লিস্ট থেকে আরেকটি নাম খসে গেছে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল – নীলয় নীল (নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়)। এ খবরের রেশ এর মধ্যে কেটে গেছে এবং আমরা আমাদের সাদামাটা দৈনন্দিন কাজে মনোনিবেশ করেছি। সেলফি কিংবা নামী রেস্টুরেন্টে দ্বিপ্রহরের কিংবা সান্ধ্য ভোজের ছবি আপ্লোড দিচ্ছি। প্রত্যেক এক্টিভিস্ট ব্লগারের হত্যাকাণ্ডের পর এরিমধ্যে অনেক লিখালিখি হয়েছে। দুঃখজনকভাবে এ ধরণের অপরাধ দমন প্রক্রিয়া কিংবা সামাজিক এ দূর্যোগ পরিস্থিতিতে করণীয় কি তা নিয়ে কোন বিশ্লেষণী লিখা চোখে পড়েনি এখনো পর্যন্ত। আশা করেছিলাম এ ইস্যুটিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে সমাজবিজ্ঞানী কিংবা অপরাধ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কিছু কর্মপন্থা সংক্রান্ত মতামত আসবে। কিছু যখন পাচ্ছি না তখন আমি আমার সহজ সাধারণ চিন্তা ও বিবেচনা প্রসূত কিছু কথা লিখে যাই।
ক) হত্যা কি অপরাধ? – মডারেট মুসলমানদের মত হচ্ছে, অবশ্যই হত্যা অপরাধ। যারা ধর্মের কথা বলে মানুষ হত্যা করে তারা প্রকৃত মুসলমান নয়। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে যে বৃহৎ একটি অংশ এ জ্বিহাদ করে যাচ্ছে বেশ অনেকদিন ধরে তাদের মতে ধর্মযুদ্ধের নামে হত্যা ধর্মেরই নির্দেশ। এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে এতটুকু বুঝতে পারি, দীর্ঘদিন ধরে যারা নিজের জীবন উতসর্গ করে, সংসারধর্ম ত্যাগ করে, সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ জ্ঞান করে এ পথে চলেছেন, তাদেরও নিশ্চয়ই শক্তিশালী যুক্তি আছে তাদের এ মতাদর্শের সপক্ষে। ইসলাম প্রচারের ইতিহাসেও আমরা অনেক ধর্মযুদ্ধের উদাহরণ পাই যেখানে অন্যদেশ দখল করার জন্য ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পাঠানো হয়েছিল এবং তা গ্রহণ না করলে আক্রমণ করা হয়েছিল। ধর্মযুদ্ধের অনেক ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে বর্তমানও। তাই ধর্মীয় মতপ্রতিষ্ঠার লড়াই কে সরাসরি যারা অনৈসলামিক বলেন, উগ্রপন্থী জ্বিহাদীরা তাদের বরং দূর্বল মুসলমান বলেন। এ বহু বছরের বিতর্ক যার শেষ হবার কোন সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। তাহলে আমরা কি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এর উত্তর খুঁজতে থাকব? অবশ্যই না। কারণ আমাদের দেশ কোন শরিয়া আইনে শাসনাধীন না। স্বাধীন দেশ হিশেবে, সব ধর্ম-বর্ন জাতি-নৃগোষ্ঠীর জন্য আমাদের রয়েছে নিজস্ব আইন ও শাসনব্যবস্থা। সে শাসনব্যবস্থা ধর্মের উর্ধে। সে আইন বলে হত্যা একটি মানবতা-বিরোধী জঘন্য অপরাধ। এ অপরাধে দুটো বিষয় জড়িত – ১) হত্যা, ২) মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেয়া। দুটোর সম্মিলনে এ অপরাধের মাত্রা হত্যার চেয়ে অবশ্যই ভয়াবহ।
খ) মত প্রকাশের স্বাধীনতা – এটি খুব সম্ভব আজকের সময়ের সবচাইতে আলোচিত বিষয়। কতটুকু পর্যন্ত আসলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ? একটি বিষয় দারুণভাবে লক্ষ্যনীয় যে, মডারেট মুসলমানেরা প্রথমদিকে লুকাছাপা করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেন, হত্যা খুবই জঘন্য কাজ কিন্ত ধর্ম নিয়ে না লিখলেই কি হয় না। এই মত ধীরে ধীরে সরব হয়েছে। নীলাদ্রির মৃত্যুর পর এসে আমরা দেখি ফেসবুকে বিভিন্ন সংবাদপত্র পেজে হত্যা সংবাদের নীচে অনেক মন্তব্য এসেছে এরকম যে সে তাঁর প্রাপ্য শিক্ষা পেয়েছে, বাকিদেরও একই শিক্ষা পাওয়া উচিৎ। এটা অনেক মডারেট করে লিখলাম। প্রকৃত কমেন্টগুলো যারা খবরগুলো ফলো করেছেন তারা জানেন যে, এর চেয়ে অনেক ভয়াবহ ও কুৎসিত। খুব ভালোভাবে এই কমেন্ট গুলো খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এই কমেন্টকারীদের বেশিরভাগেরই অনলাইন আইডি নকল, আবার অনেকে সত্যিকার আইডি নিয়েও করেছেন। আমরা জানি, অনলাইনে ফেসবুকে একজন ব্যক্তি চাইলে অসংখ্য আইডি খুলতে পারেন। এর থেকে তিনটি ধারণা করা যেতে পারে – ১) আইসিটি আইনের ভয়ে তারা আসল আইডি ব্যবহার করছেন না অর্থাৎ এদের মনে ভয় আছে ২) প্রচুর পরিমাণ নকল আইডি নিয়ে এ মতামতটার কৃত্রিম গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করা হচ্ছে ৩) এই ধরণের হত্যার গ্রহণযোগ্যতা আসলেই বাড়ছে। তার মানে কি পরিস্থিতি বিবেচনায় ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তা নিয়ে মতপ্রকাশকে নিষিদ্ধ করা উচিৎ? এরিমধ্যে কিছুদিন আগে তথ্য মন্ত্রণালয় হতে জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার খসড়ার উপর সর্বসাধারনের মতামত চাওয়া হয়েছে। এ খসড়াটিতে অনেক বিষয়কেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে বাক-স্বাধীনতা, বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র, নৈতিকতা, সামাজিক কুসংস্কার, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ইত্যাদি সমার্থক শব্দ এসেছে সাতটি অংশে, পরিচ্ছদ ১.০, ১.২.২, ১.২.৩, ১.৩.৫, ১.৩.৭, ৩.৪.৬ এবং ৩.৪.৮ এ। সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের কথা এসেছে ১.৩.৯ এ। অন্যদিকে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে বলা হয়েছে পরিচ্ছদ ৩.৩.৫ এবং ৫.১.৬ এ। এখানে একইসঙ্গে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা বলার পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নিয়ে বিধান থাকা সাংঘর্ষিক নিঃসন্দেহে। কারণ ধর্মীয় অনুভূতি একটি সীমানাহীন বৃহৎ পরিসর। আমি যখন স্ত্রীর সাথে যৌক্তিক আলোচনায় ডারউইনের থিওরি কিংবা সৃষ্টি রহস্য নিয়ে স্টিফেন হকিং এর বিগ ব্যাং নিয়ে কথা বলি তখন সেও চোখ বড় বড় করে প্রচণ্ড অবিশ্বাসে তাকিয়ে থাকে; যদিও গভীর রাতের অন্ধকারে সৌভাগ্যক্রমে আমার গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় না। দেখা যাচ্ছে তারও অনুভূতি আহত হচ্ছে এমন বিষয়ে যা সে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে এসেছে। তাহলে অনুভূতির কথা ভেবে কি আমাদের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, গবেষণা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা নিষিদ্ধ করা উচিৎ? তবে তো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বিজ্ঞান তুলে দিতে হয়। আমাদের আরেকটি কপটতা হল আমরা সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাকে বিজ্ঞান মাধ্যমে পড়াশোনা করতে পাঠাই, কিন্ত সেই আমরাই যুক্তি-বিজ্ঞান এসবের চর্চা একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে পছন্দ করিনা। ধর্ম নিয়েও রয়েছে অনেক যৌক্তিক আলোচনা। অভিজিৎ রায় নিজেই মহানবীর স্ত্রীদের প্রসঙ্গে তথ্যনির্ভর যৌক্তিক আলোচনা করেই রোষানলে পড়েন। তার সেই লিখার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাউকে কখনো যুক্তি খণ্ডন করতে দেখা যায় নি, বরং সহজ সমাধান হিশেবে মগজ ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছে। তাই এই প্রসঙ্গে সাংঘর্ষিক নীতি রেখে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন কি করে সম্ভব? আশা করছি নীতিমালা প্রণয়নকারীরা ব্যপারটিতে সুদৃষ্টি দেবেন। এখন কথা আসে তাহলে কি বাক-স্বাধীনতার কথা বলে এই ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়াই উচিৎ? তাহলে যারা ধর্ম বিরোধিতার নামে যুক্তির ধারেকাছে না যেয়ে ক্রমাগত অশ্লীল ও কদর্য শব্দ ব্যবহারে ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা প্রতিষ্ঠানকে যুক্তিহীন কিংবা তথ্যপ্রমাণহীন আক্রমণ করেন, তাদেরটা ও কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতায় গ্রহণ করা উচিৎ? আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে - না। এখানে বুঝতে হবে যুক্তি-বিজ্ঞান চর্চা আর যুক্তি-তথ্য হীন কটূক্তি দুটোর মধ্যে নির্দিষ্ট সীমারেখা টানা যায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতার উৎকর্ষতার চর্চায় মুক্ত মননের পরিবেশ হচ্ছে প্রাথমিক চাহিদা। তাই যুক্তিবুদ্ধি চর্চার হতে হবে বাধাহীন, মসৃন ও সর্বপক্ষের অংশগ্রহণমূলক। বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম সর্বক্ষেত্রেই যৌক্তিক আলোচনা শতভাগ স্বাগত জানাতে হবে। যিনি সেটা গ্রহণ করবেন না সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত মতাদর্শ হতে পারে কিন্ত তার প্রতীবাদ হবে শুধুমাত্র তথ্যপ্রমাণ এবং যুক্তি দিয়ে। চাপাতি কিংবা রাজনৈতিক কোন ধরণের শক্তির প্রভাবে নয়। সংখ্যাগুরু জনগণের অনুভূতি তাতে আহত হোক কিংবা না হোক। পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘোরে, সূর্য ঘোরে না কিংবা পৃথিবীর আকৃতি যে গোল, চ্যাপ্টা নয় একথা গুলো যখন কোন একজন প্রথম বলে তখনো সংখ্যাগুরু অংশের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছিল। তাই বিজ্ঞান ও মননের এই চর্চায় অনুভূতির কথা বলে হস্তক্ষেপ অবাঞ্ছিত। তবে যুক্তিহীন যে কোন ধরণের কদর্য ও অশ্লীল ঘৃণার চর্চায় বিধিনিষেধ থাকাটা আমাদের মত অসহনশীল ও দূর্বল সমাজব্যবস্থায় বাঞ্ছনীয়। যেদিন আমরা প্রকৃত শিক্ষিত ও মননে উন্নত হয়ে উঠব সেদিন আপনাতেই যেমন চাপাতির আস্ফালন থেমে যাবে ঠিক একইভাবে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হবে প্রাণবন্ত।
গ) করণীয় কি? – মৌলবাদী শক্তি বেশ অনেকটা সময় ধরেই বিশ্বে তাদের কার্যক্রম যথেষ্ট প্রতাপের সাথে চালিয়ে যাচ্ছে। এদের নেটওয়ার্ক ও আন্তর্জাতিকভাবে হয়েছে অনেক শক্তিশালী। বিশ্বশক্তি সমূহ তাদের প্রয়োজনে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে, সময়ে সময়ে এদের উত্থান ও কর্মপ্রক্রিয়ায় সহায়তা ও সহযোগিতা দিয়ে এসেছে এবং দিচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার চূড়ান্ত বিদ্বেষ আর রেষারেষির কারণেও তারা কোন না কোন পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে এরা সমর্থন পাচ্ছে। যখন যার কাজে আসে তারাই এদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উসকে দেন। এটা তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতির অনৈতিক খেলা। এতে জয় হয় রাজনীতির আর পরাজয় নৈতিকতার, সমাজের, সাধারণ মানুষের।
এ দেশের সম্পদশালী অংশ দ্বিমুখী চরিত্র নিয়ে চলেন। এক দিকে অবৈধ আয় করেন, আবার সে আয়ের পাপমুক্তির জন্য মধ্য কিংবা শেষ বয়সে এসে হজ্বব্রত পালন করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ধর্মচর্চা করেন। এক দিকে দেশে অপরাজনীতির চর্চায় সহায়ক কিংবা সক্রিয় ভূমিকা নেন কারণ অপরাজনীতি থাকলে পদলেহন করে, সন্ত্রাস করে, শক্তের ভক্ত হয়ে টেন্ডারবাজি, ট্রেড ইউনিয়ন, কালোবাজারি, অধিক ঘুষ বা উপরি আয়ের পোস্টিং তথাপি স্বল্প সময়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার উপায় করায়ত্ব হয়। আবার অন্যদিকে সেই অসদুপায়ে অর্জিত টাকায় সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনায় পাঠানোর মাধ্যমে তাদের এ নষ্ট রাজনীতির ছোবল থেকে রক্ষা করেন। পারলে নিজেদের সহ পুরো পরিবারের জন্য ইনভেস্টমেন্ট ভিসা ক্যাটাগরিতে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে ভিসা ক্রয় করে নিজেদের ভবিষ্যৎও নিরাপদ ও নিশ্ছিদ্র করে রাখেন। অর্থাৎ শুধু যে এরা কালো টাকার মালিকই হচ্ছে তা নয়, সে টাকাকে দেশের অর্থ সীমার বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রার রেমিট্যান্স হতে দেশকে বঞ্চিত করছেন এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছেন। এরাই আবার লন্ডন-আমেরিকা গিয়ে টুপি পড়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ধর্মের অসিহত করেন আর দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উপহাস করেন। প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে এলাম। এতগুলো কথা বলার কারণ হচ্ছে একটা বিষয় পরিস্কার করা, তা হল, এ দেশে ধর্ম শুরু থেকেই অপরাজনীতি, অশিক্ষা, দূর্ণীতি তথা সকল অপকর্মের সহায়ক হিশেবেই কাজে এসেছে। কেউ কি একটা উদাহরণ দিতে পারবেন যে ধর্ম এদেশের নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ মানুষের কবে কোন উপকারে এসেছিল। দুঃখিত, আমার চোখে পড়ে নি।
কথা বলছিলাম করণীয় নিয়ে। অপরাধ দমনের বেশ কিছু পদ্ধতি উন্নত বিশ্বে অনুসরণ করা হয়। এ সম্পর্কে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমুহ নিশ্চয় আরও ভাল জানবেন। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান-বুদ্ধিতে যতটুকু সম্ভব তুলে ধরছি। অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রনে তিন ধরণের পদ্ধতিতে কাজ করা হয় – ১) পরিবেশ-পরিস্থিতিগত ২) সামাজিক ৩) আইনের শাসন।
১) পরিবেশ-পরিস্থিতিগত পদ্ধতি হল কোন একটি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষ ধরণের অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রন প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হল –
• পরিস্থিতির পূর্ণ ও সঠিক পর্যবেক্ষণ
• অপরাধের কারণে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে যারা আক্রান্ত বা প্রভাবিত তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা
• সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা গ্রহণ, সে অনুযায়ী কাজ করা, পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করা
• একটি পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট কাঠামো গড়ে তোলা
এখন এই পদ্ধতিতে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যে ভূমিকা সমূহ নিতে পারে –
• হত্যা হুমকিতে থাকা যে কোন ব্যক্তির থানায় অবহিত করা সাপেক্ষে উক্ত ব্যক্তির বাড়ি কিংবা আশেপাশের এলাকায় সাধারণের প্রাইভেসি বিঘ্নিত না করে মত গোপন সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে পারে। এ ধরণের সাপোর্ট সার্ভিসের জন্য কয়েকটি থার্ড পার্টি নিরাপত্তা প্রদানকারী কোম্পানির সাথে তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সাপেক্ষে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে।
• হুমকিতে থাকা ব্যক্তিদের যথাযথ অস্ত্রচালনা শিক্ষা দিয়ে সাময়িকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি দিতে পারে
• তাদের জন্য খালি হাতে আত্মরক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কার্যকরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এ কাজও তারা চাইলে কয়েকটি থার্ড পার্টির হাতে চুক্তিতে দিয়ে দিতে পারেন।
• হুমকিতে থাকা ব্যক্তির বাসস্থান কিংবা কর্মক্ষেত্রের আশেপাশে নিজস্ব বা বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এর ব্যবস্থা নিতে পারে
• শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষন কিংবা বোঝার জন্য বিভিন্ন টেকনিকের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন
• দক্ষ অফিসারদের নিয়ে ২৪ ঘন্টার সার্ভিলেন্স টিম রাখতে পারেন
• আক্রান্ত হলে স্বল্পতম সময়ে সংকেত পাঠানোর জন্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কিংবা এপ্লিকেশন ইন্সটল করে দিতে পারেন হুমকিতে থাকা ব্যাক্তির সেলফোনে, ঘড়িতে কিংবা কোন বহনযোগ্য ডিভাইসে এবং বাসস্থানে
• কোন ধরণের সন্দেহজনক কিছু মনে হলে তা অবহিত করার জন্য প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট সার্ভিস অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া। একজন সার্ভিস অফিসার এক বা একাধিক ব্যক্তির দায়িত্ব নিতে পারেন। অনেকটা রিলেশনশিপ ম্যানেজার পদবীর ন্যায়। তারা তাদের ক্লায়েন্টের সার্বিক অসুবিধা লিপিবদ্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
• প্রতি সপ্তাহে ব্যক্তির সাথে মুখোমুখি আলোচনার মাধ্যমে সপ্তাহের বিভিন্ন ঘটনার বর্ননা শুনে বিপদ অনুধাবন ও তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন। সে অনুযায়ী ব্যক্তির নিরাপত্তা বাড়ানো কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
২) সামাজিক পদ্ধতি – এ পদ্ধতি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কারণগুলো পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে অপরাধীর অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করে, সাধারণকে এ ধরণের অপরাধ সংগঠনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সহায়তা করে। এ পদ্ধতির মধ্যে কিছু প্রয়োগসাধ্য পদক্ষেপ হতে পারে এরকম –
• মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পক্ষে সহজবোধ্য ভাষায় মিডিয়াতে দৃঢ় বিবৃতি দাণ। ক’দিন আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে স্পষ্টভাবে বলেছেন – “ধর্মের নামে সন্ত্রাস চলতে দেব না”। এ ধরণের স্পষ্ট বক্তব্য সামাজিকভাবে অপরাধীদের যেমন শক্তিশালী নেগেটিভ মেসেজ দেয় ঠিক অপরদিকে একদিন পরই পুলিশের আইজিপির বক্তব্য তাদের উতসাহিত করে।
• সরকারের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগের ধর্মের নামে অশিক্ষা, অন্য ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা ও ঘৃণা প্রকাশ, জ্বিহাদী মনোভাব উসকে দেয়া বক্তব্য সরকারের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ধরণের অঙ্গসংগঠনের মূলতন্ত্র ও কার্যক্রমের উপর সরকারের অধিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
• মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এরিমধ্যে অনেক আলোচনা ও লিখালিখি হয়েছে। সরকার নিজেও এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই। কিন্ত এই প্রসঙ্গে সিদ্ধান্তহীনতায় কালক্ষেপণের আর সুযোগ নেই। কঠোরভাবে এ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান, সাহিত্য ও তথ্যপ্রযুক্তিকে বাধ্যতামূলক করা, সকল মাদ্রাসায় লাইব্রেরী চালু করা, বিনামূল্যে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপরের তিনটি পয়েন্টই আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের সরকারের জন্য দুঃসাধ্য একটি চ্যালেঞ্জ। এরিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী তনয় অকপটে বলেছেন যে, বাংলাদেশের অসহনশীল রাজনীতিতে যেখানে ধর্মকে ব্যবহার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বিভিন্ন পক্ষ সর্বদাই সুযোগের অপেক্ষায় সেখানে মুক্তচিন্তা প্রকাশের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়া সম্ভব নয়। ওনার বক্তব্য বাস্তবতানির্ভর তবে এই দূর্বল অবস্থানকে পূঁজি করে মৌলবাদী শক্তি ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান শক্ত করে নিচ্ছে। কিছু ব্যপার সবার বোঝা দরকার যে, মুক্তমনা ব্লগার হত্যা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি কার কার পক্ষে যাচ্ছে –
* নীলাদ্রি হত্যাকান্ডের পর দেশব্যাপী সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ ও সমালোচনা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রগতিশীল অংশের কাছে এমনকি সংখ্যাগুরু ধর্মভীরু মানুষের কাছেও কমেছে কারণ হত্যার মত জঘন্য অপরাধ কেউই একটি শান্তিপুর্ন সমাজে দিনের পর দিন মেনে নিতে পারছেন না। অন্যদিকে কট্টর বিরোধী দল কিংবা মৌলবাদী অংশের কাছে কি গ্রহণযোগ্যতা বাড়ল সরকারের তাদের এই চাপা অবস্থানের কারণে? নিঃসন্দেহে নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ কে অনেক আগেই নাস্তিক, হিন্দু ইত্যাদি ট্যাগ দিয়ে দিয়েছে মৌলবাদী ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। কাজেই দূর্বল অবস্থানে না থেকে কঠোর অবস্থান নিলেই বরং সরকারের রাজনৈতিকভাবে সফলতা কিছুটা হলেও বেশি পাবে।
* শাহবাগ গণজাগরণের মত এত বৃহৎ একটি মুভমেন্টকে দমিয়ে দিয়ে যুদ্ধপরাধী বিচার এ সর্বোচ্চ রায়ের আন্দোলন কে ব্যহত করে প্রথম ব্লগার হত্যার মাধ্যমে। এ হত্যাকাণ্ডটি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ছিল একটি বড় ধরণের সফলতা। অনেকগুলো রায় এর মধ্যে এসে গেলেও বেশীরভাগ রায় কার্যকর করা এখনো বাকী। মুক্তমনা হত্যার মাধ্যমে আস্তিক-নাস্তিক ইস্যুকে উসকে দিয়ে এ রায়সমুহ কার্যকর করাকে বাধাগ্রস্ত করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
* এরিমধ্যে আমরা দেখেছি সরকার সীমান্তে মাদক পাচার, মানুষ পাচার, স্বর্ন চোরাচালান ইত্যাদির বিরুদ্ধে যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে কাজ করছিল। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অসহনশীল করে, সরকারকে ধর্ম-অধর্ম ইস্যুতে ব্যস্ত রাখতে পারলে সকল প্রকার পাচার, অনৈতিক বাণিজ্য ইত্যাদি থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা যায়। আর তাই মৌলবাদী কার্যক্রমে রাজনৈতিক শক্তি ও বিদেশী সাহায্য ছাড়াও আরও অনেক উৎস থেকে অর্থ সাহায্য ও সহায়তা যে আসে সেটা সহজেই অনুমেয়।
বলছিলাম সামাজিক পদ্ধতিতে এ অপরাধ দমনের কথা। এ পদ্ধতিতে বেশ কার্যকরী কিছু ভূমিকা রাখতে পারেন সমাজের সচেতন নাগরিক সমাজ -
• বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্ত মৌলবাদী নয়। এ হত্যার বিরুদ্ধে সকলেই সমান সোচ্চার। এ ইস্যু যেহেতু ধর্ম নিয়ে তাই কার্যকরী সামাজিক প্রতিরোধ আসতে পারে উপাসনালয় থেকেই। আমাদের দেশে বেশীরভাগ মসজিদই এলাকাবাসীর দাণে, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এই গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইমাম সাহেবের নেতৃত্বে এ ধরণের হত্যার বিরুদ্ধে মৌন মিছিলের আয়োজন করতে পারেন। পাড়ায় এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধ কল্পে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে ভিজিলেন্স টিম গঠন করে দিতে পারেন যাদের দায়িত্ব হবে পাড়ায় সন্দেহপ্রবন বহিরাগতদের গতিবিধি নজরে রাখা। বুঝতে হবে, আপনার শ্রদ্ধা আপনার শত্রুকেও আপনার প্রতি শ্রদ্ধাবনত করবে।
• অনেক সম্পদশালী পরিবার বা ব্যক্তি মাদ্রাসা পরিচালনা করেন সমাজকর্ম হিশেবে। মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে ভালোভাবে যাচাই করে নিন। আপনারা আপনাদের মাদ্রাসায় লাইব্রেরীর ব্যবস্থা রাখুন যেখানে বিজ্ঞান, সাহিত্য ইত্যাদি সহ তথ্যপ্রযুক্তির উপর বই বা ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগ থাকে। কম্পিউটার ও আধুনিক শিক্ষারও ব্যবস্থা রাখুন যতটা সম্ভব। শুধুমাত্র মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে একটি ছেলে বা মেয়ে সমাজে ভাল কোন অবস্থানে যেতে পারে না, দায়িত্বশীল ভূমিকাও রাখতে পারে না। তাই দায়িত্ব যখন নিচ্ছেন তখন তাকে দক্ষ ও আধুনিক করেই গড়ে তুলুন। সে যদি জঙ্গি মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে তবে এ ধরণের অপরাধের দায় থেকে আপনি নিজেকে এড়াতে পারেন না।
• সামাজিকভাবে বিজ্ঞানমনস্কতার চর্চাকে সমৃদ্ধ করার জন্য সরকারী এবং বেসরকারিভাবে অনেক ধরণের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব যা এই ছোট্ট পরিসরে আর বিধৃত করছি না।
৩) আইনের শাসন পদ্ধতি – এ সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার নেই। বিচারহীনতা নিয়ে এরিমধ্যে অনেক কথা হয়ে গেছে। দ্রুত বিচার ও আইনের প্রয়োগ এ ধরণের অপরাধ দমনে সবচাইতে কার্যকরী পদক্ষেপ। তাই সরকারকে অনতিবিলম্বে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের বিচারে আরও অনেক বেশী তৎপর হওয়া কাম্য। এর জন্য দ্রুত বিচার আদালত গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ ধরণের অপরাধ অনেকাংশে শুধু কমবেই না সাথে সাথে মৌলবাদী কার্যক্রমও ঠেকিয়ে দেয়া যাবে।
শেষ করি আর কিছু কথা বলে। বাসার উঠোনে ছোট্ট একটা বাগানে আমরা কত না রঙয়ের ফুলগাছ লাগাই। সাথে থাকে পাতাবাহার কিংবা ফলের গাছ। সেখানে নিয়ত আনাগোনা করে হরেক রঙয়ের প্রজাপতি, পাখি আর কীট-পতঙ্গ। প্রকৃতি নিজেই সীমাহীন রূপে গন্ধে বিরাজমান। প্রতিটি প্রাণী এমনকি প্রতিটি মানুষও একে অন্যের থেকে অনন্য। প্রকৃতির এই বৈচিত্র আছে বলেই জীবন এত সুন্দর আর অর্থবহ বোধ হয়। সাদা, কালো, ঈশ্বর বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, বাঙ্গালি, নৃ-গোষ্ঠী, বিভিন্ন ধর্ম-বর্নের সকলে আছে বলেই আমাদের এত বৈচিত্রে ভরা দেশে আমরা গর্ব আর আনন্দ নিয়ে বেঁচে আছি, এবং থাকতে চাই। বিশ্বের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই। সন্তানের জন্য সুন্দর এক ভবিষ্যৎ চাই। অনেক দূর পথ রক্ত শ্রমে পাড়ি দিয়ে এসেছি আমরা। সামনে পথ চলাই হোক আমাদের লক্ষ্য। আর পিছু হাঁটা নয়।
তথ্যসুত্রঃ
অল্প কিছু পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি এটি লিখতে গিয়ে -
১। অপরাধ দমনের উপায়সমূহ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ - http://www.aic.gov.au/publications/current%20series/rpp/100-120/rpp120/07_approaches.html
২। তথ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত খসড়া “জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা” - http://www.moi.gov.bd/Press/Online_Mass_Media_Policy_draft.pdf
নাম/নিক - বেদুইন
মন্তব্য
প্রতিবাদের পাশাপাশি প্রতিরোধ এবং যথাযথ ব্যবস্থার পরিকল্পনাটা জরুরি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা সবাই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদেই সন্তুষ্ট থাকছি। এর একটা কারণ হচ্ছে সম্ভবত এটি দ্বায়িত্বশীলতা দাবি করে না। ভেবেছিলাম, এই বিষয়ে নিয়মরক্ষার মতো করে একটি কথাও বলবো না।
আপনার লেখাটা ভালো লাগলো। কিছু জায়গায় দ্বিমত থাকলেও একটা কর্মপন্থা খোঁজার চেষ্টা করেছেন এ কারণেই। অনেক ধন্যবাদ
স্বয়ম
এ ইস্যুতে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আরও বেশী লিখা প্রত্যাশা করছি। আবেগ দিয়ে অনেকেই লিখছেন যা উৎসাহ টাকে জিইয়ে রাখার জন্য কার্যকরী কিন্ত যারা সাহস নিয়ে লিখে যাচ্ছেন তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পন্থা নিয়ে আরও কথা হওয়া দরকার।
লিখা ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। বেশ তাড়াহুড়োয় লিখা। অনেক জায়গায় পড়তে গিয়ে আমার কাছেই এখন দূর্বল ঠেকছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
নিজের নামে লিখব বলে ভেবে এসেছি সবসময়। কিন্ত সে অবস্থান থেকে সরে এসেছি এ লিখায়। এটাতে উল্লেখিত নিকটি সম্ভবত এর মধ্যে অন্য কেউ নিয়েছেন। নতুন কোন নিক বেছে নিয়ে নিবন্ধন করে নেব। সে পর্যন্ত নামহীন।
দুঃখিত। বর্তমান বাস্তবতা "বহুল প্রচলিত" এই ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে বাধ্য করছে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বর্তমান বাস্তবতা আসলেই ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমি আসলে যেটা বলতে চেয়েছি তা হল - "বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্ত মৌলবাদী নয়" - এমনটাই দাবী করেন বেশীরভাগ মুসলমান। তাদের এই মতকে পূঁজি করেই মৌলবাদবিরোধী কিছু উদ্যোগে তাদের সম্পৃক্ত করাটা দরকার। কিছু কিছু যে সাহস করে এগুবেন না তা না। সরকারের অবস্থান শক্ত হলেই এদের অনেকেই অবস্থান বদলাবেন আমার বিশ্বাস। পরিস্থিতি উত্তরণে এ বৃহদাংশের ভূমিকা গুরুত্ব রাখে।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
হুমম... রামমোহন/বিদ্যাসাগরের স্ট্রাটেজি আরকি। ধর্মের অহিংস অংশটুকু ছেঁকে আলাদা করা? মানুষ-সরকার সম্পৃক্তির ব্যাপারটা দুষ্টচক্রের মতন লাগে আমার।
মানুষ সাহস করেনা > সরকার খেপাতে যায় না > মানুষ সাহস করেনা > সরকার... ...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
"মানুষ-সরকার সম্পৃক্তির ব্যাপারটা দুষ্টচক্রের মতন লাগে আমার।
মানুষ সাহস করেনা > সরকার খেপাতে যায় না > মানুষ সাহস করেনা > সরকার... ..."
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন