• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

দ্বৈরথ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০৪/২০১৬ - ৮:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তীরটা ছুঁড়েই চন্দ্রনাথ বুঝলেন এটা একেবারে জায়গামত যাবে।হলও তাই, ত্রিশ গজ সামনে থাকা হরিণটার বুকে বিঁধে গেল,হরিণটাও ধপ করে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। জীবনে শিকার তো আর কম করেননি, কিন্তু এবারের মত তৃপ্তি চন্দ্রনাথ আগে পান নি। এরকম বাতাসের মাঝখানে এতদুর থেকে একটা ছুটন্ত হরিণ শিকার কেউ প্রতিদিন করেনা,তারিফের আশায় তিনি তার পারিষদদের দিকে চাইলেন।
-"অসাধারন মহারাজ,অসাধারন!"- মন্ত্রী নিত্যানন্দ উচ্ছসিত হয়ে বললেন।
-"স্বপ্ন দেখছি না তো?"-মিথ্যে বিস্ময়ের ভান করেন উজির রামচন্দ্র।
-"মহারাজ, সত্যি করে বলুন তো আপনি কি জাদু জানেন নাকি?"-সমান তালে তোষামোদে পাল্লা দিতে নেমে যান নাজির ফণীভূষণ।
তোষামোদ কার না পছন্দ?খুশিতে ভেতরে ভেতরে ফুলতে থাকেন মহারাজা চন্দ্রনাথ।কিন্তু মুখে কপট বিরক্তি ফুটিয়ে বললেনঃ
-"তোমাদের সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি,এমন শিকার যেকোন পাকা শিকারীই করতে পারবে"
এসব ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে রাজার বিনয়ের প্রতিবাদ করা, কেবল এই প্রতিবাদই রাজা গায়ে মাখেন না।মন্ত্রী,উজির আর নাজির সেটারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।হঠাত কোটাল রমাকান্ত বলে বসলেনঃ
-"তা ঠিক মহারাজ, গেল মাসে উদয়কুমার নাকি এর চেয়েও বেশি দূর থেকে একটা শুয়োর মেরেছিলেন বলে শুনেছি"।

চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল চন্দ্রনাথের,উদয়কুমারের নাম শুনলেই সেটা হয়। মনে মনে প্রমাদ গুনলেন মন্ত্রী,উজির আর নাজির, বেয়াক্কেল কোটালটা সব মাটি করে দিল মনে হয়!
-"ইয়ে মহারাজ, আজ দুপুরেই হরিণের মাংস রাঁধতে বলি, কি বলেন?"- প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য চেষ্টা করলেন নিত্যানন্দ।
-"তোমরা খাওগে, আমার খিদে নেই"।বরফ শীতল গলায় বললেন চন্দ্রনাথ,তীর-ধনুক একপাশে ছুঁড়ে ফেলে গটগট করে তাঁবুতে ঢুকে পড়লেন।
রাজা চলে যেতেই সবাই মিলে তেড়েফুঁড়ে কোটালকে গালমন্দ শুরু করল।দিব্যি সময় যাচ্ছিল, দিলো সব ভেস্তে।এখন সাধারন কথাতেও খেঁকিয়ে উঠবেন রাজা!সারাক্ষনই ভয়ে ভয়ে কথা বলতে হবে!

আমটা মুখে দিয়েই তৃপ্তিতে চোখ বুঁজে ফেললেন সুবর্ণগ্রামের রাজা উদয়কুমার।গত বছর বিস্তর ঘটা করে আমের বাগানে এই নতুন জাতের আম লাগিয়েছিলেন। উহ, কি মিষ্টি স্বাদ আর কি ঘ্রাণ, প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
- "কি হে কিছু বলছ না যে?"- মন্ত্রী সোমনাথকে জিজ্ঞেস করেন রাজা মশাই।
-"অমৃতমন্থন আর কথা বলা একসাথে যায় না মহারাজ, এ আম খাওয়ার সময় কথা বললে আমের যে অপমান হবে!"-গলায় এক গ্যালন তেল ঢেলে জবাব দিলেন মন্ত্রী।
-"অমৃত? এ আমের জন্য উপযুক্ত নাম এখনো দেয়া হয়নি, এক মহারাজ যদি দিতে পারেন"-আরেক কাঠি সরেস উজির রত্নাকর।
- "এ আম আর স্বর্গ, বেছে নিতে বললে আমি স্বর্গ ছেড়ে দিতে রাজি আছি"- নাজির বৈদ্যনাথই বা কম যাবেন কেন?
- "দেখ বাপু, নিজের বাগানের আম বলে বলছিনা;এরকম মিষ্টি ফল এ তল্লাটে আর কখনো হয়নি"- খুবই নিরপেক্ষ একটি মতামত দিলেন উদয়কুমার।
মন্ত্রী,উজির আর নাজির মিলে সমস্বরে সায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখন কোটাল মোহনলাল বাধ সাধলেন-
-"কিন্তু চন্দ্রনাথের বাগানের লিচু..."-কথাটা বলেই জিভ কেটে থেমে গেলেন।
ততক্ষণে সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে, উদয়কুমার বুঝে ফেলেছেন মোহনলাল কি বলতে চাইছিলেন।
-"বটে, চন্দ্রনাথের বাগানের লিচু এত ভাল?তো সেটাই খাওগে তোমরা, এখানে কি করছ?"- আমের আঁটিটা ছুঁড়ে মারলেন, সেটা মোহনলালের ঠিক পায়ের কাছে এসে পড়ল।
হনহন করে প্রাসাদের দিকে হেঁটে গেলেন রাজা,বেশ খানিকটা দূরে যাবার পর সবাই মুখ খোলার সাহস পেলেন।
-"মহারাজ একি করলেন?আরেকটু হলেই তো আমার জামাটায় রস লেগে যেত"-নির্বিকার কোটাল এমনভাবে বললেন যেন খানিক আগে কিছুই ঘটেনি।
-"বেশ হত, তোমার মত মূর্খের মাথায় মারা উচিত ছিল"-ঝাঁঝিয়ে উঠলেন মন্ত্রী সোমনাথ।
-"মর্কট কোথাকার, কোন আক্কেলে এ কথাটা বলতে গেলে তুমি?তোমায় এখন শুলে চড়ান উচিৎ"-বিরক্ত গলায় বললেন রত্নাকর।
শুলে না চড়তে হলেও সামনের কটা দিন যে কপালে দুর্ভোগ আছে সেটা বেশ বুঝতে পারলেন কোটাল। কি বিপদ! একটা কথা নাহয় বলেছেনই, তাতে এত চটার কি হল?

পাঠক,এমনিতে ব্যাপারগুলো বাড়াবাড়ি মনে হলেও এই দুই রাজার ক্ষেত্রে একেবারেই স্বাভাবিক।এ্ররা হচ্ছেন চন্দ্রনাথ আর উদয়কুমার,কৃষ্ণনগর আর সুবর্ণগ্রামের দুই রাজা।একে অপরের ছায়া মাড়ান না, এমনকি নামও শুনতে চান না।দুজনের বয়স কাছাকাছি,রাজ্যাভিষেকও কাছাকাছি সময়ে হয়েছিল।একেবারে শৈশব থেকে একে অপরের কথা শুনে আসছেন,মনে মনে রেষারেষিটা আসলে তখন থেকেই শুরু। দিনে দিনে সেটা বেড়েই চলেছে।প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক সময় ঘৃণায় নিল যখন দুই রাজা পাশের রাজ্য নবদ্বীপ দখল করার জন্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলেন। যুদ্ধটা প্রায় বেধেই যাচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত দুজনেরই সুমতি হওয়ায় ব্যাপারটা এড়ানো গিয়েছিল।তাঁরা বুঝেছিলেন প্রায় সম শক্তির দুই পক্ষের এই লড়াইয়ে যে শেষ পর্যন্ত জিতে যাবে তারও কোমর ভাঙ্গা অবস্থা হবে। দেখা যাবে তখন অন্য কেউ এসে সেই সুযোগে হানা দিয়ে বসবে, শেষে নিজের রাজ্যশুদ্ধ যাবে। দুজনেই জানতেন অন্যজন বেঁচে থাকলে যুদ্ধে জেতা যাবেনা।দুই জনই তাই অপর জনের মৃত্যুর অপেক্ষায় করে চলেছেন।আর যতদিন সেটা না হচ্ছে,ততদিন তারা প্রায় সব ব্যাপারে ছেলেমানুষী রকম পাল্লা দিয়ে যাচ্ছেন।এক জন এক হাজার সৈন্য বাড়ালে আরেকজন বাড়ান এগারশ। একজন ঘোড়াশালে পাঁচশ ঘোড়া ঢোকালে আরেকজন ঢোকান পাঁচশ বিশ। প্রয়োজন-অপ্রয়োজন এখানে গৌণ ব্যাপার, এক জন যেহেতু করেছে অন্যজনকে তার চেয়ে বাড়তি কিছু করতে হবে। লোকে রসিকতা
করে বলে যেহেতু একজনের কোটাল বোকা, আরেকজন তাই পাল্লা দিতে মহাবোকা আরেকজনকে ধরে এনেছেন!প্রায় সব কিছুতেই একজন আরেকজনকে অনুকরন করায় দুই রাজ্যের শক্তির পার্থক্য প্রায় নেই বললেই চলে,সে কারনে যুদ্ধও বাধেনা ,শত্রুতার শেষও হয় না।পুরো ব্যাপারটাই একটা দুষ্ট চক্রে পড়ে গেছে।

এ চক্র ভাঙ্গার জন্য দুই রাজ্যের শক্তির ভারসাম্যটাকে সরতে হবে।এমনিতে সেটা সরবেনা বলে দুজনেরই অপেক্ষা কখন আরেকজন পটল তুলবেন।উদয়কুমার প্রায়ই ভাবেন কোন একদিন শুনবেন চন্দ্রনাথ বজরায় করে নদীতে বেড়ানোর সময় ঝড় এসে বজরা ডুবিয়ে দিয়েছে।চন্দ্রনাথ তেমনি ভাবেন কোন একদিন প্রাসাদের ভেতর কেউ শত্রুতা করে উদয়কুমারকে বিষ খাইয়ে দেবে।ভয়াবহ কাকতালীয় কিছু না হলে যেকোন একজনকে আগে যেতে হবে, সেই একজনটা হবেন অন্যজন, সেই সুখস্বপ্নেই তাদের দিন কাটে।সেটা না হলে ব্যাপারটা ভারী দুঃখের হবে। নিজের মৃত্যুটা বড় নয়, কিন্তু সেই মৃত্যুসংবাদ আরেকজনকে যে আনন্দটা দেবে সেটা ভেবেই তারা ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যান।

ফাল্গুন মাসের এক সন্ধ্যা,উদয়কুমার বাগানে বসে হুঁকো টানছেন।হঠাত কোথা থেকে মন্ত্রী সোমনাথ আর কোটাল মোহনলাল হন্তদন্ত হয়ে হাজির হল।
-"মহারাজ, একটা সুখবর আ..."- সোমনাথ বলা শুরু করলেন।
-"চন্দ্রনাথের এখন তখন অবস্থা"- শেষ করলেন মোহনলাল।
-"মানে, কি হয়েছে তার?"- উদয়কুমার জিজ্ঞেস করলেন।
-"ইয়ে মানে পেট খারাপের মত, না মানে মাথায় একটু..."- আমতা আমতা করে মোহনলাল সোমনাথের দিকে তাকালেন, বোঝা গেল উনি ভালমত না জেনেই সুখবর দিতে চলে এসেছেন।
-"মহারাজ, দুদিন ধরে খুবই জ্বর, ছাড়ছেনা একদম...তাছাড়া মাঝে মাঝে জ্ঞান হারাচ্ছেন"- সোমনাথ জবাব দিলেন।
-"ব্যাস এই? এতেই ভাবছ চন্রনাথ পটল তুলবে? আরে ও ব্যাটা হচ্ছে যমের অরুচি, সহজে মরবেনা"-উদয়কুমার বললেন।
-"তবু মহারাজ, এবারের ব্যাপারটা অন্য রকম।কৃষ্ণনগরের রাজ-কবিরাজের কাছ থেকে গোপনে খবর নিয়েছি,অবস্থা আসলেই খারাপ"
-"আরে ধুর!শীত যেয়ে গরম পড়েছে, এ সময় একটা আধটু জ্বর হতেই পারে এ নতুন কিছু না"- বললেন বটে কিন্তু মনে মনে বেশ উত্তেজনা বোধ করলেন উদয়কুমার।
-"এবার দেখবেন ঠিক মরবে"-খুশি করার জন্য বললেন মোহনলাল, আম-ঘটিত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা যাকে বলে।
-"বটে?মুখে মুখে এর আগেও তো চার পাঁচবার মেরেছ, তুমি বাঁচবে বললে বরং মরলেও মরতে পারে। সোমনাথ, এই গর্দভটাকে নিয়ে আমার সামনে থেকে এক্ষনু বিদেয় হও"-খেঁকিয়ে ঊঠলেন উদয়কুমার।

ওরা চলে যাবার পরও বেশ খানিকক্ষন বাগানে একা একা পায়চারি করলেন উদয়কুমার।রাতে খাবার পরও ঘুম এলনা,আশা আর আর উত্তেজনায় বুক ঢিপঢিপ করছে।আগেও এমন অনেক হয়েছে,যখনি শুনেছেন চন্দ্রনাথের আসুখ আশায় বুক বেঁধেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার মুখে ছাই দিয়ে চন্দ্রনাথ ঠিকই সেরে উঠেছেন।এবারও কি তাহলে সেই একই জিনিস হবে?নাকি অনেক অপেক্ষার পর সেই সুদিন তবে সত্যি চলে এসেছে? কখন ঘুমিয়েছিলেন জানেন না, কিন্তু মাঝ রাতের দিকে রানী তার ঘুম ভাঙ্গালেন।মন্ত্রী নাকি কোন একটা জরুরী খবর নিয়ে এসেছেন।পড়িমড়ি করে বেরিয়ে এলেন রাজা, জীবনে এত তীব্র আশা আর কিছু নিয়ে করেননি তিনি।সোমনাথের হাসিমুখ দেখে আশার পারদ আরেকটু চড়ে গেল। যা ভেবেছিলেন তাই, মাঝ রাতে মারা গেছেন চন্দ্রনাথ,কৃষ্ণনগরের প্রাসাদে এখন শোকের মাতম।সেখানকার প্রজারা এখনও খবরটা পায়নি,সকালে পুরো কৃষ্ণনগরই বিষাদে ছেয়ে যাবে। খবরটা শুনে উদয়কুমারের মনে হল খুশিতে বুক ফেটে যাবে তার, অবশেষে এতদিনে এল সেই দিন!মন্ত্রীকে বললেন পুরো সুবর্নগ্রামে সুখবর পৌঁছে দিতে, পরদিন রাজপ্রাসাদে সবাইকে ভুরিভোজ করানো হবে,উদয়কুমার নিজে তদারকি করবেন সেখানে।ভোজে কি কি থাকবে সেটাও বলে দিলেন তিনি।অন্যসময় এরকম ক্ষেত্রে তাঁকে ভাবত হত ভোজ যেন চন্দ্রনাথের ভোজের চেয়ে ভাল হয়, এবার সে চিন্তাই নেই- আহ কি আনন্দ!আনন্দের পাশাপাশি কেমন যেন অদ্ভুত একটা দুঃখও লাগছিল।যদিও শত্রু, কিন্তু চিন্তা-ভাবনা কিংবা শক্তিমত্তায় এ তল্লাটে একমাত্র চন্দ্রনাথকেই নিজের সমকক্ষ মানতেন।সে হিসেবে চন্দ্রনাথকে কেমন যেন আত্নীয় মনে হত।তাঁর মৃত্যুতে ভোজ দিচ্ছেন ভেবে কেমন যেন একটা অনুশোচনাও হচ্ছিল,কিন্তু সেটাকে তেমন একটা পাত্তা দিলেন না।তিনি ভাল করেই জানেন যে উদয়কুমার মারা গেলে চন্দ্রনাথ ঠিক একই কাজ করতেন।এসব আজেবাজে অনুশোচনা মাথায় না রেখে তাঁর এখন উচিত এই চমৎকার মুহূর্ত উপভোগ করা।চন্দ্রুনাথের পরে এখন নিশ্চয়ই তাঁর ছেলে বীরেন্দ্র রাজা হবে।এই পুঁচকে ছেলেকে যুদ্ধে হারিয়ে কৃষ্ণনগর জয় করা এখন এক বছরের ব্যাপার মাত্র।ভাবা যায়, এই বিশাল রাজ্যের রাজা তখন তিনি একা হবেন!উত্তেজনায় হঠাত শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে, কেমন যেন দম আটকে আসছে।

সোমনাথকে তাড়াতাড়ি করে বিদেয় করে শোবার ঘরে ফিরে আসলেন,নিজেকে শান্ত করা দরকার।কুলকুল করে ঘামছেন, রানীকে বললেন পাখা দিয়ে বাতাস করতে কিন্তু তবু আরাম হচ্ছেনা।বুকে তীব্র ব্যথা হচ্ছে,এমন আগে কখনো হয়নি। একি বিপদে পড়া গেল?রাজবৈদ্যকে জলদি তলব করা হল,কিন্তু এই মাঝরাতে তাড়তাড়ি চাইলেই তো আর আসা যায়না।রাজা ক্রমেই অস্থির হয়ে চেঁচামেচি করতে লাগলেন,রাজার এই হাল দেখে রানী গলা ছেড়ে কাঁদতে বসলেন।হট্টগোল শুনে যুবরাজ নবীনও ছুটে এসে বাবার কাছে বসল,মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করল।কিন্তু উদয়কুমারের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে লাগল।তাঁর মনে হল নিজের সময়ও যেন ঘনিয়ে এসেছে, কি সর্বনাশ! সারা জীবন পাল্লা দিয়ে এসেছেন বলে কি মরার সময়ও পাল্লা দিতে হবে নাকি? এ হতে পারেনা,তাঁকে বাচতেই হবে!চন্দ্রনাথ বিহীন পৃথিবীর অপেক্ষার অবশেষে অবসান ঘটেছে আর সেই পৃথিবীতেই তিনি থাকবেন না,কোন মানে হয়?ঘোরের মধ্যেই তিনি দেখলেন রাজবৈদ্য চলে এসেছেন, যাক আর ভয় নেই।তিনি সেরে উঠবেন, তাঁকে সেরে উঠতেই হবে।

উদয়কুমার মারা গেলেন ভোরের ঠিক আগে আগে।সকাল হতে না হতেই দুই রাজ্যেই এ খবর দাবানলের মত ছড়িয়ে গেল। কেউ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না, একই রাতে দুই রাজাই চলে যাবেন এ কি করে সম্ভব?এমনটা গল্পে হয়,সত্যিকারের জীবনে এমন একটা ব্যাপার হতে পারে সেটা রীতিমত কল্পনাতীত ছিল।বেলা বাড়ার সাথে সাথে জানা গেল যে বীরেন্দ্র আর নবীন দুই রাজ্যের হাল ধরেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিক রাজ্যাভিষেক হবে এক মাস পরে।এই এক মাস শোক পালন করা হবে।বিকেল নাগাদ দুই রাজার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হয়ে গেল প্রায় একই সময়ে, অবশ্যই আলাদা ভাবে।পয়ঁত্রিশ বছরে এই প্রথম দুই রাজ্যের দুই অনুষ্ঠান নিয়ে কোন প্রতিযোগিতা হল না।প্রায় তিন যুগ ধরে চলা এক সুদীর্ঘ দ্বৈরথের অবশেষে সমাপ্তি হল।

এক মাস পর।কৃষ্ণনগরের নতুন রাজা বীরেন্দ্রের রাজ্যাভিষেক হল মহা ধুমধামের সাথে।ব্যাপারটাকে স্মরনীয় করে রাখতে এক হাজার পায়রা ওড়ান হল।তার পরের সপ্তাহেই অভিষেক হল সুবর্ণগ্রামের নতুন রাজা নবীনকুমারের, এক হাজার একটি পায়রা উড়িয়ে !

-গগন শিরীষ


মন্তব্য

দেবদ্যুতি এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন গগন শিরীষ? চমৎকার!

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

গগন শিরীষ এর ছবি

তা ঠিক দেবদ্যুতি,কাজের চাপে সচলেই ঢোকা হত না। পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর । (Y)

সোহেল ইমাম

গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ সোহেল ইমাম!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(জাঝা)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ সাক্ষী !

অতিথি লেখক এর ছবি

এক মাস পর।কৃষ্ণনগরের নতুন রাজা বীরেন্দ্রের রাজ্যাভিষেক হল মহা ধুমধামের সাথে।ব্যাপারটাকে স্মরনীয় করে রাখতে এক হাজার পায়রা ওড়ান হল।তার পরের সপ্তাহেই অভিষেক হল সুবর্ণগ্রামের নতুন রাজা নবীনকুমারের, এক হাজার একটি পায়রা উড়িয়ে !

এভাবেই আরো একটি গল্পের জন্ম হল। দ্বৈরথ-২ । শীঘ্রই আসছে আশা করছি।
এ্যানি মাসুদ

গগন শিরীষ এর ছবি

কিংবা আরেকটু নাটকীয়ভাবে-"দ্বৈরথ রিটাররনস :)"

গগন শিরীষ এর ছবি

ধন‌্যবাদ এক লহমা!

এক লহমা এর ছবি

হা-হা-হা! ভাল গল্প হয়েছে। =DX

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

জবরদস্ত লিখেছেন। =DX

এখন গুনে দেখি কত শব্দের গল্প এটা, আমি তারচয়ে ১টা বেশি শব্দওয়ালা গল্প লিখে ফেলব!
(হা হা, গল্প লিখতে পারি নি; খালি মন্তব্য লিখে বেড়াই :p )

শুভেচ্ছা :)

গগন শিরীষ এর ছবি

হা হা হা।ধন্যবাদ!

স্পর্শ এর ছবি

গল্প দারুণ হয়েছে।

শুধু ১ বছর আগে লাগানো আম গাছে সুমিষ্ট আম হবার কথা না।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

গগন শিরীষ এর ছবি

আরে তাই তো!ব্যাপারটা মাথাতেই আসেনি।অনেক ধন্যবাদ স্পর্শ!

ঈয়াসীন এর ছবি

(Y)

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ ঈয়াসীন ভাই!

অতিথি লেখক এর ছবি

একটি অপূর্ব সূচনার দুর্বল প্রসারণ। "পাঠক এমনিতে.........ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যান" অংশটুকু ভালো লাগেনি। অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। লেখকের সংলাপ রচনার দক্ষতা শ্রেষ্ঠদের সাথে তুলনীয়, কিন্তু বর্ণনা কেমন যেন যান্ত্রিক। "গলায় এক গ্যালন তেল...." এই গল্পের মেজাজের সাথে যায়নি। আমি আমার উপলব্ধির কথা বললাম। নানা পাঠকের নানা মত। তবে একটা জায়গায় বেশিরভাগ পাঠক সম্ভবত একমত হবেন - গগন শিরীষ চাইলে ফাটায়া দিতে পারবেন।

---মোখলেস হোসেন

গগন শিরীষ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ,মোখলেস ভাই।সত্যি বলতে কি,শেষ অংশটুকুর জন্যই গল্পটা লিখেছিলাম,প্রথম অংশটুকুই বরং পরে চিন্তা বের করতে হয়েছে।বর্ননা যান্ত্রিক হতে পারে,সেটা আমার সীমাবদ্ধতা। ওই সাবলীলতাই আসলে অন্যদের সাথে জাত লেখকের পার্থক্য গড়ে দেয়।আপনি যে এত সময় নিয়ে এত কিছু লিখলেন সেজন্য আবারো ধন্যবাদ।সত্যি যদি কোনদিন ফাটিয়ে দিতে পারি,আপনার কথাটা মনে পড়বে :)

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি পরিশ্রমকে গুরুত্ব দেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও কাটাকুটি করতেন। মাথায় যা এসেছিলো কিম্বা প্রথমেই যা লিখেছিলেন তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেননি সত্যজিৎ। একই গল্প নতুন করে লিখেছেন, বারেবার।

প্রথম অংশ যে চিন্তা করে লিখেছেন এটা বোঝা যায় গগণ শিরীষ, ওটাই নির্মাণ।
---মোখলেস হোসেন।

অর্ণব এর ছবি

ভালো লাগলো। =DX

গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ!

সুবোধ অবোধ এর ছবি
গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই!

মাসুদ সজীব এর ছবি

কিছুটা শিশুতোষ হলেও গল্প ভালো লেগেছে (Y) ।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

গগন শিরীষ এর ছবি

ধন্যবাদ মাসুদ ভাই।দেখি পরের বার বড়তোষ গল্প লিখতে পারি কিনা! :)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।