• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

সুলেমানী প্যাঁচে বোকা বাক্স

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৪/১২/২০১৬ - ৫:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশে টেলিভিশন মোটামুটিভাবে একটি একমুখী মাধ্যম। এখানে টেলিভিশন চ্যানেলরা তাদের সুবিধা-পছন্দ-পরিকল্পনা মতো নানা প্রকার অনুষ্ঠান, নিজেদের মতামত-দর্শন, স্পনসর-বিজ্ঞাপনদাতা-ক্ষমতাধরদের ইচ্ছামাফিক ছাঁচে ঢালা নানা অনুষ্ঠান প্রচার করে; নিজেদের লোকজনকে প্রমোট করে। সেখানে দর্শক-শ্রোতারা সেগুলো পছন্দ করলেন নাকি অপছন্দ করলেন, অনুষ্ঠানসম্পর্কে তাদের মতামত কি – এমনসব ফিডব্যাক নেবার কোন ব্যবস্থা নেই।

আসলে দর্শক প্রতিক্রিয়া নিয়া চ্যানেলরা বিশেষ ভাবিত হয় না। এই ব্যাপারে যদি তারা সত্যি সত্যি ভাবিত হতো তাহলে অতি অল্প কিছু ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ছাড়া চ্যানেলগুলোতে বছরের পর বছর ধরে একই প্রকারের ভুষিমাল গছানোর স্থায়ী সংস্কৃতি গড়ে উঠতো না। সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এমন কিছু অনুষ্ঠানে দর্শকদের ফোন কল নেয়া হয় বটে। তবে যারা এই ব্যাপারে একটু খোঁজ রাখেন তারা এর শুভঙ্করের ফাঁকিটা জানেন। একইভাবে আব্‌ঝাব্‌ সিরিয়ালগুলোর শততম বা সহস্রতম পর্বের আগে দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার নামে যে বানোয়াট সাক্ষাতকারগুলো দেখানো হয় সেগুলোর অসারতা সম্পর্কেও দর্শকরা অবগত। সুতরাং ঐ ফোন কলগুলোকে আর যাই হোক ফিডব্যাক বলে ভাবার কিছু নেই। চ্যানেলগুলো যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবিত সেগুলো হচ্ছে কর্তৃপক্ষ যেন কোনভাবে অফেন্ডেড না হয় আর বিজ্ঞাপন যেন নিয়মিত পাওয়া যায়।

এই কথাগুলো বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দর্শক-শ্রোতা নামের ভুক্তভোগীরা ভালোই জানেন। তাহলে হঠাৎ এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলাম কেন? তার কারণ টেলিভিশন অনুষ্ঠানের নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলীদের সাম্প্রতিক নানা রকমের আলোচনা, অনুষ্ঠান, প্রতিবাদ, সমাবেশ, বিষোদগার-মামলা ইত্যাদি। এই বিষয়ে সবাই অবগত আছেন তাই বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না। যারা জানেন না তারা এই খবরগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন –


[url=http://www.prothom-alo.com/entertainment/article/6492/‘টিভি-বাঁচাও-অনুষ্ঠান-বাঁচাও’][/url]

[url=http://www.bdlive24.com/home/details/134376/শহীদ-মিনারে-চলছে-নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলীদের-সমাবেশ][/url]


[url=http://www.banglanews24.com/national/news/532930/ফরিদুর-রেজা-সাগর-নব্য-সাংস্কৃতিক-রাজাকার-মাহফুজুর-রহমান][/url]

এই বিষয়ে এই সমস্ত নানা প্রকার আলোচনা, অনুষ্ঠান, সমাবেশে দেখতে পাবেন টেলিভিশনসংশ্লিষ্ট দুইটি পক্ষকে কখনো ডাকা হয়নি বা তাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়নি, একটি বিজ্ঞাপনদাতাদেরকে আরেকটি দর্শক-শ্রোতাদেরকে।

বিজ্ঞাপনদাতাদের আসলে বিশেষ বক্তব্য থাকার কথা না। কারণ তারা ঐখানেই বিজ্ঞাপন দেন যেটা তাদের টার্গেট অডিয়েন্স দেখেন বা অধিক সংখ্যক দর্শক দেখেন। তাছাড়া চ্যানেল ও নির্মাতাদের ওপর বিজ্ঞাপনদাতাদের চাপ সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে বলে তারা বিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ নয়। টেলিভিশনের ভোক্তাগণ, মানে দর্শক-শ্রোতারা হচ্ছেন ঐ পক্ষ যাদের জন্য এতো আয়োজন কিন্তু তাদের কথা শোনার কেউ নেই, কারও আগ্রহও নেই। আমি হচ্ছি এই শেষোক্ত ক্ষমতাহীন গোষ্ঠীর একজন। যেহেতু টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমাদের বক্তব্য জানতে আগ্রহী নয়, নিউজ মিডিয়াগুলোও আমাদেরকে পোঁছে না তাই ব্লগ লেখা বা ফেসবুক নোট লেখা ছাড়া আমাদের গতি নেই। এই লেখায় বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেলের ভোক্তা হিসেবে আমার বক্তব্য জানানোর চেষ্টা করবো।

একটু ভাবলে যে কেউ বুঝতে পারবেন আজ যে এতো হৈচৈ-কাণ্ডকারখানা তার পেছনে আছে এই ক্ষমতাহীন গোষ্ঠীর একটি সামান্য ক্ষমতা — সুইচ টিপে চ্যানেল পালটে ফেলা। দর্শক সুইচ টিপে চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বাংলাদেশী চ্যানেলের অনুষ্ঠানের বদলে ভীনদেশী চ্যানেলের অনুষ্ঠানের অথবা বাংলাদেশী চ্যানেলে প্রচারিত ভীনদেশী অনুষ্ঠানের দর্শক হয়ে যাওয়াতে বিজ্ঞাপনদাতারা বাধ্য হন তাদের বিজ্ঞাপন যথাস্থানে প্রচার করতে। ফলে বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোর বেচাবিক্রিতে ভাটা পড়ে, তারা অর্থসংকটে পড়তে শুরু করে। পরিণামে আজকের আন্দোলন-সংগ্রাম। ‘সুলতান সুলেমান’ একটা উপলক্ষ মাত্র, মূল অভিযোগ আয় হ্রাস পাওয়া।

বাংলাদেশের মানুষ যখন স্যাটেলাইট টেলিভিশন প্রথম দেখতে পায় তখন কোন বাংলাদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেল ছিল না। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রায় দুই দশকের একচেটিয়া রাজত্বের পর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের দর্শকরা অ্যান্টেনায় হাড়িপাতিল লাগিয়ে ভারতীয় সরকারি চ্যানেল ‘দূরদর্শন’ দেখার সুযোগ পায়। অনুষ্ঠানের মানের ক্ষেত্রে ডিডি তখনো বিটিভি’র চেয়ে পিছিয়ে ছিল, তাই হিন্দী মুভি আর ক্রিকেট খেলার সম্প্রচার ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রে তারা বিশেষ জুত করতে পারেনি। এর কয়েক বছরের মধ্যে উচ্চবিত্তরা ছাদের উপরে ডিশ অ্যান্টেনা লাগিয়ে স্যাটেলাইট টিভি দেখার সুযোগ পেয়ে যায়। হিন্দী চ্যানেলগুলো তখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে। অচিরেই পাড়ার উদ্যোগী যুবকেরা ডিশ কিনে, কেবল্‌ টেনে ‘ডিশ টিভি’র ব্যবসা শুরু করে দেয়, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের ঘরেও স্যাটেলাইট চ্যানেল ঢুকে পড়ে। আরও পরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলে এবং অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে কেবল্‌ টেলিভিশন সার্ভিস এখনকার রূপ পায়।

বিটিভি’র বাইরে স্যাটেলাইটে প্রথম যে বাংলাদেশী চ্যানেলটি দেখতে পাওয়া যায় সেটি সম্ভবত আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ‘aTV’। অত্যন্ত নিম্নমানের সম্প্রচার কোয়ালিটিসম্পন্ন, অনুমোদনবিহীন এই চ্যানেলটির একমাত্র অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশী মুভি। অচিরেই যথাযথ কর্তৃপক্ষ এর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। এর পরে ‘ATN Bangla (১৯৯৭) আর ‘Chennel i’র (১৯৯৯) আর মাধ্যমে স্যাটেলাইটে বাংলাদেশী চ্যানেলের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়। এখনো পর্যন্ত সম্প্রচারে যাওয়া দুই ডজনের অধিক বাংলাদেশী চ্যানেলের সবগুলোই বাংলা ভাষার।

নব্বইয়ের দশক থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের যে সব বাংলা চ্যানেল বাংলাদেশে দেখা গেছে তাতে বড় অংশ হচ্ছে সর্বভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের বাংলাভাষী সাবসিডিয়ারী। এই সময়ের মধ্যে সেসব চ্যানেলের নানা উত্থান-পতন গেছে। লিক্যুইডেশন, মার্জার, অ্যাকুইজিশন ইত্যাদি হয়েছে। নানা গবেষণা হয়েছে, বিষয়ভিত্তিক চ্যানেল হয়েছে, কনটেন্ট-প্রেজেন্টেশন-অ্যাপ্রোচে বার বার পরিবর্তন এসেছে। অপরপক্ষে বাংলাদেশী চ্যানেলগুলো মোটামুটি বিটিভি’র টেমপ্লেট অনুসরণ করে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও সম্প্রচার করে আসছে। বিটিভির অজর-অমর-অক্ষয়-অবিনাশী টেমপ্লেটের মতো এইসব চ্যানেলগুলোর টেমপ্লেটও অক্ষয় তাম্রপাতে নির্মিত। মাঝখানে ব্যতিক্রম ছিল শুধু পুরনো ‘একুশে টিভি’। বিটিভি ভিন্ন অন্য চ্যানেলগুলোর অক্ষয় টেমপ্লেটে ‘একুশে টিভি’র অল্পস্বল্প কিছু উপাদানও আছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে শুধু সংবাদভিত্তিক ও সঙ্গীতভিত্তিক কিছু চ্যানেল শুরু হয়ছে, তবে সেখানেও কিছু অবিনাশী ব্যাপার আছে।

বাংলাদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেল যতদিনে বাজারে আসে ততদিনে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে টেলিভিশন চ্যানেল কেমন হতে পারে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। সুতরাং তখন যারা বাজারে নেমেছিলেন তাদের পক্ষে দেয়াল পত্রিকা বা লিটলম্যাগ ধাঁচের কিছু নিয়ে নামার উপায় ছিল না। দুর্ভাগ্যবশত বাস্তবে অপেশাদারী দেয়াল পত্রিকাটাইপ জিনিসই বাজারে এসেছিল। এখন বাংলাদেশে অজস্র বাংলা আর হিন্দী চ্যানেলের বাইরে এশিয়া আর ইউরোপের প্রধান ভাষাগুলোর প্রায় সবগুলো ভাষার শত শত টেলিভিশন চ্যানেল দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কোয়ালিটি-কনটেন্ট-প্রেজেন্টেশন-অ্যাপ্রোচে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কোনটি এখনো অমন কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি যা অ্যাভেইলএবল চ্যানেলগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচিত হবে অথবা আকর্ষণীয় বা ইউনিক বলে বিবেচিত হবে। ফলে বিনোদন বা তথ্যের আশায় টেলিভিশন খুলে বসা দর্শককে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে আর বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায় না, অচিরেই তিনি তার হাতের রিমোট কন্ট্রোলটা টিপে নিজের পছন্দমতো বা দরকারমতো চ্যানেলটি খুঁজে বের করে ফেলেন।

তাহলে বাংলাদেশের দর্শকরা কি বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখেন না? হ্যাঁ, তারা বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দেখার চেষ্টা করেন বটে তবে তাদের সেই চেষ্টার ফল কী হয় সেটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখা যাক। ধরুন, আপনি পত্রিকা মারফত বা লোকমুখে শুনলেন টোপিওয়ালে কাবুকি’র বানানো ‘৪২০’ সিরিয়ালটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। প্রতি রবি-মঙ্গল-বৃহস্পতি ঠিক রাত ৯টায় এটা ‘চ্যানেল এক্সওয়াইজেড’-এ প্রচারিত হয়। যথা সময়ে আপনি যখন টেলিভিশনে ঐ চ্যানেল ছেড়ে বসবেন দেখবেন নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও ঐ সিরিয়ালের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ কয়েক মিনিট পরে সিরিয়াল শুরুর ঘোষণা যখন আসবে তখন দেখা যাবে তার স্পনসরের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এই দেখেই আপনার মধ্যে পালাই পালাই ভাব জাগ্রত হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে পারেন তাহলে দেখতে পাবেন ১৪ মিনিটের নাটকের মাঝখানে কয়েক দফায় প্রায় ১৬ মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে। নাটকের ঐ ১৪ মিনিটের মধ্যে আবার ক্রেডিটলাইন, রিক্যাপ, প্রিক্যাপ ইত্যাদি আছে। সুতরাং বিজ্ঞাপন বিরতির আগে আপনি আসলে কী দেখেছিলেন সেটা ভুলে যাবার সমুহ সম্ভাবনা আছে। ছাঁকা যে মিনিট দশেক নাটক আপনি দেখতে পাবেন সেখানে কাহিনী-সংলাপ-অভিনয়-পোশাক-আলোক-শব্দ-সঙ্গীতের দীনতার সাথে কারিগরী সীমাবদ্ধতা আপনাকে এতোটা হতাশ করবে যে সিরিয়ালের নাম ‘৪২০’ হবার অন্তর্নিহিত অর্থ আপনার কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে।

তাহলে বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোতে কি কোন ভালো অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় না? অবশ্যই হয়, না হবার কোন কারণ নেই। কিন্তু সেগুলোর সন্ধান পাওয়া রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার। ধরুন ঈদুল ফিতরের দশদিনে দুই ডজন চ্যানেলে প্রচারিত মোট চারশতাধিক নাটকের মধ্যে ৫% ভালো নাটক হলে তার সংখ্যা হয় ২০! বছরে কুড়িটি ভালো নাটক মানে বিরাট ব্যাপার। সংখ্যাটি ১০ হলেও তা অনেক বড় ব্যাপার। এই দশটি নাটকের একটিও আপনার পক্ষে দেখতে পাবার সম্ভাবনা বাস্তবে ২.৫%-এর বেশি না। ৯৭.৫% সম্ভাবনা হচ্ছে আপনি যতগুলো নাটক দেখলেন তার সবগুলোই অখাদ্য। এখন আপনিই ভাবুন এই রিস্ক নেবার মতো সময়-সুযোগ আপনার আদৌ আছে কিনা। কিছু দর্শক আছেন যারা পরবর্তী সময়ে রিভিউ পড়ে বা অন্যের কাছ থেকে শুনে ভিডিও শেয়ারিং সাইটগুলো থেকে ভালো নাটক নামিয়ে দেখে নেন। কিন্তু এতে টেলিভিশন চ্যানেলের কোন লাভ হয় না। নাটক/টেলিফিল্ম ভিন্ন অন্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তার পরিমাণ যে বিশাল সেই গন্ধমাদন থেকে বিশল্যকরণী খুঁজে বের করতে গেলে পবনপুত্র মারুতীর মতো কাউকে লাগবে।

তাহলে উপায় কী? উপায় একটাই – আরও বেশি বেশি ভালো অনুষ্ঠান বানানো। ভালো অনুষ্ঠান বানানোর কথা উঠলে ‘আমাদের বাজেট হাজার টাকা, ওরা কোটি টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান বানায়’ জাতীয় অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায়। অভিযোগ সত্য – এখানে বাজেট কম। তবে কথা হচ্ছে কি এক কালে এরচেয়েও ঢেড় কম বাজেটে বিটিভিতে প্রচুর ভালো অনুষ্ঠান হয়েছে। লোকে হামলে পড়ে সেগুলো দেখেছেন, মনেও রেখেছেন। বাংলাদেশের বাইরে যদি আমরা একটু খোঁজ নেই তাহলে দেখতে পাই ২০,০০০ ডলারে ডেভিড লিঞ্চ ‘ইরেজারহেড’, ১৫,০০০ ডলারে অরেন পেলি ‘প্যারানরমাল অ্যাকটিভিটি’, আর ৭,০০০ ডলারে রবার্ট রড্রিক্স ‘এল মারিয়াচি’র মতো মুভি বানিয়েছেন। টাকার অভাবে কারিগরী দিক দিয়ে হয়তো মার খেতে হয় তবে নাটক/সিনেমার কাহিনী, অন্য অনুষ্ঠানের মূল পরিকল্পনা ইত্যাদিতে মার খাবার কথা না। উপরের কোঠায় ধুসর পদার্থ কম থাকলে তখন সব দোষ টাকাপয়সার অভাবের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পেতে হয়।

আন্দোলনকারীরা যে পাঁচখানা দাবি করেছেন সেগুলো একটা একটা করে খতিয়ে দেখা যাক।

১. দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বাংলায় ডাবকৃত বিদেশী সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করা।

: প্রথম কথা হচ্ছে, কেন শুধুমাত্র ‘বেসরকারি টিভি চ্যানেলে’ বাংলায় ডাবকৃত বিদেশী সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করতে হবে? ‘সকল টিভি চ্যানেলে’ নয় কেন? লক্ষ করুন, এখানে কিন্তু বাংলায় ডাবকৃত বিদেশী সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করতে বলা হয়নি। একইভাবে এখানে সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রকার চ্যানেলে বিদেশী সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান (মূল ভাষায়) প্রচার বন্ধ করতে বলা হয়নি। এই দাবিটিতে দর্শকদের কী উপকার হবে সেটা বোধগম্য নয়। কারণ, এই দাবি মানলে শুধুমাত্র বিটিভি বাংলায় ডাবকৃত বিদেশী সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করতে পারবে। মানে বিটিভিকে একচেটিয়া সুযোগ দেয়া হলো। বেসরকারি চ্যানেলগুলো মূল ভাষায় বিদেশী সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করতে পারবে। মানে বাংলা ভিন্ন অন্য ভাষা না জানা কোটি কোটি দর্শককে বঞ্চিত করা হলো। পয়লা নম্বরেই দর্শকদের ঠকিয়ে বিশেষ কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেবার দাবিটি দর্শক হিসেবে ভালো লাগলো না।

২. টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতিত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।

: টেলিভিশন অনুষ্ঠান ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে মধ্যসত্ত্বভোগী ফড়িয়ার দলকে চ্যানেলগুলোই আজকের এই অবস্থানে এনেছে। সুতরাং দাবিটি সরকারের কাছে না করে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছেই করা উচিত। সিনেমা হল মালিক চাইলে যেমন টিকিট ব্ল্যাক করা বন্ধ করা যায়, এই ব্যাপারটাও তেমন। গত দেড় দশকে এই ক্ষেত্রে যে অচ্ছেদ্য চক্র গড়ে উঠেছে সেটা ভাঙার জন্য নির্মাতার সাথে সাথে চ্যানেল মালিককেও ঐক্যমতে আসতে হবে।

তবে এই দাবিটিতে একটি আপত্তিকর বিষয় আছে। এখানে টেলিভিশন অনুষ্ঠান ক্রয় ও প্রচারের সাথে সাথে নির্মাণকেও চ্যানেল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করা হয়েছে। টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ একটি সৃষ্টিশীল কাজ। একজন নির্মাতা নিজের ভাবনা, যোগ্যতা আর সামর্থ্য দিয়ে একটা অনুষ্ঠান নির্মাণ করেন। সেখানে যদি স্বাধীনতা না থাকে, অথবা স্বাধীনভাবে অনুষ্ঠান নির্মাণের পথটা যদি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে টেলিভিশনে শুধু চ্যানেল মালিকদের মর্জিমাফিক অনুষ্ঠান দেখা যাবে, সৃষ্টিশীল কোন কর্ম আর দেখা যাবে না।

৩. টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির নূন্যতম ও যৌক্তিক হার পুনঃনির্ধারণ করতে হবে।

: এআইটি’র হার পুনর্নির্ধারণের এই দাবিটি কেন? একজন নাগরিককে আজকে হোক আর জুলাই মাসে হোক আয়কর দিতেই হবে। সেই আয়করের পরিমাণ বেশিরভাগ জনের ক্ষেত্রে ১৫%-এর বেশি হয়। সেখানে বিদ্যমান ১০% এআইটি হার কী করে আপত্তিকর বা অযৌক্তিক হয়? আর এই দাবিটিতে ‘টেলিভিশন শিল্প’ বলে যে ‘ব্ল্যাঙ্কেট ডিমান্ড’ করা হয়েছে আন্দোলনকারীরা কি তার কনসিকোয়েন্স সম্পর্কে অজ্ঞ, নাকি খুব বুঝে শুনে এমন দাবি করা হয়েছে? আজ ‘টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে’ বলে যদি এমন গয়রহ ছাড় দেয়া হয় তাহলে আগামী কাল সব ব্যবসা কোন না কোন ভাবে নিজেকে ‘টেলিভিশন শিল্প’ বলে দাবি করে অমন ছাড় চাইবে।

৪. দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশী শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ করতে হবে।

: এই দাবিটি সবচেয়ে যৌক্তিক। সরকারের কাছ থেকে যথাযথ অনুমতি না নিয়ে, যথাযথ শুল্ক ও কর পরিশোধ না করে বিদেশী নাগরিকদের কাজ করানো শুধু টেলিভিশন শিল্প কেন সকল প্রকার শিল্পে বেআইনী। এই ব্যাপারে যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদেরকে সেক্টর নির্বিশেষে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হোক। এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য নতুন কোন আইন প্রণয়নের দরকার নেই। বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ হওয়াই যথেষ্ট।

৫. ডাউনলিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশী চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে।

: এই ব্যাপারে, মানে বিদেশের টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ব্যাংক চ্যানেলে মূল্য পরিশোধ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপন আছে। এই দাবি মানতে গেলে প্রথমে প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করতে হবে, অথবা প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে ‘ডাউনলিংক চ্যানেল’ নামক এক মুরগীকে বার বার জবাই করার পদ্ধতিতে টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আনতে হবে। এই দাবিটি যৌক্তিক, এবং এটি বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামান্য একটু উদ্যোগ যথেষ্ট।

আর একটি বিষয়ে কথা বলে আলোচনাটিকে শেষ করবো। টেলিভিশন মাধ্যমটি একটি জটিল, কঠিন ও উচ্চ কারিগরী মাধ্যম। এর প্রত্যেকটি দিক এক একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয়। এখানে যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না থাকলে একই বস্তুর পুনরুৎপাদন হবে অথবা ভুষিমাল উৎপন্ন হবে। দুর্ভাগ্যবশত যথেষ্ট সময়-সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এই প্রকারের প্রস্তুতি ছাড়াই ব্যবসা করতে নেমেছে। বাজারে নামার পরেও তারা পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে গবেষণা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য কোন উদ্যোগ বা বরাদ্দ রাখে না। এই শিল্পের বিভিন্ন বিষয়ে আজকের তথাকথিত রথী-মহারথীদের অতি অল্প কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই সিস্টেমেটিক শিক্ষাবিহীন প্রাগৈতিহাসিক গুরুমুখী বিদ্যার প্রডাক্ট। আর সেই গুরু নিজেই যদি অশিক্ষিত হন তাহলে যে পরম্পরা তৈরি হয় সেটা মুর্খতার পরম্পরা, অশিক্ষার পরম্পরা। আশার কথা যে দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ‘টেলিভিশন স্টাডিজ’ বিভাগ খোলা হয়েছে। কিন্তু সে বিভাগগুলোর সিলেবাস দেখলে আশার প্রদীপ আবার নিভে যেতে চায়। সেখানে একজন শিক্ষার্থীকে মোটামুটি সর্ববিদ্যাবিশারদ (বলা ভালো জ্যাক অভ অল ট্রেডস) বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষায়িত জ্ঞানবিহীন অমন গ্রাজুয়েটদের দিয়ে কি অবস্থার বিশেষ কোন উত্তরণ ঘটানো সম্ভব? তবু আশা করবো এই বিষয়গুলোতে সত্যিকারের শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত, সৃষ্টিশীল লোকজন আরও আসবেন এবং এই মুর্খতার পরম্পরা নির্মূল করবেন।

বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ভালো মানের অনুষ্ঠান হোক, সমস্ত অশুভ চক্র নিশ্চিহ্ন হোক। তাহলে আমরা সানন্দে নিয়মিত বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবো। এতে চ্যানেল মালিক-বিজ্ঞাপনদাতা-নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলী সবাই উপকৃত হবেন।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

৪নাম্বার নিয়ে একটু বলি। দেশি ভাইয়ারা কী ট্যাক্স ইত্যাদি দেন? তাদের কারো ট্যাক্স রিটার্ন দেখতে পাওয়া যাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি একেবারে জায়গামতো ধরেছেন। দেশী ভাইয়ারা ট্যাক্স-ভ্যাট ইত্যাদি দিতে চান না বলেই এআইটি'র হার কমাতে বলেন। এআইটি কম হারে হলে তারা শুধু ঐটুকুই পরিশোধ করবেন, আর বাকিটা তাদের ভোগে যাবে। আর কারো ট্যাক্স রিটার্ন চাহিয়া লজ্জা দিবেন না, জনাব। ট্যাক্স রিটার্নে যদি সত্য কথা উল্লেখ করার সংস্কৃতি থাকতো তাহলে কাউছ মিয়া দেশের সবচে' বড় আয়করদাতা হতে পারতেন না।

বাংলাদেশে উচিত নানা রকমের আয়কর ও মূসক হার না রেখে একটা ফ্ল্যাট রেটে সবার কাছ থেকে উৎসে কর কর্তন করা। যে দেশে কর দেবার সংস্কৃতি নেই সে দেশে এমন ব্যবস্থা না নিলে ঠিকঠাক রাজস্ব আদায় হবে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

৪ নাম্বারের ব্যাপারে বলি। শুধু টেলিভিশন শিল্প কেন বাংলাদেশের কোন শিল্পে অতি সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া যথাযথ অনুমতি এবং কর পরিশোধ করে বিদেশী কর্মী নিয়োগ দেয়া হয় না। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, কেমিক্যাল, বেসিক মেটালার্জি, মার্কেট রিসার্চ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, লজিস্টিকস এমনকি মার্কেটিং কোম্পানীগুলোতে হাজার হাজার বিদেশী (বিশেষত ভারতীয়, পাকিস্তানী ও শ্রীলঙ্কান) কাজ করে। এদের ওয়ার্ক পারমিট নেই, এরা আয়কর ও মূসক দেয় না। রেস্টুরেন্ট, হসপিটালিটি, ফ্যাশন হাউজ, হেলথকেয়ারে আরও হাজার হাজার বিদেশী বাংলাদেশী কারো নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এরাও কোন পারমিশনের ধার ধারে না, আয়কর ও মূসক দেয় না।

debajyotikajald এর ছবি

ভাল লিখেছ

মেঘলা মানুষ এর ছবি

" ডাউনলিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশী চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে" -এটার সাথে ডাউনলিংকের বিষয়টা কি সেটা আমার ঠিক জানা নেই। ধারণা করছি, বাংলাদেশের উপর 'নিক্ষিপ্ত' তরঙ্গে আলাদাভাবে দেশি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়াকেই হয়ত বোঝানো হয়েছে।

ধরি, রহিম ফেসবুকের মত করে একটা দেশি ও স্থানীয় উদ্যোগ নিয়ে একটা সামাজিক যোগাযোগের সাইট বানাল। তারপর, সে কিন্তু টিভি চ্যানেলের মত করে দাবি করতে পারে যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ফেসবুকে (যেগুলো ভৌগিলিকভাবে উদ্দেশ‌্য করে শুধু বাংলাদেশে দেখানো হয়) -সেগুলো দিতে পারবে না। কোর্টে মামলা করে আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার উদাহরণ টেনে রহিম মামলা জিতেও যেতে পারে।

একটা জিনিস পরিষ্কার করি: আমি আসলে চাইনা দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি চ্যানেলকে টাকা পাঠাক বিজ্ঞাপন দেবার জন্য। দেশের টাকা দেশের ভেতরই সঞ্চালিত হোক-সেটাই আমার কাম্য। তবে, আইন করে বিদেশের মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না -এটা খুব একটা ভালো লাগে নি। বরং, এমন একটা অবস্থা আসুক যেন বিজ্ঞাপনদাতারাই দেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী হন।

লেখাটা ভালো একটা দিকে আলো ফেলেছে, লেখকের নাম খুঁজে পাচ্ছি না অবশ্য।

শুভেচ্ছা :)

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ভারতে বা অন্য কোন দেশে যদি বিক্রয়ে বাধা না থাকে তাহলে ঐ দেশের চ্যানেলে পণ্যটির বিজ্ঞাপন চালানোতে বাধা থাকা উচিত নয়। সেই সুবাদে 'প্রাণ'-এর পণ্য ভারতে রফতানী হয় বিধায় জি বাংলাতে প্রাণ-এর বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতেই পারে। আপত্তিটা তখনই ওঠে যখন জি বাংলার সেই বিজ্ঞাপনটি শুধু বাংলাদেশেই দেখা যায়, কিন্তু ভারতসহ অন্য কোন দেশে না। বিজ্ঞাপনটি যদি আপলিংক চ্যানেলে প্রচারিত হতো তাহলে আপনা আপনি সেটা ভারতসহ সারা দুনিয়ায় দেখা যেতো। কিন্তু বিজ্ঞাপনটি ডাউনলিংক চ্যানেলে প্রচারিত হওয়ায় সেটা শুধু বাংলাদেশেই দৃশ্যমান হয়। বাংলাদেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন যা কেবলমাত্র বাংলাদেশে দৃশ্যমান সেটার জন্য ভারতীয় বা বিদেশী মিডিয়ার ব্যবহার আপত্তিকর, এবং এজন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করাও অনুচিত। সুতরাং আইনটি যদি শুধুমাত্র ডাউনলিংক চ্যানেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় তাহলে সেটা সমর্থনযোগ্য।

এমন একটা অবস্থা আসুক যেন বিজ্ঞাপনদাতারাই দেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী হন।

-এটা লাখ কথার এক কথা বলেছেন। এটা যদি হয় তাহলে কোন আন্দোলন-সংগ্রামেরই দরকার হবে না।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অতিথি লেখক, আপনার নাম পরিচয়টা জানা গেল না। আপনি অতিথি হিসেবে প্রমোশন পাওয়ার আগে পর্যন্ত লেখার শেষপ্রান্তে আপনার নাম লিখে না দিলে পাঠকের পক্ষে তা জানা সম্ভবও নয়। যাই হোক, পাঠককুলের সাথে একটি তথ্য শেয়ার করতে চাই, আর দুটি বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করতে চাই।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হল- বাংলাদেশে সর্বপ্রথম স্যাটেলাইট টিভি ব্যবহারকারী ব্যক্তিটি হলেন জনাব লেজেহোমো এরশাদ। বহু অর্থ ব্যায়ে আশির দশকে তিনি তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে ডিস এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন এক্সরেটেড চ্যানেলগুলোর রস আস্বাদন করতেন বলে কথিত আছে।

এক কালে এরচেয়েও ঢেড় কম বাজেটে বিটিভিতে প্রচুর ভালো অনুষ্ঠান হয়েছে। লোকে হামলে পড়ে সেগুলো দেখেছেন, মনেও রেখেছেন

এই বিষয়ে কিঞ্চিৎ দ্বিমত পোষণ করতে চাই। বয়সে পাকা বিধায় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তখনও মুষ্টিমেয় দুয়েকটি বাদে সকল অনুষ্ঠানই ছিল রাবিশ রদ্দি মাল। দর্শকের সে সব না দেখে আর কোন উপায় ছিল না, কারন সবেধন নীলমণি একটাই চ্যানেল, তাই অনুষ্ঠান এবং তার পাত্রপাত্রীদের আদ্যোপান্ত সহজেই মুখস্থ হয়ে যেত। রিমোট কন্ট্রোল নামক বস্তুটির তখনও এদেশে জন্ম হয় নাই।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল- বাংলাদেশে চ্যানেলের সংখ্যা অত্যন্ত বেশী হয়ে গেছে। ফলে কম্পিটিশনের কারনে অল্প সময় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বেশী টাকা তারা চার্জ করতে পারছে না, অনেক অনেক বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অল্প টাকা নিতে হচ্ছে। ফলে বিজ্ঞাপনের ভারে অনুষ্ঠান চাপা পড়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় প্রাকৃতিক নিয়মেই একসময় বেশ কিছু চ্যানেলের মৃত্যু ঘটবে, তখন আবার নতুন করে কিছু চ্যানালের অনুমতি দেয়ার দুর্বুদ্ধি যদি সরকারের না হয় তাহলে হয়ত তখন বিজ্ঞাপনের ব্যাপারটা সুরাহা হতে পারে।

আর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে যে বাংলাদেশের চ্যানেল প্রদর্শিত হতে পারছে না, তার প্রধান কারন হল তাদের দর্শক হারানোর আশংকা। সেখানে যে স্বল্পসংখ্যক দর্শক হিন্দি চ্যানেল না দেখে বাংলা চ্যানেলগুলো দেখেন, বাংলাদেশের চ্যানেল প্রদর্শিত হলে সেখানেও ধ্বস নামার আশংকা আছে। সুতরাং সেখানের চ্যানেলগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য যদি সেখানকার সরকার এবং ব্যবসায়ী মহল চক্ষুলজ্জা বিসর্জন দিয়ে নানা ছলাকলার আশ্রয় নিতে পারে, তাহলে এখানের চ্যানেলগুলোর সুরক্ষা দেয়ার জন্য সংরক্ষিত বিজ্ঞাপন নীতিমালার মত ন্যূনতম ব্যবস্থা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করা উচিৎ।

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্যটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। তথ্যটির কোন সূত্র জানাতে পারলে ভবিষ্যতে এটা অন্যরা ব্যবহার করতে পারতেন।

কী আয়রনি দেখুন আবদুল্লাহ্‌ ভাই! আজ ৬ই ডিসেম্বর, আমরা পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদকে নিয়ে কথা বলছি। ২৬ বছর আগে এই দিনে এই দেশের মানুষ এরশাদকে তার গদি থেকে লাথি মেরে হঠিয়েছিল। আর আজ ২৬ বছর পরে সে এই দেশে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে বসে আছে।

বিটিভিতে সব অনুষ্ঠান ভালো হতো এমন দাবি কিন্তু আমি করিনি। আমি বলেছি, "এরচেয়েও ঢেড় কম বাজেটে বিটিভিতে প্রচুর ভালো অনুষ্ঠান হয়েছে"। তার ভুরি ভুরি উদাহরণ খোদ আপনিই দিতে পারবেন। স্বাভাবিক নিয়মে সেই আমলে বিটিভি 'ঠাট্টার সংবাদ' (আটটার সংবাদ) সহ বিপুল পরিমাণ আবর্জনা উৎপাদন করে গেছে যা দেশের দর্শকদের গত্যন্তর ছিল না বিধায় গিলতে হয়েছে। আমার আপত্তিটা হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে বাজেটের দোহাই দেয়াতে। এই জন্য দেশের বাইরের উদাহরন দিয়েও বোঝাতে চেয়েছি বাজেট সব সময়ে সমস্যা না। বাস্তবের দুনিয়ায় প্রায় সবাইকে 'লিমিটেড রিসোর্স' নিয়ে কাজ করে 'ম্যাক্সিমাম আউটপুট' দিতে হয়, উচ্চ 'এফিশিয়েন্সি' দেখাতে হয়। রিসোর্সের স্বলপতার দোহাই দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করলে চাকুরি/ব্যবসার দুনিয়ায় লাথি খেয়ে বিদায় নিতে হবে।

বাংলাদেশে 'মার্জার' এবং 'অ্যাকুইজিশন'-এর আইনগুলো খুব স্পষ্ট নয়। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান চাইলেও নিজেকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে বা মিলিয়ে ফেলতে পারছে না। এই আইন সহজ করলে শুধু টেলিভিশন চ্যানেল কেন পত্রিকা, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, প্রাইভেট ব্যাংক, প্রাইভেট ইনস্যুরেন্স কোম্পানী এমন বহু কিছু অন্যের সাথে মিশে যেতো অথবা অধিগ্রহিত হতো; যেভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা ভূমিহীন ক্ষেতমজুরে পরিণত হয়েছে আর ধনী চাষী ও জোতদারেরা বিশাল ভূস্বামীতে পরিণত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চ্যানেল ডাউনলিংক করার প্রাথমিক ফী ৫ কোটি রূপী আর বার্ষিক নবায়ন ফী ২.৫ কোটি রূপী। চার্জের এই উচ্চ হারের কারণে সেখানে বাংলাদেশী চ্যানেল দেখা যায় না। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল ডাউনলিংকের চার্জ মাত্র ৩ লাখ টাকা। এই বিষয়টা নিয়ে মনে হয় বিশেষ ভাবাভাবির কিছু নেই। কারণ, আগামীকাল প্রযুক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে যেখানে এইসব ডাউনলিংকের মধ্যসত্ত্বা বলে কিছু থাকবে না। তাছাড়া বাংলাদেশ যদি অন্য দেশের চ্যানেলগুলো থেকে দেখে ভালো কিছু শিখে আরও ভালো কিছু বানাতে পারে তাহলে সেটা বাংলাদেশের লাভ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের চ্যানেল না দেখায় ক্ষতিটা ভারতের (বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের) হবে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। ভারতে বাংলাদেশের বই/পত্রিকা রফতানী করতে আপনার কালোঘাম বের হয়ে যাবে। অথচ বাংলাদেশে ভারতের বই/পত্রিকা সহজলভ্য। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশী বই/পত্রিকার সফট ভার্সান এখন ভারতীয় পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে আইনের মারপ্যাঁচ দিয়ে আর কিছু ঠেকিয়ে রাখা গেলো না। আবার বাংলাদেশী লেখক-পাঠকেরা পশ্চিমবঙ্গের বই/পত্রিকা পড়ার সুযোগ পাওয়ায় বাংলা সাহিত্যের গতিধারা, বিকাশ, গবেষণা নিয়ে পুরো ধারণাটা পেলেন; পক্ষান্তরে এই বাধার কারণে পশ্চিমবঙ্গের লেখক/পাঠকদের আধখানা জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সাহিত্য ও পত্রিকার সাথে তাদেরই ষাট/সত্তরের দশকের সাহিত্য ও পত্রিকার তুলনা করলে তার কত দূর অধপতন হয়েছে সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আইন করে দুটো বিষয়কে ঠেকানো যায় না। একটা হচ্ছে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন; আর আরেকটা হচ্ছে 'সাপ্লাই'। বাজারে 'ডিমান্ড' থাকলে কোন গ্রেট ওয়াল বা বার্লিন ওয়াল 'সাপ্লাই' বন্ধ করতে পারবে না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।