বৃদ্ধবয়স এবং বৃদ্ধাশ্রম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১১/০৩/২০১৬ - ১০:২৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে প্রায়ই হৃদয়-বিদারক প্রতিবেদন দেখা যায় আমাদের টিভি চ্যানেল গুলোতে। বছরের পর বছর ছেলেমেয়েদের দেখা পান না অনেকে - ব্যাপারটা দুঃখজনক। আমার নিজের দেখা মতে- এই ভিডিওগুলো মানুষ যখন দেখে তখন সব থেকে বড় ভিলেইন হিসেবে অটোমেটিকালি যাকে ধরে নেয়া হয় সে হোল ছেলের বউ ও ছেলে (ছেলেকেও মনে করা হয় ছেলের বউ এর কুচিন্তায় বশ হয়ে যাওয়ার ফল!)। এটা হয়তো অনেকাংশে ঠিক যে সেইভাবে বনিবনা না হওয়া বা সঙ্গের অভাব, এক্সপেক্টেশান আর বাস্তবতার সাথে মিল না থাকা ও যত্নের অভাব ইত্যাদির কারণে বৃদ্ধ বয়সটা খুব কঠিন সময় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমি মনে করি বৃদ্ধাশ্রম ধারণাটা এবং এই প্রতিষ্ঠানটা খুব খারাপ কিছু নয়। বৃদ্ধদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা বলছে কিছু দিক দিয়ে বৃদ্ধাশ্রম ছেলেমেয়ের বাসায় থাকার চেয়েও বেশ ভাল।

আমার কাজকর্ম ক্যারিয়ার পরিকল্পনা বৃদ্ধ বয়স সম্পর্কিত। বুড়ো মানুষদের সাথে সময় কাটাতে, গল্প করতে কোন কারণে আমি খুব ভালোবাসি। টরন্টোতে একটা বৃদ্ধদের হাসপাতালে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি ৫/৬ মাস যাবত। ওই হাসপাতালটা শুধুমাত্র বৃদ্ধদের- মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলকাস্ট সারভাইভর দের জন্য। কেননা সেটা জুইশ ফান্ডেড এবং হলকাস্ট যারা দেখেছে - এতোটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যেই মানুষগুলো গিয়েছে তাদের বৃদ্ধ বয়সটা যথা সম্ভব সুন্দর, স্ট্রেসলেস ও কম পেইনফুল শেষসময় নিশ্চিত করা এই হাসপাতালের মূল লক্ষ্যের মধ্যে একটা। জানিনা শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ সারভাইভর দের জন্য এমন কিছু আমাদের পক্ষে করা সম্ভব কি না! সে যাই হোক, হলকাস্ট সারভাইভররা মূল লক্ষ্য হলেও, এই হাসপাতালে কমবেশি সবরকম বৃদ্ধদের সেবা দেওয়া ও জেরিয়ার্ক্টিক রিসার্চ এর প্রাধান্য কোন অংশে কম না। হাসপাতালে যখন যাই মনে হয়, একসময় হয়তো আমার বাবা মায়েরা এমন অবস্থায় হয়তো যাবেন - যদি তাঁরা এমন সার্ভিস টা পেতেন কি ভালোই না হতো!

আমাদের দেশে অনেকেরই বৃদ্ধ বয়সটা ভয়ংকর রকমের নিঃসঙ্গ, পরনির্ভরশীল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অসুখী! - করবার কিছু নেই। তার ওপর অধিকাংশ বৃদ্ধ নিজের কাজ নিজে করাকে তার প্রতি 'অযত্ন' বা তাঁরা 'অবহেলিত' বলে মনে করেন। কিন্তু এখানে আমি দেখি, ৯০ বছর বয়স্ক মানুষেরাও নিজের কাজ যতটা নিজে করতে পারেন সেটা করার চেষ্টা করেন- উল্টা আগ বাড়িয়ে তাঁদের সাহায্য করতে গেলে তাঁরা বিরক্ত হন। নিজে নিজে কাজ করা ব্যাপারটা তাঁদের জন্য 'অযত্ন বা অবহেলা' তো না-ই বরং তাঁরা এটা করতে ভালোবাসেন। অনেককিছু আগের মতন সুন্দরভাবে হয়তো করতে পারেন না - কিন্তু ইচ্ছেটা আছে, শরীর বুড়িয়ে গেলেও মনের দিক থেকে তাঁদের উৎসাহের কমতি নেই ! কারণ এতে তাঁদের নিজের প্রতি একধরনের আত্নবিশ্বাস তৈরী হয় যে - এখনো আমি একাই ১০০! খুব ভালো লাগে যখন দেখি, ৮০ বছর বয়সী কুঁজো হয়ে যাওয়া বৃদ্ধাও নির্দিধায় লাল নেইল পলিশ, লিপস্টিক, কানে ছোটো দুল পরে লাঠি বা ওয়াকার নিয়ে টুকটুক করে হেঁটে বেড়ান ! এমনকি ওই হাসপাতালে শতাধিক ভলান্টিয়ার আছে ৭০ বছর বা তার উপরে! কিন্তু আমাদের কালচারে শরীর যত না বুড়ো তার অনেক আগে মন বুড়িয়ে যায় - যেটা পাল্টানো খুব দরকার। 'আমার বয়স হয়েছে বলে আমি কিছু করবো না- দেখি আমাকে ছেলেমেয়েরা কেমন যত্ন করে' এই চিন্তা করলে তাকে সন্তুষ্ট করা খুব কঠিন।

বৃদ্ধদের নিজেদের একটা গ্রুপ থাকলে সেটা যে কত প্রাঞ্জল হয় সেটার আমার ধারণা ছিলো না! হাসপাতালে নিটিং গ্রুপ, আর্ট গ্রুপ, মিউজিক গ্রুপ থেকে শুরু করে শুধুমাত্র কফি শপে বসে বৃদ্ধরা সে কি হাসি ঠাট্টা করেন - না দেখলে আমি বিষয়টার সৌন্দর্য বুঝতে পারতাম না। একটা লোকাল কফিশপে কিছুকাল বারিস্তা হিসেবে পার্ট টাইম করছি - যেখানে মেইনলি আসে বুড়া মানুষ। আমি স্টোর খুলি ভোর সাড়ে পাঁচটায়- কনকনে শীতে মাইনাস টেম্পারেচারেও দেখি উনারা দিব্বি এসে বসে আছে- আড্ডা দিবে বলে! একজন আসে অমনি অন্য সব বৃদ্ধরা মজা করে বলে 'হা হা ইউ ডিড নট ডাই ইয়েট! গুড ফর ইউ' আমার কাছে এই মানুষ গুলোকে দেখলে বৃদ্ধ বয়সকে ভয় লাগে না !তাদের অনেকের সাথে আমি কথা বলেছি - কে কোথায় আছে ছেলেমেয়েরা, কেমন আছেন অনেককিছু জিজ্ঞেস করি - অবাক হয়ে দেখি ওনাদের অভিযোগ অনেক কম উপমহাদেশীয় বৃদ্ধদের থেকে !

আমাদের দেশে ইউরোপ আম্রিকা নিয়ে সবার মধ্যে একটা ধারনা - এখানে বৃদ্ধরা খুব খারাপ থাকে। একা বাসায় মরে পড়ে থাকে, ছেলেমেয়েরা দেখে না ইত্যাদি ইত্যাদি - এটা আসলে পরের খারাপ বলে সুখ নেয়া টাইপ লেইমনেস ছাড়া কিছুই না। একটা সময় প্যালিয়াটিভ কেয়ারে ভলান্টিয়ার করেছি - টার্মিনাল ইলনেস আছে এমন মানুষদের জন্যে। আমার ক্লায়েন্টরা মূলত ছিলেন বৃদ্ধরা - ৩/৪ বার আমি ওল্ড হোমও গিয়েছি এই কাজে। অবাক হয়ে দেখেছি, ছেলেমেয়েদের সাথে না থাকলে নিয়মিত ছেলে মেয়েরা আসছে- বাবা মাকে যথেষ্ট সেবা করছেন, ভালবাসছেন! এখানে যে বৃদ্ধরা এবিউজড হননা সেটা না, তবে এখানে তাঁরা অনেক বেশি আত্ননির্ভরশীল, সয়ংসম্পূর্ণ ও অনেকাংশে সুখী! আর আত্ননির্ভরশীল আর সয়ংসম্পূর্ণ মানসিকতা থাকায় এবিউজড হবার সম্ভাবনাও কম।

দেশে বৃদ্ধদের বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে যত হা হুতাশ, তাঁদের সুন্দর আনন্দময় বৃদ্ধবয়স নিশ্চিত করতে ততটা উদ্যোগ নাই। বৃদ্ধদের জন্য কমিউনিটি লেভেলে এমন উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে- যেখানে প্রতিদিন বৃদ্ধ বাবামায়েরা এসে আড্ডা দেবেন, হাসিঠাট্টা গল্পগুজব করবেন- অনেকটা সময় এভাবে তাঁদের কেটে যেতে পারে! বিভিন্ন জায়গায় ভলান্টিয়ার করে সমাজে অবদান রাখতে পারেন, এভাবে তাঁদের আত্নবিশ্বাস বাড়ে নিজেকে নিয়ে। বুড়ো মানুষদের জন্য করা ব্যবস্থাগুলো সামাজিকভাবেই করা উচিত, যেখানে ধনী গরিব নির্বিশেষে সেবাগুলো তাঁরা পাবেন। এটা শরীর-মনের সুস্থতার জন্যো যেমন খুব দরকারী, পারিবারিক জীবনেও ভালো প্রভাব রাখে বলে মনে করি।

সাদিয়া


মন্তব্য

আরিফিনসন্ধি এর ছবি

বৃদ্ধাশ্রম খারাপ না, ভালো কনসেপ্ট। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে এই কনসেপ্ট মিলবে না। কেন মিলবে না, এর কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে ছেলে মেয়েদের যেরকম ভাবে বড় করা হয়, বিদেশে সেটা অকল্পনীয়। আমি জানি না, আপনি কত বছর পর্যন্ত বাবা মায়ের সাথে ছিলেন। আশা করি, ১৮ বছরের পর আপনাকে বাড়ী ছেড়ে দিতে হয়নি। আর সবচেয়ে বড় বিষয়টা হল, বিদেশে বাবা মা এর সাথে ছেলেমেয়ে দের বন্ডিংটা অনেক কম। কাজেই বাবামারা মনে করেন শেষ বয়সটা নিজেদের মত করে কাটিয়ে দেবেন। আমাদের দেশে কিন্তু এটা অনেক বেশি উল্টো।
একবার ভাবুন তো, আমাদের বাবা মায়েরা, নিজেদের সাধ্যের বাইরে যেয়ে হলেই ছেলে মেয়ের ভালোর জন্য করেন। কিন্তু বিদেশের বাবা মায়েদের ঠিক এতোটা করতে হয় না। এটা বলা যায়, একদিকে সমাজ আর অর্থনীতির উন্নয়নের কারণে সম্ভব হয়েছে। তবে হ্যাঁ ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। আমি অনেকেই দেখেছি ব্যাংক লোন নিয়ে ছেলে মেয়েদের আইভি লীগের ইউনিতে পাঠান।

একা বাসায় মরে পড়ে থাকে, ছেলেমেয়েরা দেখে না ইত্যাদি ইত্যাদি - এটা আসলে পরের খারাপ বলে সুখ নেয়া টাইপ লেইমনেস ছাড়া কিছুই না।

আপনি বৃদ্ধ বয়সে চিন্তা করে দেখুন তো, পরিবারের সঙ্গ ছাড়া নির্জন এক ফ্ল্যাটে থাকছেন। আপনাকে যতও কেয়ার গিভার এসে টেক কেয়ার করুক। সম্ভব হলে, হুমায়ূন আহমেদ এর হোটেল গ্লেভার ইন বইটার সেই বৃদ্ধা এর কথা পড়ুন। দেখুন একটু সঙ্গ পাওয়ার জন্য সে কি না করতো।

........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি

অতিথি লেখক এর ছবি

'১৮ বছরের পর আপনাকে বাড়ী ছেড়ে দিতে হয়নি।'

১৮ বছর বয়স হলেই উত্তর আমেরিকায় ছেলেমেয়েকে বাড়ী ছেড়ে দিতে হয় এই কনসেপ্টটা সম্পূর্ণ ভুল। এবং এই ভুল ধারণা থেকে আপনি পুরো কমেন্ট সাজিয়েছেন।

এটাই লেখক বলছিলেন যে যেসব ভুল ধারণা নেয়া হয় বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে আমাদের দেশে সেগুলা খুব বাস্তব নয়। 'বাইরের দেশে বাবা মা সাধ্যমত চেষ্টা করেন না' সেটাও ঠিক নয়, সম্পূর্ণ ভুল কথা। ছেলেমেয়ের ছোট বয়স থেকে তাদের ধ্যানজ্ঞান থাকে কিভাবে তাদের জন্য টাকা জমিয়ে ভাল স্কুলে পাঠাবেন।

পরিবারে সঙ্গ ছাড়া নির্জনে ফ্ল্যাটে কাটাচ্ছেন - এই ধারণাটাও কতটা সঠিক সেটা নিয়েও আমি সন্দিহান। বরং উত্তর আমেরিকার বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে অনেকের সঙ্গে মিলে কাটান। বাসায় সারাদিন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে কারো ভালো লাগবে এটাই কিভাবে জানেন আপনি। বুড়ো বয়সে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডাদেয়া সময় কাটানো এই ধারণাটাই আমরা মাথায় রাখতে পারিনা কেন?

- ফারজানা

আরিফিনসন্ধি এর ছবি

১৮ বছর বয়স হলেই উত্তর আমেরিকায় ছেলেমেয়েকে বাড়ী ছেড়ে দিতে হয় এই কনসেপ্টটা সম্পূর্ণ ভুল। এবং এই ভুল ধারণা থেকে আপনি পুরো কমেন্ট সাজিয়েছেন।

তাঁর মানে বলতে চাইছেন,আমেরিকাতে পারিবারিক বন্ধন খুবই ভালো, এবং তারপরে বৃদ্ধাশ্রমে মানুষ যেতে চাই কারণ সবাই যায় তাই? পুরো কমেন্ট কিন্তু এভাবে করা হয়নি, শুধু বলা হয়েছে, আমাদের দেশে পারিবারিক বন্ধনটা পাশ্চাত্যের মত না।

বাইরের দেশে বাবা মা সাধ্যমত চেষ্টা করেন না' সেটাও ঠিক নয়, সম্পূর্ণ ভুল কথা। ছেলেমেয়ের ছোট বয়স থেকে তাদের ধ্যানজ্ঞান থাকে কিভাবে তাদের জন্য টাকা জমিয়ে ভাল স্কুলে পাঠাবেন।

আপনি যেখান থেকে লাইনটা তুলেছেন, পরের লাইনটিতে কিন্তু আমি লিখে দিয়েছি, বাবামারা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে আইভি লিগের ইউনিতে পাঠান।

পরিবারে সঙ্গ ছাড়া নির্জনে ফ্ল্যাটে কাটাচ্ছেন - এই ধারণাটাও কতটা সঠিক সেটা নিয়েও আমি সন্দিহান।

আমি উত্তর ইউরোপের একটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল জীবন যাত্রার দেশে থাকি, যেখানে সামাজিক নিরাপত্তার মান, পৃথিবীর প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে পরে। এমনকি স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা যেটা আছে সেটা আমেরিকার সে শতগুণে ভালো। সেই দেশে আমার কাছে অন্তত এরকম এক ডজন দেখা মানুষ আছে যারা শেষ বয়েসে এরকম একাকী ফ্ল্যাটে জীবন কাটান। ছেলেমেয়েদের সাথে শুধু দেখা হয় বিভিন্ন ভ্যাকেশনে।

মাপ করবেন, আপনি আমার কমেন্ট বুঝতে পারেননি।

........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি

সাদিয়া  এর ছবি

বাবা মায়ের সাথে থাকতে পারলে অবশ্যই ভালো কিন্তু আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম= ছেলেমেয়ে দ্বারা বিতাড়িত- এই ধারনাটা পরিবর্তন করা উচিত। অনেকের ছেলেমেয়েরা হয়তো বাইরে আছে যেখানে তারা নিজেদেরই স্টেবিলিটি নাই। আবার অনেক বৃদ্ধ বাবা মা ছেলেমেয়েদের বাসায় থেকে এবিউজড হচ্ছে, মনকষাকষি, মানসিক দ্বন্দ্ব, নিজের স্বাধীনতার অভাব এগুলো খুব কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলেমেয়েদের ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে না দেখে, বুড়ো বয়সে নিজেদের ব্যাপারে ভাবাটা এখন খুব দরকারি- নিজেদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য। এই কারোণে, বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে যেই ভয়ানক একটা ধারনা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সেটাও বাদ দেয়া উচিত যাতে সামাজিক লজ্জার ভয়ে কেউ ছেলে মেয়ের বাসায় মানসিক ভাবে অশান্তিতে না থাকে। সেই সাথে, নিজের কাজ নিজে করা- ৫০ পেরুলেই আমার বয়স হয়েছে এখন আমাকে ছেলেমেয়েরা সেবা করবে - এরকম চিন্তা থেকেও বের হয়ে আসা উচিত। আত্ননির্ভরশীলতা ব্যাপারটা খুব জরুরী-এটা তাদের মানসিক ও শারিরীক উন্নতির জন্যই দরকার। বিশেষ করে মহিলারা, তাদের বৃদ্ধ বয়সটা অনেক সময়ই খুব একটা সুখকর হয়না আমাদের দেশে - এর মূল কারণ ওভার এক্সপেক্টেশান ও পরনির্ভরশীল মন- মানসিকতা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশে পারিবারিক বন্ধন অন্যরকম ছিল। একান্নবর্তী পরিবার প্রায় বিলীন হবার পথে। একটি কি দু’টি সন্তান নিয়ে পরিবার যখন এলো তখন পরিবারের কনসেপ্টটা অনেক খানিই পাল্টে গেল। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজ করার ব্যপারটাও দ্রুতই এসে পড়ছে। আমরা এক সময় ভাবতাম আমরা পাশ্চাত্যের মানুষদের চেয়ে আলাদা, কিন্তু দ্রুত যখন জীবন ধারায় পাশ্চাত্যের ব্যস্ততা, জটিলতা ঢুকে পড়ছে তখন আমরাও নিজের অজান্তেই পাল্টে যাচ্ছি। সাদিয়া আপার কথা গুলো ভালো লেগেছে, আমার মনে হয় আমরা সে দিকেই এগোচ্ছি। পুরনো ধারনায় বৃদ্ধাশ্রম বিষয়টা অনেকেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন কিন্তু পুরনো সময়টাতো আর থাকতে চাইছেনা। বৃদ্ধাশ্রম আমার মনে হয় অনিবার্য বাস্তবতা। খুবই সুন্দর একটা লেখা।

সোহেল ইমাম

সাদিয়া  এর ছবি

ধন্যবাদ:) পরিবর্তন আসা দরকার তবে সেটা হুবহু পশ্চাত্যের মতন হতে হবে এমন কথা নেই। সেই সাথে দেশ আগানোর সাথে সাথে সরকারের দায় দায়িত্ব নিতে হবে ৬৫ এর সিনিয়রদের জন্য। কিন্তু যেই মানসিকতা বাংলাদেশে তৈরী করে রাখা হয়েছে- তাতে সরকারী সুবিধা নিয়ে বা নিজের সামর্থে কোন বৃদ্ধ যদি নিজের মতন করে থাকতে চায়- সেটা একটা সামাজিক লজ্জার ভয়ে হয়তো করবেন না। সারাজীবন ায় রোজগার করে বৃদ্ধ বয়সে পরাধীন, মানসিক দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে থাকার থেকে কিভাবে আত্ননির্ভরশীলতা বাড়ানো যায় সেই চিন্তা করলে বোধহয় সবার জন্য মঙ্গল হয়!

আয়নামতি এর ছবি

পোস্টের টোনটা ভালো লাগলো। আরো লিখুন সাদিয়া।

সাদিয়া  এর ছবি

হাসি ধন্যবাদ!

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমাদের এখানে বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে যে নেতিবাচক মনোভাবটি রয়েছে, তার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘকালের সামাজিক/আর্থিক ব্যবস্থাবলী। সামন্ততান্ত্রিক পরিবেশে পিতার মৃত্যুর পর পুত্র তার সম্পত্তি লাভ করবে, সুতরাং পিতার মৃত্যু পর্যন্ত পুত্রের সুশীল হয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না। পিতাদের অবচেতন মনে(অনেক সময় সচেতন ভাবেও) সেটাই ছিল রক্ষাকবচ। সামাজিক সুনীতি, সুবচন, অপত্য স্নেহ, ভক্তি-শ্রদ্ধা, এসব যা ছিল, তার পিছনে কিন্তু সেই অর্থনীতিটাও ছিল। সারা জীবনে পিতামাতার যত কিছু অপছন্দনীয় আচরণ, বৃদ্ধকালে তাঁদের যত কিছু পীড়ন, সবকিছু তাই হাসিমুখেই সহ্য করা ছাড়া উপায় ছিল না। বিশেষত সেবা শুশ্রূষার ঝামেলাটা যেহেতু প্রধানত বউরাই পালন করে, সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর কিছু স্বার্থ ত্যাগ করাটাই ছিল রেওয়াজ।
এখন দিন বদলেছে, পুত্র যখন রোজগেরে, পিতার তখন হয়ত আর দেওয়ার আর কিছুই নাই। বাড়ী, গাড়ী, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের মালিক সচ্ছল পিতা হলে আলাদা ব্যাপার, কিন্তু তেমনটা না হলে পারিবারিক পরিবেশে সৌহার্দের ভাবটা আর বজায় থাকে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়ার ভাবনা ভবিষ্যতের বৃদ্ধদের সময় থাকতেই ভাবতে হবে। একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় বৃদ্ধ হওয়া উচিৎ হবে না, আর পুত্র কন্যাদের নিজস্ব জীবন বাধাগ্রস্থ হয়, মায়ার এমন বাঁধনে তাদের জড়ানোর উচ্চাভিলাষও ত্যাগ করতে হবে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোন একটা সিদ্ধান্তে আসা উচিত না। এখানে পারিবারিক এবং আর্থিক অবস্থানকে মাথায় রেখে কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ তা নির্ধারণ করা উচিত। উন্নত দেশে বৃদ্ধাশ্রমে যেরকম সেবাযত্ন দেয়া হয়, যেরকম সুযোগ সুবিধা থাকে, তা যদি এদেশে থাকতো, তাহলে অনেক বয়স্ক মানুষ সেখানে যাবার জন্য লাইন ধরতো। এবং তাদের অধিকাংশ অবশ্যই স্বচ্ছল মানুষ। কেননা পারিবারিক বন্ধন ব্যাপারটা স্বচ্ছল মানুষদের মধ্যে নানান কারণেই হালকা। শহরের অধিকাংশ অভিজাত বাড়িতে জনসংখ্যার অধিকাংশই কাজের লোক। সফল মানুষদের সন্তান ঘরে বসে থাকে না, দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকে। সেটা একদিকে সেই বাড়ির মালিকের আনন্দ এবং বেদনা। সেক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটি অবশ্যই বিবেচনা করার মতো। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম শব্দটিকে যেভাবে বেচারা শব্দ বানিয়ে পরিবেশন করা হয় সেটা মোটেও সম্মানজনক নয়। উন্নত দেশে যেমন সিনিয়র সিটিজেনদের আলাদা সম্মান দেয়া হয় আমাদের দেশে যদি সেটা দেয়া হতো, বৃদ্ধাশ্রমকে অন্য কোন শোভন সম্মানজনক নামে ডাকা হতো, সেখানে যথাযথ সুযোগ সুবিধা দেয়া যেতো, তাহলে সেটা নিয়ে কারো আপত্তি থাকতো না। কিন্তু এখন অনেক জায়গায় দেখা যায় বৃদ্ধাশ্রমকে বোঝা লাঘবের হাতিয়ার হিসেবে অমানবিক ব্যবহার করা হয়।

চট্টগ্রামে 'প্যারেন্টস লাউঞ্জ' নাম দিয়ে আমরা বৃদ্ধদের জন্য একটা কাজ করছি সীমিত আকারে। ওটা আশ্রম জাতীয় কিছু নয় থাকার ব্যবস্থা নেই। টাইম পাসের ভালো ব্যবস্থা আছে। বলা চলে বয়স্কদের একটা বিনোদন ক্লাব। আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের চাঁদায় একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে বয়স্কদের সময় কাটানোর কিছু ব্যবস্থা রেখেছি। কেউ চাইলে শুধুমাত্র ঘুমানোর সময় ছাড়া বাকী সময় কাটাতে পারে ওখানে। টিভি দেখা, গেম খেলা, পত্রিকা পড়া, বই পড়া, সিনেমা দেখা, গান শোনা, আড্ডাবাজি করার ব্যবস্থা আছে। মাসে একবার মেডিক্যাল চেকাপ। এর সবই বিনামূল্যে। ষাটোর্ধ যে কোন পুরুষ মহিলা ওখানে গিয়ে সময় কাটাতে পারে। এটা করা হয়েছে তাদের জন্য যারা অবসর নেবার পর বাড়িতে বসে থাকেন, সময় কাটে না, বন্ধুবান্ধব নেই। দিনের বেলাটা পুরোটাই একাকীত্বে সময় কাটে। তাদের একাকীত্ব দূর করার একটা চেষ্টা। সারা দেশে যদি এরকম আরো কিছু ক্লাব গড়ে উঠতো তাহলে অনেক মানুষ উপকৃত হতো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

পরিবেশবাদী ঈগল এর ছবি

লেখাটা ভাল, আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা নিয়ে এখনো আসলেই শক্ত কোন পক্ষ নেয়া সম্ভব না, অন্তত বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায়। প্যারেন্টস লাউঞ্জ এর কনসেপ্ট টা ভাল।
খোদ অ্যামেরিকানদের মধ্যেও সম্ভবত সিনিয়ার সিটিজেনদের হাউজিং নিয়ে মোটাদাগের একটা পার্থক্য আছে দৃষ্টিভঙ্গিতে, খেয়াল করলাম ।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বাংলাদেশে অবসরের পর সময় কাটানো একটা কঠিন ব্যাপার। আমাদের দেশে ধরে নেয়া হয় অবসরের পর থেকে উপাসনালয়েই সময় কাটাতে হবে, ঐখানেই আরও অবসর নেয়া লোকজনের সাথে কথা বার্তা বলে সময় পার করতে হবে। তাদের সময় কাটানোর ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। যারা নামী ক্লাবে চাঁদা দিয়ে সদস্য হন, গলফ খেলে সময় পার করেন -তাদের বিষ অবশ্য আলাদা।

আমার বাবা গতবছর অবসর নিয়েছেন। খন্ডকালীন চাকরির চেষ্টা করেছিলেন, তেমন কোন কাজ পাননি। এখন সকালে হাঁটেন, খবরের কাগজের এমাথা-ওমাথা পড়ে শেষ করেন, টিভি দেখেন, আত্মীয়দের কারও বাসার পানির কল নষ্ট হলে মিস্ত্রি খুঁজে দেন। এককথায় সময় কাটানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে আমি পড়তে এসেছি বিদেশে, পড়া আর ফুরোয় না। শক্ত ভিত হয়ে নিজেই দাঁড়াতে পারছি না, বাবা-মার কাছেও থাকতে পারছি না। তাদের অসুস্থতায় পাশে থাকতে না পারাটাও কষ্টের।

আমাদের মধ্যে যে "বৃদ্ধাশ্রমে থাকা" মানেই ছেলেমেয়েরা দেখছে না - এই ধারণার পরিবর্তন দরকার। আমি নিজে যদি বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বাঁচি, তাহলে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে আপত্তি নেই।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আরেকটি বিষয় হল, আমার দাদা-নানার আমলে যারা বুড়ো বয়সে খুব অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতেন, তাদের দেখাশোনা করাটা কঠিন ছিল না। তখন বেশিরভাগ বাসায়ই একজন বাইরে কাজ করতেন, গৃহকর্মীর সাহাযত পেতেন তারা। এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাইরে কাজ করেন, বাচ্চারা স্কুলের পর কোচিং থেকে স্যারের বসায় ছোটে। বাসার বয়স্ক লোকটির সঙ্গ দেবার মত খুব বেশি কেউ থাকে না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।