পহেলা বৈশাখের (১৪২২) দুইদিন আগের ঘটনা। আমরা বান্ধবীরা মিলে ফোনে কথা বলে ঠিক করলাম অনেকদিন যেহেতু দেখা হয়না, তাই এবার পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দেখা করব। এও ঠিক করলাম সবাই শাড়ি পড়ব- অনেক উজ্জ্বল রঙের শাড়ি- লাল, কমলা, নীল। এই প্রথম বন্ধু-বান্ধবীর সাথে টিএসসি ও চারুকলায় ঘুরতে যাওয়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে। এজন্য জল্পনা-কল্পনারও কমতি ছিলনা। এর আগে অবশ্য যাওয়া হয়েছে, কিন্তু পরিবারের সাথে।
সবেমাত্র কলেজ শেষ করেছি। এবারের বৈশাখ নিয়ে আমি অনেক উচ্ছ্বাসিত। আম্মুর সাথে গিয়ে শাড়ির রঙের সাথে মিলিয়ে ব্লাউজ কিনলাম। কোন শাড়ি পড়ব ঠিক করলাম। কিছুটা লজ্জাও লাগছিল প্রথম শাড়ি পড়ে বাইরে বের হব। পহেলা বৈশাখের দিন আমি আর আমার এক বন্ধু একসাথে টিএসসির দিকে রওনা দিলাম ফার্মগেট থেকে। যদিও সব বন্ধু-বান্ধবীর সাথে কথা হয়েছিল যে আমরা সকাল ১১ টায় টিএসসিতে সবাই একত্র হব। কিন্তু আমি ১১টার জায়গায় পৌঁছালাম ০১ টায়। সবাই ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসলেও দেখলাম সবাই এসে গেছে এরই মধ্যে। আমার আরেক বান্ধবীর সাথে তার বড় ভাই এসেছে; গার্ডিয়ান বলতে তিনিই ছিলেন আমাদের সাথে। স্কুলের বান্ধবীদের অনেকদিন পর একসাথে পেলে যা হয় আরকি- গল্প, আড্ডা, লাফালাফি, হাসাহাসি, অনেক অনেক ছবি তোলা ইত্যাদি।
স্কুলের টিফিন টাইমের গল্প, ক্লাসের মধ্যে লুকিয়ে বই পড়া, চিঠি চালাচালির গল্প, সবার প্রেমের গল্প ইত্যাদি। এসব করতে করতে আর খাবারের গল্প আসাতে বুঝতে পারলাম খিদে পেয়ে গেল। টিএসসি থেকে গেলাম হাকিম চত্বরে খাবার উদ্দেশ্যে। আবার খাবার নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে আরেক দফা ছবি তোলা। কাছের বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে আনন্দের মধ্যে সময়গুলো কেটে গেল। বিকেল গড়াতেই আমার অর্ধেক বন্ধু-বান্ধবীরা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। কেউ বাসার উদ্দেশ্যে, কেউবা অন্য অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। আমি, রাকিব, শারমিন, তার বড় ভাই রইলাম। কিছুক্ষন পর শারমিনের চাচাত ভাই এল সস্ত্রীক। সবাই মিলে জম্পেশ গল্প হল চারুকলায়। তখন প্রায় ৫ টা বা ৫:৩০ টা বেজে গেছে, ঠিক করলাম এবার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হব। আমাদের মধ্যে শারমিন আবার খুব চঞ্চল প্রকৃতির। ও বাইনা ধরে বলল কনসার্টে যাবে- রমনায় কনসার্ট হচ্ছে। আমি বললাম- “ঢুকলে বের হতে পারবিতো? আর ঢুকার পর সাথে ইভটিজিং তো ফ্রি পাবি।” তখনো ঘূণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি যা মজা করে বলেছি তাই সত্য হতে চলেছে নির্মম ও ভয়ঙ্করভাবে ভাবে।
তখন শারমিন প্রস্তাব দিল- “আচ্ছা ভিতরে ঢুকবোনা, বাইরে থেকে ১০ মিনিট দাড়িয়ে চলে যাব”। শারমিনের বড় ভাই তখন বলল- "এতই যখন ইচ্ছা তাহলে চল, কিন্তু শুধু ১০ মিনিট"। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতর দিয়ে রমনায় কন্সার্টে যাবার শর্টকাট রাস্তা। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের দিকে। যখন গেটের ভিতর ঢুকতে যাব তখন বাইরে থেকে দেখলাম তেমন একটা ভীড় ছিলনা গেটের সম্মুখে। তাই আমরা চারজন আরো এগুতে থাকলাম গেটের দিকে। গেট থেকে তখন ২০ ফুট দুরত্বে, মানুষের জটলার মধ্যে তখন অর্ধেক ঢুকে পরেছি। এঅবস্থায় দেখতে পেলাম গেটের সামনে ও পিছনে থেকে একসাথে অনেক মানুষ ঢোকার ও বের হবার চেষ্টা করছে। সেইসাথে অযথাই একটা ভিড়ের সৃষ্টি করেছে। আর সেই ভিড়ে আটকা পরেছি আমরা। আমি এবং শারমিন ছাড়াও আরো ২-৩ জন মেয়েকে দেখতে পেলাম ভিরের মধ্যে আটকা পড়েছে। তখন আর সামনে বা পিছনে সরে যাবার সুযোগ নেই। সবগুলো মানুষ আমাদেরকে যেন আটকে দিয়েছে এক জায়গায়। এরমধ্যে হঠাৎ চমকে উঠল শরীর, বুঝতে পারলাম শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয়া হচ্ছে। পিছন ফিরে দেখারও অবস্থা নেই যে কোন নরপশুগুলো এ কাজ করছে এবং কোন ধরনের খামছে দেবার বা কামড়ে দেবারও কোন সুযোগ ছিলনা। পরক্ষণেই আরো বুঝতে পারলাম যারাই সুযোগ পাচ্ছে নিতম্ব, কোমর টিপে যাচ্ছে যে যেভাবে পারে। তখন রাকিবকে বললাম তুই দয়াকরে আমার ঠিক পিছনে থাক। আমাকে হাত দিয়ে ব্যারিকেড দে। (আমাকে ব্যারিকেড দেবার সময় ওর স্মার্টফোনটা কেউ নিয়ে যায়।) আমার ঠিক পাশেই ছিল শারমিন আর তার সামনে তার ভাইয়া। ভাইয়াকে চিৎকার করে বলতে থাকলাম ভাইয়া আমাদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান, তাহলে আমরা কিছুটা রক্ষা পাব। প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কির ও লোভী হাতগুলোর মাঝে ভাইয়াও যে অপারগ আমাদের রক্ষা করতে সেটাও বুঝতে পারছিলাম। আমার ভাগ্য ভাল ছিল যে হাতে ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগটাকে শরীরের সকল শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম বুকে। এই ব্যাগই হয়ে গেল আমার প্রতিরোধের ঢাল। যে রাস্তা দিয়ে একজন মানুষ যাবার কথা ছিল সেখানে ৩-৪ জন ধাক্কাধাক্কি করছে, তারা যেন সামনে বা পিছনে নড়তে ইচ্ছুক নয়, আমাদের যেন পিষে মারতে চাচ্ছে, আরো যেন আমাদের শরীরের গভীরে হাত ঢুকাতে চায়, কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে আমাদের গোটা শরীরে- আমাদের শরীর মুহুর্তেই যেন হয়ে গেল তাদের অবাধ যৌনতার চারণ ভূমি। ঐমুহুর্তে আমার সময় থমকে গিয়েছিল এ নরপশুদের বাহুর ধাক্কায়। যখন তাদের হাতের মুঠোতে ছিল আমার নিতম্ব আর কোমর, তখন দেখেছি একজন মানুষ, হ্যাঁ পুরুষ মানুষ, তার হাত দিয়ে ঢেকে আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আমি জানিনা উনি কে, শুধু তার লাল রঙের টি-শার্টটা মনে রাখতে পেরেছি। ভাইয়া ও বন্ধুর কল্যানে ৫-৭ মিনিটে পার হলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট। এই কয়েক মিনিটেই বুঝতে পারলাম মানুষ কত হিংস্র হতে পারে। একটা নারীর শরীরের কিছু অংশে এক মুহুর্তে হাত দিয়ে টিপ দেবার জন্য তারা কি না করতে পারে! এতে তারা কি এমন স্বর্গসুখ পায়, সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু সেটি এক নারীমনে কি প্রভাব ফেলে তা শুধুমাত্র নারীরাই জানে।
ভীড় ঠেলে বের হয়ে আমি আর শারমিন অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকি। কি হল, কি হবার কথা ছিল, ভাইয়া ও বন্ধুর সামনে এমন অপমান সবকিছু যেন আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। এই স্তব্ধতা আমি শারমিনের চোখে দেখতে পাচ্ছি, শারমিনও নিশ্চয় আমার চোখের নিরবতা দেখছে অবাক হয়ে। শারমিনের এমন অদ্ভুত হাবাগোবা চেহারা আমি জীবনেও দেখিনি। বারবার শিউরে উঠছিলাম যখন মনে পরছিল শেষ নোংরা স্পর্শটাও। বন্ধু ও ভাইয়ার চোখে আর চোখ ফেলিনি, শাহবাগের দিকে হাটা শুরু করলাম।
ঢাকায় আমার জন্ম এবং এশহরেই বেড়ে ওঠা। এই ২১ বছরের জীবনে পুরুষের বিকৃত যৌন রুচির পরিচয় আগেও পেয়েছি অনেকবার। রাস্তায় হাটতে গিয়ে গায়ে ধাক্কা খাওয়া সববয়সের পুরুষ, বাস থেকে তারাতারি নামার মুহুর্তে খাবলা মেরে শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল জায়গাটিতে শেষ মুহুর্তে হাত দিয়ে দেয়া, পাশের বাসায় আঙ্কেল বয়সীরাও জানার গ্রিল ধরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি জানি এসব শুধু আমার একার কাহিনী না, বাংলাদেশে প্রতিটা মেয়েই বেড়ে ওঠে এভাবে, আমরা নারীরাই জানি নারীদের কথা। তবে অতীতে সবসময় দেখেছি পুরুষরা এসব করেছে লুকিয়ে, নারীদের একা পেলে। কিন্তু এবার তারা করল শত মানুষের ভিড়ে, এবার শুধু ছুলনা- আক্রমন করল, যেন অধিকার নিয়ে অত্যাচার করল। নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি, এভাবে রক্ষা করা যায়না, দশটা হাতকে একসাথে থামানো যায়না, কারোনা কারো হাত জয়ী হয়ে যায়, আরো জোড়ে টিপে দেয় নিতম্ব আর কোমর। নিতম্ব আর কোমর যেন অতি ক্ষুদার্ত মানুষের সামনে একগামলা খাবার। তার চিবিয়ে খেতে চায়, তাদের সজোর পেষনে খুঁজে পেতে চায় খাবারের স্বাদ আর তাদের উল্লাসে প্রতিমুহুর্তে আমি হই অবনত নিজের কাছে, বন্ধুর কাছে, বান্ধবীর কাছে, ভাইয়ার কাছে, সমাজের কাছে, দেশের কাছে, গোটা পৃথিবীর কাছে। কতজন কতক্ষন ধরে কোমরে ও নিতম্বে হাত দিচ্ছিল বা টিপছিল মনে করতে পারছিনা। বোঝা যাচ্ছিল অনেক হাত একসাথে। যারা সুযোগ পাচ্ছিল, যতবার পারছিল হাত চালাচ্ছিল। সেই ৫-৭ মিনিটকে মনে হচ্ছিল অনন্তকাল। মনে হচ্ছিল ক্ষুদার্ত সিংহের মুখ থেকে টসটসে মাংসের টুকরা ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। শুধু নারী হয়ে জন্মেছি বলেই বিলিয়ে দিতে হচ্ছে যৌন উল্লাস পুরুষের মাঝে। আমি একজন নারী, ভাবছি সকল পুরুষই ভ্রুন থেকে মানুষরূপ ধারন করে নারীরই পেটে।
হ্যাঁ আজকে আমি জানি আমি কতটা ভাগ্যবতী। পরে টিভিতে, ফেসবুকে যখন দেখলাম অন্য মেয়েদের সাথে কি করা হয়েছে তখন নিজেকে চরম ভাগ্যবতী ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিনা।
বাটারফ্লাই
ফার্মগেট, ঢাকা
২০-০৮-২০১৫
মন্তব্য
ঠিক বুঝতে পারছিনা কী বলব। পড়তে পড়তে একই সঙ্গে ক্রোধ এবং অসহায়ত্ব টের পাচ্ছিলাম। আমিও আপনার মত ঢাকা শহরে বড় হওয়া মানুষ, টিএসসি ইত্যাদি এলাকায় কাটিয়েছি ষোল বছর। এইসব দেখলে খুব মন খারাপ হয়।
বাটারফ্লাই আপনি সচলায়তনে লিখেছেন আগে? নিকটা মনে পড়ছে না, অন্য ব্লগে আমি তেমন যাইনা। স্কুল কলেজের লাফালাফি, হাসাহাসি, বন্ধু রাকিব আর বন্ধু শারমিন, হাকিম চত্বরের চা সিঙ্গাড়া এইসব হাবিজাবি নিয়া লেখেন একসময়। পড়বনে। আমরা আমরাই তো।
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ, সত্যপীর।
কোন ব্লগে এটাই আমার প্রথম লিখা। বন্ধুর অনুপ্রেরণায় লিখেছি। ভবিষ্যতে আরো লিখার চেষ্টা করবো।
এই অসীম সাহসী লেখাটির জন্য আপনাকে অভিবাদন।
যে অপমান আপনার প্রতি ঘটে গেছে, সে অপমান, সে বেদনার কোন ছাড়ান-কাটান হয় না। আশু দিনগুলিতে ভিড়ের এই পরিচয়হীন, অবয়বহীন, মনুষ্যত্বহীন চরিত্রের কোন পরিবর্তন হবে এমন আশাও দুরাশা বলেই মনে হয়। কিন্তু প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের লড়াই ছাড়া এ অবস্থা আদৌ পালটাবে না। আপনার এ লেখাটি সেই লড়াইয়ের একটি হাতিয়ার।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ, এক লহমা।
এসব লেখা পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে হয়। মানুষ বিশেষ করে পুরুষ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে লজ্জিত হয়ে পড়ি। আপনাকে ধন্যবাদ সাহস করে লিখে ফেলার জন্য। আর সচলায়তনে স্বাগতম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আপনাকেও ধন্যবাদ, ত্রিমাত্রিক কবি।
এই লজ্জা কোথায় রাখি?
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
......................
(সচলে স্বাগতম)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই লজ্জা আমাদের সবার।
সচলায়তনে স্বাগতম। আরো লিখুন।
কিছু বলার শক্তি নাই, অসুস্থ বোধ করছি!
যারা ওই ঘটনাগুলো করেছে তারা তো আমাদের সমাজের, আমাদের মতো মানুষ, ওরা আমাদের কারো না কারো ভাই বন্ধু। ভদ্রলোকের সন্তানদের মধ্যেও সুপ্ত পিশাচের অস্তিত্ব আছে বলেই এরকম ঘটনাগুলো ঘটে। পরিস্থিতি বুঝে আমাদের মতো মানুষেরাই পিচাশে পরিণত হয়। এই লজ্জা সমগ্র জাতির।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
এমন এক লজ্জা যা স্তব্ধ করে রাখবে আমাদের সবসময়। লজ্জায় মাথা নুয়ে যায় আমাদের অবস্থা চিন্তা করলে, মানসিক অসুস্থতা কোন পর্যায়ে গেছে সেটা চিন্তা করে। আর ক্ষমা চাইছি এই অত্যাচারের শিকার হওয়া সকলের কাছে, একটা নিরাপদ সুস্থ সমাজ আমরা দিতে পারি নাই সবার জন্য। অন্যকে বলা আগে নিজেকেই শতধিক দিই সেই কারণে।
facebook
দু’দিন আগেই চমৎকার একটা ভ্রমণ শেষে ফিরছিলাম, পেছনের সিটে বসা সাবেক সেনাসদস্য (ব্যাচটা পরে দেখেছি), মাথায় মধ্যপ্রচ্যের কোনো এক বিশিষ্ট দেশের প্রতিনিধির মতো চেককাটা কাপড় (জিনিসটার নাম জানি না) আমার সিটের পেছনে হাত দিয়ে রাখছিল, প্রথমে কিছু বলিনি, ভেবেছি বুড়ো মানুষ, হাত রেখেছে সিটে, বোধহয় হাতে সমস্যা। তারপর দেখি আমি জানালার বাইরে তাকালেই বুড়ো হাতের দুই আঙ্গুল এক করে বিশেষ মুদ্রায় নাচাচ্ছে। আমি অবাক, একবার, দু’বার নয়, বারবার। তাকে হাত সরাতে বললাম এরপর, সে খুবই বিরক্ত হয়ে হাত সরালো... মেয়েদের কাছে এসব খুব বারবার ঘটা অভিজ্ঞতা। সাধারণত বড় মানুষদের আমি ‘সে’ বলে সম্বোধন করি না কিন্তু সেই বদমাশের জন্য কোনো সম্মানজনক শব্দ নয়।
তোমার অভিজ্ঞতাটা অনেক বেশি কষ্টকর, ভয়ঙ্কর। কী বলব, বলো, ভালবাসা তোমার জন্য।
দেবদ্যুতি
কী বলব? আমি পুরুষ হয়ে লজ্জিত, আমি মানুষ হয়ে লজ্জিত! আমি মর্মাহত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে। নতজানু হয়ে ক্ষমাপ্রার্থী ভুক্তভোগী সকলের কাছে। নিজের অক্ষম আক্রোশ মেটাই কী বোর্ডের বোতাম চেপে - নিজেকে মাঝে মাঝে নপুংসক মনে হয়!
____________________________
আপনার জন্য শুভ কামনা। আরো লিখুন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
এই অভিজ্ঞতাগুলো উঠে আসা জরুরী। ধন্যবাদ লেখার জন্য।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আজ যেভাবে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে জনসমক্ষে, এমন একটা দিন আসুক সেই সব নরপশুদের বিচার হবে। তারা ক্ষমার অযোগ্য। যারা নারীদের এভাবে অবমাননা করে এই বাংলার মাটিতেই একদিন তাদের বিচার হতেই হবে। নাহলে পরবর্তী প্রজন্ম কী শিখবে?
নিজের শরীর সামলাতে গিয়েই নারীরা অস্থির থাকে। এই শরীরের প্রতি এত্ত লোভ!!!!! শরীর সাজানো থাকলে একদল বলে ঢেকে ঢুকে রাখো, আরেক দল ঢেকে রাখলে আবার অন্য, সাজানো শরীর নিয়ে কল্পণা জল্পনা করে অস্থির। রাগ, ক্ষোভ কিছুতেই তাদের যায় আসে না। স্তনের আর নিতম্বের, হাত পা, ঠোঁট, এমনকি মাথার চুল দেখলেও তাদের লিঙ্গ অস্থির হয়ে ওঠে। একটা মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই যেন, তারা ভাবতে পারে না, নারী কে। একটা চিমটি দিতে পেরেই তাদের বিজয়োল্লাস, একটু ছুঁয়ে দিতে পারলেই, তাদের রাত মাস্তানা। মেয়েরা বাইরে বের হবে কেন? মেয়েরা যদি বাইরে বের ও হয় তাহলে বস্তা পড়ে বের কেন হয় না? অনেক শিক্ষিত পুরুষও যখন, এ কথা বলে, ঘিন ঘিন করে গা, মন।
হোক প্রতিরোধ, হোক প্রতিঘাত, হোক পা্লটা আঘাত।
ইসরাত অমিতাভ।
নতুন মন্তব্য করুন