অণু-গল্প-১: মিনিভ্যান
২০১৪ এর কোন এক সকাল।
বেলা ১০টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল ফোনের কর্কশ শব্দে। রাতে কল করেছিলাম একটা গাড়ীর মালিককে, ক্রেইগ-লিস্টে পুরাতন গাড়ির বিজ্ঞাপন দেখে, তখন ফোনে পাইনি। এখন কলব্যাক করেছে।
ফোন ধরলাম,। গরীব গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট তখন আমি, গাড়ী একটা না হলে এই ডোবা নালার গ্রামে টিকে থাকা যাচ্ছে না, কেবল বাজার-সদাই নয়, আমার মাননীয় সুপারভাইজার অধ্যাপিকা মহোদয় ক্যাম্পাস ছেড়ে পাশের শহরে হিজরত করেছেন, কিন্তু গো+এষনা গোরুখোঁজার দায়িত্ব এখনো তার জিম্মায়, মাটির মানুষ কিন্তু ভুলো-মনা যাকে বলে , একাডেমিক কাজকারবারের ঝামেলা উনার মাথায় থাকেনা, থিসিস ডিফেন্স বিষয়ক প্যাঁচাল তো অনেক দূরে, জরুরী প্রয়োজনে তার সাথে দেখা করতে গেলেও চারটে চাকা চাই। কয়েকদিন তাই ভাড়া গাড়ি নিয়েও গিয়েছি, কিন্তু আর কত !!
এদিকে ক্রেইগ-লিস্টে গাড়ী দেখাও আরেক হাঙ্গামা, এই মেলে তো ঐটা মেলে না, সব মিললেও ফোন করে গাড়ী দেখতে যাবার জন্য আবার গাড়ী-ওয়ালা কাউকে খুঁজে অনুরোধ করা, অতঃপর সব মিললেও গিয়ে দেখা যাবে গাড়ী সেল হয়ে গেছে।
বেশি আশা ছিল না, কলব্যাক করেছে দেখে ভাবছিলাম স্ক্যাম কিনা, দেখ গেল না, একটা মেয়ে করেছে, আমারই বয়সী হবে, গাড়ী সেল করে দিচ্ছে একটা টয়োটা ক্যামরি।
আমার বাজেট অনেক কষ্টে দুই হাজার, ও অবশ্য তিন হাজার চাচ্ছে, কিন্তু ওর দরকার ক্যাশ, আজকেই।
বললাম আজকেই গাড়ী দেখতে চাই, কিন্তু আমি তো থাকি বাপু ক্যাম্পাসের আশেপাশে।
এক কথায় মেয়েটা রাজি হয়ে গেল, নিজেই ক্যাম্পাসে এসে গাড়ি দেখাবে । আমি একটু অবাক হলাম, সাধারণত ক্রেইগ্লিস্টের ফোন কল কেউ এত বিশ্বাস করে না।
২০ মিনিটের মধ্যে গাড়ী নিয়ে হাজির। গাড়ী থেকে নামতেই একটু ধাক্কা খেলাম। প্রেগন্যান্ট মেয়ে। মনে হচ্ছে এক্সপেক্টেড ডেট কাছাকাছিই। এই সময়ে গাড়ি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি ?
মনের কথা বুঝেই ফেলেছে কিনা কে জানে, নামধাম পর্ব শেষ করে প্রথমেই বলল গাড়ী বিক্রির হেতু। এক্সপেক্টেড দিন যেকোনো সময় এই সপ্তাহে। কিন্তু কিছু ক্যাশ টাকার টানাটানি চলছে, একটা বড় মিনিভ্যান নিতে চায় বেবির জন্য। ওর বয়-ফ্রেন্ড ও চেষ্টা করছে, একটা মিনিভ্যান দেখে রেখেছে কিন্তু ডাউন পেমেন্টের টাকা যোগাড় করতে পারছে না, বাধ্য হয়ে নিজের গাড়ী বিক্রির চিন্তা।
আমি শুনলাম বটে তবে খুব একটা দাগ কাটেনি কথাগুলো, তবে টেস্ট ড্রাইভিং এর জন্য দরজা খুলে বুঝলাম, গাড়ীর ব্যাকসিটে নতুন কেনা বেবি-সিট। নাহ, সত্যিই হয়ত।
আমাকে ক্যাম্পাস এ গাড়ী দেখাতে নিয়ে আসার কারণও বলল। “ তোমার উচ্চারণ শুনেই বুঝলাম ইন্ডিয়ান মনে হয়্ , ক্রেইগ-লিস্ট এর ঠগ বাটপার না, সিরিয়াস ভাবেই কিনতে চাও, আমারও টাকা লাগবে আজকেই তাই চলে এলাম। “
দাম নিয়ে একটু দামাদামি করার চেষ্টা করলাম, দাম একটু বেশিই চাচ্ছে। কিন্তু কি মনে করে রাজি হয়ে গেলাম ২৮০০ ডলারে । বিকালে নিজে আর বয়-ফ্রেন্ড সহ এসে নোটারি করে টাইটেল কাগজ পত্র সব বুঝিয়ে দেবে, আর আমিও নগদ টাকা রেডি রাখব ।
দুপুর গেল। বিকাল গেল।
মেয়েটা আর ফোন ধরে ন।।।
কি মুশকিল। ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছি, টেক্সট করে যাচ্ছি।
রাত ৯টার দিকে একটা টেক্সট পেলাম, “আমাকে হুট করে হাসপাতালে চলে আসতে হয়েছে একটু, কালকে সকালে ফিরে গাড়ীর লেনদেন হবে”
পরের দিন সকাল গেল,
বিকাল গেল,
নাম্বার বন্ধ।
একদিন যায়, ২ দিন যায়, ১ সপ্তাহ চলে গেল। নাম্বার বন্ধ ।
মেজাজটা পুরা খারাপ হয়ে গেল। ক্রেইগ-লিস্টেও অন্য ভাল কোন গাড়ী পাচ্ছি না।
টানা আট দিন পর, আবার ফোন করতে গিয়ে পেলাম নাম্বার চালু। ফোন বেজে চলে, অপর দিকে উত্তর নেই।
১০ দিন পর একটা টেক্সট পেলাম
“Sorry couldn’t reach out to you. Everything has been really crazy.
We don’t need the minivan anymore, I am keeping the car.”
অণু-গল্প ২: নেইবারহুড
ফোন বাজল।
“স্লামালেকুম ভাইয়া”
“এই, শুনো ভাই, একটা তো হেল্প করন লাগে ? বিজি নাকি“
“না ভাই বলেন বলেন কোন অসুবিধা নাই, রিপাবলিকান ডিবেট দেখি”
“ ওফ, ঐগুলা কি দেখ ? বদমাইশ হারামজাদা রেসিস্ট বাঞ্চোদ ট্রাম্প মনে হয় এইবার হইয়াই গেল প্রেসিডেন্ট…..কত্ত বড় বদমাইশ দেখসো ? কয় আমরা সবাই নাকি সন্ত্রাসী । আরে হারামী কোথাকার ২ একটা কি কি হয় এইটার জন্য সবাইরে সন্ত্রাসী কওয়া কি ঠিক ? দেখসো মেক্সিকান গুলারেও গালি দেয়, কয় নাকি ওয়াল বানাইব……”
“ আচ্ছা ভাইয়া ভাল কথা আপনাকে একটু জিজ্ঞেস করি, বাড়ি দেখে আসলেন যে ওপেন হাউজ ডেতে, ঐটার কি খবর ? মর্টগেজ প্রসেস করতেসেন ?”
“কি ?? মাথা খারাপ তোমার ? আরে আমি বুঝি নাইক্কা, ঐদিন বাড়ি দেখতে গিয়া দেখি পুরা কাল্লু আর আমিগো-পাড়া,”
“ কিন্তু…”
“ আবার কিন্তু ??? বুঝোনা কিছু ? মাথা খারাপ হইসে ঐ নেইবারহুডে বাড়ি কিনুম ?? কাল্লু আর মাকুগুলা সব করে তো খালি ড্রাগের ব্যবসা আর খুনাখুনি। এইগুলা সবডি হালার ইলিগাল !!! সবগুলা খারাপ !!”
অনুগল্প ৩:
“ঙ্কিরে, রেডি হস নাই কেন ?”
“ আরে কইস না, কালকে রাতে বাসায় ফিরসি দেরিতে, ঘুম দিসি ৩টার পরে। “
“জলিল কই?”
“ওরে ফোন দিস না, মেজাজ খারাপ ওর। রাতের বেলা বাসায় আসার সময় খিদা লাগসে, থামসিলাম ম্যাকডনাল্ডের ড্রাইভ থ্রুতে, লেট ওপেন থাকে যেইটা, কাউন্টারের বেকুবটা জলিলের বার্গারে পোর্ক দিয়া দিসে “
“এহ হে ! তারপর ? কেমনে ?“
“ তারপর আর কি, জলিলে তো গাড়ী ঘুরায়া আইসা চিল্লাচিল্লি। ও এত করে বইল্লা দিসে বার্গারে পোর্ক টা বাদ দিয়া যেন খালি চিকেন প্যাটিস টাই দেয় । পরে ম্যানেজার এসে মাফ চায়, আরেকটা বার্গার দেয়, টেকা রিফান্ড করতে চায়, ও কি আর থামে ? জীবনে কখনো পোর্ক খায় না, চিন্তা কর ওরে দিয়া দিসে পোর্ক, আর পার্টি কইরা আসছে তো, ভাল ড্রিঙ্ক করসে, তাই একটু বেশি ড্রাংক ছিল, তাই বেশি চিল্লাচিল্লি করসে পোর্ক নিয়ে, নাইলে এত চিল্লাইত না।“
[ চারপাশে যা হচ্ছে, এখান ওখান থেকে নেয়া, অধিকাংশই সত্যিকারের ঘটনা ]
লেখকঃ পরিবেশবাদী ঈগল
মন্তব্য
২ টা বেশ লাগল। চলুক।
------------------------
http://icchemotolikhi.blogspot.in/
চালানোর ইচ্ছা আছে, আসলে রোজকার কত কান্ড দেখি, ভাবছি সবই একটু ঝেড়ে কেশে অনুগল্প বানিয়ে ফেলাই যায় !! নতুন করে ব্লগিং এর পুরনো নেশা মাথায় উঠলে যা হয় আর কি !!
১ নম্বরটা ভাল লাগলো...
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ
চমৎকার! বিশেষত ১।
নিয়মিত লিখুন।
৩ গল্পের লোকজন নিজেও দেখেছি, ভাইয়েরা আমার থার্সডেতে তরল খেয়ে ফ্রাইডেতে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়তে যেতেন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ছ্যা ছ্যা এসব কথা বলতে হয়না
হুম, "মেঘলা মানুষ " নামখানা পরিচিত লাগে কেন ?
ফেসবুকের জামানায় আমার নিজের সত্যিকারের ব্লগিং মনে হয় বন্ধ হয়েছে আরো ৩-৪ বছর আগে, তাও নিজের এই ব্লগোস্ফিয়ারের নিক দিয়ে ব্লগে ব্লগে ঢু মারতাম লেখা পড়তেই, সচলের একাউন্টে লেখা পোস্ট করার মত ধৈর্য্য হয়নাই নীরব পাঠকই খালি।
আগের মত জমজমাট ব্লগ মিস করি
১ আর ৩ বেশি ভাল লাগল।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
লেখা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, আশা করছি পরের পর্বটা তাড়াতাড়িই দিব আলসেমি কাটিয়ে
৩ নাম্বার অনেক বেশি দেখেছি আমার দেখা সেরা হল, রেস্টুর্যান্ট এ হালাল মুরগী বা গরু না থাকার জন্য ভেজিটেবল খায়। কিন্তু রেস্টুর্যান্ট বাইরে যেয়ে হালাল বিড়ি ধরায়। বিড়ি কবে থেকে হালাল হইলো এইটা অবশ্য ভাবনার বিষয়।
হালাল বিড়ির কেচ্ছা এত্ত এত্ত বার দেখি যে এইটারে আর আলাদা করে গল্প বানাতে ইচ্ছা করে না
কতটা 'জট্টিল' হয়েছে বলে বোঝানো যাচ্ছে না। লেখালেখি কি অনেকদিন বন্ধ ছিল? (আমি নিজেই ঢু-মারায় অনিয়মিত হয়ে গিয়েছি)।
মিনিভ্যান গল্পটা আসলেই মন খারাপ করিয়ে দিয়েছে।
শুভেচ্ছা
হেহে হালাল চিকেন লেগ চাবাইতে চাবাইতে কেট্রিনার হারাম লেগ দেখে আমাদের মডারেট মুসলমান। লেখা চলুক।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কেবল কেট্রিনার হারাম লেগই নহে, কত্ত কত্ত ভাল কাজও তো হয় , নাসারা সিঙ্গেল মাদার দের ডলার বিল দিয়া সাহায্য করাও তো ভালু কাজ !!!
‘অণুগল্প ১, মিনিভ্যান’- বেশ বেশ ভাল লাগলো-
চমৎকার!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
মিনিভ্যান ভালো লাগলো।
হেমিঙওয়ের সেই বিখ্যাত এক লাইনের গল্পটা মনে করিয়ে দিলো,
" For sale: Baby shoes. Never worn."
লিখতে থাকুন।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন