সুন্দরতম,
চমৎকার রৌদ্রজ্জল মধ্যদুপুরে পরকিউপাইন ট্রির ল্যাজারাস শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে কম্বলের ভেতর মুখ লুকোবার পূর্বে রুপসী বাংলার দুই-এক পাতা উল্টিয়ে যাই। প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম ভাঙার পর কয়েকটা কম্বলে মোড়ানো নিজেকে আবিষ্কার করে, নিজের কাছেই নিজেকে ''ওমা কি কিউত'' বলে মনে হয়! ঢাকায় একগাদা বই ফেলে আসবার পরও আমার হাতের কাছে বার্ট্রান্ড রাসেলের অপেক্ষাবাদের অ আ ক খ। নাহ, সেমিস্টার ব্রেকটা খারাপ যায় না। ঠিক সূর্যাস্তের পরপর কর্ণফুলী ব্রীজের নিচে, ব্লকে বসে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দুঃখবিলাস গাইতে ভালোই লাগে। অনেক কিলো পাহাড়-ঝিরি-ঝর্ণা পেরিয়্ টুকটুকিতে দুলতে দুলতে আর ইচ্ছাকৃত ভাবে লোকাল বাসের পিছনের সিটে ঝাঁকুনি খেয়ে শহরে যখন ফিরি, ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখি, ২৫টা মিসকল। আমার মতন হতাচ্ছাড়া মেয়েছেলেকে নিয়ে চিন্তা করবার জন্যও মানুষ আছে- আমি বিরক্ত হই। বহুদিন শিল্পকলায় আড্ডা দেওয়া হয় না জানো? ঘন্টাখানেক আড্ডা দিয়ে তারপরই বাসায় ফিরি।
ফেরার পথে ক্ষণিক আগে সন্ধি করা কুকুরটাই বারবার পথ আটকিয়ে জড়িয়ে ধরে। এতরাতে খাওয়ানোর জন্য বন ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। কুকুর বন খায় না, কুকুরকে ভুখা রেখে মুখ ফুলিয়ে চলে আসি। আমার মায়া লাগে।
ঠিক ঠিক ১২টায় আমার অফিসে থাকবা- সাতসকালে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম আর পিছন থেকে আম্মু মন্ত্রমুগ্ধের মতন বলছিল।
দুপুর যখন ১২টা বাজছিল, আমি তখন মিরশ্বরাইয়ের অচেনা ট্রেইল ধরে ঝিরিপথ ধরে ঝর্ণা খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। রাতে যখন বাসায় ঢুকলাম। আম্মু ক্ষেপে বোম । মুখের সামনে ভাতের প্লেইট রেখে বলে, খাইতে হলে নিজের হাতে খাও। নইলে ফেলে দাও। আমি শুকনা মুখ করে আলু ফ্রাই গুলি কয়েক লোকমা ভাতের সাথে খেয়ে কম্বলের ভেতর হারিয়ে যাই। মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে টের পাই, আম্মু শীতের কাপড় পড়িয়ে দিচ্ছে।
কিছু মানুষের সাথে যত অন্যায় করি, পাশে পাই। কেন পাই? কেন? কেন?
ভালোবাসার সংজ্ঞা এখনো আমার কাছে পরিষ্কার না। তবে আমার মনে হয়, তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো, ইউ উইল নেভার গিভ আপ অন দেম। আই মিন নেভার। এই কেউটা হতে পারে বন্ধু, বাবা কিংবা প্রেমিক।
আমি ভুল না করেও তোমার কাছে বারবার মাফ চাইবো যাতে তুমি পাশে থাকো কিন্তু তুমি যদি মনস্থির করে ফেলো, আর পাশে থাকবে না, সে ক্ষেত্রে আমার আর কীবা করা আছে বলো তো?
সকল চেষ্টা তখন বিফলে যায়, ডেস্পারেশনে পরিণত হয়, আর আমরা সভ্য মানুষেরা ডেস্পারেশন একদম পছন্দ করি না। তা ভালোবাসার জন্য হলেও হোক।
সুন্দরতম, তুমি নিশ্চয় বিটলস এর Hey Jude শুনেছ। Remember to let her into your heart Then you can start to make it better। সুন্দরতম, আমার জীবনে তোমার মতন কেউ থাকলে ভালোই হতো হয়তো। ৫দিন পর পূর্ণিমা। ভরা পূর্ণিমায় টাঙ্গুয়ার হাঁওড়ে নৌকায় সারারাত ধরে হাই হোপস গাইতে বলতাম তোমাকে।
ইতি
তুমি জানো, ইকো।
[বি.দ্রঃ মিরশ্বরাই থেকে আসবার পর একজন বললো ট্রিপ নিয়ে ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতে। আর লিখতে বসে লেখা দেখে আমার মনে হল, কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখছি। আমি চিঠি লিখছি। এইভাবে আসলো 'সুন্দরতম' চরিত্র।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম সেমিস্টার ব্রেকে আসবার পথে ট্রেনের এক অপরিচিত ভদ্রছেলে বলেছিল, তোমার অনেক সাহস!
আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া।
বাস্তবজীবনে সুন্দরতমের অস্তিত্ব থাকলে আসলেই ভালো হতো, চিঠিটা তার হাতে হাতে দিয়ে আসতাম।]
-সোনামণি
ডিসেম্বর ২০,২০১৫
বিকাল চারটা বেজে এক মিনিট
মন্তব্য
লেখা ভালো, ছবিটা আপনার?
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
জী
-সোনামণি
জীবনে "সুন্দরতম" এর অস্তিত্ব আসুক আর আপনি অনুভব করুন সুন্দরতম করে।
এ্যানি মাসুদ
হয়তোবা, এখনি ভালো আছি। লেল।
-সোনামণি
- সোনামণি
ছবিটা কি হিসাবে দিলেন, 'লেখিকা' পরিচিতি? লোল।
এক তারা দিলাম।
এ অংশটাও ইন্টারেস্টিং। মজা পেয়েছি।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
প্রথমত, আমি কোন লেখিকা নই। তাই পরিচিতির প্রশ্নই ঊঠে না। ছবিটা মাথায় আসলো, আজাইরা দিয়ে দিলাম।
দ্বিতীয়ত, লিখেছিলাম ডিসেম্বর ২০ এ, আমার তারিখের সাথে সময়টাও লিখে রাখতে ভালো লাগে। এইটাও আজাইরা দিয়ে দিয়েছি।
লেখাটাও আজাইরা সচলে দিয়েছি। হো হো হো
''ওমা কি কিউত''
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
কিউত শব্দটি কিউট থেকে বেশি কিউত, তাই।
নতুন মন্তব্য করুন