আয়নাবাজি: অতীত বদলাবে, ভবিষ্যৎ বদলাবে না

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/১০/২০১৬ - ৮:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আয়নাবাজির হাজারটা সমস্যা। দেশের অন্যতম সেরা কারিগরি ব্যক্তিদের সহায়তায় দেশের অন্যতম সেরা পরিচালক অমিতাভ রেজার নির্মিত সিনেমা বলে এই হাজারটা সমস্যা কিছু বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, উন্মোচন করে, যা বিশদ আলোচনার দাবী রাখে। ঝামেলা হচ্ছে, হাজারটা সমস্যা ব্যাখ্যা করে, সাথে বিশদ আলোচনা করতে গেলে এই লেখাটা ক্লান্তিকর রকম বড় হয়ে উঠবে। কিন্তু এমনও সম্ভব না যে, আমি বললাম হাজারটা সমস্যা আছে, আর আপনারা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিলেন, আর আমি বিশেষ পরিস্থিতির আলোচনায় মনোযোগ দিলাম। তাই ব্যাখ্যায় তো যেতেই হবে। চেষ্টা করবো যতটা সংক্ষেপে কাজ সারা যায়, সারতে। অনুরোধ করবো, সাথে থাকতে।

আয়নাবাজি এখনও না দেখে থাকলে এবং দেখার ইচ্ছা থাকলে, লেখাটা না পড়াই উত্তম, কারণ গল্প নিয়ে আলোচনা করেছি।

*

বাংলাদেশের নির্মাতা-গোষ্ঠীর যেহেতু অজুহাতের শেষ নেই- বাজেটের অভাবের অজুহাত, কারিগরি সহায়তার অভাবের অজুহাত, যোগ্য প্রযোজকের অভাবের অজুহাত, শিক্ষিত দর্শকের অভাবের অজুহাত- আমি তাই, বরাবরের মতই গল্প/চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করবো, কারণ ভাল গল্প এবং নিশ্ছিদ্র চিত্রনাট্য না লিখতে পারার জন্য কোন অজুহাত থাকতে পারে না, স্রেফ একটা ছাড়া, যেটা হলো- আমি অশিক্ষিত, অযোগ্য, আমার ঘটে গোবর।

এখানে উল্লেখ করি, আয়নাবাজির গল্প লিখেছেন বিজ্ঞাপন জগতে পনের বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গাউসুল আলম শাওন, তিনিই অনম বিশ্বাসের সাথে মিলে লিখেছেন চিত্রনাট্য, আবার অনম বিশ্বাসের সাথে আদনান আদীব খান মিলে লিখেছেন সংলাপ (সংলাপ লেখার জন্য আলাদা লোক লাগলো কেন, আমি জানি না)। সেই চিত্রনাট্য ইন্টারপ্রেট করেছেন, এক্সেকিউট করেছেন এবং তাতে- তার নিজের বক্তব্য অনুসারেই, যা পরে আলোচনা করছি- বিশেষ প্রাণ সঞ্চার করেছেন পরিচালক অমিতাভ রেজা।
*

শুরুতেই, কুদ্দুস এবং কুদ্দুসরূপী-আয়নার বদলাবদলির পরে, কুদ্দুসরূপী-আয়না যখন জেলে, তখন কুদ্দুস তার উকিল বাদশা কে সাথে নিয়ে কেন তানিশাকে ভয় দেখানোর মত ছেলেমানুষি করতে গেল? তারা যদি সে রাতের পার্টির পরে মাতাল অবস্থায় এমনটা করতো, ধরে নিতাম তাদের বিচারবুদ্ধি লোপ পেয়েছিল তাই। কিন্তু তারা তখনও মাতাল হয়নি। তাহলে কেন তারা তানিশার সামনে উপস্থিত হয়ে বদলাবদলির বিষয়টা ফাঁস করে দিল?

কুদ্দুসের এই অযৌক্তিক স্টান্টবাজির কারণেই তানিশা বদলাবদলির বিষয়টা সাংবাদিক সাবেরকে জানাতে সক্ষম হয় এবং সাবের ওই ‘বদলি’ আয়নাকে খোঁজা শুরু করে (যেটা আরও সমস্যাপূর্ণ)। কুদ্দুসরূপী-আয়নাকে যখন প্রিজন ভ্যানে করে কোর্টে নেয়া হবে, সাবের ফলো করে, বদলাবদলির সময় ছবি তোলার চেষ্টা করে কিন্তু আয়নার এজেন্ট হলিউড স্টুডিওর গাউসুল ছদ্মবেশে বাঁধা দেয়। ফলে সাবের না পারে কুদ্দুসরূপী-আয়না’র ছবি তুলতে, না পারে তাকে বহনকারী গাড়ীটাকে ফলো করতে। অর্থাৎ সাবেরের কাছে কুদ্দুসরূপী-আয়নার কোন ছবি নেই, সে কোথায় থাকে তা-ও সে জানে না।

একদিন ঘুম থেকে উঠে ল্যাপটপে তাকাতেই ফেইসবুকে সে কুদ্দুসের পার্টির ছবি পেয়ে যায়। কি কনভিনিয়েন্ট! তার কাজের ছেলেটাকে ডেকে সে কুদ্দুসের ছবি দেখায়, এবং- সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যেটা- কুদ্দুসরূপী-আয়নার ছবিও দেখায়! কিন্তু আয়নার ছবি সে পেল কোথায়? আবার আয়নার সে ছবি নিয়েই সে আয়নাকে খুঁজতে আয়নার এলাকায় চলে আসে। কিন্তু আয়না কোথায় থাকে সে কিভাবে জানে?

এভাবেই শুরু হয় সাংবাদিক সাবেরের গল্প। আগাগোড়া অযৌক্তিক ঘটনাক্রমের মাধ্যমে। এবং আরও হতাশাজনক হলো, একটু লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, পুরো সিনেমায় আসলে সাবেরের কোন প্রয়োজনই নেই, কারণ তার কোন কাজই নেই! সাবের কেবল কয়েকবার আয়নাকে ফলো করে, আয়নার সাথে মিলে কিছু হাস্যরসাত্মক দৃশ্যের অবতারণা করে। সে বিশেষ কোন অনুসন্ধানের মাধ্যমে সিনেমার কাহিনীতে প্রভাব রাখার মত বিশেষ কোন তথ্য উদ্‌ঘাটন করে না। তার একমাত্র কাজ থাকে কেবল সিনেমার শেষ দিকে আয়নার অতীতের ছোট্ট একটা গল্প প্রকাশ করা। সেটাও অন্য কারো, যেমন গাউসুল কিংবা মজনুর মাধ্যমে প্রকাশ করা যেত। সাবেরকে যদি সিনেমাটা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, তাহলে সিনেমার গল্পে কিছুই পরিবর্তন হবে না, বরং তা দৈর্ঘ্যে কমে আসবে, হয়তো হাস্যরসে কিছুটা ঘাটতি হবে।

অযৌক্তিক পরিস্থিতি দাঁড়ায় সিনেমার শেষেও।

আয়না যখন তার বদলির কাজ ছেড়ে দিয়ে হৃদির সাথে সিলেটে যেতে ইচ্ছুক, তখনই জনৈক রাজনীতিবিদ নিজাম চৌধুরী আয়নাকে তুলে নিয়ে আসে, বাধ্য করে তার হয়ে জেল খাটতে।

ঘটনাচক্রে হত্যা মামলায় নিজাম চৌধুরীর ফাঁসি হয়ে যায়। এই ফাঁসির প্রক্রিয়াটা সিনেমার শেষ অঙ্কের জন্য খুবই জরুরি ছিল, কিন্তু ছিল গোলযোগপূর্ণ। একটা দৃশ্যে আমরা দেখি নিজাম চৌধুরীর উকিল শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করে যে হত্যার দিন নিজাম চৌধুরী দেশেই ছিল না, সে ছিল গুয়েতেমালায়। উকিল ভিসা-যুক্ত পাসপোর্ট এবং প্লেনের টিকেট উপস্থাপন করে। এর চেয়ে শক্ত প্রমাণ আর কি হতে পারে! আশ্চর্যজনক ভাবে, সাথে সাথেই বিচারপতি ফাঁসির রায় দেয়। দর্শক হিশেবে কিছুই বোধগম্য হয় না!

এইরকম জোর করে আরোপিত এবং অত্যন্ত আলসে ভাবে লেখা দৃশ্য রয়েছে আরও অসংখ্য, সে কথায় আসছি। শেষ অঙ্কের দিকে আরেকটু মনোযোগ দেই।

ফাঁসি হওয়ার পরও আয়না কোন হাঙ্গামা করে না কেন? সে কেন প্রকাশ করে দেয় না যে সে আসল নিজাম চৌধুরী নয়? কারণ তাতে নিজাম চৌধুরী হৃদির ক্ষতি করবে? যদি তা-ই হবে, তাহলে শেষে সে পালায় কেন? কারণ পালানোর মাধ্যমে তো সে নিজাম চৌধুরীর পুরো পরিকল্পনাটাই ভেস্তে দিল। কর্তৃপক্ষের চোখে তো আসল নিজাম চৌধুরীই পলাতক হলো, যেটা-ই মূলত এড়াতে চাইছিল সে। আয়নার পালানোর কারণে তো সে কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে পরিত্রাণ পেতে পারলো না। তাহলে সে, নিজাম চৌধুরী, কেন আবার আয়নাকে ধরে আনলো না? কেনই বা সে কোন হামলা চালালো না? আয়নাও কি করে নির্ভয়ে হৃদির সাথে মিলে বাচ্চাদের সাথে নাটক করে বেড়াতে থাকলো?

এছাড়াও, নিজাম চৌধুরী যখন দেখলো আয়নার ফাঁসি আর আটকানো যাচ্ছে না তখন সে তার সহকারী/দেরকে সকল প্রমাণ মুছে ফেলার আদেশ দিল, যার ফলে গাউসুল মারা পড়লো এবং মজনু পলাতক হলো। তাহলে হৃদি মারা পড়লো না কেন? নিজাম চৌধুরী কেন মনিটর করলো না জেলে আয়নার সাথে কে কে দেখা করতে যাচ্ছে? সাংবাদিক সাবের আর হৃদি কিভাবে আয়নার সাথে দেখা করতে পারলো? হতে পারে নিজাম চৌধুরী জানে যে, আয়না জানে, সে মুখ খুললেই নিজাম চৌধুরী হৃদিকে শেষ করে দেবে। তাহলে আবার আগের প্রশ্ন আসে- শেষে তবে আয়না পালিয়ে নিজাম চৌধুরীর পুরো পরিকল্পনাতেই জল ঢেলে দিল কেন? কোন রিট্যালিয়েশানের ভয় না করে?

প্রশ্ন। প্রশ্ন। প্রশ্ন।
*

সমস্যাটা বাংলাদেশের সিনেমায় পুরনো।

কারও মাথায় একটা ছোট্ট আইডিয়া আসে। আরে! এটা নিয়ে তো ভাল সিনেমা হয়!

সেই আইডিয়ার গায়ে অতি অদক্ষতা অযত্নের সাথে, আলসেভাবে, তাড়াহুড়ো করে, কোনমতে একটু মাল-মশলা লাগানো হয়, টেনেটুনে বানানো হয় আস্ত একটা চিত্রনাট্য। মাল-মশলা লাগানোয় এই আলসেমি, অযত্নের কারণ হচ্ছে চিত্রনাট্যকারের সকল মনোযোগ থাকে সেই আইডিয়াতে, যেটা দেখিয়ে সে সকলকে চমকে দিতে চায়! এছাড়াও, বাস্তবসম্মত ভাবে মাল-মশলা জুড়ে দেবার, ঘটনাক্রম দাঁড় করাবার মানসিক সামর্থ্যও তার থাকে না। শিক্ষার অভাব, অভিজ্ঞতার অভাব। জীবন সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানের অভাব, পর্যবেক্ষণের অভাব, মানসিক চর্চার অভাব, কল্পনাশক্তির অভাব।

আয়নাবাজির ক্ষেত্রে যে আইডিয়াটা হলো ‘বডি ডাবল’ এর।

২০১২ এর দিকে চীনে একটা হাই প্রোফাইল হত্যা মামলার প্রসঙ্গে এই ‘বডি ডাবল’ এর বিষয়টা উঠে আসে। চীনের, কোন মামলায় ফেঁসে যাওয়া ক্ষমতাবানেরা তাদের হয়ে জেল খাটার জন্য মানুষ ভাড়া করে। এটা হয়ে আসছে অন্তত দেড়’শ বছর বা তারও বেশী সময় ধরে। এটার নামকরণ হয়েছে ‘ডিং জুই’। অবশ্য এটা সারা পৃথিবীতেই নিশ্চয়ই হয়ে থাকে। চীন স্রেফ এটার একটা নাম দিয়েছে।

আয়নাবাজির গল্প এইরকম একটা মানুষকে নিয়ে, যে টাকার বিনিময়ে জেল খাটে। শরাফত করিম আয়না। সে একটা স্কুলে বাচ্চাদেরকে নাটক শেখায়। এবং মাঝে মাঝে জেল খাটে। তার এলাকায় নতুন বাসিন্দা হয়ে আসে একটা মেয়ে হৃদি। তাদের মধ্যে একটা সখ্যতা, আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। হৃদির টানে আয়না তার জেল খাটার কাজ ছেড়ে দেবার কথা বিবেচনা করে। আর পাশাপাশি, এক ক্রাইম রিপোর্টার সাবের আহমেদ আয়নাকে তাড়া করে ফেরে। সে এই বডি ডাবল রহস্যের সমাধান চায়। এই হলো আয়নাবাজির গল্প।

এরকম অনেক অনেক হলিউডি/বলিউডি/ঢালিউডি সিনেমা আমরা দেখেছি যেখানে ‘নায়োক’ অপরাধ জগতের সাথে জড়িত, তার জীবনে ‘নাইকা’ আসে, প্রেমের টানে সে অপরাধ জগত ছাড়তে চায়, কিন্তু . . .।

এইসব হলিউডি/বলিউডি/ঢালিউডি সিনেমায় যে সমস্যাটা হয়- নায়োক নাইকা, এরা খুবই স্টেরিওটিপিকাল হয়, ফরমুলেইক হয়। এদের মধ্যে কোন ‘প্রাণ’ থাকে না। এদেরকে কম্পিউটারের প্রোগাম লেখে, কোন মানুষ লেখে না- অন্তত তা-ই মনে হয়। এইসব সিনেমা আগাগোড়া-ই প্রাণহীন হয়। এগুলোর আকর্ষণ যেটা হতে পারে তা হলো এ্যাকশান-নাচা-গানা-রোম্যান্স-কমেডি-ইমো দৃশ্য। এগুলোতে ‘মানুষ’ গুলো মুখ্য নয়।

আয়নাবাজিতেও একই। আয়নাবাজির চরিত্রগুলো, বলা যায়, গতানুগতিকের বিশেষ খামার থেকে বাছাই করে করে নেয়া।

যেমন আয়না। আয়না হলো সেই গতানুগতিক চরিত্র যে তার বাবা কিংবা মায়ের বিচিত্র পেশা ভালবাসে, বাবা কিংবা মা দুঃখজনক ভাবে মারা যায় এবং সে ভালবেসে সেই বিচিত্র পেশা নিজের করে নেয়। পেশাটাই সমস্যামূলক এবং গল্পের মূল সঞ্চালক। সে, নাইকার আবির্ভাবেই, তার প্রাণ শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে অতি সংক্ষেপে তার প্রেমে পড়ে যায় এবং সেই প্রেমের টানেই সে তার সমস্যামূলক পেশা ছেড়ে বের হয়ে এসে নতুন জীবনে পা দিতে চায়। কিন্তু এত সহজে তা সম্ভব হয় না।

যেমন হৃদি। সেই গতানুগতিক চরিত্র, যে নায়োকের এলাকায় তথা নায়োকের জীবনে নতুন এসেছে, যার অতীতে বিশেষ কোন ঘটনা আছে, যে একটু দার্শনিক মানসিকতার, শিল্পটিল্প, বিচিত্র ঢঙের মানুষ তাকে বেশ টানে। এবং সে নায়োকের চারিত্রিক বৈচিত্র্যে মুগ্ধ হয়ে অতি সংক্ষেপে তার প্রেমে পড়ে যায়।

হৃদির বাবা। গতানুগতিক ইন্টেলেকচুয়াল বাবা। যে গান শোনে, বই পড়ে, পাইপ টানে, সন্তানের বিষয়ে বেশ খোলা মনের এবং হার্ট এ্যাটাকে মারা গিয়ে বেশ দুঃখজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

সাংবাদিক সাবের তো গতানুগতিকের চূড়ান্ত। মাতাল ক্রাইম রিপোর্টার যার পরিবারে সঙ্কট চলছে, বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে এবং একটা মায়াময় সন্তান আছে।

সাংবাদিকের বস, গতানুগতিক প্রকাশক চরিত্র। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির সংবাদ সে প্রকাশ করবে না কারণ চাকরী চলে যাবে, বরং সে অগুরুত্বপূর্ণ ‘রস’ এর খবর চায়।

মজনু, গতানুগতিক আপন লোক। নায়োককে ভালবাসে, নায়োকের প্রতি অগাধ বিশ্বাস। পেটে বোম পড়লেও নায়োকের বিষয়ে কোন তথ্য পাচার করবে না। করলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে নিরুপায় হয়ে, নায়োককেই উদ্ধার করার জন্য।
*

অথচ সবাই দাবী করছেন তারা “আমাদের গল্প” বলতে চান।

আয়নাবাজি প্রসঙ্গেও খুব জোর দিয়ে বলা হচ্ছিল যে, আয়নাবাজির বিশেষ ‘প্রাণ’ আছে। আয়নাবাজিতে মানুষগুলোর গল্প বলাই যে মুখ্য, বারবার করে বলা হচ্ছিল। এটা শহরের ভেতরে অন্য এক শহরের গল্প, যার গল্প আমরা আর এখন শুনি না, চলচ্চিত্র নাটকেও যাকে আর দেখা যায় না। অমিতাভ রেজা নিজেই বলেছিলেন-

গত অগাস্ট এর শেষ বৃহস্পতিবারে অপি’জ গ্লোয়িং চেয়ার নামক একটি অনুষ্ঠানে অপি করিমের সাথে আড্ডায় অমিতাভ রেজা বলেছিলেন, “আমাদেরকে আমাদের সিনেমা বানাতে হবে। যদি বিশ্বাস করি, তাহলে আমাদের গল্পটা বলে ফেলতে হবে।” বলেছিলেন, গল্পটা গাউসুল আলম শাওনের হলেও, তিনি পরিচালক হিশেবে গল্পটাতে বিশেষ একটা ভাবনা, দর্শন, আঙ্গিক সংযোজন করেছেন। বলেছিলেন, সিনেমার ‘আয়না’ তো মোহাম্মদপুরে বা ধানমণ্ডিতে বা অন্য কোথাও থাকতে পারতো, কিন্তু সে যে পুরান ঢাকায় থাকে, তিনি যে আয়নাকে পুরান ঢাকায় স্থাপন করেছেন এর একটা বিশেষ মাহাত্ম্য আছে।

কোনটা আমাদের গল্প? যেখানে সকল চরিত্রই হলিউড/বলিউডের ফিল্টার দিয়ে বের হওয়া চূড়ান্ত রকম গতানুগতিক, সেখানে ‘আমরা’ কারা? যেখানে চরিত্রগুলোর অন্তর্জগতের কোন প্রকাশ নেই, তাদের সংলাপে কোন নুআন্স নেই, সেখানে আমরা কি করে ‘আমাদেরকে’ খুঁজে পাব?

আমরা কি কুদ্দুসের মত স্টেরিওটিপিকাল ভিলেইন? আগাগোড়া নোংরা মানুষ? আমরা কি আয়না বা হৃদির মত সংক্ষেপে মিষ্টি প্রেমে পড়া মানুষ? আমরা কি একজন মাতাল যার স্রেফ ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে এবং যে স্রেফ তার চাকরীতে সন্তুষ্ট না? আমরা কি একজন স্রেফ কমিক কাজের ছেলে?

এইসবের নুআন্সটা কোথায়? বাস্তবতাটা কোথায়?

আয়নাবাজির চরিত্রগুলো ‘মানুষ’ নয়, স্রেফ কার্ডবোর্ড কাটআউট। আয়নাবাজির কোন গল্প নেই আছে গল্পের কঙ্কাল।

কি বিশেষ প্রাণের সঞ্চার করেছেন অমিতাভ রেজা, গাউসুল আলম শাওনের গল্পে/চিত্রনাট্যে?

আয়না বাচ্চাদেরকে কল্পনার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃতি অনুভব করতে শেখায়। হৃদি তার বাবাকে বিদ্যুৎ না থাকার উপকারিতা বোঝায়, বিদ্যুৎ চলে আসলে বাবার ডিজ্‌গাস্টিং লাগে। পুরান ঢাকার বাড়ী ঘরের ছাদে ছোটরা ফুটবল কুতকুত খেলে। এক বড়লোকের পাগলাটে সন্তান ভায়োলেন্ট ভিডিও গেইম খেলে, চিৎকার করে, ডাই! ডাই! আয়না তাকে নিয়ে ফুটবল খেলতে যায়, তা-ও আবার উঁচু এপার্টমেন্টের ছাদের এক কোণের এক টুকরো ঘাসে।

সেই পুরনো গীত? দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর? নতুন কোন কার্যকর ভাবে কি? নতুন সঙ্গীতায়োজনের গীত কি? নাকি সেই একই বহুল চর্চিত উপমা সমৃদ্ধ সেই একই পুরনো তর্ক?

সেই একই। সেইম ওল্ড, সেইম ওল্ড।

সাম্প্রতিক একটা সাক্ষাতকারে অমিতাভ রেজা বলেছিলেন, তার সিনেমা ‘সোশ্যাল রিয়েলিজ্‌ম’ ধর্মী। কেমন সেই সোশ্যাল রিয়েলিজ্‌ম? আয়নাবাজিতে?

অপরাধী টাকা আর ক্ষমতার বলে পার পেয়ে যায়? নিরীহ লোক সাজা ভোগ করে? এসব তো মীনা-রাজুও জানে, আজকের কথা তো নয়। নতুন কি? নতুন কোন এক্সপ্লোরেশান? নতুন কোন উপলব্ধি? নতুন কি?

রাজনীতিবিদ নিজাম চৌধুরীর মার্ক্স এর দ্বান্দিক বস্তুবাদ আওড়ানো কিংবা হিটলার, মুসোলিনি, লেনিনের উদাহরণ টানা তো আরও শিশুতোষ ঠেকে! এই রেফারেন্সগুলো না এসপারের, না ওসপারের। বিশেষ কোন নুআন্সড্‌ বক্তব্যও নেই আবার এগুলো আছেও, ঝুলে আছে স্রেফ।

কার জন্য এই ছেলেমানুষি সোশ্যাল রিয়েলিজ্‌ম?

পরিচালক অমিতাভ রেজা, প্রযোজক গাউসুল আলম শাওন- বলেই দিয়েছেন যে আয়নাবাজি সাধারণ মানুষের জন্য নির্মিত, বোদ্ধাদের জন্য নয়, আঁতেলদের জন্য নয়। তাহলে কেন শুধু শুধু মার্ক্সকে টেনে আনা? তাও বিনা কার্যকারিতায়?

আর শহরের গল্প?

ঢাকার রাস্তা আর ফ্লাইওভার, র‍্যান্ডম বাড়ীঘর, একটা টোকেন জ্যাম? আর এখন তো ড্রোনে এসেছে, ড্রোনে বাংলাদেশ সয়লাব! কিছু ড্রোন শট, বার্ডস আই ভিউ।

আর পুরান ঢাকার গল্প? কি গল্প বলা হলো?

স্রেফ কয়েকটা গলি, বুড়িগঙ্গা, লঞ্চ-ষ্টীমার, পুরির দোকান, পুরনো বাড়িঘর? এই? পুরান ঢাকা তো এমনিতেই সুন্দর, আলাদা বিশেষ টেক্‌শচার সমৃদ্ধ। সে সৌন্দর্য ধার করেছেন কেবল? তা-ও যে বিশেষ পেরেছেন তা-ও নয়। আর কিছু? পুরান ঢাকার কি জীবনযাত্রা দেখিয়েছেন? আয়নার বিশেষ আয়োজনে ভাত খাওয়া? সকালে সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে রেওয়াজ করার রিচুয়াল? এই-ই?

পুরান ঢাকা থেকে উঠিয়ে আয়নাকে অন্য কোন পাড়া এলাকায় বসিয়ে দিলে কি কিছু আসতো যেত গল্পের?

আর একটা পাগল চরিত্র আছে যাকে দুটো দৃশ্যে বিশেষভাবে দেখানো হয়। কিন্তু কেন? তার একটামাত্র সংলাপ আছে “আই হ্যাভ আ ড্রিম”। কিন্তু কেন? কি মাহাত্ম্যপূর্ণ? কোন এলাবোরেশান? জাস্ট একটু উদ্দেশ্যহীন বিচিত্র পাগলামি কেবল? ব্যক্তিগত শখ মেটালেন কি? এমন একটা পাগল রাখার শখ ছিল সিনেমায়?

আঁতেলদের জন্য বানাননি, কিন্তু আঁতলামি করেছেন ঠিকই।

ঢাকার ডার্ক সাইড দেখানো হবে বলেছিলেন। হেসে বাঁচি না! তারা সংবাদ দেখেন না, পত্রিকা পড়েন না, রাস্তায় হাঁটেন না, কানে শোনেন না! তারা নিজস্ব কোন এক কল্পনার জগতে বাস করেন! এই-ই ডার্ক আন্ডারবেলি ঢাকার? সদ্যজাত শিশুর গুহ্যদ্বার এর চেয়ে বেশী ডার্ক হয়।
*

আয়নাবাজির চিত্রনাট্যের আরেকটা বড় ব্যর্থতা এর অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘ ঘটনাবলী যা সিনেমার সামগ্রিক গল্পে কোন কিছু সংযোজন করে না, যার কারণ হয়তো, সিনেমাটার কোন বিশেষ সামগ্রিক গল্পই নেই!

যেমন শুরুতেই কুদ্দুসের অংশটা। কুদ্দুসকে এত এলাবোরেইটলি প্রদর্শন করা হলো, আয়নার “কুদ্দুস জব” টাও এত এলাবোরেইটলি দেখানো হলো। কিন্তু এই এলাবোরেশানের মাধ্যমে কি সিনেমার গল্প কিংবা আয়না সম্পর্কে বিশেষ কিছু প্রকাশ করা হলো?

আয়নার কোন জবই কি আসলে আয়নার অন্তর্জগত কিংবা সিনেমাটার আত্মা সম্পর্কে বিশেষ কিছু প্রকাশ করে?

নাহ্! স্রেফ কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যায়।

একটা অংশে স্রেফ সাংবাদিক সাবেরকে এড়ানোর জন্য আয়নার একটা বিস্তারিত ধোঁকাবাজির পরিকল্পনা দেখানো হয়, যেটারও কোন কন্ট্রিবিউশান নেই সিনেমার সামগ্রিকতায়। হায়! সাবের নিজেই সিনেমায় একটা অপ্রয়োজনীয় চরিত্র, একটা অপচয় কেবল! আর তার-ই জন্য আরও আরও সময়ের অপচয়!

সবচেয়ে হতাশাজনক হলো- প্রায় আড়াই ঘণ্টার সিনেমা, কিন্তু কিছুই বলে উঠতে পারে না, গতানুগতিক কিছু সাধারণ কথা ছাড়া। আড়াই ঘণ্টা ব্যাবহার করেও চরিত্রগুলোকে ‘মানুষ’ এর রূপ দান করতে পারে না। তারা কার্ডবোর্ড কাটআউটই রয়ে যায়।

অযত্নভরে আলসে লেখার অন্যতম সংকেত হিশেবে দেখা যায় পুনরাবৃত্তি।

গাউসুলের সহকারী মিনি-গাউসুল যেমন অদ্ভুত ইংরেজি বলে হাস্যরসের জন্ম দেয়, সাবেরের কাজের লোকের বৈশিষ্ট্যও তা-ই, অদ্ভুত ইংরেজি।

সাবের মাতাল হয়ে বারবার একই কথা বলে যে, তার বস চায় রসের খবর আর বউ চায় ভাল স্বামী/সুখ, এই তার দুঃখ।

এই সাবেরই আবার একবার আয়নার কাছে শোনে তার জাহাজে রান্না করার গল্প আবার একই গল্প ভিন্ন একটি দৃশ্যে শোনে মজনুর কাছে। যেন চিত্রনাট্যকার লেখার মত কোন দৃশ্য পাচ্ছিলেন না। বোধ করি, তা-ই।

অবাক হয়ে ভাবি, এই “সাংবাদিক সাবের”ই তো আয়নাবাজি পুরোটা একা হাতে ধসিয়ে দিয়েছে বলা যায়। এই সাবের শালাকে নিয়ে আর কোন কথা হবে না!

হৃদিও দেখা যায় কেবল আয়নার বাসার প্রশংসা করে। একবার পুরনো বাসার, একবার নতুন বাসার। তারও বলার মত আর কিছু নেই।

আর আছে বিভ্রম-

আয়না যখন কুদ্দুস জবের জন্য অনুপস্থিত তখন হৃদি আয়নার বাচ্চাদের সাথে আন্তরিকতা গড়ে তোলে। হৃদি কি তখন জিজ্ঞেস করে না, আয়না টিচার কোথায়? বাচ্চারা কি বলে না, তিনি জাহাজে গেছেন?

কিন্তু পরে দেখা যায় কিলার বয় জবের জন্য যখন আয়না অনুপস্থিত, হৃদি ধরে নেয় আয়নাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং সে মোসাদ্দেক- তার কাজের লোককে পাঠায় আয়নাকে খুঁজতে।

সেই দৃশ্যেই হৃদির বাবা জিজ্ঞেস করে আয়না ভাই টা কে, তার বয়স কত। হৃদি বলে বয়স তোমার মত, অর্থাৎ বাবার মত। আশ্চর্যজনক হলো বাবা তখন অদ্ভুতুড়ে প্রশ্ন করে, তার নিজের বয়সী লোকের বিষয়ে প্রশ্ন করে, সে দেখতে কেমন??!! সে কি করে? যেন তিনি তার বয়সী একজন লোককে তার মেয়ের জামাই হিশেবে বিবেচনা করে দেখছেন।

কত কত মনোজাগতিক সুতো সিনেমায় স্রেফ ছেড়ে দেয়া হয়, এক্সপ্লোর করা হয় না।

আয়নার কুদ্দুস জবের সময় জেলখানায় নাচা-গানার শেষে হতবিহ্বল হয়ে পড়া, আয়নার তার মৃত মায়ের সাথে ফোনে কথা বলার অভিনয় করা, আয়নার হৃদিকে বলা যে হয়তো সে হৃদির সাথে অভিনয় করছে এবং তাতে হৃদির চমকে যাওয়া।

ওহহো! আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্লঅ মনে পড়লো- সাবের এর কি আর কেউ নেই এ জগতে যাকে সে আয়নাকে ফলো করতে লাগিয়ে দিতে পারে? তার নিজেকেই লেগে থাকতে হবে কেন? যখন সে দেখতেই পাচ্ছে আয়না তাকে ফাঁকি দিচ্ছে?

আরে, ধুরোও সাবের!
*

সিনেমার শেষ এ্যাক্টটা এত আন্ডারওয়েলমিং! এত করুণ।

গার্ড লাভু কয়দিন আগেই নিজাম চৌধুরীরূপী আয়নার সাথে অত্যন্ত তাচ্ছিল্যভরে, তাকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে ‘তুমি’ করে কথা বলছিল, প্রায় ঝাড়ির উপরেই রেখেছিল বলা যায়। সে-ই কিভাবে যেন পরের বার তাকে নিজাম স্যার বলে কথা বলছে, সম্মানে গদগদ হয়ে উঠেছে।

কিভাবে কিভাবে যেন কি সব বিমূর্ত কথাবার্তা বলে সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কের লাভুকে কাবু করে ফেলে সেলে বন্দী নিজাম চৌধুরীরূপূী আয়না। লাভু ছিল চালু, ভাল মানুষ, হঠাৎ দু’কথায় হয়ে গেল মানসিক রোগী। করিডরে গার্ড আছে, মাথার উপরে সিসিটিভি। কিন্তু লাভু মিয়া বসে বসে আড্ডা দিয়েই যাচ্ছে দিয়েই যাচ্ছে আয়নার সাথে, আবার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে, দুজনে জামাকাপড় অদলবদল করছে, কিন্তু ত্রিসীমানায় কেউ নেই-

কেউ নেই। কেউ নেই। আহা! জেলখানা নয়। নন্দনকানন।

পরিচালক কি করতে চেয়েছিলেন ধারণা করতে পারি, কিন্তু এক্সেকিউশান হয়নি। করুণ হয়েছে। এই দুনিয়াটাই আমার মঞ্চ- সংলাপটা কোন প্রভাব রাখতে পারেনি, বরং করুণ, মেলোড্রামাটিক ঠেকেছে।

পুরো চিত্রনাট্যে এত এত এত ফুটো, প্রতি দৃশ্যে দৃশ্যে মনে প্রশ্ন জাগে। এটা কিভাবে হলো, ওটা কিভাবে হলো। এত এত অযৌক্তিক, কৃত্রিম ঘটনাক্রম। কেবল প্রশ্ন, প্রশ্ন, প্রশ্ন।

সাসপেনশান অফ ডিজবিলিফ? দর্শক হিশেবে আমরা আমাদের অবিশ্বাসকে একটু পাশে সরিয়ে রাখি, যা দেখানো হচ্ছে তা বিশ্বাস করার আন্তরিক ইচ্ছা পোষণ করি। ফ্যান্টাসি সিনেমা দেখি না? অবশ্যই। কিন্তু অবিশ্বাস পাশে সরিয়ে রাখা যায়- কাঁহাতক? কোন সীমা পর্যন্ত? কত কত উত্তরবিহীন প্রশ্নের পরও?

চিত্রনাট্যকার, পরিচালককেও তো সাহায্য করতে হবে দর্শককে! যাতে সে তার ডিজবিলিফ সাসপেন্ড করে রাখতে পারে। একেবারে গা ছেড়ে দিয়ে যা ইচ্ছে তা-ই দেখালে তো হবে না। নৌকা উল্টো দিকে বাইলে তো হবে না।

আয়নাবাজিতে পুশ করা হয়েছে চূড়ান্ত সীমান্তে। ঘটনা কোনটার পর কোনটা ঘটছে, কেন ঘটছে, কোন যুক্তিতে ঘটছে, তার কোন পরোয়া না করে আয়নাবাজি ছুটেছে তার আপাত চমকপ্রদ সমাপ্তির দিকে।

তা-ও সবই এড়িয়ে যাওয়া যেত, যদি গল্পটির বিশেষ কিছু এক্সপ্লোর করার, বলবার থাকতো। যদি গল্পটির বিশেষ একটা প্রাণ, একটা আত্মা থাকতো। যদি মনোযোগ দেয়ার মত “মানুষের গল্প” থাকতো। কিন্তু হায়, কার্ডবোর্ড কাটআউটের গল্প তো মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। তাই, সে দ্বারও বন্ধ। তাই, অসংগতিগুলো চোখের সামনে ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
*

আর আয়নার অভিনয়। কি এমন বিশেষ অভিনয় ছিল তা?

মাথায় পরচুলা পড়ে, গোঁফ লাগিয়ে, একটু ঝুঁকে, ক্রুর লাস্টফুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে হালকা করে জিহ্বা নাড়ানো আর মাঝে মাঝে কুঁচকিতে হাত দেয়া? এই-ই? আর মাথার চুল ট্রিম করে টি-শার্ট পড়ে অভিমানী-রাগান্বিত শিশুর আচরণ করা? আর পোস্টমাস্টারের চরিত্রে তো কোন অভিনয়ের প্রয়োজনই পড়েনি, মেইক-আপ, কস্টিউমেই হয়ে গেছে। নিজাম চৌধুরীর চরিত্রে স্রেফ একটু ধীরে কথা বলেছে, মুভমেন্ট করেছে, ঠোটটা ডানপাশে হালকা কুঁচকে রেখেছে। আর চুপচাপ থেকেছে। জেলখানার গার্ডের অভিনয় তো হাস্যকর, কেবল কুঁজো হয়ে ঝাঁকি দিয়ে হেঁটেছে।

এই-ই মহান অভিনয়? অভিনয়ের খেলা দেখানো? কাকে কতটুকু কৃতিত্ব দেব ভেবে পাই না! আয়নার অভিনয়কে নাকি তার মেক-আপের হাতকে!

হাহ্! চিত্রনাট্যটির প্রোডাকশান ভ্যালু এত করুণ রকম নিম্নমানের! আয়নার জব গুলোরও কোন দুর্ধর্ষতা নেই, একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে সাধারণ। আয়নার অভিনয়ের খেলাও চমকপ্রদ নয় একেবারেই।

আছে কি বাল, আয়নাবাজিতে?
*

আয়নাবাজির চিত্রনাট্যের সমস্যা নিয়ে আর আলোচনা এগোতে বিরক্ত লাগছে। ক্লান্ত লাগছে। যেটা পছন্দ করিনি, সেটা নিয়ে আলোচনা করাটা নিঃসন্দেহে ক্লান্তিকর।

আয়নাবাজি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক আবহে নির্মিত বলে এর কারিগরি দিক নিয়েও আলোচনার কিছু দেখি না। রাশেদ জামান যত সম্ভাবনাময় দক্ষ চিত্রগ্রাহকই হোন না কেন, তার কারিগরি অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিলে, আয়নাবাজিতে তার চিত্রগ্রহণ সাধারণের ঊর্ধ্বে কিছু নয়। তার কোন সুযোগও ছিল না। আয়নাবাজি ততটা সাহসী সিনেমা নয়। কারিগরি বৈশিষ্ট্যে আয়নাবাজি সম্পূর্ণ গতানুগতিক।

এতদূর আলোচনা করলাম মূলত, শুরুতে যেমনটা বলেছিলাম- আয়নাবাজি কিছু বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, উন্মোচন করেছে, তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই- তাই।

সেখানে যাই।
*

বিশেষ ভাবে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন যে বিষয়টিতে তা হলো- সামান্য শাইনি পিকচার দেখেই যাতে মাথা নষ্ট না হয়ে যায়।

মাথা নষ্ট কেন হয় বলি। অপ্রত্যাশিত নতুন মানের চমকের কারণে।

আমাদের ভাষা, আমাদের পরিচিত ধরণের মানুষ, পরিচিত পরিস্থিতি, পরিচিত পরিবেশ আমরা যেই কারিগরি মানের সাথে মিলিয়ে দেখে অভ্যস্ত,সেই তার থেকে কিছু বেশী হলেই আমাদের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ আমরা অনিবার্যভাবে পরিচিত ভাষা, মানুষ, পরিবেশের প্রতি পক্ষপাতী, যে কারণে আমাদেরকে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে অপরাধ-বোধে ভুগিয়ে হলে ঢোকানো যায় এখনও।

সেই পরিচিত পৃথিবী যখন আমরা অপ্রত্যাশিত নতুন মানে এক্সপেরিয়েন্স করি-

আমাদের। মাথা। নষ্ট। হয়ে। যায়।

যেমন, ‘জালালের গল্প’ সিনেমায় আমরা সম্ভাবনাময় তরুণ চিত্রগ্রাহক বরকত হোসেন পলাশের ক্যামেরার কাজে নতুন ধরণের দৃশ্যায়ন দেখেছিলাম, এশিয়ান সিনেমা ফান্ড এর পোস্ট প্রোডাকশান ফান্ডের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় এর ডিআই এর কাজ হয়েছিল কোরিয়ার কোন এক পোস্ট স্টুডিওতে। ফলে আমরা পর্দায় দেখেছিলাম নতুন, বিচিত্র, বিশেষ কালার প্যালেট- যা বাংলাদেশের সিনেমায় আগে দেখিনি, আশাও করিনি। চিরকুটের সঙ্গীতায়জনে পেয়েছিলাম নতুনের স্বাদ। মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বিচারবুদ্ধি লোপ পেয়েছিল আমাদের। অন্তঃসারশূন্য জালালের গল্প আমাদের কাছে অসাধারণ লেগেছিল।

আর এখন, অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ অসাধারণ ঠেকছে। প্রেডিক্টেব্‌ল। সোওও প্রেডিক্টেব্‌ল।

বিজ্ঞাপন কি দেখি না আমরা? গ্রামীণফোন রবি এয়ারটেলের? দেশের সবচেয়ে দক্ষ বিজ্ঞাপন নির্মাণ দল নির্মাণ করেছে যে সিনেমা, তা তো দেখতে সাধারণের চেয়ে উন্নত, পলিশ্‌ড হবেই! সিনেমাটির চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান, সম্পাদক ইকবাল কবির জোয়েল, শব্দ পরিকল্পক(!) রিপন নাথ- এরা সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দেশের সেরা। পুরো দলটি-ই প্রমাণিত পেশাদারদের। সাথে কোলকাতার নৈপথ্য সঙ্গীত রচয়িতা ইন্দ্রদীপ দাসগুপ্ত।

রাশেদ জামানের রেড এপিকে সিক্সকে রঅ তে ক্যাপচার করা দৃশ্যাবলী দেখে আর ইন্দ্রদীপ দাসগুপ্তের স্কোর (যা অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে, অস্বীকার করবো না) শুনে, যা হবার তা-ই হলো আমাদের।

মাথা নষ্ট হয়ে গেল।

আমরা মস্তিষ্ক খুলে জামার বুক পকেটে আর হাতব্যাগে-এ রেখে দিলাম। তারপর দেখলাম।

ভাবলাম না যে, সিনেমা তো মামার বাড়ীর আবদার নয়। সিনেমা তো জড়িত কারিগরি ব্যক্তিদের শোরিলের জন্য নির্মিত নয়, যে, তারা যোগ্যতার প্রদর্শনী করতে পারলেই কাজ হয়ে গেল। সিনেমায় একটা গল্প বলা হয়। গল্পের কঙ্কাল নয়। মানুষের গল্প বলা হয়। কার্ডবোর্ড কাটআউটের নয়।

লক্ষ্য করলাম না যে- কি গল্প বলা হলো? কার গল্প? মানুষগুলো কে? জানতে পেরেছি কি?
*

কিন্তু-

অসুবিধা কি? শাইনি পিক্‌চারই দেখলাম। গল্প ঘুরেফিরে চলুক না ওই। এতদিন শাকিব খানেরা চালাল কিছু কার্ডবোর্ড কাটআউট চরিত্রের গল্পের কঙ্কাল। এখন ইনারা চালাক একধরণের আপডেইটেড পলিশ্‌ড ভার্শান। বাণিজ্যিক সিনেমা ২.০।

অসুবিধা কি?

অসুবিধা হচ্ছে, দুই পক্ষের জন্যই, এটাই নর্ম্‌ হয়ে যাবে।

নির্মাতাদের জন্য, এই ‘এতটুকু’ই আরাধ্য হয়ে যাবে। তারা এমনিতেই বেশ আলসে। তারা বহু বহু বছর ধরে প্রস্তুতিতে থাকেন, কিন্তু শেষে এসে দেখা যায় তাদের কোন প্রস্তুতিই নেই। সিনেমার জন্য যে দুর্ধর্ষ জ্ঞানের প্রয়োজন, আই রিপিট- ‘জ্ঞান’ এর প্রয়োজন, চর্চার প্রয়োজন, কঠোর শ্রমের প্রয়োজন- তা থেকে তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন। কারণ, কষ্ট তো!

তাদের জন্য ‘আয়নাবাজি’র মত কাজ সহজে অর্জনযোগ্য মানদণ্ড হয়ে যাবে। তারা মনে করবেন এতটুকু করলেই বাহবা!

অমিতাভ রেজা দেশের সেরা নির্মাতাদের একজন। তিনি এবং স্তুতি গাওয়া দর্শকই যে নতুন মানদণ্ড দাঁড় করাবে, এটাই স্বাভাবিক।

আবার, দর্শকদের জন্যেও এই মান নর্ম্‌ হয়ে উঠবে।

দর্শকেরা উন্নত গল্প দেখলে মানসিকভাবে উন্নত দর্শক হয়ে উঠতেন। আরও জটিল নুআন্সড গল্পের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে পারতেন। বাংলাদেশে বিচিত্র গল্প গ্রহণ করার মত দর্শকশ্রেণীর, ধীরে হলেও, জন্ম হতো। কিন্তু সেই একই স্টেরিওটিপিকাল গল্প তাদেরকে তাদের কম্ফোর্ট জোনে থাকতে সাহায্য করবে, এমনকি তাদেরকে মানসিকভাবে অলস, নিষ্ক্রিয়ও করতে থাকবে। তারা গতানুগতিকের ঊর্ধ্বে কোন গল্প আর গ্রহণ করতে পারবেন না।

অর্থাৎ, সবমিলিয়ে, যেই লাউ সেই কদু- কন্টিনিউজ।

তাই, এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, অমিতাভ রেজার সিনেমা, একেবারে পিউরলি ড্রামাটিক কিংবা আর্টহাউজ না হোক, অন্তত ‘বাণিজ্যিক সিনেমা ২.০’ থেকে বেশী কিছু হোক। জরুরি ছিল যে, মানদণ্ডটি মানসম্পন্ন হোক।

হলো না।
*

সবাই অল্পতেই বলে ফেলে, একটা সিনেমা বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দেবে। নতুন যুগ, স্বর্ণ যুগ- এইসব শব্দ শোনা যায়। এটা খুবই হাস্যকর।

একটা সিনেমা, গুটিকয়েক সিনেমা, একটা ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলাতে পারে না। আর এই মানের, এরকম দুর্বল সিনেমা তো না-ই।

নির্মাতাগোষ্ঠী আবার দর্শকদেরকে দায়ী করেন। দর্শকরা হলে যায় না, নিজেদের সিনেমা দেখে না, ইউটিউবে দেখে। তারা দেশপ্রেমিক না। নিজেদের সিনেমার জন্য তাদের মনে কোন ভালবাসা নেই। তারা বারবার দর্শককে হলে যেতে বলেন কেবল মাত্র এক যুক্তিতে যে, সিনেমাগুলো তাদের দেশী সিনেমা। সমালোচনা করতে মানা করেন, ভাল লাগুক আর না-ই লাগুক সাথে থাকতে বলেন। কারণ দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নাকি বাঁচাতে হবে!

আশ্চর্য!

অন্য কোন ইন্ডাস্ট্রি যদি এই দাবী করে? যে তাদের দেশী মেইড ইনফেরিওর প্রোডাক্টের সাথে থাকতে, কোন ভাবনা-সমালোচনায় না যেতে, ব্রেইন অফ, কারণ এটাই দেশপ্রেমিক হিশেবে দায়িত্ব, নচেৎ আপনি দেশদ্রোহী- কেমন শোনাত? কতটা আউটরেইজাস শোনাত?

আমরা তাহলে যতটা সম্ভব সব দেশী প্রোডাক্ট ব্যাবহার করি? বিদেশী প্রোডাক্ট বর্জন করি? আমরা বিদেশী সাহিত্য বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ দেশী সাহিত্য, তা যত নিম্ন মানেরই হোক না কেন, পড়তে থাকি? ইত্যাদি ইত্যাদি?

না।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানো নির্মাতাগোষ্ঠী কিংবা দর্শকগোষ্ঠী কারও হাতেই নেই। নির্মাতাগোষ্ঠীও হল নির্মাণ করতে পারবে না, দর্শকগোষ্ঠীও হলের পরিবেশ সুস্থ করতে পারবে না।

এছাড়াও, দর্শকগোষ্ঠীর স্বাধীনতা আছে নিজের পছন্দমত সিনেমা দেখার। এবং দেশের সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার। কারণ দেশের নির্মাতারা ধোঁকার পর ধোঁকা দিয়েই চলেছেন।

তারা নাম-কা-ওয়াস্তে কোনওরকমে একটা গল্প খাড়া করে “আমাদের গল্প” বলে চালিয়ে দিতে চান, কেবল কারিগরি চমকের সহায়তায়। কারিগরি চমকই যদি কেবল দেখার হয়, ঢের উন্নত মানের, হলিউড-বলিউড তো আছেই।

তারা মনে করেন, অন্তত একবার করে কোনভাবে হলে ঢুকাতে পারলেই তো হল! যারা দর্শককে বলছেন তাদের সিনেমা দেখতে হলে এসে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর জন্য, তারাও জানেন ইন্ডাস্ট্রি এইভাবে বাঁচবে না, সেটা ভিন্ন রাস্তা। তারা কেবল তাদের লাভটা চান আপাতত।

তাদের অস্ত্র- দর্শককে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে অপরাধ-বোধে ভোগানো।

দুঃখজনক।
*

নির্মাতারা পারলে আন্তর্জাতিক মানের গল্পের, শার্প চিত্রনাট্যের সিনেমা বানাক। মানুষের গল্পের সিনেমা। যেটার সাথে মানুষমাত্রই রিলেইট করতে পারবে, সে যে দেশেরই মানুষ হোক না কেন।

পারলে সে মানের সিনেমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক উৎসবে যোগ দিক। পারলে ডিস্ট্রিবিউশান রাইটস বেঁচে ডলার আয় করুক। ডলার তো টাকায় আনলে ম্যালা। পারলে ইয়্যুরোপে, নর্থ এ্যামেরিকায় থিয়েট্রিক্যাল রিলিজ দিক। সেখান থেকে ডলার কামিয়ে দেশে নিয়ে আসুক। তা ব্যাবহার করে আরও উন্নত মানের সিনেমা বানাক। বিদেশি প্রযোজকদের নিয়ে আসুক। চলতে থাকুক।

এই যে ভারতের রিতেশ বাতরার “লাঞ্চবক্স”, এইরকম একটা গল্প নির্মাণ করতে কি লাগে? শিক্ষা লাগে, রুচি লাগে, জীবনবোধ লাগে . . . কি কি লাগে তার আলোচনা আগে বহু লেখায় করেছি। এখন ক্লান্ত লাগে। একই চক্রে ঘুরতে আর কত ভাল লাগে?

রিতেশ বাতরা বলাতে মনে পড়লো- তিনি তো এখন একেবারে আন্তর্জাতিক পরিচালক। নেটফ্লিক্সের প্রোডাকশানে সিনেমা বানাচ্ছেন।

অমিতাভ রেজার এই আয়নাবাজি আবর্জনার কারণে আমি একটু বেশীই হতাশ, কারণ আমার কেন জানি মনে হয়েছিল অমিতাভ রেজা আমাদের ‘রিতেশ বাতরা’ হবেন। তিনি আমাদের ‘লাঞ্চবক্স’ বানাবেন। তিনি আমাদের আন্তর্জাতিক পরিচালক হয়ে উঠবেন।

খুব স্পষ্ট কারণে নয়, অনেক পুরনো ভাবনার প্রভাবেই, তাকে অনেক শিক্ষিত, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলে জানতাম। সেই পুরনো ভাবনা আর আপডেইট করা হয়নি। রয়ে গেছে। আমারই ব্যর্থতা। ফল ভোগ করছি।

এখন নিজের কাছেই বিব্রত লাগে! কি বালছাল ভেবেছিলাম!

ওহহো! একটা কারণ মনে পড়ছে। বহু আগে একবার রাশেদ জামান সম্পর্কে তার একটা লেখা পড়েছিলাম প্রথম আলোতে, সেখানে উল্লেখ করেছিলেন যে ইনারিতু তার খুব প্রিয় পরিচালক এবং আমোরেজ পেরোজ প্রিয় একটা সিনেমা।

কিন্তু ব্যাখ্যা তো করেননি যে, কেন প্রিয়! হুম! এরকম অনেকেই তো অনেক কিছু বলে, যে এই মহৎ সিনেমা বা এই মহৎ সাহিত্য আমার প্রিয়। অনেকে মহৎ শিল্পের মহত্ব ধার নেয়। হাতে জয়েসের ইয়্যুলেসিস নিয়ে ঘোরে, কিন্তু এক পাতাও পড়ে না। যাই হোক।

এমনকি গত বছর আয়নাবাজির শুটিংয়ের সময় না কখন জানি, পত্রিকায় পড়েছিলাম, তিনি বলছেন, সিনেমাটা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক উৎসব, বিশেষ করে কান এ পাঠানোর তার খুব ইচ্ছা।

আমার মনে হয়েছিল, কে জানে! দেখা যাক।

তারপর তো ধীরে ধীরে তার প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হলো। ছেলেমানুষের মত কান এর ফিল্ম মার্কেটে গেলেন। কি তামাশা করে আসলেন কে জানে। এরপর ইউএসএ তে কোন বালছাল সিয়াট্‌ল সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল এ যাচ্ছেন। সাচ্ রাবিশ।

এখন নিজের কাছেই বিব্রত লাগে!

আর সিনেমার প্রচারণা তো যা দেখালেন। গণমানুষের জন্য বানানো সিনেমা, গণমানুষের কাছে তার বার্তা পৌঁছানোরই কোন চেষ্টা নেই। শেষ মুহূর্তে কোন মতে সারলেন, ফেইসবুকে, নিজস্ব বাব্‌লের সাম্রাজ্যে।

এখন নিজেদের বুদবুদের ভেতরেই আছেন। ভাবছেন মানুষ জয়জয়কার করছে আয়নাবাজির। কোন মানুষ? কত মানুষ? ষোল কোটির দেশের কত মানুষ? মধ্যবিত্ত নাকি হলে ফিরছে! কোন মধ্যবিত্ত?

যাক! সে আর বলে কি হবে। এদেশে না সিনেমাস্কোর আছে না বক্সঅফিসমোজো আছে। প্রযোজক, পরিচালক, তাদের কমিউনিটি আর পিআর টিমের পুশ করা পত্রিকার প্রতিবেদন বললেই সিনেমা ‘সুপারহিট’!

সিনেমা তো দেখলামই। হায়! সিনেমার সাথে জড়িত প্রধানেরা নাকি একেকজন দশ, পনের বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। হায়! অভিজ্ঞতা!

এরকম সিনেমা, এত ছোট ব্যাপ্তির, এত সীমাবদ্ধ, এত ক্ষীণ, করুণ- এগুলো নিয়ে তো দেশের বাইরে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। এগুলো এত লোকাল। লোকালেরও লোকাল। অর্থহীন।
সিনেমা এইরকম হলে কি লাভ? স্রেফ শাইনি, চিকচিকে? সেটা তো কোন অর্জন নয়।

অতীতের সিনেমার সাথে কি কেবল এই-ই পার্থক্য হবে, যে কারিগরি ভাবে উন্নত? মানুষের গল্প কি আসবে না কোনদিন?

এভাবে অতীত সামান্য বদলাবে কেবল, ভবিষ্যৎ একেবারেই বদলাবে না।
*

সিনেমা দেরীতে

পুনশ্চ ১:

লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেছে। এর মধ্যেও অনেক কিছু বলা হয়নি, ব্যাখ্যা করা হয়নি, স্কিপ করে গেছি। মনে কোন প্রশ্ন জাগলে, কোন কিছু যোগ করতে চাইলে, কোন কিছুর প্রতিবাদ করতে চাইলে- অনুরোধ করবো একটা মন্তব্য রেখে যেতে। মন্তব্যের সেকশানে আলোচনা চলুক। পেইজের একেবারে নিচে ফেইসবুক থেকে মন্তব্য করার ব্যবস্থা আছে, সুবিধার জন্য সেটা ব্যাবহার করতে পারেন।

পুনশ্চ ২:

হায়! হঠাৎ মনে হলো! হুমায়ুন আহমেদ যদি এই গল্প পেতেন- ওয়েল, এট লিইস্ট দ্যা ওল্ড হুমায়ুন- কি চমৎকার ভাবে এতে মানুষের, শহরের গল্প জুড়ে দিতেন। কি দুর্ধর্ষরকম নুআন্সড্‌ একটা সিনেমা হতো।


মন্তব্য

Lutfor এর ছবি

এই সিনেমা দেখার সুযোগ আপাতত নাই। আপনার হুশিয়ারী পর্যন্ত পড়লাম। তবে আপনার আগের কয়েকটা লেখা পড়েছি।

আপনার কাছে আমার জিজ্ঞাসা:

১. বাংলাদেশের কোন সিনেমাটা দেথে আপনি শান্তি পাইছেন?

২. আপনি নিজে সিনেমা বানাতে বসলে চিত্রনাট‍্যের বেসিস হিসাবে কোন কোন রাইটারের কোন কোন গল্পকে অগ্রাধিকার দিতেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

কোন সিনেমা দেখে শান্তি পেয়েছি . . . ওয়েল, এইভাবে বলি, ঠিক এই মুহূর্তে আমার মাথায় কেবলমাত্র একটা সিনেমার নাম আছে যেটা আমি বেশ ক'বছর আগে একবার দেখেছি, খুবই চমৎকার লেগেছিল এবং আবার দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছি- জহির রায়হান এর "কাঁচের দেয়াল"

অনেক-ই পুরোনো বাংলাদেশী সিনেমা আছে যেগুলো চমৎকার হতে পারে, কিন্তু আমার দেখা হয়নি এবং সুযোগও করতে পারছি না। আমি আসলে সারা বছর বিশ্ব-চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকি, নতুন-পুরোনো মিলিয়ে দেখার এত সিনেমা থাকে, আবার এক সিনেমা একাধিকবার করে দেখি, সিনেমা নির্মাণপ্রক্রিয়া, সিনেমার বাণিজ্য, সিনেমার সামগ্রিক প্রসেসটা নিয়েই পড়াশোনায় মেতে থাকি।

কোন কোন রাইটারের কোন কোন গল্পকে অগ্রাধিকার দিতাম? ব্যাক্তিগত কারণে সুনির্দিষ্ট নাম নিচ্ছি না, কিন্তু এটা বলি-

এ্যাডাপ্টেশান তো ইন্টারপ্রেটেশান, তাই না? একটা গল্পকে নিজের ভাবনার চোখে দেখে এর চিত্রায়ণ করা . . .

গল্প (মানে ঘটনা, প্লট) আসলে বিষয় না। বাংলাদেশের এমন অনেক অনেক ভুরি ভুরি সাহিত্য আছে যেগুলোর ঘটনা/প্লট যে মানেরই হোক, সেগুলোকে সঠিক মানসিক এ্যাটিচ্যুডে এ্যাডাপ্ট করলে নিঃসন্দেহে চমৎকার সিনেমা হবে।

কিই ওয়ার্ডটাই হচ্ছে “এ্যাডাপ্ট”। আপনি একটা গল্পের কাঠামো, মানে স্রেফ ঘটনাটা, প্লটটা নিয়ে তার উপরে আপনার দর্শন আরোপ করলেন। আপনি ঘটনায় প্রয়োজনমত অদলবদল করলেন, ফাইনটিউন করলেন, চরিত্রগুলোর মুখে প্রয়োজনমাফিক সংলাপ জুড়ে দিলেন, প্রয়োজনমাফিক বাদ দিলেন। এখানে এই যে “প্রয়োজন” টা- এটাই জরুরি।

আপনার কি প্রয়োজন? আপনি কি এক্সপ্লোর করতে চান? কি আলোচনা করতে চান? কি প্রকাশ করতে চান?

এই ব্যাপারে আপনার সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকলে, সাধারণ গল্পকেও অসাধারণ আত্মাসমৃদ্ধ করে তোলা সম্ভব।

আই হোপ আই মেইড সাম সেন্স! হাসি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
*

সিনেমা দেরীতে

Sobuj এর ছবি

গঠন মূলক সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ দিতে হয়। তবে এটা অবশ্যই মানতে হবে পরিচালক নতুন কিছু দেবার চেষ্টা করেছেন এবং এর জন্য তিনি প্রশংসার দাবীদার। আমরা সামনে আর ভাল কিছু পাব এটাই প্রত্যাসা।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

পরিচালকের নতুন কিছু দেবার চেষ্টা কতটা আন্তরিক ছিল, নতুন কিছু কি দিতে পেরেছেন কিনা- সেটাই আলোচনা করার চেষ্টা করেছিলাম।

আপনাকেও চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হাসি
*

সিনেমা দেরীতে

bashabi এর ছবি

ডায়েরি অফ আ উইম্পি কিড সিনেমার একটি দৃশ্য মনে পড়ছে।. সেখানে সিনেমার মূল চরিত্র যে বাচ্চাটা তাকে তার বড় ভাই বুদ্ধি দে কিভাবে আস্তে আস্তে বাবা মায়ের এক্সপেকটেশন লেভেল কে নিচে নামিয়ে আনতে হয়. সেই বুদ্ধি অনুযায়ী বাচ্চা ক্লাস টেস্ট এর রেজাল্ট নিয়ে এসে বাবা মা কে বলে টেস্ট এত্ত কঠিন ছিল যে পাস্ করার কোনো উপায় ই নাই.. But I managed to get C . বাপ্ মা হাপ্ ছেড়ে বাঁচে। রেজাল্ট খারাপ তো কি বাচ্চা ফেল তো করে নাই...

বাংলাদেশ এর সিনেমা দর্শকদের অবস্থা ওই বাচ্চার বাপ্ মা এর মতো... যাদের বাংলাদেশি সিনেমা নিয়ে এক্সপেকটেশন এর লেভেল নামতে নামতে এখন শুন্যের কোঠায়। ভাই বেরাদর রা খুব দক্ষতার সাথে সেটিকে শুণ্যের নামিয়ে আনতে সফল হয়েছে। যাতে তারা যতবার অশ্ব ডিম্ব ই বানাক সেটা কিছু প্রশংসা অর্জন করে.

অমিতাভ রেজা র সিনেমা নিয়ে এক্সপেক্টশন থাকা র কোনো কারণ দেখি না... আফটার অল ভাই বেরাদর গ্রুপ এর ই তো লোকজন। এদের কাজ ই হলো ৫ মিনিটের ঘটনা কে চুইংগাম এর মতো টানতে টানতে ৫০ মিনিটের এর বানানো।

আর সাকিব খান বা অনন্ত জলিল এদের তুলনায় অনেক বেটার অপসন বলে মনে করি । অন্তত তারা কোনো আঁতলামি র হিপোক্রেসি করে না.

আপনার লেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আগের লেখা গুলোর তুলনায় সমালোচনার সুর অনেক নরম লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলেই। আমাদের প্রত্যাশার পারদ এত নিচে নেমেছে যে সামান্য চড়ে গেলেই আমরা "বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা সিনেমা", "বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ" ইত্যাদি শব্দ ছোঁড়া শুরু করি। চুইংগাম টানাটানি কবে যে থামবে, গভীর হতাশার সাথে ভাবি।

"সমালোচনার সুর অনেক নরম" হবার কারণ আদতে ব্যাক্তিগত ক্লান্তি। হোপ টু রিকাভার সুন। হাসি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
*

সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

সিনেমা দেরীতে হোক, না হয় Cinéma vérité হোক, হোক তবু সিনেমা নিয়ে লেখা বিভিন্ন আঙ্গিকে।

ভালো লাগলো লেখা।

পরিবর্তন আশাকরি হবে। প্রতিকূল সময়ে, প্রতিযোগিতামূলক সময়েও তো আমাদের সিনেমা 'জীবন থেকে নেয়া' হয়েছে।

সিনেমা নিয়ে লেখালেখির চর্চাটাও জরুরী। Cahiers du Cinémaর মতো পত্রিকাগুলোর অনন্য ভূমিকার কথা মাথায় রাখতে পারেন আমাদের নির্মাতারা। নিজেরাও তাঁরা এগিয়ে আসতে পারেন সিনেমাকে, আমাদের মতো সিনে দর্শকদের সমৃদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে।

শুভকামনা থাকছে। অনেক।

দীপংকর চন্দ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

আপনার কথা সত্য, প্রতিকূল সময়েও তো আমাদের সিনেমা 'জীবন থেকে নেয়া' হয়েছে। আমার মনে হয়, এখন আদতে সেই তুলনায় কোন প্রতিকূলতাই নেই, বরং ভয়াবহ অনুকূল। এখন "আরাম" এর সময়, তাই কেমন এক কল্পনার জগতের সিনেমা নির্মিত হচ্ছে কেবল, জীবন থেকে নেয়া নয়।

কাইয়ে দু সিনেমা থেকে আমরা আলোকবর্ষ দূরে আছি বলে বোধ করি। তবে আপনার কথা সত্য, জরুরি। তবে এটাও সত্য, নির্মাতারা কেবল সংক্ষেপে অসাধারণ, সেরা ইত্যাদি শুনতে চান, ব্যাখ্যা-লেখা-টেখা তাদের বিশেষ পছন্দ নয়।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। হাসি
*

সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

মুভিটা এখনও দেখা হয় নাই এবং দেখার ইচ্ছে আছে। তাই আপাতত কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
*

সিনেমা দেরীতে

KiHonu এর ছবি

আপনি সিনেমা দেখসেন সমালোচনা করার জন্যে। উপভোগ করার সদিচ্ছার অভাব ছিল।
লাঞ্চবস্ক-এ কি বাল(আপনার ভাষায়) পাইসেন বুঝলাম না। সেই লাঞ্চবক্স বদল হয়ে প্রেম। ঘরে আটকা নারী, একলা হর্নি পুরুষ সবি ত মিনা-রাজু জানে!
কমেন্টে লিখসেন মানুষের এক্সপেক্টেশন কমে গেসে তাই লাফাইতেসে, জ্বি না ভাই। মানুষ সিনেমা দেখতে হলে গিয়ে উপভোগ করসে।

শুনেন, আমার যত বন্ধু-বান্ধব গিয়ে ছবিটা দেখসে, তাদের ভাল লাগসে। আমি (নিজের পরে) আমার ১০ টা বন্ধুর অপিনিয়ন এ বিশ্বাস রাখি। ভুদাই রিভিউ-এ না। আপনার মরাকান্না রিভিউ ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে কোন ভুমিকা রাখবেনা। কিন্তু ১০ জন মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে উপভোগ যে করেতেসে তাতে মুভি ইন্ডাস্ট্রি, সিনেমা হল মালিক, প্রযোজক সবাই উপক্রিত হবে, সাহস পাবে।

আপনি কাদেন, লাঞ্চবক্স দেখেন। মেজাজ খারাপ হচ্ছে, আপনি সচল প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। তাতে অবশ্য একটা দর্শক ও কম্বেনা।
শেষকথা, আপনি দেশি ছবি দেখা বাদ দেন। আপনার অনেক টাইম নষ্ট হয়। মায়া হচ্ছে, আবার কাদবেন পরে। বানান ভুল ধরিয়েন না, ধৈর্‍্য নাই আপনাকে শুদ্ধ করে লেখার।

KiHonu এর ছবি

আপনার পুরানো অনেক রিভিউতে কমেন্ট করিনি, যুক্তিও ছিল বেশ। এইটা যদি 'লাল্টিপ' জাতীয় সিনেমার রিভিউ হত, তাহলে আমিও একমত। কিন্তু আজকের লেখাটা পড়ে মনে হলো, আপনি আসলে নিজের উপর একটু আলো চান। অথবা, অন্য ব্যাপার আছে। আপনি যদি এম্নে রিভিউর নামে গল্প বলে দেন, বিদ্বেষ (রিভিউ এর ভাষা থেকে মনে হল) ছড়িয়ে ছবি দেখার আগেই মানুষকে নিরুতসাহিত করেন, তাহলে হয়ত আপনার অন্য এজেন্ডাও থাকতে পারে। হতে পারে, আপনি লাঞ্চবক্স বাবুদের থেকে লাঞ্চ খাওয়া এজেন্ট। এপাড়ের বাংলা ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি ঠেকাইতে ভাড়া করা হইসে।

ভাল সিনেমা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি আস্তে হলেও আগানোর একটা ট্রাই করতেসে। জালালের গল্প, আয়নাবাজী দর্শক দেখছে, এটা অনেক পজিটিভ ব্যাপার। আপনার সব নেগেটিভিটি নিয়ে আপনি দেশী ছবি দেখা বন্ধ করেন। আপনি এত আশা করে বাংলা ছবি দেখার দরকার নাই, মনে কষ্ট পাবার ও দরকার নাই। আগেই বলে দিলাম, আপ্নার সুরুচি তৃপ্ত করা সিনেমা দেশে হবেনা। নিজে বাচুন, অন্যকে বাঁচান।
লাঞ্চবক্স দেখেন, অগুলা নিয়ে লেখেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

হতে পারে, আপনি লাঞ্চবক্স বাবুদের থেকে লাঞ্চ খাওয়া এজেন্ট। এপাড়ের বাংলা ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি ঠেকাইতে ভাড়া করা হইসে।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

হাততালি
*

সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি আমাকে নিয়ে এত কথা না বলে, সিনেমাটা আপনার কেন ভাল লেগেছে তা বললেই কি উত্তরটা আরও যথার্থ হত না?

লাঞ্চবক্সের গল্প আমারও বিশেষ পছন্দের না, কিন্তু এর স্মার্ট ডিরেকশান, কসমোপলিটান এক্সেকিউশান, এ্যামবিশান আমি খুবই এ্যাপ্রিশিয়েইট করি। যেটার বিপরীতে আয়নাবাজির বা বাংলাদেশের সিনেমার ডিরেকশান, এক্সেকিউশান খুবই লাউজি হয়, এ্যামবিশান তো থাকেই না কোন।

লাঞ্চবক্স ঘরে আটকা নারী আর একলা হর্নি পুরুষের গল্প? আপনি কি লাঞ্চবক্স আদৌ দেখেছেন? কোন অংশে, আপনার মনে হয়েছে, ইরফান খানকে হর্নি পুরুষ ইম্‌প্লাই করা হয়েছে, বা এমন টোন ছিল?

বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বদলে দেয়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য আপনাদের ১১ জনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা
*

সিনেমা দেরীতে

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বাংলাদেশের সিনেমা কেউ ুদে না। অদূর ভবিষ্যতেও সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

সেরেছে! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আপনার সোজাসাপ্টা মন্তব্যে খুব মজা পেলাম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আপনার কথাটা সঠিক।
*

সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আয়নাবাজি এখনো দেখা হয়নি। তবে চারপাশে এত বেশি আবেগী কথাবার্তা দেখার পর ... "সর্বকালের সেরা বাংলা সিনেমার তালিকায় অনায়াসে স্থান পাবে", "সৃজিতের সিনেমা থেকে আয়নাবাজি ফার ফার বেটার", "লাঞ্চবক্স বাল থেকে আয়নাবাজি বেটার", "আইএমডিবি রেটিং ৯.৯" ... একটা বিরক্তিভাব চলে এসেছে। এত উচ্ছ্বাস! এত উচ্ছ্বাস! আমি নিজে সৃজিতের হার্ডকোর ফ্যান নই এবং অমিতাভকে নিয়ে নিজস্ব একটা এক্সপেক্টেশান আমারও আছে। কিন্তু জালালের গল্পের ঘটনার পর বুঝে গেছি দেশি ভক্তদের মতিগতি। এ কথা একজনকে জানানোয় (যে কিনা প্রথমদিনেই দুইবার আয়নাবাজি দেখে এসেছে) সে বলল, "সবসময় পাকনামি ভাল্লাগে না ... পণ্ডিতেরা কম কথা কবে ... সুশীলগিরি বিরক্তিকর!" ওয়াও! অ্যাঁ

আপনার রিভিউ পড়ে একটা ব্যাপার মনে হল। অমিতাভকে আপনি হৃতেশ বাত্রার সমপর্যায়ের পরিচালক ভেবেছিলেন বলেই হয়ত হতাশা বেশি জেঁকে বসেছে। এস. শঙ্কর পর্যায়ের ভাবলে তা আসত না। কিছু স্মার্ট আইডিয়ার খোলসে সেই গতানুগতিক জিনিস। ফলে ছবি ব্যবসাসফলও হল। "আমাদের গল্প", "আমার গল্প"ও বলা হল। শঙ্করই ভাল তবে!

আর প্রথম কমেন্টের সূত্র ধরে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে। বাংলাদেশের একচুয়েল সিনেমা আসলে ঠিক কেমন ধারার হওয়া উচিৎ? উপমহাদেশের ধারা অনুযায়ী বাণিজ্যিক সিনেমা থাকবে জানি। কিন্তু যেটা দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবে, তেমন সিনেমা কেমন হওয়া উচিৎ? বিংশ শতাব্দী বাদ দেন। এই ষোল বছরে এমন কোন সিনেমা চোখে পড়েছে?

শেষ কথা। 'অজ্ঞাতনামা' কেমন লাগল? দেঁতো হাসি

☼ মানুষিক সৈনিক ☼

অতিথি লেখক এর ছবি

রিতেশ বাতরার কেবল উদাহরণ টানলাম। আমি আসলে বোঝাতে চাইছিলাম যে, আমার আশা ছিল অমিতাভ রেজা আমাদের কসমোপলিটান মেজাজের পরিচালক হবেন। রিতেশ বাতরার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার কাছে লেগেছে, তার লেখা লাঞ্চবক্সের চিত্রনাট্যের ডিজাইন, সংলাপের ইংরেজি-হিন্দির কোরিওগ্রাফি, শটের আন্তর্জাতিক মেজাজ ইত্যাদি। তিনি সম্পূর্ণ সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণের সহিত আন্তর্জাতিক দর্শকের জন্য করে নির্মাণ করেছেন। তার ফলও পেয়েছেন, পাচ্ছেন।

আমি চৈতন্য তামানে, আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত কিংবা কৌশিক মুখার্জিরও নাম নিতে পারতাম। আমি কিন্তু এদের কোন সিনেমার “মান” বিচার করছি না, লাঞ্চবক্স কিংবা কোর্ট কোনটাই আমার কাছে অসাধারণ ঠেকেনি, আমি স্রেফ এদের মানসিক এ্যাটিচ্যুড এর কথা বলছি।

আমাদের পরিচালকেরা মানসিকভাবে এত ভয়াবহ লোকাল, ইট ফ্রাসট্রেইটস মি সো মাচ!

আশাভঙ্গের বিষয়টা আসলে স্রেফ ব্যক্তিগত একটা ভাবনার প্রকাশ। সেটা পাশে সরিয়ে রাখলেও, আয়নাবাজি এবসোলুটলি এ্যমেচারীশ কিন্তু। আপনি বাণিজ্যিক ছবি বানান, সেটা যে কাঁচা ভাবে বানাতে হবে কে বলেছে, বাণিজ্যিক ছবি কি স্মার্ট হয় না?

তিনি তার সামর্থ্যের সবটুকুই আসলে দিয়েছেন। এটুকুই তার সামর্থ্য।
*

বাংলাদেশের এ্যকচুয়েল সিনেমা –

দেখেন, এই যে “আমাদের গল্প”, এই একটা ক্যাচি প্রমোশানাল ফ্রেইজ সবাই দেদারসে ব্যাবহার করছে- আমরা টা আদতে কারা? আমি আগেও বলেছিলাম, আমরা বলে তো সুনির্দিষ্ট কিছু নেই, কত মতের, কত আদর্শের, জীবনাচরণের, কত রকমের, ভিন্ন ভিন্ন জেনারেশানের, ভিন্ন ভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থার মানুষজন- আই মিন, কত ভ্যারিয়েবল্‌স!

আমার কথা হচ্ছে সোজা,

আমাদের পারিপার্শ্বিক জীবন এবং বাস্তবতাকে যত্নের সাথে, আন্তরিকতার সাথে বিস্তারিত ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এবং

চিত্রনাট্য রচনার সময়, নির্মাণের সময় তা সচেতনভাবে বিবেচনায় রাখলে,

যে কোন ধরণের গল্প, তা যত গতানুগতিক, বাণিজ্যিকই হোক, আবার যত বিমূর্তরকম শৈল্পিকই হোক- যা-ই হোক

সেটা স্বাভাবিকভাবেই, “অনিবার্যভাবেই” বাংলাদেশের সিনেমা হয়ে উঠবে। দেয়ার ইজ নো ওয়ে এ্যরাউন্ড ইট!

আর তার সাথে যদি কসমোপলিটান আবহ জুড়ে দেন, গল্পের ডিজাইন, নির্মাণ যদি এমন হয় যে, হোয়েন অল ইজ সেইড এ্যন্ড আন, বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষই, দেখতে পাবে একটা মানবিক গল্প- দ্যাট্‌স ইট!

কোন সিনেমা চোখে পড়েনি।
*

অজ্ঞাতনামা সুনির্মিত, বেশ, বেশ সুনির্মিত। আয়নাবাজির মত কারিগরি সাপোর্ট পেলে মান বহুগুণে বেড়ে যেত। সিনেমাটি ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে নির্মাণ করা, সেজন্য বলছি।

ডিটেইলের দিকে বেশ ভাল নজর ছিল। তৌকির বেশ সাহসও দেখিয়েছেন।

সমস্যা করেছে সেই-ই- চিত্রনাট্য।

ডকুমেন্টারির বিষয় নিয়ে জোর করে ফিকশান বানাতে গেছেন। তা-ও হতো, যদি সামগ্রিকভাবে কি এক্সপ্লোর করতে চাইছেন তার ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকতো। তিনি বোধ করি স্রেফ দুঃখ দেখিয়ে যেতে চেয়েছেন এবং জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে চেয়েছেন তার কাজের মাধ্যমে। ওই যে বললাম, ডকুমেন্টারির ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফিকশান। এটা বিবিসি মিডিয়া এ্যকশানের ধারাবাহিক সিরিজ হিশেবেই বেশী যেত।

দুঃখের মাঝে কেবলমাত্র হাস্যরসের জন্য রিডানডেন্ট একটা সাবপ্লট রেখে দিয়েছেন। মোশাররফ করিমের কাজ হলো হাসানো। এই হাস্যরসই বাংলা সিনেমাকে খেয়ে দিবে! সিনেমা যেন আগাগোড়া সিরিয়াস হতেই পারে না! এছাড়াও, হিউমার কি সাট্‌ল হতে পারে না? যাই হোক।

যা কিছু তা-ও ভাল ছিল, শেষে এক সংলাপে ভয়াবহ আঁতলামী করে পুরো মুডটাই খারাপ করে দিয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, ওই-ই, লোকালই। বিশেষ বিবেচনার যোগ্য কিছু নয়।
*

অনেক বড় মন্তব্য করে ফেললাম। আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আরও কোন ভাবনা বা জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই মন্তব্যে জানান।
*

সিনেমা দেরীতে

কেলটু  এর ছবি

পড়ে মজা পেলুম। আমি কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই:
১. ডিরেক্টর এর নাম না জেনে "আয়নাবাজী" দেখে কি কারো পক্ষে আইডেন্টিফাই করা সম্ভব যে এটি অমিতাভ রেজার সিনেমা। মানে কোনো স্বাক্ষর ট্রেড্মার্ক আছে বলে মনে করেন?
২. ক্যামেরার কাজ কেমন সিনেমাতে? শটগুলোর দূরত্ব, স্থিতিকাল, প্রবাহ এগুলাতে কোনো মুন্সিয়ানা আছে কি? বা নতুন কিছু চোখে পড়লো?
৩. কোনো মূল চরিত্রের পূর্ণতা প্রাপ্তি আছে বলে মনে হয়? আমি বিশেষ কারণ নাম জানতে চাচ্ছি না। কিন্তু সিনেমাটা দেখার পরে কোনো চরিত্রের মধ্যে পূর্ণতা পেয়েছেন?
৪. কোনো কারিগরি মুন্সিয়ানা চোখে পড়েছে? যেমন লং ট্র্যাকিং শট, শট এন্ড রিভার্স শট, ক্যামেরা কোয়াড্রান্ট এর ব্যবহার, চরিত্রগুলোর মধ্যে শারীরিক দুরুত্ব দিয়ে টানাপোড়েন বোঝানো ইত্যাদি?
৫. আলোর কাজ দিয়ে ঘটনার মুড নিয়ন্ত্রণ এর কোনো ব্যাপার চোখে পড়েছে?
আসা করছি জবাব পাবো। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিষয়টা ইন্টারেস্টিং। লেখায় যেমনটা উল্লেখ করেছি, আয়নাবাজি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক আবহে নির্মিত, কিন্তু এই বিষয়ে নির্মাতা বেশ বিভ্রান্তও ছিলেন, যেই বিভ্রান্তি থেকে জন্‌রা বিষয়ক বিভ্রান্তিটার উৎপত্তি। একবার বলা হলো এটা ডার্ক কমেডি, আরেকবার বলা হলো, পলিটিকাল থ্রিলার, আবার পলিটিকাল স্যাটায়ার ইত্যাদি। হি কুড্‌ন্ট মেইক আপ হিজ মাইন্ড এ্যবাউট হোয়াট কাইন্ড অফ মুড হি ওয়ান্টস ইট টু প্লে আউট, দ্যাটস হোয়াট আই থিংক। যে কারণে চিত্রগ্রহণেও বিভ্রান্তি, ইনকনসিসটেন্সি চলে এসেছে।

১. প্রশ্নই ওঠে না। অমিতাভ রেজা ইজ নো রয় এ্যন্ডারসন। তাহার বিশেষ কোন লক্ষণীয় তরিকা নেই। বাণিজ্যিক আবহ।

২, ৪ আর ৫ এর বিষয়ে বলবো-

ক্যামেরার কাজ আসলে পরিচালকের এ্যইসথেটিক এ্যমবিশানের উপরে নির্ভর করে বলে মনে করি। চিত্রনাট্যটা এতটাই সিলি, বিশেষত্বহীন, বিশেষ কোন মুড বিহীন, তার উপরে পরিচালকের কোন সচেতন স্টাইলিস্টিক উদ্দেশ্যও লক্ষ্য করা যায় না।

ক্যামেরার কাজ সামগ্রিকভাবে স্রেফ বাই দ্যা বুক হয়েছে। শুরুতে একটা স্টাইলিস্টিক এ্যপ্রোচ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, যদিও বিশেষ মাহাত্ম্য-হীন, তারপর সেটাও ধীরে ধীরে কেমন অদৃশ্য হয়ে যায়, আবার পরে পরে হঠাৎ হঠাৎ ফিরে আসে র‍্যান্ডম্‌লি।

একটা জিনিস আমার কাছে হতাশাজনক লেগেছে, ক্যামেরা কেমন যেন নিরাপদ দূরত্বে থাকে চরিত্র-ঘটনা থেকে। কাছে যেতে ভয় পায়। ইট ওয়াজ এ্যফ্রেইড অফ ডাইভিং ইনটু দ্যা সিচুয়েশান, গেটিং আপ ক্লোজ এ্যন্ড পারসোনাল।

কোন কোন দৃশ্যে খুব সাধারণ সমস্যা চোখে লেগেছে, ভয়াবহ অপ্রয়োজনীয় শ্যালো ডেপ্‌থ, আয়নার ইন্ট্রো দৃশ্যেই, কাঁচা র‍্যাকিং, একটা এ্যরাউন্ড দ্যা সিন ট্র্যাকিং আছে স্টেডিক্যাম-এ, সেটার মাঝে অপারেটর যেন উষ্ঠা খেল, সেটা কেন রিটেইক করে সংশোধন করা হলো না বুঝলাম না। প্লেইন আলসেমি কি? যদি এমন হতো ফিল্ম স্টকে শুট করছে, মানতাম। আর, সচেতন ভাবেই যদি রেখে দিল, কেন? অনেক দৃশ্য অপ্রয়োজনীয় রকম দীর্ঘ সময় জুড়ে ধরে রেখেছে। একটা শট ছিল, সিন/অংশ টাই আসলে অপ্রয়োজনীয় ছিল, সিনেমায় কোন কন্ট্রিবিউশান ছিল না সেটার- বৃষ্টির মধ্যে শহরের রাস্তায়, সেখানে গাড়ীর কাঁচে বৃষ্টি পড়ছে তার একটা ক্লোজ-আপ ছিল, আন্‌নেসেসারিলি লম্বা শট, ভয়াবহ শ্যালো ডেপ্‌থ, ব্যাকগ্রাউন্ডে কি হচ্ছে দেখা গেলে তা-ও সহনীয় হতো।

কোয়াড্রেন্ট সচেতনভাবে ইউটিলাইজ করার মত সাইকোলজিক্যাল ইনটেনশান পর্যন্ত ক্যামেরা পৌঁছায়নি। ওই যে বললাম, তাদের সুনির্দিষ্ট মানসিক উদ্দেশ্য ছিল না।

আর, এগুলো তো সহজাত বিষয়। মূলেই যদি চিত্রনাট্যের কোন পার্টিকুলার মুড থাকে, তাদের কোন এ্যইসথেটিক ইনটেনশান থাকে, এই বিষয়ে যদি প্রি-প্রোডাকশানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়, বাকী তো বেশ সহজাতভাবেই হবে।

বাট ইট ওয়াজ অল সো সিলি।

আলোর প্রসঙ্গে- আমি সিনেপ্লেক্সের সাধারণ হলে দেখেছি, প্রিমিয়াম বা ভিআইপির প্রজেকশানে হয়তো আরও ভাল কোয়ালিটিতে দেখতে পারতাম। কিন্তু বলি-

লাইটিং এর সাথে মিলিয়ে, ডিআই বেশ অদ্ভুত হয়েছে। তারা ফিল্ম ইম্যুলেইট করতে চাইবেন নাকি সেটা তাদের ব্যাপার, কিন্তু সেখানেও ইনকনসিসটেন্সি। কোথাও কোথাও বিশেষ কালার প্যালেট লক্ষ্য করা যায়, আবার কোথাও স্রেফ রঙচঙে, আর কিছু নয়। কোথাও বেশ ফিল্মি, আবার কোথাও বেশ প্লাস্টিকি ভিডিও ধাঁচের। ক্যামেরার ভাষা, দূরত্ব রাখা ইত্যাদিও এতে কন্ট্রিবিউট করেছে। আমি যতদূর জানি সিক্সকে তে ক্যাপচার করে ডাউনস্কেইল করা হয়েছে। আরও সতর্কভাবে হ্যান্ডেল করা উচিত ছিল।

বিশেষ কোন মুন্সিয়ানা চোখে পড়েনি, বরং অনেক অসংগতি ছিল।

আই গেস দে ডিডেন্ট কেয়ার। কারণ- বাণিজ্যিক আবহ।

৩. কোন চরিত্রের কোন পূর্ণতা নেই। ক্লিইশে, প্লেইন সব। সিনেমা দেখা শেষে মনে হয়নি কোন চরিত্রকে জানতে পেরেছি বিশেষভাবে।

আপনার চমৎকার মন্তব্য, প্রশ্নগুলোর জন্য ধন্যবাদ। আমার মন্তব্য পড়ে কোন ভাবনা আসলে, কিছু বলার থাকলে অবশ্যই আরও মন্তব্য করবেন।

ধন্যবাদ।
*

সিনেমা দেরীতে

আলী সামাদ সানু এর ছবি

আরে ভাই অযথা কত গুলো কথা শুনাইলেন।
তবে আপনার কথা যুক্তি আছে,
তবে এটা কি জানেন আমরা আগের প্রেম আর মারামারি ছবি দেখে পুরাই বোর হয়ে গেছি, তাই নতুন কিছু পেয়ে খুব মজা পেলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহা! আপানার সহজ-সরল মন্তব্যে আসলেই আনন্দ পেলাম! হাসি তবে ভাই, আপনি যে কোন একটা বাছাই করেন, হয় "অযথা কথা" নয় "যুক্তি আছে"।

আপনি যদি মজা পেয়েই থাকেন, আপনার মজা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমি কারও মজা কেড়ে নেবার জন্য লিখছিও না। আমি স্রেফ একটু সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আলোচনা করছি, একরকমের সমাজসেবাই বলতে পারেন! চোখ টিপি

টেইক কেয়ার।
*

সিনেমা দেরীতে

রাইসুল এর ছবি

আয়নাবাজি অমিতাভ রেজার প্রথম সিনেমা। উনি আপনার চোখে "দেশের অন্যতম সেরা পরিচালক" হইছেন কি বানাইয়া?

হুমায়ুন আহমেদের নুয়েন্সওলা মানুষ আর শহরের গল্পের কয়েকটা উদাহরন দেন, তাইলে আপনার টেস্ট বুঝতে সুবিধা হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার চোখে নয়, এটা প্রচলিত মত, তার পিয়ারদের চোখে, ভক্তদের চোখে, মিডিয়ার চোখে। তাদের চোখে তিনি অন্যতম সেরা নির্মাতার খেতাব পেয়েছেন, বোধ করি, বহু জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন, সমালোচকপ্রিয় নাটক বানিয়ে।

আমার টেইস্ট বোঝা এই লেখা বা আমার কোন লেখা বোঝার জন্যই প্রাসঙ্গিক নয়।
*

সিনেমা দেরীতে

ফাই সিদ্ধি এর ছবি

অনেক আশা নিয়ে, সকালে ১ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে রাত আটটার শোর টিকেট কেটে সিনেমাটা আজ দেখলাম।কিন্তু খুব হতাশ হলাম।অনেক অতৃপ্তি নিয়েই হল থেকে বেরোলাম।মনে হচ্ছে ২:৪০মিনিটে কাহিনীর প্লটটা থেকে অনেক কিছু পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। আপনার রিভিউর সাথে পুরো একমত:আয়না চরিত্রে অভিনয়ের অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরী করতে পারতেন কিন্তু পরিচালক তেমন কোন দুর্ধষতার মুখোমুখি চঞ্চল চৌধুরীকে ফেলেননি যার কারনের সিনেমা শেষে আয়নার কোন অভিনয়ই মনে দাগ কাটেনি। সাংবাদিকের সাবেরের চরিত্রের মত অপ্রয়োজনীয় চরিত্র এত দীর্ঘ সময় ধরে সিনেমাতে রাখাটা পুরোপুরি অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিট। মন খারাপ

হতাশা মূলত ওখানেই। গল্পটার উপরে ভর করে কি সব চমকপ্রদ দুর্ধর্ষতা দেখানো যেত, বাজেট বাড়িয়ে নয় বরং চিত্রনাট্যটা, সংলাপগুলো এনহ্যান্স করে। সেখানে, দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিটের পর একটু কাঁধ ঝাঁকালাম, মুখ দিয়ে বের হলো, "মেহ্‌"।
*

সিনেমা দেরীতে

দিগন্ত এর ছবি

এরপর ইউএসএ তে কোন বালছাল সিয়াট্‌ল সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল এ যাচ্ছেন। সাচ্ রাবিশ।

আপনি তো দেখি আমার সিয়াটেল-অনুভূতিতে পুরো ছুরি চালিয়ে দিলেন! ইয়ে, মানে...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়েএএ . . . দুঃখিত? ইয়ে, মানে...
*

সিনেমা দেরীতে

Tanuja Mandal  এর ছবি

আমি খুব পজিটিভ চিন্তা করি। বাংলা সিনেমা'র টিকেট নেই দিনের পর দিন! এমনও হয়! এও এক মন্দের ভাল।
বহুদিন পর বাংলা সিনেমা'র টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না দেখে খুব তৃপ্তি হয়েছিল, কিন্তু, গল্পটা কোনভাবেই আমার বা আমার পাশের কোন ব্যক্তি'র মনে হয়নি।

অনেকেই অনেক ভারি ভারি শব্দে আলোচনা, সমালোচনা করলেন। চলচ্চিত্রের বেসিক ভাষায় কথা বললেন। এত সমস্যার কথা শুনলাম। কই, কেউ তো সহজ একটা প্রশ্ন করলেন না? সিনেমা'র শেষের দিকে আয়না যখন নিজাম চৌধুরি'র চরিত্রে ফাঁসির অপেক্ষায় দিন গুনছে, তখন তার বর্ধিত দাঁড়ি কেন সাদা রঙের? তার দাঁড়িতো তখন ক্রেপের ব্যবহারে হওয়ার কথা নয়। তাহলে তার দাঁড়ি'র রঙ সাদা হল ক্যামনে? একদমই সাধারণ দর্শক হিসেবে আমার কাছে জিনিসটা খটকা লেগেছে।অনেক ভেবেও এর কোন ব্যাখ্যা আমি দাঁড় করাতে পারিনি। সিনেমাবোদ্ধাদের কাছে হয়ত এত ছোট জিনিস আলোচনারই বিষয় নয়। কিন্তু, সাধারণ দর্শকের মনে প্রশ্ন তৈরি করে, এমন কিছু নিশ্চই সিনেমায় থাকা উচিত নয়।

আরও ছোট ছোট অনেক অসঙ্গতি চোখে লেগেছে, কিন্তু, সেসব লম্বা প্যাচাল নাই বা করলাম।

উৎসাহী দর্শক এর ছবি

হাহা, এটা আসলেই খেয়াল করি নাই। তবে পরে লাভু মিয়ার মতো দাড়ি কোত্থেকে পাইলো সেটাও বুঝতে পারলাম না। আর লাভু মিয়ার পোশাকই আয়নার গায়ে লাগলো কীভাবে? কাহিনীতে এতো অসঙ্গতি যে দু'দণ্ড শান্তিতে বসে দেখতে পারি নাই। যাই হোক, আমি বাংলা সিনেমার আগ্রহী দর্শক। সিনেমা দেখবো, তবে শিক্ষা হলো যে বাংলা সিনেমার কাছ থেকে বর্তমানে ও নিকট ভবিষ্যতে আশা কম রাখতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কাহিনীতে এতো অসঙ্গতি যে দু'দণ্ড শান্তিতে বসে দেখতে পারি নাই।

সেটাই। মন খারাপ
*

সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

সিনেমাবোদ্ধাদের কাছে হয়ত এত ছোট জিনিস আলোচনারই বিষয় নয়।

আয়নাবাজি যদি ড্রামাধর্মী সিনেমা হতো, ছোটখাট জিনিস এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু আয়নাবাজি থ্রিলারধর্মী বাণিজ্যিক সিনেমা এবং “ছোটখাট” জিনিসগুলোতে ভরপুর হওয়ায় সেগুলো এড়ানো যায় না। আপনি যখন বলছেন-

. . . সাধারণ দর্শকের মনে প্রশ্ন তৈরি করে, এমন কিছু নিশ্চই সিনেমায় থাকা উচিত নয়।

ইয়্যু আর এ্যবসোলুটলি রাইট!
*

সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

সারা সিনেমা জুড়ে অপরাধ গুলোর জন্য আয়নার ভিতরে কোন গিল্টি ফিল দেখিনি ! ব্যাপারটা যেন এমন, আয়না তো সে সব অন্যায়, অপরাধে জড়িত না ! প্রথম থেকে আয়নার চরিত্রটা এত বেশি গ্লোরিফাই করা হয়েছে, সে যে অপরাধ গুলোতে সায় দিয়ে নিজেও অপরাধ করে যাচ্ছে সেদিকে কারও খেয়ালই পড়তেছে না !

আমার ভাবতে অবাক লাগছে, হুমায়ূন আহমেদের "কোথাও কেউ নেই"এ অন্যায় ভাবে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হওয়াতে, তার বিরোধিতা করার জন্য দর্শক রাস্তায় মিছিল করেছিল, আর আজ অপরাধী আয়না সবার কাছেই পজেটিভলি "নায়ক" থেকে যাচ্ছে !

মিতা চার্বাক

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি এই মন্তব্যটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম! আশ্চর্যজনক ভাবে এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে কথা বলতে শুনলাম না।

এই বিষয়টা নিয়ে ভাবনা থাকলেও আলোচনায় এড়িয়ে গেছি কারণ খুব সতর্কভাবে, বিশদে এটা ব্যাখ্যা না করলে অনেকে “আপনার সাবজেক্টিভ ইন্টারপ্রেটেশান” কিংবা “এ্যমোরাল চিত্রনাট্য” কিংবা “আয়না না করলেও অপরাধী পার পেয়ে যেত” ইত্যাদি অজুহাত ছুঁড়ে বসতে পারতেন, কারণ সিনেমাতে ওভার্টলি স্পষ্টভাবে কখনও আয়নাকে গ্লোরিফাই করা হয়নি “নায়ক” হিশেবে, যদিও চরিত্রটাকে পজিটিভ লাইটে দেখানোর, গ্লোরিফাই করার আন্ডারলায়িং টোনটা সিনেমাজুড়েই স্পষ্ট ছিল, পরিচালকের এ্যমবিগিউয়াস থাকার, কিংবা চিত্রনাট্যটির প্রকৃতই এ্যমোরাল থাকার কোন চেষ্টা ছিল না।

আয়নাকে এভাবে প্রশ্নাতীত ভাবে নায়ক হিশেবে গ্রহণ করাটা আমাদের লুজ মরাল কালচারের সাথে কোন একভাবে জড়িত বলে মনে করি . . . “কোথাও কেউ নেই” এর সময় থেকে আমরা আলোকবর্ষ দূরে চলে এসেছি।
*

সিনেমা দেরীতে

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! হাসি
*

সিনেমা দেরীতে

উৎসাহী দর্শক এর ছবি

অথচ একদিকে অভিনয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ এবং অন্যদিকে অপরাধীকে সাহায্য করায় অপরাধবোধ - আয়নার এই মনোজাগতিক দ্বন্দ্ব নিয়েই সিনেমাটা হতে পারতো। সেক্ষেত্রে এরকম সরলরৈখিক গল্প বলে যাওয়ার দরকার পড়তো না, আর সিনেমার শেষে আয়নার অতীত প্রকাশের জন্য সাংবাদিক সাবেরকে দরকার হতো না। সিনেমার ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়েই সেটা দেখানো যেত।

অতিথি লেখক এর ছবি

এ্যবসোলুটলি!! মনোজাগতিক দ্বন্দ উপস্থাপন/এক্সপ্লোর করার অনেকগুলো উপলক্ষ ছিল যেগুলোকে সিনেমাটা কোন পাত্তাই দেয়নি!

আয়নাবাজির বিষয়ে হতাশার সবচেয়ে বড় একটা কারণ এটাই- আয়নাবাজির যে premise তাতে, সামান্য একটা cliched বাণিজ্যিক সিনেমার থেকে অনেক বেশী কিছু হতে পারতো এটা, এবং বিনোদনমূলক হয়েই!
*

সিনেমা দেরীতে

সোহেল ইমাম এর ছবি

মন্তব্যে যারা লেখকের মতের সাথে ভিন্নতা পোষন করে বলেছেন তাদের ছবিটা ভালো লেগেছে তারা কেউই প্রায় উল্লেখ করতে পারেননি বা করেননি কেন ভালো লেগেছে বা কেন তাদের মনে হয়েছে ছবিটা ভালো হয়েছে। অন্যদিকে চিত্রসমালোচক কিন্তু স্পষ্টই জানিয়েছেন কোন কোন দিক গুলো তার কাছে দুর্বল মনে হয়েছে। “অভিনব” প্রচেষ্টাকে উৎসাহ দেওয়া সংক্রান্ত এক ধরনের ভর্তুকি দিয়ে সিনেমার পিঠ চাপড়ানোর সপক্ষেও কেউ কেউ উচ্চকিত হয়েছেন। ছবিটা দেখে লেখকের (সিনেমা দেরীতে) লেখার উপর শ্রদ্ধাবোধটা আরো বাড়লো।

মানুষের গল্প কি আসবে না কোনদিন?

প্রশ্নটা আমারও। ভালো থাকবেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি
*

সিনেমা দেরীতে

নয়ন এর ছবি

কাল হলে গিয়ে আয়নাবাজি দেখে আসলাম। আপনার রিভিউ এর সাথে একমত। এবার সাধারণ দর্শক হিসেবে আমার মতামত বলি। প্রথমেই বলি কি কি ভাল লেগেছে।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম বা ফারুকী গং এর সিনেমা গুলিকে আমার নাটকের মত লাগে। বড়জোর টেলিফিল্ম। সিনেমা নয় কখনোই। কারন কি আমি জানি না। সম্ভবত ক্যামেরার কোন ব্যাপার আছে। সেদিক দিয়ে আয়নাবাজিকে আমার মুভি বলেই মনে হয়েছে- নাটক বা টেলিফিল্ম নয়।

অপ্রয়োজনীয় সাজগোজের অনুপস্থিতিটা ভাল ছিল। প্রতিটা চরিত্রের পোশাক-আষাক খুব সাধারণ ছিল। বেখাপ্পা মেকাপ বা পোশাক চোখে পড়েনি।

নাচ-গানের অনুপস্থিতিটা ভাল লেগেছে। একপাল সখা-সখী নিয়ে নাচানাচি ছিল না।

যে জিনিসগুলি খারাপ লেগেছে:
পুরো সিনেমা জুড়েই ছিল অপ্রয়োজনীয় দৃশ্যের ছড়াছড়ি। সাংবাদিক আর তার গৃহকর্মীর মদ খাওয়ার দৃশ্য খুবই শিশুতোষ এবং হাস্যকর ছিল। যদি এমন হত মদ খেতে খেতে হঠাৎ সাংবাদিকের মাথায় কোন আইডিয়া বা বুদ্ধি এসেছে তাহলেও একটা কথা ছিল। আর আপনার কথার সাথে একমত - সাংবাদিকের কোন প্রয়োজন আসলেই ছিল না।

নায়িকা যখন কেক বানাচ্ছিল তখন মিক্সারকে কেন ক্লোজ শটে নেওয়ার দরকার হল সেটা মাথায় ঢোকেনি। পাগলের দৃশ্যটাও প্রয়োজনহীন। লাড্ডু সেজে জেলে কয়েদির সাথে আলাপও অর্থহীন। আসলে অপ্রয়োজনীয় দৃশ্যের তালিকা করতে গেলে এত দীর্ঘ হবে যে সে পথে আর পা না বাড়াই।

অপ্রয়োজনীয় দৃশ্যের পাশাপাশি অসংগতিরও অভাব নেই। লাড্ডু সেজে জেলে যাওয়ার জন্য আয়না মাথার চুল ছোট করেছিল। কিন্তু ৩ মাসের জেল শেষে ছাড়া পাওয়ার পর গোসলের সময় দেখা গেল চুল আগের মতই বড়।

৪ বছর ধরে সর্বোচ্চ মেধা আর শ্রম দিয়ে বানানো মুভির অবস্থা যদি এই হয় তাহলে বাংলাদেশের নির্মাতারা যে মুভি বানানোর বিদ্যায় একেবারে হাতে-খড়ির পর্যায়ে আছে - একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।