এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৭/০৩/২০১৬ - ১২:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সূত্রমতে [১,২] একাত্তরের মার্চের শুরুতে বঙ্গবন্ধু বিদেশী সংবাদদাতাদের "অফ দ্যা রেকর্ড" বলেছিলেন রবিবারের মিটিংয়ে (৭ মার্চ) তাঁর বক্তব্যে যা থাকবে তা অনেকটাই স্বাধীনতার ঘোষণার মত। পাকিস্তান দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো বিভিন্ন রিপোর্টে আকাশপথে (সি-১৩০, পাকিস্তান এয়ারলাইনস) এবং জলপথে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্যদল আসার ভাসাভাসা খবর আসছিল। হোয়াইট হাউসের সিচ্যুয়েশন রুমে "দ্রুত অবনতিশীল" পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের মিটিং বসেছিল। ৬ মার্চের এই আলোচনায় ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইসর হেনরি কিসিঞ্জার, আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট এলেক্সিস জনসন, এসিট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ভ্যান হোলেন সহ ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনএসসি), সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন। পরের দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সমাবেশ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পরবর্তী পরিস্থিতি তাই আলোচনাতে ঘুরেফিরে আসছিল। মুজিব যদি একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় সেক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকা কি হতে পারে? বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্ব সম্পর্কে সন্দেহাতীত মার্কিন প্রশাসন এক্ষেত্রে তাঁর প্রতি কোন সহযোগিতার ভাব না দেখিয়ে বরং নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেদিনই ঢাকাস্থ আমেরিকান কনস্যুলেটকে (আর্চার কে ব্লাড) টেলিগ্রাম করে এ ব্যাপারে নিজেরা মুখ না খুলে ওয়াশিংটনের উপর তা ছেড়ে দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিসিঞ্জারের প্রশ্ন ছিল "যদি মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণার পর স্বীকৃতি চাইতে আসে, আমাদের করনীয় সেক্ষেত্রে কি হবে?" সকাল এগারটা চল্লিশে শুরু হওয়া মিটিংটার শেষে ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনার পরিকল্পনা ছিল। স্বীকৃতির প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসন আগ বাড়িয়ে কিছু না করে, ব্রিটিশদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে করণীয় ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ৭ই মার্চ ভোরে (আমেরিকা সময়) হোয়াইট হাউসের অপারেশনস সেন্টার বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের বিষয়ে অবহিত হবার পর তা সেদিনের মিটিংয়ে উপস্থিত সবাইকে জানানোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

৭ মার্চ ঢাকাস্থ আমেরিকান কনস্যুলেট থেকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে কি তথ্য পাঠানো হয়েছিল? এটা জানতে চেয়ে কয়েকমাস আগে ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটে ই-মেইল করেছিলাম। "প্লিজ ডু নট রিপ্লাই দিজ ই-মেইল এড্রেস" থেকে বেশ কিছু মেইল পাওয়ার পর মাত্র কিছুদিন আগে একটা ডকুমেন্ট পেলাম। আনুষ্ঠানিকতা হিসাবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ৭ মার্চের সমাবেশের শুরুতে অতি সংক্ষিপ্তভাবে বঙ্গবন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন--- টেলিগ্রামটা থেকে এই একটি অজানা তথ্য জেনেছি। ঢাকাস্থ আমেরিকান কনস্যুল জেনারেল আর্চার কে ব্লাড টেলিগ্রামটার কপি সেক্রেটারি অব স্টেট, ইসলামাবাদ, কলকাতা, লাহোর, করাচী, নিউ দিল্লী, লন্ডনের মার্কিন দূতাবাস/কনস্যুলেট ছাড়াও ব্যাংককে জোসেফ ফারল্যান্ডের কাছে পাঠান। পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড তখন চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে ছিলেন। হোয়াইট হাউজে ৬ মার্চের মিটিং থেকে তথ্যটা জেনেছি। এ সময়টাতে ডেপুটি চিফ অব মিশন সিডনি সোবার পাকিস্তানস্থ মার্কিন দূতাবাস প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান "বাংলাদেশের তারিখ" বইতে ৭ মার্চের ঘটনা নিয়ে লিখেছেন "পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড সকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে বত্রিশ নম্বর স্বল্পকালীন একান্ত বৈঠকে বলেন 'পূর্ব বাংলায় স্বঘোষিত স্বাধীনতা হলে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করবে না'।" কবি শামসুর রাহমান "কালের ধূলোয় লেখা" বইতে অভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬ এবং ৭ মার্চের ডকুমেন্ট পড়ে তথ্যটাকে বিশ্বাস করার জন্য শক্ত কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুর সাথে ফারল্যান্ডের দেখা করার ঘটনা কি তাহলে শুধুই গুজব? একটা গুজব ইতিহাসের পাতায় জায়গা পেয়ে গেল!!?

কে বলেছে মানুষ শুধু ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করতে পারে! আমাদের নিজেদের দিকেই দেখুন, আমরা কি দক্ষতার সাথে অতীতকে নুতন নুতন ভাবে সৃষ্টি করে যাচ্ছি। কেউ লন্ডনে, কেউ জনসভায়-সংসদে, প্রেস ক্লাবে অথবা কারওয়ান বাজারে বসে ইতিহাসের জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর কোন জাতি তাঁদের গৌরব এবং অহংকারের জায়গাটা আমাদের মত করে বিকৃত করে নাই। বিভিন্ন জনের মস্তিস্কগর্ভে জন্ম নেয়া অন্যতম বিকৃততম ইতিহাস হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের শেষে জয় বাংলা এবং জিয়ে পাকিস্তান বলেছেন। গত দুবছরে সচলায়তনে নজরুল ইসলাম এবং কৌস্তুভ অধিকারী এনিয়ে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ লিখেছেন। আমার এ লেখাটার পরবর্তী অংশটুকু ইতিহাসকে শুদ্ধ করার হস্তিস্নানতূল্য প্রয়াস মাত্র।

একাত্তরের প্রায় পুরোটা সময় মুক্তি নামের পত্রিকাটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক অনেক সংবাদ প্রকাশ করেছে। পত্রিকার পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে থাকত যুদ্ধের খবর। ১৯৭১ সালে ১৭ মে পত্রিকাটার প্রথম এবং দ্বিতীয় পাতায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণটা ছাপানো হয়েছিল। শুরুতে লেখা হয়েছে "গ্রামাফোন রেকর্ড থেকে লিপিবদ্ধ। এই ভাষণটি 'কম্পাস' পত্রিকায় ৮ই মে, ১৯৭১ তারিখের ১৪শ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেই পত্রিকা থেকে এটি নিয়ে দেওয়া হ'ল।" সে ভাষণের শেষ লাইনটা "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা"।

ইয়েতীন্দ্র ভাটনগর একাত্তরে লিখেছিলেন 'বাংলাদেশ- বার্থ অব আ নেশন' এবং 'মুজিব- দ্যা আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ'। 'মুজিব- দ্যা আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ' বইটার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বইটাতে ৭ মার্চের ভাষণের শেষটায় ইংরেজিতে যা লেখা আছে তার বাংলাটা হল "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা"।

১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ, মাই বাংলাদেশ' বইটা অক্টোবর ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ এর মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অনেকগুলো ভাষণ/বিবৃতির সংকলন। এই বইয়ের সম্পাদক রামেন্দু মজুমদার ইতিহাস নিয়ে লুকোচুরির আশ্রয় নেননি। দেখা যাচ্ছে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের আগে পাকিস্তান টেলিভিশন সার্ভিস এবং রেডিও পাকিস্তানে 'পলিটিক্যাল ব্রডকাস্ট' নামে একটা অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' বলে অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষ করেন। ১৯৭০ এর ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুরো পাকিস্তানে ২৯১ আসনে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এই বিজয়ে জনগনকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য ডিসেম্বরের ৯ তারিখ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু সেদিন লিখিত বিবৃতির শেষে বলেন 'জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান'। তবে...১৯৭১ সালের ৭ মার্চ আঠারো মিনিটের বক্তব্যের শেষে তিনি বলেছিলেন 'জয় বাংলা'। শুধুমাত্র 'জয় বাংলা'।

উর্দু ভাষার সাহিত্যিক রাজিয়া ফসিহ আহমেদের নিজ ভাষ্যমতে 'মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের নিঃসংশতার সত্য' কাহিনী নিয়ে 'ব্রেকিং লিংকস' বইটা লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর মনঃস্তত্ব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে 'মডারেট পাকিস্তানীদের' মত পাক সেনাসদস্যের স্ত্রী রাজিয়া ফসিহ আহমেদ বলেন, "শেখ মুজিব ওয়ান্টেড অটনমি এন্ড নট আ সেপারেট স্টেট"! আসলে জন্মসূত্রে পাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিটা তো বদলানো সহজ না! অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত বইটা থেকে ৭ মার্চের পৃষ্ঠাটা যোগ করা হল। সেদিন 'পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী' বঙ্গবন্ধু জিয়ে পাকিস্তান বলেননি।

১৯৭২ সালে ভারত সরকার প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস নামের দুখণ্ডের গ্রন্থটা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণাতে তথ্যসূত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম খণ্ডে পাকিস্তানের ডন পত্রিকাতে ৮ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো আছে। মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল এবং শেখ জামাল উপস্থিত ছিলেন। সেদিন মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ মোনাজাত পরিচালনা করেন-- এই সব খুঁটিনাটি বিষয় ডনে ছাপানো হয়েছিল। রিপোর্টের কোথাও তাঁরা লিখে নাই বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা, জিয়ে পাকিস্তান বলেছেন।

এখন আরও কিছু বইয়ের উদাহরণ দিচ্ছি। প্রথমটা বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত সপ্তবহ্নির লেখা বই "জয় বাংলা, জয় মুজিব" থেকে নেয়া।

এটা বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ডক্টর মযহারুল ইসলামের লেখা বই "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব" থেকে নেয়া। এখানে একাত্তরের ৮ মার্চ পূর্বদেশে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আছে।

এবং এটা বাণীপীঠ থেকে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত কৃত্তিবাস ওঝার লেখা " আমি মুজিব বলছি" থেকে নেয়া।

ম্যাসাকার নামক বিখ্যাত গ্রন্থের লেখক রবার্ট পেইনকে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি ভেবেছিলেন এটাই হয়ত তাঁর শেষ বক্তৃতা--হয়ত তাঁকে গ্রেফতার করা হবে, হয়ত মেরে ফেলা হবে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, কিন্তু যা বলেছেন তা স্বাধীনতার ঘোষণার কাছাকাছি।

যেসব লোক যুগের পর যুগ বঙ্গবন্ধুর নিন্দা প্রচারে নিয়োজিত আছেন তাদের একজন বদরুদ্দীন উমর। তিনি বিচিত্র এক বাম অসুখের কারণে বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ভালো কিছু খুঁজে পান না। নজরুল ইসলামের লেখা পড়ে জেনেছি বদরুদ্দীন উমর নিজের কানে বঙ্গবন্ধুকে 'জয় পাকিস্তান' বলতে শুনেছেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত দুই খণ্ডের ইতিহাস 'দ্যা ইমার্জেন্স অব বাংলাদেশ' বইতে তিনি বঙ্গবন্ধুর সমালোচনার ক্ষেত্রে বরাবরের মত কোন কমতি রাখেন নাই। ৭ মার্চের ভাষণটার অসারতা সম্পর্কেও বেশ কিছু লাইন খরচ করেছেন। এত না লিখে "শেখ মুজিব জয় পাকিস্তান বলেছে" লিখলেই কিন্তু ল্যাঠা চুকে যেত। এটা কিন্তু তিনি লিখলেন না, কারণ তিনি জানেন বঙ্গবন্ধু এই কথাটা বলেন নাই।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অনেকেই ইতিহাসের মোটা মোটা বই লিখেছেন। ১৯৯৮ সালে জেনারেল নিয়াজীর লেখা 'দ্যা বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান' বইয়ের উৎসর্গপত্রে তিনি রাজাকারদের রেখেছেন (খুব অপ্রাসঙ্গিক হলেও উৎসর্গপত্রের ছবিটা দিলাম)! হ্রিংস পশুর মধ্যেও কৃতজ্ঞতার মত মানবতাবোধ আছে! ২০০৪ সালে প্রকাশিত ব্রিগেডিয়ার আবদুল রহমান সিদ্দিকীর লেখা 'ইস্ট পাকিস্তানঃ দ্যা এন্ড গেম' বইটাতে ৭ মার্চের প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাষণে জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান শুনেছেন। ও আচ্ছা, এই বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে 'পূর্ব পাকিস্তানকে'। এই মারখোরেরা মনে হয় বাংলাদেশ উচ্চারণ করাটা হারাম মনে করে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ১৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট হাউজের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, "শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময় আমি কলেমাপাঠের সাথে জয় বাংলা উচ্চারণ করব।"

লেখাটা শেষ করার আগে একটা তথ্য দিচ্ছি। বিশ্বসঙ্গীতাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র পণ্ডিত রবিশংকর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, ওস্তাদ আল্লারাখা, এবং জর্জ হ্যারিসন মিলে একাত্তরে একটা এলবাম বের করেছিলেন। বিখ্যাত অ্যাপল রেকর্ডস থেকে বের হওয়া এলবামটার নাম ছিল "জয় বাংলা"। অনেকেই না শুনে থাকতে পারেন, তাই তিন মিনিটের কম্পোজিশনটা শেয়ার করলাম।

https://soundcloud.com/swomitra/joi-bangla

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিমুক্ত হোক। জয় বাংলা।

কৃতজ্ঞতাঃ
David A Langbart, The National Archives and Records Administration. USA


তথ্যসূত্রঃ

১। https://history.state.gov/historicaldocuments/frus1969-76v11/d6
২। http://2001-2009.state.gov/r/pa/ho/frus/nixon/xi/45604.htm
৩। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশের তারিখ, মওলা ব্রাদার্স, ২০০৮
৪। শামসুর রাহমান, কালের ধূলোয় লেখা, অন্যপ্রকাশ, ২০০৪
৫। Yatindra Bhatnagar, Mujib- The Architact of Bangladesh, Indian School Supply Depot, 1971
৬। Ramendu Majumdar, Bangladesh, My Bangladesh, Orient Longman, 1972
৭। Razia Fasih Ahmad, Breaking Links, Oxford University Press, 2006
৮। Bangladesh Documents, Govt of India, New Delhi, 1972
৯। সপ্তবহ্নি, জয় বাংলা, জয় মুজিব, বাংলা একাডেমী, ১৯৭২
১০। ডক্টর মযহারুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাংলা একাডেমী, ১৯৭২
১১। কৃত্তিবাস ওঝা, আমি মুজিব বলছি, বাণীপীঠ, ১৯৭১
১২। Robert Payne, Massacre, The Macmillan Company, 1973
১৩। Badruddin Umar, The Emergence of Bangladesh, Oxford University Press, 2006
১৪। Lieutenant-General (R) A A K Niazi, The Betrayal of East Pakistan, Oxford University Press, 1998
১৫। Brigadier Abdul Rahman Siddiqi, East Pakistan: The Endgame, Oxford University Press, 2004

সৌমিত্র পালিত


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পরিশ্রমী কাজ! চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সত্যানন্দ'দা। হাসি
___________
সৌমিত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই পরিশ্রমের কাজ। অসংখ্য ধন্যবাদ , লিখতে থাকুন। তথ্য ভিত্তিক আরো লিখার অপেক্ষায়------ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিমুক্ত হোক। জয় বাংলা।
এ্যানি মাসুদ

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
____________
সৌমিত্র

অতিথি লেখক এর ছবি

ব্যপাক খাটনির কাজ করেছেন। ইতিহাসের বিকৃতি রোধে যত বেশি লেখা আসে তত ভালো। দলিল হয়ে থাকবে।

মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ] 
============================= 
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছুটা পরিশ্রম হয়েছে, তবে সে অর্থে ব্যাপক না! পড়ে দেখেছেন তাই অনেক ধন্যবাদ।
____________
সৌমিত্র

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।