কেয়া হাসছে, ওর দারুণ সুন্দর দাঁতগুলো সব দেখা যায়। কেয়া এমনিতেই অনেক সুন্দর, গালে টোল না পড়লেও ওর হাসিটা চমৎকার। উল্টোদিকের চেয়ার থেকে আমি কেয়ার হাসি দেখি, এক নজরে তাকিয়ে থাকার বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে আমি এদিক সেদিক তাকাই। রেস্টুরেন্টটা নতুন, এর আগে আসা হয়নি আমার। কাল সন্ধ্যায় কেয়া ফোনটা করেছিল বলে আজ আসা। বেশ সাজিয়েছে ভিতরটা, তার উপর নিরিবিলি।
“এই, তুই ওদিকে কী এত দেখছিস?”-কেয়ার প্রশ্নে ঝট করে সামনে ফিরি, দরজার কোণার ফুলদানিটা দেখছিলাম এতক্ষণ, কী সুন্দর ওটা! “না রে, কিছু না। তুই বল”-আমি শুকনো হাসি। কেয়া আবার হড়বড় করে কথা বলতে থাকে। কত দিন পর দেখা, প্রায় এক বছর। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকুরি পর্যন্ত এক সাথে কেটেছে আমাদের, পাশাপাশি ডেস্কেই। তারপর এই এক বছরের অদর্শন। অদর্শন বলাটা আসলে কম হয়ে যায়, যোগাযোগটাই ছিল না বলতে গেলে, আমিই রাখিনি। কেয়া কিন্তু আগের মতোই ওর বিখ্যাত স্টাইলে বলে, “আমার শালা তেমন একটা ভালো লাগছে না যেতে কিন্তু বাবা-মা চাচ্ছে রে খুব করে। স্কলারশিপে আমার তেমন ইচ্ছে কোনোকালেই নেই, জানিস তো”-কেয়া একটা ছোট্ট দম নেয়, টিস্যু পেপার দিয়ে নাক চেপে ধরে, ওর ঠাণ্ডার ধাত, আমি জানি-“অবশ্য দেড় বছর মোটে, দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে, কী বলিস?”
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলি। কেয়ার সামনে এখনও সহজ হতে পারছি না, পারা যাচ্ছে না। ও এবার আমার দিকে তাকায় স্থির চোখে, বোধহয় আমার চাপা অস্বস্তি চাপা নেই ওর কাছে। আমি ওর দিকে তাকাতে পারি না, টেবিলের উপর রাখা কাঁটাচামচ নাড়াচাড়া করতে থাকি। “শোন, পিউ”-কেয়ার ডাকে আমি তাকাই, কেয়া একদম স্থির তাকিয়ে, “এত অস্বস্তির কিছু নেই রে। আমি জানি তো চাকুরিটার কত দরকার ছিল তোর”-আমি চোখ নামিয়ে নিই। তার মানে ও জানতো? সবকিছু জানতো ও? এই এক বছরে আমি বুঝতেও পারিনি। “শোন, তাকা এদিকে”-একদম আগের মতো করে ডাকে কেয়া, মনে হয় জরুরি তলব,-“আর তুই কিন্তু আমার উপকারই করেছিস, দোস্ত। এই এমন একটা সুযোগ কি পেতাম জব করতে থাকলে, বল?”
আমি ওর দিকে তাকাতে পারি না। অফিসে কর্মী ছাটাইয়ের সময় আমার চাকুরিটা বাঁচাতে ওর চাকুরিটা যাওয়ার সব তদবিরই যে আমিই করেছিলাম, কথাটা ধাঁ করে বুকে এসে লাগে। ওয়েটার এসে স্যুপের সরঞ্জাম নামিয়ে রাখে। আমি বড় বাটিটার ঢাকনা খুলি, স্যুপের সুগন্ধের সাথে সাথে গরম ধোঁয়ায় আবছা হয়ে যায় কেয়া। এই আড়ালটার বড্ড দরকার ছিল এখন। কেয়ার আবছা হাসিমুখের এপাশে উষ্ণ হয়ে ওঠে আমার গাল গড়ানো জল। ওর ধরা গলাটা কানে আসে-“প্লিজ, এসব ভুলে যাস তুই, প্লিজ। তোর উপর আমার কোনো রাগ নেই রে”।
দেবদ্যুতি
মন্তব্য
কার চাকরি খাইছিলেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ও কেন কারো চাকরী খাবে? খেয়েছিল ত গল্পের 'আমি' মানে পিউ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এ জীবনে বহুবার এ ঘটনার সাক্ষী হয়েছি, চাকুরিই নয় কেবল, অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু সত্যানন্দের মুখ বন্ধ রাখতে হয় কি না, তাই চুপ করে থাকি
দেবদ্যুতি
হুমম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সেই। কখন যে কিসের আড়াল কোন কাজে লাগে!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আড়ালগুলোই অনেক সময় অন্তত নিজের থেকে বাঁচিয়ে দেয়, দা’ভাই
দেবদ্যুতি
বিষয়গুলো অনেকভাবেই ঘটে। ভাল লাগলো দেবদ্যুতি, তুমি দ্যুতি ছড়াচ্ছো। তুমি করে বলে ফেললাম কিন্তু। তাত্তাড়ি সচল হও, শুভকামনা থাকলো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
তুমি ডাকটাই মিষ্টি ঠেকে আমার কাছে আর তোমাকে তো আমি আগে থেকেই ‘তুমি’ বলি সচল কী করে হব, বলো? লেখাই আসছে না কো একেবারে।
দেবদ্যুতি
স্যুপের বাষ্প এক সময় উড়ে উড়ে উধাও । ছাত্র জীবনে দুই বন্ধুর মাঝে এমন এক কান্ডের সাক্ষী ছিলাম আমি।দুইজনের দা কুমড়ো সম্পর্র্ক ছিল। তাই খন্ড কালীন চাকরীতেও চলল কাকের চোখ বন্ধ খেলা।
এ্যানি মাসুদ
কাকের চোখ বন্ধ খেলা? দারুণ তো! তবে ব্যাপারটা এত বেশি সাধারণ, দেখি আর চোখ বন্ধ করে থাকি-অন্যের ব্যাপারে অনধিকার নাক গলানো শোভন তো নয়, না? খারাপ লাগে বটে।
দেবদ্যুতি
বাস্তবতার কাছে আসলেই অনেক কিছুই হার মানে। ভালবাসাও পালায় অনেক সময়।
হাসান রাশেদুজ্জামান
সহমত আপনার সাথে তবে এটা আংশিক, কখনও কখনও বাস্তবতা এতটা কঠোর হয়ও না কিন্তু, আমরা চাইলেই এসব এড়াতে পারি-সেই সময়ের প্রেক্ষিত একটু ভিন্ন হয়ত।
দেবদ্যুতি
বাহ! ছোট্ট পরিসরে চমৎকার সাজিয়ে তুলেছেন তো গল্পটাকে। নাহ, গল্প বলবো না, বলবো জীবনের টুকরো ছবি। চালিয়ে যান। সোহেল রহমান আর গল্পদিদির মত আপনার গল্পেরও অপেক্ষায় থাকবো।
____________________________
প্রফেসর। গল্পদিদিটা কে বলুন তো, চিনলাম না যে! তাঁর গল্প পড়তে হবে তো।
দেবদ্যুতি
গল্পদিদি হচ্ছেন গান্ধর্বী। উনার গল্প পাবেন এখানে।
____________________________
অশেষ ধন্যবাদ, প্রফেসর। গান্ধর্বী’র মোটে একটা লেখা পড়েছিলাম, ‘আমাদের পুরনো ছাদ’। এখানে সব পেয়ে গেলাম-
দেবদ্যুতি
উইথ ফ্রেন্ড্স লাইক দিস...
ফর ইউ এন্ড ফ্রেন্ডস...
দেবদ্যুতি
গল্প বলার স্টাইল অসাধারণ লেগেছে! সংলাপগুলো ভীষন জীবন্ত।
এভাবেই দ্যুতি ছড়িয়ে যান!
।।।।।।।।।।।।
অনিত্র
অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা
দেবদ্যুতি
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
দেবদ্যুতি
নতুন মন্তব্য করুন