সিটে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখজোড়া ঘুমের ভারে প্রায় লেগেই যাচ্ছিল। এমন সময় সামনের সিটে রাখা হাতের দিকে নজরটা যায়। বিশেষ করে ঘড়ির দিকে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সেটা নষ্ট।
প্রথমটায় ঠিক বিশ্বাস হল না। নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না, তবে মোটামুটি আন্দাজ আছে কিরকম সময় হতে পারে। এই, সাড়ে তিনটার মত। অথচ তার ঘড়ি নির্দেশ দিচ্ছে সাড়ে পাঁচটা! নিশ্চিত হবার জন্য সেকেন্ডের কাটার দিকে তাকালাম। দেখি সেটা ১১টার ঘরের দিকে তাক করা। এবং করেই আছে অনেকক্ষণ ধরে। কাজেই, নষ্ট জিনিস।
একবার আমার অমনটা হয়েছিল ক্লাস এইটে, বৃত্তি পরীক্ষা দেবার সময়। তখন দুইদিনে চার কি পাঁচটা বিষয়ের পরীক্ষা দিতে হত। প্রথমদিন ভালোয় ভালোয় গেল। দ্বিতীয়দিন পরীক্ষার আগে আশেপাশে বসা ছেলেদের সাথে হাসি-ঠাট্টা চলছে। এমন সময় একজন বলে উঠল, “তোমার ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেছে!”
আমি আঁতকে উঠেছিলাম। এমনিতেই বৃত্তি পরীক্ষা একটা বাড়তি টেনশানের মত ছিল, মানসিক ধকল খুব বেশি যেত। একারণেই হয়ত আচমকা ঘড়ি বন্ধের কথা শুনে “হায় হায়, কী হয়ে গেল” টাইপ প্রতিক্রিয়া হয়। অবশ্য তা সাময়িক। অন্যের ঘড়ি দেখে পরে সেটা সাথে সাথেই ঠিক করে নিই।
তাহলে কি দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটার সাথে এমন কিছু হয়েছে? হয়ত অজান্তেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে সাবধান করে দেওয়া জরুরী।
অবশ্য আরেক ব্যাপারও হতে পারে। পেপারে পড়েছিলুম দেশের এক মডেল কাম অভিনেত্রীর কথা। সে যখন প্রথম তার প্রেমিকের সাথে দেখা করে, তখন সেই প্রেমিক বিশেষ মুহূর্তটিকে আটকে রাখবার জন্য হাতে থাকা ঘড়িটা তৎক্ষণাত বন্ধ করে দিয়েছিল। আটকে যাওয়া ঘড়িটি ছিল তাদের প্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন। পরে অবশ্য পালিয়ে যাওয়া এবং স্ক্যান্ডাল সংক্রান্ত ঘটনায় সে প্রেম উধাও হয়ে গেছিল।
তবে কি সামনের যুবকটির ঘড়ি সেরকম কোন বিশেষ কোন মুহূর্ত ধরে রেখেছে? বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রথম তার প্রেমিকার সাথে সাক্ষাৎ অথবা আবেগবশত একটা চুমু খাবার স্মৃতি? নাকি কোন ঝগড়ার কথা স্মরণে রেখে খানিক মজা করার চেষ্টা? কোনটা হতে পারে?
হয়ত এগুলার কিছুই নয়। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের অভিশাপ হয়ত ঘড়িটি। খোলা জানালার পাশে রেখে দিয়ে বিছানায় নিজমনে মোবাইল ঘাঁটছিল। কিংবা কোন বই। তখন বৃষ্টির ছাঁট এসে ঘড়ি ভিজিয়ে দিয়েছে। সস্তায় কোথাও থেকে কিনে নিয়েছিল। জলের স্পর্শ তাই সহ্য হল না।
কিন্তু কী এমন কাজ যে নষ্ট ঘড়ি পরেই বাইরে যেতে হচ্ছে তাকে? কী হতে পারে?
ইন্টারভিউ? যুবকটা যাচ্ছে কোথাও হয়ত ইন্টারভিউ দিতে। যেখানে অ্যাপিয়ারেন্সটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই মোবাইলের যুগেও হাতে একটা ঘড়ি পরে যাচ্ছে। চাকরিটা হয়ত খুব জরুরী। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমার নায়কের মত। ইন্টারভিউর পর ইন্টারভিউ। কোথাও হচ্ছে না। তবে এবারেরটায় হবার চান্স আছে।
অথবা কোন পার্টিতে যাচ্ছে। বন্ধুর বিয়ে হতে পারে। ব্যাপক খাওয়াদাওয়া হবে। বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে মদ্যপানও হবে। তখন কেউ বাসায় যাবার তাগদা দিলে সে হয়ত বলে উঠবে, “আরে সাড়ে পাঁচটা বাজে মাত্র! এত তাড়াতাড়ি কই যাবি!”
কিংবা কোন আত্মীয়ের বাসা। বিদেশ থেকে হয়ত খালা-খালু, ফুপা-ফুপুর বাহিনী এসেছে। তাদের সামনে ফিটফাট হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই ঘড়িটা পরা। বিদেশি আবহাওয়ায় অভ্যস্ত খালু বা ফুপা যখন ব্যস্ত হয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলবে, “ঘড়িটা কোথাকার? রোলেক্স না সিটিজেন?”, তখন যুবকটি হয়ত হাত গুটিয়ে নিবে সংকোচবশত। অন্য কথায় প্রসঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টাও করতে পারে।
ঢুলতে ঢুলতে কল্পনা ডানা মেলছিল আরো অনেক দূর, কিন্তু তার আগেই কণ্ডাক্টর চেঁচিয়ে জানান দিলো, গন্তব্যে এসে গেছি। আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়লাম। যুবকটা তখন সুযোগ বুঝে আমার সিটে বসে গেল। একবার ভাবলাম, "ক'টা বাজে?" জিজ্ঞেস করে তাকে খানিকটা অপ্রস্তুত করে দিই। পরে ভাবলাম, থাক! কি আর হবে!
☼ মানুষিক সৈনিক ☼
মন্তব্য
কন্ডাকর এর জন্য গাছটার পূর্ণাঙ্গ আকৃতি দিতে পারলেন না।
কোন ব্যাপার না।
ভবিষ্যতে আপনার কল্পনার ডালপালা আরো বিস্তৃত হোক সেই কামনাই রইল।
_______
আহমাদ মুহাইমিন
ধন্যবাদ।
কিন্তু লেখা ত নীড়পাতায় আসলো না। তাহলে দেখলেন কিভাবে?
অসাধারন অনেক গভীর কল্পনা করেছেন।
বিদেশি আবহাওয়ায় অভ্যস্ত খালু
বা ফুপা যখন ব্যস্ত হয়ে মুখের
ঘাম মুছতে মুছতে বলবে, “ঘড়িটা
কোথাকার? রোলেক্স না
সিটিজেন?”, তখন যুবকটি হয়ত
হাত গুটিয়ে নিবে সংকোচবশত।
অন্য কথায় প্রসঙ্গ পরিবর্তনের
চেষ্টাও করতে পারে।
#জনৈক অমুক।
উপলব্ধি।
শুভকামনা।
## মেহেদী এইচ. রবিন
ধন্যবাদ!
ভালো কিন্তু লেখাটা। পছন্দ হয়েছে।
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
ধন্যবাদ!
খেয়াল করিনি যে লেখাটা নীড়পাতায় এসেছে। করলে আগেই প্রত্যুত্তর দিতুম।
☼ মানুষিক সৈনিক ☼
নতুন মন্তব্য করুন