বাঘ নিয়ে বাঙ্গালীর জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। একটা সময় ছিল যখন বাংলার বিশাল অংশই ঘন জংলায় ভর্তি ছিল। সে সময় সন্ধ্যাবেলাতেই বাঘের ডাক শোনা যেত। বাঘের হানাও রীতিমত দৈনন্দিন বাস্তবতা ছিল সে সময়। আর সে জন্যই ছোটরা ছড়া কাটতো আগে গেলে সোনা পায়, পিছে গেলে বাঘে খায়, আর বড়রা বলতো যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। প্রবাদ-প্রবচন আর বাগধারায় বাঘের পায়ের ছাপ কম নেই। কিন্তু সে সব দিন গেছে। ক্রমাগত শহুরে আগ্রাসনে বনভূমি উজাড় করে এক সময়ের বাঘমামাকে আমরা ঘরছাড়া করেছি। ঠেলে দিয়েছি দেশের কোনায় সুন্দরবনের এক চিলতে সবুজের মধ্যে। তাতেও রক্ষা নেই বাঘের শুমারী করে দেখা যাচ্ছে ক্রমশঃ সেই সুন্দরবনেও বাঘের সংখ্যা দিনকে দিন কমেই আসছে। তারউপর সুন্দর বনে কলকারখানার এলাহী কারবার ফেঁদে শুধু দেশ থেকে নয় আমাদের এই গ্রহ থেকেই বাঘ বাবাজিকে নিশ্চিহ্ন করার সমস্ত আয়োজন এই সবে মাত্র আমরা শেষ করে এনেছি।
বাঘের যত্নআত্তিতে আমাদের খেয়াল না থাকলেও বাঘ নিয়ে আর নিজেদের বাঘা বাঙ্গালী হিসেবে জাহির করার আস্ফালনের কোন কমতি নেই। ক্রিকেট খেলায় ছিনাথ বহুরূপীর মত বাঘ সেজে আমাদের বাঘা খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়ে, বাঘকে জাতীয় পশুর খেতাবে ভূষিত করে, নিজেদের বাঘেরবাচ্চা বলে নিজেদেরই পিঠটা চাপড়ে দিয়ে যে আত্মসন্তোষে আমরা মগ্ন হয়ে আছি তাতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ক’পয়সা লাভ-ক্ষতি সে হিসাব কষবো এমন বিদ্যা-বুদ্ধি ঘটে নেই। তাই ভাবছি বাঘের ছবিই দেখাই। কয়েক প্রজন্ম পর বাঘের ছবিতে ফুলের মালা চড়াবার সময় যখন এসে যাবে তখন আমাদের আণ্ডা-বাচ্চাদের এই সব ছবি দেখিয়েই বলতে হবে বাপধন এই দেখো বাঘ। আপাতত রাজশাহীর রিকশার ছবিতে কত রূপে বাঘমামা এসেছেন তাই দেখা যাক। রিকশার পেছনের টিনের চৌকো ক্যানভাস জুড়ে বাঘের ছবি খুবই জনপ্রিয়। অন্য পশুদের চেয়ে বাঘের ছবিই আঁকা হয়েছে বেশি। হয়তো বাঘের রাজকীয় চেহারা আর এই টাইগারের সাথে বেঙ্গল শব্দ জুড়ে যাওয়ায় বাঘ আমাদের বা আমরাই বাঘ এই জাতীয় একটা আত্মতৃপ্তি থেকেই বাঘ নিয়ে আমাদের বাগাড়ম্বর কম নয়। এখন বাঘ নিয়ে আমাদের টিন ক্যানভাসের শিল্পীদের ছবির আড়ম্বর দেখা যাক।
রিকশার ছবির ফটোগ্রাফ ও লেখা : সোহেল ইমাম
মন্তব্য
মুজাহিদ আর্ট ফার্স্ট।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
সেরাজুলের বাঘের দোষ আছে। আরেকটি ভালো লেখার জন্য ধন্যবাদ। নিজের নামটা লিখতে ভুলে গিয়েছেন।
-----মোখলেস হোসেন।
লেখার শেষে কি? সেখানেতো নাম আছে। নাকি মন্তব্যে? যাই হোক এবার দিলাম। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ।
সোহেল ইমাম
আমারই ভুল। দেখতে পাইনি।
-- মোখলেস হোসেন
যাক, ভাবলাম আমারই চোখের/মনের দোষ কি না
সোহেল ইমাম
ধন্যবাদ
সোহেল ইমাম
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
ধন্যবাদ ভাই
সোহেল ইমাম
কয়েকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাঘ এবং হরিণের শরীলের সাইজ সমানে সমান। হরিণের সাইজ যে বড় হয়ে যাচ্ছে এটা এখনও কেউ বলে নাই, সুতারং বাঘের সাইজই যে দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে এটা শিওর।
বাঘের সংখ্যা যে দিন দিন কমে আসছে হয়তো সেটাই শিল্পী বোঝাতে চেয়েছেন বাঘের শরীর দিনকে দিন ছোট করে
সোহেল ইমাম
প্রথম ছবির বাঘের মুখটা সবচেয়ে ডিটেলড। শরীরে একটু ইয়ে আছে। ইন্টারেস্টিং পোস্ট, এমন বিষয়ের উপর লেখা সচরাচর কেউ দেয় না। ধন্যবাদ।
ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ।
সোহেল ইমাম
আমাদের রিকশার বাঘগুলোকে প্রায়ই আমার কাছে মানুষের মতো লাগে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হয়তো আঁকানোর সময় বাঘের চেয়ে শিল্পী মানুষের দিকেই বেশি তাকিয়েছিল
সোহেল ইমাম
নতুন মন্তব্য করুন