আইটিভি নির্মিত ব্রিটিশ ডকুমেন্টারি "Saudi Arabia Uncovered" দেখলাম নেটফ্লিক্সে। মুসলিম জাহানের সর্দার সৌদি আরব সম্পর্কে জল্পনা-কল্পনা গোপন ক্যামেরায় ‘লুলপনা’ করে উঠে এসেছে এই বছরের মার্চে রিলিজ হওয়া ডকুমেন্টারিতে। এই লেখাটা ক্ষণিকের প্রতিক্রিয়াকে জমাট করে বানানো। তবে সাবধান, ডকুমেন্টারিটায় ধড় আলাদা করার আগে/পরের কিছু দৃশ্য আছে, দুর্বলচিত্তের লোকজন আর শিশুদের সামনে না দেখা ভাল।
শুরুটা বেশ নাটকীয়। এক যে ছিল দেশ, যেথায় ‘তারা’ আইন দেখিয়ে উড়িয়ে দেয় কেশ (কল্লা উড়লে সে বাবদে কেশও ওড়ে)। যেথায় ‘তাদের’ পানে 'চক্ষু রেখে' কথা বললে বেতের বাড়ি। নারী অধিকারের নাই বালাই, ধর্ম পুলিশের খাও ধোলাই, (স্কুলে শেখায়) নাছারা-কল্লার দাম নাই। সেই দেশের নাম ইসলামিক স্টেট নহে, সেই দেশের নাম কিংডম অব সৌদি এরাবিয়া। কিন্তু এই কিংডমের সাথেই পশ্চিমা দেশের (এই ডকুমেন্টারির জন্য পড়ুন বৃটেন) ঢলাঢলি। কারণ, কিংডম তাদের অনেক গোপন তথ্য আর ইন্টেলিজেন্স দেয়, তাদের অনেক অনেক তেল, আর তারা বৃটেন থেকে অনেক অনেক অনেক টাকার মেশিনাস্ত্র কিনে। পশ্চিমা দেশের ভাষায় কিংডম হল ‘দরকারী দুষ্টু’।
সৌদি আরব রাজার দেশ, (মুসলিম) দেশের রাজা। তাই রাজার অনেক শক্তি, ডকুটায় ভুল করে সর্বশক্তিমান বলছে মুশরিকের দল। রাজা সালমানের তসবির রাজধানী রিয়াদের পথে পথে। সহি-মন বলে পশুপাখি, জন্তু জানোয়ারের ছবি তো নাজায়েজ ব্যাপার স্যাপার। নাছারা প্রোডাকশন ভিডিওশপ করছে কিনা কে জানে। বাইরে দিয়ে ফিটফাট সৌদি আরবের ‘কোয়ার্টার’ ভাগ লোকের আর্থিক অবস্থা পুরাই সদরঘাট। এই বলে অবশ্য যে দরিদ্র মহল্লা আর কাঁচাবাজার দেখায়, তরিতরকারি আর সব্জির ধরন থেকে আন্দাজ হয় বাংলাদেশি পাড়াই হবে। আবার দেখা যায়, জেদ্দায় ফুটপাতে বসে থাকা ভিক্ষারত নারীদের। হিসাবে নাকি আছে, সৌদিতে প্রতি পাঁচজন কর্মক্ষম মহিলার একজনের কাজ আছে, আর ঘরে যন্ত্রমানব না থাকলে আক্ষরিক অর্থে রাস্তায় নামা ছাড়া গতি থাকে না মানুষীদের।
পবিত্র এই দেশে ,-সালাফি ধারা্র সুন্নী বাদে বাকি সবাইকে উদ্ধার তৎপরতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। খুতবায় ইহুদী, নাছারাদের একশ চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয়। স্কুলের বইতে ইহুদী, নাছারাদের সাথে সাথে শিয়াদের পরিবারও উদ্ধার করা হয়। ধর্মের নামে কটু বক্তব্য প্রদানকারীদের উদ্ধারের ব্যাবস্থা আছে। সবার জন্য এক ফর্মুলা, ধর কল্লা, মার কোপ। তারপর সারা দুনিয়াতে এসব বই রপ্তানি করা হয় বিশ্বব্যাপী উদ্ধার কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে। দেশের ভেতর আছে কমিটি ফর ‘শিষ্টের পালন আর দুষ্টের দমন’। তারা ঘুরে ঘুরে মা বোনদের পর্দার কাপড় ঠিক করে, আর ধরে ধরে ধাড়ি ভাইদের নামাজে পাঠায়। কটুকথা বলা বোলগার পেলে তার সাথে আড়ি আর সবার সামনে বেতের বাড়ি। তেমনই একজন বোলগার রাফি বাদাউই, রাজার তন্ত্র আর মন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলায় মাত্র এক হাজার বেত্রাঘাত আর দশ বছরের জেলের আঞ্জাম করা হয়। বোলগারের একটা কথা বেশ মনে ধরল,
The only way to deal with a unfree world is to become so absolutely free that your very existence is an act of rebellion
. আরো আছে চপ-চপ স্কয়ার; আলুচপ, ডিমচপ বিক্রি হয় না এই স্কয়ারে; খালি Chop-Chop করা হয়। চপচপ স্কয়ার এর ফুটেজ এ দেখা যায় যেখানে শিরোচ্ছেদের পর বের হওয়া রক্ত নিষ্কাশনের সুব্যাবস্থা। উদ্ধারকাজের দক্ষতা বাড়াতে এখানের পুলিশরা বৃটেন এর কাছ থেকে আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ পায়, তিন বছরে তিনশ সৌদি পুলিশ এই প্রশিক্ষণ পায়।
এত সুব্যাবস্থার মাঝেও কিছু নাদান নারী অধিকার, মানবাধিকার, প্রতিবাদ-প্রতিবাদ, আন্দোলন-আন্দোলন খেলে। মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষেধ, তবুও লুজেন মাথলুল নামের একটি মেয়ে গাড়ি চালিয়ে লাল দালানে যায়। তার আবার পৌরসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর শখ হয়, ব্যালট পেপার থেকে তার নাম গায়েব হয়ে যায়। ভাগ্যিস সে গায়েব হয় নাই। ২০১১ এর দিকে আরব বসন্তের জাগরণে পূর্বাঞ্চলে গ্যাঞ্জাম শুরু করে ‘সংখ্যালঘু’ বদ কিছু শিয়া। আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ পাওয়া পুলিশেরা গন্ডগোলাকারীদের উচিত শিক্ষা দিতে সমর্থ হয়। সতের বছরের এক নাদান, নাম আলী নিম’র। পুলিশ স্টেশনের সামনে গিয়ে ক্যামেরা অন করে রেকর্ড করতে করতে বলে আমাকে গুলি কর। বেচারা পুলিশ তা না করে দেশদ্রোহিতার দায়ে গ্রেফতার করে যার দাম এক কল্লা এবং এক ক্রুশ। ধারণা করা হয়, তার চাচ্চু শেখ নিম’র আন্দোলনের স্পিরিচুয়াল নেতা হওয়াতে তাকে সাইজে আনতে এই গ্রেফতার করা হয়। এই অসামান্য তৎপরতার জন্য সেই বেলা সৌদি আরবকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির প্রধান বানানো হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জঙ্গী ইসলামের পাঁঠা বানানো হয় আইছিছ আর আল-কায়েদাকে। যদিও তারা একই ওয়াহাবি-সালাফি সুতায় গাঁথা কিংডমের সাথে। এ পর্যন্ত জেব থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলার বের হয়ে গেছে কিংডমের এই ওয়াহাবীজম ছড়াতে। তবুও তারা বলে জংগীবাদের সাথে তাদের গাঁটছড়া নাই। কিন্তু বের হয়ে যায় ৯১১ এর ১৯জন ছিনতাইকারীর ১৫জনই সৌদি নাগরিক। এই কিংডম চ্যারিটির নামে সারা জাহানের ওয়াহাবী-সালাফি-জিহাদীদের নগদ নারায়ণ পাঠায়। এই ওয়াহাবী-সালাফি আদর্শ যতদিন থাকবে, ততদিন জঙ্গী দলের অভাব হবে না। আইছিস গেলে খাইছিস আসবে, খাইছিস গেলে নাচছিস আসবে।
ইহুদী নাছারাদের ইউটিউব থেকে পাওয়া একটি লিঙ্কে ডকুমেন্টারিটা দেখতে পারেন এইখানে ক্লিক করে
লেখাটা এখানে দেয়ার কুবুদ্ধি প্রদানকারী শুভাকাংক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
হুঁকোমুখো হ্যাংলা
মন্তব্য
ছোটবেলায় একবার একটা সৌদি চাইর আনা ঢিল মারসিলাম কেন জানি। হুজুর কইছিল এইডা কি করসস? আরবী লেখা সৌদি পয়সা ঢিল দিয়া গোনাহ করসিস। আল্লাহ্র কাছে মাফ চা। বড় হইয়া বুঝলাম, আরবি ভাষায় পর্ণও আছে আর সৌদি শেখের একখান বড় অংশ সেইসব পর্ণ নিয়মিত দেখে। মাঝে মাঝে শরাবান তহুরাও খায়। ইসলামের ক্ষতি যতটা সৌদি আরব করেছে ততটা মনে হয় কোন অমুসলিম দেশ করতে পারে নাই।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
আপনার লেখার সূত্র ধরে ডকুটা দেখলাম। ভয়াবহ
০২
আনকভার্ডের অর্থ যদি বেপর্দা করে থাকেন তবে কিন্তু অর্থ অন্যদিকে চলে গেছে। শিরোনাম দেখে আমিই কন্টেন্ট বিষয়ে ধান্দায় পড়েগিয়েছিলাম। বাংলায় বেপর্দার তো আলাদা একটা অর্থ আছে
ধন্যবাদ মাহবুব লীলেন ভাই। শিরোনামে আনকভার্ডের বাংলা হিসেবে 'বেপর্দা' শব্দ ব্যাবহার করাটা একদম যথাযথ হয় নি, 'উন্মোচিত' যথাযথ হত। লেখার সূত্রে কেউ ডকুমেন্টারিটি দেখলে লেখাটি অনেকাংশে সার্থক ধরে নেব। তবে দেখা যাচ্ছে শিরোনামই দ্বন্দ্বে ফেলে দিচ্ছে। আপনার মতামতের জন্য আবারও ধন্যবাদ।
হুঁকোমুখো হ্যাংলা।
কালকে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বেশ ক্ষোভের সাথে বললেন- আমাদের দেশের মেয়েরা এখন হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলতেছে!...........................
নতুন মন্তব্য করুন