‘আমাদের গল্প’ বলতে গিয়ে আমাদেরকে স্রেফ প্লটে ফেলে দেখিয়ে সেরে ফেলবেন না, আমাদের গল্পটিও বলুন।
রুবাইয়াত হোসেন এর আন্ডার কনস্ট্রাকশন দেশে প্রশংসার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের সেরা বাংলা সিনেমা থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুই বলা হচ্ছে। যারা সিনেমাটি সম্পর্কে কথা বলছেন, প্রিমিয়ারে আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্যে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সিনেমা পরিচালকদের, সরোয়ার ফারুকী অমিতাভ রেজা অনিমেষ আইচ আবু শাহেদ ইমন আকরাম খান দের কথায়, কোন বিষয়েই নূন্যতম অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে না, সিনেমাটি সম্পর্কে তাদের কেবল ভাল কথাই বলার আছে, কেবল নিখাদ প্রশংসাই করছেন তারা।
এমন স্তুতির জোয়ারটা একটু কেমন ঠেকে যখন দেখি এত এত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগদান করা সিনেমাটি, যেটির পোস্টার উৎসবের লরেলে ভরে উঠেছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ কোন চলচ্চিত্র উৎসবেই অংশগ্রহণ করতে পারেনি, সেটি সম্পর্কে কোন আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় সামান্য কোন আলোচনা, রিভিউ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল, এত উৎসবে অংশ নিয়েও সিনেমাটি কোন পুরস্কারই পায়নি, এত এত উৎসব ঘোরা সিনেমাটির পরিবেশন সত্বও কিনে নেয়নি কোন দেশের পরিবেশক, অনলাইনে একটি সামান্য প্রেস কিটও খুঁজে পেলাম না সিনেমাটির।
হোয়াট ইজ গোয়িং অন হিয়ার?
এমনিতে যে, দেশের পরিচালকদের বক্তব্যে আমার অনেক আস্থা, তা নয়। আমি কখনও এমন কোন পরিচালকের সাক্ষাতকার, বক্তব্য পড়িনি, যেটিতে তারা বিশেষ কোন উপলব্ধি, ন্যুয়ানস্ড কোন ভাবনা প্রকাশ করেছেন, পড়ে মনে হয়েছে যে তারা শিক্ষিত অনেক কিছু জানেন বোঝেন। তাদের বেশীরভাগ কথাবার্তাই খুবই সাধারণ, মিডিওকার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে ঠেকেছে।
তারপরও, কারও বক্তব্যেই, একটিও নেগেটিভ কথা, কোন বিষয়েই নূন্যতম অসন্তুষ্টিও প্রকাশ পাবে না একটি সিনেমার প্রসঙ্গে? সিনেমাটি এতই নিখুঁত? এত নিখুঁত সিনেমাটির আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে এই দশা?
অবাক হলাম। ভাবলাম, ঠিক আছে, নিজে গিয়েই দেখি। দেখলাম।
*
আন্ডার কন্সট্রাকশানের মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় একেবারে শুরুতেই।
রয়া রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটকের নন্দিনী, পারফর্ম করছে। নাটক শেষে ড্রেসিংরুমে গিয়ে কাপড় বদলে বের হয়ে আসতে যাবে, তার সামনে এক অল্পবয়স্কা তরুণী এসে দাঁড়ায়, তার প্রশংসা করে, জানায় রয়ার মত করে নন্দিনী সে কখনই করতে পারবে না। রয়াকে যেন একটু অসন্তুষ্ট দেখায়, আমরা ইঙ্গিত পাই মেয়েটি ভবিষ্যতে রয়াকে রিপ্লেইস করবে, যেটি সম্পর্কে আবার পরের দৃশ্যই বিস্তারিত জানানো হয়।
রয়া চলে যাবার পর তরুণীটি, যার নাম আমরা পরে জানতে পারবো মেহেজাবিন, এগিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে যে আসনটিতে রয়া বসে ছিল, তাতে বসে। রয়া তার টিপটি খুলে আয়নায় লাগিয়ে রেখেছিল। মেহেজাবিন বসে আয়নায় তাকালে আমরা দেখতে পাই তার প্রতিবিম্বের কপালের মাঝখানে রয়ার টিপটি বসে আছে। বুঝলাম। দ্যা ওল্ড লেইডি লিভ্স এ্যান্ড দ্যা ইয়াং ওয়ান টেইকস হার প্লেইস। নন্দিনী চরিত্রটি হাতবদল হয়ে গেছে। রয়ার অস্তিত্বের সঙ্কট শুরু, নাকি?
কিন্তু সেটির ইঙ্গিত তো আমাদেরকে দেয়াই হল এবং পরের দৃশ্যেই সংলাপের মাধ্যমেই স্পষ্ট করে জানানো হবে। তাহলে এই বাড়তি ইঙ্গিতের, এই ভিজুয়াল গিমিক্ এর অর্থ কি? রয়া চলে যাবার পরও ক্যামেরা মেহেজাবিনের উপরে কেন?
রয়াও যদি দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে দেখত যে মেহেজাবিন তার আসনটি দখল করে বসল, মেহেজাবিনের প্রতিবিম্বে তার টিপটি এবং তাতে যদি তার অসন্তোষ আরও প্রবল হত, তাহলেও না হয় হত। কিন্তু রয়া তো ততক্ষণে প্রস্থান করেছে। ড্রেসিংরুমে কেবল মেহেজাবিন।
আবার, যদি মেহেজাবিন পরে কোন সময় রয়াকে আসলেই রিপ্লেইস করতো এবং আমরা মেহেজাবিনের গল্পও দেখতাম, তাহলে হয়ত তাতে মেহেজাবিনের এই একান্ত ব্যক্তিগত কনটেমপ্লেশানের মুহূর্তটির একটি কন্ট্রিবিউশান থাকত।
কিন্তু মেহেজাবিন পুরো সিনেমায় কখনই রয়াকে ‘এ্যাকচুয়্যালি’ রিপ্লেইস করে না, সে মাত্র চার-পাঁচটি দৃশ্যে থাকে, দুই-তিনটি বাক্য বলে, সিনেমায় মেহেজাবিনের গল্প বলা হয়নি মোটেও। তাকে ব্যবহার করা হয়েছে কেবল রয়ার জীবনে ক্রাইসিস ইন্ট্রোডিউস করার উপকরণ হিশেবে। হেল! এমনকি ক্রাইসিসটিকেও ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমাটা শুরু করার জন্য কেবল। ক্রাইসিসটি সিনেমার কাহিনী এগোতেই, খুবই দ্রুতই অদৃশ্য অকার্যকর হয়ে পড়ে (পরে বিস্তারিত বলছি)।
তাহলে সিনেমার কাহিনীতে এই অংশটির কন্ট্রিবিউশান কি? কোন কন্ট্রিবিউশানই নেই। তাহলে দৃশ্যটি দেখানোর কারণ কি? অযথাই মেহেজাবিনের উপরে ক্যামেরার ফোকাস কেন? কারণ-
প্রথমত, আয়নায় লাগানো রয়ার টিপটি মেহেজাবিনের প্রতিবিম্বের কপালে প্লেইস করে দেখানোটা পরিচালকের পক্ষ থেকে এক ধরণের শোবোটিং। পরিচালক বলছেন, দেখ আমি কত কি দেখাতে পারি! দৃশ্যটি এক ধরণের আর্টসি-ফার্টসি ভিজুয়াল গিমিক্ ছাড়া আর কিছু নয়। এবং এমন শোবোটিংয়ের উদাহরণ ছড়িয়ে আছে পুরো সিনেমাটি জুড়ে।
দ্বিতীয়ত এবং প্রধানত, মেহেজাবিন ইজ টু হট! তার সাইজ জিরো ফিগার, লতানো শাড়ী আর খোলা পিঠ মিলিয়ে বেশ চমৎকার একটি মানি শট হয়েছে। ড্রেসিংরুমটিও একেবারে ছবির মত সুন্দর, একটি যাদুকরী পরিবেশ, সেই ডেজার্টেড কক্ষে, দেয়াল-জুড়ে ঝোলানো বিশাল আয়নার চারপাশে লাগানো বাল্বের আলোয়, মেহেজাবিনকে দেখায় অপ্সরী-সম। এবং অবশ্যই, তার খোলা পিঠ, সেটি নিঃসন্দেহে বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে।
পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন, যিনি নিজেকে একজন ফেমিনিস্ট নির্মাতা হিশেবে দেখেন, কি চমৎকার ভাবে দৃশ্যটিতে মেহেজাবিনকে অবজেক্টিফাই করে ফেললেন। নারীর চোখ দিয়ে নারীকে দেখতে গিয়ে এক পলকের জন্য পুরুষের চোখ দিয়েও দেখে নিলেন।
একটি দৃশ্য কতটা যুক্তিসঙ্গত, সিনেমার কাহিনীতে তার কন্ট্রিবিউশান কতটুকু, সে ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে কেবল সুন্দর একটি দৃশ্য দেখাতে ইচ্ছে হয়েছে তাই দেখিয়ে দেয়া, বিশেষ করে নারীর অনাবৃত পিঠ ব্যবহার করে- এই বিষয়গুলোতে এফডিসির হার্ডকোর বাণিজ্যিক পরিচালকদের সাথে রুবাইয়াতের খুব একটা পার্থক্য পাওয়া গেল না।
এরকম শোবোটিং এবং দর্শককে ভিজুয়াল শক দেয়ার প্রয়াস চলতেই থাকে।
পরের দৃশ্যে রয়া তার স্বামী সামিররে সাথে কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপ করে জানায় বারো বছর ধরে নন্দিনী করার পর তার পরিচালক রাসেল ভাই তাকে রিপ্লেইস করছে একটি বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে। এখানে রয়ার নিজের বয়স (আমরা পরে জানবো, ৩৩) বিষয়ে ইনসিকিউরিটি প্রকাশ পায়। দর্শক এত সূক্ষ্ম ইঙ্গিত বুঝবে কিনা এ বিষয়ে যেন নিশ্চিত হতে না পেরে পরিচালক রয়ার কথা শেষ হতে না হতেই আবার এটিও দেখিয়ে দেন যে তাদের গাড়ীর কাঁচে রাস্তার ফুলবিক্রেতা শিশুরা এসে বাড়ি দিচ্ছে আর বলছে আন্টি, আন্টি, ফুল নেবেন? ফুল? এখানেই ক্ষান্ত নন পরিচালক। রয়া বাসায় গিয়ে ঢুকতেই তার কাজের মেয়ে ময়নাকে জিজ্ঞেস করে, আমাকে কি আন্টি দেখায়?
পরিচালক কি এখানেও থামেন? ভাবেন যে, দ্যা পয়েন্ট হ্যাজ বিন মেইড অলরেডি? আরে নাহ! তার শোবোটিং তো বাকী রয়ে গেছে।
সুতরাং রয়া বেডরুমে গিয়ে কাপড় খোলে, আমরা তার শাড়ী-পেটিকোট খুলে পড়তে দেখি, দেখি নগ্ন রয়া আয়নায় নিজেকে দেখছে, শরীরে হাত বোলাচ্ছে, ভাবছে, আমার কি বয়স হয়ে যাচ্ছে? রয়ার নগ্নতাকে পরিচালক আয়নায় তার প্রতিবিম্বে, ফোকাসের বাইরে রেখে দেখিয়েছেন। বলতে চাইছেন, দেখ, কি ট্রিক করে আমি নগ্নতা দেখাতে পারি! সেন্সরের বাপেরও সাধ্য নেই আটকায়!
আবার, পরদিন রয়া তার মা’র বাসায় গেলে, মা দরজা খুলতেই রয়া সোজা হেঁটে একটি রুমের দিকে চলে যায়, রুমের ভিতরে তাকিয়ে দেখে বিছানার উপরে তার মায়ের শাড়ী-পেটিকোট-ব্লাউজ রাখা। রয়া বাসায় ঢুকেই এমনভাবে রুমটির দিকে এগোয় যেন সেখানে তার বিশেষ কোন কাজ আছে, বিশেষ কিছু দেখার আছে। কিন্তু আদতে কিছুই নয়। শাড়ী-ব্লাউজ দেখেই সে রান্নাঘরে তার মায়ের কাছে চলে যায়। কিন্তু বাসায় ঢুকেই তার মায়ের পিছু পিছু রান্নাঘরে চলে যাবার কথা নয়? সেটিই কি যুক্তিসঙ্গত হত না? কিন্তু তাহলে কিভাবে পরিচালক আমাদেরকে অমন চমৎকারভাবে রয়ার মায়ের ব্লাউজটি দেখাতেন? ব্লাউজটি না দেখলে তো আমরা সিনেমাটির কিছুই বুঝতে পারবো না!
*
এখানে এটুকু বলে রাখা দরকার, এই লেখাটি এখন পর্যন্ত পড়ে যদি পাঠকের মনে হয় আমার যেন কোন আক্রোশ আছে পরিচালকের প্রতি, আমি যেন সিনেমাটির সমালোচনা লিখতে গিয়ে একটু বাড়িয়ে পরিচালককেও আক্রমণ করে বসছি- তাহলে আপনার ঠিকই মনে হচ্ছে। আমি এমনটি সচেতনভাবেই করছি।
আমার উপলব্ধি এই যে রুবাইয়াত হোসেন কোন ফিল্মমেকার নন। সিনেমা নামক শিল্পটির প্রতি, মানুষের গল্প বলার প্রতি, সিনেমার চরিত্রগুলোর প্রতি, মানুষ ও জীবনের এক্সপ্লোরেশানের প্রতি তার বিশেষ কোন ভালবাসা নেই। উইমেন স্টাডিজে বিএ করা, সাউথ এশিয়ান স্টাডিজে এমএ করা রিসার্চার রুবাইয়াতের কিছু ভাবনা আছে, সেগুলো তিনি সিনেমাকে ব্যবহার করে বলতে চান শুধু। চরিত্রগুলোকে তিনি কেবল তার ভাবনা প্রকাশের ভেসেল হিশেবে ব্যবহার করতে চান, তাই প্রায়ই চরিত্রগুলোর উপরে তিনি জোর করে অন্যায্য সংলাপ চাপিয়ে দেন (পরে বিস্তারিত বলছি), অযৌক্তিক অসংলগ্ন দৃশ্যের মধ্য দিয়ে নিয়ে যান। পরিণতিতে তার নির্মিত সিনেমাটি একটি দুর্বল রূপ ধারণ করে।
এমন ফাও (faux) ফিল্মমেকারদের আমার খুবই বিরক্ত লাগে, সুযোগ পেলে আমি তাদেরকে রিডিকিউল করতে ছাড়ি না এবং মজার বিষয় হচ্ছে এইসব ফাও ফিল্মমেকাররা সাধারণত ফিল্মমেকার হিশেবে এত অদক্ষ হয়, তাদের প্রোপ্যাগ্যান্ডা চ্যানেল করতে গিয়ে গল্প, চরিত্রের দিকে অমনোযোগী থেকে তারা এত নিম্নমানের সিনেমা নির্মাণ করে, যে তাদেরকে রিডিকিউল করতে বেশী বেগ পেতে হয় না।
*
আন্ডার কন্সট্রাকশানের চরিত্রগুলোর খুবই করুণ দশা। তাদেরকে সিরিয়াসলি নেয়া যায় না। তারা মন বা হৃদয়কে স্পর্শ করে যায় না। কেন? কারণ পরিচালক চরিত্রগুলোকে যেভাবে দেখাতে চান, যেভাবে তিনি বিল্ড আপ করেন, পরে তিনি নিজেই, চরিত্রগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট ভাবনা, মানসিকতা না থাকায় (কারণ প্রপ্যাগ্যান্ডা চ্যানেলিংয়ে মনোযোগ) - সেই বিল্ড আপ ক্যানসেল আউট করে ফেলেন। ভেরি পুওরলি রিটেন ক্যারেক্টারস।
রয়া,
বারো বছর ধরে সে নন্দিনী করছে, নন্দিনীর ব্যাপারে তার মত হল নন্দিনী এত নিখুঁত যে তাকে কাল্পনিক মনে হয়। রক্তকরবী পাঠ করলে এটি অবশ্যই বোঝা যায় নন্দিনী আর যাই হোক নিখুঁত নয়, বারো বছরের পাঠে এই বোধটা আরও স্পষ্ট হবারই কথা। আর নন্দিনী তো অবশ্যই কাল্পনিক হবে, রক্তকরবী স্পষ্টতই একটি সাংকেতিক নাটক! সে প্রশ্ন করে, নন্দিনীর মত নারী কি বাস্তবে দেখা যায়, যে নিজের জন্য কিছুই চায় না, নিঃস্বার্থ? আশ্চর্য! কে বলল রক্তকরবীর নন্দিনী নিজের জন্য কিছুই চায় না? যেন রয়া কোনদিন রক্তকরবী পড়েই নি!
পরিচালকের এই মেসেজ জানানো দরকার যে বাস্তবের নারী নিখুঁত নয় এবং সে স্বার্থপর হতেই পারে। কিন্তু মেসেজ জানানোর দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে অত্যন্ত কাঁচা ভিতের উপরে তার চিত্রনাট্য রচনা করেছেন।
পরিচালকের বক্তব্য অনুসারে,
. . . আবার মেয়েকে (রয়া) দেখিয়েছি, সে প্রগ্রেসিভ।
রয়া যখন জানতে পারে তার কাজের মেয়ে ময়না প্রেগন্যান্ট, সে তার মায়ের বাসায় ছুটে যায়। মাকে জানালে তার মা বলে রয়াই ময়নাকে আদর দিয়ে নষ্ট করেছে, ময়নার পাপের জন্য রয়াই দায়ী (হু দ্যা ফাক্ টকস্ লাইক দ্যাট দিইজ ডেইজ! আই ওয়ান্ডার!)। প্রগতিশীল রয়া কি তার প্রতিবাদ করে? সে কি প্রশ্ন করে প্রেগন্যান্ট হয়েছে তো এখানে পাপ আবার এলো কোথা থেকে? না। কেন? তার কি তর্ক করার মুড নেই? তা থাকবে না কেন? এর পরেই যখন মা বলে ময়নাকে বিয়ে দিয়ে দিতে, রয়া রাগে ফেটে পড়ে, মাকে প্রশ্ন করে বিয়ে দিয়ে দিলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়?
অর্থাৎ রয়া প্রগতিশীল, কিন্তু সবসময় নয়, যখন পরিচালকের দরকার, যেমনভাবে দরকার, তখন তেমনিভাবে।
এসবের পরে যখন জানানো হয় যে রয়া থিয়েটার নিয়ে লিখত, আভাস দেবার চেষ্টা করা হয় যে রয়া জটিল গভীর ভাবনার যোগ্যতা রাখে, সে ইন্টেলেকচুয়্যালও বটে, তখন আর তা বিশ্বাসযোগ্য হয় না। কেবল কিছু এক্সপোজিটরি তথ্য দিয়ে দিলেই আমরা বিশ্বাস করে বসব না যে অমুক চরিত্রটি এরকম। সিনেমায় চরিত্রটির কর্মকাণ্ডে, বক্তব্যে তার প্রকাশ থাকতে হবে।
রয়া যখন রাসেল ভাইয়ের তাকে রিপ্লেইস করা নিয়ে বলে, আর কাকে দিয়ে রিপ্লেইস করলেন? একটা বাচ্চা মেয়ে, একটা নিউকামারকে দিয়ে! রয়ার এহেন পেটি মানসিকতার পরিচয় পেয়ে তাকে আর কোনভাবেই ইন্টেলেকচুয়্যাল ভাবা যায় না। আবার-
রক্তকরবীকে কনটেম্পোরারি দুনিয়ার জন্য নতুনভাবে ইন্টারপ্রেট করতে মরিয়া ইন্টেলেকচুয়্যাল রয়া শেষে যে ইন্টারপ্রেটেশানটি উপস্থাপন করল, সেটিও গোঁজামিলে ঠাসা, অস্পষ্ট। ময়নার অনাগত শিশুর প্রতি ভালবাসা দেখে এবং সাম্প্রতিক সময়ের গার্মেন্টস কর্মীদের দুর্দশা আগুন, রানা-প্লাজা ইত্যাদি মিলিয়ে সে যে ইন্টারপ্রেটেশান যে উপস্থাপন করে তা হল-
সে বোঝে, রক্তকরবীতে নন্দিনী আর রঞ্জনের প্রতি তার প্রেম এই দুই মিলিতভাবে জীবনের প্রতীক! এইতো লাইনে আসো মা! এতক্ষণে বুঝেছ সে প্রতীকী! তাহলে আগে অবাস্তব কাল্পনিক বাস্তবে দেখা যায় না বলে হাঙ্গামা করছিলে কেন? কারণ তখন পরিচালকের দরকার ছিল, আর এখন আবার এইটি দরকার। রয়ার কথায় ফিরি-
. . . মিলিতভাবে জীবনের প্রতীক। . . . আধুনিক রক্তকরবীতে নন্দিনী হল গার্মেন্টস-কর্মী আর রঞ্জন হল তার অনাগত সন্তান। সে তার সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে চায়। কিন্তু, রক্তকরবীতে নন্দিনী আর রঞ্জনের মিলনের পথে বিভিন্ন চরিত্র যেভাবে বাধা সৃষ্টি করে, গার্মেন্টস-কর্মীর সন্তান জন্মদানের পথে সে তুলনায় কে বাধা দেয়? সন্তান আনতে চায় তো আনুক না, কে মানা করছে? অন্তত এই প্রসঙ্গে কি বাধা রয়েছে তা কি কোনভাবে এস্ট্যাবলিশ করা হয়েছে কাহিনীতে, এর আগে? নাহ। ইন্টারপ্রেটেশানটি এতই শ্যালো যে বলবার বেশী কিছু থাকে না।
আর রক্তকরবীর যদি এতই আমূল পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে নতুন নাটকই লিখতে সমস্যা কি? সমস্যা আছে। বলছি।
রুবাইয়াত হোসেনের বক্তব্য,
এই সিনেমার অনুপ্রেরণা এসেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রক্তকরবী নাটক থেকে। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন।
এবং,
I mean it is about trying to question tradition because she is a theatre actress doing Rokto Korobi on stage for a very long time. She wants to re-interpret the play. Can someone re-interpret something as traditional as Rabindranath Tagore? Are you supposed to do that? What happens when you do that?
স্বপ্ন তো সত্যি করতেই হবে! নতুন নাটক লেখা যাবে না, রক্তকরবীর কনটেম্পোরারি ইন্টারপ্রেটেশান করছে দেখিয়ে শেষে কোনভাবে মিলিয়ে দিলেই হল! আর ট্রেডিশানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কেবল প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই। ট্রেডিশানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নতুন আলোয় কিছু না দেখাল তো বয়েই গেল। আর, হোয়াট হ্যাপেন্স হয়েন ইয়্যু ডু দ্যাট? এ্যাপারেন্টলি, কেবল পরিচালক রাসেল ভাইয়ের বোকাচোদার মত (পরে বিস্তারিত বলছি) কিছু হাবিজাবি প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কিছুই হয় না।
এছাড়াও রক্তকরবীকে ভর করে সিনেমা বানালে সেটি বাই ডিফঅল্ট যতটুকু প্রেসটিজাস হবে, নতুন নাটকের অবতারণা করলে সে ক্ষেত্রে সেই ধার করা প্রেস্টিজটুকু তো পাওয়া যাবে না!
লক্ষণীয় বিষয়, পরিচালক হিশেবে রুবাইয়াতের ফ্লঅগুলো তার চরিত্র নন্দিনীর মধ্যেও ঢুকে গেছে। তিনি বলছেন,
এ ছাড়া এ সিনেমায় পোশাক শিল্প উঠে এসেছে। গত কয়েক বছরে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে গার্মেন্টস ক্ষেত্রে। যেমন- স্মার্ট ফ্যাশনে আগুনের ভয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে ছয়-সাতজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তাজরিন গার্মেন্টসে ১০০ জনের ওপরে শ্রমিক পুড়ে মারা গেল। সর্বশেষ রানা প্লাজায় হাজার মানুষের মৃত্যু। সবগুলো ঘটনা আমার ভিতরে নাড়া দেয়। তখন আমি ভাবলাম, কী করে এই ঘটনাগুলো সিনেমার গল্পের সঙ্গে রিলেট করা যায়।
জোর করে সিনেমাকে নিজের অস্পষ্ট ভাবনাচিন্তার, সোশাল কমেন্ট্যারি’র ভেসেল হিশেবে ব্যবহার করতে গিয়ে তিনি যেমন লেজেগোবরে করে ফেলেছেন, কিছু টিপিক্যাল ক্লিশে ভাবনার প্রকাশ ব্যতীত, স্পষ্ট করে কিছু বলে উঠতে কিংবা এক্সপ্লোর করে উঠতে পারেননি, তেমনিভাবে রয়াও পরিচালকের সার্ভ করা বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র টিভিতে দেখে, তার মিডিওকার পর্যবেক্ষণে ভর করে সোশাল কমেন্ট্যারি করতে গিয়েই একটি হাফ বেইক্ড জগাখিচুড়ি ইন্টারপ্রেটেশান উপস্থাপন করে।
অন্য চরিত্রগুলোর দিকে তাকাই।
ইমতিয়াজ,
তাকে প্রথমবারের মত দেখানোর আগেই তার ব্যাপারে অনেক তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশী কিউরেটর, বার্লিনে থাকে, মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টসের প্রদর্শনী কিউরেট করেছে, ইউরোপের মার্কেটে দেশীয় শিল্পের ক্রুশাল প্লেইসমেন্টের পেছনে তার অবদান ইত্যাদি ইত্যাদি। আগের কথাই আবারো বলি- বলা হল, শুনলাম, তাতেই গ্রহণ করে বসবো না, চরিত্রটিকে আগে দেখি, এক্সপেরিয়েন্স করি।
যতক্ষণ চরিত্রটিকে দেখা গেল, সে বিশেষ কিছুই বলল না। বিশেষ কিছু একটা বলবার, তার হ্যাডম জাস্টিফাই করবার মুহূর্ত যখন আসলও বা,
নন্দিনীর রক্তকরবীর নয়া ইন্টারপ্রেটেশানের পিচ শুনে যখন তার পরিচালক রাসেল ভাই নাখোশ, ইমতিয়াজকে বলল রক্তকরবীর এমন আমূল পরিবর্তন করার কোন কারণ তো সে দেখে না, তখন ইমতিয়াজ সংক্ষেপে বলল, আমি দেখি। আরে বাবা, তোদেরকে পিচ করা হয়েছে একটা আইডিয়া, তোরা তো আলোচনা করবি এটা নিয়ে তাই না? তুই যখন কারণ দেখিসই, তাহলে ব্যাখ্যা কর, তাই না? নাহ। অয় বিশাল হ্যাডমদার, অর কিসু ব্যাখ্যা করা লাগে না, ঠগ লাইফ!
জানানো হয়, ইমতিয়াজ বাংলাদেশের একটি নাটককে ইয়োরোপিয়ান ফেস্টিভ্যালে নিয়ে যেতে চায় এবং বিশেষ করে রক্তকরবীতেই তার আগ্রহ। তারমানে নরমাল (!) রক্তকরবী সে দেখেছে এবং তার পছন্দ হয়েছে। তার জন্য রয়া’রা যখন নরমাল রক্তকরবী পারফর্ম করে দেখায়, রয়ার পারফর্মেন্সও তার অসম্ভব ভাল লাগে। তাহলে হঠাৎ তার তা পরিবর্তন করার ইচ্ছে জাগল কেন? তার এই মানসিকতার পরিবর্তনটি কি কোনভাবে দেখানো হয়েছে? নাহ! রয়াকে সে রয়ার জার্নির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তখনই রয়া তাকে জিজ্ঞেস করে বাস্তবে নন্দিনীর মত চরিত্র সে দেখেছে কিনা? রক্তকরবী পড়া থাকলে, ভাল লেগে থাকলে সে উত্তরে বলতে পারতো, বাস্তবে কেন দেখব? সে তো প্রতীকী চরিত্র! কিন্তু সে তেমন কোন উত্তর না দিয়ে বরং রয়ার সেই এক কথা ধরে বসেই রয়ার ইন্টারপ্রেটেশানে তথা নতুন রক্তকরবী করাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। নট দ্যাট মাচ্ অফ আ ওয়েল রেড, ডিপ থিংকিং, ওয়ার্ল্ড ক্লাস কিউরেটর, ইজ হি?
রয়ার সাথে সে বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে একটি প্রদর্শনীতে সাক্ষাত করে। আর্ট লাউঞ্জের দিকে ইঙ্গিত করে বলে, উই শুড ডু রক্তকরবী ইন আ স্পেইস লাইক দিস, নো? ভাল কথা, উত্তম প্রস্তাব! কিন্তু কেন? প্রসেনিয়াম ছেড়ে রক্তকরবীকে আর্ট লাউঞ্জে এসে পড়তে হবে কেন? ইমতিয়াজের আর্ট লাউঞ্জের ফ্লোর আর দেয়াল ভাল লেগেছে বলে? বিজ্ঞ ইমতিয়াজ এই ব্যাপারে কিছু এলাবোরেট করলো না। সে তো বিজ্ঞ, সে এইসব আর্টসি-ফার্টসি বোঝে, আমরা বুঝবো না, আমরা কেবল সে বোঝে এটি বুঝতে পেরেই মাটিতে শুয়ে পরে নমঃ দেব।
রয়ার চার-পাঁচ বছর আগে, ফুলবাড়ি কয়লা খনির সাথে রক্তকরবীর তুলনা করে লেখা একটি প্রবন্ধ পড়ে সে বলে, আমাদের কনটেম্পোরারি পলিটিক্স এর কোরে লেখাটি টাচ্ করেছে। আমাদের কনটেম্পোরারি পলিটিক্স? জার্মানির? বাংলাদেশের? পুরো দুনিয়ার? টাচ্ করেছে, কিভাবে টাচ্ করেছে? বিজ্ঞ ইমতিয়াজ কি ব্যাখ্যা করবেন? মাথা খারাপ? একদম না! লাও ঠেলা!
আলসে, অদক্ষ, মানসিকভাবে অপরিপক্ব চিত্রনাট্যকার রুবাইয়াত এভাবেই কিছু ভেইগ আনএক্সপ্লেইন্ড সংলাপ, কিছু তথ্য, কিছু গালভরা কথা দিয়ে ইমতিয়াজকে ইন্টেলেকচুয়্যাল দেখানোর একটি দুর্বল চেষ্টা চালালেন। কারণ?
কারণ দরকার তো! ইমতিয়াজ একজন বার্লিন প্রবাসী আর্ট কনঅ’সার, ফ্রি থিংকার যে রয়াকে সাপোর্ট করে, রয়ার ভিশনকে সাপোর্ট করে ফলে রয়ার ইন্টেলেকচুয়্যালিটিও যেন আরও ক্রেডিবল হয়ে ওঠে, রয়া জাতে উঠে যায়, হুম্ম, শি ইজ ইন দ্যা রাইট পাআথ! রয়া তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি . . .
রুবাইয়াত দেখালেন, আমরাও দেখলাম!
পরিচালক রাসেল ভাই,
থিয়েটারের ভেটেরান পরিচালক যিনি রক্তকরবীর নতুন ইন্টারপ্রেটেশান চান না, যিনি প্রথাগত মানসিকতার। যিনি রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী, ১৯২৬ সাল এবং সে সময়ে পশ্চিমাদের নাটকটি বুঝতে না পারা বিষয়ে এমনভাবে কথা বলেন যেন তিনি নিজেই উপস্থিত ছিলেন তখন, সবই দেখেছেন। আর পশ্চিমাদের মানে কি? পশ্চিম কি কোন ছোট পরিবার? সুত্রাপুরে থাকে?
রাসেল ভাইয়ের যুক্তি হল ১৯২৬ এ বুঝতে না পারলে এখন কিভাবে বুঝবে? রাসেল ভাই একজন শিশু।
ভেটেরান পরিচালক রাসেল ভাইয়ের, রয়ার নয়া রক্তকরবীর ব্যাপারে সবচেয়ে ওভার্ট অভিযোগটি দেখা গেল কস্টিউম নিয়ে। তিনি ডিসগাস্ট নিয়ে বলছেন, এইটা রক্তকরবী? . . . কস্টিউম! বাংলাদেশের থিয়েটারের, শিল্পকলার ভেটেরান পরিচালক সালোয়ার কামিজকে কস্টিউম হিশেবে গ্রহণই করতে পারছেন না, তার গা ঘিনঘিন করছে।
যেমন ভোদাইমার্কা রয়ার নয়া রক্তকরবী, রয়ার ট্রেডিশানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, তেমনি বোকাচোদামার্কা প্রথাগত রাসেল ভাইয়ের অভিযোগ, তার প্রতিবাদ। মানে ভোদাইয়ে বোকাচোদায় একাকার।
রয়ার মা,
তাকে অত্যন্ত ওভার্টলিই রক্ষণশীল হিশেবে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক। তার বাসার কলিং বেলটি পর্যন্ত বলে, আসসালামউওয়ালাইকুম, আপকা বাড়া মেহেরবানী কাইন্ডলি দরওয়াজা খুলিয়ে। তার বাসায় তাবলীগের মহিলারা আসেন, তাকে ধর্মকর্মে মন দেবার পরামর্শ দেন। আমরা একটি দৃশ্যে দেখি ঘোরতর বোরকা পড়ে তিনি আজান দিচ্ছে এমন সময় বাসায় ফেরেন, রয়ার সাথে বসে কথা বলেন, কিন্তু নামাজ পড়ার ব্যাপারে তার কোন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায় না।
তাই একটু পরেই আবার রয়ার সাথে রাগ করে, আমার কাউকে লাগবে না, বলে তিনি মুখ ফিরিয়ে তার নিজের ঘরে চলে গেলে, যখন দেখি ঘরের বাইরে করিডরে দেয়ালে ঝোলানো একটি ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি ওয়ার্ক (ধরণের একটা কিছু) এবং সেটার উপরে আবছা নূরানী আলো পড়েছে, তখন আর কেয়ার করি না। উনার কাউকে লাগবে না, উনার আল্লাহ্ আছেন? কিন্তু আম্মা নামাজটা তো পড়লেন না, আপনি তো ধরাআ!
অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পর্দায় থাকা এই মহিলাটি’র কেবল মধ্যবিত্ত সংগ্রামী নারী হিশেবে উপস্থিত হয়ে পরিচালকের বক্তব্য প্রচারের জন্য ব্যবহৃত পাত্রের ‘কোটা’ পূর্ণ করা ছাড়া আর কোন কার্যকারিতাই দেখা যায় না।
ময়না,
যে টিভিতে প্রেমের নাচাগানা দেখে, লিফ্টম্যান সবুজের সাথে মিষ্টি প্রেম করে স্বপ্নে বিভোর, যে রয়াকে তার প্রেগন্যান্সির সংবাদ দিয়ে এটাও বলে রাখে, সবুজকে বিয়ে করার পর সে রয়ার সাথেই থাকবে (উল্লেখ্য, সে রয়ার সাথে পাঁচ বছর ধরে আছে, তার দুনিয়াতে আপন আর কেউ নেই এবং রয়া তাকে অত্যন্ত স্নেহ করে) ।
পরের দিনই রয়া মায়ের বাসা থেকে এসে দেখে সে সবুজকে রান্নাঘরে বসিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছে। রয়া সবুজকে চার্জ করে বসে, বলে পুলিশে দেবে। ময়না স্বভাবতই আপসেট হয়ে পরে। ক্যায়ওস এর মধ্যে হঠাৎ করে বলে বসে, আপা আমি সংসার করতে চাই! সংসার করতে চায়? নাচাগানা দেখা মিষ্টি প্রোমিকা ময়না হঠাৎ সংসার করতে চায়? গতকালই না বলল বিয়ের পরে ও রয়ার সাথেই থাকবে? তাহলে এখন এমন কেন বলছে।
বিকঅঅজ! বিকঅজ, রুবাইয়াত নিড্স হার টু, দ্যাট্স হোয়াই! ডাআহ্!
আবার আরেকদিন রয়া যখন পরবর্তীতে ময়না-সবুজ যেই বস্তিতে থাকে সেখানে যায়, ময়নাকে বিয়ের উপহার হিশেবে গয়না দেয়, ময়না হঠাৎই গয়নাগুলো রয়াকে ফেরত দিয়ে বলে তার কাছে রাখতে, নাহলে সবুজ সেগুলো নিয়ে যাবে। হোয়ের দ্যা ফাক্ ডিড দ্যাট কাম ফ্রম?
সবুজ, যে ময়নাকে এত ভালবাসে এবং ময়নাও যাকে এত ভালবাসে, তাদের মধ্যে এই কয়দিনে এমন কি হল যে ময়নার মোহ কেটে গেছে, ময়না সবুজকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে? সবুজ কি ময়নার কিছু এর আগেও নিয়ে গেছে? কিন্তু ময়নার তো কিছু ছিলই না! তাহলে কি সে ময়নার গার্মেন্টসে কাজ করে পাওয়া টাকা নিয়ে গেছে? সেটা তো ময়নার পরিবারের জন্য, সবুজের প্রতি তার প্রেমের জন্য এমনিতেই দিয়ে দেবার কথা, যেহেতু তাদের অভাবের সংসার! তাহলে অমন ভাবনা ময়নার মনে আসলো কেন!
সেই আগের কথা, পরিচালকের দরকার, ময়না তো উপলক্ষ মাত্র! ফেমিনিস্ট রুবাইয়াতের দেখানো দরকার, নারী সংগ্রাম করে টাকা কামায় তার অনাগত সন্তানের জন্য, আর পুরুষ তার সম্পদ নিয়ে গিয়ে উড়িয়ে দেয়। এবং সেটি দেখানো দরকার, চরিত্রগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মানসিকতা পরিস্থিতি আগে কেমন দেখানো হয়েছে সেসব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েই।
আর সবুজ,
রুবাইয়াতের জোর করে সংলাপ চাপিয়ে দেয়ার মিশনের সবচেয়ে বড় ভিকটিম ময়নার প্রেমিক সবুজ। এবং এত বড় ভিকটিম যে তার জন্য আমার দুঃখই হল বলা চলে।
রয়া সবুজকে চার্জ করার পর, ময়না রয়ার সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ইগনোর করে, রয়ার আদর স্নেহ ইগনোর করে সবুজের প্রতি গভীর প্রেমের মোহে রয়ার বিপক্ষে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে সবুজের পক্ষে কথা বলতে থাকে। রয়া সবুজকে থাপ্পড় মারলে ময়না খেপে ওঠে। আর ঠিক তখনই সবুজ ময়নাকে টেনে রয়ার বাসা থেকে বের করে নিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ বলে, আমার সাথে থাকতে হইলে আমার মত করে থাকতে হবে! হাহ্! আবারও বলতে হয়, হোয়ের দ্যা হেল ডিড দ্যাট কাম ফ্রম?
ময়না সবুজের বিপক্ষে একটি কথাও বলেনি বরং রয়ার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। সবুজকে সে ভালবাসে এবং সবুজও তাকে ভালবাসে। ময়না কোন মুহূর্তেই সবুজের কোন বক্তব্যে কোনভাবে কোনও প্রতিবাদ করেনি। তাহলে হঠাৎ করেই সবুজ কি প্রসঙ্গে বলছে ময়নাকে যে তার সাথে থাকতে হলে তার মত করেই থাকতে হবে? একেবারেই বোধগম্য হয় না।
ওমা সরি! হয় তো! পরিচালকের দরকার। তার ফেমিনিজম সে কিভাবে কমিউনিকেট করবে নাহলে? সবুজ যদি খারাপই না হল, তবে ময়না নারী হিশেবে কি সঙ্কটের মুখোমুখি হল? আর সঙ্কটের মুখোমুখি যদি না-ই হল, তাহলে সে আছে কি বাল ফালাতে?
আর সাবাহ্,
সবচেয়ে মজার চরিত্র সাবাহ্র কথা না বললেই নয়! সে রয়ার বান্ধবী।
রয়া যখন সাবাহ্ কে জানায় সে বাচ্চা নেবার জন্য প্রস্তুত নয়, সাবাহ্ বলে, প্রস্তুত নয় মানে? তুই একটা মেয়ে, তোর যে কোন সময়ই বাচ্চা হতে পারে! পাঁচ মাস পর্যন্ত আমি নিজেই জানতাম না আমি প্রেগন্যান্ট। . . . অবশ্য পরে এডজাস্ট করতে হয়েছে, পিএইচডি থিসিসটাও পোস্টপোওন করলাম . . . ।
পিএইচডি থিসিস? পিএইচডি করনে-ওয়ালা মেয়ে মনে করে একটা মেয়ের যেকোনো সময়ই বাচ্চা হতে পারে? সে পরিবার পরিকল্পনা জানে না? তার বাচ্চার ব্যাপারে কোন পরিকল্পনাই নেই? পাঁচ মাস ধরে তার পিরিয়ড বন্ধ, সে ব্যাপারে তার কোন মাথা ব্যথাই ছিল না? কিন্তু সে তো স্বাস্থ্য সচেতনও বটে, সে বলে কত পাউন্ড নাকি বেইবি ফ্যাট লুজ করেছে, তিন মাসের ভেতরে সে তার শরীর, সংসার, কাজ সব সে লাইনে নিয়ে আসবে।
না গো মা! এমনিতেই পিএইচডি থিসিসটা পোস্টপোওন করে তুমি একটা থিসিসকে জানে বাঁচিয়ে দিয়েছ, ওটাকে আর নাজেহাল কোর না। তুমি ল্যাক্টেইট করো গে।
পরিচালকের বক্তব্য,
এই গল্পে মূলে আছেন চার নারী। যারা তাদের কাজটাকেই জীবনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তারা সবাই আলাদা আলাদাভাবে নিজের কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
রয়া প্রধান লক্ষ্য কাজই, আদতেই সে তার কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, খুবই ইনকম্পেটেন্টলি। রয়ার মার জীবনের প্রধান লক্ষ্য মোটেও তার কাজ নয়, সেটা স্রেফ তার সংসার চালানোর মাধ্যম। তার প্রধান লক্ষ্য তাদের বিয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে স্বামীর কথা ভাবা, তার জন্য অপেক্ষা করা এবং ধর্মকর্ম করা, মাঝে মাঝে নামাজ না পড়ে, আর গুণাহ্র পরিবর্তে পাপ বলে (একটা কাম করলেন আম্মা এইটা?)। ময়নার জীবনের লক্ষ্যও কাজ নয়, তার সন্তান, সন্তানের জন্য এবং সংসারের জন্যই সে কাজ করতো। কাজ করা না লাগলে সে নাচাগানা দেখে আর প্রেম করেই দিন কাটাত। আর সাবাহ্, মাই ডিয়ার সাবাহ্, কাজ তার জীবনের লক্ষ্য, তার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, এমন কোন ইঙ্গিত দেয়া হয় না, বরং তার যে ভোদাই-মানসিকতার প্রকাশ দেখা যায়, তাতে সে কাজ নিয়ে এগিয়ে কতদূর যেতে পারবে সে বিষয়ে সন্দেহ হয়।
অর্থাৎ রুবাইয়াত নিজেই স্পষ্ট না তিনি কি দেখাতে চান। তিনি ফেমিনিজম দেখাতে চান। চার নারী, কাজই তাদের লক্ষ্য, কাজ নিয়ে তারা এগিয়ে যায়। কিন্তু তা দেখাতে যে ভাল চিত্রনাট্য রচনার, সঠিক পরিচালনার প্রয়োজন আছে, চরিত্রগুলোর সঠিক ডেভেলাপমেন্টের প্রয়োজন আছে- তা তিনি না-ই বোঝেন, না-ই তার সেসব এক্সিকিউট করবার যোগ্যতা আছে। তার মন পরে আছে তার ফেমিনিজমে। আর সেটারও তিনি, বোধ করি, কেবল একটি জেনারালাইজ্ড রূপই বোঝেন, তার বেশী কিছু নয়।
*
সিনেমায় নানা যায়গায় যুক্তির কোন বালাই নেই। সিনেমার শুরুতেই দেখানো রক্তকরবীর ওটা লাস্ট শো ছিল রয়ার, তা জানানোর পরেও, পরে আবার রয়া কেন নাট্যশালায় যায়, রক্তকরবীর পারফরমেন্স নিয়ে কথা বলে, রক্তকরবীর কাজ নিয়ে এগোয়- বোধগম্য হয় না।
তেমনিভাবে, শুরুতেই রয়াকে যে দুটি সঙ্কটের মুখোমুখি করা হয়, তাকে রিপ্লেইস করা হচ্ছে এবং তার বয়স বেড়ে যাচ্ছে, সেগুলোও কেমন করে অদৃশ্য হয়ে যায়। তাকে আর রিপ্লেইস করা হয় না। আর বয়স বিষয়ে তার ইনসিকিউরিটির কোন প্রভাবই তার মনোজগতে জীবনে, পরে আর লক্ষ্য করা যায় না, ওটি তার জন্য বরাদ্দ ‘কোটা’ পূরণ করে স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়!
রক্তকরবীর ব্যাপারে আগ্রহী কিউরেটর ইমতিয়াজ কেন পরিচালক রাসেল ভাইকে ফেলে রক্তকরবী নিয়ে রয়ার সাথে আলোচনায় (এ্যাকচুয়্যালি তারা বালের আলোচনা করে, বাট এনিওয়ে) মেতে ওঠে তা-ও বোধগম্য হয় না।
রয়া একসময় ইমতিয়াজের জন্যই রক্তকরবী পারফর্ম করে, কিন্তু পারফর্মেন্সের পরে যখন তারা এই বিষয়ে আলোচনা করবে, তখন রয়া কেবল, ইমতিয়াজকে সেই যে, বাস্তবে নন্দিনীর মত মাল দেখেছেন কিনা, সেই প্রশ্নটি করেই আমি আজ আসছি বলে ভেগে যায়। রয়ার না কাজই প্রধান? সে কাজ নিয়ে আরও কন্সারন্ড হবে না? ইমতিয়াজের জন্যই যেহেতু পারফর্ম করা হল, তার সাথে রয়া আলোচনায় যাবে না?
আবার রক্তকরবীর নয়া ইন্টারপ্রেটেশান ইমতিয়াজ আর রাসেল ভাইকে পিচ করে রয়া মঞ্চ থেকে নেমে তাদের মাঝে এসে দাঁড়ালে ইমতিয়াজ এমন ভাব করে যেন রয়ার সাথে তার মাত্রই দেখা হল, ওহহো হাই! কেমন আছেন? ইত্যাদি। আশ্চর্য। তুই কি ব্যাটা পিচের মাঝখানে এসে বসেছিলি নাকি? তোর জন্যই তো পিচ করছে। নিশ্চয়ই তোদের হাই হ্যালো হবার পরই রয়া মঞ্চে উঠে পিচ শুরু করেছে? হোয়াট দ্যা ফাআক্!
আর বারো বছর ধরে নন্দিনী করা রয়ার প্রতি রাসেল ভাইয়ের অমন হোস্টাইল আচরণের উৎস বোঝা যায় না। রয়ার নন্দিনী করতে ক্লান্ত লাগছে জেনেই রাসেল ভাই রয়াকে বলে বসে থিয়েটার করতে ভাল না লাগলে সংসার করো! আবারও সেই জোর করে চাপানো সংলাপ। বারো বছরের সম্পর্কের পরে কি রাসেল ভাইয়ের রয়ার সাথে আপন ভাইয়ের মতই কথা বলার কথা নয়? তাকে বোঝানোর, তার মন বোঝার চেষ্টা করার কথা নয়?
তা হতে পারে, কিন্তু আগেই বললাম, পরিচালক দেখতে চেয়েছেন ট্রেডিশানকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে কি হয়? তাই হাঙ্গামা করার চরিত্র-পাত্রের কোটা পূরণ করেছেন রাসেল ভাইকে দিয়ে। তাই রাসেল ভাই যুক্তিসঙ্গত ভাবে আপন ভাইয়ের মত না হয়ে অযৌক্তিকভাবে হয়ে গেছে হোস্টাইল।
আবার হঠাৎ করেই রয়ার জীবনের এই সময়টাতেই, এই দিনগুলোতেই সবার যেন রয়াকে বাচ্চা নেবার কথা বলবার বিষয়টি মনে হয়েছে। যেখানেই সে যাচ্ছে সবাই বলছে, বাচ্চা নাও, বাচ্চা নাও। হাও কনভিনিয়েন্ট! ফর হু? ওয়েল, ফর দ্যা ডিরেক্টার, রুবাইয়াত অফকোর্স!
এমনসব অদ্ভুত অযৌক্তিক দৃশ্যাবলির মালা গেঁথেছেন পরিচালক।
*
রুবাইয়াত হোসেন একটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন,
কনটেম্পোরারি ঢাকাকে আমরা দেখি না খুব বেশী ফিল্মে, আমি ওটাকে রেপ্রেজেন্ট করতে চেয়েছি।
আরেকটি প্রকাশনায় বলেছেন,
আমি ঢাকা দেখাতে চেয়েছি, ঢাকার কর্মজীবী নারীদের দেখাতে চেয়েছি।
ভাল কথা।
তার ঢাকাকে রেপ্রেজেন্ট করা, ঢাকা দেখানো হল, একটু পরপর ঢাকার বিভিন্ন এলাকা দেখানো, ট্র্যাফিক দেখানো, জ্যাম দেখানো, ওভারব্রিজ বিলবোর্ড সিএনজি’র ইন্টেরিঅর দেখানো ইত্যাদি। উনি মনে করেছেন এটি একটি অর্জন, কনটেম্পোরারি ঢাকা দেখিয়ে দেওয়া, আমরা মগবাজার ওভারব্রিজ দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে হাততালি দিয়ে উঠবো, ওমা! ওমা! এইটা তো মগবাজারে! আমি তো উঠসি এই ব্রিজে!
আর ঢাকার কর্মজীবী নারী মানে একটু পরপর গার্মেন্টসে কনস্ট্রাকশন সাইটে কর্মরত নারী দেখিয়ে দেয়া। বিশেষ কোন আলোয়, বিশেষ কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখানো? যা বিশেষ কোন অনুভূতি ভাবনার চিন্তার উদ্রেক করে? নাহ। স্রেফ দেখিয়ে দেয়া। শাবাআশ!
ঢাকা দেখানো, ঢাকার কর্মজীবী নারী দেখানো আর মাঝে মাঝেই আন্ডার কনস্ট্রাকশন ভবন দেখানো, কন্সট্রাকশানের কাজ দেখানো- এসবই সিনেমার কাহিনীতে কোন কিছুই কন্ট্রিবিউট করে না, এসবের কোন প্রভাবই দর্শকের মনোজগতে পরে না। কারণ, ‘স্রেফ’ দেখাচ্ছেন, দেখাবেন বলেই। ‘কোটা’ পূরণ করছেন।
*
আন্ডার কনস্ট্রাকশন শেষ পর্যন্ত নির্মাণাধীন নারী চরিত্রের কাহিনী হয়ে ওঠে না। বরং একটি বিভ্রান্ত ধ্বংসস্তূপ রূপে প্রকাশিত হয়।
আগামাথাহীন চরিত্রগুলোকে দেখতে ইচ্ছে করে না, তাদেরকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না। চরিত্রগুলোর দোষ নেই। তাদের স্রষ্টার দোষ। অভিনেতারা অত্যন্ত চমৎকার অভিনয় দিয়েও রুবাইয়াতের ক্যাওটিক, ট্র্যাশবিন ডিজার্ভিং চিত্রনাট্যকে বাঁচাতে পারে না।
শেষ পর্যন্ত পরিচালকের গৎবাঁধা কিছু ক্লিশে ভাবনা, মেসেজ জোরপূর্বক উপস্থাপন করে, ফেমিনিজমের, নারীর জীবনের সংগ্রামের সম্ভাবনার কোন শিক্ষিত, গভীর চিন্তা-প্রসূত, ন্যুয়ানস্ড কোন এক্সপ্লোরেশান না করেই হঠাৎ একসময় আন্ডার কনস্ট্রাকশন দপ করে নিভে যায়।
শেষের দিকে একটি সময় রয়ার স্বামী কাজে দেশের বাইরে গেলে রয়া ইমতিয়াজকে ডিনারের জন্য ইনভাইট করে, বেশ ভাল ফ্লার্ট করে এবং একপর্যায়ে তার সাথে মিলিত হয়। এবং পরে স্বাভাবিকভাবেই স্বামীর সাথেও বসবাস করতে থাকে।
সে বাচ্চা নিতে রাজী নয়, সে স্বামীর অবর্তমানে আরেকজনের সাথে মিলিত হয়- অল দ্যাট ইজ এ্যাবসোল্যুটলি ওকে। কিন্তু তাহলে সে বিয়ে নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানটিতে আছে কেন? বিয়ে তো দুপক্ষের সম্মতিতে একটি চুক্তি, তাই নয়? যে দুপক্ষ মিলে পরিবার গঠন করবে, সন্তান জন্ম দেবে, দায়িত্ব পালন করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
রয়া যদি প্রতিষ্ঠানটির শর্তাবলী মানতে না-ই চায়, সে তা স্পষ্ট করে বলুক, সে প্রতিষ্ঠানটি ত্যাগ করুক, সামিরকে ডিভোর্স দিয়ে দিক। সিনেমার শুরুর দিকে সামিরের সাথে মিলিত হবার পর তার চোখের কোণে কান্নার রেশ, আর এক্সপ্রেশানে ক্লান্তি অসন্তোষ এবং শেষের দিকে সামিরের বানিয়ে দেয়া চা কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করে দেয়া এই বার্তাই দেয় যে সামিরের সাথে সে সুখি নয়। তবে সে কেন তাকে ত্যাগ করছে না? কেন সে স্বাধীন হচ্ছে না?
কারণ সে শিল্পী হলেও, ইন্টেলেক্চুয়্যাল, প্রগতিশীল হলেও- একইসাথে সে একজন হিপোক্রিটও, কেবল স্বার্থপরই নয় সে, সে একজন লোভী হিপোক্রিট স্বার্থপর।
যে জীবনকে তার পছন্দমত চায়, জীবন থেকে কেবল ভালটাই চায়। সে সামিরকে বাচ্চা দিতে চায় না তার কাজে সমস্যা হবে বলে, কিন্তু সামিরের কাছ থেকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চায় যাতে তার কাজ সে চালিয়ে যেতে পারে, আবার সামিরকেই ফাঁকি দিয়ে সে ইমতিয়াজের সাথে মিলিত হয়।
আর যে কাজের জন্য এত কিছু, রয়ার সেই কাজটি কেমন? ইজ ইট ওঅর্থ ইট? সেই বালছালের বিষয়ে আগেই আলোচনা করেছি, আর নাহ।
পরিচালক রুবাইয়াতও তার চরিত্র রয়ার মত, কিংবা রয়াই তার মত। তিনিও তার মন মতই চান, ভালটাই চান।
তিনি নাম কা ওয়াস্তে টিভিতে শিবিরের পুলিশ পেটানো দেখিয়ে আর ফুলবাড়ি কয়লা খনির কথা স্রেফ উল্লেখ করেই ‘রাজনৈতিক’ হয়ে উঠতে চান, গার্মেন্ট্সকর্মীদের দুর্দশার দুএকটি ভিডিওক্লিপ দেখিয়েই তাদের কষ্টের কথা বোঝাতে চান, তাদেরকে ‘রেপ্রেজেন্ট’ করতে চান, একইভাবে ঢাকার দিকে ক্যামেরা তাক করে রেখে কিছু দৃশ্য ভিডিও করে দেখিয়েই তিনি ঢাকা কে রেপ্রেজেন্ট করতে চান ঢাকাকে সিনেমার একটি ‘চরিত্র’ করে তুলতে চান।
এবং ফেমেনিজম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের বালপাকনা, সেকেন্ড সেক্স এর দুপাতা পড়ে বগলের নিচে চেপে ধরে ঘুরেফিরে নিজেকে সিমোন দ্য ব্যুভোয়া মনে করা, ছবিরহাটে(আগে) বিড়ি খেতে খেতে ফেমিনিজম কপচানো বালক-বালিকাদের জেনারালাইজ্ড ফেমিনিজম, গোঁজামিল ফেমিনিজম।
রুবাইয়াতও ক্যাপিটালিজমের মতই। চোখে ডলার চিহ্ন আর মনে ‘হোয়াটেভার ওয়ার্কস’! রাজনীতি, নারীশ্রমিকদের দুর্দশা, রবীন্দ্রনাথ, ঢাকা ইত্যাদিকে ব্লেন্ডারে ফেলে গুলে অত্যন্ত ভেইগ এ্যাম্বিগিউয়াস ‘হোয়াটেভার’ নির্মাণ করে তিনি চান দর্শক নিজের মত করে কিছু একটা ধরে নিয়ে তাকে প্রশংসার বানে ভাসিয়ে দিক, দলে দলে গাঁটের পয়সা তাকে দিয়ে তার ‘হোয়াটেভার’টি দেখুক আর তিনিও ফেমিনিস্ট ফিল্মমেকার হয়ে উঠুন।
গল্প বলার প্রতি কোন মনোযোগ না দিয়ে, দুর্বল অযৌক্তিক বিভ্রান্ত সস্তা চিত্রনাট্য লিখে, চরিত্রগুলো গঠনে যত্নবান না হয়ে তার ব্যাক্তিগত ভাবনা প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে যথেচ্ছা ব্যবহার করে, সর্বোপরি তার মেসেজ কনভে করার জন্য অত্যন্ত কুৎসিত ভাবে সিনেমা কে ব্যবহার করে- রুবাইয়াত ফিল্মমেকিং ফিল্মমেকিং খেলতে চান এবং আশা করেন যে আমরা বাহ্বা দেব!
নো ম্যাম। নট আ চ্যান্স।
*
আরও অনেক কিছু বলা যেত, আরও অনেক দুর্বলতা বিশ্লেষণ করা যেত, কিন্তু লেখাটি ইতমধ্যেই বিশাআল হয়ে গেছে। পাঠককে আর ক্লান্ত বিরক্ত করতে চাই না, আমিও দুটির কোনটিই হতে চাইনা। এখানেই শেষ করছি,
শেষ আরেকটি কথা বলে।
*
সিনেপ্লেক্সের ৩নং হলে শো ছিল, হল ফাঁকা প্রায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশ-পঁচিশ জন বসে আছে এদিক ওদিক। আমার পাশে একটি ছেলে বসল, বয়স কত, চব্বিশ-পঁচিশ হবে। কথাবার্তায় আচরণে ঠিক স্টুডেন্ট ধরণের নয়, বরং বসুন্ধরার ফুড কোর্টের কোন দোকানের কর্মচারীর মত। এবং সে একা-ই, সাথে কেউ নেই। সিনেমা চলাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে আমাকে শুনিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করছিল, প্রশ্ন করছিল, অনেকটা যেন কন্ভারসেশানে আমন্ত্রণ জানানোর মত করে। বিরতির সময় পর্দায় একটি বিজ্ঞাপন দেখে মোটামুটি আমার দিকে একটু ঘুরেই মন্তব্য করল, বিজ্ঞাপনটি খুব ভাল হয়েছে। আমিও হেসে মাথা নাড়লাম, ঠিক। বলল, বিশেষ করে মেয়েটির কাঠের ব্রিজটি থেকে নিচের খাঁদে পড়ে যাবার দৃশ্যটি খুব বাস্তবসম্মত হয়েছে, সেটা কিভাবে করা হল কে জানে। আমি তখন তাকে মোটামুটি সরল ভাষায় ভিএফএক্স, গ্রিণ স্ক্রিনের বিষয়গুলো সংক্ষেপে বুঝিয়ে বললাম, শুনে খুবই আমোদিত হল।
সিনেমা চলাকালীন সময়জুড়েই নানা মুহূর্তে অল্প সেই কজন দর্শকের বিরক্তি টের পাওয়া যাচ্ছিল। ফিসফিস করে আশেপাশের লোকজন বিভিন্ন মন্তব্য করছিল, বিরক্তিসূচক আওয়াজ করছিল, অনেকে তো সরাসরি বাতাসে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, কি সিনেমা এটা? আমার পাশের ছেলেটিও নানা মুহূর্তেই ধৈর্য্যচ্যুতির প্রান্তে এসে নড়েচড়ে বসছিল।
সিনেমার চলাকালীন সময়ে অনেকেই বের হয়ে গেল, মধ্যবিরতিতে অনেকে বের হয়ে আর ফিরল না। সিনেমা শেষ হতেই সবাই উঠে দাঁড়াল। আমার পাশের ছেলেটি দাঁড়াতে দাঁড়াতে কেমন আক্ষেপ করেই মাথা নাড়তে নাড়তে নিজেকেই জিজ্ঞেস করছিল, কি এটা? কি এটা? তাকে খুবই বিষণ্ন দেখাল। আমি তার মুড একটু লাইটেন করার চেষ্টায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম সে পায়ে স্যান্ডেল পড়েছে কিনা। সে একটু বিষণ্ন হাসি হেসে বলল হ্যাঁ, আমি বললাম খুলে মারেন পর্দায়। সে হাসতে হাসতে মাথা নাড়ল। বলল, নাআআ . . . আপনারা তো এইরকম ছবি দ্যাখেন মনে হয় . . .। এখানে খুব ডিটেইলে না গিয়ে যোগ করা ভাল যে আমি সবসময়ই একই রঙের-ধরণের একটা পোশাক পড়ি এবং আমার বেশভূষা-চুল দেখে পথেঘাটে লোকজন আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করে আমি চারুকলায় পড়ি নাকি। হেন্স, ‘আপনারা’।
এক্সিট দিয়ে বের হয়ে গলি ধরে এগোতে এগোতে হঠাৎ খুব মন খারাপ হল ছেলেটার কথা চিন্তা করে। সে তো সিয়াটল ফিল্ম ফেস্টিভালে ওঅর্ল্ড প্রিমিয়ার বোঝে না, নারীবাদ বোঝে না, রক্তকরবী বোঝে না, না সে শাহানা গোস্বামীকে চেনে, না-ই রাহুল বোসকে। সে হয়ত ‘অঙ্গার’ ইতমধ্যেই দেখে ফেলেছে, তাই বাংলা সিনেমা আর কি চলছে জিজ্ঞেস করে, আন্ডার কন্স্ট্রাকশান দেখতে এসে বসেছিল। বাংলা ছবি দেখবে বলে। তারপরে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে খুব ক্লান্ত বিষণ্ন মনে ফিরল। আড়াইশটা টাকা জলে গেল।
সিনেমাটির পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন একটি সাক্ষাতকারে বলেছেন,
আমার মনে হয় যে আমাদের যে নরমাল অডিয়েন্স, আমি এখন তাদের জন্য ফিল্ম বানাই।
শুনতে ভাল শোনায়, বেশ গালভরা কথা। কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু . . . উনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে, উনার কাজ সম্পর্কে উনি মুখে কি বলেন সেটা প্রাসঙ্গিক নয়, উনি কাজে কি করলেন, উনার কাজটি প্রাসঙ্গিক। এবং উনার কাজটি, আন্ডার কনস্ট্রাকশন, নরমাল অডিয়েন্সের জন্য নয় মোটেও।
সিম্পলি পুট, সিনেমাটি স্রেফ তার নিজের মনের মত করে, কোন দর্শকের কথা মাথায় না রেখেই, নিজের খায়েশ মেটানোর জন্য বানানো। উনার নিজেরই বক্তব্য,
আর আমি আসলে, এমনি পারসোনালি আমি অন্য মানুষ কী ভাবে এটা আমি বেশি কেয়ার করি না। আমার লাইফেও করি না, আমার কাজেও করি না।
তাতে কোন সমস্যা? না, কোন সমস্যা নেই। যদি কেবল সিনেমা বানিয়ে ডিভিডিতে ভরে সকাল-বিকাল নিজের ল্যাপটপে প্লে করে দেখতেন। সমস্যা তখনই, যখন তিনি বলছেন নরমাল অডিয়েন্স এর জন্য সিনেমা বানিয়েছেন এবং বারবার আহ্বান করছেন হলে গিয়ে ছবি দেখতে।
দেশের নির্মাতাদের তরফ থেকে একটি ট্রেন্ড আজকাল আকার পাচ্ছে, সবাই খুব করে বলছেন ‘হলে যান, হলে গিয়ে সিনেমা দেখুন’। এবং দর্শককে খুব একটা গিল্ট ট্রিপিং করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। ‘ইউটিউবের লিঙ্ক খুঁজবেন না, টরেন্টে খুঁজবেন না, অন্যের রিভিউ পড়ে পিঁছিয়ে যাবেন না, সিনেমার হালের জন্য দায় আপনারও আছে, হলে গিয়ে সিনেমা দেখুন’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
না। দর্শকের কোন দোষ নেই। অবশ্যই সে ইউটিউবে লিঙ্কের অপেক্ষায় বসে থাকবে, অবশ্যই সে টরেন্ট থেকে নামিয়ে দেখবে, অবশ্যই সে অন্যের রিভিউ পড়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সিনেমার হালের জন্য দর্শক দায়ী নয়।
মানুষের জীবন কত মধুর চলছে, তা আমরা ভাল জানি, দেখছি প্রতিদিন। অবশ্যই সে বিনোদন খুঁজবে এবং যা তার ভাল লাগবে তা-ই গ্রহণ করবে। হলিউডের-বলিউডের সিনেমা দেখে ভাল লাগলে সে তা-ই দেখবে, টিভিতে স্টার জলসা দেখে ভাল লাগলে সে তা-ই দেখবে, পর্ণ দেখে ভাল লাগলে সে তা-ই দেখবে।
বাংলা সিনেমা ভাল না লাগতে লাগতে সে যদি বিশ্বাস হারিয়ে হলে গিয়ে দেখা বন্ধ করে দেয় এবং পরে ইউটিউবে টরেন্টে আসলে নামিয়ে দেখেও যদি বিরক্ত হয় এবং পরেরবার যদি নামিয়ে স্কিপ করে করে দেখে ফাইল রিসাইকেল বিনে পাঠিয়ে দেয় কিংবা না-ই নামায় আর, দ্যাট ইজ এ্যাবসোল্যুটলি ও-কে। সে টাকা কোথায় খরচ করবে, সিনেপ্লেক্সে হলিউডি সিনেমার টিকেটে, বলিউডি সিনেমার ডিভিডিতে, নাকি ক্যাবল আর ইন্টারনেট সংযোগের ভাড়া দিতে, সেটা তার সিদ্ধান্ত। তার কোন দোষ নেই।
সে একটু বিনোদন চায়। সে কেবল চায় তার ভাল লাগুক। সে চায় সে কোন চরিত্রের জন্য দুঃখি হয়ে কাঁদুক, তাদের মিলনে সুখি হয়ে কাঁদুক, কৌতুকে হাসুক, ভাললাগায় বুকটা ভরে যাক, ভরপুর এ্যাকশান দেখে তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ুক, কোন মুহূর্ত তাকে ভাবাকও।
নির্মাতারা চাইছেন বলেই দর্শক সুরসুর করে হলে চলে যাবে না। তাদের গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকেট কিনে সিনেমা দেখে বিরক্ত হবে না। কয়বার আর ধোঁকা খাওয়া যায়?
তো, যারা যথেষ্ট মানসিক এফর্ট না দিয়ে অল্পের উপরেই পার পেতে চান, দর্শকের কথা না ভেবেই নিজের বালছাল ভাবনার মেসেজ দিয়ে সিনেমা বানিয়ে আবার দর্শকের কাছেই আবদার করে বসেন হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে, বাংলা সিনেমার প্রতি দর্শকের মনে পাকা অবিশ্বাসের বিজ গাঁথার পেছনে যাদের মহান অবদান, সেইসব আত্মকেন্দ্রিক অলস-উদাসীন-অদক্ষ নির্মাতাদের প্রতি,
আ বিগ
*
সিনেমা দেরীতে
মন্তব্য
আমি আপনার পোস্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু আপনি ব্যক্তিগত রাগগুলো এখানে ঝাড়ার কারণে আমি লেখাটি ঠিকমত উপভোগ করতে পারিনি। এ ব্যাপারে একমত যে যখন কোন রিভিউয়ার ১০০% নিখুঁত বলে তখন সেই রিভিউকে সন্দেহের চোখে দেখা উচিৎ।
‘ব্যাক্তিগত রাগ ঝাড়া’র বিষয়ে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি সিনেমাটি দেখে এতই বিরক্ত হয়েছিলাম যে আমি নিজেও লেখাটি লেখা ঠিকমত উপভোগ করে উঠতে পারিনি। আশা করছিলাম আমার টোনটা এড়িয়ে গিয়ে পাঠক বিশ্লেষণগুলোতে মনযোগ দিতে পেরে উঠবেন।
সিনেমাটি কিন্তু ১০০% জঘন্যও নয়। কয়েকটি অত্যন্ত চমৎকার দৃশ্য এবং কিছু চমৎকার অভিনয় ছিল। কিন্তু সেগুলো অন্যান্য দুর্বলতার পর্বতসম ভারে চাপা পড়ে বিশেষভাবে কার্যকরী হয়ে উঠতে না পারায়, লেখাটির ফোকাস শিফ্ট হয়ে যায় এবং লেখাটি আরও বড় হয়ে যায় বলে, ওগুলো সম্পর্কে কথা বলা এড়িয়ে গিয়েছি।
ওয়ান্স আগেইন, আই এ্যাম সরি দ্যাট য়্যু কুডন্ট এনজয় দ্যা পিস প্রপারলি।
*
সিনেমা দেরীতে
ব্যাক্তিগত রাগ ঝাড়া বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য স্পষ্ট করতে চাই,
এটি কিন্তু ‘মানুষ আমি’ র ‘মানুষ রুবাইয়াত’ এর প্রতি রাগ নয় বরং ‘সিনেমা দর্শক আমি’ র ‘সিনেমা নির্মাতা’ র প্রতি রাগ।
*
সিনেমা দেরীতে
তবে আমি সবসময়ই আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকব।
প্রথম লেখায় উল্লেখ করা সেই '৮৮তম অস্কারের সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র' লেখাটি লিখছি। আশা করি ভাল লাগবে।
*
সিনেমা দেরীতে
মজা পেলেন খুব?
*
সিনেমা দেরীতে
আপনার এই বিশাল রিভিউ পড়ে ফেললাম। সিনেমা যেহেতু দেখিনি, নির্দিষ্ট করে ঘটনাগুলোর উপর কমেন্ট করতে পারছি না। এই পরিচালকের ‘মেহেরজান’-এর সুনাম শুনে হলে সিনেমা দেখতে গিয়ে খুব হতাশ হয়েছিলাম, তাই এই সিনেমাও খুব অসাধারণ কিছু হবে আশা করি না।
আপনার অনেক বক্তব্যের সঙ্গে সহমত কিন্তু অনেক জায়গাতেই আপনার বক্তব্য সত্ত্বেও মনে হয়েছে যে সিনেমা এবং পরিচালকের উপর আপনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ। আর রয়ার বাচ্চা না নেবার প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে পারিনি, একজন মানুষের ইচ্ছে নাই থাকতে পারে বাচ্চা নেয়ার, তাই না?
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
বিশাল রিভিউটি ধৈর্য্য ধরে রেখে পড়ে ফেলার জন্য ধন্যবাদ।
ক্ষুদ্ধ বেশ কড়া শব্দ, আমি আদতে ‘বিরক্ত’ এবং আমার বিরক্তি বিষয়ে আমি নিজেই লেখায় শুরুর দিকে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
অবশ্যই! আমি তো সেটাকে আপত্তিকর বলে চিহ্নিত করিনি! বরং বলেছি,
কোন সমস্যা নেই। কোন কিছুতেই কোন সমস্যা নেই। আকাশ তো আর ভেঙে পড়বে না! আমি কেবল এসব বিষয়ে রয়ার (বিশেষ যখন তাকে একজন স্বাধীনচেতা শিল্পী হিশেবে উপস্থাপন করা হয়েছে) নিজের অবস্থান স্পষ্ট না করা, স্পষ্ট করা হলে রেজাল্টিং রেসপন্সিবিলিটি কাঁধে নেয়ার অনিচ্ছা ইত্যাদি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
এটাতেই বা আপত্তির কি আছে? পরিচালকের কাছে ফেমিনিজমের ব্যাখ্যা যদি তাই হয়ে থাকে।
এটাতেই বলতে ঠিক কোনটির কথা বোঝাচ্ছেন? রয়ার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে নাকি তার অবস্থান স্পষ্ট না করাতে?
আপত্তি কোন কিছুতেই নেই তো! যেমনটি বলেছি, আকাশ তো আর ভেঙে পড়বে না! আমি কেবল, চরিত্র কি করলে দর্শক হিশেবে আমি তাকে কিভাবে পাঠ করব, সে বিষয়ে বলেছি।
বিগার পিকচারে, কোন কিছুই কিভাবে আপত্তিকর মনে হতে পারে? উই আর স্রেফ স্টারডাস্ট, তাই না?
ইজমগুলো এমন যে কেউ কোন ইজমের ব্যাপারে নিজের ইন্টারপ্রেটেশান স্পষ্ট করে প্রবন্ধ আকারে না লিখলে, বিস্তারিত সাক্ষাতকারে না বললে, কার ব্যাখ্যা যে কি তা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে।
*
সিনেমা দেরীতে
হুমম, তারকাখচিত দেইখাই ভাবতাছিলাম আপনার লেখা। রুবাইয়াতের জন্য সমবেদনা!
রিভিউ পইড়া বুঝলাম, সিনামাডা নিরপেক্ষ হইলেও স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হয় নাই।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বলা প্রয়োজন, টেকনিক্যাল নির্মাণের কোন আন্তর্জাতিক মান ঠিক নেই! চমৎকার গল্প বলার জোরে টেকনিক্যালি কাঁচা নির্মাণের সিনেমাও আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠতেই পারে।
আন্ডার কনস্ট্রাকশন টেকনিক্যালি বেশ ভালো মানের। গল্প বলায় সেটি, আন্তর্জাতিক দূরে থাক, কোন মানেরই নয়!
*
সিনেমা দেরীতে
অনেক মজা লাগলো লেখাটা পরে. লেখাটা পরে যদিও মনে হতে পারে যে আপনি পুরাই personal রাগ ঝেরেছেন কিন্তু তারপরেও আমি সত্যি লেখাটার সাথে একমত না হয়ে পারতেছি না. । আমি সিনেমা টা দেখি নাই... দেখার ইচ্ছা ও নাই.. আর সত্যি সত্যি . আমার এখন বাংলাদেশ এর সিনেমার প্রতি কোনো বিশ্বাস নাই... সিনেমা হল এ গিয়ে খরচ করার তো প্রশ্ন ই আসেনা।. ইউটুবে এ ফ্রি hd কোয়ালিটি পাওয়া গেলেও আমি দেখতে চাই না... সিনেমা / নাটক এর মূল কথা হলো entertainment . (এখানে entertainment বলতে শুধু নাচ-গান আইটেম না... একটা ভালো গান। . একটা ভালো বই.. একটা ভালো সিনেমা মন ভালো করে দেয়...আমার কাছে সেটা entertainment ... অনেক সময় মিরাক্কেল এর ছ্যাবলামি ও মজা লাগে.. কিন্তু বাংলাদেশ এর পরিচালক রা ছ্যাবলামি টাও ঠিক করে execute করতে পারে না...নিজেরা যে ছ্যাবলা সেটা ঠিক এ প্রমান করে. ) সেটার বদলে বিরক্ত হবার জন্য তো সিনেমা দেখব না...
আর পরিচালক দর্শক এর কথা না ভেবে শুধু নিজের ভাবনা গুলো কে represent করার জন্য সিনেমা বানাতে পারে।. সেটার ও প্রয়োজন আছে... কিন্তু তাদের ভাবনার যদি কোনো আগা -মাথা না থাকে. জাস্ট পরিচালক বলল এটা contemporary আর্ট আর আপনি দর্শক হয়ে কি পরিচালক এর থেকে বেশি বুঝেন.. তাই আমাদের ও মেনে নিতে হলো... কোনো মানে হয়?
সমালোচনা করতে গেলেই এরা টাকা -পয়সার দোহাই দেয়। .. টাকা-পয়সা একটা ফ্যাক্টর ঠিক আছে... .কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা dedication .. এইটাই নাই... ঘরে ঘরে সিনেমা ডিরেক্টর।.. সবাই বিশ্ব আঁতেল।.
সত্যাজিত রায় ১০০ বছরে একটা ও জন্মায় কিনা সন্দেহ।. সবাই কে সেটা হইতেও হবে না.. কিন্তু শুধু একটা গল্প একটু যত্ন নিয়ে বলা...এটা করতে কি সত্যজিত রায় হওয়া লাগে?
দর্শকের কথা ভাবা প্রসঙ্গে বলতে চাই,
দর্শকের কথা ভাবা মানেই দর্শকের চাহিদা অনুসারেই বানাতে হবে বলছি না। পরিচালক যদি আনকম্প্রমাইজিংলি কেবল নিজের ভাবনাগুলো কমিউনিকেইট করতে চান, তাহলে
প্রথমত, অবশ্যই তার ভাবনার ‘আগা-মাথা’ থাকতে হবে, তার নিজের আগে স্পষ্ট বুঝতে হবে তিনি কি কমিউনিকেইট করতে চান। তার যে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতেই হবে কোন বিষয়ে তা নয়। কিন্তু অন্তত তিনি কি এক্সপ্লোর করতে চান সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে তার।
দ্বিতীয়ত, দর্শকের সাথে কিভাবে কমিউনিকেইট করতে হয়, কিভাবে কার্যকরী চিত্রনাট্য রচনা করতে হয়, কিভাবে গল্প বলতে হয়, সে জ্ঞান থাকতে হবে। দর্শক কোন জিনিস কিভাবে ইন্টারপ্রেট করতে পারে তা এন্টিসিপেইট করে চিত্রনাট্য সাজাতে হবে নিজের ভাবনা সফলভাবে কমিউনিকেইট করার স্বার্থেই।
তৃতীয়ত, কোন ধরণের দর্শকের সাথে কমিউনিকেইট করতে চান এই ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সব ধরণের দর্শকের জন্য ড্র্যামাটিক সিনেমা বানাতে গেলে লেজেগোবরে করে ফেলার সম্ভাবনা সমূহ। আর্টহাউজের দর্শকের কাছে আইটেম গানা ভাল লাগতেই পারে, আইটেম গানার দর্শকের কাছে আর্টহাউজ ভাল না লাগার সম্ভাবনা প্রবল।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
সিনেমাটা দেখিনি, আপনার মুখে ঝাল খেয়ে বলছি, আমার মনে হয় পরিচালক অন্তত একটা বার্তা দর্শকের কাছে তুলে ধরতে পেরেছেন। সেটা হচ্ছে, ইমতিয়াজের মতো বিলাতফেরত চরিত্রগুলো বিনা তর্কে একটা অবস্থান বা একটা সিদ্ধান্ত বা একটা স্টেটমেন্টের গায়ে তর্কাতীত গ্রহণযোগ্যতার সিল মেরে দিতে পারে। আমাদের সমাজে রাসেলরা চিল্লাবে, রয়ারা বিপ্লব করবে, কিন্তু কোনটা ঠিক-বেঠিক, সে মীমাংসা যুক্তিতর্কে হবে না, হবে ইমতিয়াজদের কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সার্টিফিকেটে। ইমতিয়াজরা তাই সিনেমায় কোনো বাড়তি কথায় যায় না। নেটিভদের সাথে আবার যুক্তি কীসের? আরেকটু তলিয়ে দেখলে হয়তো ইমতিয়াজ চরিত্রে পরিচালকের ছায়াটাও দেখা যাবে। উনিও ইমতিয়াজের মতো "বন থেকে বেরোলো টিয়ে, সোনার টোপর মাথায় দিয়ে"। উনি বলবেন, সিনেমাবনের শেয়াল রাজারা হুক্কাহুয়া দেবে, পাবলিক হাততালি দেবে। যুক্তিতর্কের মতো নেটিভোচিত বাকতাল্লা আবার কেন?
এটা স্রেফ নিজেদের রাস্তা ক্লিয়ার রাখার জন্য। যাতে, নিজেদের ছবির প্রিমিয়ারে তাঁরাও ভালো প্রতিদান পেতে পারেন।
@হিমু
এই ধরণের পরিচালকেরা মুখে যতই 'দর্শকের ইন্টারপ্রেটেশানের উপরে ছেড়ে দিয়েছি' বলুক কিংবা কিছু কিছু বিষয় এ্যামবিগিউয়াস রাখতে চাক, নিজেদের অস্পষ্ট ভাবনা চিন্তা কমিউনিকেইট করার স্বার্থেই প্রায়ই তাদের প্রয়োজন হয়ে পরে যে কিছু কিছু বিষয় যেন তর্কাতীতভাবে গ্রহণ করে নেয়া হয়, আর তাতেই ইমতিয়াজেরা এসে পড়ে।
*
সিনেমা দেরীতে
যারা সিনেমা বানানোর ক্ষেত্রে টাকাপয়সার দোহাই দেন তাদের এই সিনেমাটা দেখা উচিত। ১৯৯২ সালের হিসাব অনুযায়ী এই সিনেমাটা বানাতে ২,৮০,০০০ বাংলাদেশী টাকা খরচ হয়েছিল। পয়সা ঢাললেই গু-গোবর শিল্প হয়ে যায় না, বা নাপিত সার্জন হয়ে যায় না।
দ্যা রেবেল উইদাউট আ ক্রু! ও একটি নির্দিষ্ট ঘরানার সিনেমা বানায় ঠিক, কিন্তু সকল ধরণের ইন্ডিপেন্ডেন্ট নির্মাতাদের জন্যই ওর ভাবনা-প্রক্রিয়াগুলো খুবই প্রযোজ্য-জরুরি।
*
সিনেমা দেরীতে
মেহেরজান ছবির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ এই ছবির কারণে ন্যারেটিভ, গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ, কাউন্টার ন্যারেটিভ, ডিসকোর্স, কাউন্টার ডিসকোর্স, আর্টিফিশিয়াল কনস্ট্রাক্ট, রিকন্সলিয়েশন, হেজিমনি এইসব নানা শব্দ শিখেছি। এককালে কষে GRE ফাইট দিলেও এইসব শব্দ শোনা ছিল না বাপের জন্মেও। শিখেছি একতাল গোবরকে মিষ্টান্ন বলে প্রমাণ করা সহজ। শুধু গোবরের উপর ন্যারেটিভ, গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ, কাউন্টার ন্যারেটিভ, ডিসকোর্স, কাউন্টার ডিসকোর্স, আর্টিফিশিয়াল কনস্ট্রাক্ট, রিকন্সলিয়েশন, হেজিমনি এই শব্দগুলোকে ছড়িয়ে দিলেই হবে। মেহেরজান নিষিদ্ধ করা হয়নি। চলেনি বলে এবং খানিকটা বিরক্ত হয়ে পরিবেশক ছবি নামিয়ে নিয়েছিল। তারপরেও মেহেরজান নিষিদ্ধ হয়েছে বলে বারবার প্রচার করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই। দেশে ভালো ছবি দুষ্টু লোকে চলতে দেয় না, দেশে স্বাধীনতা নাই, দেশের অনলাইনের বখাটে পুলাপান সিনেমা বুঝে না এইসব বলে পরিচালক এবং তার ল্যাংবোটরা যথেষ্ট জল ঘোলা করেছে। এই একতাল গোবরের উপর ডিসকোর্স, ন্যারেটিভ এবং নিষিদ্ধ ছবি এর টপিং দিয়ে একে সিন্নি বানিয়ে বিদেশের নানা ফিল্ম ফেস্টিভালে ঘুরেছে এই ছবি। কয়েকটি ডিজিটাল পুরস্কার পেয়েছে এই ছবি, যা নাকি অনলাইনে গিয়ে ডাউনলোড করে নিতে হয়!
এই পরিচালকের দ্বিতীয় ছবির প্রতি আগ্রহ নেই তেমন। তবে ছবির রিভিউ পড়ে আগ্রহ জেগেছে খানিক। এই লেখার টোনের কারণে অনেকের কাছে হয়তো এই লেখাটার কোন অংশ ভাল নাও লাগতে পারে। প্রথাগত নিরপেক্ষ নির্দলীয় আন্তর্জাতিক মানের রিভিউ না এটা। বরং তীব্র বিরক্ত হয়ে সিনেমা এবং তার পরিচালককে আক্রমণ করা হয়েছে বারবার। কিন্তু আমার কাছে সব মিলিয়ে রিভিউ দারুণ লেগেছে। বিভিন্ন সিনের খুঁটিনাটি বর্ণনা আর বিশ্লেষণ দুটাই বেশ লেগেছে।
নতুন নতুন পরিচালকেরা এসে সিনেমা বানাক, চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাক এটাই চাই। কিন্তু সেইসাথে বাস্তবতা আর প্রত্যাশার লাগাম টানাও জরুরী। দুই ঘণ্টা লম্বা একটা নাটক বানিয়ে সেটাকে সিনেমা বলে চালানো শুধু নয় সেইসাথে নিজেকে কুরোসাওয়া, স্পিলবার্গ, গদার, ফেলিনি মনে করা থামানো দরকার। তিন আঙ্গুলের এক চিমটি দুঃখ, একমুঠ ফেমিনিজম, আর আধাসের পয়সা মেশালে সেটা মোটের উপর একটা আর্ট ফিল্মের স্যালাইন হয়। কিন্তু সেই স্যালাইনকে অমৃত বলে সবাইকে জোর করে গেলানো আর যে গিলবে না তারা বোদ্ধা নয় বলে মাথা ঝাঁকানো বন্ধ করা দরকার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে কষ্টের আর সবচেয়ে আবেগের অংশ হচ্ছে বীরাঙ্গনা। সেই ব্যাপারটাকে কাউন্টার ন্যারেটিভের নামে কি জঘন্যভাবেই না দেখানো হয়েছে মেহেরজানে। পাক সেনার হাতে ধর্ষিতা নারী সেখানে বলে, এটাই তার ধর্ষণের প্রথম অভিজ্ঞতা নয়, এর আগেও সে ছাত্র ইউনিয়নের হাতে ধর্ষিত হয়েছে। পারলে পরিচালক দেশের সমস্ত বীরাঙ্গনাদের মুখ দিয়ে বলাতো, এই ধর্ষণ ধর্ষণ না আরও ধর্ষণ আছে। তাই আসুন আমরা গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ ভুলে কাউন্টার ন্যারেটিভ কোলে তুলে রিকন্সলিয়েশনে যাই। এই পরিচালকই মেহেরজানের প্রায় সমস্ত নারী চরিত্রকে অপমান করেছেন, বারবার, নানাভাবে। এই একই পরিচালক যখন তার নতুন ছবিতে ফেমিনিজমের রক্ষাকর্তা বনে যান তখন সন্দেহ হয় বৈকি।
রুবাইয়াত একটি সাক্ষাতকারে বলছেন,
*
সিনেমা দেরীতে
২০১২ সালে স্পেনের সারাগোসায় সেসিলিয়া খিমেনেজ নামে এক বর্ষীয়সী এক কাজ করে বসেছিলেন। এলিয়াস গার্সিয়া মার্তিনেজের এক্কে ওমো নামের একটা শতবর্ষ পুরোনো ফ্রেস্কোর একটা অংশ চটে গিয়েছিলো। সেসিলিয়া পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিয়ে সেটা "মেরামত" করতে বসে পড়েন।
ওপরে ছবির বামে আছে মূল ফ্রেস্কো, ডানে আছে সেসিলিয়ার, আরো ভালো কোনো শব্দের অভাবে, "ইন্টারপ্রিটেশন"।
আপনার পোস্ট পড়ে এই ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো।
আশা করি রুবাইয়াত "নন্দিনী"র মতো আরো বহু কপিরাইটেরপাঁচিলমুক্ত সাহিত্যকীর্তির নতুন নতুন ইন্টারপ্রিটেশন দিয়ে বছর বছর লোক হাসাবেন।
নেটে খুঁজে পড়লাম, হাসতে হাসতে শেষ। কজমিক জোক!
*
সিনেমা দেরীতে
অনেকক্ষণ সময় নষ্ট করে পড়লাম। আপনি বহুৎ সময় নষ্ট করে ছবি দেখছেন এবং রিভিউ লিখছেন। তবে লেখাটা আরেকটু ক্রোধমুক্ত হলে পড়তে ভালো লাগতো।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
সিনেমা নিয়েই যেহেতু কাজ, ছবি তো সবই দেখি, জঘন্য ছবিও দু’তিনবার করে দেখি, ‘হোয়াট নট টু ডু’ লাইনে বেশ জ্ঞান অর্জন করা যায়।
ক্রোধযুক্তিতে পাঠ কঠিন হয়ে যাওয়ায় দুঃখিত, অনেকেই বলছেন, লেখাটি লিখে বোধহয় কয়েকদিন অলস ফেলে রাখা উচিত ছিল!
*
সিনেমা দেরীতে
এই সিনেমা সম্পর্কে আমার এক বন্ধুর একটা ছড়া পড়েছিলাম, আর আজকে আপনার এক রিভিউ পড়ার পর প্রতিজ্ঞা করলাম যে গিন্নি যতই বায়না করুক হল এ গিয়ে এই ছবি দেখার - আমি কিন্তু নাই । বন্ধুর ছড়া টা শেয়ার করলাম এখানে -
‘আন্ডার-কন্সট্রাকশন’ সম্পূর্ণ রঙ্গিন এই নতুন বাংলা ছবিখান,
জগাখিচুড়ি রেসিপিতে পাকানো- ব্যাঞ্জনে লবণের অন্তর্ধান।
বছর কয়েক আগে মুক্তি পেয়েছিল আরেকখানা ছবি মেহেরজান-
যুদ্ধদিনে কামনার আগুনের আহা উহু- সে এক উত্তপ্ত উপ্যাখান।
ছবি নির্মাণের সৃজনশীলতায় শুধু নেই থেমে এই বিদুষীর অবস্থান-
বীরাঙ্গনার নীলগল্প ছেপে, মুক্তিযুদ্ধের দলিলেও করে নেন তিনি স্থান।
তস্য বিদুষীর পিতাও একজন গন্যমান্য দাতাকর্ণ মহান-
আবুল নামকরণে করিলেন তিনি, জাতির সমগ্র আবুলদের অপমান।।
*
সিনেমা দেরীতে
মেহেরজান দেখিনি এটাও দেখবো না, পিরিওড। তারপরও কেন এই বি -- শা--- ল রিভিউটা পড়লাম?
আপনি নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন সচলের পাঠক আপনার লেখা বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েন/ পড়ছেন।
সেই আগ্রহই বলতে পারেন এটা পড়িয়ে নিলো। স্বীকার করছি এটি পড়তে গিয়ে ধৈর্য চ্যুতি ঘটেছে।
সাধারণত সিনেমা বিষয়ক লেখায় এমনটা হয় না। পাঠকই বলুন কিংবা দর্শক দুই ক্ষেত্রেই আমি নিরালম্ব অাকাঠ মূর্খ।
তবে এটুকু বুঝি, একচেটিয়া প্রশংসার সুনামি বইয়ে দেয়া যেমন কাজের কথা নয়, একইভাবে ধুমিয়ে নিন্দা করলেও যার উদ্দেশ্যে লেখাটা তিনি বা তার চারপাশের উপগ্রহ সকল এটি মন দিয়ে পড়বেন না। আর যদি নাই পড়েন তবে এত কষ্ট করে লিখে কী লাভ বলেন! নিজের ভুলটা শুধরে শেখার পথটা তাহলে বন্ধই থাকছে। অবশ্য রুবাইয়াত তো বলেই দিয়েছেন তিনি কারো কথাকে কেয়ার করেন না। এই যার মনোভাব তিনি মানুষের জন্য সিনেমা বানান এমন দাবী করাটাই তো তার অনুচিৎ। শুধু আমাদের পাঠক সমাজকে অবহিত করার জন্য লিখে গেলে তো বাংলাদেশের বর্তমান সিনেমার হাল দেরিতে কেন, কোনো দিনই সাবালকত্বে যাবে বলে মনে হয় না। টিপ সংক্রান্ত বিষয়ে বলেছেন, ওটা রুবাইয়েত বেগমের নিজস্ব সৃষ্টি না। ওরকম দৃশ্য ভারতীয় কোন সিনেমায় দেখেছি। ঠিক কোন সিনেমায় দেখেছি মনে করতে পারলে বলে যাবো। কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমত আছে। কিন্তু যেহেতু এই মহিলার বিষয়ে আগ্রহ নাই তাই রয়া'র মতই কই, মুড নাই
এই সিনেমা নিয়ে পত্রিকায় দেখলাম প্রশংসার সুনামি বয়ে গেছে। যারা সিনামির হোতা তারা বর্তমানের সিনেমা তৈরির জগতের নিধিরাম সর্দার সকল বলাই বাহুল্য। আপনার এই মন্তব্যটা সরলীকরণ হয়ে গেলো ভাই
এটা কী তারেক মাসুদ কিংবা তাঁর সমমানের পরিচালকদের ক্ষেত্রে খাটে বলে ভাবেন? সেক্ষেত্রে বর্তমান শব্দটা বসালে ভালো হতো। 'রক্ত করবী'র বিশু পাগলের মুখে একটা সংলাপ ছিল না? গাম্ভীর্য বোকাদের মুখোশ, আমি তা খসাতে এসেছি(স্মৃতি থেকে লিখছি, ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী), আপনি খানিকটা সেভাবেই ইমতিয়াজদের অনেক জানি কিন্তু কমু না'র হাবভাবে পানি ঢালতে থাকেন। আপনার পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকছি। শুভকামনা।
আমিও ভাবছিলাম আপনি লেখাটির ঘোরতর নেতিবাচক ভাইবের বিষয়টি কিভাবে নেবেন।
*
একটি কথা বলতে চাই, আমি আসলে ইনফর্মাল ব্লগের মত করেই লিখছি। যদি পত্রিকায় লিখতাম হয়তো অনেক নিয়ন্ত্রিতভাবেই লিখতাম, কিন্তু ব্লগে লিখছি কারণ ব্লগের এই স্বাধীনতাটি আমার পছন্দ। ব্যাক্তিজীবনে আমি কথা বলি কম, কিন্তু যখন বলি, নিজেকে সেন্সর করি না।
*
‘ধুমিয়ে নিন্দা’ প্রসঙ্গে উপরে করা আমারই একটি মন্তব্য ব্যবহার করছি,
আসলে বিষয়টি হল, খুব নিম্নমানের কোন সিনেমা নিয়ে লেখার বিপদ এই যে, সংক্ষেপে ন্যায্যভাবে দুর্বলতাগুলো ব্যাখ্যা করাও যায় না, আবার বিশদ বিশ্লেষণে গেলে পাঠকের জন্য লেখাটি ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে।
তবে এটিও বলতে চাই লেখাটিতে আমি কেবল সিনেমাটির সমালোচনাই করিনি, প্রাসঙ্গিকভাবে, সিনেমা বিষয়ে, সিনেমা কিভাবে দেখা যেতে পারে, কি বিষয়ে মনযোগ দেয়া যেতে পারে ইত্যাদি আলোচনাও করেছি। যেমন, কোন তথ্য প্রেজেন্ট করা হলেই তা গ্রহণ না করে বরং সিনেমায় চরিত্রগুলোর উপস্থাপন পাঠ করেই সিদ্ধান্তে আসার পয়েন্টটি।
*
টিপ বা আয়নার কারসাজিটি আসলেই পুরোনো। ধারণা করেছি, কমবেশী সকল দর্শকই কখনও না কখনও অমন ট্রিক দেখেছেন, তাই আর উল্লেখ করিনি।
*
পরিচালকদের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলব, এই বাক্যটির পরে,
অবচেতনভাবেই ধরে নিয়েছিলাম যে বর্তমানের পরিচালকদের বিষয়ে বলছি এটি কমিউনিকেইট করা হয়ে গেছে। আমারই ব্যার্থতা। তারেক মাসুদ বা তার সমমানেদের ক্ষেত্রে অবশ্যই খাটে না।
সরলীকরণ প্রসঙ্গে বলব, আমি অনেক বছর ধরেই নিয়মিত পড়ছি, যেকোন প্রকাশনায় পরিচালকদের সাক্ষাতকার, লেখা কিংবা তাদের ফেইসবুকের স্ট্যাটাস, যেখানে যা পাচ্ছি তা-ই পড়ে ফেলছি, আমার সেই অভিজ্ঞতার সূত্র ধরেই বলা।
*
উক্তিটি রক্তকরবীর ম্যাক্গাফিন, অলটাইম অনুপস্থিত ‘রঞ্জন’ এর।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
ঠিক ঠিক। ওটা রঞ্জনের কথা। মোড়ল বলে ঠিক না? আমি তো বাপু ১২ বছর ধরে রক্তকরবীর সাথে জড়িত নই।
তাই ভুল হতেই পারে নাকি বলেন! ভুলটা শুধরে দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আগেই বলেছি আমি আকাঠ, তাই আপনার লেখার সরলীকরণের(যেটা আমার মনে হয়েছে আর কী) বিষয়টা ধরতে পারিনি।
জ্বী হ্যাঁ, ব্লগের এই স্বাধীনতাটা আছে। যা কাগুজি মাধ্যমে লিখতে গেলে অতটা পাওয়া যায় না। সেখানে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা মাথায় রাখতে হয়। তবে ব্লগ বলেই পাঠককে পড়িয়ে ক্লান্ত করে দেয়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ না মনে হয়। সিনেমা নিয়ে আপনার ভাবনার সাথে আমরা খানিকটা হলেও একাত্মতাবোধ করছি কোথাও একটা, এটা তো স্পষ্ট। আর আপনার প্রথম পোস্টেও সিনেমার এই বিষয়ে খানিকটা বলেছেন বলে মনে পড়ছে। পুনারাবৃত্তির প্রয়োজন ছিল না। যাইহোক, লিখুন আরো বেশি বেশি। ধন্যবাদ।
এটা খেয়াল করিনি আগে৷ ঠিক বুঝলাম না, ভালও লাগলোনা এই কথাটা৷
কোন ব্যাখ্যা ছাড়া ওটা দেয়াটা বোকামী হয়ে গেছে, লেখার তোড়ে দিয়ে ফেলেছিলাম। কথাটা সিনেমায় সাবাহ্র একটি সংলাপের প্রসঙ্গে বলা।
সে রয়াকে ‘বিয়িং আ মাদার ইজ দ্যা বেস্ট’ এই ধরণের কথা বলার ঠিক পরেই কনভারসেশান-
সাবাহ্, ‘আই এ্যাম ল্যাক্টেইটিং’
রয়া, ‘ল্যাক্টেইটিং?!’
সাবাহ্, ‘ইয়েস ডার্লিং! এখন পাওয়ার পাম্পিং আর ব্রেস্ট ফিডিং, এই দুটোই আমার প্রধান কাজ হয়ে দাড়াইসে’
শেষ কথাটি সে এত বিরক্তিসহকারে বলে যে রয়ার মতই সে একই ভাইব দেয়, সে কেবল বেছে বেছে তার পছন্দমতই চায়। সে মাতৃত্বের অনুভূতির ভাললাগা চায়, কিন্তু ল্যাক্টেইটিং, ব্রেস্টফিডিং চায় না।
আমি ইম্প্লাই করতে চেয়েছি, তার যেরকম পেটি কনফিউজ্ড মানসিকতা ‘মেয়ে’দের বিষয়ে এবং কোন বিষয়ে প্রাসঙ্গিক দায়দায়িত্ব পুরোটুকু নিতে অনিহা তাতে, পিএচডি’র চেয়ে বরং তার অপছন্দের কাজটিই তার জন্য বেশী এ্যাপ্রোপ্রিয়েইট।
*
সিনেমা দেরীতে
Make sense now. সরি, ওই কথাটা আরেকজন পয়েন্ট আউট করার পর আমার কাছেও কেমন যেন লেগেছিল। কিন্তু ব্যাখ্যা শুনে বুঝলাম।
*
সিনেমা দেরীতে
আমাদেরে দেশ এখন সাফল্যের আনন্দে ভাসছে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাফল্যের ধারণাটা ‘প্রভাবিত’।[ ‘প্রভাবিত’ শব্দের বদলে ইংরেজি (manipulated) শব্দটি দরকার পড়ছে! কারণ কারণ বাংলা চর্চার ‘বেইল’ নেই।] এমন এমন ‘হেভিওয়েট’ মানুষকে দিয়ে ধারণাকে প্রভাবিত করা হয় যে, কারো মনে যদি ভিন্ন কোনো প্রশ্নও জাগে সে চুপ মেরে যাবে। এই প্রক্রিয়ার কারণে কেউ নির্মোহভাবে কথা বলার অনুশীলন করতে পাছে না। সামনে বিরাট প্রশংসা করলেও আড়ালে বলেন ভিন্ন কথা। ফলে আমাদের দেশে সমালোচনার সাধারণ ভাষাও গড়ে উঠতে পারছে না। যেভাবে প্রভাব ঘটে তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয় ‘ঘৃণা’ দিয়ে। আপনার রচনাটিও সেই সূত্রের বাইরে নয়। আপনার রচনাটির বক্তব্যসূত্রগুলো নিঃসন্দেহে প্রণিধানযোগ্য অথবা বিবচনাযোগ্য, কিন্তু প্রকাশভঙ্গি বিপরীত ‘ভাব’-এ প্রভাবিত। এই ধরনের রচনার প্রকাশভঙ্গির সৃজনশীলতা গুরুত্ব পেলেও মত গুরুত্ব পায় কম। আপনার রচনায় উল্লিখিত প্রতিটি সূত্রেরই যৌক্তিক কাঠামো রয়েছে। কিন্তু সেই যুক্তিকে উপস্থাপন করেছেন ‘ঘৃণা’-ভাবে। ফলে যুক্তিগুলো ধার হারিয়েছে। বক্তব্যে যৌক্তিক খণ্ডন মোটেই অগ্রহণীয় নয়, কিন্তু গালাগাল আমলে না নিলে কাউকে দোষারোপ করা যাবে? আমি ভুলে যাচ্ছি না যে, অাজকালকার সম্মিলিত intellectual ‘ভণ্ডামি’র বিপরীতেই আপনার এই ‘intellectual ’ ‘ঘৃণা-ভাব’-এর প্রকাশ। আপনিও যদি ‘নির্মোহ’ বা ‘নির্ঘৃণ’ ভাষাভঙ্গিতে এই রচনাটি লিখতেন তাহলে স্বনামে বক্তব্য প্রকাশেও নির্ভীক হতে পারতেন। আমার মনে হয় আমাদের যুগে ‘সত্য’কে প্রকাশ্যে বলার সাহসের অভাব থেকেই সব manipulated ধারণার প্রকাশ ঘটতে থাকে। সমালোচনা করে কোনো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না থাকলে ‘নির্মোহ’ হতে অসুবিধা কী!
আমার লেখাটি কোন ‘চলচ্চিত্র সমালোচনা’ নয়। এটি ব্লগ-মাধ্যমে আমার ভাবনার প্রকাশ, ইনফর্মাল ভাষায় আলোচনা।
ঘৃণা বলব না, তবে প্রবল অসন্তোষের সাথে, হ্যাঁ। পেছনের কাহিনী, খুব ডিটেইলে না গিয়ে, একটু ব্যাখ্যা করি।
আমি মূলত উপন্যাসের পাঠক, উপন্যাসকেই আমি ব্যাক্তিগতভাবে একমাত্র শক্ত শিল্প মনে করি, সে দিকে না যাই, সিনেমা আমার কাজ, ভাললাগা কাজ, কাজটি আমি আন্তরিকতার সাথেই করতে চাই।
আমি মনে করি, কনজ্যুমারের দাবীর ভিত্তিতে প্রডিউসারের উন্নতি ঘটবে।
বই পড়া প্রসঙ্গে বলি। আমাদের বইয়ের দোকানগুলো সাধারণত ভারত থেকে বই নিয়ে আসে, ভারতে যা পাওয়া যায় তা-ই আনে, ফলে বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। মিলান কুন্ডেরার সব বই পেতে আমার দীর্ঘদিন লেগেছে, তার গত বছর ইংরেজী অনুবাদে প্রকাশিত নতুন উপন্যাসটি আমি যদিও ইউকে থেকে আনিয়ে নিয়েছি, কিন্তু আমি দোকানগুলোতে খুঁজি, এখনও পাই না। ব্রচ, মিউজিল পাইনি, সমগ্র ইন সার্চ অফ লস্ট টাইম পাইনি, সমগ্র নিচ্ঝা পাওয়া কঠিন কয়েকটি ছাড়া, ফুয়েন্তেসের টেরা নস্ট্রা পাইনি এবং আরও অনেক- সব আমাকে অনেক টাকা খরচ করে বাইরে থেকে আনিয়ে নিতে হয়েছে। সহজভাবে পেলে আমি আরও আগে এগুলো পরতে পারতাম, বার বার পড়ে ফেলার জন্য আরও সময় পেতাম।
তেমনিভাবে, সিনেমা বিষয়ক ভাল বই পাওয়া যায় না। সিনেমার কাজ করার জন্য উপযুক্ত আন্তর্জাতিকমানের যন্ত্রপাতি কিনতে পাওয়া যায় না, সেগুলোর ডিম্যান্ড কম, ফটোগ্রাফির বেশী। যন্ত্রপাতি আনানোরও সহজ কোন পথ নেই। সহজে একসেসিবল রেন্টাল হাউজ নেই। ডিসিপি ক্রিয়েশান সার্ভিস নেই। উৎসবগুলোর এন্ট্রি ফি দেয়ার সহজ কোন উপায় নেই। বিদেশী সেইলস এজেন্টদের, ট্যালেন্ট এজেন্সিদের আমাদের দেশের দিকে মনযোগ নেই। ভারতের মাহিন্দ্রা-সানড্যান্স স্ক্রিনরাইটিং ল্যাবের মত কিছু নেই। হায়, একটা ভাল ফিল্ম ইন্সটিটিউট নেই! ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক সমস্যা। এর মধ্যে মিডিওকার থেকে নিম্নমানের সিনেমা নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, সিনেমা প্রকাশনাগুলোর কাছে, সেইলস এজেন্সিগুলোর কাছে, ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টরদের কাছে বাংলাদেশের একটি খারাপ ইমেইজ তৈরী করে ভবিষ্যতের নির্মাতাদের জন্য এ্যাকসেস পাওয়াটা কঠিন করে তুলছেন এইসব পরিচালকেরা।
বাংলাদেশে তরুণ নির্মাতাদের জন্য পথ কঠিন করে রাখার পেছনে, অবকাঠামোর দুর্বলতার পেছনে ‘দেশের সিনেমার জন্য কিছু করতে চাওয়া’ নির্মাতাদের অবদান রয়েছে। যেমনভাবে বাংলাদেশের পাঠকদের অবদান রয়েছে, বিদেশী বইয়ের দোকানগুলোকে ডিম্যান্ডের চাপে সকল সেরা সাহিত্য নিয়মিত রাখতে বাধ্য করতে না পারায়।
সংক্ষেপে, তাদের কাজের প্রভাব আমার কাজের পথে এসে পড়ছে বলেই এবং সিনেমার একনিষ্ঠ দর্শক হিশেবে তো বটেই, সিনেমার বিশ্লেষণ আলোচনার সাথে সাথে আমার এই প্রবল অসন্তোষের প্রকাশও।
*
বইপড়া প্রসঙ্গে বলি, বই নিয়ে সমালোচনা করে আমার কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা নেই, তাই আমি বই নিয়ে লিখি না, কথাও বলি না, আমি নিজের মত করে পড়ে যাই, ওটি আমার ব্যাক্তিগত চর্চা।
কিন্তু সিনেমা নিয়ে সমালোচনা করে কোনো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা আমার নেই, তা কে বলল? তাহলে আমি লিখছি কেন? আমি চাইছি দর্শককে আরও সচেতন করে তুলতে, চাইছি তারা দাবী বাড়াক, তাদের দাবীর চাপে পরিচালকেরা বাধ্য হউক আরও যত্ন আন্তরিকতা দক্ষতার সাথে কাজ করতে।
সচেতনভাবে নির্মোহ আমি হতেই পারি লেখায়, নির্মোহ হয়ে যে লেখা বের হবে, তা পড়ে সকলে বেশ আরাম বোধ করবেন, কোন ধাক্কা খাবেন না। আরাম-বোধের স্টেইটে কিছু পরিবর্তনের ইচ্ছে জাগে না, ব্যাকগ্রাউন্ডে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে, ধাক্কা খেলেই, প্রোভোকড হলেই সকলে মাথা চালু করেন, উত্তর দিতে চান। দ্যাট ইজ মাই এইম, টু রক দ্যা বোট।
স্বনামে বক্তব্য প্রকাশে আমি ভয় পাচ্ছি কে বলল? ছদ্মনামের ব্যাখ্যা আমি আগেই আপনার একটি মন্তব্যেই দিয়েছি। কাজ করার পথে নানা বাধার মুখোমুখি হতে হতে বিকল্প পথ খুঁজতে খুঁজতে এবং পেতে পেতে আমি এত স্বাধীন হয়ে উঠেছি যে বক্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কে কি মনে করল, সে ভয় আমার আর কাজ করে না।
আমি কেবল চাইছি না, আমার পরিচয় আলোচনার ফোরগ্রাউন্ডে চলে আসুক, অপ্রয়োজনীয় আলোচনা হোক। আমি চাইছি সবাই সিনেমা প্রাসঙ্গিক আলোচনা করুক।
অনুগ্রহ করে আমার নামের বিষয়টি আর উল্লেখ করবেন না। আমার নাম প্রকাশে তো আর আমার উপস্থাপিত যুক্তি বিশ্লেষণগুলো বদলে যাবে না, একই থাকবে।
নির্মোহ নিঘৃণ লেখা আমি পড়েছি অনেক, সেগুলোর প্রভাব ফলাফলও লক্ষ্য করেছি। নির্মোহ-বিশ্লেষণ আর গালাগাল দু্ইয়ের মিশ্রণে একটু ভিন্নভাবেই নাহয় চেষ্টা করলাম আমি!
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
এতবড় লেখার দরকার ছিল কি? একেবারে শেষ শব্দ দু'টিই কি যথেষ্ট ছিল না?
****************************************
বিশ্লেষণগুলো কোন কাজেরই হয়নি বলতে চাইছেন?
*
সিনেমা দেরীতে
অনেক বড় আলোচনা। তবু পড়লাম আপনার লেখনীর গুনে। রুবাইয়াত নামটি মেহেরজান সিনেমার পর থেকে একটা বিবমিষা বিশেষ। আপনার রিভিউ না পড়লেও সিনেমাটা দেখতাম না ইউটিউবে বিনামূল্যে পেলেও। কিন্তু এরকম অপদার্থ সিনেমা নিয়ে এত বড় রিভিউর দরকার ছিল না বলে মনে করি। রুবাইয়াত কি জিনিস সেটা মেহেরজানের পরেই বুঝে গেছে মানুষ। আণ্ডারকনস্ট্রাকশন দেখে দর্শক 'বাল' বললেও ফারুকীদের মতো লোকেরা প্রশংসার তালি বাজাবে সঙ্গত কারণেই। পরস্পরের পিঠ চুলকানোর প্রয়োজনটা দুই পক্ষেরই সমান এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই আশ্চর্যই হইনি।
তবে আপনার সিনেমা সংক্রান্ত লেখা ভালো লাগে বলে একটা অনুরোধ করি। আগামীতে এমন কোন সিনেমা নিয়ে লিখুন যেগুলো আমাদের দেখা উচিত। বিশ্বের যে কোন দেশের হোক সেটা। লিখতে থাকুন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ।
আমি, আমার প্রথম লেখায় উল্লেখ করা, ৮৮তম অস্কারের সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে লিখছি। আশা করি ভাল লাগবে।
*
সিনেমা দেরীতে
আপনার লেখা গুলো পড়ি। ভালো লাগে। এই লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বড় হয়ে গেছে।
আবার জিজ্ঞেস করে বসবেন না, কোন কোন অংশ বাদ দেয়া যেত। সেটা বলতে আমার খবর হয়ে যাবে।
না না! জিজ্ঞেস করব না। আমি নিজেই বুঝতে পারছি বিষয়টা। পরেরবার আরও নজর দেব এদিকে।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
@সিনেমা দেরীতে
ছবিটি দেখা হয় নি, আর সত্য বলতে কি দেখার কোনো ইচ্ছেও নেই (একদা ফ্রেন্ডদের সাথে ফারুকি মশায়ের দুনিয়া কাপানো এক ছবি দেখে আমার নিট ১০০০ টাকা আর ২ ঘন্টা জলে গিয়েছিল, তাই...)। কিন্তু আপনার লেখনিতে যা বুঝেছি, পরিচালক জোর করে তার কিছু ধারনাকে চাপিয়ে দেবার/প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় মত্ত পুরো সিনেমাতে। আমি আসলে পরিচলককে ডিফেন্ড করতে আসিনি আগের রিপ্লাইতে, বরং তার ওইযে "জোর করে তার কিছু ধারনাকে চাপিয়ে দেবার/প্রতিষ্ঠা করার" ব্যাপারটাই বলতে চেয়েছিলাম আরেকবার। যার তার অঙ্কশায়িনী হতে পারাটাই কি ফেমিনিজম? বরং বিশ্বাস ভঙ্গ করাকেও কি এক ধরনের প্রগতিশীলতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছিল না এখানে?
যাই হোক, আপনার রিভিউগূলো সবসময় পড়ি। এটাও ভালো লেগেছে। তবে, রুবাইয়াতের মত পরিচালক এত বড় রিভিউয়ের দাবি রাখে কি না, সেটাও চিন্তার বিষয় ।
আসলে, হার্ডকোর বাণিজ্যিক ছবিগুলো বাদে আর যেসব ড্র্যামাটিক সিনেমা দেশে হয়, সেগুলোর বিষয়ে লেখালেখি করার একটা ভাবনা কাজ করছিল, সে সূত্রেই লেখা।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
আপনার লেখা পড়তে পড়তে মনে হলো.. আমার কথা গুলো ই আপনি বলে দিয়েছেন। আপনার লেখনি খুব ভালো লেগেছে আমার। সব গুলো আমার মনের কথা.আপনি যে এত ধৈর্য্য নিয়ে এই সিনেমা দেখেছেন এবং তার রিভিউ করেছেন সেজন্য আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে পারছি না. আমার কাছে এখনকার এইসব মিডিয়া দিয়ে ঢাকে বাড়ি পাওয়া সিনেমা দেখার চেয়ে বাথরুম পরিস্কার করাও অনেক বেশি entertaining .
যারা সিনেমা পছন্দ করে তাদের কে যদি সুধু দিনের পর দিন না বছর এর পর বছর এরকম bullshit দেখতে বাধ্য করা হয়.. এবং এই bullshit মার্কা জিনিস গুলা এ এই দেশের মিডিয়া ঢাকে বাড়ি দিয়ে দিয়ে প্রসংসা করতে থাকে তাহলে সত্যিকার এর সিনেমা প্রেমীদের বিরক্তি টা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যেতে বাধ্য। এরকম bullshit এর জন্য এরকম আক্রমনাত্মক হওয়াটাই সঠিক. তাদের যে রিভিউ করা হয়েছে এটাই বেশি।
একটা জিনিস জানতে চাই যে জিনিস আপনি দেখে আসলেন সেটা কি সিনেমা নাকি নাটক কে শুধু মাত্র লম্বা করে জোর করে সিনেমা।
আমার এত বেশি পড়াশুনা নাই. সোজা সরল ভাবে আমার মনে হয় যে জিনিস টেলিভশন এর পর্দায় দ্যাখা আর সিনেমার বড় পর্দায় দ্যাখার মধেয়্য় দর্শক কোনো পার্থক্য করতে পারে না সেটা সিনেমা না. সেটার দৈর্ঘ্য কত টুকু সেটা এখানে অপ্রয়োজনীয়। একটা সিনেমা তে চরিত্রের পাশাপাশি আরো অনেক element থাকে যেটা সিনেমার বড় পর্দায় না দেখলে দর্শক enjoy করতে পারে না. খুব সাধারণ একটা উদাহরণ টাইটানিক সিনেমা। এই সিনেমা কারো কাছে হয়ত ভালো লেগেছে বা লাগেনি সেটা কথা না.. কিন্তু এই সিনেমা বড় পর্দায় আর ছোটো পর্দায় দ্যাখার মধেয়্য় আকাশ -পাতাল পার্থক্য। আমাদের দেশের নির্মাতা দের কাছ থেকে এত বড় কিছু আশা করা মূর্খামি কিন্তু কোথাও না কোথাও তো একটা পার্থক্য তো থাকতে হবে.
আরেকটা সিনেমা জালাল এর গল্প কি আপনি দেখেছেন . যদি দ্যাখেন তাহলে কি একটু এককথায় kindly বলবেন যে সিনেমা টা দেখব না কি দেখব না.
Bashabi Sarker
আসলে, কোন সিনেমাকে নাটক কিংবা টিভির ম্যাটেরিয়াল মনে হবার পেছনের কারণগুলো ব্যাখ্যা করাটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, উদাহরণ দিয়ে দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে।
তবে সংক্ষেপে, কারণ দুই ধরণের, ‘টেকনিক্যাল’ এবং সিনেমার কাহিনী-চিত্রনাট্য-দৃশ্যায়ণ-উপস্থাপনের ব্যাকরণ ইত্যাদির প্রভাবে ‘সাইকোলজিকাল’।
সাইকোলজিকাল বিষয়গুলোর মোকাবেলা করা তো দূরে থাক, আমাদের নির্মাতারা টেকনিক্যাল বিষয়গুলোই এখনও সামলাতে পারছেন না।
*
‘জালালের গল্প’ আমি দেখেছি। আপনি আমাকে একটু টাইট স্পটে ফেলে দিলেন প্রশ্নটি করে। দেখবেন কিনা? আমি আপনাকে দেখতে বলতাম, কিন্তু সিনেমার মাঝমাঝি গিয়ে দেখবেন, একটি অত্যন্ত অপ্রয়োজনীভাবে দীর্ঘ ওঝা বিষয়ক অংশ আছে, প্রধানত সেটি এক্সপেরিয়েন্স করে এবং পরে সিনেমাটি পুরো দেখে কিছু বোধ না করে, আপনি আমাকে গালাগাল দেবেন।
সো, জিজ্ঞেস যেহেতু করলেনই, পরামর্শ দেব জালালের গল্প না দেখার।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
কয়েকদিন আগে একটা ক্লাসিক ছবি দেখেছিলাম।"All About Eve(1950)" ছবিটির মার্গো চরিত্রটির সাথে রয়ার চরিত্র অনেক মিল খুজে পেলাম।মার্গো ব্রডওয়ের মঞ্চের বিশাল তারকা।মেহজাবিন যেমন রয়ার নন্দিনী চরিত্রটি রিপ্লেস করে,তেমনি মার্গোর অভিনীত চরিত্রগুলো রিপ্লেস করে ইভ।রয়ার মত মার্গোও বুঝতে পারে তার বয়স বেড়ে যাচ্ছে এবং insecure বোধ করে।এই নিয়ে মার্গো নিজের বয়ফ্রেন্ডকে অভিযোগ করে।অবশ্য পরে মার্গো বিয়ে করে নিজের বয়ফ্রেন্ডকে।কিন্তু মার্গো আর রয়ার আবার মিল।দুজনেই বাচ্চা নিতে চাই না।পরিচালক রুবাইয়াত প্রধান চরিত্র অন্য ছবি থেকে ধার নিয়েও সেরকম প্রশংসা পাচ্ছে ফারুকিদের কাছ থেকে।আমিও সব ভাল মুভি থেকে চরিত্র ধার নিয়ে মুভি বানাব প্রশংসা পাইতে কার না ভালো লাগে?
আমি নিতান্তই একজন সাধারন দর্শক, সিনেমার টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো খুব ভাল বুঝি না। আমার কাছে একটা ভাল সিনেমা মানে, যার সাথে আমি নিজেকে অথবা আমার আশেপাশের মানুষদেরকে রিলেট করতে পারি। একজন সাধারন দর্শক হিসেবে সিনেমার পরিচালকের কাছে আমার প্রতাশাটুকু হলো-সিনেমার গল্পটা দেখে যেনও মনে হয় এটাতো আমাদের সমাজেরই গল্প, আমদের বর্তমানের অথবা আমাদের ফেলে আসা সময়ের গল্প। আমি জানি আমার এই প্রত্যাশার বাইরেও অনেক ধরনের ভাল সিনেমা হওয়া সম্ভব এবং হচ্ছেও।
বেশ কিছু দিন ধরে টালিউডে প্রচলিত বাণিজ্যিক ধারার বাইরেও ভাল কিছু সিনেমা হচ্ছে। শেষ যে দুইটি ছবি দেখে খুব ভাল লাগলো তা হলো ১। বেলাশেষে (বর্তমান সমাজের গল্প) ২। ওপেন টি বায়স্কোপ (ফেলে আসা সময়ের গল্প)। দুটি সিনেমাই ইউটিউবের কল্যানে দেখা তারপরও সিনেমা দুটি বড় পর্দায় দেখার সুযোগ পেলে আমি অবশ্যই আবার দেখব। পরিচালক ভাল সিনেমা বানায় না তাই মানুষ প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যায় না অথবা মানুষ প্রেক্ষাগৃহে যায়না তাই পরিচালক ভাল সিনেমা বানায় না এই নিয়ে অনেক বিতর্ক করা সম্ভব। টালিউডের নির্মাতারা কিন্তু এই সমস্যাকে অতিক্রম করেছে ভাল সিনেমা বানিয়েই। উদাহরন স্বরূপ বলতে পারি, যে দুটি সিনেমার কথা আমি উল্লেখ করলাম, যতদূর জানি সে সিনেমা দুটি প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামার আগেই ইউটিউবে চলে এসেছিল কিন্তু তারপরও মানুষ সিনেমাগুলো দেখতে প্রেক্ষাগৃহে গেছে। সিনেমাদুটি অনেক দিন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিতও হয়েছে।
একটা সিনেমার প্রতি দর্শকে আকৃষ্ট করার কাজটুকু শেষ পর্যন্ত পরিচালক বা প্রযোজকের উপরই বর্তায়। প্রেক্ষাগৃহে যান প্রেক্ষাগৃহে যান বলে ঘ্যানর ঘ্যানর করলে তাতে লাভ হবার সম্ভাবনা সামান্যই। সিনেমার দর্শকের মন ছুয়ে গেলে প্রেক্ষাগৃহে না যাবার ভুল দর্শক এক দুই বার করতে পারে, তার বেশি করবে না।
মন্তব্যটা অনেক বড় হয়ে গেল। সিনেমা নিয়ে আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে। একটা আবদার করি-টালিউডে প্রচলিত বাণিজ্যিক ধারার বাইরের ছবিগুলোর সাম্প্রতিক সাফল্য নিয়ে আপনার একটা বিশ্লেষণমূলক লেখা পড়তে চাই।
- আতোকেন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
টালিউডের 'প্রচলিত বাণিজ্যিক ধারার বাইরের' সিনেমাগুলো ঠিক দেখা হয়ে ওঠে না।
আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণকারী 'আসা যাওয়ার মাঝে'র যাত্রা ফলো করেছিলাম। যেমন, এখন 'গাণ্ড' খ্যাত কৌশিক মুখার্জের 'ব্রাহমান নামান' এর যাত্রা ফলো করছি, যেটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমার জন্য 'কান' সম 'সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল' এ ওয়ার্ল্ড সিনেমা ড্র্যামাটিক কম্পিটিশানে যোগ দিয়েছে এবার এবং ইতমধ্যেই 'নেটফ্লিক্স' এটির এসভিওডি সত্ব কিনে ফেলেছে।
এই সিনেমাগুলো দেখার ইচ্ছে আছে এবং এদের যাত্রা/সাফল্য আমাদের জন্য কিভাবে প্রাসঙ্গিক তা বিশ্লেষণ করে লেখার ইচ্ছে আছে।
ধন্যবাদ।
*
সিনেমা দেরীতে
এই সিনেমাটি নিয়ে অসন্তোষ নেই, যতসব অসন্তোস এই মহিলাকে নিয়ে। লীগার বাবার মেয়ে হলেও তার ধমনীতে খাস রাজাকারী রক্তের প্রবাহ আছে। তার মেহেরজান সিনেমার চরিত্র ‘খাজা’ তার নিজের নানাজানেরই। তার মাতা খাজা নার্গিস। মেহেরজানে মুসলীম লীগার খাজা চরিত্রটি দিয়ে যা বোঝালেন পরিচালিকা, তাতে যে কোন দর্শক কনভিন্স হতে বাধ্য যে সব মুসলীম লীগার এবং রাজাকার খারাপ ছিলো না! রাজাকারের মতো কুখ্যাত গ্রুপ ফর্ম এবং তাদের অপারেশন ও মিশনকে সাপোর্ট দেবার পরেও ধরে নিলাম খাজার মতো অনেক মুসলিম লীগার হয়তো খারাপ ছিলো না! কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা কেন? মেহেরজান তো মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করেছে। পাকি প্রেমের এমন দাস্তান হয়তো রুপালী পর্দায় এতোদিন ছিলো না, সেটাকে মেহেরজান সম্ভব করে ছাড়লো শেষমেষ! এই মহিলার একটা স্পেসিফিক মিশন আছে। পুরোনো খত ঢাকতে নতুন থিমের সিনেমা নিয়ে হাজির হলো, আর আমরা এত সরল জাতী, খুব সহজেই অতীত ভুলে গেলাম। মেহেরজান বিতর্কে একটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ব্রাত্য রাইসু, সেই আলোচনায় যারা মেহেরজানের পক্ষে অবস্থান নেয়, সেসব সুশীলগণ আলোচনায় আসার পূর্বেই ঘরে বসে একত্রে পরিচালিকার সাথে সিনেমাটি ডিভিডিতে দেখেন বলে আলোচনায় উল্লেখও করেন! তাদের সাথে পরিচালিকার সখ্য। পিয়াস করিম, সুমন, ফাহমিদুল হক, ফরহাদ মাজহার, এরা তো সেসব পাকি প্রেমিদের নাম যারা এই স্বাধীন ভুখন্ডে পাকিস্তানের পক্ষে ও তাদের দোসরের পক্ষে যুক্তি-সাফাই গেয়ে যান। পিয়াস করিম তো বলেই বসেছিলেন, ৪ লক্ষ মা বোনকে ধর্ষণ হানাদারেরা করলেও এই বাংলায় সেটাই প্রথম ধর্ষণ ছিলো না যে এত দোষ চাপিয়ে বলতে হবে! স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে এমন আলোচক দুজন ছিলেন সেই আলোচনায়, নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম এবং সলিমুল্লাহ খান। এরা দুজন যতসম্ভব ফাইট দিয়েছিলেন কিন্তু ওরা তো সেদিন মাইনরিটি ছিলেন আলোচনায়! পিয়াস করিমের এহেন জঘন্য মন্তব্যের প্রতিবাদ সলিমুল্লাহ করতে দেরি করেন নি। ইউটিউবে এই আলোচনার সম্পূর্ণ পর্বগুলো পাওয়া যায়্। দেখে নিবেন। পরিচালিকা নিজেও মেহেরজানের সমালোচনার প্রতিউত্তর দিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বারবার মুক্তিযুদ্ধ ও গনধর্ষণের পক্ষে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সাফাই গেয়েই গেছেন। এটাও আমরা ভুলে গেছি। এটা তো নিকট অতীত, যা এত সহজে ভুলে গেলাম। সেখানে ৪৫ বছর আগের ইতিহাস মনে থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না আমাদের জন্য! এত সংগ্রাম তিতিক্ষা সব ভুলে, অত্যাচার নিপীরনের কথা ভুলে, মা-বোনদের হারানো সম্ভ্রমের কথা ভুলে আমরা নতুন অধ্যায় শুরু করছি হয়তো। স্মৃতি যদি এত মলিন হয়, তাহলে এমন কিছু লোকজন তো তার ফায়দা ওঠাবেই।
মেহেরজান বিতর্কের আলোচনার ভিডিও:
https://www.youtube.com/watch?v=o5WFd_6Vk6g
https://www.youtube.com/watch?v=jYnVKgbt3P0
https://www.youtube.com/watch?v=Fx1De6XvSLk
https://www.youtube.com/watch?v=cDrDQ8oDNjo
https://www.youtube.com/watch?v=LgCz3ivW0SE
https://www.youtube.com/watch?v=PzG4HGHqUuc
https://www.youtube.com/watch?v=PzG4HGHqU
হাটের হাঁড়ি
।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
আ লিটিল এলিজি ফর ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য·Wednesday, January 20, 2016545 Reads
প্রথমে আমার পরিচয় দিয়ে নিই, আমি কী নই আর তাহলে আমি কী। আমি ফেমিনিস্ট নই, আবার ইনটেনশনালি সেক্সিস্টও নই— ইনফ্যাক্ট আই অ্যাম দ্য ম্যাঙ্গো পিপল। যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ ভালো সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, তথাপি মনে হয় সিনেমা বিষয়ে আমার জ্ঞান খুবই কম, তাই বিশেষ তাত্ত্বিক কোনো আলোচনায় আমি যাবো না। জানি, বোদ্ধা ও দর্শকবর্গ এই সিনেমা নিয়ে ভালো ভালো কথা বলবেন। এর মধ্যে বলেছেনও। যদিও ভালো বলার একশো তেরোটা কারণ নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু আমি তেমন ভালো কোনো কথা বলবো না বলে ঠিক করেছি। তাই আমি নিন্দুকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছি।
সিনেমার নাম ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’। শুরুতেই খানিকটা কাহিনি সংক্ষেপে বলে নিই। রয়া একজন থিয়েটারকর্মী। বারোবছর ধরে মঞ্চে রক্তকরবী নাটকের নন্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় দলনেতা রাসেলভাই চরিত্রটিতে আরেকজনকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তরুণীরাই কেন শুধু নন্দিনী হতে পারবে এ প্রশ্ন ঘুরে মরে রয়ার মনে। সেই সময় ইন্ডিয়া থেকে ইমতিয়াজ নামের একজন নাট্যদলের অধিকারী আসেন। এসে নতুনভাবে ‘রক্তকরবী’কে মঞ্চে তোলার পরিকল্পনা করেন। রয়ার সঙ্গে তখন তার এক ধরনের সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। একই সময় রয়ার কাজের মেয়ে ময়না লিফটম্যান সবুজমিয়ার সঙ্গে মিলেমিশে কনসিভ করে। ফলত ময়না রয়ার ঘর ছেড়ে বস্তিতে গিয়ে ওঠে। এবং সে গার্মেন্টস এ কাজ নেয়। এর মধ্যে সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। আর রয়ার তখন ঢাকা শহরকে রক্তকরবীর যক্ষপুরীই মনে হয়। তখন রক্তকরবীকে এইসব পেক্ষাপটে বিনির্মাণের চিন্তা তার মাথায় আসে। মূল কাহিনি মূলত তখনই থেকে শুরু হতে থাকে।
এই সিনেমার প্রধান চরিত্র রয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাহানা গোস্বামী। তাকে ইতঃপূর্বে আমার ভালো লেগেছে সালমান রুশদীর উপন্যাস নিয়ে দীপা মেহতার বানানো সিনেমা মিডনাইট্স চিলড্রেনে মুমতাজ ও আমিনা চরিত্রে। ময়না চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী, রয়ার মায়ের চরিত্রে মিতা চৌধুরী, আর ইমতিয়াজ চরিত্রে রাহুল বোস। রয়ার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করছেন শাহাদাত হোসেন। রাসেলভাই চরিত্রে তৌফিকুল ইসলাম। এছাড়া সোহেল মণ্ডল, স্পর্শীয়া নওশাবা আহমেদ সাবা প্রমুখ। সংগীত পরিচালক অর্ণব। নেপথ্য কণ্ঠ শাহানা বাজপেয়ী। ক্যামেরায় ছিলেন মার্টিন রডওয়ান। এডিটিং সুজন মাহমুদ। খনা টকিজ প্রযোজিত ও নিবেদিত এই সিনেমাটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা রুবাইয়াত হোসেন। এটি তার দ্বিতীয় সিনেমা।
আন্ডার কনস্ট্রাকশন দেখতে বসে প্রথেমেই সিনেমাটির প্রধান চরিত্র রিহার্সেলরত রয়ার নাভীর গভীরতায় আর মখমল পেটের ভাঁজে আমার চোখ আটকে গেলো। সে আয়নার সামনে নিজে নিজে রক্তকরবী নাটকের রিহার্সেল করছিলো। ধাক্কাটা এইভাবে খেলাম। ধাক্কা খাওয়ার কারণ ফেমিনিস্ট সিনেমা ভেবে সিনেমাটা দেখতে গিয়েছিলাম। আর তাছাড়া নারীত্ব বিষয়টা পুরুষত্বের মতো শারীরিক কোনো বিষয় নয়। মানে নারীত্ব ব্যাপারটা শরীর নয়, এটা অনেকাংশে ব্যক্তিত্বের রূপায়ন। এটা পিতৃতান্ত্রিক/সামাজিক কাঠামোর কারণে নারীদের মাথায় ধীরে ধীরে তৈরি হয়। যেমন কোমল আর অবলার ধারণা তৈরি হয়। আর আমরা দেখেছি রয়ার অভিব্যক্তিতে কিন্তু শরীর দেখানোর বিষয়টা ছিলো না। থাকলে বিষয়টা অবান্তর আর সংলগ্নতাহীন মনে হতো না। ক্যামেরার ফোকাসিং এরও একটা বিষয় আছে। তারমানে এইখানে পরিচালকই রয়ার শরীর দেখানোর চেষ্টা করেছেন। ইতঃপূর্বে ঋতুপর্ণ ঘোষের আবহমান সিনেমায় অনন্যা চ্যাটার্জিরও রিহার্সেলের দৃশ্যও আমরা দেখেছি। ওইদৃশ্য দেখে আমাদের মধ্যে এই রকম ধাক্কার সৃষ্টি হয় নাই। নন্দিনী তো একটা শক্তির নাম। সে তো শরীর নয়। আমি ছোটোবেলা থেকে রক্তকরবী অজস্রবার পড়েছি, অনেক মঞ্চে দেখেছি একবারও নন্দিনীকে শরীর মনে হয়নি, রুবাইয়াতের সিনেমা দেখে প্রথম মনে হলো।
কদিন আগে সিনেমাটির বিশেষ প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপনে দেখি কেবল নারীরা ফ্রি দেখতে পাবে। মনক্ষুণ্ণ হলেও মনে হলো সিনেমাটা মনে হয় নতুন কিছু হবে, ফেমিনিস্ট কোনো কিছু। কারণ রুবাইয়াত হোসেনের পূর্ববর্তী ছবি মেহেরজানের কাহিনিতে পলিটিকাল ইনটেনশন থাকলেও মেকিং ভালো ছিলো। তাছাড়া এইবার এবাদুর রহমান নাই জেনে ভাবলাম সিনেমা ভালোই হবে। কারণ মেহেরজানের স্ক্রিপ্ট রাইটারদের একজন ছিলেন এই এবাদুর। আমাদের মনে আছে, মেহেরজানে পাকিবাহিনি থেকে পলাতক সৈনিকের প্রতি বাঙালি নারীর গদগদ প্রেম দেখিয়েছিলেন রুবাইয়াত। এবং তা আরোপিতই মনে হয়েছিলো তখন। তারপরও ভাবলাম, আন্ডার কনস্ট্রাকশনটা মুক্তি পেলে দেখবো নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রিমিয়ারেই দেখে এসে লিখতে বসলাম। সিনেমা ভালো হয়েছে, নিখুঁত মেকিং। আর্ট ডিরেকশন, কস্টিউম ডিজাইন, ডায়ালগ থ্রোয়িং, ফ্রেইমিং, সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়, সর্বোপরি এডিটিং ও মেকিং খুবই ভালো। বিশেষভাবে বলতে গেলে খুবই গভীর ভাবনা-চিন্তা আর্ট ডিরেকশন, কস্টিউম ডিজাইন ইত্যাদিতে কাজ করেছে।
কিন্তু ধাক্কাটা আমার জায়গা মতোই লাগলো। এরপর পুরো সিনেমাজুড়ে রয়ার শরীর দেখতে দেখতে, শরীরের উৎফুল্ল বাঁক দেখতে দেখতে সেই ধাক্কা কম্পনে পরিণত হলো। আমার মনে হলো প্রকৃত অর্থে, একটা সিনেমায় পরিচালক যা দেখাতে চান প্রধানত আমরা ম্যাঙ্গো পিপল তাই-ই দেখি। আর যা দেখাতে চান না সেই পাঠক্রম অন্যত্র বা উচ্চমার্গীয় দর্শকের জন্য।
রয়ার মা বলেন যে, তিনি স্বামীর টাকায় ফুটানি মারেন না। এইটা একটা সত্য কথা। এবং মেয়ের প্রতি মায়ের এই ঘা দেয়াটা আমার ভালো লাগে। যা তাকে জাগাতে সাহায্য করে। রয়াতো প্রকৃতঅর্থে স্বামীর টাকাতেই ফুটানি মারে, ময়নাকে দামি গয়নাগাটি উপহার দেয়। উন্মূল ময়নাকে গার্মেন্টসে কাজ করতে দেখে তারমধ্যে নারীবাদী চেতনা জেগে উঠে কিন্তু নিজেকে উন্মূল করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রয়া বড়লোকের বউ হয়ে সুবিধা নিতে পারে, কিন্তু বারো বছর মঞ্চে নন্দিনী চরিত্রে অভিনয়ের পর তেত্রিশবছর বয়সেও ক্যারিয়ারের বিপরীতে সন্তানের জন্য প্রস্তুত হতে পারে না। তার স্বামীর সন্তান কামনাটাকে আমার কাছে অতি চাওয়া মনে হয় না কিংবা অনধিকারও মনে হয় না।
সন্তান তার কাছে তার ক্যারিয়ারের অন্তরায় মনে হয় কিন্তু পেটের ওপর থেকে ময়নার গর্ভস্থ শিশুর পায়ে হাত বুলিয়ে ক্ষণকালের জন্য হলেও তার মধ্যে সন্তানের জন্য আকুতি তৈরি হতে দেখি।
যথারীতি সেই একই ট্যাবু, একই টাইপের মধ্যেই আটকে থাকার বিষয় প্রদর্শন করেন পরিচালক। যেমন, পাখির খাঁচার পরিবর্তে আমাদের দেখান জারের মাছ। পুরুষ ইমতিয়াজকেই দেখা যায় উদ্ধারকর্তা হিশেবে। যেমন, আবহমান কাল ধরে পুরুষই পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে আসছে।
গর্ভবতী কাজের মেয়ের পা কোলে নিয়ে নূপুর পরিয়ে দেয়ার বিষয়টা ঔচিত্যবোধের বাসনার রূপই হয়তো রুবাইয়াত হোসেন আমাদের দেখিয়েছেন। কিছু কিছু দৃশ্য দেখে মনে হয় এই সিনেমা আসলে নারীদের কী করা উচিত তার বিবরণ।
একা লাগে কিনা এহেন পারস্পরিক প্রশ্নে ইমতিয়াজ যখন রয়ার হাতের আঙুল স্পর্শ করে তখন পর্যন্ত ঠিক লাগে, কিন্তু ইমতিয়াজের আঙুল যখন রয়ার ওষ্ঠাধরে আরোহণ করে তখন মাথার মধ্যে দার্শনিক ভাবনা আসে, আমরা ভাবি নৈসঙ্গের আদি কারণ কাম। একই প্রশ্নে একই দৃশ্য আমরা পৃথিবীর আরো শখানেক সিনেমায় দেখেছি। অনেকে বলবেন রয়া অভ্যস্তার কামে ক্লান্ত। কিন্তু অভ্যস্ততার কামে ক্লান্তির জন্য পারস্পরিক দায়ের একটা ব্যাপার থাকে। হোয়াটএভার, কাহিনি সেটা নয়, কাহিনি হলো ইমতিয়াজ যখন বলে আমার একা লাগে কিন্তু ‘আমার রয়েছে কর্ম আমার রয়েছে বিশ্বলোক’ এই জাতীয় কথা—তারপরে আঙুল থেকে ওষ্ঠাধরে আঙুল গেলে যে পরিণতির দিকে যায় তা এর সিকোয়েন্স হতে পারে না আর কি। এটা তখন পরিচালকের আরোপ মনে হয়। কারণ ইতঃপূর্বে প্রায় কাছাকাছি দৃশ্যে অপর্ণা সেন মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার সিনেমায় রাহুল বোসকে কেমনভাবে উপস্থাপন করেছেন তাও আমাদের মনে থাকার কথা। সুতরাং আমার আরো একবার মনে হলো পরিচালক যা দেখাতে চান আসলে আমরা তাহা-ই দেখি। মূলত ফোকাসিত শরীর আর আঙুলের পরিণতি আন্ডার কনস্ট্রাকশনের লাইনের বাইরে চলে গেছে বলে আমার মনে হয়েছে। রয়ার লক্ষ্যের এবং পথচলার মাঝখানে এই ব্যাপারটাকে (ইমতিয়াজের এই রূপ এবং রয়ার অনুমোদন) আমার কাছে একটা ধ্বংসযজ্ঞ মনে হয়। মনে হয় এই ব্যাপারটা সিনেমাটার উদ্দেশ্যটাকে নষ্ট করে দিয়েছে।
কর্মক্লান্ত স্বামীর সঙ্গে নিষ্পৃহ শৃঙ্গারও ইতঃপূর্বে আমাদের দেখা। পাশের বালিশে শায়িত সাপ, গৃহস্থ স্বামীর এই সাপরূপ, এইরূপ ভয় দর্শনও আমাদের পূর্বপরিচিত, যেমন পরিচিত বাথটাবের পানিতে স্নানের সময় সাঁতরে বেড়াচ্ছে শামুক, কচ্ছপের বাচ্চা এইসব। জানলা দিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের হুইলচেয়ারে বসা পঙ্গু লোকটির সারাদিন টিভি সেটের সামনে বসে থাকা, নিউজচ্যানেল দেখাও আমাদের অনেক সিনেমায় দেখা হয়েছে। সিনেমার স্বপ্ন দৃশ্যগুলির মতো দৃশ্যও আবহমান বিশ্বের সুররিয়ালিস্ট সিনেমাগুলিতে অহরহ দেখা যায়।
তবে রক্তকরবী নাটকের ইপ্রোভাইজেশনের চেষ্টার বিষয়টা আমার কাছে তাও খানিকটা অভিনব মনে হয়েছে। আরো খানিকটা অভিনব মনে হয়েছে গ্রিনরুমের আয়নায় নন্দিনী রয়ার খুলে রাখা টিপ আয়নার সামনে দাঁড়ানো নতুন নন্দিনীর কপালে প্রতিস্থাপনে যে মনতাজ তৈরি হয় সেই বিষয়টা। তবে এই মেয়েটিকে দেখে আমাদের কলকাতার শৈবাল মিত্রের শজারুর কাঁটা সিনেমার কঙ্কনা সেন এর স্থলাভিষিক্ত নতুন নন্দিনীর সেইসব অনাত্মবিশ্বাসের কথাই মনে পড়ে যায়।
একটা হুজুরদের মিছিলের দৃশ্যে, 'নাস্তিকদের হত্যা কর' স্লোগান ঠিকই ছিলো। সিনেমাটা যে সময়ের পেক্ষাপটে বানানো ওইসময় রাজপথে এই ধরনের মিছিল ছিলো, এখনো আছে। মিছিল দেখে সিএনজি অটোরিক্শার ভিতর ভীত রয়ার মাথায় কাপড় দেয়াটাকে বা হাত ঢেকে ফেলাটাকেও আমার কাছে স্বাভাবিক এবং বাস্তব মনে হয়েছে। কারণ এহেন মিছিল থেকে হামলার রেকর্ডও আছে।
সিনেমার নামকরণও যথারীতি সার্থক। রয়া আন্ডার কনস্ট্রাকশনেই ছিলো শেষ পর্যন্ত। শেষ দৃশ্যে বোঝা যায় সে একদিন নিজের পায়েই দাঁড়াবে।
শেষপর্যন্ত সিনেমাটা কথিত প্রগতিশীল এলিটদের বিনোদনের পপকর্ন আর পেপসি জুগিয়েছে বলা যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে ব্যাপারটা অনেকটা চুরি করে স্নানরত আদিবাসী নারীদের স্তনদলের অথবা স্তনদানরত ভিখিরিনীর ফটো উঠিয়ে আর্ন্তজাতিক পুরস্কার জিতে নেয়ার মতোই।
মোটামুটি শেষ কথা হলো, রুবাইয়াত হোসেন ডিরেক্টর হিশেবে খুবই স্মার্ট। এই বাঙলা সিনেমার আকালে তার আরো সিনেমা বানানো উচিত। আমরা দেখতে চাই। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি তাই এতো সমালোচনা করে ফেললাম, এতো খুঁত বের করে ফেললাম। আশা রাখছি, আগামীতেও করবো ইনশাল্লা।
।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
https://web.facebook.com/notes/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9D%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%83%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF/%E0%A6%86-%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%8F%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%AB%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B6%E0%A6%A8/10153993772743777
নতুন মন্তব্য করুন