প্রত্যেক মানুষ আশায় বুক বাঁধে,সপ্ন দেখে। যতই সংকটময় মুহূর্ত আসুক না কেনো সে সপ্ন দেখে চলে সংকট সময় থেকে কি করে বের হওয়া যায়।চিন্তা করতে থাকে তার কাছে কি কি উপায় অবশিষ্ট আছে।পাশের আপন মানুষ গুলোর কাছে একটু প্রেরণা পেতে চাই তখন,যেন তাঁর সম্পর্কে তাঁরা একটু ইতিবাচক ভাবুক,যদিও সে তার চিন্তা চেতনা অনেক সময় অন্যকে বুঝিয়ে উঠতে পারেনা।আর অবশেষে চাই একটু উৎসাহ উঠে দাড়াঁবার এবং কর্মক্ষম হওয়ার।
একজন মানুষ তাঁর সপ্ন, ইচ্ছে, চিন্তাগুলোকে প্রতিনিয়ত নিজের মধ্যে লালন করে যায় এবং যে কোন প্রতিকূল মুহূর্তেও সেসব বাস্তবায়িত করার চেষ্টায় রত থাকে ।চলতি পথে অনেক সময় নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতিটাকেও মেনে নেয়।তারপরেও সে চায়না সীমিত এবং বদ্ধ পরিসরে আটকে থাকতে।সে চায় মুক্তি;চায় আবারো ইচ্ছেগুলো,সপ্নগুলোকে জাগিয়ে তোলার।কিন্তু সে মানুষটি জীবনে চলার পথে অনেক নির্মম রূপান্তরকে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়ে ভালো কিছুর আশায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে চাইলেও,তার অতি আপন মানুষগুলো অনেক সময় সহজে মেনে নিতে পারেনা।তাঁদের কাছে তখন এ যেন এক বড় রকমের ত্রুটি ।সে মানুষটি আড়ালে থাকলেই যেন তাঁদের স্বস্থি।
প্রথম পাঠঃ
গল্পের গ্রেগর এক সংকট মুহূর্তে উপনীত হয়।রূপান্তরিত হয় আরশোলায়।প্রথমে এই রূপান্তর নিয়ে সে বিচলিত হতে আরম্ভ করল।কিন্তু পরক্ষনেই বিচলিত হওয়া ক্ষান্ত দিয়ে খুঁজতে লাগলো স্বাভাবিক হওয়ার উপায়।যে করেই হোক তাকে উঠে দাড়াতে হবে,কাজে যেতে হবে,মূখ্য কেরানী কোনরূপ নেতিবাচক চিন্তা যেন করতে না পারে,মা-বাবা-বোনের ভরণ পোষণ,ঋণ পরিশোধ-এইসব ভাবতে ভাবতে গ্রেগর চেষ্টা করে নিজের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাড়াবার।এর মাঝে সে ভাবে আপনজনের একটু ইতিবাচক চিন্তা,একটু সাহায্যে হয়ত তাকে উঠে দাঁড়ানোর আরও দ্রুত প্রয়াস যোগাবে।এর পরেও যখন সে নিজের চেষ্টায় বদ্ধ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে সবার সামনে,তখনই যেন নির্মমতা তাঁকে গ্রাস করতে চায়।পরিবারের কাছে ওই মুহূর্তে সে নিকৃষ্ট জীব।মূখ্য কেরানীর দ্রুত প্রস্থান এবং এরপর বাবার নিষ্ঠুর আচরণ তাঁকে আবার বিচলিত করতে শুরু করে।তাই কি করে পিছু হঠতে হয় তা না জেনেও ধীরে ধীরে বাবার নিষ্ঠুরতা মাখা সহযোগিতায় পৌঁছে যায় সেই বদ্ধ জায়গায় ক্ষত বিক্ষত হয়ে।
২য় পাঠঃ
আবদ্ধ অবস্থায় থাকা গ্রেগর দিনের পর দিন তাঁর সামগ্রিক অবস্থার কথা,পরিবারের কথা ভাবতে থাকে এবং ভেবে চলে প্রতিনিয়ত মুক্তির উপায়।আড়াল থেকে অবলোকন করার চেষ্টা করে তাঁকে নিয়ে তাঁর পরিবারের মানুষের ভাবনা।
গ্রেগর পরিবারের কোন সদস্যের উপস্থিতি কামনা করলেও,চাইতনা তাঁকে দেখে কেউ বিচলিত হোক।তাই তাঁর বোন গ্রেটা তাঁর তদারক করতে এলেই সে চলে যেত আড়ালে।এইরকম দেখভালের ফলস্বরূপ গ্রেটা নিজেকে গ্রেগরের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ভাবতে আরম্ভ করলো।পরবর্তীতে মা গ্রেগরকে দেখতে আসতে চাইলেও সে বাঁধা দিত এই ভেবে যে তিনি স্বাভাবিক থাকতে পারবেন না এবং গ্রেটা ওই বদ্ধ ঘরটিকেই যেন গ্রেগরের সর্বোচ্চ পরিভ্রমণের স্থান করতেই ব্যাস্ত হয়ে ওঠে।
২য় পাঠের পরিশেষে আবারও গ্রেগরের বাবার নিষ্ঠুরতা পরিলক্ষিত হয়।
“সামান্যতম বিচ্যুতি গভীরতম সন্ধেহের জন্ম দেয়”-এই কথাটির মর্মার্থ এই পাঠের শেষে্র দিকে লক্ষ্য করা যায়,যখন মনে হয় গ্রেটার অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত উক্তির সবচেয়ে খারাপ ব্যাখ্যা করে নেয় তার বাবা। বাবার আগেরকার আচরণের সাথে এখনকার আচরণ গ্রেগর কিছুতেই মেলাতে পারেনা।
৩য় পাঠঃ
যতই দিন যায়,গ্রেগর সবার কাছে নিকৃষ্টতর জীবে এবং চরম অবহেলার বস্তুতে রূপান্তরিত হতে লাগল। খোলস থেকে মুক্ত হওয়ার চিন্তা করলেও নিজের সমস্থ আশা,ইচ্ছে অন্ধকারে চাপা পরতে লাগল ধীরে ধীরে।তাঁর পরিবারের কাছে সে আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই না,বরং সেই সব খারাপের মূল।তাঁর কারনেই তাঁদের অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। সে না থাকলেই তাঁরা বঁচে যায়।তবুও নিজের পরিবারের প্রতি,বোনের প্রতি গ্রেগরের অনুভূতি বিন্দুমাত্র কমেনা।কিন্তু শেষপর্যন্ত সেসব কিছুই থেকে যায় সুপ্ত।তাঁর পরিবার অন্য কোন উপায় নেই জেনেই যেন তাঁর প্রতি এই অবহেলা করে ।ফলে গ্রেগর এর নিঃশেষিত হয়ে যাওয়া দেখে তাঁরা চিন্তামুক্ত হয় এবং নতুন ভবিষ্যতের সপ্ন দেখতে আরম্ভ করে।
নিঃসঙ্গতা,নিজেকে অপরের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরার অক্ষমতায় রূপান্তরিত হয়ে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে যাওয়া গ্রেগরের মধ্যে দিয়ে লেখক চরম সত্যকে তুলে ধরেছেন এখানে।
পরিশেষে আমার এটা মনে হতে লাগল যে সে যতই অবহেলার পাত্র হোক , গ্রেগর কি পারতনা নিজের উপর নির্ভর করে আবার জেগে উঠতে,বদ্ধ জায়গা থেকে মুক্ত হয়ে আসতে?মানি যে পরিবারের মূখ্য ভূমিকা থাকে।কিন্তু এক্ষেত্রে লেখক কি অতিরঞ্জিত করে ফেলেননি?
-তুহিনা
মন্তব্য
ভালো লেগেছে......চালিয়ে যান...কাফকার "রায়" গল্পটি নিয়ে একটা লেখা দিয়েন......
----
রায়হান রোমান
ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে । রায় গল্পটি পড়া হলে দেব ।
-তুহিনা
বেশ পছন্দের গল্প এটা। প্রথমে বাংলায় এবং পরে ইংরেজিতে পড়েছি, দুদিন হল এটার অডিওবুক শোনা শুরু করেছি, আর ব্লগে এসে এটা নিয়েই লেখা দেখে ভালই চমকে গেছি বলা যায়!
আপনার আলোচনা ভাল লেগেছে। আরেকটু গুছিয়ে আরও কিছু গল্প নিয়ে লিখে ফেলুন।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ধন্যবাদ আপনাকে ।
-তুহিনা।
কাফকা'কে বলা হয় লেখকদের লেখক। আপনার একপেশে, অসম্পূর্ণ রিভিউতে মেটামোরফোসিস-এ গ্রেগরের কার্যকলাপ নিয়ে কাফকার অতিরঞ্জনের যে কথা বলা হল সেটি পড়ে হতাশ হলাম।
মেটামোরফোসিস এ গ্রেগরের যে ক্রাইসিস লেখক তুলে এনেছেন সেটি মানবজীবনের অসীম অসহায় অবস্থাকে চিহ্নিত করে। কাফকার সমগ্র সাহিত্যজীবন এ সত্যকে তুলে আনে, সেটি হল- মানুষের জন্ম আসলে এক বিশাল শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সেখানে যা কিছু নিরর্থক; হয়ত তা-ই অর্থবহ ! মানুষের চারপাশের পরিবেশ তাকে আশ্রয় প্রদানের বিপরীতে অবস্থান করে; সেটি এ গল্পের ফোকাস পয়েন্ট। একজন মানুষ তার সক্ষমতা দিয়েই অন্যের আস্থাভাজন হয় সেখানে ভালোবাসা কোনো সহায়ক উপাদান নয়। মানুষ যখন অক্ষম হয়ে যায় তখন বাস্তবতা কী হয় সে ভুবনটি কাফকা অসাধারণভাবে উন্মোচন করেছেন মেটামোরফোসিস এ। দেখা যায়, প্রিয়তম সন্তানের পোকায় পরিণত হবার ঘটনা আস্তে আস্তে পরিবারের সবার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অসহায় গ্রেগর, ভীত গ্রেগর হয়ে যায় উপদ্রবসম। কাফকার সূক্ষ্ম অন্তদৃষ্টি, জীবনকে নিয়ে একদিকে গভীর হতাশা আর ভয়, জীবনকে আবার কৌতুকভরে দেখার যে বোধ সেটি এই গল্পে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। কাফকাকে জানতে হলে এ গল্পটি পড়তে হবে। সবশ্রেণীর পাঠকের কাছে এ গল্প অবশ্যপাঠ্য বলে আমি মনে করি।
(আনা)
কাফকার তিন পুত্রের একপুত্র-রুপান্তর।কাফকা সাহিত্য জীবনের গভীরতাকে স্পর্ষ করে।অনেক সময় তাকে আমার কাছে খুব দুর্বধ্য মনে হয়।'রুপান্তর'-যখন পড়েছি ১/২ দিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
Valo lekha
ধন্যবাদ
যতিচিহ্নের আগে নয়, পরে স্পেস দিন।
নতুন মন্তব্য করুন