ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগগুলোয় অনেক লেখা দেখা যায় যেখানে বাংলা বানানের যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়, যতি চিহ্নের বংশ ধ্বংস করা হয়। যারা ফেসবুকে বা ব্লগে লিখেন, ধরে নেওয়া যায় তারা বেশীরভাগই অন্ততপক্ষে দশম শ্রেণী পাস করেছেন। তাই দশম শ্রেণী পাস করা একজনের কাছ থেকে ভুল বাংলা বানান দেখতে পাওয়া কোন স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণী থেকে আমরা বাংলা এবং ইংরেজি ব্যাকরণ পড়া শুরু করি (নিশ্চিত নই এখন কোন শ্রেণী থেকে পড়ানো শুরু হয়)। তন্মধ্যে ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয় বলে এটায় হওয়া ভুল ভ্রান্তি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলা ভাষার সাধারণ বানানগুলোর ভুল হতে দেখলে বা যতিচিহ্নের বেঠিক ব্যবহার দেখলে সত্যিই কষ্ট লাগে!
অনেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য বলেন, ‘আমি অত ভালো ছাত্র নই, তাই বানান টানান জানি না’, কিংবা ‘ব্যাকরণ খুব কঠিন লাগে। তাই সেভাবে পড়ি নাই’, কিংবা ‘আমি বাংলায় খুব দুর্বল!’ ইত্যাদি। নিজেই ভেবে দেখুন, এগুলো শুনতে কতোটা বোকার মতো লাগছে! আপনি একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন, শিক্ষিত হয়েছেন বলেই আপনার কাছ থেকে শুদ্ধ বানান আশা করা যায়। যারা অ আ ক খ পারে না, তাদেরকে নিশ্চয় কেউ ভুল বানান লেখার জন্য দোষ দেবে না! তাছাড়া আপনি যদি জেনেই থাকেন আপনি বানানে দুর্বল, তাহলে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠাই কি আবশ্যক নয়? যদি সজ্ঞানে দুর্বলতাটা মেনে নিয়ে ভুল বানান ব্যবহার করতে থাকেন, তাহলে সেটা কিন্তু আর ভুল থাকছে না; অপরাধে পরিণত হচ্ছে।
বাংলা ব্যাকরণ বেশ কঠিন জিনিস, এটা সত্যি। কিন্তু একজন বাঙালি হয়ে কেউ ‘ন/ণ’, ‘জ/য’, ‘স/শ/ষ’, ‘র/ঢ়/ড়’ –এর মধ্যকার পার্থক্যটুকু বজায় রাখবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না। যখন যেভাবে খুশী একটা বর্ণের পরিবর্তে আরেকটা বর্ণ বসিয়ে দেওয়াই যদি স্বাভাবিক হতো, তাহলে আর ব্যাকরণের উদ্ভব হল কেন? ভবিষ্যতে যদি শুধু “দন্ত্যন ন” চালু রেখে “মূর্ধন্য ণ” উঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আপনি করুণার বদলে করুনা লিখলেও কেউ ধরবে না। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত সঠিক বানান শেখাটা আমাদের কর্তব্য বলেই মনে করি।
বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বাঙালিদেরই। আমরা যাচ্ছেতাই বানান লিখলে বিদেশিরাও কোনোরূপ নিয়মের ধার ধারবে না। রংকে ড়ঙ লিখবে, সংকে ষঙ লিখবে আর সেই ভং দেখে প্রতিবাদ করার মতো মাটি আমাদের পায়ের নিচে থাকবে না।
যদি একসাথে ব্যাকরণের সব খুঁটিনাটি মনে রাখতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাহলে অত্যন্ত পরিশ্রমের পরও দেখবেন কিছুই মনে থাকছে না। তাই বানান দিয়েই শুরু করুন না! যখন বানানে মোটামুটি ওস্তাদ হয়ে যাবেন, তখন লেগে পড়ুন যতিচিহ্নের সঠিক ব্যবহারের পেছনে।
এই লেখায় আমি আজ বানান নিয়েই কথা বলবো। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সবচেয়ে বেশী বানান ভুল হয় ‘ন/ণ’, ‘জ/য’, ‘স/শ/ষ’, ‘র/ঢ়/ড়’ –এর বেলায়। যেহেতু এগুলো একই ধাঁচের বর্ণ, তাই কোন শব্দে কোন বর্ণটি ব্যবহৃত হবে, সেটা আমরা গুলিয়ে ফেলি। নীচে বাংলা বানানের বেশ কিছু নিয়ম উল্লেখ করছি, যেগুলো বাংলা একাডেমি প্রদত্ত “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” (সংশোধিত সংস্করণ ২০০০) বইটি থেকে নিয়েছি।
১) ‘ন/ণ’, ‘জ/য’, ‘স/শ/ষ’, ‘র/ঢ়/ড়’ –এর বেলায় খুব সাধারণ কিছু নিয়ম হলঃ
• একান্ত কোন ব্যতিক্রম ছাড়া বিদেশি বানানে ণ, ষ, ড়, ঢ়, য বসবে না।
• ব্যতিক্রমঃ ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি শব্দে য লেখা যেতে পারে। যেমনঃ আযান, ওযু।
• বাংলা বানানের ক্ষেত্রে অনেকগুলো নিয়ম আছে কখন কোন বর্ণ ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে। সেগুলো দেখতে পারেন “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” বইটির সংশোধিত সংস্করণ থেকে। এক্ষেত্রে মুখস্তবিদ্যাই ভরসা আর মুখস্ত করতে না চাইলে লেখালেখির সময় বইটা পাশে রাখা জরুরি!
২) ি (ই-কার) এবং ী (ঈ-কার), অথবা ু (উ-কার) এবং ূ (ঊ-কার) নিয়েও আমাদের কম ঝামেলা হয় না। এদের বেলায় কিছু নিয়ম হলঃ
• কোন বিদেশি শব্দে ী (ঈ-কার) এবং ূ (ঊ-কার) ব্যবহৃত হবে না।
• বাংলা বানানের ক্ষেত্রে অনেকগুলো নিয়ম আছে কখন কোন কার ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে। সেগুলো দেখতে পারেন “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” বইটির সংশোধিত সংস্করণ থেকে। এক্ষেত্রে মুখস্তবিদ্যাই ভরসা আর মুখস্ত করতে না চাইলে লেখালেখির সময় বইটা পাশে রাখা জরুরি!
৩) এবার আসি আরেকটা ঝামেলাযুক্ত নিয়ম নিয়ে। সেটি হল কি এবং কী শব্দ দুটোর ব্যবহার।
• কি-এর ব্যবহারঃ যখন কোনো প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ দিয়ে দেওয়া যাবে, তখন ‘কি’ শব্দটা ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ আপনার বন্ধু দুপুরে খেয়েছে কিনা, সেটা জানার জন্য প্রশ্ন করতে পারেন – তুমি কি দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলেছ?
• কী-এর ব্যবহারঃ উপরের ক্ষেত্র বাদে বাকি সব জায়গায় ‘কী’ শব্দটি বসবে। যেমনঃ আপনার বন্ধু কোন পদ দিয়ে ভাত খেয়েছে সেটা জানার জন্য প্রশ্ন করতে পারেন – তুমি আজ কী দিয়ে ভাত খেলে?
• কীভাবে, কীরূপে, কীরকম ইত্যাদি শব্দে সবসময় কী বসবে।
৪) আরও কিছু সাধারণ নিয়ম জেনে রাখা ভালোঃ
• যখন না বাচক বাক্য লিখবেন, তখন খেয়াল রাখবেন ‘না’ এবং ‘নি’-এর ব্যাপারে। ‘না’ লিখতে হবে আলাদা পদ হিসেবে, যেমনঃ করি না, খাই না। আর ‘নি’ লিখতে হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে, যেমনঃ করিনি, খাইনি।
• যখন অধিকন্তু অর্থে ‘ও’ প্রত্যয় উচ্চারণ করবেন, তখন শব্দে সেটা ‘ও’ হিসেবেই লিখবেন, ‘ো’ দিয়ে নয়। যেমনঃ আমারও ইচ্ছে করে (‘আমারো ইচ্ছে করে’ – সঠিক নয়)।
• জোর দেওয়ার জন্য যখন ‘ই’ উচ্চারণ করবেন, তখন শব্দে সেটা ‘ই’ হিসেবেই লিখবেন, ‘ি’ দিয়ে নয়। যেমনঃ চলো আজই যাই (‘চলো আজি যাই’ – সঠিক নয়)।
• ‘কোন’ শব্দটির উচ্চারণ যখন ‘কোনো’-এর মতো হয়, তখন তাকে ‘কোন’ বা ‘কোনো’ দুটোই লেখা যায়। একইভাবে আরও অনেক শব্দ, যেগুলোর শেষের অ-ধ্বনির উচ্চারণ ও-ধ্বনির মতো হয়, তাদের শেষে ো দিয়েও লেখা যায়, ো ছাড়াও লেখা যায়। যেমনঃ নামানো, চালানো, দেখানো বা নামান, চালান, দেখান।
যখন আপনি ো ব্যবহার করবেন না, তখন বাক্যের ভাব অনুযায়ী পাঠকের বুঝে নিতে হবে যে, এখানে শব্দটির উচ্চারণ বদ্ধ নাকি খোলা।
• ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় শব্দের শুরুতে ো দেওয়া যায়। যেমনঃ এই কাজটা তুমি আগামীকাল কোরো।
৫) অন্যান্যঃ
• বানানে হসন্ত (্)-এর ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে বলা হয়েছে। যেমনঃ তছ্নছ্, ফট্ফট্ না হয়ে তছনছ, ফটফট হবে। তবে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য হসন্ত ব্যবহার করা যাবে। যেমনঃ বাহ্, উহ্।
• ঊর্ধ্ব কমা (’)-এর ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে বলা হয়েছে। যেমনঃ দু’জন, দু’দিন না হয়ে দুজন, দুদিন হবে।
• শব্দের মাঝে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও শব্দের শেষে বিসর্গ ব্যবহারের নিয়মটি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমনঃ এখন আর প্রায়শঃ বা মূলতঃ হবে না, হবে প্রায়শ এবং মূলত।
৬) এছাড়াঃ
• কখন বানানে ং (অনুস্বার) আর কখন ঙ বসবে, সেটার নিয়ম আছে।
• কখন এ/অ্যা, কখন খ/ক্ষ বসবে, সেটার নিয়ম আছে।
• কোন কোন শব্দে চন্দ্রবিন্দু (ঁ) বসবে, সেটা ঝাড়া মুখস্ত করা ছাড়া উপায় নেই।
কিছু কথাঃ
আমরা ছোটবেলা থেকে যেসব বানান শিখে এসেছি, সেসব বানানের মধ্যে অনেকগুলোরই পরিবর্তন ঘটতে দেখলাম “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” বইটির সংশোধিত সংস্করণে। যেমন এখানে ঠাণ্ডা, মূলা, পূজা, বাঙালী, রঙ, ক্ষিদে, ক্ষেত, ক্ষ্যাপা, অঘ্রাণ, রাণী, ঝর্ণা ইত্যাদি শব্দের বানান দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ঠান্ডা, মুলা, পুজা, বাঙালি, রং, খিদে, খেত, খ্যাপা, অঘ্রান, রানি, ঝর্না এভাবে। কারণটাও দেওয়া আছে সাথে। মাত্র উনিশ পৃষ্ঠার এই পিডিএফ ফাইলটি সকলেরই সংগ্রহে রাখা দরকার।
।।।
লেখাটিতে ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত আশা করছি।
পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ!
- নির্ঝর রুথ।
মন্তব্য
সম্ভব হলে পিডিএফটার ডাউনলোড লিংক দিয়ে দিন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
স্বত্বসংরক্ষিত বইয়ের পিডিয়েফ লিঙ্ক সচলায়তনে প্রচার না করার অনুরোধ রইলো।
হিমু ভাই, আমার মন্তব্যে একটা লিঙ্ক দিয়ে রেখেছিলাম, আপনার মন্তব্য পড়ে ওটা সম্পাদনা করতে গিয়ে দেখি মন্তব্যটা আর নেই। কী করা যায়?
- উদ্দেশ্যহীন
সম্পাদনায় গণ্ডগোল হয়েছে হয়তো। কষ্ট করে আরেকবার করবেন? অনুগ্রহ করে স্বত্বসংরক্ষিত বইয়ের পিডিয়েফ লিঙ্ক দিয়েন না।
খুবই দরকারী লেখা।
স্কুল জীবন থেকেই চেষ্টা করতাম বানানের প্রতি যত্নবান হওয়ার। বাংলাদেশের মানুষ হয়ে যদি বাংলা ভাষা ঠিকমতো ব্যবহার না করি তাহলে আর কে করবে? আগে বানান ভুল কমই হত, তবে বাংলা লেখার অনভ্যাসে ইদানীং ভুল হয়ে যায় মাঝে মাঝে। স্মরণশক্তিও আর আগের মতো নেই, আগে যেসব বানান সন্দেহাতীত ভাবে লিখতাম, এখন সেগুলো লিখতে গেলেও বিভ্রান্ত হয়ে যাই মাঝে মাঝে।
শব্দকল্পদ্রুম নামে একটা অ্যান্ড্রয়েড গেম আছে, বাংলা শব্দের বানান শেখার জন্য চমৎকার। এটা তৈরি করেছে সম্ভবত শাবিপ্রবির পিপীলিকা টিম।
প্রসঙ্গত এই পুরনো লেখাটার কথা মনে পড়লো। একটা মাস্টারপিস!
- উদ্দেশ্যহীন
আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
আপনার কথাগুলোর সাথে আমি একমত!
বানানকে অনেকে ছোটো ব্যাপার বলে এড়িয়ে যেতে চায়। তারা আসলে বোঝে না যে, যত্ন জিনিসটা একটা চর্চার মত। আপনাকে সব ব্যাপারেই যত্নশীল হতে হবে, তবেই না বড় বড় ব্যাপারেও আপনার অধ্যবসায় বজায় থাকবে। এসএমএস জেনারেশন এসে ইংরেজি বানানের বারোটা বাজিয়েছে। আর বাংলা বানানের বারোটা বাজিয়েছে আমাদের শিক্ষকদের অসতর্কতা। অন্যান্য জিনিসের ভুল ধরলেও বানানের ব্যাপারটা প্রায় অনেক শিক্ষকই এড়িয়ে যান। লেখার জন্য ধন্যবাদ।
আরেকটা ব্যাপার আছে। প্রমিত বাংলা বানান রীতিতে এখনো কিছু ইনহেরেন্ট সমস্যা আছে। কোন আর কোনো, এগুলোকে প্রতিস্থাপনযোগ্য মনে হয় না, দুটো দুই জায়গায় বেশি উপযুক্ত। এছাড়া নামান আর নামানো, চালান আর চালানো - এগুলোর আলাদা আলাদা ব্যবহার আছে। তাই এ ধরনের সকল অসমাপিকা ক্রিয়াপদে নামানো, চালানো ব্যবহার করলেই জিনিসটা সহজ হয়ে যায়। পাশাপাশি তুমি-তুই জটিলতা এড়ানোর জন্য সকল তুমি সংক্রান্ত ক্রিয়াতে ও-কার ব্যবহার করলেই ল্যাটা চুকে যায়, যেমন - তুই এর সাথে বল, কর, রাখ; আর তুমি এর সাথে বলো, করো, রাখো।
আমি এই নিয়মটাই সবখানে অনুসরণ করার চেষ্টা করি।
ধন্যবাদ দোস্ত, লেখাটা পড়ার জন্য।
তুই আর আমি কিছুটা একই নিয়ম কানুন অনুসরণ করি দেখা যায়!
অনেক ধন্যবাদ!
অনেক দরকারি লেখা; কিন্তু আপনার প্রথম চারটা প্যারার সাথে আমি দ্বিমত করি
বানান ভুলকে ভুল হিসেবে না দেখে আপনি দেখেছেন দোষ হিসেবে; এইখানেই আমার আপত্তি...
০২
বাঙালি ইংরেজি কথা বলা শিখতে পারে না কারণ ইংরেজিতে কাশি দিলেও আশপাশের সবাই স্ট্রেস ইন্টোনেশন উচ্চারণ নিযে হই হই করে উঠে; আর বাঙালি বাংলা লিখতে শিখতে পারে না এইসব বানানপাণ্ডা আর ব্যাকরণপাণ্ডাদের অত্যাচারে...
০৩
বাক্যগঠন/বাক্যবোঝা এক ধরনের দক্ষতা আর বানান উচ্চারণ উচ্চারণ আরেক ধরনের দক্ষতা; বানান উচ্চারণ নিয়ে প্রথমেই মাথা নষ্ট করে ফেললে প্রথমটা আটকে যায়...
০৪
শুধু ব্লগ এবং ফেসবুকের সুযোগকের কারণে এখন যত মানুষ মাস্টারিমুক্ত ভাষা চর্চা করতে পারছে আগে তার এক পার্সেন্ট্ও করতে পারত কি না আমার সন্দেহ;... এইটাকে খোঁচানোর সুযোগ নাই। কারণ লিখতে লিখতে মানুষ পড়েও; আর পড়তে পড়তে একদিন আপনার এই লেখাটা পড়েও বানান আর গ্রামার ঠিক করে ফেলতে পারবে
০৫
বাংলা বানান জিনিসটা এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বেহুদা জটিল; এর আরো সহজ হওয়া দরকার;
অনলাইনের যুগেও এখনো কেরানির মতো খুঁটে খুঁটে বানান ঠিক করতে হয়; অথচ এই সাপোর্টটা মেশিন থেকেও আসতে পারত...
০৪
নিয়মগুলো দিয়েছেন; তা কাজের; কিন্তু প্রথম কয়েকটা প্যারা বদলে দেবার অনুরোধ করব। না হলে আপনার প্রথম প্যারাটােতেই বানান ভুলগুলো একটু খেয়াল করে দেখেন
...
'ব্লগে লিখেন'= 'লিখেন একটা সাধু ভাষা/কথ্যভাষা' গ্রামার ঝামেলা
'বেশীরভাগই= বেশিরভাগ (বেশী= বেশধারী। বেশি= অধিক)
শ্রেণী= শ্রেণি
পাস=পাশ
....পাওয়া কোন স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।= কোনো
আপনি যে বিষয়ে আপত্তি করছেন; আপনার বাকি প্যারাগুলাতেও কিন্তু সে বিষয়ে প্রচুর আপত্তিজনক বিষয় আছে (বানান আর গ্রামার)
এইটা আপনার দোষ ধরার জন্য না; বরং বানান আর গ্রামার নিয়ে মাইনসেরে কামড়ানো বন্ধ করার জন্য ধরিয়ে দেয়া...
০৫
বাংলাদেশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবে বানানের নিয়মের উপর একটা ওপেনসোর্সা পিডিএফ আছে; ওখানে গিয়ে দেখা যায়; পড়া যায় আবার ব্যবহারও করা যায়
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
* আমি কেন দোষ হিসেবে দেখছি, এটার ব্যাখ্যা দিয়েছি। কখন ভুল আর কখন অপরাধ, সে বিষয়ে যুক্তি দিয়েছি।
* আপনার ২, ৩ এবং ৪ নাম্বার পয়েন্ট আমি বুঝিনি। আপনি কি আমাকে বানানপাণ্ডা আর ব্যাকরণপাণ্ডা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন?
* 'লিখেন' যদি সাধু ভাষা হয়ে থাকে, তাহলে 'ব্লগে লিখেন' বাক্যটি কীভাবে আমি চলিত ভাষায় লিখতে পারি?
* বেশিরভাগ, শ্রেণি এবং পাশ বানান তিনটি ঠিক করার জন্য কোন এডিট অপশন পাইনি। তাই ওভাবেই রয়ে গেছে।
* ‘কোন’ নিয়ে পোস্টেই আমি উল্লেখ করেছি যে, এখানে ো দেওয়াও যায়, ো ছাড়াও লেখা যায়।
* আমি লেখার শেষে উল্লেখ করেছি, এখানে ভুল থাকতে পারে। সেজন্য বিশেষজ্ঞ মতামতও চেয়েছি। আপনি কিছু ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু বাকি প্যারাগুলাতেও যে আপত্তিজনক বিষয় আছে (বানান আর গ্রামার), সেগুলো সম্পর্কেও জানতে চাচ্ছি। কেউ না শেখালে শিখবো কীভাবে?
* “গ্রামার নিয়ে মাইনসেরে কামড়ানো বন্ধ করার জন্য” কথাটা খুব বেশী উগ্র লাগলো। বারবার কাউকে ঠিক বানান ধরিয়ে দেওয়ার পরও যদি সে ঐ ব্যাপারে যত্নশীল না হয়ে একই ভুল করতে থাকে, সেটা সহ্য করা কঠিনই বটে! আর সেজন্য আমি যদি এই ধরনের লেখা লিখে বানান ভুল না করার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করি, সেটা কেন কামড়াকামড়ি হবে?
এই ক্ষেত্রে আপনার তথাকথিত ব্যাখ্যা বা স্বকপোলকল্পিত যুক্তি শুধু গ্রহণযোগ্যই না বা আদৌ কোন যুক্তিই না তাই না - এটা রীতিমত অনধিকার ধৃষ্টতার প্রকাশ! বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রীয় বা ধর্মীয় আইনে বা কোন সামাজিক কিম্বা সাংস্কৃতিক রীতিতেই "বানান ভুল করা" বা "বানান সম্পূর্ণ সঠিকভাবে চর্চা করার সজ্ঞান দুর্বলতা" বা অক্ষমতাকেই 'অপরাধ', ক্রাইম, পাপ, দুষ্কর্ম বা অন্যায় কাজ ইত্যাদি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি বা গণ্য করা হয় না। ভুল হিসেবেই গণ্য করা হয়, বড়জোর অক্ষমতা। আর আপনাকেও এ ব্যাপারে বাংলাদেশের রাষ্ট্র, সরকার, জনগন কাউকে "অপরাধী" বানিয়ে কোন রকম জাজমেন্ট দেয়ার কর্তৃত্ব বা অথোরিটি দেয়নি। তাহলে আপনি কোন অধিকারে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল সেজে অন্য সবাইকে নিজের মনোমত দুষ্ট, অপরাধী, দুষ্কৃতিকারী ইত্যাদি বলা শুরু করলেন? এটা একধরণের অফেন্সিভ পাণ্ডামি বা মাস্তানি আচরণ। রূঢ় এবং অশোভন। এজন্যেই মনে হয় এবং সম্ভবত আপনাকেই 'বানানপাণ্ডা' বলা হয়েছে উপরে। আগে নিজে ইশ্কুল লেভেলের বেসিক শব্দার্থ শিখুন, 'ভুল' আর 'অপরাধের' মধ্যে সঠিক পার্থক্য করতে শিখুন, বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বের মাত্রাভেদ করতে শিখুন, তারপর নাহয় অন্যের ভুল / অপরাধের খোঁজ নিবেন।
আরেকটি কথা, বানান ভুলকে "অপরাধ" বানিয়ে ফেললে পৃথিবী থেকে অনেক বড় লেখক-সাহিত্যিকই হারিয়ে যেতেন হয়তো। কিম্বা প্রকাশিতই হতেন না। দুনিয়াজুড়েই বড় বড় প্রকাশকরা (ছোটরাও) লেখকদের বানান / টাইপো ইত্যাদি সংক্রান্ত ভুলভাল সংশোধণ করার জন্য অনেক টাকা খরচ করে এডিটর / প্রুফরিডার পুষেন। সেটাও আবার থাকে স্তরে স্তরে বিভক্ত। তারা জানেনই যে লেখকদের ভুলভাল হবেই। হবে বলেই এঁদের রাখা। বহু ক্ষেত্রে এটা হয়তো লেখকদের সজ্ঞান অক্ষমতাই। তবু পাঠক / প্রকাশকরা চান লেখকরা লিখুন। চিন্তা করুন, এই লেখকদের যদি চোখ রাঙিয়ে অপরাধী বানিয়ে বর্জন বা নিরুৎসাহিত করে ফেললে কি অবস্থা হত? আমার কাছে ১০০টা বানানবিদের চেয়ে ১ জন সৃষ্টিশীল লেখক বা সাহিত্যিকের মূল্য হাজারগুণ বেশি!
বানানে সজ্ঞান বা অজ্ঞান দুর্বলতা থাকাটা পৃথিবীতে একমাত্র প্রোফেশনাল বানানবিদ আর প্রুফরিডারদের জন্যই অপরাধ হতে পারে হয়তো। আর কারও জন্য না। বাকি সবার জন্য এটা স্রেফ ভুলই।
============================================
আপনার লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। শুধু টোনটা ঠিক থাকলে আর জাজমেন্টাল দৃষ্টিভঙ্গিটা না থাকলেই এটা আরও ভাল হতে পারতো। আর হ্যাঁ, উপরে মাহবুব লীলেনের ২, ৩ ও ৪ নং পয়েন্ট যদি আপনি একবার পড়ে না বুঝতে পারেন, তাহলে বার বার পড়ুন। এই তিনটা পয়েন্টে আপনার জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। ধন্যবাদ।
****************************************
ব্লগে লিখেন > ব্লগে লেখেন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
২-৩-৪ যখন বুঝতেই পারেননি তখন আর দুই নম্বরের ল্যাঞ্জাপাণ্ডার ব্যাখ্যা দিয়ে কী লাভ? পুরাটাই আমার ভাষাদোষ; বুঝাইতে পারি নাই আপনেরে
০২
নিজে স্বীকার করলেন যে এডিট অপশন না থাকায় কয়েকটা বানান আপনি ঠিক করতে পারেননি; কিন্তু দ্রুত এবং তাৎক্ষণিক লেখার ক্ষেত্রে (বিশেষ করে অনলাইনে) অন্যদেরও যে এরকম দ্রুতার জন্য বানান ভুল হতে পারে; তা কিন্তু আপনি ক্ষমা করতে নারাজ? ...তো?
০৩
কোন এবং কোনো সম্পূর্ণ দুইটা শব্দ। কোনোভাবেই 'কোনো'কে কোন লেখার সুযোগ নেই
কোন=which (কোন বাড়ি? কোন বই? কোনটা?) আর কোনো= any/one of/some of ( যে কোনো/ কোনো এক/ কোনো কোনো)
০৪
বাকি প্যারাগুলোর বানান; লিখতে লিখতে আর পড়তে পড়তেই আপনার নিজেরই চোখে পড়বে। আর যদি আপনি আপনার নিজের পদ্ধতি অনুসরণ করতে চান; মানে বই পড়ে বানান ঠিক করার দক্ষতা অর্জন; তাইলে বাংলা একাডেমির বানান অভিধানটা দেখে দেখে নিজেই ঠিক করে নিতে পারবেন...
০৫
জ্বি; আমার কথাটা একটু উগ্রই হয়েছে। নিজে বলবেন ভুল থাকতে পারে আর অন্যের ভুল ক্ষমা করবেন না এতে অন্যের রিএ্যাকশন উগ্র হলে আর কী করা
০৬
বারবার কাউরে ধরিয়ে দেবার পরও কেউ কেন বানান মনে রাখতে পারে না তার কিন্তু বহুত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে (আপনি অবশ্য বলবেন এইটা দোষ; ব্যাখ্যার কী দরকার)...
মগজের ভেতরে মানুষের মনে রাখার প্রক্রিয়া এবং মানুষের সাধারণ শিক্ষা প্রক্রিয়াগুলোর কিন্তু এখন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুবই সুলভ....একটু দেইখা নিলে আশা করব আপনার বানান আর ব্যাকরণজ্ঞানগুলা আমরা একটু মানবিক উপায়ে পাবো...
আপনার অনেক ধৈর্য, এক বস্তা ধন্যবাদ আপনার পাওনা সময় নিয়ে পয়েন্টে মন্তব্য করার জন্যে, আমিই না হয় দিয়ে গেলাম।
অটঃ হনুমানের দুঃখের কথাটা হালকা করে মনে করিয়ে দিয়ে গেলাম লীলেন্দা
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হনুমান লাফ দিবার লাইগা অলরেডি লেঙ্গুর মোচড়ানো শুরু কইরা দিছে; যে কোনো সময় হপ হপ কইরা আইসা পড়ব
আহা সাধু, সাধু। হনুমানের লেংগুর খুবি জম্পেশ জিনিশ, লংকাকান্ড হয়ে যাক তাইলে আরেকটা
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কোন এবং কোনো শব্দ দুটোর জন্য "প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম" (সংশোধিত সংস্করণ ২০০০) বইটিতে লেখা আছে, "বাংলা অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে ও-র মতো হয়। শব্দশেষের এসব অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে। যেমনঃ কোনো।"
এখানে যেহেতু ও-কার ব্যবহার করাকে বাধ্যতামূলক করা হয় নি (বলা হয়েছে, লেখা যেতে পারে), তাই আমি ঐ পয়েন্টটা লিখেছি।
মাঝে মাঝে এরকম বকলে আমরা যদি আর একটু সাবধান হই।
-------------------------------
ইচ্ছে মত লিখি
http://icchemotolikhi.blogspot.in/
হাহা!
এটা আসলে বকা ছিল না, এটাকে আমার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলা যায়।
লেখাটা ভালো কিন্তু আরেকটু বিস্তারিত লেখা যেত না কি? বিশেষ করে ৬ নম্বর পয়েন্ট শুধু শিরোনাম লিখেই ছেড়ে দিয়েছেন, লেখা যেত বোধহয়। আর ‘না’ বা ‘নি’-এর ক্ষেত্রে বলি- অনেক প্রথিতযশা লেখক নিজের মতো করে লিখতে গিয়ে ‘করি নি’ ‘পড়েন নি’ লেখেন, ওটা বোধহয় নিজেদের স্টাইল তাঁদের। আর লেখার সুরটা একটু হলেও রূঢ় হয়েছেই কিন্তু।
দেবদ্যুতি
আপনাকে ধন্যবাদ।
মনে হচ্ছিলো লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই আর ৬ নম্বর পয়েন্টটা ব্যাখ্যা করিনি।
লেখার সুর রূঢ় হওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। লেখার সময় মনের মধ্যে ক্ষোভ নিয়ে লিখেছিলাম। একারণেই বিপত্তি।
আপনার লেখার টোনে বিষয়টি নিয়ে আপনাকে বেশ রাগান্বিত মনে হলো! রাগান্বিত না হয়ে ´চিন্তিত´ হলে বোধহয় বেশি মানানসই হতো।
বাক্যগঠন এবং বানান ভুলে ভর্তি লেখার গুরুত্ব ভুলের কারণেই অনেকখানি কমে যায়। ইংরেজি স্পেল-চেকারের মত বাংলা স্পেল-চেকার গুলো এক্ষেত্রে দারুণভাবে সহায়ক হতে পারে।
অভ্রর স্পেল-চেকার আর মজিলা ফায়ার ফক্সের ব্রাউজারে এডসঅন বাংলা অভিধানটি ছাড়া আর কোন স্পেল-চেকারের কথা জানা নেই। ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়ার গুলোর জন্য এরকম কিছু থাকলে বেশ ভালো হয়। যেগুলো আছে সেগুলোকে আরো বেশি কার্যকরী করে সব রকম টাইপিং প্ল্যাটফর্মে ব্যাবহার উপযোগী করতে পারলে চমৎকার একটি কাজ হয়।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কমল দা।
বিষয়টা নিয়ে মাহবুব লীলেন আর মন মাঝি এত রেগে গেলেন কেন বুঝলাম না, লেখককে এমন কঠিনভাবে আক্রমণ করারও কোন হেতু খুঁজে পেলাম না। বানানের ভুল কোন কোন সময় খুবই দৃষ্টিকটু, আর সে ভুল যদি ইচ্ছাকৃত হয় কিংবা সহজে সংশোধন যোগ্য হওয়া সত্বেও যদি তা না করা হয়, তাহলে তা এক ধরনের অপরাধের পর্যায়ে পড়ে বৈকি। এই ধরনের অপরাধের জন্য লেখক নিশ্চই কাউকে জেল ফাঁসি দেয়ার কথা ভাবেন নি, কিন্তু ক্ষুদ্ধ অনুযোগ তো প্রকাশ করাই যায়।
সচলে অনেক লেখাতে মাঝে মাঝে বানানের ভুল দেখা যায়, সচেতন কয়েকজন ব্লগার মাঝে মাঝে সে ভুলগুলো ধরিয়ে দেন, তাতে করে বোধ হয় সচলই কমবেশি উপকৃত হয়েছে। আমার লেখাতেও আগে বেশ ভুল থাকত, তার অধিকাংশই হয়ত আমার অসাবধানতার কারনে কিংবা টেকনিক্যাল কারনে। বানান শুদ্ধ হল কিনা, সে বিষয়ে আগে ততটা কেয়ার করতাম না, কিন্তু সচলে আসার পর পরিবেশগত কারনেই অনেক সতর্ক হয়ে গেছি।
রাগের কারণ মাহবুব লীলেনের পুনঃমন্তব্যের ০৫ নং পয়েন্টে উদ্ধৃত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন