৩১শে মে, লে, সন্ধ্যা ৫.৩০
২৮ শে ডায়রী লিখেছি। আজ ৩১শে মে। মাঝে দুটো দিন আর আজকের অর্ধেক কেমন হুস করে বেরিয়ে গেল। হুস করে বলতে যে খুব ব্যস্ততার মধ্যে গেছে তা নয়। এই দু দিনে কী দেখলাম যেটা সবচেয়ে ছোট করে বলতে গেলে যে শব্দবন্ধ ব্যবহার করা যায়, তা হল ভয়ঙ্কর সুন্দর।
কার্গিল থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে এক নাম্বার জাতীয় সড়কের সওয়ারী হয়ে বিকেলের মধ্যে লে শহর। লে পৌছানোর আগে রাস্তায় দেখা মিলল ম্যাগ্নেটিক হিলের।
জাতীয় সড়কের ধারে পর্বতশ্রেনী। একটি নির্দিষ্ট পাহাড়ে ওঠার সময় গাড়ীর ইঞ্জিন বন্ধ করে করলেও গাড়ী সোজা উঠতে থাকে পাহাড় বেয়ে। মোটামোটি ঘন্টায় কুড়ি কিলোমিটার বেগে। ভৌতিক কান্ড! পরে জানা গেল ‘অপ্টিকাল ইলিউশনের’ জন্যই নাকি এমন ঘটনা।
বলা হয়ে থাকে ভগবানের হাতে তৈরী জম্মু- কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ অঞ্চল। তার জেলা শহর লে। যেদিকে তাকানো যায় শুধুই পর্বতশ্রেনী। কোনোটা ধূসর কোনোটা খয়েরী। প্রথম জুনেই শরতের পেঁজা তুলোর মত মেঘের খেয়ালী গতিবিধি। ধুসর ছাইরঙা পর্বতশ্রেনীর ওপর আদুরে মেঘের ছায়া। আর চারদিকের পর্বতমালার মাঝে একটা উপত্যকা।
লে শহর কী আশ্চর্য ভাবে এই উপত্যকায় গড়ে উঠেছে, সেটা চোখে না দেখলে বলা মুশকিল। চারদিকে মানে ৩৬০ ডিগ্রী কোণ জুড়ে শুধুই পার্বত্য সৌন্দর্য। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১১,৪৮২ হাজার ফুট ওপরে এই লে শহর। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চতাজনিত শারিরীক সমস্যা যাতে মাথা চাড়া না দেয় সেজন্য লে পৌছনোর পর নো নড়াচড়া।
পরদিন স্থানীয় কিছু দ্রষ্টব্য দর্শন। মূল শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরেই শান্তিশ্তূপা।
সাগরপৃষ্ঠ থেকে ১১৮৪১ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শান্তিস্তুপা থেকে লে শহর আর তার পর্বতশ্রেণী চোখে লেগে থাকে দীর্ঘক্ষন।
যেটা উল্লেখ্য, সেই পর্বতশ্রেণীর গায়ে একটু মনোযোগ দিলেই ছোট বেলার ভূগোল বইয়ের পাতা থেকে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের বিভিন্ন ভূমিরূপ যেন সোজা উঠে এসে হাজির হয়েছে চোখের সামনে। এখান থেকে চোখে পরে লে’র রাজবাড়ী। সপ্তদশ শতকে নির্মিত এই রাজবাড়ী অবশ্য এখন পরিত্যক্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত।
উনিশ শতকে রাজপরিবারের লোকেরা স্থানান্তরিত হয় স্টক প্যালেসে, যার কথায় আমরা পরে আসছি। শান্তিস্তূপা থেকে সরতে মন চায় না। কিন্তু সময় নির্দিষ্ট। আজকের মধ্যেই দেখে ফেলতে হবে লে’র দ্রষ্টব্য স্থানগুলি। কাল ভোরে উঠেই নূব্রার উদ্দেশ্যে রওনা।
লে বিমানবন্দরের ঠিক পাশেই স্পিটুক গুম্ফা। খাঁড়া সিড়ি বেয়ে উঠতে হয় অনেকটা। আমাদের সমতলভূমিতে লালিত ফুসফুস বিদ্রোহ করে ওঠে। গুম্ফা থেকে বিমান ওঠানামা দেখতে বেশ লাগে।
দিগন্ত বিস্তৃত উষঢ় পর্বতমালা। ভাসমান মেঘ। দিগন্ত থেকে ধেয়ে আসা বিমানের চারদিক পাক খেয়ে বন্দরে অবনমন – এ এক দেখার মত দৃশ্য।
লে’র রাজবাড়ী, মানে স্টক প্যালেস কম আকর্ষনীয় নয়। রাজবাড়ীর একটু আগেই বিশালাকার বুদ্ধ মূর্তি।
লে শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মূর্তিটি অবশ্য সাম্প্রতিক অতীতে, ২০১৫ সালে নির্মিত। এই ইতিহাসসমৃদ্ধ লে শহরের প্রাচীন ব্যাবহৃত দ্রব্যের এক সংরক্ষনাগার গড়ে উঠেছে রাজবাড়ীতে।
প্রাচীন অস্ত্র সম্ভার থেকে সীলমোহর, বর্ম, লে’র ঐতিহ্যমন্ডিত পোষাক, মূল্যবান রত্ন, – সব কিছুতেই কত না ইতিহাসের গন্ধ।
***************************
দীপালোক
***************************
মন্তব্য
ছবিগুলো চমৎকার হয়েছে। কাশ্মীর,লাদাখ এই জায়গাগুলো ঘুরবার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে গেল। চলুক আপনার ভ্রমণ।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
ধন্যবাদ। উৎসাহিত হলাম।
-দীপালোক
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
-দীপালোক
ছবিগুলো চমৎকার এসেছে
- দীপালোক
অদ্ভুত,মাথা নষ্ট হবার মত সুন্দর!
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নতুন মন্তব্য করুন