থেকেও কঠিন।
কিন্তু আমার যে ঘুরবার খুব শখ। ইবনে বতুতা কিংবা হিউয়েন সাং হতে না পারি, নিদেনপক্ষে তারেক অণু হওয়া তো উচিৎ। আমার এই হতাশ মানসিক অবস্থা পরিদর্শন করে বিধাতার মনে কিছু দয়ার উদ্রেক হল। ফার্মাসিস্ট হিসাবে চাকরি পেলাম এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে। প্রতি মাসেই অফিসিয়াল ট্যুর, একেকমাসে একেকজায়গায়। এইভাবে বাংলাদেশের ৬০ টা জেলা ঘুরা হয়ে গেল। কিন্তু যেই পাহাড় আর অরণ্য আমাকে ভীষণ টানে সেই পাহাড়ের সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য মনটা আকুলি বিকুলি করছিল। অবশেষে অনেক কষ্টে বসকে ম্যানেজ করে ছুটি নিয়ে চললাম বান্দরবনের উদ্দেশ্যে। মিশন আলিকদমের আলী সুড়ঙ্গ।
আলীকদম যাওয়ার রাস্তাটা চমৎকার। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে বাসে রওনা হয়ে বুনো হাতির আবাসস্থল ফাঁসিয়াখালীর গভীর অরণ্য পাড়ি দিতে হয়। চারপাশের মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলা রাস্তার সৌন্দর্য আপনাকে চোখ মুদতে দিবে না একবারের জন্যও। মিরিঞ্জা, লামা পার হয়ে ২ ঘণ্টা পর ছোট্ট পাহাড়ি উপত্যকা আলীকদম পৌঁছলাম। চারদিক পাহাড়ের মাঝে এক চিলতে সমতল জায়গা। থাকার জন্য ভাল কোন গেস্ট হাউজ নেই। চাচাত ভাই আলীকদম ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত থাকায় কোথায় রাত কাটাব সেই নিয়ে কোন টেনশন ছিল না। টেনশন ছিল না গাইড যোগাড় করা নিয়েও। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুজন সৈনিক চললেন গাইড হিসাবে। সাথে ছিলেন সিনিওর ওয়ারেন্ট অফিসার পদমর্যাদার একজন অফিসার। এই ৪ জন মিলে চললাম আলী সুড়ঙ্গ অভিযানে।
আলী সুড়ঙ্গের অবস্থান আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট থেকে ১ কিলোমিটার পিছনে। চলার পথে অপূর্ব প্রকৃতি আপনাকে স্বাগত জানাবে।
যেই পাহাড়ে এই সুড়ঙ্গ অবস্থিত সেই পাহাড়ে যাওয়ার পথে একটা খাল পাড়ি দিতে হয়। টোয়াইন নামক এই খালটিতে সাধারণ অবস্থায় পানি খুবই কম থাকে। হেঁটেই পার হওয়া যায়। তবে ভরা বর্ষায় সাঁতরে পার হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
পাহাড়ি পায়ে চলা পথ ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। একস্থানে দেখলাম লোকজন গাছ কাটছে ফার্নিচার তৈরির জন্য। এইদিকে নাকি কাঠ অনেক সস্তা। খারাপ লাগলো। এমনিতেই আমাদের বনাঞ্চল কম আর যেগুলো আছে সেগুলোও উজাড় করবার তোড়জোড় চলছে। কাঠুরেদের অতিক্রম করে কিছুদূর যাওয়ার পর জঙ্গল ঘন হওয়া শুরু করল। এবং তখনই চমৎকার একটা কাঠের সেতু চোখে পড়ল। এত সুন্দর কাঠের সেতু আগে কখনও দেখি নি।
জুন মাসের তীব্র গরমে সেদ্ধ হচ্ছিলাম। যতই উপরে উঠছি রোদের তীব্রতা ততই বাড়ছিল। একবার ভাবলাম একটু জিরিয়ে নেই। মেহেদী ভাই (আমাদের আর্মি গাইড) নিষেধ করলেন। কেন নিষেধ করেছিলেন সেটা বুঝতে পারলাম আরও কিছুদূর চলার পর। পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে নামতে হঠাত করেই সরু একটা পাহাড়ি রাস্তায় প্রবেশ করলাম। এবং তাপমাত্রা এক ধাক্কায় ৮-১০ ডিগ্রি কমে গেল। ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম আমরা দুই পাহাড়ের মাঝের একটা ঝিরিপথে এসে হাজির হয়েছি। এই রাস্তা দিয়ে হেঁটেই আলী সুরঙ্গে যেতে হবে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ব্যাপারটা মেহেদী ভাই জানতেন বলেই আমাদেরকে বিশ্রাম নিতে নিষেধ করেছিলেন।
রাস্তার সৌন্দর্য দেখে নিমেষেই সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। ঝিরিপথ ধরে (ভিডিওটা দেখে নিন) আমরা সবাই এগিয়ে চললাম।
সকালে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটা পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল; তাই খুব দেখেশুনে পা ফেলতে হচ্ছিল। আমরা একটা ভুল করেছিলাম সেটা হচ্ছে সবাই খালিপায়ে রওনা দিয়েছিলাম। এই ভুলটা কেউ করবেন না। শীতকালে কেডস নিতে পারেন তবে বর্ষাকালে স্যান্ডেলই ভাল। বৃষ্টি হলেই এই ঝিরিপথে পানির স্রোত বয়ে যায়। সেই স্রোতে সাপও সাঁতার কাটে। এছাড়া জোঁক তো আছেই। অতএব সাধু সাবধান। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় সরু পথের কিছু জায়গা পানিতে ডুবে গিয়েছিল। সেই পথগুলো অতিক্রম করতে হয়েছে এক্রোবেটদের মত কসরত করে।
প্রায় আধা ঘন্টা ট্র্যাকিং এর পর একটা তেমাথায় পৌঁছালাম। ডানপাশের রাস্তায় একটু এগুতেই লোহার একটা সিঁড়ি চোখে পড়ল। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে এক নাম্বার সুড়ঙ্গে পৌঁছানো যায়। আর সিঁড়ির পাশ দিয়ে যেই রাস্তা চলে গেছে সেটা দিয়ে গেলে আলীর দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে যাওয়া যায়। আবার বাম পাশের রাস্তা দিয়েও দ্বিতীয় সুড়ঙ্গে পৌঁছানো যায়। পথটা অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির। একদিক দিয়ে গিয়ে ২ নাম্বার সুড়ঙ্গের এক প্রান্ত দিয়ে ঢুঁকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে আরেক রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা যায়। আপনাদের বুঝবার সুবিধার্থে গুগল ম্যাপ থেকে হুবুহু তুলে দিচ্ছি। যাওয়ার রাস্তা এবং রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্ট মার্ক করে দিলাম।
প্রথমে ১ নম্বর সুড়ঙ্গে প্রবেশ করব। বৃষ্টিতে ভিজে সিঁড়িগুলো পিচ্ছিল হয়ে আছে। সাবধানে উঠতে হবে। আছাড় খেলে আর দেখতে হবে না। যেই রাস্তা পার হয়ে এসেছি সেই রাস্তা দিয়ে একজন অসুস্থ মানুষকে বহন করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
সিঁড়ির একদম উপরের ধাপটা একদমই ক্ষয়ে গেছে। সাথে গাইড থাকায় রক্ষা। টেনে তুললেন সুড়ঙ্গের ভিতর। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিকে। সাথে করে নিয়ে আসা ৭ ব্যাটারির টর্চটা খুব কাজে দিয়েছিল।
১ নম্বর সুড়ঙ্গটা খুবই ছোট। কিছুদূর এগুতেই দেখি রাস্তা শেষ। ছোট যেই রাস্তা সুড়ঙ্গের ভিতর ঢুঁকেছে সেগুলো দিয়ে বড়জোর একটা বিড়াল প্রবেশ করতে পারবে। এই সুড়ঙ্গ কোন পর্যন্ত চলে গেছে কে জানে।
১ নং সুড়ঙ্গের ভিতরে ঢুঁকেছিলাম ২ জন। ১ জন ছিল সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখে আরেকজন নিচে। সুড়ঙ্গ যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকে সুড়ঙ্গের মুখটাকে দারুণ দেখাচ্ছিল। যেন আঁধারের প্রান্তবিন্দুতে একগুচ্ছ আলো।
সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়ার সময় আরেক ঝামেলা। কোনোমতে তো উঠেছিলাম এখন সিঁড়ি বেয়ে নামব কি করে? অনেক কসরত করে মেহেদী ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে নামলাম শেষ পর্যন্ত। এইবার গন্তব্য ২ নং সুড়ঙ্গ। তেমাথায় এসে বামপাশের রাস্তা ধরে যাত্রা শুরু করলাম। এই রাস্তা আগের রাস্তা থেকেও সরু এবং দুর্গম। নিজেই দেখুন।
কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা এতটাই সরু ছিল যে খুব কষ্ট করে পার হতে হয়েছে। আর কয়েক জায়গায় এসে তো আটকেই গিয়েছিলাম সামনে যাওয়ার রাস্তা না পেয়ে। চিকন হওয়ার যে অনেক সুবিধা সেইটা এইবার বুঝতে পেরেছি। চিকন ছিলাম বলেই গাছ গাছালির মাঝখানের প্রায় অদৃশ্য ফাঁকা জায়গাটুকু পাড়ি দিতে পেরেছিলাম। ভাগ্যিস আছাড় খাই নি। তাহলে আর দেখতে হত না।
এইভাবে আরও আধা ঘণ্টা চলবার পর ২ নং সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখে পৌঁছলাম। একি, এই ছোট্ট গর্ত দিয়ে ঢুকব কিভাবে?
বৃষ্টি হলে এই গর্ত পানিতে ডুবে যায়। তাই সুড়ঙ্গে প্রবেশের পর বৃষ্টি হলে পানি নেমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভিতরে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। সুড়ঙ্গের অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হওয়া যায় কিন্তু সেটা বেশ বিপদজনক। বৃষ্টি হলে আরও একটা সমস্যা আছে। সেটা হচ্ছে সাপেরা এই সুড়ঙ্গের ভিতর এসে আশ্রয় নেয়। আমরা খুব উত্তেজিত ছিলাম বলেই হয়ত এইসব ভয়কে পাত্তা দেই নি। মেহেদী ভাই আগেই ভিতরে ঢুঁকে টর্চলাইট ধরেছিলেন। তাই ভিতরে প্রবেশ করতে খুব একটা সমস্যা হয় নি।
সুড়ঙ্গ প্রথমে সরুই ছিল। যতই এগুচ্ছিলাম ততই সুড়ঙ্গ প্রশস্ত হচ্ছিল।
কেমন একটা বোটকা গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা মারছিল। গন্ধটা কিসের সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম যখন ডানা ঝাপটানোর শব্দ পেলাম। এই গুহায় প্রচুর বাদুড় আর চামচিকা থাকে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনারা ভ্যাম্পায়ার গল্প পড়ে বাদুড়কে রক্তচোষা ভাবলেও আদতে ইহা অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী।
২ নম্বর সুড়ঙ্গে যেই পরিমান আছাড় খেয়েছি আমার ধারণা হাঁটতে শিখবার সময়েও সেই পরিমান আছাড় খাই নাই। আছাড় খাইতে খাইতেই সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় পৌঁছুলাম। শেষ প্রান্তটা বিশাল এবং মাটি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। এখান দিয়ে নেমে ১ নং সুড়ঙ্গের মুখের সিঁড়ির কাছে চলে যাওয়া যায়।
ছোটবেলায় স্কুলের বাথরুমে আর টেবিলের উপর প্রেমিক প্রেমিকাদের অমুক+অমুক সম্বলিত লেখা, লাভ চিহ্ন কিংবা পুরুষ ও নারীদেহের বিভিন্ন অঙ্গের স্কেচ ইত্যাদি দেখতাম। পাহাড়ের গুহায়ও যে এইসব দেখব ভাবি নি। এইসব রেখাচিত্র দেখলে প্রাচীনকালের গুহামানবেরাও মনে হয় লজ্জা পেতেন। প্রতিভা দেখানোর তো অনেক জায়গা আছে, প্রাকৃতিক এই সম্পদগুলোকে কি ছাড় দেওয়া যায় না? ও হ্যাঁ, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের বাক্স ইত্যাদিও সদর্পে ঘোষণা করছিল যে বীরপুরুষেরা এইখানে বীরত্ব দেখিয়ে গেছেন।
আমরা ৪ জন দুইভাগে ভাগ হয়ে গেলাম। দুইজন ফিরে গেল যেদিক দিয়ে এসেছি সেদিকে। আর আমি আর মেহেদী ভাই ঠিক করলাম এই পথেই ফেরত যাব। অনেক কষ্টে সরিসতে নিচে নামলাম। একবার যদি খালি হাত ফসকে যেত তাহলে আর উপায় ছিল না। হাত কিংবা পা তো ভাঙতই তার উপর উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার উপায়ও ছিল না।
ফিরবার পথে একটা জায়গায় এসে একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সরু পথটা এক জায়গায় হঠাত করেই প্রশস্ত এবং সমতল হয়ে গেল। চারপাশে অদ্ভুত নির্জনতা। নাম না জানা পাখিদের ডাক ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। দুইপাশের পাহাড় খাড়া উঠে গেছে অনেকদূর পর্যন্ত। অনেক উপরে গাছপালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো খুব কষ্ট করে আমাকে স্পর্শ করবার চেষ্টা করছিল। মনে হচ্ছিল এখানেই বসে থাকি, অনন্তকাল।
চলতে চলতে একসময় দূর থেকে লোহার সিঁড়িটা চোখে পড়ল। তারমানে আমাদের ত্রিভুজ যাত্রা অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে।
ফিরে চললাম সবাই। ফিরবার সময় সাইনবোর্ডটা চোখে পড়ল। উল্টো হয়ে পড়েছিল। আমরা সোজা করে গাছে ঠেস দিয়ে রেখে এসেছি। কোন এককালে উপজেলা প্রশাসন হয়ত টোয়াইন খালের উপর ব্রীজ তৈরি করবে সেই ছবি সাইনবোর্ডে দেওয়া আছে। দেখা যাক কবে হয়। তবে আমি চাইনা এই জায়গাগুলো এত সহজগম্য হোক। আমরা বাঙ্গালীরা প্রকৃতিকে সন্মান করতে জানি না। তাই প্রকৃতি সংরক্ষণের কোন ঝোঁকও আমাদের নেই। জায়গাগুলো যতই দুর্গম থাকবে, সেগুলোর সৌন্দর্যও ততই কম ধর্ষিত হবে।
যারা ঘুরতে যেতে আগ্রহী তাঁদের জন্য কিছু কথাঃ
১. প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়ান কিন্তু দয়া করে প্রকৃতিকে ধর্ষণ করবেন না।
২. অপচনশীল দ্রব্য যেমন চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, হার্ড/সফট ড্রিঙ্কসের বোতল কিংবা ক্যান, প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যাদি নিয়ে পাহাড়ে ঘুরবেন না। যদিও ঘুরেন তাহলে ব্যাগের ভিতর রেখে দিবেন কিন্তু ফেলে আসবেন না।
৩. আলীকদমে রাতে থাকার মত ভাল হোটেল নেই অতএব দিনে দিনেই যেন ঘুরে আসতে পারেন সেই প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন। অবশ্য লামা’য় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রিসোর্ট আছে। আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে পারলে রাতে থাকার সমস্যা মিটে যাবে। লামা থেকে আলীকদম আধা ঘন্টার রাস্তা মাত্র।
৪. গাইড ঠিক করবার সময় ভালোভাবে দরদাম করে নিন। তা না হলে ২০০ টাকার বদলে ২০০০ টাকা চেয়ে বসতে পারে।
৫. ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে যাত্রা করবেন। পাহাড়ি মশা খুব মারাত্মক হয়ে থাকে। গত বছর এবং এই বছর দুইজন অভিযাত্রী বান্দরবন ঘুরে আসবার পর সেরিব্রাল ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
৬. শরীর থেকে জোঁক ছুটানোর জন্য সাথে লবন রাখবেন। জোঁকে ধরলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রক্ত খাওয়া শেষ হলে শরীর থেকে এমনিতেই খসে পড়বে। তবে কোনোমতে যদি আপনার পুরুষাঙ্গের ছিদ্রে ঢুঁকে যায় তাহলে কিন্তু খবর আছে। তখন আর লবন দিয়ে কাজ হবে না। ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে। আর আলীকদম কিংবা বান্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাইলেই ডাক্তার পাওয়া যাবে না।
৭. শীতের সময় কেডস এবং বৃষ্টির সময় হালকা স্যান্ডেল পায়ে রাখা জরুরী। আর হ্যাঁ, সাপ থেকে সাবধান। এমনিতে সাপ আপনাকে কামড়াতে আসবে না। তবে আপনি যদি মাড়িয়ে দেন তাহলে কিন্তু বিপদ।
Have a happy journey.
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
মন্তব্য
সচলে স্বাগতম। বৈদেশ ভাজাভাজা করার জন্য তারেকাণু গং আছে। দেশটারে ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া (এই জায়গায় যাইতে কমসে কম আট পা দরকার) ভাজাভাজা করেন আর পোস্টান। আমরা দুধের স্বাদ ঘোল-বোরহানীতে মেটাই।
পুনশ্চঃ সুড়ঙ্গ - ১ (মানচিত্র অনুসারে) এইরকম আঁতকা শেষ হয়ে গেল ক্যান?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ ভ্রাতা। ৬০ টা জেলা ঘুরেছি, ভ্রমণ কাহিনীর ভান্ডার এত সহজে ফুরাবে না। আপনারা উৎসাহ দিলে কী-বোর্ড চলবে। তারেক অণু ভাইয়ের লেখা পড়ে ভ্রমণ কাহিনী লিখবার অনুপ্রেরণা পেয়েছি সেটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই মোটেই। দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ যেহেতু পাই না, দেশেই না হয় ঘুরলাম। আমার দেশটা কম কোথায়? প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থাপত্য, ভাস্কর্য কোনটারই তো কমতি নেই। এগুলো দেখতে দেখতেই তো একটা জীবন শেষ হয়ে যাবে।
১ নম্বর সুড়ঙ্গকে সুড়ঙ্গ না বলে গুহা বলাই ভাল। এইজন্যই রাস্তা আঁতকা শেষ হয়ে গেছে। শেষ মাথায় ছোট দুইটা শাখা সুড়ঙ্গ আছে কিন্তু সেগুলো এতটাই ছোট যে বড়জোর একটা বিড়াল ঢুকতে পারবে, মানুষ নয়।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
১। হুমম... উৎসাহ দিলাম।
২। তারেকাণুর নাম না নেয়াই ভাল, পাঠকের মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে!
৩। মানে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসতে হয়? ওয়ান ওয়ে?
৪। স্কেলের ব্যাপারে হাসিব ভাইয়ের সাথে একমত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
১ নম্বর সুড়ঙ্গটা ওয়ান ওয়ে। এটাকে সুড়ঙ্গ না বলে গুহা বলাই ভাল। তবে ২ নম্বর সুড়ঙ্গটা একদম খাঁটি সুড়ঙ্গ। কোন ভেজাল নাই।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
০ ঝিরিপথ বলতে বোঝায় পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বৃষ্টি কিংবা ঝর্ণার পানি প্রবাহের রাস্তা।
০ যাওয়া আসায় ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। স্কেল যোগ করার বিষয়টা মাথায় থাকল।
০ লেখায় এডিট করে ইউটিউব লিঙ্ক যোগ করতে পারছি না তাই এখানেই লিঙ্কগুলো দিয়ে দিলাম।
আলী সুড়ঙ্গের রাস্তা # ১
আলী সুড়ঙ্গের রাস্তা # ২
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
ভ্রমণকাহিনী জমজমাট। আগ্রহীদের জন্য কিছু কথা প্রসঙ্গে আপনার দু’একটা শব্দ খুব চোখে লেগেছে, সে প্রসঙ্গে এখন কথা না বলি...
দেবদ্যুতি
কোন শব্দগুলো চোখে লেগেছে মনে হয় ধরতে পেরেছি আসলে নিজের চোখে দেখেছি তো তাই শব্দগুলো ব্যবহার করতে বাধ্য হলাম যেন কেউ ভবিষ্যতে বিপদে না পড়ে।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
- চমৎকার লেখা! আরও নতুন নতুন জায়গায় আপনার সাথে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জানাচ্ছি
- যারা ঐতিহাসিক বা প্রাকৃতিক জায়গাগুলোতে গিয়ে নিজের নামখানা সগর্বে খোঁদাই করে থাকেন তাদের উপর এমনই রাগ হয় যে মনে হয় অমোচনীয় কালি দিয়ে কপালের উপর অমুক+তমুক লিখে দিই যাতে অন্তত বছরখানেক কপালে জ্বলজ্বল করে ফুটে থাকে। ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এবং ক্ষেত্র বিশেষে শাস্তি দিয়ে তা প্রচার না করলে এর থেকে মুক্তি নেই।
- আমাদের বনবিভাগ যেখানে বনের উন্নয়ন বলতে বনে ইট-কংক্রিটের জঞ্জাল বানিয়ে রিসোর্ট আর পাকা রাস্তা বানানোর কথা ভাবে সেখানে অচিরেই যে কাঠের সেতু কালভার্টে আর আর পাহাড়ি রাস্তা পাকা রাস্তায় (দরকার হলে পাহাড় ভেঙে!) পরিণত হয় কিনা কে জানে! সেক্ষেত্রে শহুরের নির্বোধদের ডাস্টবিন আরও একটা বাড়বে আর কী!
- জোঁককে অসম্ভব ভয় পাই। তাই পুরুষাঙ্গ দিয়ে জোঁক ঢোকার কথা পড়ে শিউরে উঠে মনে প্রথম চিন্তাটা আসল সেটা হল, পুরুষাঙ্গে বিশেষ আচ্ছাদন (যাহা সাধারণত রতিক্রিয়ায়ই ব্যাবহৃত হয়ে থাকে!) পরিধান করে চলেফেরা করা সম্ভব কিনা! ভেবে দেখা যায় কিন্তু!
সীমান্ত রায়
অমুক+তমুক পার্টির জন্য বুলন্দ+গুলবদন থেরাপির ওপর ওষুধ নাই!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভাই এইটা কি দিলেন? হাসতেই আছি।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
- অপেক্ষা করেন, নতুন জায়গায় নিয়া যাব নি।
- শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারটা ভাল কিন্তু দিবে কে?
- বনবিভাগের কথা আর বলবেন না রে ভাই। এক আলীকদম-থানচি সড়ক তৈরি করতে যেই পরিমান বন উজাড় করতে হয়েছে সেটা শুনলে কষ্ট পাবেন।
- ভাবাভাবির কিছু নাই। যাওয়ার সময় প্রটেকশন নিয়ে চলে যাবেন। কেউ তো আর দেখতে আসছে না।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
বেশ বেশ! গত মাসে কুদুম গুহা ছিয়ে আসলাম, কিন্তু এইখানে যাওয়া হয় নাই এখনো। যাবার আগে এই ব্লগটা একবার পড়ে নেব। লেখা চালু থাকুক।
facebook
ধন্যবাদ ভাই। আপনার লেখালেখি পড়েই ভ্রমণ কাহিনী লেখায় উৎসাহিত হয়েছি। সেই হিসাবে আপনি আমার ভ্রমণ ব্লগের গুরু। আলী সুড়ঙ্গ দেখে আসতে পারেন। যাওয়ার পথটাই অসাধারণ।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
খুব ভলো লাগল, ঘুরে আসার আশা রাখি।
ঘুরে আসুন, ভাল লাগবে।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
নতুন মন্তব্য করুন