“No Vat On Education”- প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর মুখে একটি সাধারন কথা। রাস্তায় হাজার-হাজার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন চলছে প্রতিদিন। তাদের দাবি একটাই - শিক্ষার সাথে কোন মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা যাবে না। বস্তুত এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের অসচেতনতা ও অদূরদর্শিতা স্পষ্ট হয়ে যায় এবং এর দ্বারা মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ভাবিয়ে তোলে। এই ৭.৫% ভ্যাট সাধারন শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশের পথে যে কত বড় বাঁধা এবং কতটা অযৌক্তিক তা যে কেন সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না; সবার প্রশ্ন জাগে!
যাই হোক এসব কথা সবার উপলব্ধিতে আছে বলেই আজকের এই আন্দোলন। আমি একই কথা আর না বাড়াই। বরং যে বিষয়টি আমরা উপেক্ষা করে যাচ্ছি তা হচ্ছে শিক্ষার উপর আক্রমনটা একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের এই অঞ্চলে। একটু ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে হয়েছে কত রকম খেলা, কত রকমের ষড়যন্ত্র। প্রতিটি ব্যর্থ সরকারই প্রথমে এসে আঘাত হেনেছে এদেশের শিক্ষার উপর। শিক্ষা ব্যবস্থায় নানারকম অসংগতি সৃষ্টি করে গণসচেতনতা কিভাবে রোধ করা যায় তা নিয়ে তাদের প্রচেষ্টার অন্ত ছিল না।
পাকিস্তান আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা যাক। দীর্ঘ তেইশ বছরে পাকিস্তানি সরকার এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আদর্শগত এবং অর্থনৈতিক দু’ধরণেরই আঘাত হেনেছে। পশ্চিমা ঔপনিবেশিক সরকার যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে তাতে সাধারন জনগনের চেয়ে শাসক শ্রেণীরই বেশি উপকার হয়েছে। সে সময় এ অঞ্চলের মানুষের জন্য যেটুকু শিক্ষা অপরিহার্য ছিল তার বেশি শিক্ষাগত কোন প্রসার ঘটানো হয়নি বললেই চলে। এই ধরণের পদক্ষেপ ছিল সাধারন জনগনের সচেতনতার বিরুদ্ধে সরকারি ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশ, পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ তথা শোষণক্ষেত্র, কিন্তু মানুষের উপলব্ধিতে তা যেন না আসে সেজন্য ধর্মকেই তারা একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কারণ শুধুমাত্র ধর্ম ছাড়া আর অন্য কোন দিক দিয়েই পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মিল ছিল না। পাকিস্তান যে একটি ইসলামী রাষ্ট্র যেটির ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ গঠন্তন্ত্রের মূলনীতি তা প্রতিটি পদক্ষেপে তারা উপলব্ধি করতে বাধ্য করত। উঠতে-বসতে বাঙ্গালীর ভাষা, সংস্কৃতি, আচার-আচরণ সবকিছুই ইসলাম পরিপন্থি বলে প্রচার করে খুব দ্রুত ইসলামী শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন করে। অজ্ঞ জনসাধারনের মধ্যে ভাইরাসের মত সংক্রমিত করে দেওয়া হয় যে – কোরআনই সকল জ্ঞানের উৎস। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার সমর্থনে পশ্চিমাদের অনেকেই কবি ইকবালের “শিকোয়া” কাব্যের কিছু চরণ ইশ্তেহার হিসেবে ব্যবহার করে। এই কবিতার ভাবার্থ এই দাঁড়ায় যে মুসলমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। সরকারের এই শিক্ষানীতিতে তা সক্রিয় করে তোলা হয় এবং মুসলমানরা সর্বজ্ঞানী, সর্বশ্রেষ্ঠ এই ধারণা এই অঞ্চলের মানুষের মনে প্রবেশ করাতে খুব বেশি কসরত করতে হয়নি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে। এই শিক্ষানীতিটি অনেকটাই হিটলারের উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে সৃষ্ট শিক্ষানীতির মত। নাৎসিরা যেমন তাদের জার্মান জাতীয়তাবাদের পরিপন্থি সকল রীতিনীতি,আচার-আচরণকে বাতিল করে দিয়েছে ঠিক একইভাবে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী মুসলিম জাতীয়তাবাদ বিরোধী বলে আমাদের অনেক বিষয় বাতিল করেছে।
তবে পশ্চিমারা যে ধরণের শিক্ষানীতিরই প্রবর্তন করুক না কেন, তা শুধু মাত্র পূর্বাঞ্চলের জন্যই প্রয়োগ করা হয়। আর পশ্চিমে আগের মতই পাঠদান চলতে থাকে।
এই কৃত্রিম শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আহমদ ছফা পাকিস্তানের শিক্ষানীতি বিষয়ক তাঁর একটি প্রবন্ধে বলেছেন, “পাকিস্তানি শাসকেরা যে শিক্ষাপদ্ধতি বাংলাদেশে চালু করল, তাতে মৌলিক চিন্তার স্থান নেই, চিত্তবৃত্তির স্ফুরণের ক্ষেত্র নেই, সামাজিক দুঃখ দূর করার কোন প্রেরণা নেই – ঘাড়ে গর্দানে বাঙালীকে দাস করে রাখার একটি নিষ্ঠুর কঠিন শৃঙ্খল ছাড়া তাকে আর কিছুই বলা যায় না – যা সৃষ্টিশীল প্রতিভার বদলে কেরানী এবং মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানুষের বদলে আমলা তৈরী করতেই সক্ষম।”
বস্তুত এই শিক্ষা ব্যবস্থা সাধারন মানুষের সৃষ্টিশীলতা, মুক্ত চিন্তা চর্চার পথে একটি বিশাল ষড়যন্ত্র হয়ে দাঁড়ায় যা ক্রমশ এদেশের মানুষকে অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায় এবং সত্যি বলতে এখনো আমরা সেই অন্ধত্বকে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখনো ভাইরাসের মত এই শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরাজ করে।
এবার একটু অর্থনৈতিক দিকটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। অন্যান্য ক্ষেত্রের মত পশ্চিমারা শিক্ষাক্ষেত্রেও তাদের ঔপনিবেশবাদী নীতি প্রয়োগ করেছেন।এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত মেলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পার্থক্য। এদেশের মানুষকে শোষণ করে আদায়কৃত অর্থ দিয়ে সবসময়ই পশ্চিমের উন্নয়ন সাধন করেছে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক সরকার। উক্ত উদাহরণগুলো থেকে ধারণাটি স্পষ্ট হয়ে যায় – ১৯৪৭-৪৮ সালে বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৬,৫০০টি ও ৩,৪৮১টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে যথাক্রমে ১১,০০০টি ও ২,৫৯৮টি। ১৯৬০-৬১ তে দেখা গেল পশ্চিম পাকিস্তানে এর সংখ্যা যথাক্রমে ২৯,০০০টি ও ৩,১৪০টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ২৯,৫০০টি ও ২,৯৭০টি। ১৯৪৭-৪৮ এ বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ১টি এবং পাকিস্তানে ছিল ২টি, ১৯৬০-৬১ এ তার সংখ্যা উন্নিত হয়ে হলো ২টি এবং পশ্চিমে তা ৪টি, ১৯৭০-৭১ এ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হলো ৫টি সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে ৭টি। আবার পূর্ব পাকিস্তানের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ছিল আলাদা আইন-কানুন। জেনারেল আইয়ুব খানের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স জারী করে কেড়ে নেওয়া হয় স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা। এসকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়োগ করা হয় আমলাদের। আইন করে শিক্ষকদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হয়। এসময় শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বিশেষ কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হামদুর রহমান নামক এক কুখ্যাত ব্যক্তিকে যিনি কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় বলে তুলে ধরেন। সামরিক সরকারের শাসনে আমলা ও কেরানী সৃষ্টি ছাড়া শিক্ষার আর কোন ভূমিকা নেই বলে তুলে ধরা হয় এই রিপোর্টে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার ব্যয় এত বাড়ানো হলো যে নিম্ন-মধ্যবিত্ত,দরিদ্র পরিরের কারো শিক্ষালাভের উপায় থাকলো না। নিজেদের শোষণ টিকিয়ে রাখতে একরকম ষড়যন্ত্র করেই এদেশের মানুষকে শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক সরকার।
এবার একটু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা যাক। আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা থেকেই শুরু করি। প্রাথমিক-মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় কোথায় যেন একটা গলদ আছে যার কারণে ছেলে-মেয়েরা সত্যিকার অর্থে তেমন কিছু শিখছে না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার জ্ঞানের উপর চলে আসছে তাদের অরুচি। এর পেছনে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই অনেকটা দায়ী, শিক্ষকদের ভূমিকাও যথেষ্ট। অবশ্য শিক্ষকদের দোষ দিয়েই বা লাভ কি। তারা পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা, বেতন-ভাতা। তারা নিজের পেট নিয়ে ভাবনায় পড়ে থাকলে নিশ্চিন্তে পড়াবেন কিভাবে। তার উপর প্রচণ্ড পড়ার চাপে বর্তমানে বাচ্চারা বই দেখে ভয় পায়। অকল্পনীয় প্রতিযোগিতায় তাদের পাঠ্যসূচির বাইরে জানার প্রয়াসই মেলে না। নিজের কথাই উদাহরণ দেওয়া যাক – স্কুল জীবনে কখনো বিকালে আমাদের আটকে রাখতে পারত না কেও। বিকাল হলেই খেলাধূলা-হইহুল্লোর। কিন্তু আমাদের পাড়ারই বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। ৩য়,৪র্থ শ্রেণীর বাচ্চাদের অবস্থা দেখলেও মায়া হয়। বিকাল হলেই বিশাল একটা বইয়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে ছুটছে কোচিংএ নয়তো মাস্টারের বাসায় ভবিষ্যৎ এ ভাল ফলাফল সমেত একটি সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত প্রসবের আশায়। এরকম অবস্থায় এই বাচ্চাগুলোর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ হবে কিভাবে। এ তো বললাম মফস্বলের কথা, ঢাকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। মফস্বলের বাচ্চাগুলো তো তাও মাঠে খেলার সুযোগ পায় কিন্তু ঢাকার বাচ্চাদের তো সেই সুযোগও নেই। বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চারা বন্দি থাকতে থাকতে স্বাধীনতা কাকে বলে সেটিই ভুলে গেছে, ভুলে গেছে নিজের মত করে নিজের ভুবন সাজাতে, নিজের মত করে ভাবতে। এরপর কলেজে উঠলে শুরু হয় নতুন করে চাপ। দুরূহ উচ্চমাধ্যমিক পেরোনোর চাপের সাথে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা। এত চাপ, এত দুশ্চিন্তার মধ্যে এদের কি কখনো পড়ালেখার প্রতি ভালবাসাটা কাজ করার কথা! সুতরাং দেখা যাচ্ছে পুরো সিস্টেমটাতেই কী যেন একটা সমস্যা।
এইচ.এস.সি পাশ করার পর এতগুলো ছাত্রের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত। এতগুলো শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দেশে নেই পর্যাপ্ত মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে ২,১৫৪টি কলেজ যার ৫৫৭টি কলেজ স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করে।
আবার আর একটি হিসাবে জানা যায় যায় এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার্থী সংখ্যা ১১,৪১,৩৭৪ জন যার মধ্যে কৃতকার্য ১০,৫৭,৭১১ জন। কিন্তু এত শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার বন্দোবস্তের জন্য নেই পর্যাপ্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেসব কলেজ সেসবের শিক্ষার মানও ভয়াবহ, প্রায় স্কুল-কলেজের মত কারিকুলাম-সিলেবাসে তাদের পাঠদান চলে। এক দিকে পুঁজিবাদের বিকাশ অন্য দিকে এসকল ছাত্রের পুঁজিবাজারে মিলছে কোন চাকুরী। তার উপর আছে পরিবার থেকে ডাক্তার, প্রকৌশলী কিংবা ব্যবসায় প্রশাসক হওয়ার চাপ। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রচুর অর্থের জলাঞ্জলি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেঁছে নিতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ, যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা রয়েছে সমাজের পুঁজিপতিদের অধিকারে এবং যারা অদৃশ্য থেকে একটি ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করে। এক-একটা সেমিস্টারে এক-একটা পরীক্ষা আসলে অভিভাবকের টাকা যোগাড় করতে মোটামোটি ঘাম ছুটে যায়। তার উপর একটা দালানের মধ্যে আবদ্ধ থেকে প্রকৃতির আড়ালে শিক্ষা নিয়ে হচ্ছে না এসব শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ, বৃদ্ধি পাচ্ছে না তাদের জীবনবোধ। হ্যা! চাকুরী তারা পাচ্ছে। কিন্তু চাকুরীই কি সব? যে মানসিক চাপ নিয়ে তারা শিক্ষা জীবনে সমাপ্তি আনে তাতে দেখা যায় অনেকেরই নিজের অজান্তেই শিক্ষার উপর আসে ঘৃণা এবং এতে যে শিক্ষা মাহাত্ম্য কোথায় তা কল্পনা করা যায় না।
আজকে সরকার এসব পুঁজিপতিদের আয়ের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উপেক্ষা করে সাধারন শিক্ষার্থীদের উপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা কি খুব সংবিধানসম্মত? বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৫(ক) নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, “অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দ্বায়িত্ব হইবে”। তাহলে সরকার থেকে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থায় যে অপ্রতুলতা, সংবিধান অনুযায়ী তা কি সরকার এবং রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয়? এই ব্যর্থতা ঢাকতে প্রতি আসে নতুন নতুন হাতিয়ার। এইচ.এস.সি এর পর “মেধা যাচাই” এর লেবেল দিয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত যে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে তার নাম হওয়া উচিত “বাতিলকরণ পরীক্ষা”। কারণ এই পরীক্ষায় নির্বাচন নয় বরং সিংহভাগ পরীক্ষার্থীদের ছাটাই করা হয়। আবার এই ছাটাইকরণের হাতিয়ার দিনদিন ধারালো হচ্ছে। ভর্তিপরীক্ষা একবারের বেশি দেওয়া যাবে না, নির্দিষ্ট জিপিএ থাকতে হবে ইত্যাদি নিয়ম করে শিক্ষার্থীদের “মেধাহীন” নামক বিভ্রান্তিমূলক লেবেল দিয়ে বাতিল করা হচ্ছে।
“ভ্যাট তো পণ্যের উপর প্রযোজ্য, তাহলে শিক্ষা কি পণ্য?” সাংবাদিকের এই প্রশ্নে মাননীয় অর্থমন্ত্রী একটি অসংলগ্ন উত্তর দেন। তিনি বলেন শিক্ষা তো পণ্যই তৈরী করছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে তারা তো “Educated Product”। এর স্পষ্ট উত্তর হচ্ছে – না! শিক্ষা কোন পণ্য নয় , শিক্ষার্থীও কোন পণ্য নয়। শিক্ষা নাগরিকের বিবেকের বিকাশ ঘটায়, নাগরিকের গুণের বিকাশ ঘটায়, তাদের দূরদর্শিতা নিশ্চিত করে নাগরিককে রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলে। শিক্ষিত নাগরিক নানাভাবে তাঁর গুণ দিয়ে সেবা করে রাষ্ট্রের উন্নয়ন সাধন করে।
যে কথাটির অবতারণার জন্য এতগুলো কথা বলা, এত ইতিহাস বিশ্লেষণ করা, তা হচ্ছে – আমরা সাধারন জনগন বিশ্বাস করি, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বসবাস করি যেখানে আমাদের সার্বিক অধিকার এবং উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করার দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্র তার দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এর নাগরিক যোগ্যতা অর্জন করে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সমুন্নত রাখবে। আমরা বিশ্বাস করি কারণ আমরা রক্ত দিয়ে এই গণতন্ত্র অর্জন করেছি এবং এটিও বিশ্বাস করি এই গণতন্ত্র যথাযথভাবে রক্ষণ করার জন্যও আমরা রক্ত দিতে পারব।
“ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে এই সরকার কাজ করে যাচ্ছে তা সাধারন জনগনের জন্যই আবার এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য জনগনের ভূমিকাও অপরিহার্য। সুতরাং উপযুক্ত যোগ্য নাগরিক হিসেবে গোড়ে তোলার জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই শিক্ষার উপর এরকম আঘাতে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র। তাছাড়া ইতিহাসে আরো দেখা যায় অযৌক্তিক রাজস্বের চাপ দিয়ে ভূমি শ্রমিকদের শোষণ করত ভূস্বামীরা। এ যুগে শিক্ষার উপর এরকম একটি কর আরোপ করাও এক প্রকার শোষণই বটে।
তাছাড়া আন্দোলনরত সাধারন শিক্ষার্থীর উপর পুলিশের লাঠিচার্জ, নির্যাতন, গ্রাপ্তার এসকল ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ইত্যাদি বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। নিশ্চয় সরকার স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন – কোনরকম অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনার সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নিয়ে জনগনকে সন্দিহান করবেন না। তা নিশ্চয় জাতির পিতার স্বপ্ন কোনদিনই ছিল না।
সর্বশেষে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ভাই-বোন-বন্ধুদের প্রতি আবেদন – তোমরা এই আন্দোলন কোনভাবেই থামাবে না যতদিন পর্যন্ত না তোমাদের দাবি মেনে নিয়ে এই ৭.৫% ভ্যাট বাতিল করছে এই অদূরদর্শি সরকার। এই আন্দোলন থেমে যাওয়া মানে শোষণের সাথে আপোশ করা, অন্যায়ের সাথে আপোশ করা, নির্বুদ্ধিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া। তাতে আমাদের উপর শোষণের মাত্রা বেড়ে যাবে, কোন সন্দেহ নাই। মনে রাখতে হবে, আজকে এই ৭.৫% ভ্যাটের সাথে আপোশ করা মানে কাল আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অপেক্ষা করছে ১৫% ভ্যাট, যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
সৌমিন শাহ্রিদ জেভিন
soumin.shahrid.javin
মন্তব্য
এ থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন? তারা কি কোনো ধরনের আন্দোলন করে সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এ ব্যাপারে চাপ দিতে ইচ্ছুক/প্রস্তুত?
"বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০" এর ধারা ৪২-এ বলা আছে, "প্রত্যেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় উহার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করিবার নিমিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানদন্ডে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষার্থী ফি কাঠামো প্রস্তুত করিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করিবে।" [সূত্র]
৭.৫ টাকা নিয়ে ছাত্ররা একটি যৌক্তিক অবস্থান বেছে নিয়েছেন, কিন্তু ১০০ টাকা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি/অসুবিধা নেই, এটা একটু খাপছাড়া দেখায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যয় হ্রাসের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চাপ দিতে পারেন।
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার প্রতিক্রিয়ার জন্য সাথে নানারকম ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
হ্যা! এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমেই শিক্ষার্থীসহ সর্বোস্তরের জনগনকে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজন একটি আন্দোলনের যার মাধ্যমে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষের আয় নিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে নজরদারি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় যারা আছেন তারা সকলেই মূলত ব্যবসায়ী, তো তারা এসব বিশ্ববিদ্যালয় এক-একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালিয়ে দিয়ে লাইসেন্স পাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা আদায় করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। আর নামের শুরুতে আছেই অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তাই ট্যাক্সও দিতে হচ্ছে না আয়ের সাথে সমন্বয় রেখে।
সবচেয়ে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের আইনের সংশোধন। আইন করে এসব বিশ্ববিদ্যালয় বছরে কত টাকা আয় করছে আর শিক্ষার মানোন্নয়নে কত টাকা ব্যয় করছে এবং পাশাপাশি বাৎসরিক লভ্যাংশ থেকে কত টাকা আয়কর দিচ্ছে তা মনিটর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সরকার কখনোই তা করবে না কারণ সরকারের গদি টিকিয়ে রাখতে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কখনোই কোন পদক্ষেপ নেবে না।
soumin.shahrid.javin
ভেবেছিলাম অনেক কিছু লিখব, আন্দোলনের দিন থেকেই ভীষন উত্তেজিত ছিলাম, কেন ছাত্ররা তাদের অফুরন্ত ও অদম্য শক্তি সাড়ে সাত টাকার জন্য খরচ করবে, কেন ১০০ টাকার জন্য নয়, তা নিয়ে ভেবেছিলাম একটা পোস্টই করে বসব। কিন্তু আপনার উত্তরের পর মনে হয় না আমি কিছু যোগ করতে পারি। মজার ব্যাপার হল, এই সরকার যাকে শিক্ষার খরচ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য ভিলেইন ভাবতে শুরু করেছে প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্ররা, সে-ই কিন্তু প্রাইভেটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাধ্য করেছে এমনকি কিছু হলেও গরীব ঘরের ছাত্রকে ভর্তি করতে বিনা খরচে!
।।।।।।
অনিত্র
প্রথমেই ধন্যবাদ এরকম একটা কষ্টসাধ্য লেখার জন্য। প্যারার মাঝে ফাকা জায়গা থাকলে পড়তে আরেকটু আরামদায়ক হতো লেখাটা। আপনার লেখার বিষয়ে কিছু অবজারভেশন আছে। সেগুলো বলছি একে একে,
শিক্ষাকে আপনি মৌলিক বলছেন। একটি বিষয় মৌলিক বিষয় হলে আমার সেটার বিষয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার কাছে কী আশা করতে পারি? আপনি বলছেন ভ্যাট আরোপের জন্য মৌলিক ব্যবস্থা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবিয়ে তোলে। ভ্যাটের ছাড়া যে উচ্চবেতনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কিনতে হচ্ছে সেটার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা কী? টাকার অংকে সেটা এই সাড়ে সাত শতাংশ থেকে অনেক বেশি এবং এটি বছর বিশেকের বেশি সময় ধরে চলছে।
চতূর্থ প্যারাতে আপনি যে মুসলিমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ এরকম ধারণা জনমনে গেথে দেবার কথা বলছেন সেটা পাকিস্তানিদের সৃষ্ট নয়। ব্রিট্রিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম ব্যাপক সংস্কারের দিকে যায় ১৮৩৫ সালে। এর আগে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের জন্য আলাদা শিক্ষা ছিল। বৃটিশরাও সেটার আগাপাশতলা পরিবর্তন করেনি। তারা ৩৫এর সংস্কারে ইংরেজি ও ইউরোপিয় নীতি পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করে। ধীরে ধীরে তারা আরোও কিছু বিষয় যোগ করে তাদের প্রশাসনিক কাজ চালাবার মতো দক্ষ লোক তৈরির উদ্দেশ্য যেটা ১৮১২ সালে নিন্মপ্রস্রবন পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা। এসবেরও আগে হেস্টিংসের সময়ে দেশে মুসলিম জনগোষ্ঠিকে শিক্ষা দানের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা গঠিত হয়ে গেছে। দেশভাগ যেহেতু ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছিল সেহেতু পাকিস্তান আসলে এটা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিল এবং সেটাকে তারা আরো বেগবান করেছে।
এরকম কিছু কি আদৌ ছিল? মনে করতে পারছি না। কোন রেফারেন্স থাকলে দেবেন।
হামুদুর রহমান ছাত্র কল্যান ও ছাত্র কমিশন কমিশন আন্দোলনের মুখে স্থগিত করা হয়। এতে চলমান শিক্ষা পাকিস্তানের ধর্মীয় চরিত্রের সাথে শিক্ষাব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না এরকমটা বলা হয়েছিল। এর আগে শরিফ কমিশন শিক্ষা ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশে ছাত্র বেতনের মাধ্যমে তোলার সুপারিশ ছিল। বর্তমান আন্দোলনের সাথে ঐ শরীফ কমিশনের আন্দোলনের একটা সংযোগ টানা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আমি উপরে যে উচ্চবেতনের কথা টানলাম সেটাও আলোচনার টেবিলে এসে পড়বে।
যারা এইচএসসি পাশ করবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে এরকমটা চিন্তা করা ঠিক নয়। শিক্ষাতে বিভিন্ন ধাপ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় (গবেষণা নির্ভর, শিক্ষকতা নির্ভর), ভোকেশনাল শিক্ষা ইত্যাদি। কেউ যদি কারখানাতে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেয় তারও যেন ট্রেনিং ইত্যাদি নিয়ে নিজের অবস্থা উন্নত করার সুযোগ থাকে। সমস্যা হলো এগুলো আলাদা করতে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে ফিল্টার করতে হয় যেটাকে আপনি বাতিলকরণ প্রক্রিয়া বলছেন। এই ফিল্টার কিছু পরিমানে করার চেষ্টা হয়, কিন্তু যেহেতু সবাই সেখানে ভাল করছে এবং এই ভালো করাতে সরকারি চাপ আছে সেহেতু এই ফিল্টার অকার্যকরী। ফলে একসাথে বিশাল পরিমান "ভালো ছাত্র" বের হচ্ছে প্রতিবছর যারা আসলে জানে না তাদের কী করা উচিৎ।
শিক্ষা বেসরকারি খাতে যখন ছাড়া হলো তখন থেকেই মূলতঃ শিক্ষাকে পন্যকরণ শুরু। বেসরকারি খাতে উচ্চশিক্ষা মানেই হলো শিক্ষাব্যবস্থার ব্রেক ইভেনটা অন্তত তুলতে হবে আয়ের সূত্রগুলো (এক্ষেত্রে ছাত্রদের বেতন) থেকে। বর্তমান আন্দোলন এর উপর সাড়ে সাত পার্সেন্টের ক্ষতিটা বুঝতে পারলেও মূল বেতনটাই যে তারা সরকারের কাছে দাবি করতে পারে এই বোধের উপর দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে বিকশিত হবার পূর্ণ সুযোগ রাষ্ট্রের কাছে যে কোন নাগরিক দাবি করতে পারে। আন্দোলনরত ছাত্রদের আগে এই বিষয়টা বুঝতে হবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
"আমাদের মানুষ হিসেবে বাঁচার জন্য একটি সার্বজনীন শিক্ষা আন্দোলন" আপনার লেখার এই শিরোনামটা কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে। বর্তমান ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনকেই কি আপনি "একটি সার্বজনীন শিক্ষা আন্দোলন" হিসেবে অভিহিত করছেন? এবং আমাদের মানুষ হিসেবে বাঁচার জন্য কি এ আন্দোলনকে অপরিহার্য বলে মনে করছেন? ইতোমধ্যে অবশ্য সরকারের তরফ থেকে ভ্যাট আদায়ের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা এসেছে, এখন তাহলে আমরা মানুষ হিসবে বেঁচে গেলাম, কি বলেন?
সংবিধানের এই ঘোষণা দ্বারা কি এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি এর উপর ভ্যাট ধার্য করা যাবে না? শিক্ষা ছাড়া অন্য যে চারটি মৌলিক উপকরণের কথা সেখানে বলা হয়েছে, যথা- অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়(বাসস্থান?), ও চিকিৎসা, সে সবের ক্ষেত্রে কি ভ্যাট আরোপ করা যাবে? আমরা যে হরেক রকম খাদ্যপন্য ক্রয়ে ভ্যাট দেই, কাপড়-চোপড়(বস্ত্র) কেনার সময় ভ্যাট দেই, বাড়ী নির্মাণ, ক্রয় বা ভাড়া নেয়ার সময় ভ্যাট দেই, বেসরকারী চিকিৎসা নেয়ার সময় ভ্যাট দেই, তার কি হবে? সরকারের অসচেতনতা ও অদূরদর্শিতা কি এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে না? এর দ্বারা মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনার কি অভিমত?
লেখাটি পড়ে ভাল লাগল। তথ্য সংগ্রহে ও সরবরাহে কার্পণ্য করেননি বলে ধন্যবাদ। বেশকিছু জায়গায় আমিও একমত হতে পারছি না। আগের মন্তব্যগুলোতের কিছু কিছু এরিমধ্যে চলে এসেছে। তারপরও আমার কিছু দ্বিমতের জায়গা তুলে ধরছি। আপনি বলেছেন -
"৩য়,৪র্থ শ্রেণীর বাচ্চাদের অবস্থা দেখলেও মায়া হয়। বিকাল হলেই বিশাল একটা বইয়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে ছুটছে কোচিংএ নয়তো মাস্টারের বাসায় ভবিষ্যৎ এ ভাল ফলাফল সমেত একটি সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত প্রসবের আশায়। এরকম অবস্থায় এই বাচ্চাগুলোর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ হবে কিভাবে।"
তারমানে আপনি কেবলমাত্র 'সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত' মানুষের চাইতে নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ গড়ে তোলার শিক্ষায় আগ্রহী। কিন্তু কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে (কারিগরী বিশ্ববিদযালয়গুলো বাদই দিলাম) বাংলা, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা এই মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর ডিগ্রী দেয়া তো দূরে থাক, কোন বিভাগ আছে কি? অধিকাংশ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতেই নেই গণিত, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন বিভাগ! যে প্রতিষ্ঠান কেবল বিবিএ আর কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রী দিতে গড়ে উঠেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য শতভাগ ব্যবসায়িক হতে বাধ্য। ভাষা, ইতিহাস, নৈতিকতা আর মনুষ্যত্বের শিক্ষা সেখানে গৌণ। ৭.৫% ভ্যাট শিক্ষার যে ক্ষতি করতো, তার চাইতে বহুগুণে বেশি ক্ষতি করে যাচ্ছে এসব বিশ্ববিদযালয়গুলোর ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কারিকুলাম। শিক্ষার মানোন্নয়নে এবার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষাব্যাবস্হার কাঠামোগত পরিবর্তনের দাবীতে আন্দোলন করবে বলে মনে করেন কি?
আপনি বলেছেন -
"তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রচুর অর্থের জলাঞ্জলি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেঁছে নিতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ, যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা রয়েছে সমাজের পুঁজিপতিদের অধিকারে এবং যারা অদৃশ্য থেকে একটি ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করে।"
আশাকরি এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষারথীরা জানে যে এই প্রতিষ্ঠানগুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর বিভাগে নিবন্ধিত। ছাত্র-ছাত্রীরা যদি জেনেই থাকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক ও পুঁজিপতি শ্রেণী লাভের গুড় নিজেরাই খাচ্ছে, তবে এখনও এদের বিরুদ্ধে কেন আন্দোলন হচ্ছে না?
নতুন মন্তব্য করুন