আন্ডার কন্সট্রাকশন- দর্শকের ফ্রাসট্রেশন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৭/০১/২০১৬ - ২:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিতর্কটা বহুদিনের। নাচ গান থাকলেই সেটা ভালো সিনেমার সীমানার বাইরে। আবার নাচ গান না থাকলে সেটি ভালো ছবি। বা এমনও বলা হয়ে থাকে, জীবনমুখী সিনেমার রঙটা একটু ফিকে হতেই পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে, জীবনমুখী গল্প মানেই কী ধুসর? কারও জীবনে কী রংধনুর সাত রং নেই?
এতো ভূমিকা না করে সরাসরি চলে আসা যাক আজকের আলোচনার বিষয় নিয়ে। বিষয় এজন্যই বলা হচ্ছে কারণ একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে এই বিষয়টিকে সিনেমা বলবো কি না তা নিয়ে আমার মনে দ্বিধা আছে।

বলছি আন্ডার কন্সট্রাকশনের কথা। এই 'সিনেমার' পরিচালক রুবাইয়্যাত হোসেন এর আগে আরেকটি সিনেমা বানিয়েছিলেন। মেহেরজান নামে সেই সিনেমা দিয়ে তাকে যারপরনাই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এবার সেকারণেই রুবাইয়্যাত আগে ভাগে মিডিয়ার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন কি না তা পরিষ্কার নয়। তবে কোনও এক বিচিত্র কারণে সমালোচনার ধারে কাছেও নেই কোনও মিডিয়া। অথচ বলা হয় গঠনমূলক সমালোচনা একজন শিল্পীর জন্য ভবিষ্যতের ভিত্তি।

এখানে এমনটি ভাবার কিছু নেই যে সমালোচনার জন্য সমালোচনা করা হচ্ছে। সিনেমাটি দেখে একজন দর্শক হিসেবে এ শুধু আলোচনা মাত্র।
আন্ডার কন্সট্রাকশন সিনেমাটি শাহানা গোস্বামী অভিনেত্রী রয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। রয়া বারো বছর ধরে মঞ্চে অভিনয় করছে রক্তকরবীর প্রধান চরিত্রে। এখানে দুই তিনটা প্রশ্ন থেকে যায়। নির্মাতা কী মনে করেন বাংলা ভাষার সবাই রক্তকরবী পড়েছে? আচ্ছা না হয় পড়েছেন! কিন্তু শাহানা গোস্বামীকে কেন এই চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হলো সেটাও একটা প্রশ্ন বটে। রক্তকরবীর রয়া হওয়ার মত দেশে কোনও শিল্পী ছিলেন না, সেটা আমার বিশ্বাস হয় না। না হয় আমাদের নাটকের শিল্পীরাই করেছেন রক্তকরবী! তাদের কেউ থাকলে আন্ডার কন্সট্রাকশনের কোনও সমস্যা হতো না। কারণ এটিতো গ্ল্যামারহীন “ভালো ছবি”! অতটুকু পেট দেখানোর জন্য বিদেশী শিল্পীর উপস্থাপন কেন? এই কেনর সম্ভাব্য উত্তর পরে আসছে। তার আগে কিছু প্রতীকি দৃশ্য নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়।

বাংলা সিনেমার অনেক পুরানো কিছু সিম্বলিক শট আছে, যেমন প্রেম করার সময় দুইটি গোলাপের ঠুকোঠুকি, মৃত্যুর শটে মোম, কুপির আগুন নিভে যাওয়া, মানসিক কষ্টে খাঁচায় পাখির অস্থিরতা ইত্যাদি! 'মুন্সিয়ানা' শব্দের বন্যায় ভেসে যাওয়া রুবাইয়্যাত আদতে পরাধীনতাকে বোঝাতে বেছে নিলেন জারে বন্দী মাছ! এই দৃশ্য কতটুকু ইউনিক আমার জানা নেই। একটি তিনমাসের ফিল্ম কোর্স করে আসা যে কেউ এমনটাই দৃশ্য-কল্পনা করবেন যা মুন্সিয়ানায় ধোয়া রুবাইয়্যাত করেছেন।

পুরুষকে সাপের সাথে তুলনা করার প্রতীকটাও আগের। জোরপূর্বক রয়ার গৃহকর্মী ময়নাকে দিয়ে সাপের গল্প বলানোর সাথে সাথে সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন দর্শকের মাথায় আসবে একটি কথাই!- কখন শাহাদাৎ হোসেন অর্থ্যাৎ রয়ার স্বামীকে সাপ হিসেবে দেখানো হবে! যেটা হয়েছেও কিছুক্ষণের মাঝে।
সিনেমাটিকে অসংখ্যবার আন্ডার কন্সট্রাকশন ইমারতের দৃশ্য আছে। কোনও কারণ ছাড়াই। নাম করণের সার্থকতা কিনা সেটা একমাত্র পরিচালক নিজেই বলতে পারবেন। আরও আছে রয়ার মায়ের মুখ দিয়ে প্রথমে স্লিভলেস পরা নিয়ে, তারপর অভিনয় করা নিয়ে কথা শোনানো, রয়ার মাকে বোরখা পড়া মহিলাদের হেদায়েৎ করার দৃশ্য, রয়ার মায়ের স্বামীপ্রীতি ইত্যাদি।

সিনেমাটিতে রয়ার বাবা কোনও এক অভিনেত্রীর জন্য সংসার ফেলে পালিয়ে যায়। তাই রয়ার মা যখন রয়াকে বলে, যারা অভিনয় করে তাদের কী বলে জানিস? বেশ্যা! রয়া আবার উত্তর দেয়, বাবা অভিনেত্রীর সাথে চলে গেছে বলে সবাই বেশ্যা হতে পারে না। এখানে আমাদের আধুনিক পরিচালকের কাছে আমার অবধারিত প্রশ্ন- কেউ যদি কোনও অভিনেত্রীর সাথে চলে যায় তাহলে অভিনেত্রী কেন বেশ্যা হবে? সিনেমাতে বাবাকে খারাপ বলতে যেয়ে পরিচালক অন্য একটি চরিত্রকে অকারণে কলুষিত করেছেন। এটা তিনি জেনে করেছেন নাকী না বুঝে সেটা তিনিই বলতে পারবেন। তবে এটা ঠিক, সামাজিক প্রেক্ষাপটে ফের তিনি পুরুষ জাতিকে হালাল করে দিলেন অন্য একটি নারীকে বেশ্যা বলে।
আর এই গম্ভীর বিষয়টা না বুঝে হাত তালি দিলেন আজকের আধুনিক নারীরা।

এরপর যদি বোরখার বিষয় আসে। নারী মহলে যদি হেদায়েৎ করারই বিষয় আসে তাহলে শুধু বোরখা নয়, যেকোনও পোশাকের আড়ালে হেদায়েতের বিষয় তিনি দেখাতে পারতেন। রুবাইয়্যাত কোন দেশে বড় হয়েছেন তা আমি জানি না। তবে সম্ভবত অনেকটা সময়ই তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন। এজন্য তিনি বুঝে গেছেন বিদেশের মানুষ কী দেখলে চোখে পানি নিয়ে হাতে পুরস্কার ধরিয়ে দেবে।
১. ধর্মকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা
২. গারমেন্টস নিয়ে কপচপানি
৩. বিদেশি শিল্পী।

তৃতীয় পয়েন্টের কারণেই হয়তো রুবাইয়্যাত রাহুল বোসকে দিয়ে ফালতু একটি চরিত্রে অভিনয় করিয়েছেন। আর হ্যাঁ রয়ার চরিত্রে দেশের কেউ অভিনয় করলে বিদেশের মঞ্চে তিনি বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতেই পারতেন! সেটাও হয়তো দক্ষ পরিচালক 'বোঝেননি’।

সিনেমার একটি অংশে বিছানা দৃশ্যে শাহাদাৎ এবং শাহানাকে নিরস ভঙ্গীতে বৈবাহিক দ্বায়িত্ব পালনে দেখা যায়। এর আগে বা পরে অনেকবার দেখানো হয়েছে রয়ার স্বামী এবং মা সন্তান চাইলেও রয়া তা চায় না। ঐ দৃশ্য পর্যন্ত ধরে নেওয়া যেতে পারে, একারণেই হয়তো রয়া নিরস। স্বামীও নিরস। কিন্তু রাহুল বোসের সঙ্গে হাসিমুখে মিলনে সম্মতির মাধ্যমে পরিচালক কি বোঝাতে চেয়েছেন? সন্তান চাইলেই স্বা ৃশমীর সাথে নিরস ভঙ্গীতে বিছানায় যেতে হবে? অথবা স্বামী ব্যাটা বেরসিক? তাহলে কেন একসাথে থাকতেই হবে? এবং তাতে অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলন স্বাভাবিক কারণ ঐ পুরুষ সন্তান চায় না? নাকী এটাও আধুনিকতা? বরং পরিচালক যদি নিজ সংসারে অসন্তুষ্ট রয়াকে দেখাতেন সংস্যার ত্যাগ করছে- তাহলে মনে হয় মেয়েদের জন্য ভালো করতেন। আমরা কী এটা বলি না, যে একটি বাজে বিবাহিত জীবনের চেয়ে একলা চলে রে ভালো! সেক্ষেত্রে চুপিসারে নিজের সাথে কম্প্রোমাইজ করে জীবন চালানো দেখানোর কোনও মানে ছিল না। এখানে আরেকটা প্রশ্ন, তবে কি রয়া টাকার জন্যই তার স্বামী সামিরের সাথে আছে? উত্তর দিবেন পরিচালক।

ধরে নিচ্ছি নারীর জীবন আন্ডার কন্সট্রাকশন ইমারতের মতন। তাহলে জীবনমুখী সিনেমায় এই জীবনের সমাধান কি? পছন্দের মানুষের সাথে সঙ্গম? অপছন্দের মানুষের সাথে জীবনের নিশ্চয়তার জন্য বসবাস, আবার ক্যারিয়ারের জন্য সেলফিস হওয়া?
প্রতিটা মানুষই আদতে সেলফিস। কিন্তু তা হয় নিজের জন্য। এখানে পরিচালক একটা পর্যায়ে আধুনিকতার নামে রয়াকে যাচ্ছে তাই সেলফিস হিসেবে উপস্থিত করেছেন।

আর হ্যাঁ, গারমেন্টস-এর কথা না বললেই নয়। দ্বিতীয় পয়েন্ট অনুযায়ী ফান্ড আনার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম গারমেন্ট নিয়ে আহা উহু করা । আর তাতে শতভাগ সফলতা নিয়ে এসেছে রানা প্লাজার ফুটেজ। সিনেমাতে এই ফুটেজ ব্যবহারে অবশ্যই অবশেষে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন পরিচালন। কোন কোন ফুটেজে কেমন সুবিধা তা তিনি অবশ্যই জেনে নিয়েছেন আগে। অতঃপর রক্তকরবীকে গারমেন্টেস-এর প্রেক্ষাপটের সাথে ফিউশন করে কিছু একটা দেখাতে চেয়েছেন যা আমি বুঝতে অক্ষম।

অত্যন্ত বিরক্তিকর কাট শট, প্রতীকি শট এবং 'বুঝে নিতে হবে' শট দিয়ে ভরা এই সিনেমাটি শেষ হয় রয়ার নতুন করে মঞ্চ নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে। যে পরিচালক বিদেশী শিল্পী নিতে পারেন তিনি মঞ্চ পরিচালকের চরিত্রে আরেকটু ভালো কাউকে নেবেন এটাই কাম্য ছিল। অভিনয় শিল্পীরা কোন একসেন্টে বাংলা বলবেন সেটা নিয়ে বেশ টানাপড়েন ছিল সেটাও বোঝাই যায়। এছাড়া ময়নার চরিত্রে মেয়েটি ভালো অভিনয় করেছেন।

তবে পরিচালক কি ভালো সিনেমা বানিয়েছে্ন? আমার উত্তর- না। বাহবা পাওয়ার জন্য সিনেমা বানানো এক জিনিষ। সিনেমা বানিয়ে বাহবা পাওয়া আরেক জিনিষ। তিনি প্রথমটা বেছে নিয়েছেন। আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এমনকী আমার তো মনে হয় সিনেমার মাঝে “রক্তকরবী নিয়ে নতুন করে ভাবনা থেকে লেখা বই নিয়ে সমালোচনা” কথাটি এনে মেহেরজান নিয়ে তার হতাশাও ঝেড়েছেন চুপিসারে। মানে দোষটা বাকীদের। আর তিনি শিকার!

আরেকটা বিষয় না বললেই নয়। আজকালকার সবাই ভালো সিনেমাকে বিচার করেন গান নাচ আছে কি নাই তা দিয়ে। আর ভুলে যায় স্ক্রিপ্টের কথা। রুবাইয়্যাতও এর ব্যাতিক্রম নয়। পুরানো কমোডের পাশে নতুন হ্যান্ড ওয়াশ রেখে ঝকঝকে কমোড উপহার দেওয়ার অঙ্গীকারই যেন আন্ডার কন্সট্রাকশন। এই নির্দেশনাকে যদি মুন্সীয়ানা বলা হয় তাহলে এই দায় তাদের নিতে হবে যারা পিঠ চাপড়াচ্ছে তাদের। কারণ ‘বুঝে নেওয়া’র স্ক্রিপ্টের এই সিনেমাটি কতজন সাধারণ দর্শক দেখছে সেটাও কিন্তু জানা জরুরি। ছবিটি মুক্তির পরদিন সরকারি ছুটি থাকা সত্বেও বিকেলের শোতে উপস্থিত ছিলেন বিশ জনেরও কম দর্শক। তাহলে ‘ভালো সিনেমা’র তকমাযুক্ত এই প্রজেক্টের সার্থকতা কোথায়?

আর যদি বলা হয় এটি জীবনমুখী সিনেমা, তাহলে শেষ মেশ একটি প্রশ্ন, এই সিনেমার বক্তব্য কী?
যেখানে দেখানো হলো -
রয়ার মা- যার স্বামী ছেড়ে গেছে আজ্ও তাকে গালি না দিয়ে তার তোয়াজ করা?
ময়না- স্বামী জাতের না হলেও স্বামীর ঘরে পরে থাকা? (অন্যের ঘরে চাকর নয়, রয়ার মাধ্যমে নতুন করে জীবন সে সাজাতেই পারতো। পরিচালক সেটা দেখাতেই পারতেন)
রয়া- ক্যারিয়ার আগে আসতেই পারে, তাই বলে স্বামীকে ব্যবহার করা?

এ দিয়ে নারী জীবনের মূল্যায়ন? তাহলে নারীদের বিজয়টা কোথায়?

................................................................................
রূপকথা


মন্তব্য

শেহাব এর ছবি

কেউ একজন আগে করে গেছে বলেই যে সেটি কখনও আবার করা যাবে না এমন কোন কথা নেই। দেখতে হবে সেটি সিনেমাটিকে উপভোগ্য করেছে কিনা। এই ব্যাপারটি অভিনেতা / অভিনেত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দেখতে হবে সিনেমাটিকে এই নির্বাচন উপভোগ্য করেছে কিনা।

রুবাইয়্যাতের আগের সিনেমা বেশিরভাগের খারাপ লেগেছে। দর্শক সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে এটির অবস্থাও খুব বেশি ভাল না।

দেবদ্যুতি এর ছবি

প্রশংসার জোয়ারে ভেসে যেতে থাকা এই সিনেমা সচলের দুটো রিভিউয়ে তো এক্কেরে তলিয়ে গেল! দেখার ইচ্ছে নেই মোটেই, ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ‘মেহেরজান’ দেখতে বাধ্য হয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত কিন্তু ন্যাড়া আর বেলতলায় যেতে চায় না হাসি

রিভিউ ভালো হয়েছে।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

হিমু এর ছবি

ভারতীয় কাস্ট/ক্রু না থাকলে ভারতের প্রভাবশালী সিনেমিডিয়া এই সিনেমাকে নিয়ে কোনো শব্দ করবে না। যেহেতু দেশের দর্শকেরা এই সিনেমা "খাচ্ছে" না, নানা কেষ্টুবিষ্টুদের শংসাবচন বেচেই পরিচালককে চলতে হবে। ফারুকী যেমন নিজের ফালতু চলচ্চিত্রে শিনা চৌহানকে রেখেছে।

আয়নামতি এর ছবি

তাহলে নারীদের বিজয়টা কোথায়?

আপনার এ প্রশ্নের উত্তরটা আন্ডার কন্সট্রাকশনে আছে বুঝে নিতে হবে। নিজের দেশে যারা যোগ্য অভিনেতা/অভিনেত্রীর খোঁজ পাননা(পেতে চাননা আসলে) তাদের পক্ষ থেকে দেশি সিনেমা দেখুন, হলমুখী হউন ইত্যাদি ইতং বিতং শোনাটা অসহ্য। আপনার লেখাটা ভালো লাগলো। লিখুন আরো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখাতে বরাবরই তার প্রতি কোন কারণে বিদ্বেষ দেখি! কিছু মনে করবেন না। তবে রুবাইয়াতের স্বল্প সময়ের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বেশকিছু বিষয়।এসব এক্কেবারে ভিতরের থেকে পাওয়া তথ্য, তাও বিগত ৩ বছরের মধ্যে পেয়ে আসছি। প্রথমত, তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে ‘’বলিউডাইজেশন’’ ঘটাতে চান। তার সহকারী মেয়েটি আমার নিকট বন্ধু। সেসুবাদে এমন ভিতরকার কিছু তথ্য হরহামেশাই পেয়ে থাকি। বলিউডের অভিনয় শিল্পীদের তাই উনার প্রধান চয়েস থাকে। এখন রুবায়েতের বলিউডাইজেশন প্রক্রিয়াটা কি? সেটা বুঝতে হবে, জানতে হবে। তার গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের বলিউডের প্রতি একধরেণর প্রীতি রয়েছে। এরা সিনেমায় গান-নাচ দেখতে বলিউড সিনেমা দেখে না, এদের অনেকেউ বলিউডের পরিচিত মুখ দেখলে সিনেমাটা আগ্রহ নিয়ে দেখে। আর তাছাড়া বলিউডে যেসব অফ বিট টাইপের সিনেমা হয়, পুরষ্কার পায়, তাতে যেসব শিল্পী অভিনয় করে, তারা অলরাউন্ডার। এরা নাচ-গানের সিনেমা সহ সবধরণের সিনেমায় মানিয়ে যেতে পারে সমানভাবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে, নতুন প্রজন্মের জন্য, নতুন প্রজন্মকে এ বিষয়ে আসক্তি তৈরিতে বলিউডাইজেশন প্রক্রিয়া রুবায়েতের। বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে বহুমতবাদ, বহু আন্দোলন হয়েছে। ফরাসিতে নব তরঙ্গ, ল্যাটিনে থার্ড সিনেমা, ডেনমার্কে ডগমা, ইউরোপে সিনেমা ভেরিতে, সুরিয়ালিজম, নিউ রিয়ালিজম, আভা গার্দ, ভারতে প্যারালাল সিনেমা, এমনকি বাংলাদেশে বিকল্প সিনেমা আন্দোলনের ইতিহাস মিলে। রুবায়েতের এই আন্দোলন-মতবাদ কিন্তু ওসবের মতো ঘোষিত ফরমাল আন্দোলন নয়। এটা একটা অঘোষিত আন্দোলন যা দেখায় দেখায় প্রজন্ম অভ্যস্থ ও নির্মাতারা অনুসরণ করতে থাকবে। রুবায়েতের মতো অন্য নির্মাতারাও বিশেষত তরুণ প্রজন্মের নির্মাতারা সাধ্য মতো এসব বলিউডি শিল্পীদের নিয়ে আসবেন। বলিউড কিংবা ভারতের অন্য কোন অভিনয় শিল্পীদের দিয়ে সিনেমায় অভিনয় করানো নাজায়েজ, এমন কিছু নয়। তবে কাহিনী ও চরিত্রের প্রেক্ষাপটে, কোন শিল্পী অভিনয়ের জন্য কাজ করতে পারেন। এমন বেশকিছু চলচ্চিত্র কিন্তু বাংলাদেশেই নির্মিত হয়েছে আগেই, এর মানে এই নয় যে সেসব বলিউডাইজেশনের অংশ! সিনেমাতো অনেকেই বানায়। তবে সিনেমাটা শিল্প হলো কিনা সেটা আগে দেখতে হবে। এই পরিচালকের সিনেমাকে শিল্পে পরিণত করার কোন মানসিকতা নেই। কেন নেই তা বলছি। তিনি পুরষ্কার কিভাবে পাবেন, কোন ইস্যুতে কাজ করলে পুরষ্কার পাবেন, সেসব আগে থেকেই হিসেব কষে নেন। তার কাছে কোন ইস্যু, বা বিষয়ের প্রতি কোন আবেগ নেই। মানে শিল্পী হিসেব কোন বিষয়ে তাড়িত হয়ে মন থেকে কাজটা নির্বাচন করবেন, এমন তিনি কখনোই করেন নি, করবেনও বলে মনে হয়না। কারণ তিনি এখনো শিল্পী হয়ে উঠতে পারে নি। তৃতীয় সিনেমাটি তিনি সমকামীদের উপর করতে চাচ্ছেন। এবং এ বিষয়ে গত বছরো তিনি ’বয়েজ অব বাংলাদেশ’ (বিওবি) এর শীর্ষস্থানীয় কর্মীদের সাথে বৈঠক করেন ৩ দফা। তাদের কাছ থেকে রিয়েল লাইফ স্টোরি চেযেছেন, তাদের সবাত্মক সহযোগীতা চেয়েছেন, তবে বেশকিছু শর্তও আরোপ করেছেন। কাহিনিকার হিসেবে ওদের কারো নাম তিনি সিনেমায় দিবেন না। তাদের গল্প ও অভিজ্ঞতা শুনে তিনি নিজের মতো করে সিনেম্যাটিক রূপ দিবেন। কাহিনী তাই তার হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি যত পুরষ্কার পাবেন এতে তাদের (বিওবি) শরীক করবেন না, যদিও বিওবি ২৫% ফান্ড সরবরাহ করবে, তিনি সেটা ধার্জকৃত লাভসহকারে পরবর্তীতে দিয়ে দিবেন। বিওবির সমকামী কর্মীদের মাঝে আমার এক স্কুল বন্ধু ছিলো, সে নিজেও সমকামী এবং শীর্ষস্থানীয়। কাকতলীয়ভাবে, এই সংবাদটাও একদিন কথায় কথায় আমাকে সে বললো! শিল্পী যদি পুরষ্কার আর মিডিয়ায় পজিটিভ-নেগেটিভ সমালোচনার ঝড় তুলে সবার কাছে পরিচিত হতে চান, তাহলে সে ব্যক্তিকে কোনভাবেই শিল্পী খেতাব দেয়া যায় না, সে শিল্পী হতেই পারে না। তাই রুবায়েত শিল্পী নয়, অন্তত এখন পযন্ত।তার দীঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে আছে বাং-পাক বন্ধুত্ব। ২০০৫ সালের দিকে জোট সরকারের আমলে, কিছু হলুদ ও পাকি প্রেমি সাংবাদিক একটা অ্যাকশন প্ল্যান নিয়েছিলো। হয়তো সেটা জামাতের পরিকল্পনাই ছিলো। একটা বহুল প্রচলিত জাতীয় দৈনিকে (বৃহষ্পতিবার ছিলো দিনটি) বিশেষ ক্রোড়ে ইয়াহু চ্যাটরুম নিয়ে ফিচার হয়। সেখানে পাকিস্তান রুম নিয়েই লিখা হয়। ইয়াহু চ্যাটের পাকিস্তান রুমে বাংলাদেশী কেউ প্রবেশ করলে এবং পরিচয় দিলে তখন পাকিস্তানিরা ভাই বলে সম্বোধন করে। আরে ইয়্যে তো হামারা ভাই হে। হাম একসাথ হুয়া কারথেতে এক ওয়াক্ত মে! বিশ্বাস করুন, আমি ছিলাম ইয়াহু চ্যাটের পোকা। সারা রাত পড়ে থাকতাম। পাকিস্তান রুমে ঢুকে বাংলাদেশী পরিচয় দিলে অনেকেই (সবাই নয়) গালিগালাজ করতো, বেইমান ডাকতো। পরে রুম ত্যাগ করতাম। অথচ এই ফিচার কতটা পজিটিভ করেছিলো আমাদের সেই প্রজন্মকে, যে ছেলেটার পাকি রুমের গালি খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, আমি নিজেও জানি, সেও গালি খেয়েছে অথচ ফিচারের পরে একদিন এক্সেইটেড হয়েই হয়তো বা ফাপর নিয়েই হয়তো বলে বসলো আরে পাকিস্তান রুমে গেলে তো ওরা ভাই ডাকে! নতুন প্রজন্মের মধ্যে পাকিস্তান সম্পর্কে হেইটকে ভালোবাসায় রূপান্তর করতে কি মাস্টার প্ল্যান-ই না ছিলো! যদিও সেটা বেশিদিন এগুয়নি। রুবায়েত তদ্রুপ পাকি প্রেমের দাস্তান নিয়ে ছবি বানিয়েছে, ভবিষ্যতেও বানাবে। ওষুধের ডোজটা প্রথম দফাতেই বেশি হয়ে গিয়েছিলো, তাই একটু ব্র্যাক দিলো আরকি। মেহেরজানের ফান্ড হয়তো আইএসআই করেছে, সেটা ভাবাও খুব অমূলক হবে না। মেহেরজানের নায়ক (বেলুচি রেজিমেন্ট সৈনিক) ওমর-তো সত্যিকারেরই পাকিস্তানি ছেলে। ওই চরিত্রটা করতে হলে কেনো পাকিস্তানী ছেলেই হতে হবে, সেটাও ঠিক বুঝে ওঠতে পারিনি! ওই যে, হয়তো ফান্ড ওয়ালাদের আবদার-শর্ত ছিলো হয়তো! ৭১ এ বর্বর হত্যা -ধর্ষণে এখনো হৃদয়ের ঝাল মেটে নি! সেই পাকিস্তানীদেরই (ওমর) ৪০ বছর পরে এসে রূপালী পর্দার অজুহাতে বাঙালী মেয়েকে একটু ধরে ছুয়ে দেখার সুযোগ তো করে দিলো রুবায়েত। বয় ফ্রেন্ড হিসেবে নদীর পাড়ে গড়াগড়ি, চুম্বন,সেটাও কম কি!

হাটের হাঁড়ি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।