১৫ই বৈশাখ সন্ধ্যা। আগের বছরের মত এবারও বেশীরভাগ মেয়ে শাড়ি পরে এসেছে। সারাদিন কাজ করে সবাই অল্প স্বল্প ক্লান্ত। এসি রুমও টানা কাজ করার ক্লান্তি কমাতে পারে না। জানালা দিয়ে ঠিকই দেখা যায়, বাইরে ঢাকা শহর পুড়ছে।
মেয়েদের কমন রুমে সবার ভিড়। বাড়ি ফেরার আগে সবাই নিজেকে একটু মেরামত করে নিচ্ছে। আড় চোখে অন্যদেরকে একটু দেখেও নিচ্ছে। ওজন বেড়ে যায় নি তো, ফুলে উঠা পেট শাড়ির ভাঁজে লুকানো আছে কি, বাসায় গিয়ে রান্না চড়াতে হবে, শনি-রবিবার বাজার করতে হবে, আগামী সোমবার প্রোজেক্ট রিলিজ ডেইট, এবার স্যালারী রিভিউ কেমন হবে, পার্লারে গিয়ে একটু ভ্রূ প্লাক করারও সময় হচ্ছে না; এরকম ছেঁড়া ছেঁড়া চিন্তা একেক জনের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। চিন্তা গুলো মুখেও উঠে আসছে। “আপু এতো মাখন খেয়েও আমি কেন মোটা হই না”, “আলুর দমটা কীভাবে বানায়, তুমি জানো?”, “আজ বাসা গুছানোর শক্তি নেই”, “ক্লায়েন্ট খুব পেইন দেয়, তোর প্রজেক্টে আমাকে নে না প্লীজ”; কমন রুম জমজমাট।
বাম দিকের কোনা থেকে হঠাৎ একটা লাইন আমার কানে ধাক্কা দিলো। নতুন আসা নীপা বলছে, “আপুউউ, আমি না আজকে অর্ধেক পরোটার পুরোটা খেয়েছি”। “অর্ধেক পরোটার পুরোটা খেয়েছি আবার কেমন কথা রে?”, চারপাশে হাসির ফোয়ারা উঠলো। গাড়ি চলে এসেছিলো। “অর্ধেক পরোটার পুরোটা” – এটা নিয়ে হাসতে হাসতে সবাই বের হয়ে গেলো।
মাথার ভেতর চিনচিনে একটা ব্যথা পাক খেয়ে খেয়ে কেন জানি ঘাড়ে চলে গেলো। আজ রাতেও কি তীব্র ব্যথা হবে? মাত্র তো আমার ২৬ হলো, এখনি এমন! ওজনও তো আর আগের মত নেই। ৫২-৫৪ কেজিতেই ঘুরঘুর করে। আগে যখন ৬৩ কেজি ছিলাম, এরকম তো হতো না। তবে যে সবাই বলে, বাড়তি ওজনই সব অসুখের বাবা-মা। সেই যে কবে, ১৪২০ সালে সে বলেছিলো – “আয়নাতে তুমি কি দেখো নিজেকে? হাতিকে তো তোমার পাশে বাচ্চা মনে হবে। চারপাশে দেখেছো অন্যদের? সবাই কত ফিট আজকাল। ওজনই সব অসুখের বাবা-মা, জানো না?”।
চাকরি পাওয়ার পর প্রথম বৈশাখ ছিলো সেদিন। সেদিন আমাদের শেষ বৈশাখও ছিলো।
এরপর আর কখনো “অর্ধেক পরোটার পুরোটা” অথবা “অর্ধেক রুটির পুরোটা” – এর বেশী আমি খেতে পারি নি।
- বান্ধবী
মন্তব্য
আম্মু একটু আগে কলিগের মেয়ের গল্প করছিলেন। আমার-ই ব্যাচমেট, এমবিএ ক্লাসে পরিচয় সুত্রে পরিণয়, আর্থিক দেনা-পাওনা নিয়ে কলহে বছরখানেকের মাথায় ডির্ভোস। সম্পর্ক শব্দটায় এজন্য ডরাই।
পরোটা বা রুটির ততোটুকু খান, যতটুকু খেলে শারিরীকভাবে আপনি ফিট থাকবেন। অন্যের কটুক্তি শুনে ওজন ঝরানোর বা বাড়ানোর কোন মানে নেই, যদি না শীর্ণতা বা স্থুলতা স্বাস্থ্যবিধির দেয়াল না ছাড়ায়।
ভালো থাকুন।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আর্থিক দেনা-পাওনাটা কি যৌতুক না দেনমোহর?
মানবিক সম্পর্কে অর্থনীতি-সমাজনীতি মুখ্য হয়ে পড়লে ডরানোটাই স্বাভাবিক। যারা সমাজনীতির খেতা পুড়ে একান্ত ব্যক্তিগত মানবিক সম্পর্ককে মানবিক পর্যায়েই রাখতে পারেন, তাদের ক্ষেত্রে কিউউউট এবং সূদীর্ঘ 'সূখী জীবনযাপন' ও দেখেছি। এই বিরল উদাহরণগুলোকে সমাজ কেন যেন তীব্রভাবে চেপে যেতে চায়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পরের ধাপ, ঈদে-চাঁদে কলাটা-মূলাটা, কোরবানীতে গরু, নিদেনপক্ষে একটা ছাগল, বৈশাখে ফলের ঝুড়ি, শীতে পিঠাপুলি-- ইত্যাদি ইত্যাদি বাপের বাড়ি থেকে এলো না ক্যান, আসে না ক্যান.. এইসব।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এইগুলা এখনও হয়?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এইগুলো তো এখন আরো বেশী এবং সাজানো গোছানো ভাবে হয়।
আপনি বুঝি এসব আদিখ্যেতা, শো-অফ এর মেলা facebook.com এ দেখেন না?!!!
- বান্ধবী
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, ভালো থাকা - এই ব্যপারগুলো ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে আসছে। জানি না, এর মূল কারন কি। বহুদিন ধরে চলে আসা নিষ্ঠুর রীতিনীতি গুলো মেনে নিতে না পারলে, সমাজও নিষ্ঠুর হয়ে উঠে। সেটা আবার অনেকে মেনে নিতে পারে না [আমার মতে, মেনে নেওয়া উচিতও নয়।]
শর্করা বেশী খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর - এটুক এখন কম বেশী সবাই জানে। কিন্তু মেয়েরা "জিরো" ফিগারের সন্ধানে বের হয়ে সব খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে দেয়। সবজি, ফল, মাছ - কোন কিছু খেয়ে যে শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটানো জরুরী সেটা কম মানুষই মানতে চায়। চারপাশে শুকনা, ফ্যাকাশে (সমাজের চোখে ফর্শা) কিন্তু anaemic মেয়েদের যখন দেখি তখন খুব কষ্ট হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা থেকেই গল্পটা লিখেছি।
ধন্যবাদ।
- বান্ধবী
এই লেখাটি আমার ভালো লেগেছে খুব।
-মোখলেস হোসেন।
ধন্যবাদ।
- বান্ধবী
আপনার "অর্ধেক পরোটার পুরোটা" আমার হল জীবনের 'অর্ধেক ডিমের পুরোটা"র স্মৃতি মনে করিয়ে দিল। দুই বন্ধু ক্লাস শেষ করে যখন ভুঁড়ি ভোজন জন্য ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলাম ।ঘড়ির কাঁটা তখন দুইটা ছুঁই ছুঁই করছে। বুঝতে পারছিলাম খাবার পাতিলের তলায় ঠেকে গিয়েছে। গিয়ে পেলাম ডাল, অল্প সবজি আর একটা ডিম,সকালের দুইটা পিয়াজু,মুরগীহীন তার ঝোল-আলু। আহ ,কত লম্বা তালিকা আমাদের শেষ করতে হবে, খেতে খেতে একজন আরেক জনকে " দাদা পিয়াজু -ডালের যুগলবন্দী মানিয়েছে বেশ কি বলেন" "জি দাদা তা আর বলতে , অর্ধেক ডিমের পুরোটা তো শেষ হইয়া হইল না শেষ"।
এ্যানি মাসুদ
একটা কথা আশেপাশে আমি প্রায়ই শুনি। "অর্ধেকটা বিস্কুট দিয়েছি দাদা, পুরোটা কিন্তু খেতে হবে"
- বান্ধবী
বাহ্! তবে আমি কারও কথায় অর্ধেক পরোটার পুরোটা খেতে পারব না
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
অর্ধেক পরোটারও অর্ধেক খাবেন? কোয়ার্টার!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন