শামসুজ্জামানের উস্কানির খোঁজে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২২/০২/২০১৬ - ৭:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক
গত ৩১শে জানুয়ারি খবরটা পড়বার পর থেকে মাথায় আগুন জ্বলছিলো। মানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ডঃ শামসুজ্জামান খানের উস্কানিমূলক বই প্রকাশে বিরত থাকার আহবানের খবরটা। এর মাঝেই হাতে পড়লো ওনার লেখা মনন প্রকাশ থেকে ২০১০-এ প্রকাশিত মুক্তবুদ্ধি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমকাল বইটি। বইটি দেখে যেটা হল আমার খুব হাসি পেল, একদম মাথানষ্ট হাসি। উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখা শুরু করলাম উস্কানির স্নিগ্ধ সুশীতল সুবাস পাওয়া যায় নাকি। কী পেলাম তা আপনাদের কাছে পাড়ছি। তার আগে যেটা বলে রাখতে চাই - এক, যদিও আমি আমার বাক্য যথাসম্ভব সংযত রাখতে চেষ্টা করবো, তবুও যারা মনে করবেন এই বিষয়ের লেখা তাদের লজ্জাস্থানে লজ্জানুভুতির সৃষ্টি করবে, তারা এখানেই থেমে যাবেন - এটাই কাম্য। আর দুই, যদি ডঃ শামসুজ্জামানে কোন রকম উস্কানির সুবাস পান তবে আমার সাথে বলে উঠবেন, অ্যাঁ ,ক্যায়া কারে ?

পনেরটি প্রবন্ধের সংকলন বইটি। নাম দিয়েছেন ‘মুক্তিবুদ্ধি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমকাল’, তবে বইয়ের মাথা থেকে পা অব্দি বর্ণনা করেছেন ‘বাঙালি মুসলমান’ সমাজে ঐ জিনিসগুলোর উপস্থিতির বিবর্তন। সে হিসেবে বরং নাম হওয়া উচিত ছিল বাঙালি মুসলমান সমাজে ডট ডট ডট। যাইহোক, প্রথম প্রবন্ধটা মীর মশাররফ হোসেনকে নিয়ে,তার আধুনিকতা ও চিরকালীনতা নিয়ে। তো লেখক মীরের চিন্তার আধুনিকতা তুলে ধরেন তাঁর গো-জীবন প্রবন্ধে গো- হত্যা নিষিদ্ধের প্রস্তাবের মাধ্যমে। বলে কি! তার মানে দাঁড়ায় লেখক মীরকে সমর্থন করেন এবং বইয়ে তা প্রচার করে চান আমরা আমাদের ধর্ম এভাবে পালন করি! এটা কি নগণ্য উস্কানি লাগে... অ্যাঁ ,ক্যায়া কারে ?

দ্বিতীয় প্রবন্ধ ‘বাঙালি- মুসলমান সমাজে উৎসব ও তার বিবর্তন’-এ তিনি বাঙালি মুসলিম সমাজকে ‘বদ্ধ সমাজ’এর অপবাদ দিয়েছেন। কেন? তথাকথিত নাচ-গান-ফূর্তি না থাকার দরুণ।তাঁকেই সরাসরি কোট করি-

আর যে- সমাজে গান নিষিদ্ধ, নাচ হারাম সে- সমাজে উৎসব অভাবনীয়। তাই বাঙালি- মুসলমান সমাজে উৎসব ছিল না। কিন্তু মানুষ মানুষের সাথে মিশতে চায়,অন্য মানুষের সংগে মিলে আনন্দের অংশভাগী হতে চায়। মানুষের এটা এক চিরন্তন প্রকৃতিগত স্বভাব। কোন বেড়াজালের আবদ্ধতায় মানুষ এতে অংশ নিতে না পারলে সমাজে স্থবিরতা ও অচলায়তনের সৃষ্টি হয়। সে- সমাজ আর এগোতে পারে না। বাঙালি- মুসলমান সমাজও দীর্ঘদিন ছিল তেমনি এক বদ্ধ- সমাজ

অ্যাঁ, ক্যায়া কারে?

তিনি নবাব মুর্শিদকুলি খান প্রবর্তিত জলদেবতা বা দরিয়াপীর খোয়াজ খিজিরের {উপরওয়ালা আমাদের আশ্রয় দিন (আরবি অনুবাদ প্রয়োজনে)} উদ্দেশ্যে ‘বেরাভাসান’ বর্ণনা এমন ভাবে দেন যেন মনে হয় এটা আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। তিনি কি চান আমরা এসব পালন করি? {উপরওয়ালা আমাদের আশ্রয় দিন (আরবি অনুবাদ প্রয়োজনে)} তিনি শেরে বাংলার উত্থানের প্রসংগে ‘মোল্লা- মৌলবি- কাঠমোল্লাদের মত ধর্মীয় অন্ধতায় আচ্ছন্নও ছিলেন না’ বলে কাদের অপমান করেন সেটা কি আমরা বুঝিনা। নজরুল, আব্বাসউদ্দিনের গান,বুলবুল চৌধুরীদের নাচের প্রশংসা করেন, বলেন এতে নাকি ‘বাঙালি- মুসলমান সমাজে উৎসব- আনন্দের পথের আর একটি বড়ো বাধা অপসারিত হয়'। বোঝাই যাচ্ছে তিনি কেমন সমাজ চান! প্রসংগত তিনি জানিয়ে দিতে ভোলেন না নববর্ষে চারুকলার মূর্তি শোভাযাত্রা, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া সমর্থনের কথা {উপরওয়ালা আমাদের আশ্রয় দিন (প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ)}। এগুলো কি কাউকে উস্কানির নমুনা নয়?... অ্যাঁ ক্যায়া কারে?

“বারানি আলাউদ্দিন খলজির মত উদ্ধৃত করে বলেন,তিনি বলেছিলেন, "শরিয়তে কি লেখা আছে, তার পরোয়া না করে রাষ্ট্রের স্বার্থে যা করা উচিত বলে মনে করবেন ,সুলতানের তাই করা উচিত। একেই বলা হয়েছে জাহানদারি বা ইহজাগতিকতা অর্থাৎ ধর্ম নিরপেক্ষতা’।''

এই কথাগুলোর উল্লেখ পাই লেখকের ‘মধ্যযুগের মুসলিম ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনীতি উদ্ভবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি’ প্রবন্ধে। {উপরওয়ালা আমাদের আশ্রয় দিন (প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ)} লেখক ধর্ম নিরপেক্ষতার সপক্ষে বলতে গিয়ে এগুলো বলে ফেলেছেন। তাঁর কি মনে হয় না এগুলো বলে তিনি কাউকে লজ্জা দিচ্ছেন বা উস্কানি দিচ্ছেন? কারণ জীবনের সব কিছু যা ধারণ করে তা যদি ধর্ম হয়, রাষ্ট্র যদি জীবনের অংশ হয়, তবে কিভাবে আপনি রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে উপেক্ষা করবেন? (তাতে কে উত্তীর্ণ, কে পুর্নাঙ্গ,কে মনোনীত ,কে বিশ্বজনীন?)। এইসব বিষয়ে বলে আপনি কি কিছুকে অবজ্ঞা বা অস্বীকার করছেন না (প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ), যাতে কেউ উস্কানি খুঁজে পেতে পারে?... অ্যাঁ, ক্যায়া কারে?

এছাড়া আপনি সেন রাজাদের ‘উগ্রহিন্দুবাদী’ আখ্যা দিয়ে ‘দুশ বছরের অন্ধকার যুগ’ সৃষ্টি করার জন্য দায়ী করেন। একজন ধর্মভীরু হিন্দু ব্যক্তি মাত্র এতে না লজ্জিত হয়ে পারেন না বা উস্কানি না পেয়ে থাকতে পারেন না। সাথে সাথে আপনি প্রথম দিকে ভারতবর্ষে আসা মুসলিমদেরকেও দায়ী করেন এজন্য। তাদেরকে ‘বহিরাগত মুসলিম দখলদার’ বলে আখ্যা দেন। এগুলো কি কোন উস্কানি হবে না নাকি আপনি বললে তা আর উস্কানি হয় না?... অ্যাঁ,ক্যায়া কারে?

ভাল কথা,তিনি লোকজ শিল্পকলাকে বাঙ্গালির ঐতিহ্য বলে মনে করেন। যেমন- নকশী কাঁথা,ব্রত, আলপনা। ব্রত এবং আলপনা-এর কথাই বলি। এগুলো যে ‘হিন্দু নারীর এক পবিত্র ও নান্দনিক গার্হস্থ্য শিল্প’ তা জেনেও তিনি বাঙ্গালির ঐতিহ্য বলেন। উপরন্তু আলপনা যে এইসব "হিন্দু নারীদের জাদু বিশ্বাসজাত' তা তিনি উল্লেখ করেন। তাহলে কিভাবে বাঙালি মুসলমান সমাজ এগুলোকে গ্রহণ করবে! যুগে যুগে আপনাদের অপপ্রচারের কারনেই হয়ত ‘বাংলাদেশের মুসলমান গৃহেও ঢুকে গেছে গৃহসজ্জা ও বিয়ের অনুষ্ঠানের সুবাদে’ এসব। ...আ,ক্যায়া কারে?

দুই

তবে ডঃ শামসুজ্জামান তাঁর আসল কারিশমা বা উস্কানি রেখে দিয়েছেন বইয়ের মাঝখানে ‘একুশ শতকে ধর্ম, মানবিক মূল্যবোধ ও গনতন্ত্র;ইসলাম,আধুনিকতা ও মুসলমানদের সাম্প্রতিক বিপর্যয়; মগজ শক্তির উদ্ধোধনের বিকল্প নেই’ প্রবন্ধগুলোতে। এগুলোতে তিনি বইয়ে দিয়েছেন জ্ঞানের ফল্গুধারা- আমাত্তে বেশি বুজেন। আসুন দেখি তবে কেমন জ্ঞান দিলেন তিনি। আপনারা যার যার উস্কানি শনাক্তকরণ মেশিন ‘খাড়া রাইখেন’

‘সম্প্রতি ধর্ম- বিষয়ক গ্রন্থ, ধর্ম- গুরুদের আলোকিত চিন্তা- চেতনার অন্তঃসার এবং মনীষী চিন্তকদের ধর্ম- সংক্রান্ত ভাবুকতা এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে উপকৃত হয়েছি।'

এ কথার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ধর্মীয় বিষয়ে লেখক রীতিমতো পড়াশোনা করে এসেছেন এবং ধর্মের মহৎ এসেন্স পেয়েছেন। বিশ্বাস করতে হবে না আগেই, যাচাই করুন, ‘প্রকৃত ধার্মিক কে’, তাঁর ‘সুচিন্তিত উত্তর হবেঃ ধর্ম ,বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানব সন্তানকে যিনি ভালবাসেন,তিনিই শ্রেষ্ঠ ধার্মিক।' সুতরাং আমরা ভরসা করতেই পারি। আমাদের ভরসা পেয়েই বলতে শুরু করে দিলেন-

‘ফলে সভা-সমিতি মজলিশ এমনকি ধর্মসভায় যেসব ব্যাখ্যা বয়ান করা হয়,তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্যের তেজ ও যুক্তি- বিচারের চিহ্ন মাত্র থাকে না;অলীক, উদ্ভট, গালগল্প ,অন্যের নিন্দা- কুৎসা এমনকি গিবত পর্যন্ত করা হয়।বিদ্বেষ- বিষে ভরা এসব জঞ্জাল হাটবাজারের ক্যানভাসারের ভাষায় বয়ান করে কেউ-বা ‘আল্লামা’ কেউ ‘শায়খুল হাদিস’, কেউ- বা ‘মুফতি’ বনে যান।'

‘কারণ, যাদের অন্তর ধর্মের জ্যোতিতে উজ্জ্বল নয় –অন্ধকার গুমরাহির,ফন্দি- ফিকির যাদের ধ্যান- জ্ঞান পেশা ও নেশা, দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা বিরোধিতায় যারা কলঙ্কিত তারা কেন স্বঘোষিত ‘আল্লামা’ হয়ে বসবে?’

‘এই বিবেচনাপ্রসূত চিন্তার অনুশীলন বাংলাদেশের নানা ভাগে বিভক্ত ওলেমাদের মধ্যে দেখা যায় না ।এদের কাউকেই ঠিক ইসলামি চিন্তাবিদ বলা যায় না।'

কি বললেন! বাংলাদেশের ওলামা মাশায়েখরা কেউ ইসলামি চিন্তাবিদ নয় – ঠিক সেই অর্থে। নবীন প্রবীন শ্রদ্ধেয় আল্লামা, মুফতি, শায়খুল হাদিসদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেললেন ,তাদের বয়ানকে ক্যানভাসারের কথার সাথে তুলনা করে ফেললেন, তাঁরা ফন্দি- ফিকিরে ব্যস্ত বলে অপবাদ দিয়ে দিলেন – এ সমস্ত কথাবার্তা লিখে ও বই আকারে প্রচার করে আপনি আমাদের মধ্যে লজ্জানুভুতি কাঁপিয়ে দিলেন।এখন ভাইয়েরা আমার, বলুন এগুলো কি আপনাদের উস্কানি শনাক্তকারী মেশিনে নাড়া দেয় না?... অ্যাঁ,ক্যায়া কারে?

‘কিন্তু পঞ্চদশ শতক থেকে বিংশ শতক পর্যন্ত বিগত পাঁচশ বছরে মুসলমানদের জ্ঞান- বিজ্ঞান,যুক্তি বিচার ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে কোন উন্নতি ঘটেনি – বরং নতুন শতক ও সহস্রাব্দের সূচনায় ইসলামি জঙ্গিদের মাধ্যমে অন্ধতা ও মান্ধাতাবাদী চিন্তা প্রবল হচ্ছে এবং ধর্মীয় শিক্ষার নামে অসংখ্য মাদ্রাসা ও মহিলা মাদ্রাসা খুলে একে শক্ত- পক্ত করা হচ্ছে,তার কারণ কি?’

মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধিতা করে কি আপনি কাউকে উস্কানি দেননি? আপনি একদিকে দেশের আলেম সমাজকে অপবাদ দিচ্ছেন (গড়ে সবাইকে), অন্যদিকে আপনার প্রসংশায় ভিজিয়ে দিচ্ছেন তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামাকে। সে আপনি যাকে তাকে মান্য করেন, তা আমাদের ধর্তব্য নয় , কিন্তু কেন আপনি এভাবে উস্কানি দিয়ে আমাদের লজ্জাস্থানে লজ্জানুভুতি দিলেন?... অ্যাঁ, ক্যায়া কারে?

লেখক খারেজী- মুতাযিলাদের সমর্থন করেন।তাঁর ভাষায়-

‘পরবর্তীকালে নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকের ইসলামি শাসক ও পণ্ডিতেরা সেই ধারার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। ওই সময় ছিল ইসলামি সভ্যতার স্বর্ণ যুগ। বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা শাস্ত্রে চরম উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছিলেন।নানাক্ষেত্রে তাদের উদ্ভাবনা ছিল ঈর্ষণীয়। এই অনন্য সাধারন সাফল্যের মূলে ছিল খলিফা আল মামুন এবং মুতাযিলা সম্প্রদায়ের অনুসৃত শক্তিশালী, যুক্তিবাদী, ও উদারনৈতিকবাদের ঐতিহ্য।'

তিনি কি জানেন না মুতাযিলাদের কিভাবে দেখা হয়, তিনি অনেক ধর্মগ্রন্থ পাঠ করেছেন বলছেন অথচ সমর্থন দেন এমন লোকদের যারা মনে করত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ মনুষ্য প্রণীত ও এর পরিবর্জন- পরিবর্ধন সম্ভব{উপরওয়ালা আমাদের আশ্রয় দিন (প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ)}। আপনি নিজে যা কিছু না হয় মানলেন, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না, কিন্তু বই বের করে, এগুলো প্রচার করে কেন আমাদের উস্কানি মেশিন উলম্বিত করলেন?… অ্যাঁ, ক্যায়া কারে?
বিশ্ব বরেণ্য মহামনীষী ইমাম গাজ্জালি(রঃ) কে তিনি আক্রমন করেন এভাবে-

‘ইসলামি উদারতা ও জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চার অবসান ঘটে চতুর্দশ শতকে,বিশেষ করে ইমাম গাজ্জালির কঠোর যুক্তিবাদ- বিরোধী অবস্থানের কারনে।তিনি এমনকি অংক শাস্ত্র চর্চার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।এতে নাকি মনে উন্মত্ততার সৃষ্টি হয় এবং বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ে।'

এখানে ইমাম গাজ্জালি(রঃ)-এর মত সর্বজন শ্রদ্ধেয় মনীষীর নামের শেষে তিনি (রঃ) লাগানোর প্রয়োজন অনুভব করেননি – এটা কি যথেষ্ট উস্কানি নয়? সর্বমান্য এই মনীষীকে অপবাদ দিয়ে উস্কানি কেন দিলেন ডঃ শামসুজ্জামান ... অ্যাঁ, ক্যায়া কারে? আপনার কাছে এদেশের কোন আল্লমা,শায়খুল হাদিস যখন পাত্তা পায় না তখন তাদের যা দায়িত্ব তা তো আপনাকেই নিতে হবে।তা আপনি সাদরে নিয়ে আমাদেরকে পবিত্র বাণী সমগ্র থেকে আমাদের গুরু গম্ভীর আওয়াজে শোনালেন-

‘জ্ঞান লাভের জন্য প্রয়োজন হইলে চীন দেশেও যাও।'

বুঝলাম আপনার জ্ঞানের বহর চীন দেশ থেকেই এসেছে কিন্তু সেটা জাল বা ভ্রান্ত! কারন আপনার উল্লিখিত বাণীটি পবিত্র বাণী সংকলনের(প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ) কোথাও নেই। আর এই ধর্মীয় মহাজ্ঞান, এসেন্স দিয়ে আপনি আমাদের ধর্মীয় স্যারদের বোল্ড আউট করে দিলেন, মনীষীদের অপবাদ দিলেন, বিবাদ(প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ) সৃষ্টিকারী মুতযিলাদের সমর্থন দিলেন,কিন্তু আপনি কি জানেন জাল বাণীটি (প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ) ব্যবহার করে এবং প্রচার করে আপনি গর্হিত পাপ (প্রয়োজনে আরবি অনুবাদ) করেছেন আর এর শাস্তি আপনি কি পাবেন? এটাও এক প্রকার উস্কানি... আ,ক্যায়া কারে?
আপনি এইভাবে একমুখে উস্কানি নিয়ে ছবক দেবেন আর অন্যমুখে উস্কানি দিয়ে যাবেন এটা ‘চইলত ন’। আপনার লেখা পড়ে তো মনে হল যারা ন্যাস্টিক বোলোগার, যারা বোলোগ দিয়া ইন্টারনেট চালায়,তাদের চেয়ে আপনার কাঠি কম সরস নয়। তাই উস্কানির ছবক শেখানোর আগে আপনি আচরি ধর্ম শেখাও পরেরে
এখন এইসব উস্কানিসমূহ লেখার জন্য আমরা কি আপনার হাতে হাতকড়া পড়াব,সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ধোয়া তুলে রিমান্ডে নিয়ে ডিম থেরাপি দেয়াকে সমর্থন দেব? না, কেন দেব না এটা একটু চিন্তা করে দেখবেন।

তিন

ডঃ শামসুজ্জামানের এই বইটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সামনে ফেলে দেয়। মুক্তবুদ্ধি- ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতি যার এত আস্থা তিনি কীভাবে বই লেখে নিজের মতামত প্রকাশকে উস্কানি বা আঘাত বলতে পারেন? যিনি চান সংস্কারের বেড়াজাল ভেংগে সমাজে সৃজনশীলতা আসুক,রবীন্দ্রনাথকে স্মরণে রাখেন ‘যে- জাতির উৎসব নেই, সে- জাতি নিষ্প্রাণ,বন্ধ্যা,নিরক্ত ও সম্ভাবনাহীন’, যিনি বাংলার লোকশিল্পে বিশ্বাসী, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে অবিশ্বাসী, সর্বোপরি মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী তিনি কীভাবে এমন কথা বলতে পারেন? পারেন। সরকারের একটা পলিসি বাস্তবায়ন তো আছেই, কিন্তু নিজস্ব বিশ্বাস বা চিন্তাধারা বা সংস্কারও এর পিছনে কাজ করে। তিনি নিজেকে "মুসলিম সাহিত্য সমাজের একজন সমর্থক' হিসেবে যখন বর্ণনা করেন বা পাতায় পাতায় যখন ফুটে ওঠে একজন মদগর্বিত বাঙালি মুসলমানের ছবি, তখন আমরা এমন সময়ে তাঁর কাছ থেকে বোধহয় এই পেতে পারি। ‘ধর্ম নিরপেক্ষ না হলে বাঙালি হওয়া সম্ভব নয়’ এসব বলে এঁরা আশার বেলুন ফুলিয়ে চুপসে দেন মাহথির মোহাম্মাদকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করে। একাত্তর ফিল্টারে এঁরা ধরা পড়েন না। এঁরা আকাশের ঘুড়ির মত, উড়ে উড়ে মানুষকে আনন্দ- আশা জাগান,আর ক্যাচালে পড়লেই এদের মনে পড়ে নিজের সুতার কথা। "মগজ শক্তির উদ্ধোধনের বিকল্প নেই' প্রবন্ধই বাঙালি মুসলমান ডঃ শামসুজ্জামান খানের সুতার গোমর ফাঁস করে।সেখানে তাঁর প্রিয় মাথিরের ওআইসি তে ‘সুচিন্তিত,সময়োচিত ও কৌশলময়’ ভাষণের একটা জায়গা শুনলেই ব্যাপারখানা জলবৎ তরলং হবে-

‘আমরা এমন এক জাতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি,যারা চিন্তা করে; ২০০০ হাজার বছর ধরে তাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ চলেছে। তারপরও তারা টিকে আছে পাল্টা আঘাত করে নয়, চিন্তার সাহায্যে।তারা সমাজতন্ত্র,সাম্যবাদ,মানবাধিকার ও গনতন্ত্র আবিষ্কার করেছে এবং সাফল্যের সংগে এগুলো প্রচার করেছে, যাতে করে তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনকে বিশ্ববাসীর কাছে অন্যায় বলে মনে হয়,যাতে করে তারা আমাদের সম- অধিকার ভোগ করতে পারে।এসব দিয়েই তারা আজ বিশ্বের ক্ষমতাধর শক্তি – বিশ্বশক্তি। আমরা বাহুবলে তাদের সংগে পারবো না,মগজ খাটাতে হবে।'

পরিশেষে বলতে চাই, ডঃশামসুজ্জামান খান আপনি আপনার যাত্রার এখানেই ইস্তফা দিন। আমরা বাংলা একাডেমির কর্ণাধার হিসেবে কোন বাঙালি মুসলমান বা বাঙালি হিন্দু মন- মানসিকতার নয়, শুধু বাঙালি মন- মানসিকতার একজনকেই চাই।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

নষ্টামিতেও ভেজাল দেখি, কি যুগে আসলামরে ভাই শামসু ভাইকে খাঁটি মুসলমান ভাবছিলাম। এখন দেখি ছুপা রুস্তম আগে বোলগ দিয়া নেট চালাইতো।

সোহেল ইমাম

হিমু এর ছবি

শিউরে উঠলুম।

রক এর ছবি

নিক ব্যবহার করতে ভুলে গেছি।আরো কয়েকটা ছোট খাটো ভুল হয়ে গেছে সতর্ক থাকার পরও, ক্যায়া কারে? আশা করছি কারো ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে না। মন খারাপ
- রক

রক এর ছবি

@সোহেল ইমাম
হাছা কতা কইছেন বাই, সবকিছুতেই বেজাল কোলাকুলি
-রক

রক এর ছবি

শুধু আপনিই নন, যে দোকান হতে খরিদ করিয়াছিলাম, সেই দোকানি কাগুও নাম দেখিয়া কেনু জানি শিউরে উঠিয়াছিলেন চিন্তিত
-রক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এগুলারে কয় মডারেট। উনি মদও চান মোহাম্মদও চান। দুনিয়ায় মাধুরীও চান আখিরাতে হুরীও চান। ধর্মনিরপেক্ষতা চান আবার বাঙালি মুসলমানও চান। এইরকম লোকই আমাদের চারপাশে বেশি। অনেক কিছু বুঝেও শেষ পর্যন্ত গোড়ায় গলদ।

আপনি কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্যের জবাবে মন্তব্য দিতে চাইলে মন্তব্যের নিচে 'জবাব' লেখাটায় ক্লিক করে লিখলে সেই মন্তব্যের নিচে আপনার নতুন মন্তব্য জমা হবে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

রক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম জাঝা!

- আতোকেন

রক এর ছবি

ঠিকাছে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রক এর ছবি

ঠিকাছে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রক এর ছবি

ঠিকাছে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রক এর ছবি

ঠিকাছে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সজীব ওসমান এর ছবি

ভেবেছিলাম এতোদিনে একজন সাচ্চা মুসলামান লেখক / পরিচালক পেলাম। কিন্তু, উনিও দেখি উচ্চবর্ণের হিঁদুবাদী উস্কানিদাতা লেখক।

রক এর ছবি

চিচিং ফাঁক দেঁতো হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

এইটা কী দেখালেন। এখন তো ওনারও পুসি চাইতে হবে।

রক এর ছবি

পুসি চাহিয়া লজ্জা দেবেন না হো হো হো

শেহাব এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

রক এর ছবি

দেঁতো হাসি

রক এর ছবি

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখাটি পড়ে জানা গেল,বইটিতে এক প্রবন্ধে লেখক যা লিখে গেছেন,অন্য প্রবন্ধে আবার তারই বিরোধিতা করেছেন। মগজে গিট্টু নিয়ে লিখে ছিলেন (বোধয়)।

রক এর ছবি

বেশির ভাগ গিট্টুই ছুইটা গেছে,রইয়া গেছে ধন্বন্তরি কিছু হো হো হো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শিউরে উঠলাম! ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রক এর ছবি

ভাই বাংলাদেশের মাক্সিমাম লোক এখন এই রোগে আক্রান্ত। এরে বোধহয় কয় জাম্পিং ফ্রেঞ্চমেন অফ ম্যাইন।এর কুন চিকিৎসা নাই। দেঁতো হাসি

অনুসন্ধিৎসু এর ছবি

এই ব্যাডায় তো পুরাই বর্ণচোরা!
"চোরেরে কয় চুরি কর,
গৃহস্থরে কয় পাহারা বসা|"

রক এর ছবি

হো হো হো

এক লহমা এর ছবি

কি ভয়ানক!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

রক এর ছবি

ভয়ানকই বটে দেঁতো হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সাংঘাতিক! এ তো পুরাই কোপা শামসু! মন খারাপ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রক এর ছবি

দেঁতো হাসি

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

অবাক হওয়ার কিছুই নাই! সবই হয় উপরের নির্দেশে। অতএব বুঝতে হবে উপরের উপর কে? পরিচালক বা মহাপরিচালক বিবেকবোধ চেয়ারের নিচে ফেবিকল দিয়ে বেঁধে তারপর চেয়ারে বসতে হয়। এত গেলো রাজকাহিনী। বেরাজ যারা তারাও ড্রইংরুমে বসে যা বলেন, ডায়াসে দাঁড়িয়ে তা বলতে পারেন না। বাংলাদেশের জন্য এই দৈন্যতাটা অনেক নষ্টের মূল কারণ।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।