অনেক দিনই হলো রিকশার ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়েছেন রোবু। রোবু আর্টের রোবু যার পুরো নাম রবিউল ইসলাম। রোবু বানানটাও অবশ্য রোবু নিজে লিখতেন রবু, উচ্চারনের ধরন অনুসরন করেই রোবু লিখছি। রোবুর কথা প্রথম জেনেছিলাম জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিকের লেখা থেকেই। অথচ আমার শহরেই ছিল রোবুর ছবি আঁকার দোকান রোবু আর্ট। এক সময় নাকি লাইন দিয়ে রিকশায় ছবি আঁকাতে লোক দাঁড়িয়ে থাকতো। সে সময় রিকশার ছবি নিয়ে অনুসন্ধানে বিশেষ মন ছিলনা বলেই হয়তো এড়িয়ে গেছে নামটা আর সে কারনেই দোকানটা কখনও লক্ষ্যই করিনি। জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিকের লেখা থেকেই জানতে পারি রিকশার অলঙ্করনে সারা বাংলাদেশে ঢাকা যদি চ্যাম্পিয়ন হয় তবে রাজশাহীকে অবশ্যই রানার্সআপ এর সম্মান দিতেই হবে। আর ঠিক সেই সময়েই রাজশাহী শহরে রিকশার ছবি এঁকে চলেছিলেন শিল্পী রোবু। জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিক রোবুর সাথেও দেখা করেছিলেন এবং তাকে দিয়ে কিছু ছবিও আঁকিয়ে নিয়েছিলেন সে সময়। তার প্রবন্ধে এই রোবুর কথা এসেছে,
In Rajshahi, the "Nag-Nagini" movie theme-of a brother and sister who could transform themselves into cobras-- was also very popular. There artist Robu produced especially attractive pointillist paintings of Nag-Nagini.
যখন রিকশার ছবি নিয়ে উৎসাহী হয়ে উঠি তখন যারা রাজশাহীতে রিকশার ছবি আঁকছেন তাদের মধ্যে রোবুর নাম নেই। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেও ঠিক হদিস মেলেনা। পুরনো যারা আগে রিকশার অলঙ্করনের কাজ করতেন ২০১৩-১৪ নাগাদ তারাও আবার রিকশার ছবি পুরো দমে আঁকাতে শুরু করে দিয়েছিলেন কিন্তু সে সময়েও রোবুর ছবি আর রিকশায় দেখা যায়নি। কেউ কেউ এটুকু বলতে পারলেন যে খুব ভালো ছবি আঁকাতেন শিল্পী রোবু, কিন্তু তার এখনকার খবর প্রায় কেউই বিশেষ জানেননা। একটু হতাশই হয়ে পড়ি, হয়তো এই শিল্পীকে আর পাওয়া যাবেনা, হয়তো বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে এখনকার রিকশার ছবির পুনরুজ্জীবনের স্রোতে তার ছবিও চোখে পড়তো, তার নামও স্বাক্ষরিত দেখতাম রিকশার ছবির সাথেই। এই হতাশার মধ্যেই একদিন শিল্পী মুজাহিদ বললেন একটু খোঁজ করে দেখেন, যখন রোবু রিকশার ছবি আঁকতেন তখনই বয়সে ছিলেন তরুণ, খুবই সম্ভব এখনও বেঁচেই আছেন। টিকাপাড়া অথবা হাদিরমোড় এরকম জায়গায় খোঁজ করে দেখতে পারেন। মুজাহিদভাই নিজেও কথা দিলেন তিনিও খোঁজ করে দেখবেন। জোয়ানা কার্কপ্যাট্রিক রোবুর বয়সের ব্যাপারে কোন ইঙ্গিত দেননি, ফলে তার বয়সের ব্যাপারে কোন ধারনাই ছিলনা। মুজাহিদ ভাইয়ের কথায় যখন জানা গেল শিল্পী রোবুর বয়স তখনও কম ছিল সুতরাং এখন এমন কিছু বেশি হবেনা তখন নতুন উদ্যমে শুরু হলো অনুসন্ধান। রাজশাহী শহর হিসেবে এমন কিছু বড় নয়, প্রায় সবাইই সবাইকে চেনে। এভাবে খুঁজতে খুঁজতেই শেষটায় হদিস মিললো।
রবিউল ইসলাম রোবু ১৯৭৮ সালে
রাজশাহীর সাগরপাড়া বটতলার মোড় থেকে পূবে কিছুদূর হাঁটলেই রোবুর অটোর গ্যারেজ। রিচার্জেবল ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকের গ্যারেজ। এখানে ইজি বাইকের মালিকেরা তাদের অটো বা ইজিবাইক গুলো রাতের জন্য রেখে যান। সেই সাথে অটোর ব্যাটারীর চার্জও চলতে থাকে। রোবুর দেখা মিললো অবশেষে। প্রায় পঞ্চাশের কোঠা ছুই ছুই করলেও ঠিক বুড়িয়ে যাননি একেবারে। দাড়ী রেখেছেন অল্প ক’দিন হলো। রিকশার ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকদিন, এখন এই অটোর গ্যারেজের ব্যবসাতেই আছেন। আমুদে মিশুক স্বভাবের মানুষ কথা বার্তা চলতে লাগলো আড্ডার সাচ্ছন্দ্য নিয়েই। জানা গেল কাছেই টিকাপাড়ার মিরেরচক মসজিদের কাছেই তার বাড়ী। স্ত্রী আর দুই ছেলের সংসার। রোবুর জন্ম ১৯৬৬ সালে। বাবা মোঃ মনজুর আলী রিকশার কাঠামো নির্মাণ করতেন সেই সাথে রিকশার ছবিও আঁকতেন।মনজুর আলী রিকশার ছবি আঁকা শুরু করেন ১৯৬০ সালের দিকে। সে সময় রিকশার সিট আর পাদানীর মাঝের আয়তাকার জাযগাটিতেই মূলতঃ ছবি আঁকা হতো। পরে রিকশার পেছন দিকটা ফাঁকা ফাঁকা দেখানোয় সেখানেও টিনের আয়তাকার বোর্ড ঝুলিয়ে ছবি আঁকানো শুরু হয়। সে সময় অর্থাৎ পাকিস্তান আমলের দিকে রিকশার ছবি বলতে রাজশাহীতে ছিল করমর্দনরত দুটো হাতের ছবি, চুড়িপরা নারী হাত, রেলগাড়ির ছবি, প্লেন, হেলিকপ্টার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি ও ফুলের ছবি। শিল্পী রোবুর স্মৃতি অনুসারে এই ছিল স্বাধীনতা পূর্ব রাজশাহীতে রিকশার ছবির বিষয়। রোবুর মতে চিত্রতারকাদের প্রতিকৃতি রাজশাহীর রিকশায় আঁকা হতে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জনের এক-দুই বছর পর থেকেই।
শিল্পী রোবুর পিতা মোঃ মনজুর আলী : ২০০৮ সাল
শিল্পী রোবু রিকশার ছবি আঁকা শুরু করেন ১৯৭৮ সাল থেকে। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকানোর প্রতি উৎসাহের শুরু। আর এই শুরুটাও ছিল রিকশার ছবি দেখতে দেখতেই। শিল্পী রোবু কিন্তু কাগজ পেন্সিলের ধার ধারেননি সেই অল্প বয়সেই বাবার রিকশায় ছবি আঁকা দেখতে দেখতে নিজেও টিনের ওপর এনামেল পেইন্টে ছবি আঁকার কসরত শুরু করে দেন। পাকা আঁকিয়ের মত একবারে রং তুলি ধরে ফেলেছিলেন। পোস্টার থেকে আঁকা এক ক্রন্দনরত বালকের ছবি এখনও তার নিজের কাছেই আছে। ছবিটা হার্ডবোর্ডের ওপর এনামেল পেইন্টে আঁকা। উচ্চতায় ৩০ ইঞ্চি আর প্রস্থে ছবিটা আড়াই ফুট। আঁকা হয়েছিল আশির দশকের শুরুতেই কোন এক বছরে। এই পোস্টারটা বাজারের জনপ্রিয় পোস্টার গুলোর একটা ছিল এখনও যে কেউ দেখলেই সেই ক্রন্দনরত বালককে চিনতে পারবেন। ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে শহরেরই স্বনামধন্য একজন ব্যবসায়ীর প্রতিকৃতি এঁকে দেন শিল্পী রোবু। এটিও হার্ডবোর্ডের উপর এনামেল পেইন্ট দিয়ে আঁকা। ১৯৮৫ সালে এক বিচিত্র অনুরোধ আসে শিল্পী রোবুর কাছে। রাজশাহীর গম্ভীরা শিল্পী বকুলের স্ত্রী তখন রোগশয্যায়। সবাই মোটামুটি ধরেই নিয়েছিলেন তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠবেননা। এই বকুল রোবুকে অনুরোধ করেন তাঁর স্ত্রীর একটা বড় প্রতিকৃতি এঁকে দিতে যাতে তিনি তার স্ত্রীর স্মৃতি ছবিতে ধরে রাখতে পারেন। রোবুর হাতে তুলে দেওয়া হয় মহিলার একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সেই ছবি থেকেই শিল্পী রোবু একটা বড় প্রতিকৃতি এঁকে ফেলেন। বিস্ময়কর ভাবেই সবার আশঙ্কা মিথ্যা প্রমান করে মহিলা সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তিনি এখনও বেঁচে আছেন। ছবিটা এখনও তাদের বোয়ালিয়া থানার মোড়ের বাড়িতেই সংরক্ষিত আছে। খুব ছোট ছবি দেখে বড় আকারের ছবি যেমন শিল্পী রোবু আঁকতে পারতেন তেমনি একবার প্রায় বুড়ো আঙ্গুলের নখ পরিমান পরিসরের ভেতর ছবি আঁকিয়েও বন্ধু-বান্ধবদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ছবিটা ছিল কোন এক চিত্রতারকার । মাঝে চিত্র তারকা আর তার দুপাশে দুটো ঘোড়ার ছবি। ছবিটা আর তার সংগ্রহে নেই, হারিয়েই গেছে। এই ছবি দেখে রংধনু আর্টের শিল্পী আসাদও বিস্মিত হয়েছিলেন। শিল্পী আসাদ ছিলেন রোবুর চেয়ে বয়সে বড় এবং বানিজ্যিক শিল্পী হিসেবে তখন তিনি একজন প্রতিষ্ঠিতি শিল্পী। রংধনু আর্টের দোকানটি ছিল সদর হাসপাতালের মোড় থেকে যে রাস্তাটা দরগাপাড়ার দিকে গেছে সেই রাস্তার উপর, মোড়ের কাছেই। রোবুর সমসাময়িককালে রংধনু আর্ট এর আসাদও রিকশার ছবি আঁকাতেন বলে জানা যায়। ইনি ছিলেন রোবুর চেয়ে একটু বয়সে বড়, এবং ছবিও রোবুর আঁকানোর আগে থেকেই শুরু করে ছিলেন। উসমান, আকবর বা দাউদ উস্তাদদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে রোবু জানান এরা মূলতঃ ছিলেন সাইনবোর্ড পেইন্টার। সাইনবোর্ড লেখাতেই এদের দক্ষতা বেশি ছিল, তবে রিকশার ছবিও এরা আঁকিয়েছেন। বিহারী কলোনীর শিল্পী আমীরও রোবুর সমকালেই ছবি আঁকাতেন তার প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল আমীর আর্ট।
পোস্টার থেকে শিল্পী রোবুর আঁকা : ১৯৮১-৮২ সালের দিকে
বোয়ালিয়া থানার মোড়েই ছিল শিল্পী রোবুর ছবি আঁকার দোকানটি। পুরনো দিনের স্মৃতি আস্বাদন করতে করতে এক রিকশাওয়ালার কাছে শুনি সেই দোকানের সামনে রিকশার ছবি আঁকানোর জন্য অনেক মানুষ ভিড় করে থাকতো প্রায় সময়। চাঁপাই নবাবগঞ্জ আর নাটোর থেকেও রিকশার মহাজনরা রোবুর কাছে ভিড় করতেন তাদের রিকশায় ছবি আঁকিয়ে নিতে। বিশেষ করে নাটোরে প্রচুর রিকশায় রোবু ছবি আঁকিয়েছিলেন। কয়েকবার তাকে নাটোরে ডেকে নিয়ে গিয়েও রিকশার ছবি আঁকিয়ে নিয়েছেন নাটোরের রিকশার মালিকরা। একটা রিকশায় ছবি আঁকাতে সে সময় রোবুর মজুরী ছিল সাড়ে তিনশো টাকা অন্যরা এই কাজে মজুরী হিসেবে পেতেন মোটে ষাট টাকা। রিকশার পেছনে নিচের আয়তকার টিনের প্যানেল বোর্ড যেখানে ছবি আঁকানো থাকতো। রোবুর এই প্যানেল গুলো বিক্রি হতো দেড়শো টাকায় অন্যদের আঁকা প্যানেল বোর্ডের দাম ছিল পঁচিশ টাকা।
১৯৮৭ সালে আঁকা শিল্পী রোবুর রিকশার ছবি
২০১০-১১ সালের দিকে রিচার্জেবল ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক এসে পড়ায় রিকশার ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। রিকশা থেকে উপার্জন কমে যাওয়ায় রিকশার ছবি আঁকানোও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ই শিল্পী রোবুও রিকশার ছবি আঁকা ছেড়ে দেন। শেষের দিকে ছবিও খুব বেশি আঁকাননি। হয়তো কোন কারনে ছবি আঁকানোর উৎসাহে ভাটার টান এসে পড়েছিল। এ কারনেই তার রিকশার ছবির নমুনা সংগ্রহ করা কঠিন। রিকশায় মোটর সংযোজনের পরে আর আঁকেননি। তার যা কিছু ছবি সেই প্যাডেল মারা পুরনো রিকশার কাঠামোতেই আঁকা। সেসব ছবি কালের ছোবলেই মিলিয়ে গেছে। তাছাড়া এখন পুরনো কাঠামোর প্যাডেল মারা রিকশা গুলোর সংখ্যাও অনেক অনেক কমে এসেছে। পুরনো দিনের ছবির ফটোগ্রাফ ছাড়া তার আঁকা রিকশার ছবি দেখতে পাওয়া একরকম অসম্ভবই। অবশ্য রিকশার ছবি আঁকার সাথে জড়িত সবার কাছ থেকেই জানা যায় অদ্ভুত দক্ষতায় ছবি আঁকতেন শিল্পী রোবু। একটা রিকশার গ্যারেজে তার আঁকা ছবি সম্বলিত কিছু রিকশা এখনও থাকতে পারে এ আশায় তার সাথে উঠে পড়লাম রিকশায়। দেখলাম পুরনো প্যাডেল মারা একটা রিকশাই ডাকলেন শিল্পী রোবু। এই রিকশায় মোটর লাগানো নেই, রিকশার কাঠামোও বাঁশ কাঠের, এখনকার হাল ফ্যাশনের ধাতব কাঠামো নয়। রিকশায় যেতে যেতেই বললেন নতুন রিকশা গুলো তার পছন্দ নয়। তার মতে পুরনো কাঠামোর রিকশা গুলো যেমন সুন্দর নতুন ধরনের গুলো তেমন নয়। রিকশার গ্যারেজে পৌঁছে জানা গেল যার খোঁজে আমরা এসেছি তিনি আর এই রিকশার গ্যারেজে আসেননা। তবে রিকশা গ্যারেজের পেছন দিকে কিছু ভাঙ্গাচোরা রিকশা এখনও আছে আমরা ইচ্ছে করলে দেখতে পারি। এলোমেলো ভাবে বাতিল হয়ে যাওয়া পুরনো কাঠামোর কিছু রিকশা পাওয়া গেল গ্যারেজের একেবারে পেছন দিকটায়। হাত তুলে সেদিকটা নির্দেশ করে দেখালেন রোবু। কয়েকটা রিকশায় তার আঁকা ছবি। রিকশা গুলো দেখিয়েই সেখান থেকে সরে এলন দ্রুত। কেন জানি এই ভাঙ্গাচোরা রিকশার অবশেষ গুলোর মধ্যে থাকতে চাইছিলেননা। আমি কয়েকটা ছবি তুললাম অটোম্যাটিক ক্যামেরায়। ছবি গুলো বিশেষ ভালো অবস্থায় নেই। তার উপর একেবারে আঁকা ছেড়ে দেবার আগ মুহূর্তে আঁকা হয়েছিল এসব সুতরাং ছবি গুলো তার সেই আগের যুগের মত অতখানি ভালো নয়। তাও নমুনা সংগ্রহের জন্যই কিছু ছবি নেওয়া গেল। রোবু জানালেন এখনও নাটোরে কিছু রিকশা থাকতে পারে যেগুলোয় তার আঁকা ছবি এখনও আছে। কথা দিলেন একদিন সময় সুযোগ করে নাটোর নিয়ে যাবেন।
১৯৮৭ সালে আঁকা শিল্পী রোবুর রিকশার ছবি
শিল্পী রোবুর আঁকা ছবির নমুনা এখন আর খুব বেশি নেই। তবে পুরনো রিকশাওয়ালাদের কাছে এখনও রোবুর নামডাক বিস্মৃতিতে হারিয়ে যায়নি। রিকশার ছবির তত্ত্ব তালাশ করতে গিয়ে এখনকার যারা ভালো আঁকেন তারাও রোবুর ছবির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। শিল্পী মুজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদ, আরিফুল ইসলাম রুনু দু’জনেই বলেছেন রাজশাহীতে শিল্পী রোবুর মত আঁকার হাত আর কারো ছিলনা। শিল্পী রোবুর বাড়ীতে গিয়ে তার তরুণ বয়সে একটা জনপ্রিয় পোস্টার থেকে আঁকা ক্রন্দনরত বালকের ছবিটা দেখলাম। ছবিটা তার প্রথম জীবনের আঁকা। সম্ভবত ১৯৭৮ সালের কয়েক বছর পরেই হবে। শিল্পী রোবুর শিল্পের নমুনা বলতে এই গুটিকতকই রয়ে গেছে। এখন যখন আবার পুরো দমে রিকশার ছবি আঁকানো হচ্ছে তখনও শিল্পী রোবু আর ছবি আঁকার উৎসাহ পাননা। চিত্রতারকাদের ছবি সরে গিয়ে রিকশায় এসেছে গ্রামবাংলার দৃশ্যের ছবি। রোবু সেই চিত্রতারকাদের যুগের ছবিরই শিল্পী তিনি এই দৃশ্য আঁকায় বিশেষ উৎসাহী নন। চলচিত্রের নায়ক-নায়িকার চেহারা আর এক্সপ্রেশনের খুটিনাটিতেই যার আগ্রহ ছিল তার আঁকার ধাঁচ আর নিজস্ব পছন্দের ধারাটা অনুমান করে নেওয়া যায়। শিল্পী রোবু এক অর্থে ছিলেন আসলে পোর্টরেইট পেইন্টার। নবীন বয়সে এই প্রতিভাবান শিল্পী যদি যথযথ প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতেন হয়তো শিল্পের জগতে কিছু স্থায়ী অবদানও রাখতে পারতেন। সঠিক পড়াশোনার অভাবে এই প্রতিভাবান শিল্পীদের অনেকেই খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি। তবু ছবি আঁকার অদম্য টানে এরা রং-তুলিকেই জীবন আর জীবিকা করে নিয়ে ছিলেন। রিকশার ছবিতে চিত্রতারকাদের প্রতিকৃতি আঁকার যে ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছিল এক সময়, শিল্পী রবিউল ইসলাম রোবু সেই ঐতিহ্যেরই প্রাণস্পন্দনে সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছিলেন। সেই ঐতিহ্য নিজেই যখন স্রোত হারিয়ে নিস্প্রাণ হয়ে গেল তখন টিন ক্যানভাসের এই উচ্ছল শিল্পী সত্ত্বাও হারিয়ে ফেললো রং-তুলি ধরবার অনুপ্রেরণা। একদার খ্যাতিমান রিকশার ছবির শিল্পী হয়ে গেলেন টিন ক্যানভাসের জগতে একটা বিস্মৃতপ্রায় নাম।
শিল্পী রোবু এখন (২০১৬)
তথ্যসূত্র :
Bangladeshi Arts of the Ricksha by Joanna Kirkpatrick
http://www.artsricksha.com/
http://www.asianart.com/articles/ricksha/
সোহেল ইমাম
রিকশারে ছবি নিয়ে অন্যান্য লেখা
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/55764
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/55618
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/55561
মন্তব্য
বেশ ভালো লাগলো শিল্পী রোবুর কথা শুনে, আপনাকে ধন্যবাদ উনাদের কথা তুলে আনবার জন্য ।
অনন্যা
পড়বার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
সোহেল ইমাম
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নাটোর যাচ্ছেন কবে সোহেল ইমাম?
---মোখলেস হোসেন।
রোবু ভাইই সেটা জানাবে। তবে মোখলেস ভাই মনে হচ্ছে বিশেষ লাভ হবেনা। পুরনো রিকশা গুলো ক্রমেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
অনেক ধন্যবাদ সত্যানন্দ ভাই।
সোহেল ইমাম
জবের! ভাল হচ্ছে সিরিজটা-
facebook
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
প্রিয় বিষয়। ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন