নাটক নির্মাতা দীপঙ্কর দীপনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঢাকা এ্যাটাক’ বছরের শুরু থেকেই অনলাইন প্রকাশনাগুলোতে বেশ ‘বাজ্’ সৃষ্টি করছে। গত ২৯শে ডিসেম্বর মহরত হয়ে গেল- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশের আইজিপি, ডিমপি কমিশনারের উপস্থিতিতে। জানানো প্রয়োজন- সিনেমাটির নির্মাণের সাথে ‘পুলিশ পরিবার কল্যাণ সমিতি’ জড়িত আছে, এর গল্পটি লিখেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সানী সানোয়ার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র বক্তব্য, ‘পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতে বিশেষায়িত এরকম চলচ্চিত্র নিয়মিত হওয়া উচিত।’
ভাল।
দীপঙ্কর দীপনের কাজ বা নামের সাথে পরিচয় ছিল না। নাটক দেখি না। ‘ঢাকা এ্যাটাক’ এর জন্য আনুরাগ কাশ্যপ দীপনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ধরণের সংবাদ পড়ে কৌতূহল হয়। খোঁজ নিলে জানতে পারি ২০০৬ এ বার্লিনে কো-প্রোডাকশান মার্কেটের ট্যালেন্ট প্রজেক্ট মার্কেট বিভাগে দীপনের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘জননী-দ্যা মাদার’ তালিকাভুক্ত ছিল। চমৎকার ব্যাপার। পরবর্তীতে ২০১২ তে দীপন ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ভারতে গিয়ে আনুরাগ কাশ্যপের সাথে তার অধীনে কাজ শুরু করেন। সম্ভবত দুইটি প্রজেক্টও ডেভেলাপমেন্ট স্টেইজে ছিল। কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ এবং ‘আগলি’ সিনেমায় হয়তো আনঅফিশিয়ালি বাহাইন্ড দ্যা সিন কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে থাকবেন। এছাড়াও দেখি তিনি সময় টিভির ‘সিনেমার কথা’ অনুষ্ঠানে ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’, ‘ইনসেপশান’ ইত্যাদি সিনেমা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
২০১৩ এর ডিসেম্বরে ‘১৯২৯ একটি প্রেমগাথা’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেন। প্রযোজক ছিল ‘হৃদয়ের কথা’র পেছনের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পথিক, নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন নিমা রহমান। অভিয়াসলি, সিনেমাটি নির্মিত হয়নি।
এখন ‘ঢাকা এ্যাটাক’। বলা হচ্ছে দেশের প্রথম ‘পুলিশ থ্রিলার মুভি’। মিশা সওদাগর আফসোস করছেন অন্য সিনেমায় ব্যস্ততার দরুন এই সিনেমায় অভিনয় না করতে পারার জন্য। আফজাল হোসেন এর কাছে ‘বিভিন্ন জায়গা ও দায়িত্বশীল মহল থেকে অনুরোধ এসেছে’ এই সিনেমায় পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। আরেফীন শুভ, মাহিয়া মাহী আছেন, শতাব্দী ওয়াদুদও আছেন। আরও অভিনয় করছেন পুলিশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সিনেমাটোগ্রাফার হিশেবে আছেন কলকাতার গুপি ভাগাত (বেলাশেষে, টেইক ওয়ান)। প্রিন্সিপাল ফটোগ্রাফি শুরু করবার আগের মহড়ায় পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণ, ট্যাকটিকাল গিয়ার পরিহিত তাদের ছবি বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
দ্যাট্স অল ভেরি ওয়েল।
তিনটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, পুলিশ পরিবার কল্যাণ সমিতির, ধারণা করি, চলচ্চিত্র প্রযোজনা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। অন্য আরেকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া সম্পর্কে আমার নিজেরই কোন ধারণা নেই। তৃতীয় প্রতিষ্ঠান, যেটি সিনেমাটির পরিবেশকও, থ্রি হুইলারস্ মূলত দীপনেরই প্রতিষ্ঠান, তিনি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
*
এত কথা লিখলাম এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে অন্তত বার্লিনে অংশগ্রহণ এবং আনুরাগের অধীনে কাজ করার সুবাদে নিশ্চয়ই দীপনের সিনেমা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কর্মপন্থার ব্যাপারে ধারণা হয়েছে। এবং পরিচালক তো বটেই, সেইসাথে, অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিশেবে নিশ্চয়ই সিনেমাটির নির্মাণ-প্রক্রিয়ার উপরে সার্বিকভাবে তার ভাল নিয়ন্ত্রণ আছে।
এসব প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন পড়ল কেন?
কারণ সিনেমাটির ফেইসবুক পেইজ, যেটি সিনেমাটি সম্পর্কিত তথ্যাবলি পাবার, সিনেমাটির মুক্তির আগ পর্যন্ত এর নির্মাণ এবং প্রাসঙ্গিক কর্মকাণ্ড অনুসরণ করার এখন পর্যন্ত একমাত্র মাধ্যম- সেটির ব্যাপারে আমি খুবই হতাশ।
একটি সিনেমা, বিশেষ করে মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নির্মিতব্য সিনেমার ক্ষেত্রে ‘প্রচারণা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবং প্রচারণা শুরু হওয়া উচিত একেবারে শুরু থেকেই।
গাইজ! ফার্স্ট ইম্প্রেশানস! কাম অঅন!
একটি সিনেমা-প্রাসঙ্গিক প্রথম যে ভিজুয়াল আমাদের চোখে পড়ে তা দিয়েই আমাদের মূল্যায়ন শুরু হয়ে যায়। সিনেমাটির ব্যাপারে আমাদের মানসিকতা আকৃতি পেতে থাকে। এই জন্য প্রস্তুতি পর্যায় থেকেই সিনেমার প্রচারণার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়।
সিনেমার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য টিম রাখতে হয়, যারা প্রকাশিতব্য সকল প্রোমোশানাল ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজ করবে, প্রোডাকশান স্টিল, সিনেমার দৃশ্যের স্থির চিত্র, প্রোমোশানাল পোস্টার, টিজার, ট্রেইলার ইত্যাদি। শুরু থেকেই, সিনেমাটির টোনের সাথে যাতে সব প্রকাশিতব্য ম্যাটেরিয়ালের সামঞ্জস্য থাকে, ম্যাটেরিয়ালগুলো যাতে ভিজুয়ালি কনসিসটেন্ট মানের হয়- তা নিশ্চিত করতে হয়।
এক্ষেত্রে ঢাকা এ্যাটাক খুবই কাঁচা কাজ করছে। সিনেমাটির ফেইসবুক পেইজটি দেখে মনে হচ্ছে সেটি সিম্পলি কোন মহল্লার সিডি’র দোকান প্রযোজিত টিভি নাটকের ফেইসবুক পেইজ।
পেইজের এবাউট সেকশানে কোন তথ্যই নেই। প্রযোজক কে? পরিচালক কে? অভিনেতা-অভিনেত্রী কারা? কাহিনী সংক্ষেপ? জন্রা কি? কবে মুক্তি পাবে? কোন তথ্যই নেই! কেবল সংক্ষেপে বলা আছে, ‘দিস ইজ দ্যা ফার্স্ট এভার ক্যাটাগোরাইজ্ড বাংলাদেশী কপ থ্রিলার মুভি। কামিং সুন।’
থাকল ফোটোজ এবং ভিডিওজ সেকশান। ফোটোজ সেকশানের কথায় পরে আসছি। ভিডিওজ সেকশানে একটি মাত্র ভিডিও। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির ৩২ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ যেটাতে বলা হচ্ছে শুভ আর মাহী ঢাকা এ্যাটাক এর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আর দেখানো হচ্ছে মাহি-শুভ'র সিনেমা ‘অগ্নি’র অংশবিশেষ। ভিডিওটি প্রতিবেদকের কথার মাঝখানেই আচমকা ফেইড আউট হয়ে থেমে যায়। ভিডিওটির উপরে আবার কোন এক ‘সিয়াম মিয়া’র ফেইসবুক প্রোফাইলের ঠিকানা ওয়াটারমার্ক করা। আই মিন . . . হোয়াট দ্যা ফাক!
আর ফোটোজ সেকশানের ফোটোগ্রাফগুলো। ওহ্ মাই গঅড! ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছবি, নিম্নমানের অদক্ষ হাতে তোলা ছবি, ঝাপসা ছবি, অপমানজনক মানের এডিট করা ছবি, হাবিজাবি অদ্ভুতুড়ে সব ছবি। ইট্জ টোটাল ক্যায়ওস! চূড়ান্ত রকম আনপ্রফেশানাল। কারও ব্যক্তিগত ফেইসবুক প্রোফাইল এমন হতে পারে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় করে নির্মাণ করা হচ্ছে এমন একটি থ্রিলার সিনেমার ফেইসবুক পেইজের এই মান একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা ২০১৬ সাল।
কিছু নমুনা দেওয়া প্রয়োজন।
এই আকারের ছবি-
নুসরাত ফারিয়া। কারও মোবাইলের স্ক্রিনশট। রাত বাজে ১০টা। চার্জ আছে ৬০%।
রেদওয়ান রনি'র চোরাবালির পোস্টার,তার উপরে ছাপ্পর মারা বিডিমিউজিকব্লাব্লা। কেন? হোয়াই? ঠ্যাল মি!
ফায়ার 'বি' গ্রেইড।
চমৎকার সম্পাদনা।
আরও একটি চমৎকার সম্পাদনা।
ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডকৃত র্যান্ডম ছবি।
আরও একটি র্যান্ডম ছবি। হে হে।
এখানে পোস্টার বানাতে গিয়ে মাহী'র আরেকটি সিনেমা শাওনের 'কৃষ্ণপক্ষ' এর প্রোডাকশান স্টিল থেকে কেটে মেরে দিয়েছে। কপিরাইট ভায়োলেশান। ইয়া, হোয়াট-এভার!
আরেকটি পোস্টার?! কি এটা? ট্রায়াল? মানে কি? পোস্টার বানান কি? বিভিন্ন যায়গা থেকে মেরে জোড়াতালি দিয়ে-দিয়ে-দিয়েছে।
এটা একেবারে হলিউড থেকে মেরে দিয়েছে। ক্যাথ্রিন বিগেলোউ'র দ্যা হার্ট লকার এর স্টিল।
বিশেষ করে এই অন্য সিনেমার কপিরাইটেড ম্যাটেরিয়াল যথেচ্ছা ব্যাবহার করবার কাণ্ডটি অত্যন্ত আনপ্রফেশানাল হয়েছে। এটা ঠিক, কপিরাইট ভায়োলেশানের জন্য কেউ মামলা করতে আসবে না, কিন্তু প্রযোজক-নির্মাতারা নিজেরাই যদি কপিরাইট ভায়োলেশান প্রসঙ্গে সচেতন না থাকেন তাহলে পরে তাদের সিনেমা পাইরেটেড হয়ে গেলে কোন মুখে প্রতিবাদ করবেন? দিস এক্ট, ইট ওয়াজ সো পেটি . . . কি বলব!
*
এখানে বলে রাখা দরকার, পেইজটির একটি স্ট্যাটাস এবং আপলোডকৃত কিছু ছবি থেকে ধারণা পাওয়া যায় মূলত সিনেমাটির গল্পকার সানী সানোয়ারই পেইজটি চালাচ্ছেন। ধারণা করি, যেহেতু তিনি পুলিশ কর্মকর্তা, প্রযোজক হিশেবে নাম থাকলেও, সিনেমা প্রযোজনা সম্পর্কে তার ধারণা কম বা নেই বললেই চলে। তিনি হয়তো তার গল্প থেকে সিনেমা হচ্ছে তার দরুন একরকম ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাস আবেগ থেকেই যতটুকু পারেন করে পেইজটি চালাচ্ছেন। কিন্তু সিনেমা তো মামা-বাড়ীর-আবদার নয়! বিশেষ করে যেখানে, সেই আগের কথা- লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে!
এর সম্পূর্ণ দায়ভার নির্মাতা দীপনের ঘাড়ে বর্তায়। আনুরাগ কাশ্যপের সাথে গ্যাংস অফ ওয়াসেপুরের কাজে আনুরাগের সাম্প্রতিক শিষ্য নির্মাতা নিরাজ ঘেয়ওয়ানও ছিলেন, যার ‘মাসান’ গত ‘কান’ থেকে দুটি পুরস্কার নিয়ে ফিরেছে। সিনেমা জগতের খোঁজখবর রাখার অভ্যাস থেকে থাকলে(থাকা উচিত) এবং আনুরাগের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে মাসান সম্পর্কে দীপনের জানার কথা। মাসানের ফেইসবুক পেইজটিতে কি তিনি একবার নজর বোলাননি কখনও? ২০১৬ সালে এসে একজন আধুনিক নির্মাতা তার দর্শকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটি সম্পর্কে এমন উদাসীন থাকবেন কেন? তিনি যদি নির্মাতা হিশেবে সিনেমার ছোট থেকে বড় প্রতিটি দায়িত্ব যত্ন এবং দক্ষতার সাথে এক্সিকিউট না করেন, তাহলে দর্শকের কাছে তিনি কি আশা করেন?
ঢাকা এ্যাটাকের প্রযোজকেরা কি সিনেমাটির প্রচারণা বিষয়ে কিছুই ভাবেননি? কোন টিমকে কি এখনও কাজ গোছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি? কোন মার্কেটিং এজেন্সিকে? দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি আছে কতগুলো? কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ফেইসবুক পেইজ চালানোর জন্য এজেন্সিগুলো পুরস্কার পেয়ে বেড়াবে আর একটি সিনেমা- যার নির্মাতারা বাংলাদেশকে শিক্ষিত উন্নত নতুন ধরণের সিনেমা দিতে চায়, বাংলাদেশের সিনেমার হালচাল পাল্টে দিতে চায়- সেটির ফেইসবুক পেইজের এই দশা রয়ে যাবে?
দুঃখজনক। এত অদক্ষ এত অলস এত আনস্মার্ট হলে কিভাবে কি করবে তারা?
প্রেসের সাথে কথাবার্তা বলতে গিয়েও অভিনেতারা লেজেগোবরে করে ফেলছেন। আরেফীন শুভ বলছেন তিনি মনে করেছিলেন তার চরিত্রটি এসআই এর। শুটিংয়ের পরে তিনি জানতে পেরেছেন তার চরিত্রটি আসলে এ্যাসিস্টেন্ট কমিশনারের। এর মানে কি? তিনি কি চিত্রনাট্য পড়েন নি? তিনি নিজেই জানেন না সিনেমায় পুলিশ বাহিনীতে তার র্যাঙ্ক কি? ওদিকে শতাব্দী ওয়াদুদ তো সরাসরি খুব সরলভাবে কাহিনীই বলে বসেছেন। দীপঙ্কর দীপন অভিনেতাদেরকে শুটিংয়ের কোন ছবি আপলোড করতে নিষেধ করেছেন, প্রেসের সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে ব্রিফ করেননি? নাকি করেছেন হয়তো, আর শতাব্দী ওয়াদুদ ভেবেছেন এইটা তো বাংলাদেশ, সো, হোয়াট দ্যা হেল!
যেহেতু এখনও ছবির দৃশ্য সারফেস করা শুরু করেনি, তাদের এখনও সুযোগ আছে। দ্রুত ফেইসবুক পেইজটি ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে কোন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির হাতে পেইজটি ধরিয়ে দিয়ে প্রফেশনাল ভাবে পেইজটি চালানো উত্তম হবে। কোন প্রোডাকশান স্টিল ফটোগ্রাফার কি জড়িত নেই? ভালো মানের প্রোডাকশান স্টিল দিতে হবে। কোন গ্রাফিক ডিজাইনার কি জড়িত নেই? ভালো মানের পোস্টার ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক গ্রাফিক উপস্থাপন করতে হবে। সিনেমার কালার টোন বিষয়ে কি এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি? প্রথম স্টিলগুলো যখন সারফেস করবে সেগুলোর কালার টোনের- সিনেমার ফাইনাল আউটপুটের সাথে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। পেইজের টাইমলাইনটি প্রফেশনাল দেখতে, স্মার্ট হতে হবে, জগাখিচুড়ি নয়। এবাউট সেকশানে সকল তথ্য আপডেটেড থাকতে হবে।
দীপন, শুভ এবং মাহীকে ধারণা করি কেবল তাদের অভিনয় প্রতিভার জন্যই নয়, তাদের পরিচিত মুখের কথা ভেবেও নিয়েছেন সিনেমায়। সকল শ্রেণীর দর্শকের জন্য বিনোদনমূলক উন্নত সিনেমা নির্মাণ করতে চান। ভাল কথা। সকল শ্রেণীর দর্শকের কাছে স্মার্ট আধুনিক মার্কেটিং ক্যাম্পেইন বোধগম্য হবে না, ঠিক। আমি কোন শ্রেণীর মানুষকে অপমান করতে চাইছি না, বাস্তবতা স্টেইট করছি। কারও কারও জন্য একটি রঙচঙা পোস্টারই যথেষ্ট। কিন্তু যে বিশাল একটা শিক্ষিত(তুলনামূলকভাবে) 'হলিউডি-বলিউডি-ফ্ল্যাশি-সিনেমা-আইএমডিবি-ইত্যাদি-দেখে-অভ্যস্ত' শ্রেণী সারাদিন ফেইসবুকে পরে থাকে, তাদের উদ্দেশ্যে কোন স্মার্ট ক্যাম্পেইন না ছুঁড়েই পার পেতে চাওয়া নির্মাতাদের নতুন সিনেমা উপহার দেবার, বদলে দেবার ইচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, আমাদেরকে সন্দিহান করে তোলে।
দর্শক কেন এমনি এমনিতেই একটি সিনেমা দেখতে হলে চলে যাবে? সে কি বাধ্য? না। তাকে হলে টানার জন্য নির্মাতারা কতটুকু এফর্ট দিচ্ছেন? দর্শককে তারা কি দেখিয়ে কনভিন্স করবেন টিকেটের টাকাটা ব্যায় করতে?
*
২০১৬ সালে এসে সব ‘নতুন দিনের সিনেমা’র প্রযোজক-নির্মাতাদেরই আরও আরও স্মার্ট হওয়াটা- উচিত। এগুলো খুব বিশেষ-রকম কোন পদক্ষেপ নয়। স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর। অশিক্ষা-অলসতা-অদক্ষতা-উদাসীনতা দিয়ে কেউ কোনদিন একটি দেশের সিনেমার হালচাল বদলে দিতে, আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠতে পারবে না।
ফ্যাট চ্যান্স।
*
সিনেমা দেরীতে
মন্তব্য
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
*
সিনেমা দেরীতে
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
রাইট!
*
সিনেমা দেরীতে
প্রযোজক কি ভাবছেন এসব না করেও তার টাকা উঠে আসবে?
পরিস্থিতিটা আসলে এতই ক্যাওটিক যে প্রযোজকেরা আদতেই কি ভাবছেন তা গেস্ করা মুশকিল, কারণ, যা-ই করা হোক না কেন, হল-পরিস্থিতি পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত, টাকা কখনই উঠে আসবে না।
তবে, এ্যাট সাম পয়েন্ট, প্রপার প্রচারণা প্রক্রিয়ার চর্চা তো শুরু হওয়া দরকার। বিশেষ করে তাদের দ্বারা, যারা দাবি করছেন তারা ‘পরিবর্তন’ এর ইচ্ছা বুকে নিয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন।
*
সিনেমা দেরীতে
টাকা উঠে আসার সম্ভাবনা না থাকলে তারা বিনিয়োগ করছেন কেন?
ওয়েএএল . . . উত্তরটা একটু উইয়ার্ড হবে। বাংলাদেশে আসলে বর্তমানে ‘প্রযোজক’ বলতে তেমনভাবে কেউ/কিছু নেই।
কেউ কেউ বিনিয়োগ করেন শখে, একটি সিনেমার পোস্টারে তার নাম থাকবে প্রযোজক হিশেবে, তিনি সেটা বাকী জীবন তার বাসার ড্রয়িংরুমে ফ্রেইম করে ঝুলিয়ে রাখবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি এমন প্রযোজকের কথাও জানি যিনি পরিচালককে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন, এমন একটা ভাল কিছু করতে যাতে মানুষ তার নাম মনে রাখে!
কেউ কেউ প্রযোজনায় আসতে চান, হয়তো একটি সিনেমায় লাভ হলে আরও বিনিয়োগ করবেন। কিন্তু তাদের ‘প্রযোজনা’ কিংবা বাংলাদেশের সিনেমার পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা না থাকায় প্রথমবারেই বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পিছু হটেন।
কারও কারও আবার অন্যান্য ব্যবসা থেকে মেলা টাকা আছে, তাদেরকে পরিচালকেরা ম্যানিপুলেট করে প্রযোজনায় টেনে আনেন এবং এক্সপ্লয়েট করেন। এসব মিলিয়েই চলছে।
পুরো ব্যাপারটিই আদতে একটি ওয়ান-টাইম ডিলের মত হয়ে গেছে।
আর নিয়মিত প্রযোজক, যেমন জাজ মাল্টিমিডিয়া, তারা একটি দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা এবং আশা নিয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছেন, কিন্তু তাদের সিনেমাও এখনই লাভের সম্মুখীন হচ্ছে না। এখন তারা সারভাইভ করতে পারছেন এবং মোটামুটি নিয়মিত বিনিয়োগ করে যেতে পারছেন কারণ, তারা তাদের প্রজেক্টর(বিশাল সংখ্যক) ভাড়া, ক্যামেরা ভাড়া, এডিটিং প্যানেল ভাড়া, ডিসিপি ক্রিয়েশান সার্ভিস ইত্যাদি থেকেও আয় করতে পারছেন।
এ্যস আই মেনশান্ড আরলিয়ার, ইট্স ক্যায়ওস!
*
সিনেমা দেরীতে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
*
সিনেমা দেরীতে
জনাব, জানিতেই বড়ই ইচ্ছা করে __
'সিনেমাখানা' দেরিতে কেন?
কখনও জানতে পারলে, জানাবেন প্লিজ।
*
সিনেমা দেরীতে
(আচ্ছা, দাগ দেয়া ব্যাপারটার অভ্যাস হবে কবে?)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আন্ডারলাইন করা বা বোল্ড করা হলে পাঠকের লেখা স্ক্যান করে চলে যাবার প্রবণতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওসবের অনুপস্থিতিতে, গুরুত্বপূ্র্ণ কিছু বলা হচ্ছে নাকি তা জানতে মনোযোগ সহকারে প্রতিটি বাক্য পড়তে হয়। অবশ্য, এ্যাট দ্যা এন্ড অফ দ্যা ডে, ইটস আ পারসোনাল থিং।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ওহ্ শিট! আমি সম্পূর্ণ ভুলভাবে বুঝেছি আপনার প্রশ্নটি! . . . আমিও তাই ভাবছিলাম! আমার ইন্টারপ্রেটেশানটা সামহাউ রং মনে হচ্ছিল! আই এপোলোজাইজ।
আপনার প্রশ্নের উত্তরে- আই গেস, কপিরাইটেড ম্যাটেরিয়ালকে এমন সিগনিফিক্যান্টলি লাভজনক(এবং সম্মানজনক) হয়ে উঠতে হবে যাতে কপিরাইট ভায়োলেশনের ফলে রাইট ওউনার এর সাব্স্ট্যানশিয়াল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বার বাস্তবতা তৈরী হয়। যে পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিশেবে পাবার সম্ভাবনা আছে, মামলা চালানোর খরচ যাতে তার থেকে বেশী না হয়ে ওঠে। সেটা হয়ত রাইট ওউনারকে মামলায় যেতে উদ্বুদ্ধ করবে!
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
ঠিকাছে, আমরা আমরাই তো!
হ, তয় কেউ শুরু না করলে হইব ক্যাম্নে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই প্রশ্নের উত্তর হল, ওই যে- !
*
সিনেমা দেরীতে
*
সিনেমা দেরীতে
ধ্রুব
নিয়মিত পড়ছি। চলুক।
ধন্যবাদ। চলবে।
*
সিনেমা দেরীতে
গরিব দেশের নতুন ডিরেক্টরের কাছে অত কিছু আব্দার করলে হয়?
০২
জিনিসটা কিন্তু দারুণ হইছে। দীপনকে মেসেজে টুকেও দিয়েছি। কিছু কিছু জিনিস হয়ত নিজে সামলাতে পারবে। কিন্তু যেইগুলাতে পয়সার বিষয় সেইগুলা কী করবে জানি না
গরীব দেশ প্রসঙ্গে - সিনেমা নির্মাণের অর্থনৈতিক দিক এবং এক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা আছে। আমি কখনও বাজেটের সীমাবদ্ধতা ঘেঁষা বিষয়ে সমালোচনা করব না। আমি যেসব বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছি তার সবই মানসিকতাজাত সমস্যা। তা কাটানোর জন্য সদিচ্ছা, চেষ্টা, একটা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ লাগে কেবল।(বই, গ্রন্থাগারের দিকে আর গেলাম না)
পয়সার বিষয়ে - কোন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিকে দিয়ে বৈশাখে সিনেমা মুক্তির আগের তিন-চার মাস এবং সিনেমা চলাকালীন সময়টিতে ফেইসবুক পেইজ চালানো, গ্রাফিক ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন করা, ওয়েবসাইট বাদ দিলাম- খুব ব্যায়বহুল নয় একটি বাণিজ্যিক সিনেমার প্রযোজকদের জন্য, কিন্তু খুব জরুরি।
নতুন ডিরেক্টর প্রসঙ্গে - উনি তো নতুন পরিচালক নন। অফিশিয়ালি সিনেমা বানাচ্ছেন প্রথমবার, এটা ঠিক। কিন্তু নাটক বানানোর অভিজ্ঞতা তো দীর্ঘদিনের। সারা পৃথিবীতেই আজকাল নতুন নতুন তরুণ পরিচালকেরা উনার চেয়ে অনেক কম ব্যাবহারিক অভিজ্ঞতা নিয়েই চমৎকার সিনেমা বানাচ্ছেন। তাদের ক্ষেত্রে মানসিক অভিজ্ঞতাটা বেশী কাজে লাগছে। আমাদের মানসিক অভিজ্ঞতা অর্জনের পথে তো কোন বাঁধা নেই।
*
উনাকে এটিও জানাবেন, আমার লেখা পড়ে যাতে মনে আঘাত না নেন। কোন কোন যায়গায় কঠিনভাবে সমালোচনা করলেও, আমার মন খোলা, আমি কোন রিলেন্টলেস সিনিসিস্ট নই। গরীব দেশ হিশেবে হাই প্রোডাকশান ভ্যালু দেখাতে না পারলেও, সিনেমায় যদি দেখি মানসিকভাবে সর্বোচ্চ করেছেন, এ্যাপ্রিসিয়েশান এর বন্যা বইয়ে দেব।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভালো লিখেছেন। এখন এটা নির্মাতাদের নজরে পড়লেই হয়। নয়ত যেমন অগোছালো চলছে, তেমনই চলবে হয়ত!
যাই হোক, আপনার বাংলা তো বেশ ভালো। পড়তে যেয়ে মাঝেমাঝে ওরকম ইংরেজিতে একটু ধাক্কা লাগল তাই।
সিনেমা নিয়ে অনেক ভালোলাগা/আগ্রহ আছে মনে হচ্ছে আপনার। নিয়মিত এই বিষয়ে লেখা আসবে আশা করি।
নির্মাতাদের চোখে পড়লে ভাল (যেমন মাহবুব লীলেনের পরিচালককে পাঠানো ব্যাক্তিগত মেসেজের কল্যাণেই হয়ত, ঢাকা এ্যাটাকের পেইজের কিছু কিছু উন্নতি হয়েছে দেখছি), তবে তার চেয়েও জরুরি হল আধুনিক দর্শকের এ্যাওয়্যারনেস, ডিম্যান্ড বৃদ্ধি পাওয়া। দর্শকের শক্ত দাবি নির্মাতাদের কর্মকাণ্ডের উপরে পজেটিভ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি।
ভাষার ব্যাবহার প্রসঙ্গে অনেক বাসি একটি যুক্তি উপস্থাপন করব- কিছু কিছু ভাবনা/অনুভূতি ইংরেজীতে যতটা প্রিসাইসলি ব্যাক্ত করা যায়, বাংলায় ততটা করবার উপায় আমার জানা নেই, আমার বাংলা আবার অতটাও ভাল নয়! যেমন ‘ফ্যাট চ্যান্স’ ইডিয়মটি যতটা ধাক্কামূলক, কড়া, বাংলায় এর কাছাকাছি কি বলা যেতে পারে?
নিয়মিত লেখার আশা রাখি। ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
তার মানে আপনার লেখায় কিছু কাজ হচ্ছে।
. . . ওয়েএএল, অতীব সামান্য, বাট্ হ্যাঁ, আই গেস!
*
সিনেমা দেরীতে
ভাল লাগল লেখাটি। প্রথমে ভাবলাম কোন মুভি রিভিও। পরে দেখলাম মুভি মার্কেটিং ট্যাকটিকস এনালিসিস। ভিন্ন স্বাদ অবশ্যই।
#নিটোল আরন্যক
*
সিনেমা দেরীতে
এটা গতকালই পড়ে গেছি। বেশ প্রাণবন্ত লেখা। আপনার আগের লেখাটার চেয়ে এটাকে বেশি ভালু
পেলাম। আগেরটায় নেতিবাচক ভাবটা বেশি ছিল। লিখতে থাকুন ভাই। এতে ইতিবাচক কিছু ঘটবে বলেই
বিশ্বাস। লেখালেখি জারি থাকুক। শুভকামনা।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
নতুন মন্তব্য করুন