বুদ্ধিজীবী! বুদ্ধিজীবী! বুদ্ধিজীবী!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২১/০২/২০১৬ - ৩:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৪৯ সাল। ঢাকা থেকে মাহে-নও, মোহাম্মদী, নওবাহার নামের পত্রিকা ছাপানো হত।

মোহাম্মদীতে লেখা প্রবন্ধে সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন লিখেছিলেন, "বাংলাকে মুসলিম তামদ্দুনের উপযুক্ত বাহনে পরিণত করতে হইলে আমাদের যে আরবী-ফারসি আলফাজ এস্তেমাল করিতে হইবে, তাহা অস্বীকার করা চলে না। এবং যে সমস্ত শব্দ বিজাতীয় তামদ্দুনের পরিচয় বহন করে, সেগুলোকে পরিত্যাগ করিতে হইবে, তাহাও সত্য। ইসলামী তমদ্দুনের নামগন্ধবর্জিত বঙ্কিমী-বিদ্যাসাগরীয় ভাষা পাকিস্তানের তরুণ শিক্ষার্থীরা শিখিবে, ইহার চাইতে পরিতাপের বিষয় আর কি হইতে পারে।"

মাহে-নও পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল "পূর্ব পাকিস্তানে একই হুকুমার্তের অধীন এক প্রদেশে মুসলমানদের তায়দাদ দুনিয়ার অন্য যে- কোন প্রদেশ হতে বেশী। অন্য কথায়, মাশরেকী পাকিস্তান দুনিয়ার বৃহত্তম মুসলিম মারকাজ।কেবল সংখ্যার দিক দিয়া নহে, ইসলামী তালিমতলকীনেও মাশরেকী পাকিস্তান সম্ভবত দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আসনের মোসতাহেক। মাশরেকী পাকিস্তানে দ্বীনি তালিমগাহ বা মাদ্রাসার তায়দাদ দুনিয়ার যে- কোন প্রদেশের এহেন তালীমগাহর তায়দাদ হতে বেশী। এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহের গোনজায়েশ নাই।"

না কৃষ্ণের রাধা, না হোজ্জার গাধা টাইপের এই জগাখিচুড়ি ভাষাতে আবার অনেকে গল্প লেখাও শুরু করে দিয়েছেনঃ মীর সাহেব ফরমাইলেন যে তাঁহার তবিয়ত বহুত খারাব হইয়াছে। আমি তাঁহাকে দাওয়াই এস্তেমাল করিবার আরজ করিলে, তিনি ফরমাইলেন, "জোবাসা বোখার। দাওয়াই এস্তেমালের জরুরত নাই।"

"বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি মূর্তিপূজারীদের সৃষ্টি। এ সংস্কৃতি কখনো ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানে মেনে নেয়া যায় না।" তাই পশ্চিম পাকিস্তানীর ভাষায় "কুফরি জবান" বাংলাকে উর্দু-আরবির স্পর্শে পবিত্র করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করতে হবে! অবশ্য শুধু ভাষা বলে নই, জীবনের সব ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের "হাইব্রিড মুসলমানদের" শুদ্ধ করে ওদের মত খাঁটি করার প্রক্রিয়া সাতচল্লিশ থেকে শুরু হয়েছিল। ইসলাম ভাবাপন্ন সুনাগরিক তৈরির জন্য তৃতীয় হতে দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য "দীনিয়াত" নামের বিষয়কে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলা ভাষায় গুরুতর সমস্যা খুঁজে পেলেন! যেমন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনকে দেয়া স্মারকলিপিতে মুসলিম সাহিত্য সংসদের সভাপতি নজমুল হোসেন, দর্শনের অধ্যাপক শামসুজ্জামান চৌধুরী এবং আবদুল হাই আর আসাম হেরাল্ড ও যুগভেরী পত্রিকার সম্পাদক মৌলানা রাজিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন লিখলেন "বাংলা বর-কনের আলাপের উপযোগী হতে পারে কিন্তু তার মাধ্যমে বীরত্বব্যাঞ্জক কিছু ব্যক্ত করা চলে না। বাংলার তুলনায় উর্দু একটা বীর্যপূর্ণ ভাষা এবং তার চরিত্রে পুরুষত্ব আছে।" দেশের ওলামা সমাজও পিছিয়ে থাকল না। তারা বিবৃতি দিল "আপনার দ্বীনি ফরজ সর্বত্র সভা সমিতি করিয়া উর্দুর সমর্থনে জনমত গঠন করা ও উর্দু বিরোধীদের ফেরেববাজী হইতে মুসলিম জনসাধারণকে রক্ষা করা।"

১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন "আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙালী। এটি কোন আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙ্গালীত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, তা মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো নেই।" তবে ১৯৪৯ সালে এসে বাংলা ভাষার সংস্কার এবং ইসলামী ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার সরকারি কমিটিতে মওলানা আকরাম খান, মওলানা আব্দুল্লাহ আল বাকী এবং আবুল কালাম শামসুদ্দিনের মত লোকজনের সাথে ছিলেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ডক্টর এনামুল হক এবং অধ্যাপক অজিত গুহ! এই কমিটি যে নিন্মলিখিত প্রস্তাব করেঃ

এক। বাংলা ভাষায় সহজ বাক্যরীতির ব্যবহার দ্বারা সংস্কৃত প্রভাব যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে।
দুই। মুসলিম লেখকদের প্রকাশভঙ্গী এবং ভাবসমুহ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
তিন। পুঁথিতে ব্যবহৃত প্রবাদ-প্রবচনগুলো ভাষাতে আরও স্বাধীনভাবে প্রচলন করতে হবে।

এই তিন প্রস্তাবের আলোকে কিভাবে বাংলা লিখতে হবে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া হয়েছিলঃ

বুদ্ধিজীবি সমাজের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ ভাষা আন্দোলনের শুরুতে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন (রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রথম আহবায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নুরুল হক ভূঁইয়া)। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেকেই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আর স্থানীয় পর্যায়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষক। আন্দোলন যখন ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভ করে গণআন্দোলনে পরিণত হচ্ছিল, তখন বুদ্ধিজীবী সমাজের বেশিরভাগ এতে সরাসরি অংশ নেয়নি। মওলানা আকরাম খান, আবুল কামাল শামসুদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, বেনজির আহমেদের মত বুদ্ধিজীবীদের অনেকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও এ আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক-কবি-লেখকদের সুসংবদ্ধ অংশগ্রহণ কিংবা সমর্থন ছিল না।

সামরিক শাসক আইয়ুব খান এদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের দূর্বলতা ধরে ফেলতে পেরেছিলেন। বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ ছিল সুযোগ সন্ধানী। অনেকেই নিজেদের বৈষয়িক উন্নতি এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। এটাকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারি উদ্যোগে পাকিস্তান কাউন্সিল, ন্যাশনাল রিকন্সট্রাকশন ব্যুরো, রাইটার্স গিল্ড, বাংলা উন্নয়ন বোর্ড, নজরুল একাডেমী নামের বেশ কিছু সংস্থা স্থাপিত হয়েছিল। বুদ্ধিজীবীদের ডেকে ডেকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন পদ দেওয়া হয়। বাঙালী মুসলমানদের জন্য এক নূতন সংস্কৃতি আবিষ্কার করা প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই কাজে প্রচুর টাকাপয়সাও খরচ করা হচ্ছিল। ফলশ্রুতিতে আইয়ূব খান নবীন এবং প্রবীণদের নিয়ে সফলভাবে একটা দূর্নীতিগ্রস্ত বুদ্ধিজীবী সমাজ তৈরি করেছিলেন। এই সামরিক শাসকের লেখা আত্মজীবনী "ফ্রেন্ডস, নট মাস্টার্স" নিয়ে আমাদের বুদ্ধিজীবী সমাজের একাংশ উচ্ছ্বাসে মেতে ছিল! অনেকে লিখলেন এ বই পূর্ব পাকিস্তানের স্কুল -কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। (আইয়ুবের এই ঘুষখোর লেখকদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন সিকান্দার আবু জাফর, শওকত ওসমান, হাসান হাফিজুর রহমান, শামসুর রাহমান মত কয়েকজন)। এই সামরিক শাসকের বাহবা পাওয়ার জন্য বাংলা একাডেমী পর্যন্ত ব্যাকুল ছিল! তাঁরা বাংলা বর্নমালা সংস্কারের জন্য কমিটি করে বসল। এ সময়টাতে সাহিত্যিকদের কেনার জন্য পুরষ্কারের ছড়াছড়ি পড়ে গেল। দাউদ, আদমজী, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক...পুরষ্কার দিয়ে সাহিত্য কেনা শুরু হল।

১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীদের অবস্থান ছিল চরম লজ্জাজনক। এদের কেউ কেউ পাকিস্তানের সরকারের "এন্টি ইন্ডিয়া" প্রচারণায় যোগ দিল, অল্প কিছুদিনের মধ্যে যা "এন্টি হিন্দুতে" পরিণত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের দশ মিলিয়ন হিন্দুর কথা তাঁরা মনে ছিল না! এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে "হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি" বন্ধের হিড়িক পড়ে গেল। মেয়েদের প্রকাশ্য নাচ গান বন্ধ। সরকারি দপ্তরের অনুমতি ছাড়া পনের বছরের উপরে কোন মেয়ে মঞ্চে উঠতে পারবে না। মেয়েরা কপালে টিপ পড়তে পারবে না। নাটকের সংলাপে মা- বাবা থাকবে না, আম্মা-আব্বা বলতে হবে। এমনকি টেলিভিশনে শাড়ী পরিধানের নিয়ম কানুন সম্বলিত নির্দেশনা আসল। হিন্দু হিন্দু গন্ধ থাকার কারণে "তোমার চরণদুটো আমার বুকে ধরি" এবং "ধন ধান্য পুষ্পে ভরা" নিষিদ্ধ হল!

"হিন্দু কবি" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে রেডিও-টিভিতে নিষিদ্ধ করা হল। পরে নিয়ম করা হল এক মাসে সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট রবীন্দ্রনাথ প্রচার করা যাবে। রেডিও-টিভির কর্মকর্তাদের মিটিংয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ঐতিহাসিক কথাটা নিশ্চয়ই অনেকের জানা। "আপনারা নিজেরা রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখতে পারেন না?" কবির লেখা "জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে" ভারতের জাতীয় সংগীত। এ কারণে রেডিও টিভিতে "জনগণ" এর পরিবর্তে "পাবলিক" শব্দটা ব্যবহার করতে বলা হল। অবশ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী বলেছিল, "দেশ স্বাধীন করলাম আমরা, আর জাতীয় সংগীত লিখল কোথাকার কোন রবীন্দ্রনাথ!"

এদিকে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে বিপত্তি! পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নিলেও শ্যামা সঙ্গীত আর কীর্তন বাদ দিয়ে তাঁকে গ্রহণ করা হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী মহলের কেউ কেউ চেষ্টা করে নজরুলের অন্যরকম সংস্করন বের করলেন। যেমন নজরুল লিখেছেন "দারোয়ান গায় গান/ শোন ওই রামা হৈ" বদলে হল "দারোয়ান গায় গান/কেহ নাই খোদা বই"। তাঁর গান থেকে ভগবান, কৃষ্ণ বাদ গেল। একই নিয়মে কবিতার "শ্মশান" শব্দটাকে "গোরস্তান" বানানোর মত ঘষামাজা করে নজরুলকে পাকিস্তানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হল।

লেখাটার শেষ পর্যায়ে অনেকের কাছে অজানা একটা ছোট ঘটনার কথা বলি। ১৯৫৭ সালে জামাতের প্রধান নেতা মওলানা আবুল আলা মওদুদী ঢাকায় এসেছিলেন। পল্টন ময়দানের সভামঞ্চে জামাতের মওলানাদের বসার জন্য ছিল সোফাসেট আর সভামঞ্চের নিচে ছিল বাঁশের লাঠি আর ধারালো অস্ত্র। মওদুদী বক্তৃতা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চারিদিক থেকে ছাত্র জনতার চিৎকার শুরু হল " বাংলায় বলুন, বাংলায় বলুন"। ইসলামের ধ্বজাধারী মওলানার বাংলাভাষা জানা নাই। মুহুর্তের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল। জামাতের ক্যাডাররা লাঠি অস্ত্র নিয়ে জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে লাগল। সভা পণ্ড হয়ে গেল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মওদুদী এরপর আরেকবার এসেছিলেন সত্তরের নির্বাচনের আগে। এর কিছুদিন আগে পশ্চিম পাকিস্তানের এক মিটিংয়ে তিনি বলেছিলেন "বেহশতে মুসলমানদের যে হুর দেয়া হবে সম্ভোগের জন্য, তাঁরা সংগৃহীত হবে বিধর্মী সুন্দরই ষোড়শীদের মধ্য থেকে।" সেবারও ছাত্র জনতার প্রতিবাদের মুখে তিনি সভাতেই আসতে পারেন নাই। এভাবেই জিন্নাহ-খাজা নাজিমুদ্দিন-আইয়ুব-ইয়াহিয়ারা যতবার আমাদের দেশ-ভাষা-অধিকার-সংস্কৃতির উপর আঘাতের চেষ্টা করেছে, আমাদের ছাত্রসমাজ এবং সাধারন মানুষ প্রতিবার তাঁদের সর্বশক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। তাঁদের কোন স্বার্থ ছিল না। পুরষ্কার-পদক এবং পদের লোভ ছিল না।

তথ্যসূত্রঃ

১। Ajay K. Roy, The Role of Intellectuals- Pakistan Period, A Nation is Born, The University of Calcutta, 1974
২। হুমায়ূন আজাদ, ভাষা আন্দোলনঃ সাহিত্যিক পটভূমি, আগামী প্রকাশনী, ১৯৯০
৩। গাজীউল হক, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, সত্য আনন্দ প্রকাশন, ১৯৭১
৪। এম আর আখতার, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, দেশ, ডিসেম্বর ১৯৭১
৫। বদরুদ্দিন উমর, পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (প্রথম খণ্ড), আনন্দধারা প্রকাশন, ১৯৭০
৬ । Nilima Ibrahim, Bangladesh and the Cultural Crisis, A Nation is Born, The University of Calcutta, 1974

সৌমিত্র পালিত


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

আমায় দুটো ভাত দাও সংস্কার করে আমায় চারটা ভাত দাও হয়ে গেল কোন হিসাবে বুঝলাম না। টো হতে টা হয়তো বুঝলাম কিন্তু মাঝখান দিয়া ভাতের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেল তো মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব সম্ভবত আমাদের খাবারের পরিমাণ পাকিস্তান হবার পর বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল! চিন্তিত
____________________
সৌমিত্র পালিত

Emran  এর ছবি

বাংলার তুলনায় উর্দু একটা বীর্যপূর্ণ ভাষা

ভাষার যে শুক্র/বীর্য/ডিম্ব থাকতে পারে, এটা জানতাম না! তো উর্দুর বীর্যে কার গর্ভসঞ্চার করার পরিকল্পনা ছিল?

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বহু সাহিত্য, সিনেমা, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট আছে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের স্মারকলিপি মনে হয় গোটা দুনিয়াতে এই একটাই আছে।
___________________
সৌমিত্র পালিত

কৌস্তুভ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! পীরসাবের প্রশ্নটা আমিও করতে যাচ্ছিলাম। দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

বিভূতিভূষণ আদর্শ হিন্দু হোটেলে লিখেছেনঃ হাজারি ঠাকুর খাইতে বসিয়া রোজ ভাবে—আর দুটো ভাত থাকলে ভাল হোত, না-হয় তেঁতুল দিয়ে খেতাম। পদ্মটা কি সোজা বদমাইশ মাগী- পেট ভরে' যে কেউ খায়- তাও তার সহ্যি হয় না। তিনি আবার আম আঁটির ভেঁপুতে লিখেছেনঃ একদিন সর্বজয়া একবাটি দুধে কিছু ভাত মাখিয়া পুত্রকে থাওয়াইতে বসিল ৷- দেখি হাঁ কর- তোমার কপালখানা- মন্ডা না মেঠাই না, দুটো ভাত আর দুধ...

হাজারি ঠাকুর আর সর্বজয়ার দুটো ভাতের যুৎসই বিকল্প চারটা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। তাছাড়া উর্দু- ফার্সিতে চার সংখ্যাটা আছে। দেঁতো হাসি
__________________
সৌমিত্র পালিত

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ভাষার মুসলমানি করার আইডিয়াটা দারুণ দেঁতো হাসি
এই আইডিয়া থেকে বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে একটা নতুন ধরণের প্রশ্ন যোগ করা যাবে। নীচের বাক্যগুলোকে মুসলমান বাক্যে রূপান্তরিত করো।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি নীচের বাক্যটিকে অধিকতর "মুসলমান বাক্যে" রূপান্তরিত করঃ
নতুন বছরকে এসতেকবাল করতে গিয়ে নতুন আবহাওয়ার কথা মনে পড়ছে। 'এসতেকবাল' কথাটার এসতেমালই নতুন আবহাওয়ার প্রমাণ। উর্দু জবানকে পাকিস্তানের হুকুমাতী জবান করা যেন নতুন তাহরিকের প্রতিই ইশারা।
__________________
সৌমিত্র পালিত

কৌস্তুভ এর ছবি

চমৎকার আইডিয়া। এই প্রশ্ন এখনই যোগ করা হোক।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঐ সময়ের খৎনাকৃত বাংলার কিছু উদাহরণ।

খৎনাপূর্ব ভার্সানঃ
চল রে নওজোয়ান
শোন রে পাতিয়া কান
মৃত্যু তোরণ দুয়ারে দুয়ারে
জীবনের আহ্বান

খৎনাকৃত ভার্সানঃ
চল রে নওজোয়ান
শোন রে পাতিয়া কান
নয়া জমানার মিনারে মিনারে
নব ঊষার আজান

খৎনাপূর্ব ভার্সানঃ
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে
আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে

খৎনাকৃত ভার্সানঃ
ফজরে উঠিয়া আমি দিলে দিলে বলি
হর রোজ আমি যেন নেক হয়ে চলি
হুকুম করেন যাহা মুরুব্বিয়ানে
তামিল করি যেন তাহা পাক মনে

অতিথি লেখক এর ছবি

আহা! কবিতাগুলো পরে মনে এক অন্যরকম ভাব জেগে উঠে।

রবীন্দ্রানুসারী রোমান্টিক কবি শাহাদাত হোসেনও লিখেছেন-

কুল- মুখলুকে জাগে রোমাঞ্চ-- জিন্দা পাকিস্তান
হুর পাঞ্জাবী জাগে মর্দ্দান
তুঙ্গ তুফানে আরবী দরিয়া নির্বোষে অবিরাম-- জিন্দা পাকিস্তান।
________________
সৌমিত্র পালিত

হাসিব এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। পরবর্তী পোস্টে পোস্টের ভেতরেই ক্রস রেফেরেন্সিংটা যোগ করে দিলে ভাল হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ। এখন দেখলাম একটা রেফারেন্স যোগ করতে ভুলে গেছি! পোস্টের ভেতরে ক্রস রেফারেন্সিং থাকলে এটা হত না।
Amita Malik, The Year of the Vulture, Orient Longman, 1972
__________________
সৌমিত্র পালিত

দেবদ্যুতি এর ছবি

খুবই অন্যরকম, খুবই আগ্রহ জাগানিয়া পোস্ট। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

অতিথি লেখক এর ছবি

ধইন্যাপাতার সবুজের জন্য ধন্যবাদ। হাসি
সৌমিত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার শুরুতে যে সাজ্জাদ হোসায়েনের কথা আছে সেই কি পরে ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছিল? লেখাটা খুব ভালো লাগলো চলুক

সোহেল ইমাম

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ। সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন স্বাধীনতার আগে প্রথমে রাজশাহী, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন।
_________________
সৌমিত্র পালিত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

[ খৎনা করা আরেকটা কোবতে মনে পড়ল, উসকানিমূলক কাজী নজরুল ইসলামের।
"সজীব করিব মহাশ্মশান" বদলে "সজীব করিব গোরস্থান" করা হয়েছিল এক সময়। ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা নিয়ে ব্যাখ্যাটা জানেন?

চল্‌ চল্‌ চল্‌। চল্‌ চল্‌ চল্‌।
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
...........................
নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশ্মশান
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
বাহুতে নবীন বল।

এই কবিতাটা তো খুব বিখ্যাত। কবির লেখা মুল কবিতায় নাকি ‘গোরস্থান’ শব্দটা ছিল। পরবর্তীতে তিনি নিজেই শব্দটাকে ‘মহাশ্মশান’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেন! হিন্দু ধর্মাবলম্বী স্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের কথা মাথায় রেখে নাকি তিনি এ কাজটা করেছেন।

এ ব্যাখ্যাটা কারা দেয় এটা বুঝার জন্য আইনস্টাইন হতে হয় না। গু এবং গোবর যে উৎকৃষ্ট সার এটা কিছু মানুষের উন্নত চিন্তাসম্পন্ন মগজের কাজকারবারে বুঝা যায়!
_________________
সৌমিত্র পালিত

রানা মেহের এর ছবি

প্রয়োজনীয় লেখা।
আপনিতো দারুন দারুন সব বিষয় নিয়ে লিখছেন ভাই।
কোনভাবেই থামবেন না।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

রানা মেহের আপা, সুন্দর কথাগুলোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
_________________
সৌমিত্র পালিত

হেমলক বিষ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।