যাহোক নিজের কথায় আসি। এই প্রকল্পের প্রায় তিনশ পাতার EOI রিপোর্ট এর সারসংক্ষেপ বোঝার চেষ্টা করলাম। যেটা বুঝলাম তা বলার চেষ্টা করি। তবে তার আগে কিছু বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালোঃ
১) ঢাকার মেট্রোটি মাটির তলদেশ দিয়ে যাবে না। উত্তরা অংশের ৩.৯ কিমি যাবে মাটির সমতলে আর বাকি ১৬.২ কিমি যাবে উড়াল পথের মত মাথার উপর দিয়ে।
২) EOI রিপোর্ট অনুযায়ী viaduct অর্থাৎ সহজ অর্থে পিলার গুলো থাকবে গণপরিবহনের কাজে ব্যবহৃত রাস্তার উপরে। মোট ১৬ টি স্টেশন থাকবে। স্টেশন গুলো হবে দৈর্ঘ্যে ১৮০ মিটার আর প্রস্থে জায়গাভেদে ২০-২৬ মিটার।রিপোর্টে যেমনটা বলা আছেঃ
৩) রিপোর্টে দেখতে পাচ্ছি শাহবাগ এর পর টিএসসি এবং এরপর প্রেসক্লাব এর সামনে হবে মেট্রো স্টেশন।
৪) রিপোর্টে মেট্রোরেল স্থাপন এবং পরবর্তিতে কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে উৎপন্ন শব্দ এবং কম্পন নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শব্দ ও কম্পন সৃষ্ট দূষণের প্রভাব কতদূর পর্যন্ত যাবে সেটিও বলা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে নিকটবর্তী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দোয়েল চত্বরে অবস্থিত মোঘল আমলের ঢাকা গেট, টিএসসির গ্রীক মনুমেন্ট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর তিন নেতার মাজার আর মিরপুর DOHS এর নিকটবর্তী হিন্দু মন্দির। বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা গেইট এর কথা।
এবার আসি পক্ষ বিপক্ষের বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে।
ঢাবির শিক্ষার্থীদের আশংকা হচ্ছে যেহেতু রিপোর্টে বলা হয়েছে রাস্তার উপর দিয়ে যাবে এই মেট্রোরেল কাজেই টিএসসি চত্বরের রাজু ভাস্কর্যের ক্ষতি হবে। আমার মতে এই আশংকা অত্যন্ত যৌক্তিক। তবে উপায় হতে পারে টিএসসির মোড়ে লাইনটিকে রাস্তার একপাশ বরাবর নিয়ে যাওয়া অর্থাৎ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বর্তমান গেইট এর উপর দিয়ে। সবচেয়ে বেশি আশংকা হচ্ছে দোয়েল চত্বর নিয়ে যেহেতু ঢাকা গেইট, তিন নেতার মাজার, বিজ্ঞান লাইব্রেরি, সমন্বিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার এগুলো দোয়েল চত্বরের খুব নিকটবর্তী ।কাজেই শব্দ ও কম্পন দূষণ হবেই বলা চলে। তবে শব্দ প্রতিরোধক ব্যবহার করে এবং সতর্কতার সাথে ধীর গতিতে চালিয়ে এই ক্ষতি হয়তো কমানো যাবে। নিচের ছবিটি, যেটি নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের প্রচারিত animation থেকে, আসলেই উদ্বেগজনক যেখানে দেখা যাচ্ছে ঢাকা গেইট এর অংশবিশেষ এর উপর দিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল।
শিক্ষার্থীদের বাকি উদ্বেগ সমূহ- মঙ্গল শোভাযাত্রা, বইমেলা, চারুকলার দেওয়াল ভাংগা একটু আবেগতাড়িত বলেই মনে হচ্ছে।কারণ মেট্রোরেল এর লাইন যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটু ভেতর দিয়ে যায় তবে এই সমস্যাগুলো হবে না বলেই ধারণা করছি। জনসমাগম সংক্রান্ত আর একটি উদ্বেগ আছে শিক্ষার্থীদের, সেটিও অত্যন্ত যৌক্তিক। তবে তা বিশদভাবে পরে আলাপ করবো যখন আমরা বিদেশে মেট্রোরেল চড়া অভিজ্ঞদের নিয়ে কথা বলবো।
দ্বিতীয়পক্ষের সরকার সমর্থকরা দেখতে পেয়েছেন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বামমনা কিছু শিক্ষক জড়িত হয়েছেন। কাজেই তারা ধরে নিচ্ছেন এই আন্দোলন যথাবিধি সরকার বিরোধী। তাদের এই ধারণার পালে আরো বেশি হাওয়া লাগে যখন সেইসব শিক্ষকেরা পুরানো আমলের মত গাছ ধরে কান্নাকাটি করা টাইপ কথা বলেন। তাই সমর্থকেরা চাইছেন ঘরে ঘরে চাকুরী দেওয়ার মত করে মেট্রোরেল যেনো দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে তার সিটি বাজিয়ে যায় তেমন ব্যবস্থা সরকার নিক। তাদের এই অন্ধ অবস্থানটা নিয়ে আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি না। তবে তারা একটা কাজের কথা বলছে সেটি হলো শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের দিকে লাইন ঘুরিয়ে নিতে গেলে দুটো প্রায় ৯০ ডিগ্রীর বাঁক নিতে হবে যেটি অনেক ঝামেলার। তবে বিজয় সরণি থেকে ফার্মগেট গামী অংশটিতেও প্রায় একই মানের বাঁক আছে বলে রিপোর্ট থেকে নেওয়া ২নং চিত্রে দেখতে পাচ্ছি।
এবার তৃতীয় দলের কথায় আসি। এরা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাসের সেইসব শিক্ষকের মত যারা কোন কিছু পেলেই বলা শুরু করে, “1968 এ আমি যখন ডারহাম (বা অন্য কোন জায়গা) এ পিএইচডি করছিলাম...।” যাহোক এই গোত্রভুক্তরা বলতে চাইছেন ইউরোপ,আমেরিকার লোকজন মেট্রোতে বসে বই পড়তে পারলে ঢাবির শিক্ষার্থীরা কেন দশ হাত দূরে লাইব্রেরীতে পারবে না। এরা আসলে মেট্রোর ভেতরে বসে বই পড়া আর মেট্রোর বাইরে দাঁড়িয়ে বই পড়া এক করে ফেলছেন। যদিও সাধারণ জ্ঞান বলে দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। নিজের অভিজ্ঞতা এখানে এসে একটু বয়ান করি। যেটা জনসমাগম সংক্রান্ত শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ নিয়েও আলোকপাত করবে। স্টকহোম, ব্রাসেলস, প্যারিস আর লন্ডনে মেট্রো, সাবওয়ে, টিবানা নানান নামে এই দ্রুতগতির বাহনটি চড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। স্টকহোম বাদে বাকি তিন শহরের ক্ষেত্রে বলা চলে মেট্রোর স্টেশনগুলো এক অর্থে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং আর এক অর্থে সুন্দর শহরগুলোর মাঝে সবচেয়ে নোংরা জায়গা। বিশেষত প্যারিস এর কথা মনে পড়ছে। স্টেশনগুলোর নামকরণে যেমন ইতিহাস উঠে এসেছে তেমনি দেয়ালে দেয়ালে চিত্রকর্ম আর পথজুড়ে গিটার, বেহালা কিংবা একর্ডিয়ন এর সুরধ্বনি। তবে চোখ আর কানের এই বিলাস নাকের ক্ষেত্রে জোটেনি। কারণ প্রায় ৮০ ভাগ স্টেশনই মনুষ্য কিংবা সঙ্গে থাকা প্রাণিজ মুত্রের দুর্গন্ধে ভরপুর ছিল।
এবার নিজের সিদ্ধান্তের কথায় আসি। বিমান বাহিনী এই প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে না ভাবলেও আমি ভাবতে চাইছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সময়মত তার বিরোধিতার কথা বলেনি এই অভিযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে আমার জানার কোন উপায় নাই আদৌ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এই ব্যাপারে জানানো হয়েছিল কিনা বা জানালেও কতদূর। কারণ রিপোর্টটি জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার তারিখ নভেম্বর ২০১৫। সেই সাথে আমি মনে করছি কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের কাছে পরিষ্কার তথ্য নিয়ে হাজির হলে মেট্রোরেল এর বর্তমান রুটটিই যথেষ্ট আশার সঞ্চার করতে পারে।
কেমন হতে পারে সেইসব কার্যকরী ব্যবস্থা? হতে পারে এমন-
১) দোয়েল চত্বরে কিংবা টিএসসি তে কোন স্টেশন না রাখা। শুধুমাত্র শাহবাগের স্টেশনই যথেষ্ট।
২) শাহবাগ হতে হাইকোর্ট পর্যন্ত অংশে শব্দপ্রতিরোধক ব্যবহার করা, সেই সাথে কম্পন কমানোর জন্য ধীরগতি নিশ্চিতকরণ এবং কম কম্পন সৃষ্টকারী ট্র্যাক ব্যবহার করা যেমনটা রিপোর্টে বলা হয়েছে।
৩) শাহবাগ থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত অংশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এর একটু ভেতর দিয়ে লাইন নিয়ে যাওয়া।
সর্বশেষ কিছু স্বপ্নের কথা বলি।
১) শিক্ষার্থীদের জন্য মেট্রোরেল এর টিকেট হবে অর্ধেক মূল্যের। যদি একটি স্মার্টকার্ড দেওয়া হয় টিকেট হিসেবে তবে সেটি একইসাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষায়তনের আইডি কার্ড হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ঢাকার সকল শিক্ষার্থীদের একটা ডাটাবেজও হয়ে যাবে।
২) শাহবাগের স্টেশন এবং হাইকোর্ট স্টেশন এর পাশে থাকবে একটি করে সাইকেল স্ট্যান্ড। যেখানকার সাইকেলগুলো শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা তাদের স্মার্টকার্ড ব্যবহার করে তালামুক্ত করতে পারবে।পরবর্তিতে অন্য ষ্টেশনগুলোকেও এই আওতায় আনা যেতে পারে। সেই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজকে নিয়ে সাইকেল চালানোর ট্র্যাক গড়ে তোলা। এতদঞ্চলের প্রশস্ত ফুটপাতকেই একাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ফুটপাতে মোটর সাইকেল উঠিয়ে দেওয়া অসভ্য লোকগুলোকে যেমন বিরত রাখা যাবে তেমনি শৌচাগার হওয়া থেকেও বাঁচানো যাবে ফুটপাতগুলোকে।
৩) সকাল সাতটা হতে আটটা পর্যন্ত এবং বিকেল চারটা হতে পাঁচটা পর্যন্ত মেট্রোরেলগুলোতে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা চড়তে পারবে। এতে করে গ্রামীন ফোন আর বিআরটিসির উদ্যোগে চালিত নীল স্কুল বাসগুলোর (এখন নিশ্চয় বন্ধ হয়ে গেছে)মুগ্ধতা যেমন ফিরে আসবে তেমনি রংরুটে চলা লাল বাসের বিড়ম্বনাও কমবে।সেই সাথে শিক্ষায়তনের বাসগুলোর গায়ে “অমুক প্রধানমন্ত্রীর উপহার” নামক উদ্ভট ব্যাপারটাও কম চোখে পড়বে।
৪) সকাল আটটা হতে নয়টা এবং পরে পাঁচটা হতে ছয়টা পর্যন্ত মেট্রোরেল গুলো সচিবালয় এর জন্য বরাদ্দ রাখা। সেই সাথে উক্ত সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে সচিবালয় এর যেকোন গাড়ি প্রবেশ বন্ধ রাখা।এতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অভ্যন্তরে যানজট একেবারেই কমে যাবে।
৫) ঢাকা গেটটিকে স্বচ্ছ শব্দ প্রতিরোধক দিয়ে মুড়ে দেওয়া এবং দর্শনীয় করে তোলা।এখন পর্যন্ত হলুদ রঙ করা ছাড়া ঢাকা গেট এর আর কোন যত্ন নেওয়া হয় বলে মনে হচ্ছে না। সেই সাথে নিকটবর্তী বিজ্ঞান লাইব্রেরী এবং অন্যান্য ভবনে শব্দনিরোধন নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী এটি করবেন বলেছেন, আশা করি হেডফোনে গান না শুনে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষকের কথা শুনতে পারবে।
আজ এতোটুকুই।
-সুব্রত দাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য
EOI--> EIA
রিপোর্টি এখানেঃ
http://www.dmtc.org.bd/contents/uploads/media/2015/12/02/565ecda8938cb-Environmental-Impact-Assesment-for-MRT-Line-6-Project.pdf
Subrata Das
লেখাটা এখানে দিয়ে ভাল করেছিস।
ধন্যবাদ শেহাব। তুই বলাতে দিলাম
হা হা হা! মেট্রো লাইন নিয়ে আবার স্টেশন না করলে লসের উপর ডাবল লস। তথাকথিত ভাইব্রেশন তো হবেই, মাঝখান থেকে মেট্রো স্টেশনের সুবিধাটাও পাবে না স্টেশন না থাকায়। আর মেট্রো স্টেশন চাইলেই পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। স্পেশালি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যে স্টেশন সেটা তো যায়-ই।
আর উৎসব সঙ্ক্রান্ত প্রচলিত আপত্তিটা কি? বিভিন্ন মেলা, পালা পার্বণে মানুষের আসাযাওয়া বরং আরো সহজে এবং ইফিশিয়েন্টলি হবে স্টেশন থাকলে। নাকি ঢাকাভার্সিটি চায় না যে দেশের মানুষ, বই মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা ইত্যাদিতে অংশ নিক?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
৯০° এংগেলের কারণে খামারবাড়ির মোড়ে কয়েকটা বিল্ডিং ভাঙ্গার প্রয়োজন পড়ছে। শাহবাগ মোড়ে করতে গেলেও একই সিচুয়েশন হতে পারে। কয়েকবছর আগে পত্রিকাতে কিছু পুরাতন রিপোর্ট আসছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি যে, মতস্য ভবনের রুটটাকে বাদ দেয়া হয়েছিলই মূলত এই নকশাগত জটিলতার কারণে।
আর ভিডিওটা নিয়ে আসলে কনফিউজড। কারণ এলানমেন্ট যদি মিড অফ রোড ধরে যায়, তাহলে ঢাকা গেইট থেকে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্ব থাকার কথা। এনভায়রনমেন্টাল রিপোর্ট অনুসারে, এইধরনের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে পিলার টু পিলার দূরত্ব বাড়ানো হয়েছে, যাতে স্থাপনার গায়ে ট্র্যাকউদ্ভুত ভাইব্রেশনের ইমপেক্ট কম পড়ে। একই যুক্তি রাজু ভাস্কর্যের ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছে। একদম ডিটেইলস প্ল্যানিং ডাটা না পেলে এগুলো বলা অনেক কঠিন। কারণ এইসব তথ্য স্ক্রীনশট আকারে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়বে, সেটা আশা করা বাতুলতা। হয় মেট্রো কোম্পানির ওয়েবসাইটে কোন রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারে অথবা কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে বুয়েট বা অন্য কোন ইউনির স্পেশালিস্টদের সামনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের প্রজেক্টের বিবরণ দিবেন, যেখানে ঢাবির ছাত্ররাও অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আর একটা বিষয়ের সাথে পূর্ণভাবে একমত যে, এলাইনমেন্ট এর ধারা মিড অফ রোডে না রেখে ওসমানী উদ্যান ঘেষে করলেই বেটার। তাহলে যেসব কালচারাল অসুবিধা, রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া, সেগুলোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ট্র্যাকের কার্ভেচারের পরিমাণও কমে যাবে। তাহলে ইউটিলিটি শিফটের খরচ আর ঝক্কিটাও কমবে। কিন্তু উদ্যান ঘেষে করলে তিননেতার মাজার, ঢাকা গেইট এগুলোর ধার ঘেষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই কোন না কোন দিক দিয়ে ছাড় দিতেই হবে। আসলে উদ্যান ঘেষে কেন ডিজাইন করা হয়নি, সেই প্রশ্নটা আমার মনের মধ্যেও উকি দিচ্ছে।
একমত নই, ভেতর দিয়ে লাইন যদি যায়ই, সেক্ষেত্রে স্টেশন থাকাটাই যৌক্তিক। উপরন্তু, এতে সংলগ্ন এলাকার যাত্রীরা আরও বেশি করে ঢাবির ভেতর দিয়ে আসার সুযোগ পাবেন। সবাই হেঁটে আসবেন না বলাই বাহুল্য। আর ঢাবিতে/ঢাবি ষ্টেশনে শুধুমাত্র ছাত্র ব্যাতীত অন্যান্যদের প্রবেশ রহিত করা হলে অন্য কথা। (ব্যাপারটা ভাবতে বেখাপ্পা লাগছে যদিও)
১ নাম্বার স্বপ্নের সাথে সম্পূর্ণভাবে সহমত, আমিও এমনটাই ভাবছিলাম।
৩/৪ নাম্বার স্বপ্নে দ্বিমত আছে। আংশিক কম্পার্টমেন্ট বরাদ্দ করা যেতে পারে। পুরো ট্রেন নির্ধারিত করে দিলে সেটা আর গণপরিবহণ থাকেনা। (সচিবালয়ের কর্মকর্তারাই কেবল গাড়ি ব্যাবহার করেন কি? 'ক্যাম্পাসের বুক চিরে' ব্যাক্তিগত গাড়ি চলাচলের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষই চাইলে ব্যাবস্থা নিতে পারেন, সেটি ভিন্ন ইস্যু।)
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
শাহবাগ-মৎস্যভবন দিয়ে রুট হলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন স্টেশন না হয়, আমার মনে হয় না ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মেট্রোরেল তেমন জনপ্রিয় হবে বা ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহারে আগ্রহী হবে! যাদের ক্লাস কার্জন বা এনেক্স ভবনে হয়, তাদের জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত প্রায় ৫০-৭০ টাকা খরচ (রিক্সা ভাড়া) করতে হবে! যেখান এখন প্রায় বিনা খরচে বাসা থেকে ক্লাস যেতে পারছে! আর সময় বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করছে উল্টাপথ!
ছাত্র বা আমলাদের জন্য একান্ত বরাদ্দ চাওয়ার পেছনে যুক্তিটা কী?
পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন তো হতই, জানেন-ই তো। তো ছাত্রদের ঠান্ডা করতেই হাফ-টিকেট টাইপের জিনিসের আমদানি হল এদেশে। এটা খুব বাজে একটা ধারণা। বিশেষ মানুষেরা কেন সুবিধা পাবে? এখন সম্ভবত ঢাকা ছাড়া আর কোথাও বাসের ভাড়া স্টুডেন্টদের জন্য অর্ধেক না। চট্টগ্রামে তো অর্ধেক নইই। আমার ঢাকার বন্ধুরা বলে, ঢাকা কলেজের স্টুডেন্টদের নাকি বাসের হেলপারদের সাথে যা-তা করে। অবশ্য শোনা কথা। যাইহোক আপনার এ প্রস্তাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি।
- ইমতিয়াজ।
আপনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা মিলছেনা। বরং খুবই উল্টা অভিজ্ঞতা। যতগুলি স্টেশনেই গিয়েছি, তার মধ্যে খুব অল্প কয়টিতে মূত্রের গন্ধ পেয়েছি (যদিও দেশ ভিন্ন)। ভালভাবে যেন পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা রাখা হয় সেটা না চেয়ে গন্ধ হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই কোন স্টেশন রাখতে না চাওয়াটা কেমন দাবী? বরং একটু বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য বরঞ্চ বলতে পারেন বিশ্ববিদ্যলয়ের মধ্যের স্টেশানগুলা বিশ্ববিদ্যলয়ই তদারক করলে ভাল।
আপনি যে কয়টি দেশের পাতাল রেলের কথা বললেন, তার কয়েকটিতে আমি নিজেই চরেছি, কিন্তু আপনার মত অভিজ্ঞতা হয়নি। আর স্টকহোম মেট্রো নিয়ে যা বললেন, তা একবারে বিস্ময়কর। কারণ স্টকহোমের মেট্রো, লন্ডনের টিউবের থেকে অনেক পরিষ্কার, এবং বেশির ভাগ সুইডিশ পরিবেশ সচেতনতার কারণে নিজেরদের গাড়ী না ব্যবহার না করে মেট্রো ব্যবহার করে। মেট্রোর আর্ট নিয়ে গার্ডিয়ানে একটা লেখা দেখুন
আর আমলাদের অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার মানে বুঝলাম না, আর ছাত্রদের বিশেষ রেয়াত অনেক দেশে দেয়, কিন্তু সেখানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছাত্রত বজায় থাকে। বাংলাদেশ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকে যদিও কন্ট্রোল থাকে, কিন্তু ভার্সিটি পর্যায়ে, অনেক বিভাগে কিংবা মাস্টার্সে কেউ কেউ বুড়ো খোকা ছাত্র থাকে। কাজেই মনে হয় না সেটা সম্ভব।
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
আমার মতে মেট্রো স্টেশনের নিরপত্তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকার কথা – আশাকরি সরকার/দাতা প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারটি মাথায় রেখেছে। যদি তাই হয়, এই অতিরিক্ত নিরাপত্তা ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরপত্তা বাড়াবে, কমাবে না।
আরও একটা জিনিস সহজেই বোঝা যায়, মেট্রো ব্যবহারে যে উল্লেখযোগ্য পরিমানে গাড়ি, রিকশা ও বাসের ব্যাবহার কমে আসবে, তাতে ক্যাম্পাসের ট্রাফিক সম্পর্কিত নিরাপত্তা বাড়াবে। জাইকার রিপোর্টে রেভিনিউ ক্যাল্কুলেশনের সময় ঢাকা শহরের জোন ভিত্তিক modal shift কতটুকু হবে সেটি থাকা উচিত, প্রকৃত তথ্য জানতে পারলে ভাল হত।
তবে রাজু ভাস্কর্য ও টিএসসি’র কথা চিন্তা করে নকশাটা সোহরাওয়ারদি উদ্যানের পাশ ঘেঁষে করা যেতেই পারে, সেক্ষেত্রে তিন নেতার মাজারের ভূচিত্র একটু স্যাক্রিফাইস হবে।
নতুন মন্তব্য করুন