জাতি == উৎসব == লোকসংখ্যা
হিমাচলী == বিষু/বাসোয়া == ৭,১২৪,০০০
হরিয়ানভী == বৈশাখী == ২৭,৮০০,০০০
পাঞ্জাবী == বৈশাখী == ৩১,৫০০,০০০
তুলুভা == বিসু == ১০,০০০,০০০
মালইয়ালী == বিসু/পুথুবর্ষম == ৩৮,০০০,০০০
তামিল == পুথান্দু == ৬৭,৫০০,০০০
ওড়িয়া == মহাবিষুব সংক্রান্তি == ৪২,০০০,০০০
মৈথিলী == জোড়ে শীতল == ৪৩,০০০,০০০
নেপাল == নয়া বর্ষ/বিসকেত যাত্রা == ৩৫,০০০,০০০
বাঙালী == নববর্ষ == ৩০০,০০০,০০০
অসমী == বিহু == ৩৫,০০০,০০০
মণিপুরী == চেইরাওবা == ৩,০০০,০০০
ত্রিপুরী == বৈসু/বৈসুক == ১,৫০০,০০০
চাকমা == বিজু/বিঝু == ১,০০০,০০০
ম্রো == বিজু/বিঝু == ১০০,০০০
মারমা/রাখাইন == সাংগ্রাই/সাংগ্রাইং == ৩,৫০০,০০০
বর্মী জাতিসমূহ == থিঙইয়ান == ৫৫,০০০,০০০
থাই জাতিসমূহ == সংকার্ন == ৬৮,৫০০,০০০
খেমর্ == চাউল চনাম থমএ == ১৬,০০০,০০০
লাও জাতিসমূহ == পী মাই == ৭,০০০,০০০
দাই (মূলত গণচীনে) == সংকার্ণ == ৮,০০০,০০০
সিংহলী == আলুথ আওরুদ্ধা == ১৮,০০০,০০০
দিভেহী == আলাথু আহারুধুভাস == ৩৭,৫০০,০০০
মরিশিয়ান হিন্দু == পুথান্দু == ৭৩০,০০০
বালুচ হিন্দু (পাকিস্তান ও ইরানে) == বেগে রোচ্ == ৫৯০০০
মোট == == ৮৫৬,৮১৩,০০০
উপরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে এই প্রায় ৮৬ কোটি মানুষের মধ্যে বাঙালীরা সবচে’ বড় গ্রুপ (৩০ কোটি)।
নববর্ষ, বৈশাখী, হালখাতা, সংক্রান্তি — যে নামেই ডাকি বৈশাখের প্রথম দিনটি বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশের প্রধান জাতীয় উৎসব। এর ব্যপ্তি বিশাল এবং তাৎপর্য গভীর। উৎসবটির বড় বৈশিষ্ট্য এটি সেক্যুলার উৎসব এবং সম্পূর্ণ নিজ ভূমিজাত। এই উৎসব আয়োজনে ও পালনে কোন ভেদাভেদ নেই, বৈষম্য নেই। এই উৎসব আনন্দের, বহু বর্ণের, বহু ছন্দের, বহু সুরের, বহু গানের, বহু কথার। কী পোশাকের বিচিত্রতায়, কী খাবারের আয়োজনে এই উৎসব অনন্য।
আজ ৩০শে চৈত্র। ১৪২৩ সনের শেষ দিন। আগামীকাল ১লা বৈশাখ থেকে শুরু হবে ১৪২৪ সন। আগামীকাল সূর্যোদয়ের মুহূর্ত থেকে সারা দিনের জন্য আমরা মেতে উঠবো উৎসবে। আমরা জানি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় মৌলবাদ, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের যে অন্ধকার পথে আজ দেশ চলছে তার প্রেক্ষিতে এবারের নববর্ষ তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিমধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের হুমকি শোনা থেকে শুরু করে দেয়ালচিত্র বিনষ্টকরণ দেখা হয়েছে। ১৬ বছর আগে রমনা বটমূলে উৎসব চলাকালে বোমা হামলা করে ১০ জনকে হত্যা দেখা হয়েছে। ঐ ঘটনায় অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে মাত্র ১ জনের মৃত্যুদণ্ড গতকাল (১২ এপ্রিল) কার্যকর করাও আমাদের দেখা হয়েছে। আমরা জানি না আগামী দিনগুলোর গর্ভে কোন মুষলপর্ব লুকিয়ে আছে।
এই বিপর্যয়ের হাত থেকে আমাদের ভবিষ্যতকে রক্ষা করতে যারা অসাম্প্রদায়িক, চিরায়ত বাঙালীর চেতনায় প্রত্যয়ী তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা জানি, অন্ধকারের শক্তি গীত-বাদ্যকে ভয় পায় তাই সেখানে বোমা হামলা চালায়। তারা চারু ও কারু শিল্পকে ভয় পায় তাই সেগুলো বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। তারা নৃত্য-সমাবেশ ভয় পায় তাই মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের হুমকি দেয়। তারা নারী-পুরুষের সম্মিলিত উৎসবকে ভয় পায় তাই উৎসবে আগত নারীকে লাঞ্ছিত করে। তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে ভয় পায় তাই এগুলোকে ধর্মবিরোধী বলে। অন্ধকারের শক্তি যে যে বিষয়ের মুখোমুখি হতে সাহস করে না আমাদেরকে ঐ বিষয়গুলো আরও জোরেশোরে পালন করতে হবে – সম্মিলিতভাবে, প্রকাশ্যে। যারা এই উৎসবের গায়ে বিশেষ ধর্মের তকমা লাগিয়ে একে বাকিদের কাছে অস্পৃশ্য করতে চায় তাদেরকে দেখিয়ে দিতে হবে এটা লোক উৎসব, এটা সব মানুষের উৎসব, এটা ধর্মের বাঁধনে বাঁধা গোষ্ঠীর উৎসব নয়। তাহলে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হবে।
নববর্ষ আমাদের গর্বিত পরিচয়, প্রাণের উৎসব। যার যতটুকু সাধ্য উৎসব পালন করুন। অমা রজনীর অবসান হবেই। শুভ নববর্ষ!
মন্তব্য
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা...
আশাবাদী লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো। শুভ নববর্ষ ১৪২৪!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
গতকাল রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আমার দেখা এযাবত কালের সবচে' কম মানুষ হয়েছিল। অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলোতেও গত বছরের তুলনায় কম মানুষ দেখেছি। এর কারণ একটাই - ভীতি। সাধারণ মানুষ, যারা বের হননি, উৎসব তারাও করেছেন। তবে সেটা ঘরের ভেতর।
অন্ধকারের জীবরা সব সময়ই ভয় দেখাতে চেয়েছে। এবার তার সাথে তাদের পৃষ্ঠপোষকেরাও যুক্ত হয়েছে। এরা চায় আমরা ঘরের ভেতরে আবদ্ধ থাকি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলো যেন বন্ধ থাকে, মানুষের সম্মিলনে উৎসব যেন হতে না পারে। এর সফল প্রতিরোধ একভাবেই হতে পারে - ভয়কে জয় করে ঘরে এবং ঘরের বাইরে উৎসবে মেতে উঠলে।
কয়েকটা পর্যবেক্ষণঃ
১। "খ্রীষ্টিয় নববর্ষ" বলবেন, আবার "সেকুল্যার"-ও বলবেন - দু'টো কথা কি একসাথে যায়?
২। ইউরোপে পহেলা জানুয়ারীতে নববর্ষ পালনের প্রথাটা 'গ্রেগরীয়' ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের বহু আগেই শুরু হয়েছিল। ইউরোপে আগে রোমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পহেলা মার্চেই নববর্ষ পালন করা হতো, কারন ১ লা মার্চেই তাদের ১০ মাসের বছর শুরু হতো। রোমান কিংবদন্তী অনুযায়ী ৭ম-৮ম খৃষ্ট-পূর্ব শতাব্দীর রোমান রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসদুটি যোগ করেন। তবে এই মাস দুটা তখন বছরের শেষের দিকে ছিল। পরে কোন একসময় তা শুরুর দিকে চলে যায়, বা বলা ভালো শুরুর মাস বলে গণ্য হতে শুরু করে। তারও অনেক পরে ১৫৩ খৃষ্ট-পূর্বাব্দে ১লা জানুয়ারী রোমের নতুন কন্সালদের অভিষেকের দিন হিসেবে নির্ধারিত হলে এই দিনটা ধীরে ধীরে 'নববর্ষ' হিসেবেও প্রচলিত হয়ে যায়, কারন বহুকাল ধরেই রোমানরা তখন এই কন্সালশীপকে ঘিরেই তাদের বছর গণনা করছিল। সম্ভনত ৪৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজারের হাতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে তা আনুষ্ঠানিক রূপ পায়। ৫৬৭ খৃষ্টাব্দে খৃষ্টধর্মের কাউন্সিল অফ টুরস্ ১লা জানুয়ারীতে নববর্ষ পালন আনুষ্ঠানিকভাবে অবসান ঘটায়। খৃষ্টধর্মে বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে বছর সূচনা হিসেবে এটা আসে আরও অনেক পরে - ১৫৮২ সালে ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি ঘোষিত গ্রেগরিয়ান রিফর্মের ভিত্তিতে। তাও ক্যাথলিকরা এটা তখন গ্রহণ করলেও, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ইস্টার্ন অর্থোডক্সরা গ্রহণ করে আরও পরে। যেমন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অর্থাৎ ব্রিটেন ও তাদের কলোনিগুলিতে (আমেরিকা সহ) ব্রিটিশ সংসদে 'চেস্টারফিল্ড এ্যাক্ট' তথা 'Calendar (New Style) Act 1750' নামক আইনটি পাশের মাধ্যমে ১৭৫২ থেকে ১লা জানুয়ারীকে বছরের প্রারম্ভিক দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আগে পর্যন্ত ২৫ মার্চকেই আইনত নববর্ষ গণ্য করা হতো। সবকিছু সংক্ষেপ করলে এটাই মনে হয় যে ১লা জানুয়ারীতে নববর্ষ হিসেবে গণ্য করার আদি উৎস বোধহয় খৃষ্ট-পূর্ব রোমানদের সেকুলার একটা রীতিই। তবে এখন আমরা যে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরন করি তা কিন্তু মোটেই 'সেকুলার' না। এই ক্যালেন্ডার ৩২৫ খৃষ্টাব্দে খৃষ্টজগতের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মসভা ১ম কাউন্সিল অফ নিসিয়ার (বর্তমান তুরষ্কে অনুষ্ঠিত) একটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিতর্কজাত গণনার ভিত্তিতে খৃষ্টীয় ঈস্টার দিবসের দিণক্ষণ তাদের বিশ্বাস মোতাবেক আদি চার্চের চর্চার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রাখার উদ্দেশ্যে ১৩তম পোপ গ্রেগরির উদ্যোগে সংশোধিত হয়। আমরা এখন সেই ছকেই চলছি ও সেই অনুযায়ী ১লা জানুয়ারীতে নববর্ষ পালন করছি। এটা্কে তাই সেকুলার বলা বোধহয় ভুলই হবে। নাহলে হিজরী সনকেও সেকুলার বলা যেতে পারে। দুটোই আসলে একই ধরণের (অর্থাৎ ধর্মীয়) বিষয় সঠিকভাবে কমেমোরেট করার জন্যই প্রবর্তিত ও প্রচলিত। তবে হ্যাঁ, নববর্ষ গণনা ও উদযাপনের মূল আইডিয়াটা গ্রেগরিয়ান তো নয়ই, এমনকি রোমানদের হাতেও শুরু হয়নি। এটা অনেক পুরোনো। অন্তত ৪০০০ বছর আগের - যখন খৃষ্টান, মুসলমান বা রোমান কারোরই বোধহয় সৃষ্টি হয়নি।
২। পৃথিবীর একটা বিশাল অংশ জুড়েই মহাবিষুবকে (vernal equinox) কেন্দ্র করেই বোধহয় নববর্ষ গণনা ও উদযাপন করা হতো একসময়। এবং এখনও করা হয় অনেক জায়গায়। ইউরোপ/এশিয়ার একটা বড় অঞ্চলে এভাবেই বোধহয় নববর্ষের ধারনা ও চর্চাটার আদি সুচণা ও আদি টেমপ্লেট। তাই দেখা যাবে অনেকের ক্যালেন্ডারেই প্রথম দিন ছিল মার্চের কোন এক সময়। রোমানদেরও তাই ছিল - ১লা মার্চে। আর এই টেমপ্লেটটার আদি সূচণা হয় বোধহয়, আরও অনেক কিছুর মতই - প্রাচীণ মেসোপটেমিয়াতে (বর্তমান ইরাক) ব্যাবিলনিয়ানদের হাতে, ৪০০০ বছর আগে ২০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে। তাদেরও নববর্ষ ছিল মধ্য-মার্চে।
ব্যাবিলনিয়ানদের নববর্ষ উদযাপন সম্পর্কে ছোট্ট একটা প্যারা অনুবাদের ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি কোট করে দেই এখানে --
এমনকি এখানেও সেকুলারিত্ব নাই!
৩। আপনি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অনেকগুলি নববর্ষের কথা উল্লেখ করেছেন, অথচ পৃথিবীর প্রাচীণতম জীবন্ত এবং পৃথিবীর একটা বিশাল অঞ্চল জুড়ে অত্যন্ত ডাইভার্স এথনোলিঙ্গুইস্টিক মানবগোষ্ঠীর মধ্যে ৩০০০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উদযাপিত নববর্ষ - "নওরোজ"-এর কথা একদম ভুলেই গেছেন দেখলাম! পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, ককেশাস, ব্ল্যাক সী বেসিন ও ইউরোপের বলকান অঞ্চল জুড়ে এর প্রচলন। যেসব দেশে এর প্রচলণ আছে তার মধ্যে আছে - ইরান, আলবেনিয়া, মেসিডোনিয়া (প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার অংশ), কসোভো, মঙ্গোলিয়া (বায়ান ওল্গি), আফগানিস্থান, আজারবাইজান, চীন, জর্জিয়া, ভারত, ইরাক, কাজাখস্থান, কিরিগিজস্থান, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিরিয়া, তাজিকিস্থান, তুরষ্ক, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান। অর্থাৎ অন্তত ২০টি দেশে। এইসব দেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় যাওয়া অভিবাসী কমিউনিটিগুলির কথা বাদই দিলাম। বাংলাদেশের শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষরাও বোধহয় এই নববর্ষ পালন করেন। সে হিসেবে এটা আমাদের দেশেরও। সেক্ষেত্রে ২১টি দেশে অন্তত।
নওরোজ মূলত প্রাক-ইস্লামিক প্রাচীণ পারসিক নববর্ষ যার সাথে জরুথুস্ত্রীয় ও মিথ্রা ধর্মেরও কিছু সংযোগ আছে মনে হয়। এই অংশটুকু বাদ দিলে এটা বোধহয় প্রায় পুরোটাই সেকুলার। পারসিক এই নববর্ষও উপরের বর্ণিত পূর্ববর্তী ব্যাবিলনিয়ান নববর্ষ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরবর্তীকালের আরও অনেক নববর্ষের মতই মহাবিষুব (vernal equinox বা vernal equilux), বসন্তের আগমন, বীজ বপন, ফসল কাটা, প্রকৃতির পূণর্জাগরণ বা পূণর্জন্ম - ইত্যাদিকে উদযাপন করার একটি মৌসুম-ভিত্তিক উৎসব। এই টেমপ্লেটে সবখানেই এই জিনিসটাই আসলে এই উৎসবের মর্মকথা বা প্রাণ - যা সাধারণ মানুষেরই প্রাণের কথা, কোন কন্সালের ক্ষমতাগ্রহণ বা ধর্মীয় / রাজনৈতিক / মতাদর্শিক কোন দিবসের ঢক্কানিনাদ নয়।
জাতিসঙ্ঘের জেনারেল এসেম্বলি ২০১০ সালে 'আন্তর্জাতিক নওরোজ দিবস'-কে স্বীকৃতি দেয় পারসিক উৎসজাত ৩০০০ বছর প্রাচীণ নববর্ষ হিসেবে। কানাডার জাতীয় সংসদ ২০০৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে নওরোজকে কানাডার জাতীয় ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভূক্ত করে আইন পাশ করে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদেরও কাছাকাছি ধরণের রিজলিউশন আছে।
নওরোজ-দিবস সংক্রান্ত জাতিসংঘের ওয়েব পেইজে লেখা রয়েছেঃ
চীনা নববর্ষ সম্পর্কেও আগ্রহ আছে। দেখা যাক কি পাই।
সবাইকে শুভ নববর্ষ ১৪২৪ বঙ্গাব্দ!
****************************************
নওরোজের উল্লেখে উত্তম জাঝা। আকবর বাদশার অত্যাধিক পছন্দের দিন পারসিক নববর্ষ নওরোজ, হাজার হৌক তার পিতারে সাফাভিদ তামাষ্প দুইটা খাইতে দিছিল ভারত থিকা উষ্ঠা খাওনের পরে। বুনাস একখান ছবি দিলাম, পাখির কলতানে মুখরিত ইস্ফাহান নগরীতে নওরোজ উদযাপনে বেছত তামাষ্প (লাল পিরান পরিহিত) এবং হুমায়ুন। সামনে নানাবিধ গাতক বাজনদার সুরার ভাণ্ড ললনাদের কোমর দুলানি। (পারসিক চিত্রকরের ছবি, লক্ষ্যণীয় পারস্যের শাহের জামাজুতা উজ্জ্বলতর এবং হুমায়ূনের মুখ পানসা করে আঁকা। বুঝতে হপে )
..................................................................
#Banshibir.
জালালউদ্দীন, তার বাপ-দাদারা বা তার ছানাপোনারা রসিক লোকজন। সব ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহনে তাদের ব্যাপক উৎসাহ ছিল। দিওয়ালী, হোলী, বসন্ত পঞ্চমী (নিগাহ্দস্ত) ধরনের স্থানীয় হিন্দুদের উৎসবে তাদের অংশগ্রহন ছিল ব্যাপক। এসব নিয়ে অনেক চিত্রকর্ম আছে। আর তারা এসব করবে না কেন! এসব উৎসব তো তাদের মা-মাসী-মামাদের একাংশের নিজেদের উৎসব। ওদিকে নওরোজ তাদের মা-মাসী-মামাদের আরেক অংশের নিজেদের উৎসব। সুতরাং তাদের আমলে ঈদ-হোলী-নওরোজ সব সমান তালে চলেছে।
পীরভাই, হুমায়ুনের দিকের জানালায় ওটা সিসিক্যাম্রা নাকি?
হুম আমারও একই কথা বাপু, নামখানা লিখতে এত আলস্য কেনু! অধিক নাম থাকা যদি অপরাধের হয় নামহীনতা কেন নয়!!!
যাইহোক, অন্ধকার ঝামা খেয়ে দূরে যাক। শুভ নববর্ষ
প্রিয় মন মাঝি, তথ্যসমৃদ্ধ চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভ ননবর্ষ!
১. ‘খ্রীষ্টিয়’ নববর্ষ যে খ্রীষ্ট ধর্মের সাথে সম্পর্কিত না সেটার ইতিহাস তো আপনিই জানিয়ে দিলেন। কোন কালে এর সাথে কোন ধর্মের যোগ থেকেও থাকে আজকে সারা দুনিয়ায় দাপ্তরিক কাজে এর ব্যবহার প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই ধর্মীয় স্পর্শের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তাহলে ‘খ্রীষ্টিয়’ বললাম কেন? ঐ যে নামটা ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’-এর নামের মতো প্রচলিত হয়ে গেছে তাই। ক্যালেন্ডারটাকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বলা যায় কিন্তু সংখ্যার শেষে GE/GC লেখার কনভেনশন কখনো হয়নি, পূর্বতন AD/CE-ই চলে আসছে। এতে ১লা জানুয়ারিতে উদযাপিত নববর্ষের সেক্যুলার চরিত্রের হেরফের হয় না।
২. গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের উদ্যোগটা ধর্মীয় সংগঠনের হলেও সেটা কিন্তু আসলে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ভুল সংশোধন করেছে। সেখানে ক্যালেন্ডারটিকে পিছিয়ে নিয়ে যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন থেকে ১লা জানুয়ারি হিসেব করা হয়নি। বরং যীশুখ্রীষ্টের জন্ম খ্রীষ্টপূর্ব ৪ (অথবা ৭) সালই রয়ে গেছে (হায়! খোদ খ্রীষ্টই খ্রীষ্টপূর্ব!!)। পক্ষান্তরে হিজরী সালের সাথে ইসলামের যোগটা অনেক বেশি। হিজরী ১৭ সালে খলিফা উমরের শাসনামলে এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হয়। হিজরতের সময় থেকে বৎসর গোনার প্রস্তাবটা ছিল হযরত আলী’র। এর আগে আরব দেশে প্রচলিত ১২/১৩ মাসের লুনিসোলার ক্যালেন্ডার থেকে ত্রয়োদশ মাস (না’সি) বাদ দেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে খোদ সুরা তওবাহ্’তে (আয়াত ৩৬-৩৭)। হিজরী ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের সময় পূর্বে প্রচলিত মাসের নামগুলোকেও পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু গ্রেগরিয়ান সংশোধনের সময় জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের নামগুলো পরিবর্তন করা হয়নি। যে কারণেই হোক, অল্প কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ছাড়া হিজরী ক্যালেন্ডার ইসলাম ধর্মীয় কাজে ব্যবহার ছাড়া দাপ্তরিক কাজে আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে এই ক্যালেন্ডারটি কখনোই কোন সেক্যুলার পরিচয় পায়নি।
২ (পুনশ্চ). মহাবিষুবে বৎসর শুরু করার ব্যাপারটা আগেও ছিল, এখনও আছে। সংস্কৃতি-ঐতিহ্য (culture-tradition) এর সাথে ধর্ম (religion) প্রায়ই মিলে যায় বা ওভারল্যাপ করে যায়। বিদ্যমান সংস্কৃতি-ঐতিহ্য’র কোন এলিমেন্ট ধর্ম অধিগ্রহন করে ফেলতে পারে, আবার ধর্মীয় কোন আচার ধর্মের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের অংশ হয়ে যেতে পারে। প্রাচীন ইতিহাসের লিখিত বর্ণনা কম পাওয়া যায় বিধায় মৌখিক ইতিহাস বা লোক সাংস্কৃতিক উপাদান থেকে ভিন্ন বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ইতিহাসটাকে বের করে আনতে হয়। ধর্ম দৈনন্দিন জীবনের অংশ বলে এই প্রকারের বিবরণে ধর্মীয় রঙটা থেকে যায়। তাছাড়া লোক আচারকে ধর্মীয় রঙ লাগিয়ে মহিমান্বিত করার ব্যাপার তো থেকেই যায়। যে আমলে একজন সাধারণ নৃপতিকেও ঐশ্বরিক ক্ষমতাসম্পন্ন বা ঈশ্বরের অবতার হিসেবে বিবেচনা করা হতো সে আমলে লোক বর্ণনাতেও মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই ধর্মের ছায়ায় দেখানো হবে। আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে, আজকের সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞা দিয়ে কয়েক হাজার বছর আগের সময়কার রীতির সেক্যুলারত্ব কি যাচাই করা সম্ভব? আপনার বর্ণিত ৩ নং পয়েন্টে যেমনটা বুঝিয়েছেন নববর্ষগুলো যে আসলে ধর্মের স্পর্শের বাইরে্র লোক উৎসব সেটাই সঠিক।
৩. নওরোজ/নৌরুয-এর কথা আমি ভুলিনি। লক্ষ করলে দেখবেন আমি মাথা গোনাগুনতি দিয়ে উৎসবগুলোর তালিকা শুরু করে ৩ নাম্বারে বৈশাখীতে এসে থেমেছি। যে ২১টি এথনিক গ্রুপের মানুষ কয়েক হাজার বছর ধরে নওরোজ পালন করে আসছে তাদের মাথা গুনলে মোট জনসংখ্যা ঠেলেঠুলে ৩০ কোটি হবে (শুধু বাঙালীদের সংখ্যার সমান)। তাই মাথা গোনাগুনতির তারা তালিকায় পিছিয়ে পড়েছে। আর আমি ৩-এর পর আর আগাইনি বলে নওরোজ এই লেখায় আসেনি।
চীনা নববর্ষ নিয়ে ঘাঁটলেও একই প্রকারের ফল পাবেন। মানে লোক উৎসবকে কোথাও কোথাও ধর্মীয় চেহারা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে বটে, কিন্তু আসলে এটা লোক উৎসব।
মন্তব্যে
শুভ নববর্ষ ১৪২৪ বঙ্গাব্দ!
বর্ষপুর্তি উৎসব নিয়ে এতো গুলো চমৎকার তথ্য জানা গেলো আবার মন্তব্য থেকেও । অতিথি লেখককে ধন্যবাদ, তবে নামটা উল্লেখ করলে ভালো হতো।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
পহেলা বৈশাখ আদতে শুধুই বাঙ্গালী উৎসব নয় এটা আমি অনেক পরে জেনেছিলাম, এটা আসলে অতি প্রাচীন এবং একমাত্র বৈশ্বিক উৎসব যা বিশাল জনগোষ্টী এক সাথে পালন করেন, ইরান থেকে শুরু করে পশ্চিম চীন পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি (অবশ্যই উৎসবের নামের ভাষাগত পার্থক্য আছে), এই সময়ে এই লেখা জরুরি ছিল। তবে একটা বানান ভুল দেখতে পেলাম, থাইল্যান্ডে (শ্যামরাজ্যে) এই উৎসবকে বলে "সংক্রান" (সংকার্ন না), আমরা বাংলায় বলি "সংক্রান্তি" আর ওরা বলে "সংক্রান"। "সংক্রান্তি" একটি সংস্কৃত শব্দ আর "সংক্রান" হল এর থাই/শ্যাম অপভ্রংশ।
প্রথমেই ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। থাই জাতিসমূহ এবং চীনের দাই জাতি এই উৎসবটিকে 'সংক্রান' বলে। থাই ভাষা মূলত সংস্কৃত, পালি আর খেমর্ ভাষা থেকে উদ্ভূত বলে এই ভাষার প্রচুর শব্দ সরাসরি তৎসম (যেমন, সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট) বা অপভ্রংশ (যেমন, অতুল্যতেজ ভূমিবল > ভূমিবল আদুয়াদলেজ)। সংক্রান্তি'র সংক্রান হবার কারণটা তাই।
অতি প্রাচীন, বৈশ্বিক উৎসব বললে বৈশাখী কিন্তু একমাত্র না। মূল লেখায় আরও দুটো উৎসবের উল্লেখ আছে (খ্রীস্টিয় নববর্ষ ও চীনা নববর্ষ), মন্তব্য-আলোচনায় মন মাঝি আরও একটি উৎসবের কথা বলেছেন (নওরোজ)। এই তিনটা উৎসবও কিন্তু অতি প্রাচীন ও বৈশ্বিক উৎসব। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটি কথা যোগ করতে চাই। দুনিয়াজুড়ে বাস করা চীনাদেরকে আমাদের কাছে আপাতদৃষ্টিতে এক জাতির মানুষ মনে হলেও বাস্তবে তারা পঞ্চাশটিরও বেশি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। সুতরাং চীনা নববর্ষ পালনকারী মানুষের সংখ্যা শুধু ২ বিলিয়ন নয়, তারা ৫০+ জাতিরও মানুষ।
নতুন মন্তব্য করুন