খরচ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৩/০৬/২০১৭ - ১০:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আতিক খুব মনোযোগ দিয়ে তার মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের মানিব্যাগ এতক্ষণ ধরে দেখার কিছু নেই, রেক্সিনের সস্তা মানিব্যাগ, জায়গায় জায়গায় রঙ চটে গেছে, ভেতরেও তেমন কিছু নেই যা এভাবে একদৃষ্টিতে দেখতে হবে। আসলে আতিক কিছুই দেখছিল না, তার ভ্রূ কুঁচকে আছে আর নীচের ঠোঁট কামড়ে ধরা। যখন খুব চিন্তায় থাকে তখন ঠোঁট কামড়ে ধরা আতিকের অভ্যাস। মানিব্যাগে সব মিলিয়ে বত্রিশ টাকা আছে। তিনটা দশ টাকার নোট, একটা দুই টাকা। দশ টাকার একটা নোট আবার ভালমত স্কচটেপ মারা, কোন এক ফাঁকে গছিয়ে দিয়েছে কেউ। এখন চালাতে কষ্ট হবে। আতিকের আপাতত প্রধান চিন্তা কোথা থেকে শ খানেক টাকা ধার পাওয়া যায়। মাস শেষ হতে আরও দুইদিন, তারপর বাড়ি থেকে টাকা আসতে আরও কয়েকদিন।
মানিব্যাগের এক কোনায় চকচক করছে একটা এটিএম কার্ড। এটা কখনও ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনি, কারণ টাকা নেই। আতিকের ভার্সিটিতে কয়েকটা ব্যাংক মিলে ক্যাম্প খুলেছিল, সেখান থেকেই ঝোঁকের মাথায় স্টুডেন্ট একাউন্টটা খোলা। এখন আফসোস হচ্ছে, কেন যে ছাই পাঁচশ টাকা খরচ করে একাউন্টটা খুলেছিল। টাকাটা থাকলে এখন কাজে দিত।
আতিক রাস্তায় বের হয়ে এল, ভার্সিটিতে যেতে হবে। ক্লাসের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল টাকা ধার করা কারও কাছ থেকে। গতকাল বৃষ্টি ছিল, আজকে আকাশে মেঘের চিহ্নও নেই। সূর্য যেন গলে পড়ছে রাস্তায়। দাঁড়িয়ে থাকার উপায় নেই। কয়েকটা বাস পর পর চলে গেল, আতিক অবশ্য উঠল না। ওগুলো সিটিং সার্ভিস, ভাড়া অনেক বেশী। এখন প্রতিটা টাকা খরচ করতে হবে গুনে গুনে। আতিক রোদের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল অনেকক্ষণ। যখন মনে হল আর পারবে না, মাথা ঘুরে এখনই পড়ে যাবে, ঠিক তখন দেখা পাওয়া গেল লোকাল বাসটার। প্রায় যুদ্ধ করে কোনমতে আতিক ঢুকে পড়ল বাসের পেটে।
বাইরের রোদে আতিক পুড়ে যাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু বাসের মধ্যে মনে হল সে সিদ্ধ হয়ে যাবে। কোনরকমে দম চেপে রডের এক কোণা ধরে আতিক ঝুলে রইল। এই বাসের ভাড়া বেশী না, স্টুডেন্ট ভাড়া পাঁচ টাকা। কন্ডাকটর কয়েকবার ঘুরে গেল, কিন্তু ভাড়া চাইল না। আতিক মনে মনে খুব আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল যে কন্ডাকটর মনে হয় ভুলে যাবে তার কাছ থেকে ভাড়াটা নিতে। টান টান উত্তেজনা নিয়ে আতিক সতর্ক হয়ে থাকল। যতবার কন্ডাকটর কাছে আসে, আতিক মুখচোখ শক্ত করে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, মুখে নিয়ে আসে আলগা একটা গাম্ভীর্য, এমন ভাব যেন সে ভাড়া না দেবার মানুষই না! দেখতে দেখতে অনেকগুলো স্টপেজ পার হয়ে গেল, আতিক মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল যে তার কাছ থেকে আর ভাড়া নেওয়া হবে না। পাঁচটা টাকা বেঁচে গেল। কন্ডাকটরের দিকে তাকিয়ে সে একটু হাসার চেষ্টা করল, তবে সেই হাসি কন্ডাকটর ফিরিয়ে দিল কিনা বোঝা গেল না। আতিকের নামার আগের স্টপেজে কন্ডাকটর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“মামা, ভাড়াডা হইছে?”
আতিক থতমত খেয়ে গেল। একবার ভাবল বলে বসে, “কয়বার দিব?” তাহলে কন্ডাকটর হয়ত কিছু না বলেই বা জিভ কেটে চলে যেত। কিন্তু ভাড়া চাইতেই অভ্যাসমত আপনাআপনিই আতিক মানিব্যাগ বের করে ফেলল। এখন আর এড়ানোর সুযোগ নেই। মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আতিক ছেঁড়া দশটাকার নোটটা বের করে দিল,
“মামা, পাঁচ টাকা রাখো।”
কন্ডাকটর নোটটা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ দুলিয়ে আবার আতিকের দিকে এগিয়ে দিল,
“মামা, এইডা বদালায়ে দেন। ছিঁড়া নোট।”
“কই ছেঁড়া? একটু টেপ লাগানো।”
“বদলায়ে দেন না, কেউ নিতে চাইব না। আপনার কাছে নোট তো আরও আছে।”
আতিক মনে মনে একটা গালি দিল, শালা ওর মানিব্যাগের ভেতরটাও দেখে নিয়েছে! ছেঁড়া নোটটা ফেরত নিয়ে আতিক দশটাকার চকচকে নতুন একটা নোট এগিয়ে দিল দাঁতে দাঁত চেপে। কন্ডাকটর পাঁচ টাকার মলিন একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে গেল, নোটের সাইজ দেখে না বুঝলে লেখা পড়ে আর বোঝার উপায় নেই যে ওটা কত টাকা। মনে মনে আরেকবার গালি দিয়ে আতিক নেমে পড়ল বাস থেকে।
ভার্সিটি পর্যন্ত হেঁটে যেতে যেতে আতিক আরও একবার পুড়ে কয়লা হল। রিকশা নিতে গেলে মানিব্যাগের আর প্রয়োজন থাকবে না। ক্লাসে ঢুকে আতিক কোনকিছুতেই মন দিতে পারল না, পুরো সময়টা তার গেল সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে আর মনে মনে রিহার্সল দিয়ে যে কাকে কীভাবে বলবে টাকার কথা। এটাই প্রথম না, তাই সঙ্কোচ আরও বেশী। আজ রিয়া আসেনি ক্লাসে। ও থাকলে বলে দেখার চেষ্টা করা যেত। মেয়েটা এত ভাল, কিছু না কিছু ব্যবস্থা করতই। ক্লাসের অনেকটা সময় আতিক রিয়ার দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেয়। ও যখন খাতার দিকে না তাকিয়ে তরতর করে লিখে যায় স্যারের নোট আর মাঝে মাঝে কলম দিয়ে ঠোঁটে টোকা মারে, আতিক তখন হাঁ করে চেয়ে থাকে রিয়ার দিকে। তারপর ক্লাস শেষ হলে আতিক মুখ কাঁচুমাচু করে গিয়ে দাঁড়ায় রিয়ার সামনে আর রিয়াও বুঝে ফেলে খাতাটা এগিয়ে দেয় মুচকি হেসে। আতিক ফোনে ছবি তুলে নেয় নোটস গুলোর। রিয়ার কাছ থেকেও আতিক কয়েকবার ধার নিয়েছে। মাঝে একবার তো ফেরতই দেওয়া হয়নি, রিয়াও মনে হয় ভুলে গেছে। আজ রিয়া আসেনি, আতিককে অন্য কারও কাছে যেতে হবে।
আতিক প্রথম চেষ্টা করল সিফাতের সাথে। মোটাসোটা গুডবয় টাইপ ছেলে। একে পটানো যেতে পারে। সিফাত বেশ কয়েকদিন লাঞ্চ খাইয়েছে আতিককে।
“দোস্ত কই যাস?”
সাধারণত আতিক সিফাতকে নাম ধরেই ডাকে আর তুমি করে বলে। আজকে আলগা খাতিরের জন্য একটু বদলাতেই হয়।
“এই তো, বাসায় যাব। ক্লাস নাই আর।”
“এত তাড়াতাড়ি! চল আড্ডা ফাড্ডা দিই, বসি কোথাও?”
“নারে ভাই, আমার তো যাওয়া লাগবে সেই মতিঝিল। এখন বের না হইলে ইফতারি মিস করুম।”
আতিক একটু দমে যায়। এত তাড়াতাড়ি চলে গেলে বিপদ। একটু কথাবার্তা না বলে হঠাৎ টাকা চাওয়া যায় না। আতিক এগোতে থাকে সিফাতের সাথে সাথে। টুকটাক অপ্রয়োজনীয় কথাও চালায়,
“আজকে ক্লাসের পড়া কিচ্ছু বুঝি নাই, পরীক্ষায় ডাব্বা মারুম।”
“হুম, আমিও ভাল বুঝি নাই। দেখি বাসায় গিয়ে কী অবস্থা।”
“আরে তুমি তো বুঝবাই, আমারে একটু বুঝায়ে দিও তো একদিন। তোমার সময় আছে কবে?”
আতিক কখন আবার তুমিতে ফিরে গেছে নিজেরই খেয়াল নেই।
“দেখি, রিয়ারে নিয়ে বসতে হবে একদিন। আগেরবার পরীক্ষার আগে রিয়া বুঝায়ে দিছিল সব।”
সিফাতের মুখে রিয়ার নাম শুনে কেন জানি আতিকের গা জ্বলে গেল। মনে হল পিছন থেকে একটা লাথি বসায়ে দেয় সিফাতকে। রিয়া সবার সাথেই মেশে, সবাইকেই সাহায্য করে। তবু আতিকের মনে হয় ওরই শুধু দাবী আছে রিয়ার সময়ের উপর। আতিকের আর কথা বলতে ইচ্ছা হল না সিফাতের সাথে। কিন্তু এতদূর এসে টাকার কথা না বললে সুযোগটাই নষ্ট। সে সরাসরি টাকার কথায় চলে গেল এবার,
“ইয়ে দোস্ত, তোর কাছে শখানেক টাকা ভাংতি হবে? আমার কাছে এক হাজার টাকার নোট, ভাঙাতে পারছি না। বাসে ভাঙাতে পারব না।” আতিক কেন যে মিথ্যা বলল সে নিজেও জানে না।
“টাকা ভাঙানো লাগবে? চল মোড়ের কাছের ফ্লেক্সির দোকান থেকে ভাঙায়ে দিই। ওই মামার সাথে ভাল সম্পর্ক আছে। প্রতিদিন ফ্লেক্সি করি তো। প্রায়ই টাকা ভাঙায়ে নিই।”
আতিক থতমত খেয়ে গেল। এটা সে ভাবেনি। আমতা আমতা করে বলল,
“ইয়ে, আমি তো মোড় পর্যন্ত যাব না। ভার্সিটিতে কাজ আছে। তোমার কাছে থাকলে দাও। কাল-পরশু নিয়ে নিও।”
“নাহ, আমার কাছে তো হবে না। চারশ টাকা আছে পকেটে। ফেরার সময় ইফতারী কিনে নিতে হবে বাসার জন্য।”
“ও আচ্ছা, তাহলে আর কী করা। একশ টাকাও দিতে পারবা না?”
“নাহ, অনেককিছু কিনতে হবে। চল না, তোমার টাকা ভাঙায়ে দেই। আর সময় না থাকলে পরে ওই মামার কাছে আমার নাম বলে চাইলেই ভাঙিয়ে দেবে।”
এরপর আর কিছু বলার থাকে না। সিফাতকে শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে আতিক আবার ফিরে এল ভার্সিটিতে। আরও দুইজনের কাছে চেষ্টা করল। একজন তো তাকে পারলে ধরে ইফতারী পার্টিতে নিয়ে যায়, যখন বলল যে টাকা ভাঙাতে পারছে না। অন্যজন ডাইরেক্ট রিফিউজ করে দিল। আর কিছু না পেয়ে আতিক রিয়াকে ফোন দিল, যদি কাছাকাছি থাকে তাহলে হয়ত কোনও ব্যবস্থা হবে।
“হ্যালো”
“হ্যালো রিয়া, আতিক বলছি। কই আছ তুমি?”
“ও আতিক, আমি তো একটু ব্যস্ত আছি, ফ্যামিলি প্রোগ্রাম। খালার বাসায় এসেছি।”
আতিক দমে গেল। ফ্যামিলি প্রোগ্রামে থাকলে আর ক্যামনে কী! তবুও রিয়ার সাথে কথা বলতে তো সমস্যা নেই।
“ও আচ্ছা, ক্লাস মিস করলে আজকে। আমিও নোটস পেলাম না!”
রিয়া খিলখিল করে হাসি দিল একটা, “হা হা হা, এইজন্য ফোন দিয়েছ? আমি এখানে বসে থেকে কীভাবে নোটস পাঠাব বল?”
আতিক কী বলবে কিছুই ভেবে পেল না। আরও অর্থহীন কিছু হয়ত বলতে যেত। কিন্তু তার আগেই রিয়া বলল,
“আচ্ছা, আতিক রাখি এখন। আমরা একটা ফ্যামিলি গেম খেলছিলাম তো। পরে কথা হবে।”
ফোনটা পকেটে রেখে আতিক হাঁটা শুরু করল এবার। বাড়ির দিকে ফিরবে। এদিকে আর কিছু করার নেই। মেসে ফিরে যদি কারও কাছ থেকে কিছু ব্যবস্থা হয়।
ফেরার পথেও বাসে ছেঁড়া নোটটা নিয়ে একচোট হয়ে গেল। আতিকের মেজাজ এমনিই খারাপ ছিল, তাই ব্যাপারটা প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে চলে গেল। শুরু হল এভাবে,
“মামা, নোটটা ছিঁড়া। পাল্টায়ে দেন।”
আতিক মুখ শক্ত করে বলল, “আর নাই, ওইটাই রাখো।”
“এই টাকা চালাইতে পারমু না, অন্য নোট দেন।”
“বললাম না অন্য নোট নাই? এক কথা কয়বার বলতে হয়? পাঁচ টাকা ফেরত দাও।”
এবার কনডাক্টরও গেল গরম হয়ে,
“ছিঁড়া দশ টাকা নিয়ে রাস্তায় নামছেন? এই লন ধরেন, ভাড়া লাগব না আপনার। বড়লোকি জামা-প্যান্ট পিন্দাইয়া সব বাসে উঠলে ফকির হইয়া যায়।”
“এই কী বললি তুই?”
“তুই তুকারি করেন ক্যান? যা কইছি, বুইঝা লন পারলে। শিক্ষিত লোক।”
আতিক কলার চেপে ধরতে যাচ্ছিল কন্ডাক্টরের, অন্য যাত্রীরা ঠেকাল। রাগে কাঁপতে কাঁপতে আতিক আসার সময় পাওয়া মলিন পাঁচ টাকার নোটটা ছুঁড়ে দিল কন্ডাক্টরের দিকে। কন্ডাক্টর সেটা কুড়িয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, “এইটা আগে দিলে আর এত ক্যাচাল লাগে না।”
বাস থেকে নেমে আতিকের রাগটা একটু কমল। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। কেমন একটা অবসন্নতা ভর করে এসেছে পুরো শরীরে। বিকাল হয়ে এসেছে। ভ্যাপসা গরম চারিদিকে। একটু ঠাণ্ডা হতে আতিক ঢুকে পড়ল সুসজ্জিত একটা শপিং মলে। চারিদিকে অসম্ভব ভিড়। ঈদের আর বাকি নেই বেশীদিন। যে যেভাবে পারছে শপিং সেরে নিচ্ছে। শোরুমগুলো ঘুরতে ঘুরতে আতিক লোভীর মত চেয়ে থাকল দামী শার্ট-প্যান্টগুলোর দিকে। এবার ঈদে ওর কিছুই কেনা হবে না। তা না হোক, বাড়িতে ছোট ভাই আছে একটা, ফেরার সময় ওর জন্য কিছু নিয়ে ফিরতে পারলেও হত। মানিব্যাগে এই মুহূর্তে বাইশ টাকা।
রিয়ার জন্যও কিছু কিনতে পারলে হত। ঈদের আগে শেষ ক্লাসের দিন যদি হাতে তুলে দিত কোনও উপহার, তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যেত রিয়া। কোথাও ভাল কিছু দেখলেই আতিকের রিয়ার কথা মনে পড়ে। মনে হয়, যদি উপহার হিসেবে দিতে পারত। চারিদিকে হাজারটা জিনিস, কত সুন্দর, কত মনোহর উপহার, কত চোখ ধাঁধানো মেয়েদের পোশাক। আতিক ওইসব পোশাকে কল্পনায় দেখে চলে রিয়াকে। একটা ঘোর চলে আসে মনে। আতিক হাসল, এর কোনটাই সে কখনও কিনে দিতে পারবে না রিয়াকে। যদি কখনও সামর্থ্যও হয়, ততদিনে কোথায় যাবে রিয়া আর কোথায় থাকবে সে! আতিকের অধিকার ওই ক্লাসনোট পর্যন্তই।
শপিং মল থেকে বের হয়ে আসল আতিক। বাইরের আগুনের হলকা ওকে আবার স্বাগত জানাল। ইফতারীর সময় এগিয়ে আসছে। চারিদিকে মানুষের বাড়ি ফেরার ব্যস্ততা। চারিদিকে কত খাবারের পসরা সাজানো। আতিকের মানিব্যাগে বাইশ টাকা। আতিক সাত টাকা দিয়ে একটা বড় কলা আর পাঁচ টাকায় একটা বন রুটি কিনল ইফতারীর জন্য। মানিব্যাগে পড়ে থাকল সেই ছেঁড়া দশটাকার নোটটা। ইফতারীর আর বাকি নেই খুব বেশী। প্রায় আধাঘন্টা। আতিকের কিছুই করার নেই, কোথাও যাবার নেই। ইফতারীর সময় হলে রাস্তার পাশেই শেষ করবে খাবারটা। শপিং মলের ধার ঘেঁষে একগাদা এটিএম বুথ। কত মানুষ ঢুকছে আর বের হচ্ছে সেখান থেকে। আতিকের চোখ আটকে গেল একটায়। রিয়া না? হ্যাঁ রিয়াই তো। বের হচ্ছে একটা বুথ থেকে। একটু হলেই আতিক এক্সিডেন্ট করত, যেভাবে ছুটে যেতে গেল। কিন্তু রাস্তা পার হতে হতে রিয়া গাড়িতে উঠে পড়ল, আতিক কয়েকবার ডাকলও রিয়ার নাম ধরে, রিয়া শুনতে পেল না। গাড়ি ছেড়ে দিল, মিশে গেল রাস্তার গাড়ির স্রোতে।
আতিক বুথের সামনে এসে দাঁড়াল। সেখানে এখন মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক টাকা তুলছেন। রিয়া খুব সুন্দর একটা স্নিগ্ধ পারফিউম ব্যবহার করে। বুথের সামনে দাঁড়িয়ে আতিক সেটার কিছুটা পেল, মনে মনে কিনা কে জানে। ওই কাঁচের ঘরে জমে আছে রিয়ার সুবাস। আতিককে সেখানে যেতেই হবে। লোকটা বের হতেই আতিক পাগলের মত গিয়ে ঢুকল বুথের ভেতর। হ্যাঁ, আসলেই সেই পরিচিত সুবাস। বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে স্ক্রিনের দিকে চোখ ফেলতেই আতিকের নিঃশ্বাস আটকে গেল। আগের লোকটা তার কার্ড বের করে নেয়নি। স্ক্রিনে লেখা আছে আরও লেনদেন করতে চায় কি না। এক ঝটকায় দরজা খুলে বের হয়ে আতিক লোকটাকে খুঁজল। কেউ নেই। রাস্তা ফাঁকা হয়ে এসেছে কারণ ইফতারীর সময় প্রায় হয়ে গেছে। আবার বুথে ঢুকল আতিক। ব্যালেন্স চেক করে হাঁ হয়ে গেল। প্রায় আশি লাখ টাকা সেখানে। আতিক ভেবে দেখল সে এখন কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলতে পারে এখান থেকে। তার বেশীও হতে পারে, লিমিট কত দেওয়া তা তো জানা নেই।
আতিক বিভিন্ন বাটন চাপতে লাগল যাতে টাইম আউট না হয়ে যায়। আর দ্রুত ভাবতে লাগল কী করা যায়। এই পঞ্চাশ হাজার টাকা পেলে তার অনেক সমস্যা মিটে যায়। বেশ কিছুদিনের জন্য সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। কিনতে পারে একটা গীটার, যেটার জন্য প্রাণ আনচান করছে কতদিন ধরে। শখ মিটিয়ে কিনতে পারে কত বই, যেগুলোর দিকে লোভাতুর হয়ে তাকিয়ে থাকে এখন দোকানে গেলে। একটু আগে দেখা পোশাকগুলো আজই ওর গায়ে উঠতে পারে। ভাইটার জন্য ইচ্ছেমত পোশাক কিনে বাড়ি ফিরতে পারে। রিয়ার জন্য কালই কিনে নিয়ে যেতে পারে কতকিছু। রিয়া, রিয়া?
আতিক হাত গুটিয়ে নিল। সে অন্যের টাকায়, চুরির টাকায় রিয়াকে গিফট কিনে দেবে? একবার আতিক হাতে নকল লিখে নিয়ে গিয়েছিল পরীক্ষায়। রিয়া সেটা দেখতে পেয়ে ওর সাথে কথা বলেনি দুই সপ্তাহ। যদি কখনও ও জানতে পারে তাহলে আর এই জীবনে সে রিয়ার সামনে যেতে পারবে না। অবশ্য আতিক জানত না, রিয়া নয় ওর নিজের ভেতরটাই ওকে কখনও টাকাটা নিতে দিত না। কন্ডাকটরের কাছে সে পাঁচ টাকা বাঁচায়নি মিথ্যা বলে, আর পঞ্চাশ হাজার টাকা মেরে দেবে সে?
কার্ডটা বের করে সেটা নিয়ে বের হয়ে আসল আতিক বুথ থেকে। বুথের সিঁড়ির একপাশে বসে পাউরুটি দিয়ে কলাটা খেতে শুরু করল। লোকটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। খাবার শেষ হয়ে গেল কারও দেখা নেই। বুথের গার্ডেরও কোনও খোঁজ নেই, নিশ্চয়ই ইফতারী করতে গেছে কোথাও। লোকটা আসল আরও মিনিট দশেক পর। প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে। মুখ ফ্যাকাশে সাদা হয়ে গেছে। সারা শরীর ঘেমে একশেষ। এসেই কোনদিক না তাকিয়েই ঝড়ের বেগে ঢুকে গেল বুথের ভেতর, আতিককে খেয়ালই করল না। বের হল একটু পরেই। উদভ্রান্ত চেহারা নিয়ে তাকাল এদিক ওদিক। আতিক শান্তভাবে এগিয়ে গেল লোকটার দিকে। কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এত বেখেয়াল হলে চলে?”
লোকটা কার্ড হাতে নিয়েই আগে বুথের ভেতর গিয়ে চেক করল। তারপর বেরিয়ে এল একগাল হাসি নিয়ে। আতিক আগের মতই শান্তভাবে বলল,
“চিন্তা নেই, সব ঠিকই আছে।”
এবার মনে হয় লোকটা একটু লজ্জা পেল। কাছে এসে আতিকের হাত ধরে বলল,
“ভাই, আপনি আমার যে উপকারটা করলেন। কার্ড ভেতরে রেখে চলে গেছি। যেতে যেতে মনে পড়ল। যে কেউ টাকা তুলে নিতে পারত।”
আতিক কিছু বলল না, ওর কেমন জানি অনুভূতিশূন্য লাগছে। সে ভাল কাজ করেছে কি খারাপ সেটা নিয়ে চিন্তা করতে ইচ্ছে করছিল না। লোকটা একভাবে কথা বলে যাচ্ছে পাশ থেকে, তার কিছুই ঠিকমত কানে ঢুকছে না আতিকের। তার চেয়ে বরং বাসায় গিয়ে বিছানায় গিয়ে শরীর এলিয়ে দিতে মন চাচ্ছিল। লোকটার কথা কিছু কিছু এবার বোঝা যাচ্ছে,
“ভাই, আর কিছু বলার নাই, চলেন দুইভাই মিলে একটু চা টা খাই।”
আতিক সায় দিল। দুইজনে গিয়ে বসল কাছেরই একটা টি স্টলে যেখান থেকে আতিক কলা পাউরুটি কিনেছে ইফতারীর আগে। লোকটা আরও কিছু কথা বলে গেল, আতিক হু, হা করে কাটিয়ে দিল। তার একবারও মনে হল না যে লোকটার কাছে শখানেক টাকা ধার চাওয়া যায়। আতিকের নিজেকে বড় মনে হতে লাগল। লোকটার আশি লাখ টাকা থাকতে পারে, কিন্তু আজ সে আতিকের কাছে ঋণী। আতিক আর তার কাছে ঋণী হতে পারবে না। সস্তা সেন্টিমেন্ট আর কী। চা শেষ হল, বিল দেওয়ার সময় আসল। লোকটার কাছে সব বড় নোট আর কিছু কয়েন। দোকানদার ভাঙিয়ে দিতে চায় না। আতিক তার ছেঁড়া দশ টাকাটা এগিয়ে দিল দোকানীর দিকে। সারাদিন শেষে এতক্ষণ পরে আতিকের মুখে হাসি ফুটল।

-সীমান্ত রায়
https://www.facebook.com/sumuraay


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

চমৎকার গল্প।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

-সীমান্ত রায়

সুমায়ের খান এর ছবি

প্রতিটা গল্প-উপন্যাসের মত এখানেও আমাদের মূল চরিত্র সৎ লোক।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সুমায়ের খান, আপনার সাথে একমত হতে পারছি না। এটাকে আমার ক্লিশে গল্প মনে হয় নি। একানে মূল চরিত্র সৎ না। মানুষ কেবল সৎ আর অসৎ হয় না, মাঝখানে অনেক বড় একটা স্পেক্ট্রাম আছে। অনেকে ঘুষ খান, অনেকে খান না। অনেকের জীবনে টুকটাক মিথ্যা অসততা আছে, আমার বন্ধু তাজমহল দেখতে গিয়ে কম টাকার টিকিট কেনার জন্য নিজেকে ভারতীয় বাঙালি বলে দাবি করেছে, কিন্তু সে ঘুষখোর না।

এখানে মূল চরিত্র কিন্তু একবার পরীক্ষায় নকলও করেছে, সে সৎ না। আমার মনে হয়েছে, যদি আতিক পথে কুড়িয়ে ৫০০ টাকার নোট পেত তাহলে সে আসল মালিকের প্রত্যশায় বসে থাকতো না। কিন্তু অনেকগুলো টাকার মধ্য থেকে যে নিতে সাহস করে নি।

@লেখক: ভালো লেগেছে সমাপ্তিটা।

শুভেচ্ছা হাসি

সুমায়ের খান এর ছবি

@মেঘলা মানুষ, ভাইয়া আমি বলি নাই গল্পটা সস্তা হয়েছে। শুধুমাত্র দুষ্টামি করার লক্ষ্যে আমার মন্তব্যটা করা। শেষে কিছু ইমোজি ছিল, সেটা আমার মন্তব্যে না দেখানয় হয়ত আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন।
@লেখক(সীমান্ত রায়) আপনি আপনার লেখা চালিয়ে যান। হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। কেউ যে গল্পটা এত মনযোগ দিয়ে পড়বে, সেটা কল্পনায়ও ছিল না। কৃতজ্ঞতার ভাষা নেই। আপনার সাথে একমত পুরোপুরি। এখানে আসলে সততাটা গল্পের কোনও উল্লেখযোগ্য দিক না। খুব সাধারণ কিছু সেন্টিমেন্ট, কমপ্লেক্স আর দৈনন্দিন জীবনের ঘটে চলা কিছু খণ্ড দৃশ্য বর্ণনা করতে চেয়েছি মাত্র। আরও গল্প নিয়ে আবারও হাজির হচ্ছি শীঘ্রই হাসি

** তাজমহলে গিয়ে একই কাজ আমিও করেছি, এই সমাজ কি আমাকে মেনে নেবে!! :/

-সীমান্ত রায়

মন মাঝি এর ছবি

আমার বন্ধু তাজমহল দেখতে গিয়ে কম টাকার টিকিট কেনার জন্য নিজেকে ভারতীয় বাঙালি বলে দাবি করেছে, কিন্তু সে ঘুষখোর না।

হে হে! চেহারায় মিল থাকার কারনে এই কাম সার্ক দেশগুলির অনেকেই করে। আমি একটা নিজেই দেখেছি, নিজের ক্ষেত্রেও এমনকি ঘটতে যাচ্ছিল। ২০০৫-এ একবার গিয়েছিলাম। তখন দুই বাংলাদেশি ছোকরা হাতেনাতে ধরা খেয়েছিল, একজন কায়দা করে সটকে পড়েছিল আর অন্যজনকে পাব্লিকলি কান ধরে উঠবস করানো হয়েছিল। পরে শুনেছি ওখানকার স্টাফদের সন্দেহ হওয়াতে জিজ্ঞেস করেছিল ওরা কোত্থেকে এসেছে। তাদের নিশ্চিন্ত উত্তর - কোলকাতা। তারপরের প্রশ্ন - কোলকাতার জনপ্রিয়তম দুইটা ফুটবল ক্লাবের নাম বলতো! ব্যস, আর যায় কোথায়, ছাগলগুলির মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না, অথচ বলে কিনা কোলাকাতাইয়া!!! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আমি সেবার দিল্লী-আগ্রার অনেক জায়গাতেই গিয়েছি। একবার এমনি একটা হিস্টোরিকাল সাইটে - আগ্রা ফোর্ট বা এরকম কোথাও হবে, ঠিক কোথায় এখন আর মনে পড়ছে না - টিকিট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখি দুইটা কাউন্টার। বড় হলঘরের মতো অফিসের একমাথায় দুইটা জানালায় দুইটা কাউন্টার। একটা কাউন্টার ভারতীয় নাগরিক আর অন্যটা বিদেশীদের জন্য। ভারতীয়দের জন্য টিকিট ১০ রূপি, বিদেশীদের জন্য ১০০ বা ১৫০ রূপি (ঠিক মনে নেই)। ভারতীয় কাউন্টারের সামনে শতশত লোকের হাজার হাজার মাইল লম্বা লাইন, আর বিদেশীদের কাউন্টারের সামনে - একটা পিঁপড়াও নাই! বোধহয় এক কনা ধুলাও নাই। ফাঁকা তেপান্তর। আমি খানিকটা আন্দাজ করতে পারছিলাম আসলে কি ঘটছে, কিন্তু আর বেশিকিছু না ভেবে সোজা বিদেশী কাউন্টারে দাঁড়ালাম। কিন্তু কাউন্টারে লোক নাই। ডাকাডাকি শুরু করলাম, কিন্তু কেউ জবাব দেয় না ভিতরে অনেক লোক থাকা সত্ত্বেও। বেশ কিছুক্ষণ ডাকা্ডাকি করার পর একজন আরেক মহিলাকে দেখিয়ে বললেন উনিই বিদেশী কাউন্টারের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে। তো ঐ মহিলা কিছুটা ভিতর দিকে বসে অন্যদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। আমি তাকে ডাকলাম। কয়েকবার ডাকার পর ঐ মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে ভিতর থেকেই হাত দিয়ে দিশী কাউন্টার দেখিয়ে ওখানে যেতে বললেন। আমি ভাবলাম উনি বোধহয় আমাকে ইন্ডিয়ান ভেবে ভুল করছেন, তাই এবার গলা চড়িয়ে প্রায় চেঁচিয়ে বললাম - আমি বিদেশী, ইন্ডিয়ান না। প্রথমে মহিলা খুব অবাক হলেন, তারপর মহা বিরক্ত হয়ে হাত ঝটকা দিয়ে বললেন - যাও যাও, ঐ কাউন্টারেই যাও! ভাবখানা - পাগল-ছাগল নাকি, ১০ রূপির টিকিট ১৫০ রূপি দিয়ে কিনতে চায়!!! সবাই তো ওখানেই যাচ্ছে! এইভাবে বোধহয় ২ বার চাপান-উতোর হলো। সম্ভবত মহিলা মজার আড্ডা ছেড়ে উঠে আসতে চাচ্ছিলেন না। আমিও নাছোড়বান্দা। শেষে ঐ মহিলা এক ঢোকে এক কলস চিরতার পানি খাওয়া মুখ করে রাগে গজগজ করতে করতে উঠে এসে আমার ফরেন টিকিট করে দিলেন।

ফরেন টিকিট কিনার যুদ্ধজয় শেষ করে টিকিটটা হাতে নিয়ে ঘুরতেই দেখি পাশের তথাকথিত ইন্ডিয়ান লাইনের দিশী-বিদেশী লোকগুলি চোখ গোলগোল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, যেন কোন খাঁচা-পালানো চিড়িয়াখানার জন্তু দেখছে! গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা, ধন্যবাদ ভাই। আসলে নীচে "মেঘলা মানুষ" যেমনটা বললেন, সৎ না অসৎ এটা গল্পের মূল বিষয় না। এখানে খুব সাধারণ কিছু সেন্টিমেন্ট বা কমপ্লেক্স এবং দৈনন্দিন জীবনে হর হামেশা ঘটে চলা কিছু দৃশ্য বর্ণনা করতে চেয়েছি। আর এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "প্রাগৈতিহাসিক" যেখানে মূল চরিত্র সৎ বা "ভাল" নয়। ভবিষ্যতে আমার লেখায় সাধারণ চরিত্রের বাইরেও অন্যরকম মানুষেরা উঠে আসবে।

-সীমান্ত রায়

বড়বাঘা এর ছবি

সুন্দর গল্প। সচলের নিদারুন নীরবতা ভাঙ্গার জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। অচিরেই হাজির হচ্ছি নতুন গল্প নিয়ে। হাসি

সোহেল ইমাম এর ছবি

চলুক আরো লিখেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। পড়তে থাকুন। হাসি

গগন শিরীষ  এর ছবি

চমৎকার গল্প,ভাল লেগেছে!

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ভালো লেগেছে গল্পটা। এমন কতই না ভাবনার দোলাচল চলে সঙ্গোপনে। যদি কেউ ভেতরটা দেখতে পেতো তবে কেলেংকারি হয়ে যেতো। খুব ঝরঝরে গদ্য আপনার। আরও গল্প পড়ার প্রত্যাশা রইল।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

Shimanta Roy এর ছবি

ধন্যবাদ,সময় নিয়ে পড়ার জন্য। আসলেই এই দোলাচলেই কি জীবনের একটা বড় অংশ কেটে যায়? তারপর একটা সময়ে এসে মনে হয় কী অর্থহীনই না ছিল অনুভূতিগুলো, হয়ত হাসি ফোটে ঠোঁটের কোনায় তখন কিংবা মোচড় দিয়ে ওঠে কোথাও। আর ভেতরটা দেখতে পেলে অনেককিছু সহজও হয়ে যেত কিন্তু, অবশ্য সেই জীবনেরও কোনও মানে থাকত না। আশা করছি খুব শীগ্রই নতুন দৃশ্য নিয়ে হাজির হব, তবে আমি খুব অস্থিরমতি কিনা, একটা থেকে অন্যটায় দৌঁড়ে বেড়াই। তাই প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে গিয়ে হিমশিম খাই হাসি
- সীমান্ত রায়

রাজিব মাহমুদ এর ছবি

ভালো গল্প। তবে টাকাটা তুলে নেয়ার সময় আতিকের তথা আধুনিকব মানুষের মনোজাগতিক দ্বন্দ্বগুলোকে নিয়ে আরেকটু নির্মোহ বিশ্লেষণ চলতে পারত। ঐ জায়গাটা একটু নীতিকথা'র মত শোনালো। আরো লিখুন। শুভকামনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।