You will not be able to stay home, brother.
You will not be able to plug in, turn on and cop out.
You will not be able to lose yourself on skag and skip,
Skip out for beer during commercials,
Because the revolution will not be televised.
-- Gill Scott-Heron (1949-2011)
২০০৪ সালের ১৯শে জানুয়ারী, আইওয়া অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারীতে হেরে হতবাক ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী হাওয়ার্ড ডীন। প্রাক নির্বাচনী জরিপগুলোতে এগিয়ে ছিলেন এই সেদিনও, অথচ ককাস শেষে আজকে তাঁর অবস্হান তৃ্তীয়। কী বিশাল তাঁর কর্মী বাহিনী! প্রাণচঞ্চল সব তরুণ-তরুণীরা নতুন ধারার রাজনীতির ডাকে তাঁর পেছেনে শামিল হয়েছে। সব বৈপরীত্যকে পেছনে ঠেলে একেবারে অজানা অচেনা থেকে তরুণদের প্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন ডীন। অথচ খুব বড় হোঁচট খেয়ে বসলেন প্রাইমারীর শুরুতেই। হতবিহ্বল ডীন মঞ্চে উঠেছেন পরাজয় স্বীকার করে পরবর্তী প্রাইমারীগুলোতে ভাল করার প্রতিশ্রুতি দিতে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া সমর্থকদের মনোবল চাঙা করতে গিয়ে একটু অস্বাভাবিক ভাবেই চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। মুহুর্তের মাঝেই ডিনের সেই চীৎকার মিডিয়ার কল্যাণে বিখ্যাত হয়ে গেল ‘ডিন’স স্ক্রীম’ নামে। সিএনএন, ফক্স, এমএসএনবিসি সহ বিভিন্ন চ্যানেলে প্রতিদিন যেন শতবার করে প্রচার হচ্ছিল সেই ভিডিও ফুটেজ। যেই মিডিয়া হাওয়ার্ড ডীনের নির্বাচনী খবর প্রচারে বিমুখ ছিল সেই মিডিয়তেই সারাদিনের একমাত্র খবর হয়ে গেল ‘ডিন’স স্ক্রীম’। পরবর্তীতে সিএনএন অবশ্য বক্তৃতাটির ভিডিও ফুটেজ অসংখ্যবার এবং অতিরঞ্জিত করে প্রচার করাড় জন্য দুঃখপ্রকাশ করে। কিন্তু ততদিনে ডীনের নির্বাচনী তরী প্রায় ডুবে গেছে। সেই সাথে ডুবে গেছে একটা ঘুমকাতুড়ে মার্কীন প্রজন্মের হঠাৎ উথ্থান।
ডীন যখন মঞ্চে, সেখান থেকে কয়েক গজ দূরে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছছিলেন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই একজন মানুষ। জো ট্রিপ্পি, হাওয়ার্ড ডীনের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। দুটো বছর ধরে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগঠিত করেছিলেন প্রগতিশীল ব্লগারদের, দাঁড় করিয়েছিলেন একটি সংগঠণ ‘ব্লগ ফর আমেরিকা’। সমর্থন দিয়েছিলেন এমন একজন প্রার্থীকে যে কীনা নিজ দলেই অপাংতেয়। হাওয়ার্ড ডীন নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতেন ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির ডেমোক্রেটিক অংশ’-এর প্রতিনিধি হিসেবে। ট্রিপ্পি জানতেন ডীনকে নিয়ে কাজ করার ঝুঁকি অনেক। পারটির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের আর্শীবাদ পাওয়া যাবে না, আর ঐ একই কারণে পাওয়া যাবে না মিডিয়ার প্রচার। মানুষের কাছে পৌঁছাবার আড় একটি রাস্তাই বাকী, আর সেটা হল অনলাইন। ‘ডীন ফর আমেরিকা’ ক্যাম্পেইনের আয়ুষ্কাল ছিল মার্চ, ২০০৩ থেকে মার্চ, ২০০৪ পর্যন্ত। এই প্রায় এক বছরের অনলাইন প্রচারনায় সাধারণ মানুষের ছোট ছোট ডোনেশনের মাধ্যমে নির্বাচনী তহবিলে জমা পড়েছিল ৫০ মিলিয়ন ডলারের ওপর।
কি এমন বার্তা নিয়ে এসেছিলেন ডীন, যে জাতীয় পর্যায়ে অনেকটাই অচেনা এই রাজনীতিবিদকে টাকা-কড়ি দিয়ে সাহায্য করবে? কেনই বা তিনি নিজ দলের নেতৃত্বের কাছে প্রার্থী হিসেবে অপ্রিয় ছিলেন? মিডিয়াই বা কেন তাঁর ক্ষেত্রে প্রচার বিমুখ এবং তাঁর চরিত্রহননকারীর ভূমিকা পালন করেছিল? কি ছিল তাঁর ‘ডীন ফর অ্যামেরিকা’র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে? ডীন ছিলেন ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, পেশায় চিকিৎসক। পড়াশুনা করেছেন বিখ্যাত ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে। তাঁর ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল ইরাক যুদ্ধ নিয়ে পারটি নেতৃত্বকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে, “আমি জানতে চাই, কেন আমার ডেমোক্রেটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্ব বুশের একতরফা দখলদারিত্বকে সমর্থন করলো?” উল্লেখ্য ২০০২ সালে যখন ইরাক যুদ্ধ বিল সিনেটে উথ্থাপিত হয়, তখন ডেমোক্রেটরা সিনেটের নিয়ন্ত্রণে। ৫০ জন ডেমোক্রেট সদস্যের মধ্যে ২৯ জন ভোট দেন যুদ্ধের পক্ষে, ২১ জন বিপক্ষে, একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য বার্নি স্যান্ডার্স বিপক্ষে ভোট দেন। ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ঢাক-ঢোল পিটিয়েছিলেন রিপাবলিকানদের সাথে ডেমোক্রেটদের একটা বড় অংশ, মিডিয়া পালন করেছে চীয়ার লিডারের ভূমিকা আড় যুদ্ধ ব্যাবসার সাথে জড়িত লকহীড মারটিন, বোয়িং, জেনারেল ডায়নামিক্স, রেথিওন, নরথর্প গ্রুপের মত প্রতিষ্ঠানগুলো হাতিয়ে নিয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ সম্পদ। হাওয়ার্ড ডীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি যুদ্ধের অবসান এবং ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করবেন। আভ্যন্তরীন ব্যাপারে তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল, সবার জন্য স্বাস্হ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, বুশ প্রবর্তিত ধনী গোষ্ঠীর জন্য ট্যাক্স ব্রেক সুবিধা বাতিল, ছাত্র-ছাত্রিদের জন্য উচ্চশিক্ষা খরচ কমানো সামাজিক সুবিধার ক্ষেত্রগুলোর প্রসার। আজকাল মার্কীন রাজনীতির খবরা-খবর যারা রাখেন, তাদের কাছে নিষ্চই এক যুগ আগের এই প্রতিশ্রুতিগুলো চেনা চেনা লাগছে। বিপুল শক্তির করপোরেট বলয় আর, বিত্তবানদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মার্কীন রাজনীতির শিখরে ওঠা অনেকটাই অসম্ভব। এখানে রাজনীতি ও মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণও ঐ শক্তির হাতেই। হাওয়ার্ড ডীন ও জো ট্রিপ্পি খুব অল্প সময়েই অতীত হয়ে গেছেন, ধূলোয় ঢাকা পড়ে গেছে ‘ডিন ফর অ্যামেরিকা’ ক্যাম্পেইন ইতিহাস। রেডিও, টিভি, নিউজ পেপারে কেউ তেমন আড় আলোচনা করে না ঐ ক্যাম্পেইন নিয়ে। কিছু মানুষ অবশ্য নানাভাবে ধরে রাখতে চেয়েছেন সময়টাকে। ২০০৮ সালে নির্মিত হয় প্রমান্য তথ্য চিত্র ‘ডীন আন্ড মি’। ২০১১ সালে জর্জ ক্লুনি ও রায়ান গসলিং এর উৎসাহে নির্মিত হয় চলচিত্র ‘দ্যা আইডিয়ায অফ মার্চ’। আর সেই সময়টাতে ডীনের সবচেয়ে কাছে মানুষ জো ট্রিপ্পি তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন ‘দ্যা রেভ্যুলুশান উইল নট বি টেলিভাইযড’ বইতে।
এই লেখাটির নামকরণ করা হল সত্তুর দশকের সিভিল রাইটস অন্দোলনের কবি গিল স্কট-হেরনের কবিতা ও জো ট্রিপ্পির বই অনুসারেই। দ্বিতীয় পর্বটি আসবে নভেম্বরে। শিরোনাম খানিকটা ভিন্ন হলেও হতে পারে। যেমন, ‘রেভ্যুলুশান উইল বি টেলিভাইযড’। সেটি সম্ভব হবে, যদি তরুণ প্রজন্মের অন্তত ৫০% ভোট দিতে যায়। ২০০৪ সালে ১৮-২৯ বয়সী ভোটারদের মধ্যে ভোট দিয়েছে মাত্র ১৭%, ২০০৮ সালে ১৮%। এদের কাছে ঘুম ভোটের চাইতে উত্তম, রেভ্যুলুশান বা বিপ্লব অধম।
- অপুর প্যাঁচালী
মন্তব্য
যুগ পাল্টায় গেছে, হাওয়ার্ড ডীন এখন আর ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার চান না। এখন উনি শুধুই বাবুকাগী চান।
সিনেমাটার নাম the ides of march ছিল তো।
ডীনের জীবনের সাথে যে সিনেমাটার সম্পর্ক ছিল জানতাম না। সেখানে কিন্তু ‘ডিন’স স্ক্রীম’ নিয়ে কোনো কথা নেই, আবার সিনেমায় যে স্ক্যান্ডাল নিয়ে কথা আছে সেটার উল্লেখ আপনার লেখায় নেই।
ঠিক, "The Ides of March" আমার ভুল হয়েছে। সিনামাটি তৈরী হয়েছে Beau Willimon এর "Farragut North" নাটিকা থেকে। Willimon কাজ করেছিলেন Dean campaign এর প্রেস টীমে। সব সময় দাবী করেছেন "Farragut North" ডীন ক্যাম্পেইনের অভিজ্ঞতার আলোকেই লেখা। অবশ্য মুভিটি দেখে আমিও মিল খুব কমই পেয়েছি। জানিনা মূল নাটিকার সাথে সিনেমার মিল কতখানি। ডীন স্ক্রীমও ছিলনা সেখানে। স্ক্যান্ডালটি ২০০৮ এর John Edwards এর ঘটনার সাথে হুবহু মিলে যায়। মূলত একটা জগা-খিচুরি ছবি।
আহ, সেই ডীন স্ক্রিম। মনে আছে ডর্ম রুমে বসে লাইভ শুনেছিলাম টিভিতে। কানে এখনও তালা লেগে আছে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
নতুন মন্তব্য করুন