দিনের বেলা পুঠিয়া বাজারে বাস থেকে নামলেই আপনার চারপাশে বেশ কিছু নসিমন (রমণী ভেবে থাকলে ভুল করবেন, ইহা ইঞ্জিনচালিত ত্রিচক্রযান) জড়ো হবে এবং আপনাকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান করবে। এমন এক নসিমন ড্রাইভারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগস্ট মাসের কোন এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে তাঁর ত্রিচক্রযানে চেপে বসলাম। আমার পাশে এক সুকেশিনী, সুহাসিনী, সুলোচনা গুণগুণ করে রবীন্দ্র সংগীত গাইছেন। ম্যাডামের মন অনেক ভাল। ভাল থাকবেই না কেন। তাঁর দীর্ঘদিনের প্যানপানানির সুফল অবশেষে মিলেছে। দুনিয়ার সকল প্রেমিকরাই নাকি প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে যায়, কেবল আমিই যাই না। আমার লেখা গল্পগুলো যতটুকু রোম্যান্টিক, বাস্তবের আমি নাকি তারথেকেও ১০০ গুণ বেশি অ-রোম্যান্টিক। হায়! ম্যাডামকে কিভাবে বুঝাই, প্রাইভেট চাকরীতে ছুটি ম্যানেজ করা মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ডিম সিদ্ধ করা থেকেও কঠিন। একদিনের ছুটিতে রাতের ট্রেনে কিংবা বাসে রাজশাহী পৌঁছে পরদিন রাতে আবার ঢাকায় ফিরতে হলে দিনের বেলায় ঘুরবার এনার্জি থাকে না। কিন্তু ঐ যে বলে, “পড়েছি মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে”। বৃদ্ধ বয়সে (প্রেম করবার জন্য ৩০ বছর বয়সটাকে মনে হয় বার্ধক্যের কাতারেই ফেলা যায়) যেহেতু প্রেম করছি, প্রেয়সীর কিছু আবদার তো রাখতেই হবে। বিয়ের আগেই সংসার ভেঙে যাওয়ার শোক কি আর এই বয়সে সহ্য করতে পারব? অতএব প্রেয়সীর মন রক্ষায় চললাম তাঁর সাথে ঘুরতে। গন্তব্য পুঠিয়ার বিখ্যাত রাজবাড়ি এবং মন্দির।
পুঠিয়া রাজবাড়ি’র বর্তমান প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন মহারাণী হেমন্তকুমারী দেবী। তিনিই ছিলেন পুঠিয়া রাজবংশের সর্বশেষ উত্তরাধিকারী। সম্রাট আকবরের সমসাময়িক আমলে তান্ত্রিক সাধক বৎসাচার্যের পুত্র পিতাম্বর যেই রাজবংশের পত্তন করেছিলেন, ১৯৪২ সালে মহারাণী হেমন্তকুমারী দেবীর মৃত্যুর পর সেই রাজবংশের জৌলুশ কমতে থাকে এবং জমিদারী প্রথা রহিত হওয়ার পর একসময় তার বিলুপ্তি ঘটে। হেমন্তকুমারী দেবী লর্ড কার্জনের আমলে ১৯০১ সালে “রাণী” এবং ১৯২০ সালে লর্ড আরউইনের আমলে “মহারাণী” উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ১৮৯৫ সালে রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন এবং তাঁর শাশুড়ি মহারাণী শরতসুন্দরী দেবীর শ্রদ্ধায় এটি উৎসর্গ করেন। মহারাণী শরতসুন্দরী দেবী ছিলেন এক বিদুষী মহিলা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহারাণীকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতেন। মাত্র সাড়ে ৫ বছর বয়সে রাজা যোগেন্দ্রনারায়নের সাথে তাঁর বিয়ে হয় এবং ১২ বছর বয়সে তিনি বিধবা হন। নিজের কোন সন্তান না থাকায় তিনি ১৮৬৬ সালে রাজশাহীর গুনাইপাড়া নিবাসী কেশবকান্ত চক্রবর্তীর পুত্র রজনীকান্তকে দত্তক নেন। এই রজনিকান্তই পরবর্তীতে রাজা যতীন্দ্রনারায়ন নামে পরিচিতি লাভ করেন এবং হেমন্তকুমারী দেবীকে বিয়ে করেন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে শরতসুন্দরী দেবী মৃত্যুবরণ করেন।
ঐতিহাসিক স্থাপনায় ঘুরে এসে ভ্রমণ কাহিনী লিখলে সেখানে ইতিহাস আসবেই। আবার শুধুমাত্র কাঠখোট্টা ইতিহাস পড়তে কতটুকুই বা ভালো লাগবে। তার থেকে চলুন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ঘুরে আসি। সাথে ধারাবাহিক বর্ণনা তো থাকছেই। পুরো পুঠিয়াতেই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ছড়াছড়ি। আমরা যে কয়টা নিদর্শন দেখেছি সেগুলোর কথাই এখানে লিখলাম। পাঠকদের সুবিধার্থে ক্রমানুসারে এবং জায়গাগুলোর অবস্থান অনুসারে ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণনের দিক করে উপস্থাপন করলাম।
১. বড় শিব মন্দির
পুঠিয়া বাজারে প্রবেশ করতেই হাতের বাম পাশে শিবসাগর নামক দীঘির দক্ষিণ পাড়ে বড় শিবমন্দির অবস্থিত। বর্গাকারে নির্মিত মূল মন্দিরের পরিমাপ ১৪.৩০ মিটার। ৪ মিটার উঁচু মঞ্চের উপর নির্মিত মন্দিরটির দক্ষিণ দিকে আছে সুপ্রশস্ত সিঁড়িসহ প্রধান প্রবেশপথ। চারপাশে টানা বারান্দায় রয়েছে ৫ টি করে খিলান প্রবেশপথ। বারান্দার পিলারগুলোর নিচের অংশ চমৎকারভাবে অলংকৃত এবং মেঝের বহিরাংশে বেলে পাথর স্থাপিত আছে। মন্দিরের মূল কক্ষের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দেয়ালে ১ টি করে খিলান প্রবেশ পথ রয়েছে যেখানে বেলে পাথরের চৌকাঠ ব্যবহৃত হয়েছে এবং চৌকাঠগুলো ফুল আকৃতির নক্সা দ্বারা অলংকৃত। প্রত্যেক প্রবেশপথের দু’পাশে চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত দেবদেবীর দণ্ডায়মান মূর্তি (ভাঙ্গা অবস্থায়) বিদ্যমান আছে।
উত্তর পাশে অবস্থিত দীঘিতে নামার জন্য বাঁধানো ঘাট এবং ঘাটে উঠানামার জন্য পৃথক সিঁড়ির ব্যবস্থা আছে। মন্দিরের উপরের চারকোণে ৪ টি ও কেন্দ্রস্থলে ১ টি চূড়া বা রত্ন আছে। কেন্দ্রীয় চূড়াটি প্রায় ২০ মিটার উঁচু। চতুষ্কোণাকৃতির কাঠামোর উপরে পিরামিড আকৃতির চূড়াগুলো নির্মিত হয়েছে। এগুলোর চারপাশে সন্নিবেশিত রয়েছে বিভিন্ন স্তরে মোচার আকারে নির্মিত অসংখ্য ছোট ছোট চূড়া।
পুঠিয়ায় অবস্থিত মন্দিরগুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। পাঁচআনী জমিদার বাড়ির রাণী ভুবনময়ী দেবী এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তাই এ মন্দিরকে ভুবনেশ্বর মন্দিরও বলা হয়ে থাকে। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়। এই মন্দির নির্মাণে দীর্ঘ ৭ বছর সময় লাগে লেগেছিল। মন্দিরটি নির্মাণে তৎকালীন ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয় বলে জানা যায়। বর্তমানে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় কত্রিক মন্দিরটিতে পূজা-অর্চনা অব্যাহত আছে। মন্দিরে দর্শনার্থীর সংখ্যা নেহায়েত মন্দ নয়।
২. জগন্নাথ/রথ মন্দির
বড় শিব মন্দিরের পূর্বদিকে ঢিলছোড়া দূরত্বে জগন্নাথ বা রথ মন্দির অবস্থিত। এ মন্দিরটিতে পোড়ামাটির কোন ফলক না থাকলেও এর নির্মাণশৈলী বেশ চমৎকার। অষ্টকোণাকারে নির্মিত এ মন্দিরের চারপাশে টানা বারান্দার সাথে ৮ টি পিলার আছে।
উত্তর ও পূর্ব পাশে রয়েছে দুটি খিলান প্রবেশপথ। প্রবেশপথে বেলে পাথরের চৌকাঠের উপর চমৎকার অলঙ্করণ আছে। দোতলার কক্ষটি আকারে ছোট এবং এটির চারপাশে উন্মুক্ত প্রবেশপথ আছে। মন্দিরের গম্বুজ আকৃতির ছাদের উপর কলস আকৃতির ফিনিয়েল দ্বারা শোভিত। পাতলা ইট ও চুন-সুরকির মসলা দ্বারা নির্মিত এ মন্দিরটি রাণী ভূবনময়ী ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বড় শিব মন্দির নির্মানের পরপরই নির্মান করিয়েছিলেন বলে জানা যায়। মন্দিরটি বর্তমানে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
৩. দোল মন্দির
পুঠিয়া বাজারের মধ্যে অবস্থিত বর্গাকারে নির্মিত ৪ তলা বিশিষ্ট এটি একটি সুদৃশ্য অট্টালিকা। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে এ মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার। মন্দিরের প্রত্যেক বাহু ২১.৫৪ মিটার দীর্ঘ। মন্দিরটি দোলমঞ্চ আকারে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে উপরে উঠে গেছে। অর্থাৎ মন্দিরের দ্বিতল নিচের তলা থেকে ছোট, ত্রিতল দ্বিতলের চেয়ে ছোট এবং ত্রিতলের উপরে চতুর্থ তলাটি আরও ছোট। চতুর্থ তলের উপরে আছে মন্দিরের গম্বুজাকৃতির চূড়া। চূড়ার শীর্ষদেশ ফিনিয়েল (সূচালো শীর্ষ) দ্বারা শোভিত। প্রত্যেক তলের চারদিকে প্রশস্ত টানা বারান্দা আছে। মন্দিরের নিচতলায় প্রত্যেক বাহুতে ৭ টি করে ২৮ টি, দ্বিতলে ৫ টি করে ২০ টি, ত্রিতলে ৩ টি করে ১২ টি এবং চতুর্থ তলের প্রত্যেক বাহুতে ১ টি করে ৪ টি সর্বমোট ৬৪ টি প্রবেশপথ আছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার প্যারাপেট দেয়াল এবং চতুর্থ তলার গম্বুজাকৃতি ছাদের চারপাশে মারলন অলংকরণ দ্বারা সজ্জিত। পুঠিয়ার পাঁচআনী জমিদার ভূবেন্দ্রনারায়ণ রায় ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
দোল মন্দির নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে একটা গল্প প্রচলিত আছে। স্থানীয় লোকজন এই মন্দিরকে হাজারদুয়ারি নামে ডাকে। কারণ পুরো মন্দিরটাই একটা গোলকধাঁধার মতন। প্রচলিত গল্প অনুযায়ী জমিদার ভূবেন্দ্রনারায়ন তাঁর কিশোরী স্ত্রী’র সাথে লুকোচুরি খেলার জন্য এই মন্দির বানিয়েছিলেন। আমার কাছে এই গল্প যৌক্তিক মনে হয়েছে। কারণ এই মন্দিরে কোন প্রতিমা নেই; পুরোহিত এবং পূজারীদের আনাগোনা নেই; এমন কি মূর্তি রাখার জন্য ঠাকুরঘরও নেই। বেশিরভাগ সময়ই মন্দিরটি বন্ধ থাকে।
৪. গোবিন্দ মন্দির
পুঠিয়া পাঁচআনী জমিদার বাড়ি অঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি ইমারত। এই মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় রাজবাড়ির নিচের অংশের একটা সুপ্রাচীন ভাঙাচোরা দরজা দিয়ে। লোকসমাগম একদম খারাপ না। নিয়মিত পূজা-অর্চনা হয় বোঝা গেল। এক পূজারীকে জিজ্ঞেস করলাম দিনকাল চলে কিভাবে। বেশ দার্শনিকের মত উত্তর দিলেন, “গোবিন্দ খাওয়ান, গোবিন্দই চালান।“
একটি উঁচু বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরটির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১২.২৫ মিটার। মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে আছে একটি কক্ষ বা গর্ভগৃহ ও চার কর্নারে আছে ৪ টি বর্গাকৃতির ছোট কক্ষ। গর্ভগৃহের চারপাশে ৪ টি খিলান প্রবেশ পথ আছে। তবে মূল প্রবেশ পথটি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এছাড়া দক্ষিণ পাশের দরজার সাথে উপর তলায় উঠবার সিঁড়ি আছে। গর্ভগৃহের চারপাশের বারান্দায় ৩ টি করে খিলান প্রবেশ পথ আছে। মন্দিরের কার্নিশ সামান্য বাঁকানো এবং পিলার ও দেয়াল অসংখ্য পোড়ামাটির চিত্রফলক প্যানেল দ্বারা সজ্জিত। মন্দির গাত্রের সর্বনিম্ন স্তর ফুলেল ফলক এবং এর উপরের সারিতে হাতি, ঘোড়া, পালকি, তীর, ধনুকসহ মোগল আমলের শিকারের বিভিন্ন দৃশ্য পোড়ামাটির চিত্রফলকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
তার উপরের বিভিন্ন সারি ও কলামে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী, রামায়ণ ও মহাভারতে বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর প্রেম বিনিময়ের চিত্র, শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর নৌকাবিলাস এবং বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিকৃতি চিত্রিত হয়েছে। মন্দিরের পশ্চিম দিকের প্রবেশ পথের উপরে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ এবং রাম-রাবণের যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অপর তিনদিকের প্রবেশ পথের উপরে কুর্মে রামচন্দ্রের অবতারের চিত্র বর্ণিত আছে। এছাড়াও চিত্রফলকের মাধ্যমে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের বিভিন্ন দৃশ্য প্রস্ফুটিত হয়েছে। চিত্রফলকগুলো দেখে কান্তজির মন্দিরের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল।
১৮৮৬ ও ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে রাজবাড়ি ও পার্শ্ববর্তী ফুলবাংলো, জগদ্ধাত্রী, লক্ষ্মী, দুর্গা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দিরের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হলেও নির্মাণ কৌশলের কারণে গোবিন্দ মন্দিরের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নি। প্রেম নারায়ণ রায় ১৮শ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে এই মন্দির নির্মাণ করেন বলে জানা যায়।
মন্দির প্রাঙ্গন থেকে বের হবার সময় দেখি আমার উনি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে পূজারীকে দিচ্ছেন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বলল পূজারী নাকি টাকা চেয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম পূজারীকে, গোবিন্দই তো আপনাদের চালাচ্ছেন। তাহলে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে চাইছেন কেন? যা চাওয়ার গোবিন্দর কাছেই চান। উত্তরে আবারও দার্শনিকের মতই জবাব দিলেন, “গোবিন্দই তো আপনাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন। অতএব আপনাদের কাছে না চাইলে কার কাছে চাইব।“ বুঝলাম, নিজের মনমত ফতোয়া দেওয়ার কাজটা শুধু কমবেশি সব ধর্মের সুবিধাভোগী ব্যক্তিরাই করে থাকেন।
৫. পুঠিয়া রাজবাড়ি / পাঁচআনি রাজবাড়ি
পুঠিয়া বাজারের দক্ষিণ দিকে শ্যামসাগর দীঘির পূর্ব পাশে ৪.৩১ একর ভূমির উপর আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত দ্বিতল বিশিষ্ট রাজবাড়িটি একটি আকর্ষণীয় ইমারত। চারদিকে পরিখা পরিবেষ্টিত উত্তরমুখী অঙ্গনসমুহকে কেন্দ্র করেই প্রাসাদের কক্ষগুলো বিন্যস্ত। এই উত্তরমুখী অঙ্গনেই জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত ইত্যাদি ম্যগাজিনের একটি পর্বের শুটিং করেছিলেন। সেই পর্বে রাজবাড়ির রূপ দেখে রাজারাণীদের জৌলুষ কিছুটা হলেও আঁচ করা যায়।
শুধু কাছারি অঙ্গনের উত্তর ও পশ্চিমের দ্বিতল বিশিষ্ট দুটি ব্লক ব্যতীত প্রাসাদটির অন্যান্য অংশ একতলা আকারে নির্মিত। এ প্রাসাদ নির্মাণে উপকরণ হিসাবে ইট, চুন-সুরকি, লোহা ও কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে। কাছারি অঙ্গন ও মন্দিরাঙ্গনে প্রবেশের জন্য রাজবাড়ির সম্মুখে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে রয়েছে দু’টি গাড়ীবারান্দাসহ সুউচ্চ দুটি ফটক বা প্রবেশতোরণ। অর্ধবৃত্তাকার খিলান সম্বলিত ফটক দুটির উভয় পাশে দেয়ালের সাথে সংযুক্ত রয়েছে এক সেট করে করিন্থীয় শীর্ষযুক্ত যুগল তুশকান স্তম্ভ। পশ্চিমের ফটক দিয়ে কাছারি অঙ্গন ও পূর্ব পার্শ্বের ফটক দিয়ে মন্দিরাঙ্গনে প্রবেশ করা যায়। গাড়ীবারান্দা দুটির সম্মুখে এক সারিতে স্থাপিত সুউচ্চ ও বিশাল দ্বিতলের দুটি ঝুলবারান্দা আছে।
বারান্দা দুটিতে উঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি আছে। কাছারি অঙ্গনের উত্তর দিকের নিচতলার কক্ষটি ট্রেজারি অফিস ছিল বলে জানা যায়। দ্বিতল অংশের বৃহৎ হলঘর বা মিলনায়তনে রাজা বা রাণী রাজকর্মচারীদের সাথে সভা করতেন এবং প্রজাসাধারণের সাথে মিলিত হতেন। অঙ্গনের পূর্ব ও পশ্চিম ব্লকের কক্ষসমূহ জমিদারির কাগজাত সংরক্ষণ বা মহাফেজখানা হিসেবে দৈনন্দিন জমিদারি কার্যাদি সম্পাদন করার জন্য ব্যবহৃত হত। কক্ষগুলোর উপরিভাগ লোহা অথবা কাঠের তীর বর্গা ও টালির সমন্বয়ে নির্মিত সমতল ছাদে আচ্ছাদিত।
রাজবাড়ির কক্ষগুলোর অভ্যন্তর ও বাইরে পলেস্তারার আস্তরণে এবং সম্মুখভাবে আকর্ষণীয় ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কক্ষগুলো বর্গাকার ও আয়তাকার প্যানেলে বিভক্ত। খাজাঞ্চিখানা কক্ষের প্যানেল ও খিলানপথের খিলানগর্ভে পলেস্তারার আচ্ছাদনের উপর জল রঙের চিত্র লক্ষ্য করা যায়। তবে খিলানগর্ভে ফুলের চিত্র ও কক্ষের উত্তর দেয়ালের পশ্চিম প্রান্তে একটি আয়তাকার আনুভূমিক প্যানেলে একজন যোদ্ধার অস্পষ্ট প্রতিকৃতি পরিলক্ষিত হয়। কক্ষের খিলানগুলো খাঁজবিশিষ্ট। কাছারি অঙ্গনের উত্তর ব্লকের দ্বিতল ভবনের সম্মুখভাগের সুবিশাল স্তম্ভ সমূহের শীর্ষ করিন্থিয় রীতিতে চুন বালির সংমিশ্রিত লতাপাতা নকশায় শোভিত। ছাদের কার্নিশের নিম্নভাগে দন্তাকৃতির এবং তার নিচে চক্রাকারে প্যাঁচানো লতাপাতার একটি টানা পাড় নকশা বিদ্যমান। এছাড়া ছাদ প্রান্তে নির্মিত ক্ষুদ্রাকৃতির চূড়া সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক হয়েছে। ছাদের উপরে সম্মুখভাগের কার্নিশ বরাবর কলস আকৃতির অলংকরণ এবং সিমেন্ট-বালু দ্বারা তৈরি ৫ টি ভাস্কর্যের ভগ্নাংশ রয়েছে।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা এইবার ভিতরের কক্ষগুলো দেখতে পারি নি। সিঁড়ি দিয়ে উঠার পরেই দেখি দরজা বন্ধ। ছাত্রবস্থায় যখন এসেছিলাম তখন অবশ্য রাজবাড়ির ছাদ পর্যন্ত উঠেছিলাম। সংস্কার কাজের জন্য আপাতত দোতলায় প্রবেশ নিষেধ।
পুঠিয়া রাজবাড়িকে পাঁচআনি রাজবাড়ি বলার পিছনে কারণ আছে। ১৭৪৪ সালে পুঠিয়ার রাজা ছিলেন অনুপনারায়ন। নরেন্দ্রনারায়ণ, রুপেন্দ্রনারায়ণ, মোদননারায়ণ এবং প্রাণনারায়ণ নামে তাঁর ৪ পুত্র ছিল। অনুপনারায়ণের মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে নরেন্দ্রনারায়ণ গোপনে সকল সম্পত্তি নিজের নামে করার চেষ্টা করেন। তা জানতে পেরে অনুজ তিন ভাই বাঁধা দেন এবং সম্পত্তির সমান চার ভাগ হয়। পরে নরেন্দ্রনারায়ণ জ্যেষ্ঠত্বের দাবী জানালে ছোট তিন ভাই প্রত্যেকের অংশ থেকে আধা আনা করে বড় ভাইকে ছেড়ে দেন। ফলে নরেন্দ্রনারায়ণের অংশে সাড়ে পাঁচ আনা এবং অপর তিন ভাইয়ের অংশে পড়ে সাড়ে তিন আনা করে। এই সাড়ে পাঁচ আনা থেকেই পাঁচআনি জমিদারবাড়ি নাম হয়। এই জমিদারবাড়ির ভিত্তির উপরেই পরবর্তীতে মহারাণী হেমন্তকুমারী রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন।
৬. চারআনী রাজবাড়ি
পাঁচআনী রাজপ্রাসাদ হতে ১০০ মিটার পশ্চিম দিকে শ্যামসাগর নামক দীঘির দক্ষিণ পাড়ে চারআনী রাজপ্রাসাদটি অবস্থিত। জমিদারি কার্য সম্পাদনের লক্ষ্যে রাজপ্রাসাদ অঙ্গনে বিভিন্ন অফিস ভবন, রাজকর্মচারীদের আবাসস্থল, হাতিশালা ও ঘোড়াশালা ইত্যাদির ব্যবস্থা ছিল।
কিন্তু বর্তমানে শুধু প্রধান তোরণ এবং কাছারি অঙ্গন অর্ধভগ্ন অবস্থায় থাকলেও অন্যান্য ইমারত ধ্বংসপ্রাপ্ত। ১৯৭১ সালে এ ইমারতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। বর্তমানে কেবল কাছারি ভবন ও ট্রেজারি ভবন ইমারত দুটি কোন রকমে টিকে আছে। এ রাজবাড়িতে প্রবেশের জন্য উত্তর দিকে বিশাল ও সুউচ্চ তোরণটি অবস্থিত। এ ইমারত নির্মাণে ইট, চুন-সুরকি, কাঠ ও লোহা ব্যবহৃত হয়েছে।
চারআনী রাজবাড়ির প্রধান প্রবেশ তোরণ, কাছারি বাড়ি, খাজাঞ্চিখানা ও অন্যান্য কক্ষ সমূহের অভ্যন্তর ও বহির্ভাগ সম্পূর্ণটাই পলেস্তারার আস্তরনে আচ্ছাদিত। প্রধান প্রবেশ তোরণের সম্মুখস্থ অক্টাগোনাল স্তম্ভগুলো অতীব নান্দনিক। তবে প্রবেশ তোরণ অপেক্ষা এই প্রাসাদের কাছারি বাড়ির দ্বিতীয় তোরণ পথটি অলংকরণগত দিক দিয়ে অধিকতর আকর্ষণীয়। তোরণটির সম্মুখস্থ বিশালাকৃতির অর্ধবৃত্তাকার খিলানটি একটি আয়তাকার কাঠামোর মধ্যে স্থাপিত।
এ প্রাসাদটি ১৮৯৫ খৃস্টাব্দের পরে অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে নির্মিত বলে জানা যায়। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কতৃক এখনও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করা হয় নি।
৭. বড় আহ্নিক মন্দির
পাঁচআনী জমিদার বাড়ি থেকে প্রায় ১২৫ মিটার পশ্চিমে শ্যামসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে পুঠিয়ার চারআনী জমিদার কত্রিক নির্মিত বড় আহ্নিক, ছোট গোবিন্দ এবং গোপাল মন্দির নামে একি অঙ্গনে পাশাপাশি ৩ টি মন্দির আছে। এই মন্দিরগুলো চারআনী মন্দির নামে পরিচিত।
চত্বরের সর্ব দক্ষিণের মন্দিরটি বড় আহ্নিক মন্দির। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা আয়তাকার এ মন্দিরের পরিমাপ ১৪.৬০ মিটার x ৪.৪৫ মিটার। পূর্বমুখী এ মন্দিরে পাশাপাশি ৩ টি কক্ষ আছে। মাঝের কক্ষটি আয়তাকার এবং বড়। এটির পূর্ব দিকে তিনটি খিলান প্রবেশ পথ এবং উপরে দোচালা আকৃতির ছাদ আছে। আয়তাকার কক্ষের দক্ষিণ ও উত্তর পাশে চৌচালা আকৃতির ছাদ বিশিষ্ট বর্গাকৃতির দু’টি কক্ষ আছে। কক্ষ দুটির পূর্ব দেয়ালে ১ টি করে সরু প্রবেশ পথ আছে। প্রবেশ পথের উপরে ও দুপাশে প্যানেল রয়েছে। আয়তাকার এ মন্দিরের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম দেয়াল সমতল এবং কোন অলংকরণ নেই। কিন্তু সম্মুখের দেয়াল অসংখ্য পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা সজ্জিত।
চিত্রফলকগুলোতে ক্রেতা যুগে রামচন্দ্রের সাথে রাবণের যুদ্ধের কাহিনী, মোগল যুদ্ধের সাঁজোয়া বাহিনীর চিত্র, বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর প্রতিকৃতির চিত্র, শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর সাথে গোপীগণের বৃন্দাবনলীলার চিত্র চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পাতলা ইট ও চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত এ মন্দিরে কোন শিলালিপি না থাকলেও এটি পুঠিয়া চারআনী জমিদার কত্রিক ১৮শ খৃস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত বলে জানা যায়।
৮. ছোট গোবিন্দ মন্দির
বড় আহ্নিক মন্দিরের উত্তর পাশে বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরটি ছোট গোবিন্দ মন্দির নামে পরিচিত। এ মন্দিরের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৭.৮৫ মিটার। এক কক্ষ বিশিষ্ট মন্দিরের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সরু বারান্দা এবং পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দেয়ালে ১ টি করে প্রবেশ পথ আছে। মন্দিরের চার পাশের কর্নার ও দরজার দু’পাশ পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা নান্দনিকভাবে সজ্জিত। বারান্দার সাথে দক্ষিণ দিকে ৩ টি এবং পূর্বদিকে ১ টি খিলান প্রবেশ পথ আছে। কার্নিশ ধনুকের ন্যায় বাঁকানো এবং উপরে একটি ফিনিয়েল বিশিষ্ট চূড়া আকৃতির ছাদ আছে। পশ্চিম ও উত্তর পাশের বহিঃদেয়াল সমতল এবং কোন অলঙ্করণ না থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণ দেয়ালের সর্বত্র পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা চমৎকারভাবে অলংকৃত।
বড় গোবিন্দ মন্দিরের ন্যায় এ মন্দিরে স্থাপিত চিত্রফলকগুলোতে রাধাকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা, রামচন্দ্রের সাথে রাবণের যুদ্ধের কাহিনী, বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর প্রতিকৃতি, চিত্রফলকের প্যানেল, মোগল যুদ্ধের সাঁজোয়া বাহিনীর চিত্র, পদ্ম, অশ্ব, লতাপাতা ও ফুলের দৃশ্য চমৎকারভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। এটি ১৮০০-১৮৭০ সালের মধ্যে নির্মিত বলে ধারণা হয়।
৯. গোপাল মন্দির
চারআনী মন্দির চত্বরের উত্তর পাশে অবস্থিত আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত দ্বিতল বিশিষ্ট মন্দিরের পরিমাপ ১২.৮০ মিটার x ৭.৮০ মিটার। মন্দিরের দক্ষিণ দিকে ৩ টি এবং পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ১ টি করে প্রবেশ পথ আছে। দক্ষিণমুখী এ মন্দিরের উত্তর দিক ব্যতীত অপর তিনদিকে রয়েছে বারান্দা এবং দ্বিতীয় তলায় উঠবার জন্য পশ্চিম দিকে সিঁড়ি আছে। উপর তলার কক্ষের দক্ষিণ দেয়ালে ৩ টি এবং পশ্চিম দেয়ালে ১ টি প্রবেশ পথ আছে। জাকজমকহীন এ মন্দিরে তেমন কোন অলংকরণ নেই। তব নিচতলার প্রধান প্রবেশপথের উপর ১ টি পোড়ামাটির মূর্তি স্থাপিত আছে।
পুঠিয়ার নিদর্শনগুলোর দেখার সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে সবগুলো নিদর্শনই কাছাকাছি জায়গায় অবস্থিত। রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে ১ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটা বৃত্ত আঁকলেই সেই বৃত্তের ভিতর সবগুলো নিদর্শন এঁটে যাবে। একটু দূরে অবস্থিত হওয়ায় আরও বেশ কিছু নিদর্শন দেখতে যাওয়া হয় নি। পরবর্তীতে কোন একদিন হয়ত আবারও দেখা হবে। তবে আমার ভ্রমণ বিষয়ক অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি, কখনও কোন দেখার জায়গা পরেরবারের জন্য ফেলে রাখতে নেই। কারণ সেই জায়গায় আপনার জীবনে আবারও আসা হবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
যে কোন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে ঘুরলেই আমার মনের ভিতর বিষাদ ভর করে। পুরাকীর্তিগুলো ক্ষণে ক্ষণে স্মরণ করিয়ে দেয় জীবন কত ক্ষণস্থায়ী। রাজবাড়িতে ঘুরলেই মনে পড়ে জমিদারদের অত্যাচার নিপীড়নের কথা। ঐতিহাসিকরা বেশিরভাগ সময়েই রাজা কিংবা জমিদারদের গৌরবের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। কিন্তু আড়ালে থেকে যায় সেই রাজবাড়ি কিংবা জমিদারবাড়ি তৈরির পিছনের শোষণের কথা। এই যেমন পুঠিয়া রাজবাড়ির পশ্চিম ব্লকের নিচতলায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তিদানের জন্য ব্যবস্থা ছিল। পশ্চিমাংশের ১ টি কক্ষে কয়েকটি গভীর কুয়া আছে। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিদের কুয়ায় ফেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। খাজনা আদায়ের জন্য নির্যাতনের ঘটনা তো ছিল খুবই সাধারণ ব্যাপার। এই বিষয়গুলো সুকৌশলেই চেপে যাওয়া হয়।
যখন ফিরছিলাম তখন পিছন ফিরে রাজবাড়ির দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল মৃত্যুকুয়ায় বাস করা আত্মারা যেন আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। জীবন আসলেও ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে আর কি ই বা করতে পারলাম। না মানুষকে কিছু দিতে পারলাম, না সমাজকে, না জাতিকে। স্বার্থপরতায় মগ্ন হয়ে এই বেঁচে থাকার কি আসলেই কোন মানে আছে?
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
মন্তব্য
আঁ, কী যে বলেন, আমিতো ত্রিশ বছর বয়স হবার পরই প্রেম কী তা বুঝতে শিখলাম।
লেখা ও ছবি ভাল লেগেছে। অনেক তথ্যও জানা হলো বটে।
কিশোর কিংবা তরুণ বয়সের প্রেমে পাগলামি থাকে বেশি। এখন সেই পাগলামিটুকুই তো অনুভব করতে পারছি না।
লেখা ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগলো।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগল। মন্দিরের terracotta-র কাজগুলির সাথে বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলির অনেক মিল আছে। এই কাজের শিল্পীদের সম্বন্ধে কোন তথ্য জানতে পারলেন কি? এরা কি স্থানীয় শিল্পী ছিলেন?
৮ নং ছোট গোবিন্দ মন্দিরের অনেকটা সাদা plaster করা হইয়াছে। এর কারন ঠিক কি? In an ancient structure, such works are generally considered as vandalism.
ভাল থাকবেন।
ঋতব্রত
বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলো দেখা হয় নি তাই সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। নির্মাণের সময়েই ছোট গোবিন্দ মন্দিরের একপাশে টেরাকোটা ছিল। তাই অন্য পার্শ্বগুলো সাদা রঙ করাতে খুব একটা সমস্যা দেখি না।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
ইস্কুলে পড়তে আমার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় ছিল সমাজবিজ্ঞান যার মধ্যে ইতিহাস ভূগোল দুইই ছিল। যার কারণে এইসব বিষয়ে জ্ঞান খুব সীমিত। কিন্তু সচলায়তনের ভ্রমণের লেখা পড়তে পড়তে ইতিহাস আর ভুগোলই সবচেয়ে পছন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমার ভ্রমনের অভিজ্ঞতা হল প্রতিবারই কিছু কিছু জায়গা ফেলে রাখা হয় পরেরবারের জন্য, হয় সময় অভাবে অথবা পকেটের দিকে তাকিয়ে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই জায়গায় দ্বিতীয়বার আর যাওয়া হয় না।
লেখা খুব ভাল লাগল।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোন জায়গাই পরেরবারের জন্য ফেলে রাখতে নেই। আমি অন্তত সেই চেষ্টাই করি।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
অনেক তথ্যই জানা ছিল না ।
ধন্যবাদ ।
বড় ভাই
মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
ভাল লেগেছে। অনেক কিছু জানলাম।
পড়বার জন্য ধন্যবাদ। ভাল লাগলো শুনে।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
নতুন মন্তব্য করুন