আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৯/০১/২০১৬ - ৫:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Peter S. Cahn যখন University of California at Berkeley (বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়, কারো কারো মতে সর্বোচ্চ) থেকে anthropology তে Peter S. Cahn যখন University of California at Berkeley (বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়, কারো কারো মতে সর্বোচ্চ) থেকে anthropology তে Ph.D. ও PostDoc সম্পন্ন করে শিক্ষাকতা চাকরির জন্য একটি মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তখন ঐ ডিপার্টমেন্টের প্রধান তাঁকে বললেন,"To get tenure, you need a book or a series of articles. If you have great publications but lousy teaching, you'll still get tenure. If you have great teaching but not-so-great publications, you won't get tenure." অর্থাৎ তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী চাকরিকে স্থায়ীকরণের জন্য তাঁকে প্রচুর গবেষণা এবং প্রকাশনা দরকার। যদি মানসম্মত গবেষণার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হবে। (তথ্য সূত্র: The Chronicle of Higher Education ওয়েবসাইট- http://chronicle.com/article/Teaching-Versus-Research/45969)।

তাহলে দাঁড়ালো- বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির প্রথম শর্ত হচ্ছে গবেষণা। কিন্তু, গবেষণার প্রথম শর্ত হচ্ছে অর্থ। জীবনে অর্থ যতই অনর্থের মূল হোক-না-কেন, গবেষণার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তাই অর্থ দরকার। কি পরিমান? একটা উদাহরন দেয়া যাক- মাঝারি মানের কোনো গবেষক যদি বছরে মাত্র দুই থেকেতিনটি জার্নল আর্টিকেল প্রকাশ করতে চায়, তাতেও বছরে কয়েক লক্ষ ডলারের প্রয়োজন। এখন কথা হচ্ছে, এই বিপুল পরিমান অর্থ কোথাথেকে আসবে? বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য কোন অর্থ দেয় না, কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবার মতো কোনো অর্থ নেই। তাহলে, এই বিপুল পরিমান ডলারের ব্যবস্থা শিক্ষক/শিক্ষিকাগনকেই করতে হবে। কিন্তু, কিভাবে? সরকার গবেষণার জন্য যে ছিটেফোঁটা অর্থ বরাদ্ধ করে (বছরে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার, সূত্র: www.aaas.org), বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাগনকে তার জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট লিখে আবেদন করতে হয় এবং বুঝাতে হয় যে, তার প্রস্তাবিত প্রজেক্ট দেশ তথা মানব কল্যানের জন্য অপরিহার্য। এখানেও প্রতিযোগীতা অনেক। তাই, অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই কম এবং অধিকাংশ শিক্ষকগন কোনো অর্থ পায় না। তহলে, উপায়? দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে industry এবং বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে গবেষণার জন্য আবেদন করা। এই সকল প্রতিষ্ঠান তাদের পন্য তৈরী এবং মান উন্নায়নের জন্য গবষণার নামে অর্থ বরাদ্ধ করে। কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার গবেষণাতে যদি ঐ industry অথবা বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট লাভবান হয়, কেবল সেই ক্ষেত্রেই অর্থ দেয়া হবে। এখানেও প্রতিযোগীতা অনেক, কিন্তু, সুখবর হচ্ছে অর্থের পরিমান অনেক বেশি। তাই, প্রপ্তির সম্ভাবনও বেশি।

শিক্ষক/শিক্ষিকাগন বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য যে অর্থ পায়, তার বড় এক অংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয় (কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ)। করন, ঐ শিক্ষকের অর্থ প্রাপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহৃত হয়েছে, এবং তার গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় জায়গাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা (যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিরাপত্তা) দিয়ে থাকে। বাকী অর্থ দিয়ে শিক্ষক/শিক্ষিকাগনদের মানসম্মত গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণার অগ্রগতি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত জানাতে হবে।

এই তো গেল চাকরিপ্রাপ্তি এবং গবেষণার কথা। এবার সংক্ষেপে শিক্ষক/শিক্ষিকাগনদের বেতন নিয়ে কথা বলা যাক। আমেরিকাতে শিক্ষক/শিক্ষিকাগনদের বেতন নির্ভর করে department-এর productivity-র উপরে। মানে, তিনি যে বিভাগের শিক্ষক ঐ বিভাগের আয়ের উপরে। আয় যত বেশি, শিক্ষক/শিক্ষিকাগনদের বেতনও বেশি (যেমন- বিজনেস স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকাগনদের গড় বেতন বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের গড় বেতনের দ্বীগুনের বেশি)। এর পরে থাকে শিক্ষকদের গবষণার কথা। যে শিক্ষক/শিক্ষিকা গবেষণার জন্য যত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ আনতে পারবে, তার বেতন ততো বেশি হবে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। একজন শিক্ষক যদি সামান্য গবেষণা করে, তবে তার বেতন তেমন একটা বাড়েনা। আর, যে শিক্ষক/শিক্ষিকা অনেক গবেষণা করে, গবেষণার জন্য প্রচুর অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসে, এবং বিশ্ববিদ্যালয় ওনার গবেষণার জন্য প্রপ্ত অর্থ থেকে একটা বড় অংকের অর্থ পায়, তবে তার বেতন বেশি। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে এই সকল প্রফেসর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় এবং সম্মান বাড়বে (যেমন, আমি যে বিশ্ববিদ্যলয়ে এখন পড়ছি, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের একজন অধ্যাপক আছেন, যাঁর বেতন বছরে পঞ্চাশ হাজার ডলারের কম। অন্যদিকে, Chemical Engineering বিভাগের একজন শিক্ষক আছেন, যাঁর বেতন বছরে পাঁচ লক্ষ ডলারেরও বেশি)। কোনো কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকা আছেন, যারা নিজেদের বেতন নিজেরাই ব্যবস্থা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে তার বেতনের জন্য কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। অর্থৎ বিশ্ববিদ্যালয় ওনার গবেষণার অর্থ থেকে যে অংশ পায়, তার সামান্য কিছু অংশতেই অধ্যাপককের বেতন হয়ে যায়।

এখন আসা যাক শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বেতনের পরিমান এবং কারা শিক্ষাকতা পেশাতে আসে, তার উপরে। প্রথমতঃ বিশ্ববদ্যালয়ে শিক্ষক/শিক্ষিকা হিসাবে তারাই আসে, যাদের অসীম আগ্রহ আছে। কারণ, সামান্য ডিপ্লোমা ডিগ্রী নিয়ে আমেরিকাতে উচ্চ বেতনের চাকরি করা যায়। উদাহরণ দেয়া যাক। আপনি যদি একজন কাঠ মিস্ত্রি হতে চান, তাহলে আপনাকে কাঠের কাজের উপরে ছয় মাসের ডিপ্লোমা কোর্স করতে হবে। এবং আপনার বেতন হবে বছরে এক লক্ষ ডলার। অথবা, আপনি যদি এর থেকেও বেশি আয় করতে চান, তবে আপনি ট্রাক চালানো শিখতে পারেন। একবার ট্রাক চালানোর লাইসেন্স পেয়ে গেলে, আপনি অর্ধেকটা সময় কাজ করেও বছরে এক থেকে দেড় লক্ষ ডলার আয় করতে পারবেন। এখন আপনি যদি মনে করেন যে, ট্রাক চালালে আপনাকে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে হবে, এর ফলে আপনি আপনার স্ত্রীকে যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে, আপনি মটর মেকানিকে জন্য ৪ থেকে ৬ মাসের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়ে যান। ঘন্টায় ৭০/৮০ ডলার করে আয় করার নিশ্চত ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি যদি এমন কায়িক পরিশ্রমকে এড়িয়ে গিয়ে A/C-র মধ্যে বসে চাকরি করতে চান, তাহলে অনার্স (কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইন্টারমিডিয়েট) পাশ করে সোসাল সিকিউরিটি অফিসে ক্লার্কের চাকরিতে জয়েন করুন। সারা বছর আফিসের পাশের লেকে বড়শী দিয়ে মাছ ধরার পরেও, অফিস আপনাকে বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার ডলার দিবে।

তাহলে কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকা হচ্ছেন? যাদের গবেষণা এবং শিক্ষাকতার প্রতি গভীর মমতা এবং নেশা আছে, কেবল তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনের স্বল্পতা এবং গবেষণার চ্যালেন্জ জেনেই "সহকারী অধ্যাপক" হিসাবে শিক্ষকতা পেশাতে আসে। আর, এই আসার জন্য তাদেরকে নেশাগ্রস্থের মতো গবেষণাগারে কাজ করতে হয়। কখনো কখনো দিনে ২৪ ঘন্টা, সপ্তাহে ৭ দিন ল্যাবে কাটিয়ে দিতে হয়। এর পরেও শিক্ষাকতার অস্থায়ী চাকরিটার জন্য সর্বোচ্চ প্রতিযোগীতায় নামতে হয়। এই অস্থায়ী চাকরিকে স্থায়ী করার জন্য আবারও স্থায়ী ভাবে দিনে ২৪ ঘন্টা, সপ্তাহে ৭ দিনই গবেষণাতে ডুবে থাকতে হয়। Ph.D. শেষ করার পরে, যারা এতটা চ্যালেন্জ নিতে চায় না, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বেতনের থেকে প্রায় দেড় গুন বেতনে কোনো company-তে যোগ দেয়।

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের এমন নিরালস পরিশ্রমের ফলে আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা পৃথীবির সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এই কম বেতন বা নিম্ন মর্যাদার জন্য শিক্ষক/শিক্ষিকাদের মধ্যে কোনোরূপ আক্ষেপ, আন্দোলন, বা ক্লাস বন্ধ করতে দেখিনি। অথচ, আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বেতন এবং মর্যাদা বাড়ানোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাঁরা কর্ম বিরতীতে গিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকা, এবং ব্লগে অসংখ্য লেখালেখি করছেন। টিভি চ্যানেলগুলোতে টক শো তে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু, কখনোই মানসম্মত গবেষণার জন্য রাজপথে নামেননি। তাঁরা কখনোই প্রধানমন্ত্রীর কাছে গবেষণার অর্থ বাড়ানোর জন্য স্মারকলিপি দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Lecturer’ পোষ্টে নিয়োগ বন্ধ করে, Ph.D. এবং PostDoc করে আসা প্রার্থীকে আর্ন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত সরাসরি ‘Assistant Professor’-এ অস্থায়ী ভাবে নিয়োগের জন্য কোনো কথা বলেননি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মানসম্মত গবেষণা এবং বড় বড় জার্নালে তাঁদের গবেষণা পত্র প্রকাশ করতে না পারলে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেবার জন্য কোনো কথা বলতে শুনিনি। অথবা, ক্রমবর্ধমান industry-এর প্রতিনিধীদেরকে নিয়ে সেমিনার করে industry-এর পন্যের গুনোগত মান উন্নয়নের জন্য গবেষণার প্রয়োজনীয়তা এবং গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্ধের কথা তুলে ধরেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকান্ড দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ আমাদের দেশে কি সত্যিকারের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আছে, না সবগুলোই কেবল টিচং কলেজ?

- সব্যসাচী মিস্ত্রী বাবু


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের সে অর্থে রিসার্চ ইউনিভার্সিটি বলতে কিছু নাই। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের কথা বলবেন। অনেকে বলবেন বাজেট অপ্রতুলতার কথা। শিক্ষকদের মধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে গিয়ে অনেকেই ছাত্রদের নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেন। শুরুতেই হাল ছেড়ে দেয়া মানুষের সংখ্যাটা মনে হয় বেশী, তবে কেউ কেউ লেগে থাকেন। জামাল নজরুল ইসলাম স্যার কিন্তু মৃত্যুর আগে পর্যন্ত লেগে ছিলেন।
_______________
সৌমিত্র পালিত

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

তাহলে দাঁড়ালো- বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির প্রথম শর্ত হচ্ছে গবেষণা।

উহু। অতি সরলিকরণ হয়ে গেল। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা মূল ফোকাস নয়। যেসব ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা মূল ফোকাস সেখানে ঠিকমতো না পড়ালেও চাকরি থাকে। কিন্তু যেখানে পড়ানো মূল ফোকাস সেখানে নেচারে পাবলিশ করলেও চাকরি থাকবে না।

কার্নেগী ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই লিবারেল আর্টস কলেজের সমতুল্য। এখান থেকে কাটিং এজ গবেষণা আশা করা উচিত নয়। কারণ সেরকম সুযোগ সুবিধা (টাকা পয়সা), কোর্স লোড দেয়া হয়না। আমার জানা মতে একমাত্র আইপিজিএমআর যা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি সেটির লক্ষ্য ছিল উচ্চতর গবেষণা। যেদি কালক্রমে আরেকটি সাধারণ মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

হাসিব এর ছবি

কিন্তু, গবেষণার প্রথম শর্ত হচ্ছে অর্থ। জীবনে অর্থ যতই অনর্থের মূল হোক-না-কেন, গবেষণার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তাই অর্থ দরকার। কি পরিমান? একটা উদাহরন দেয়া যাক- মাঝারি মানের কোনো গবেষক যদি বছরে মাত্র দুই থেকেতিনটি জার্নল আর্টিকেল প্রকাশ করতে চায়, তাতেও বছরে কয়েক লক্ষ ডলারের প্রয়োজন।

খুবই মোটাদাগের তথ‍্য। আর্গুমেন্ট দাঁড় করাতে এভাবে মোটাদাগের জিনিসপত্র তৈরি করলে শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্টের ক্ষতিই হয় সেটা।

দেবদ্যুতি এর ছবি

লেখা পড়লাম। আসল ব্যাপার যাই হোক, মনে হলো, যাক, হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এত ঝামেলার মধ্যে নেই, বাবা। কানে ধরে নাকে খত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারির দরখাস্ত করাই বাদ দিয়েছি, এ নিয়ে বেচারা আমার হাজার হোক, একটু মন খারাপ তো আছেই, সেটা কাটানোর পক্ষে কিছু তথ্য পেলুম বটে দেঁতো হাসি

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

নীরব এর ছবি

"কারণ, সামান্য ডিপ্লোমা ডিগ্রী নিয়ে আমেরিকাতে উচ্চ বেতনের চাকরি করা যায়। উদাহরণ দেয়া যাক। আপনি যদি একজন কাঠ মিস্ত্রি হতে চান, তাহলে আপনাকে কাঠের কাজের উপরে ছয় মাসের ডিপ্লোমা কোর্স করতে হবে। এবং আপনার বেতন হবে বছরে এক লক্ষ ডলার। অথবা, আপনি যদি এর থেকেও বেশি আয় করতে চান, তবে আপনি ট্রাক চালানো শিখতে পারেন। একবার ট্রাক চালানোর লাইসেন্স পেয়ে গেলে, আপনি অর্ধেকটা সময় কাজ করেও বছরে এক থেকে দেড় লক্ষ ডলার আয় করতে পারবেন। "
আপনার উপরোক্ত বেতন সম্পর্কিত তথ্যগুলির রেফারেন্স দিন দয়া করে ।

মাহফুজ এর ছবি

আপনি না জাইনা আজাইরা কথা না বললে হয় না।
আমেরিকাতে সব রিসার্চ ইউনিতে ফ্যাকাল্টিরা জয়েন করলে প্যাকেজ হিসেবে দুজন বা আরো বেশি রিসার্চ এসিট্যান্ট রাখার পয়সা পায় কয়েক বছরের জন্য। আর কিছু পয়সা পায় কনফারেন্সে যাওয়া এইসব কাজে। আপনি ফুল টাইম পিএইচডি স্টূডেন্ট রাখার পয়সা দিবেন না, রিসার্চ আউটকাম হবে কোথা থেকে।

শ্বেতশুভ্র এর ছবি

বিদেশি ডিগ্রি নেওয়ার পরেও দেশে এসে সেই লোকরা কেন গবেষণা করে না

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হবার পর যখন তারা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যায় পিএইচডি করতে, তাদের মূল লক্ষ থাকে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ভারী করবার, ফিরে এসে ক্যাবল নামের আগে পিছে ভারী ভারী ডিগ্রী জুড়ে দিয়েই কর্ম শেষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়তি ক্লাস, উপরি হিসেবে, নেবার সুযোগ, দ্রুত পদোন্নতি, কে করে গবেষণা ! (অধিকাংশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)! স্কলারশিপ ও তো আজকাল পক্ষপাত পূর্ণ, কমনওয়েলথ দেয়া হয় শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, তাও আবার বিশ্ববিদ্যালয় ইউ জি সি কে রেফার করে দেয় তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাকে কাকে দেয়া যেতে পারে, জাপান তো বলেই দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অগ্রাধিকার পাবে।

Taher Muhammad Sagor

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুব ভালো জানি না, কাজেই যেটা জানি না সেটা নিয়ে কিছু বলছি না।

তবে, আপনি বাইরের পরিস্থিতির বিষয়ে খুব বেশি সরলীকরণ করেছেন বলে মনে হয়েছে।

আপনি টেনিউর পূর্ব সময়ের কথা বলেছেন, কিন্তু টেনিউর হবার পর কি হচ্ছে সেটা বলছেন না।

বিশ্ববিদ‌্যালয়ে চাকরির কিছু ভালো দিক আছে, যেটা উল্লেখ না করার কারণে আপনার লেখাটার ভারসাম্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
১। পাঁচ বা ছয় বছরের মাথায় টেনিউর হয়ে গেলে, চাকরি মোটামুটি পাকা। 'জব সিকিউরটি' অনেক বেশি। পক্ষান্তরে, মাইক্রোসফটের মত নামী কম্পানিতে চাকরি করলেও, ভালো পারফর্ম করলেও চাকরি যেতে পারে । (এঁরা সবাই ভালো গবেষক ছিলেন এবং অনেকেই অন্য জায়গায় দ্রুত চাকরি পয়ে গিয়েছিলেন, তবুও জব সিকিউরিটির অভাব বোঝাতে এই উদাহরণটা টানতে হল)। এক কম্পানি অন্য এক কম্পানির সাথে মার্জ করে বহু লোককে বিদায় করে দিতে পারে। নতুন CEO এসে কস্ট কাটিং নাম দিয়ে ভুরি ভুরি লোক বিদায় করে দেয়ার মত ঘটনা অহরহ ঘটছে।

২। টেনিউর প্রাপ্ত প্রফেসর বা টেনিউর বিহীন প্রফেসরও অনেক সময় ডিপার্টমেন্ট থেকে Teaching Assistant বা এরকম কাজের জন্য তার গ্রাজুয়েট ছাত্রকে সুপারিশ করতে পারেন। তখন, ছাত্রের জন্য শিক্ষক সরাসরি কোন খরচ না করলেও চলে। তাই প্রতি পাবলিকেশনে জন্য যে টাকার হিসবে দিলেন, সেটা সবসময় খাটবে না। আমি যেটা বললাম, সেটাও সব জায়গায় খাটবে না।

৩। পড়ানোর সময়টা বাদ দিলে, শিক্ষকরা নিজের সময় নিজে মেইনটেন করতে পারেন। টেনিউর পাওয়া প্রফেসররা সামারে ক্লাস না পড়ালে ইচ্ছেমত সময় গবেষণা, ঘোরাঘুরি করে খরচ করেন।

৪। অনেক প্রফেসর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে 'চেয়ার' পদে অনেক ভালো বেতনে যোগ দেন। (অবশ্যই তাদের গবেষণার প্রোফাইলের কারণে)।

আরও কিছু বিষয় একতরফাভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে হল। বিশেষ করে অন্য পেশার বেতন অনেক বাড়িয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনার উল্লেখিত পেশাগুলোর বেতনের তথ্য আমি লিংকস‌হ নিচে দিচ্ছি:

১। সোস্যাল সিকিউরিটি অফিসে ক্লার্কের বেতন আপনি অনেক বাড়িয়ে ৮০-৯০ হাজার বলে উল্লেখ করেছেন। ওখানে স্টার্টিং স্যালারি ৩১-৩৫ হাজারের মধ্যে, আরেকটু উঁচু পদে ৩৯-৪৫ হাজারের মধ্যে। এটা এলাকার উপর নির্ভো করবে। অ্যারাইজোনায় যে বেতন পেলে দিন চলবে, ক্যালিফোর্নিয়াতে সেটা দিয়ে বেঁচে থাকাও দায় হয়ে যাবে।

আর, সোস্যাল সিকিউরিটি অফিসে চাকরি নিয়ে কাজে না গিয়ে লেকে মাছ ধরলেও বেতন দিয়ে যাবে -এটা বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।

২। ট্রাক ড্রাইভারদের বেতন মাইলের উপর নির্ভর করে।প্রতি মাইলে এঁরা ২৮-৪০ সেন্ট (ডলার নয়) আয় করেন । শুধু ড্রাইভার হলে আয় অনেক কম হবে, নিজের পুঁজি থাকলে Owner-operator হলে আয় বাড়ে। ভালো আয় করতে হলে অনেক অনেক বেশি সময় পথে থাকতে হবে।

ট্রাক ড্রাইভারের গড় আয় ৫১ হাজার ডলার
(স্টেট ভেদে কম বেশি হবে)

৩। মটর মেকানিক সবাই ঘন্টায় ৭০-৮০ ডলার আয় করেন না। অনেক শপেই ঘন্টায় ৬০-৬৫ ডলারের মত রাখে দোকানের মালিক। নামী দোকানে ১০০ ডলারও রাখে, কিন্তু সেখানে সবাই কাজ পায় না। SAE সার্টিফিকেশন থাকলে ভালো বেতন পাওয়া যায়, কিন্তু সেটাও সবার নেই।

২০১৩ সালের তথ্য অনুাযায়ী, মটর মেকানিকের গড় বেতন ৩৭ হাজার ডলারের মত।

৪। মেইন্টেনেন্স/রিপেয়ার ওয়ার্কারদের মিডিয়ান হল ‍৩৬ হাজার (২০১৩ সালের তথ্য)।
কার্পেন্টার পান ৪১ হাজারের মত

আর সবশেষে বলব আপনি যে দুটি দেশের তুলনা টানলেন সে দু'টির সামাজিক কাঠামো এক না।

ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা হাসি

পাদটীকা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।