সার্বজনীন শারদীয় মুর্তিভাঙা উৎসবের শুভেচ্ছা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২১/১০/২০১৫ - ৪:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবাইকে শারদীয় মুর্তিভাঙার মাসের শুভেচ্ছা । অবাক হইলেন নাকি !! অবাক হইয়েন না । কোরবানী ইদ শেষ । মর্দে মুজাহিদদের শরীরে গরু খাওয়া জোশ । পাশের হিন্দুপ্রধান দেশ ভারতে মোদীজির শিবসেনারা গরু খাওয়ার (সত্য/মিথ্যা) অপরাধে যত্রতত্র মুসলিম পিটাইতেছে । মুর্তি ভাঙার জন্য এর চেয়ে ভালো কোন মৌসুম হইতে পারে নাকি ? বাবরি মসজিদ ভাঙার পর এমন মোক্ষ্মম সুযোগ গত ২ দশকে আর তৈরি হইছে বলে মনে হয় না । তা বাংলাদেশের মর্দে মুজাহিদরা বেশ করিৎকর্মা । তেনারা বইসা নাই । ভারতের শিবসেনার মুসলমান পেটানোর সাথে পাল্লা দিয়ে তারাও শুরু করছেন মুর্তি ভাঙা। সিলেটটুডে২৪.কমে অসীম চক্রবর্তী সংবাদপত্রের চিপাচাপা ঘাইটা গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুর্তিভাঙা উৎসবের একটা খন্ডচিত্র তুইলা ধরেছেন [১] । মুর্তিভাঙা উৎসবের আসল ব্যপ্তি এবং ভয়াবহতা এর চেয়ে অনেক বড় । আমাদের মুলধারার সংবাদপত্রগুলা এই বিষয়ে এখন খুব একটা আগ্রহী নয় তাই মুর্তিভাঙার ঘটনাগুলো আর সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা পায়না ।

তা আজকের লেখার মুল লক্ষ্যবস্তু তা না । বাংলাদেশের সকলের জন্য নতুন একটি সার্বজনীন উৎসবের দাবী জানাইতেই এই লেখা । “সার্বজনীন শারদীয় মুর্তিভাঙা উৎসব” । কেন এই নতুন উৎসবের দাবী ? ছোটবেলা থেকেই শুইনা আসছি বাঙ্গালীর নাকি ১২ মাসে ১৩ পার্বন । তবে এই কথায় একটা বিশাল ফাঁক আছে । বাঙ্গালী আর বাংলাদেশী এক জিনিস না । প্রাগঐতিহাসিক কালে হইলেও অন্তত ২০১৫ সালে আইসা তো কোন ভাবেই না । বছরের শুরুতে পহেলা বৈশাখ দিয়া শুরু কইরা চৈত্র সংক্রান্তি দিয়া বছর শেষ । আগাগোড়া পুরাটাই হিন্দু ডমিনেটেড । বছরের দুই ইদ ছাড়া ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশীদের বিনোদনের জন্য তেমন কিছুই নাই । তবে আমরা যেই হারে হিন্দু পিটানো আর খেদানো শুরু করছি তাতে কইরা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ১০০% সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করবে [ চার্ট ১ ]। পেটানো বা খেদানোর মত কোন হিন্দু ২০৪১ সালের পর দেশে আর খুজে পাওয়া যাবে না । [২]


চিত্র ১ ঃ গত সাত দশকে বাংলাদেশ ও ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনুপাত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত (প্রেডিক্টেড)। লাল রেখা ঃ বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা ; নীল রেখা ঃ ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ।

১৯৪৭ সালে মুসলিমের জন্য বানানো দেশ থেকে হিন্দু খেদাইতে প্রায় ১০০ বছর লাইগা যাওয়াটা মোটের কামের কথা না । আমার হোম ডিস্ট্রিক্ট নোয়াখালীর আদর্শ অনুসরন কইরা বাকি দেশটাও যদি ১৯৪৬ সাল থেকে হিন্দু পেটানো শুরু করতো তাইলে আরো আগেই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত হইতো । ২ক চার্টের ম্যাপটা নতুন টুপির মতই ধবধবে সাদা এবং পুত-পবিত্র দেখাইতো । লাল লাল ছোপগুলা থাকতো না । দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে এখনো ব্যর্থ হইলেও পাশের দেশ ভারতে আমরা অনেক সম্প্রীতি রফতানী করেছি । পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের মানচিত্রের দিকে তাকাইলেই তা পরিষ্কার দেখা যায় [ ২খ] [৩]

চিত্র ২ ঃ বাংলাদেশ ও ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভৌগলিক বিন্যাস । (ক) বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় (খ) ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়

তবে দেশ থেকে হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার একটা বেশ খারাপ দিকও আছে । হিন্দু নাই মানে ভাঙ্গার মত কোন মুর্তিও দেশে নাই । মুর্তি ভাঙ্গার মত একটা সুনিপুণ শিল্প পড়বে হুমকির মুখে । তাই ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে ধরে রাখার জন্য এখন থেকেই “সপ্তাহব্যপী সার্বজনীন শারদীয় মুর্তিভাঙ্গা উৎসব” ঘোষনা করার দাবী জানাচ্ছি । ৯৫% মুসলমানের দেশে এই উৎসবে সকলেই অংশগ্রহন করতে পারবে, তাই এটা আসলেই সার্বজনীন । এই অনুষ্ঠানে কি করা হবে ? নতুন করে কিছু করার নাই । শত শত বছরেরর মুর্তিভাঙা রক্ত মুমিনের ধমনীতে বইছে । হাতে ডান্ডা তুলে নিলে আপনাআপনিই চলে আসবে ।

এই দাবী বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা যে নাই তা বলতেছিনা । আছে । আমাদের দেশে মডারেট মুসলিম নামের এক প্রকার মুসলিম আছে । এরা কেবল নামেই মুসলিম । দেশের কোথাও মুর্তি ভাঙ্গা হইলেই এরা “আমরা দুঃখিত”, “আমরা মর্মাহত”, “এরা সহী মুসলিম নহে”, “ইহা সহী ইসলাম নহে”, টাইপ স্ট্যাটাস আর হ্যাশট্যাগের বন্যায় দুনিয়া ভাসাইয়া ফালায় । মোল্লার দৌড় যেমন মসজিদ পর্যন্ত এদের দৌড়ও তেমনি স্ট্যাটাস আর হ্যাশট্যাগ পর্যন্ত । মর্দে মুজাহিদদের মুর্তি ভাঙ্গার কাজে এরা জীবনে বাধা দিতে পারেও নাই পারবেও না ইনশাল্লাহ ।

মুর্তি ভাঙ্গায় বাধা দিতে না পারলেও এদের হ্যাশট্যাগ আর স্ট্যাটাসের মিথ্যার বন্যায় ইসলাম ভুল ভাবে রিপ্রেজেন্টেড হয় । এরা কথায় কথায় দাবী করে মুর্তি ভাঙ্গা সহী ইসলামের অংশ না । আমি বলি, এরা ভুল । মুর্তি ভাঙ্গাই আসল ইসলামের অংশ । কাবা ঘরের মুর্তি ভাঙ্গা দিয়া এই ঐতিহ্যবাহী সিলসিলার যাত্রা শুরু । এর পর অসংখ্য খলিফা, কত কালাপাহাড়, কত ঔরঙ্গজেব এই ধারা বজায় রাখছে তার হিসাব নাই । ২০০১ সালে তালেবান ব্রাদারদের রকেট বুমা মাইরা ৭০ হাত বৌদ্ধ মুর্তি ভাঙ্গার মনোরম দৃশ্য কার না মনে আছে ! সে সব আজ সোনালী অতীত । আম্রিকা বুমা মেরে তালিবান ভাইদের পশ্চাৎদেশ ছারখার কইরা না দিলে তারা এতদিনে ইস্টাচু অব লিবার্টির মুর্তিটা নিশ্চিত ভাইঙা ফালাইতো । তবে হালে আইসিসের ব্রাদারদের তরতর করে এগিয়ে যাওয়া আর মুর্তি-মাজার ভাঙ্গা দেইখা দেশের মর্দে মুজাহিদরা আবার হালে পানি পাইছে । আমি আমার মর্দে মুজাহিদ ভাইদের পক্ষ থেকে এই সব মডারেট মুসলিম নামক জালেমেদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুইড়া দিলাম । পারলে হ্যাশট্যাগ আর স্ট্যাটাস দিয়া সিধা স্বীকার করেন, “ইসলামের শুরু থেকে যত মুর্তি ভাঙ্গা হইছে সব ভুল এবং অন্যায় । আর যারা ভাঙ্গছে তারা অন্যায় করছে” । পারবেন ? না পারলে স্ট্যাটাস আর হ্যাশট্যাগানি বন্ধ কইরা সাইডলাইনে বইসা তামাশা দেখেন আর মর্দে মুজাহিদ ভাইদের নির্বিঘ্নে মুর্তি ভাঙতে দেন । মুর্তি ভাঙাই সহী ইসলামের অংশ । “মুর্তিভাঙা সহী ইসলাম নহে” টাইপ ভ্রান্তিমুলক স্ট্যাটাস দিয়া মুসলিমদের বিভ্রান্ত করবেন না ।

মর্দে মুজাহিদ ভাইদের প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি, “এখন যৌবন যার, মুর্তি ভাঙার তার শ্রেষ্ট সময় ” । তাই আলে বালে জল সেচে যৌবন পার না করে দিয়ে মুর্তি ভাঙতে পথে নেমে আসুন । নিন্দুকেরা আগে কানাকানি করতো, আজকাল স্ট্যাটাস মারায়, “ মুর্তি ভাঙলে নাকি সংখ্যালঘুর ধর্মানুভুতি আহত হয় । আমি বলি, “ সংখ্যালঘুরাও মানুষ, তাদেরও আবার অনুভূতি” । এই সব স্ট্যাটাসে কান না দিয়ে পথে নেমে আসেন, দলে দলে যোগ দেন মুর্তি ভাঙায় ।

মুর্তিভাঙার বিষয়ে প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভুমিকার জন্য আমি সরকার বাহাদুরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে চাই, আপনাদের এই ভুমিকা ইতিহাসের পাতায় মুক্তার অক্ষরে লেখা থাকবে । এখন শুধু “সার্বজনীন শারদীয় মুর্তিভাঙ্গা উৎসবকে” জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে ইসলামের গুরুত্বপূর্ন এই ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসারের সুযোগ করে দিলেই সোনায় সোহাগা ।

মামুনুর রশীদ
mamun babu 2001 at gmail dot com
===================================
হাজারো মানুষের ভিড়ে দাড়িয়ে আমি মানুষেরেই খুঁজে ফিরি

১। http://www.sylhettoday24.com/opinion/details/8/250
2. Islam in India : https://en.wikipedia.org/wiki/Islam_in_India
3. Hinduism in Bangladesh : https://en.wikipedia.org/wiki/Hinduism_in_Bangladesh

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'মুর্তি' নাকি প্রতিমা? দুইটা তো এক জিনিস না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো প্রশ্ন । এই লেখার প্রেক্ষাপটে আসলে প্রতিমা শব্দটাই বুঝাতে চেয়েছি । তবে ভাঙার জোশটা শুধু প্রতিমায় সীমাবদ্ধ থাকে না । প্রতিমা হোক বা মুর্তি/ভাস্কর্য্য হোক, নিস্তার পায় না কোন কিছুই ।

মামুনুর রশীদ
mamun babu 2001 at gmail dot com
===================================
হাজারো মানুষের ভিড়ে দাড়িয়ে আমি মানুষেরেই খুঁজে ফিরি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিক! মুর্তি বা ভাস্কর্য বা প্রতিমা - আলটিমেটলি কোনটাই রেহাই পায় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পারলে হ্যাশট্যাগ আর স্ট্যাটাস দিয়া সিধা স্বীকার করেন, “ইসলামের শুরু থেকে যত মুর্তি ভাঙ্গা হইছে সব ভুল এবং অন্যায় । আর যারা ভাঙ্গছে তারা অন্যায় করছে” । পারবেন ? না পারলে স্ট্যাটাস আর হ্যাশট্যাগানি বন্ধ কইরা সাইডলাইনে বইসা তামাশা দেখেন আর মর্দে মুজাহিদ ভাইদের নির্বিঘ্নে মুর্তি ভাঙতে দেন ।

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

পারবেন নি মিয়া !! দেখি ইমান কত শক্ত !!

মামুনুর রশীদ
mamun babu 2001 at gmail dot com
===================================
হাজারো মানুষের ভিড়ে দাড়িয়ে আমি মানুষেরেই খুঁজে ফিরি

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে দেশ থেকে হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার একটা বেশ খারাপ দিকও আছে । হিন্দু নাই মানে ভাঙ্গার মত কোন মুর্তিও দেশে নাই । মুর্তি ভাঙ্গার মত একটা সুনিপুণ শিল্প পড়বে হুমকির মুখে ।

মূর্তি শেষ হইলেও মর্দে মুজাহিদগো খুব একটা মুসীবত হইব বইলা মনে হয় না, সব মূর্তি শেষ হউক, তারপর তাজিয়া মিছিলতো আছেই, "নারায়ে তাকবীর" বইলা সব মর্দে মুজাহিদরা ফাল দিয়া পড়ব, আজকাল শুন্তাছি তাজিয়া মিছিল ওয়ালারাও নাকি কাফের, সো নিশ্চিন্তে থাকেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

এইরকম পাক্কা মুসলমানের দেশ হওয়াটাই তো আমাদের লক্ষ্য । 

উদা : ইরান, পাকিস্তান,  ইন্দোনেশিয়া।

মুর্তি ভাঙার পাশাপাশি নাস্তিক কোপানো, শিয়া খ্যাদানোর মত বেশ কিছু সাইড প্রজেক্টে কাজ করতেছে আমাদের মর্দে মুজাহিদ ভাইরা ।  তবে কিনা হাত এখনো পাকে নাই। খুব মোটাদাগের হাতের কাজ। তবে একমাত্র মুর্তি ভাঙাটাই প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছি আমরা।

আর ওইযে, মডারেট ভাইদের কথা বললাম। তাদের "আহা উহু" ফলোড বাই তাদের "যদি,কিন্তু তবে, সহী ইসলাম " টাইপ ইসলাম বিরোধী ও ভ্রান্তিমুলক প্রচারনা না চালিয়ে আমাদের কাতারে চলে আসলে সবার জীবন আরো সুন্দর হইতে পারতো ।

দুয়া করবেন।।

মামুনুর রশীদ
==================================
হাজারো মানুষের ভিড়ে দাড়িয়ে আমি মানুষেরেই খুঁজে ফিরি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লিখেছেন, চলুক

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।