ভাষাপোকা-২য় পর্ব (৩য় পর্বে সমাপ্য)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৪/০৮/২০১৭ - ১:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাজিব মাহমুদ

সৌম্য ঘুম থেকে ওঠে অনেক বেলা করে। বাইরে একেবারে ডাঁ ডাঁ রোদ। রাতে ভাষাপোকার সাথে কথোপকথনের ব্যাপারটা মনে পড়ায় নিজে নিজে হেসে নেয় কিছুক্ষণ। নিজেই বলে যে এই ক্রমাগত রাত জাগা ওর মগজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে; ওর ভালো ঘুম দরকার না হলে এরকম আরও কত অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার মাথায় চেপে বসবে কে জানে! আজ শনিবার। অফিস ছুটি।

সপ্তাহের এই দিনটায় বিকেল বেলায় ও দীপার সাথে নিয়ম করে দেখা করে। শনিবার দীপার অফিসও ছুটি। ওদের পরিচয় হয়েছিল একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে, এক বন্ধুর মধ্যস্থতায়।

দীপা ডিভোর্সি, ওর পাঁচ বছরের ছেলে সাজিদকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটেই থাকে। প্রথম দীপার বাড়িতে যাবার পর দীপা বলেছিল,

“আমি আসলে অনেক দূর উড়তে গিয়ে সুতা কাটা ঘুড়ি হয়ে গোত্তা খেয়ে পড়ে গেছি। বাট স্টিল আই এ্যাম এ হেল্পলেস ড্রিমার, য়্যু নো, সৌম্য। আমি বোধহয় আর শোধরাব না।” দীপা বলে যায় কীভাবে কাটা ছকেই চলছিল তার জীবন: ঝঞ্ঝাট হীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন-প্রথম চেষ্টায় বেশ ভালো একটা বেসরকারি চাকরি-আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের পাত্রের সাথে বিয়ে-বছর ঘুরতেই ফুটফুটে ছেলে সন্তান। পরের তিনটি বছরও বেশ কেটে গেল। এরপরই আকাশে সুতোর টান: “দ্যাট বাস্টার্ড স্লেপ্ট উইথ হিজ বেস্ট ফ্রেন্ডস’ ওয়াইফ।”

এদিকে সৌম্য’র আট বছর ধরে চলা সম্পর্কটার শেষ যতিটাও পড়ে গিয়েছিলো। ওর কলেজ জীবনের প্রেমিকা ধীরা বাবা-মা’র ঠিক করা কানাডায় থাকা পাত্রকে বিয়ে করে ভারহীন ভবিষ্যৎ গড়তে চেপে বসেছিল স্বপ্নপাখি উড়োজাহাজে। চলে যাবার আগের দিন পর্যন্তও সৌম্য বিশ্বাস করতে পারেনি যে ধীরা সত্যিই চলে যাচ্ছে। যাবার আগে একটা নির্জন কফি শপে দেখা করে ধীরা বলেছিল, “সম্ভব হলে ক্ষমা করে দিও।”

সৌম্য ধীরাকে ক্ষমা করেছিল কিনা ও নিজেই নিশ্চিত নয়। ধীরা চলে যাবার শুরুর দিকের হলুদ বিকেলগুলোকে পোড়া পোড়া মনে হলেও আস্তে আস্তে ধীরার সাথে ওর স্মৃতি ফ্যাকাসে হয়ে আসে। তবে প্রায়-ই রাত-বিরেতে ঘুম ভেঙে ভেতরটা খুব তেতো হয়ে যেত। নিজেকে মনে হত একটা মরা মাছ: চোখ দু’টো যার অনুভূতিশূন্য ভাবে দিনরাত খোলা। সৌম্য অফিসে যায়, একেকটা নতুন এ্যাসাইনমেন্টের জন্য ঢাকায় বা ঢাকার বাইরে ছোটে, রাত জেগে রিপোর্ট লেখে, কফি খায়, সন্ধ্যায় একা একা হেঁটে বহুদূর চলে যায়। একটা অনিচ্ছুক লক্ষ্যহীন হাসের পিঠে চড়ে যেন শুধুই লক্ষ্যহীন আকাশ-ভ্রমণ।

এরকমই একটা সময়ে সৌম্য’র সাথে দেখা হয়ে যায় রোমানা বলে একটা মেয়ের। অভাবী ঘরের মেয়ে। দিনের বেলা একটা বুটিক শপে কাজ করে আর রাতে কল গার্ল। এক রাতে রোমানার পুডিং-কোমল শরীরে পাখা খসা পতঙ্গের মত গোত্তা দিতে দিতে হঠাৎ-ই ওকে ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরে সৌম্য ফিশফিশিয়ে বলে উঠেছিল, “আই এ্যাম হেল্পলেসলি লোনলি। ছেড়ে যেও না আমাকে।” রোমানা সে রাতে এ নিয়ে কথা বাড়ায় নি। পরে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল যে সৌম্য’র সাথে ওর আর দেখা করা সম্ভব না। ফিরে এলো আবার সেই রূপকথার রাজহাঁস। সেই আত্ম-মন্থনের সান্ধ্য ভ্রমণ।
এরপর দীপা চ্যাপ্টার। দু’জনেই তাদের ভেতরে একটা একটা ভেঙে পড়া জীবনের মূর্তি বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। মনের ছোট ছোট টানে তৈরি নকশা একসময় শরীরের কাছে সমর্পিত হয়। এক রাতে দীপাকেও ঐ এক-ই কথা বলে সৌম্য যা রোমানাকে বলেছিল। তবে এবার সে তৈরি ছিল ধাক্কা খাওয়ার জন্য। তবে দীপা তাকে ধাক্কা দেয় নি। ওরা একে অন্যের মাঝে একটা স্ট্রাকচার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে-সমাজ, ভবিষ্যৎ, অতীত, বর্তমান এসবের একীভূত একটা হাওয়ার গাছের ওপর বৃন্তের মত ফুটে থাকে ওরা দু’জন। তবে প্রায়ই তীব্র শারীরিক আনন্দের সময়গুলোতে আচমকাই আনমনা হয়ে পড়ত দু’ জন। মাঝে মাঝে একসাথেই। তবে এটা সৌম্যের চেয়ে দীপার-ই বেশী হত। একটা পুরো দুস্তর বিবাহিত জীবন কাটিয়ে আসার অভিজ্ঞতার কারণেই হয়তবা এমন হয় তার যে জীবনের অভিজ্ঞতা সৌম্যের নেই।

আজকে সৌম্য দীপা’র ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর দীপা দরজাটা ভিজিয়ে দিয়ে বলে-

“একটা কথা বলা দরকার তোমাকে… কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। তবে ব্যাপারটা ইম্পরট্যান্ট…

“বলো কী ব্যাপার। এতো হেসিটেট করছো কেন?”

“না মানে আব্বুর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।”

“কী হয়েছে উনার?”

“আসলে আব্বু আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে। মা সেদিন বলছিল আব্বু প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমার কথা তোলে। আব্বুর ধারণা আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গ্যাছে…”

দীপা কথাটা শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ চলে যায়। ওর শেষ বাক্যটা যেন অন্ধকারে ঝুলতে থাকে। সৌম্য কী বলবে বুঝে ওঠার আগেই পাশের ঘর থেকে সাজিদ এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আম্মু আম্মু…কারেন্ট চলে গেসে…ভূত আসবে।”

ওদের রুমের পাশের বারান্দা দিয়ে দেখা যাচ্ছে যে আকাশ কালো হয়ে এসেছে। বৃষ্টি নামবে যে কোন সময়। সৌম্য উঠে পড়ে।

বাসায় ফিরতে ফিরতে বৃষ্টি’র আঠায় ওর শরীর আর শার্ট এক হয়ে গেছে। রাতে শোয়ার আগে ওর মনে হতে থাকে যে ওর জ্বর আসছে। বাইরের বৃষ্টির শব্দ কমে এসেছে। কালকের মত দক্ষিণের খালি প্লটটার অস্থায়ী পুকুরটায় ব্যাঙের গ্যাঁ-গোঁ গ্যাঁ-গোঁ হাল্কা তালে শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টি আর চারপাশের নানা শব্দের কারণে তেমন উচ্চকিত হতে পারছে না। আস্তে আস্তে শব্দ বাড়তে থাকে। হাওয়ায় হাওয়ায় সেই শব্দ সৌম্য’র মগজে কুন্ডুলী পাকিয়ে ঢুকে পড়তে থাকে।

বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে সৌম্য। মনের ভেতরে একটা অস্বস্তি দলা পাকিয়ে গলার কাছে উঠে আসতে চাইছে। চোখ বন্ধ করতেই সকালে শোনা সেই শিস আর ওঙ্কারের মিশ্রণ ভেসে আসে। এবার সৌম্য আর প্রথমবারের মত ভয় পায় না।

“না খেয়েই শুয়ে পড়লে যে?” ভাষাপোকা শুধায়।

“খিদা নাই। তুমি আবার এসেছো?”

হ্যাঁ, কারণ কথাগুলো বলাটা জরুরী।

“চলে যাও। তুমি আমার কল্পনা। তোমার কোন অস্তিত্ব নাই”

“যাব। কথাগুলো বলে একেবারেই চলে যাব।”

“আমি কোন কথা শোনার অবস্থায় নেই। শুনতে চাইও না”

“শুনতে হবে তোমাকে। কারণ তোমরা এভাবে দিনের পর দিন আমাদের ক্ষতি করে যেতে পার না। এটা বন্ধ হতেই হবে।”
“কীসের ক্ষতি? কে ক্ষতি করছে তোমাদের?”

“তোমরা”

“মানে কী? কীভাবে?”

“মিথ্যা কথা বলে”

“কী বলতে চাও পরিষ্কারভাবে বলো।”

“তুমি আজকে দীপাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে এলে কেন?”

“পালিয়ে মানে? বৃষ্টি আসছিল তাই… ”

“ওসব ভাঁওতা আমাকে দিও না। তুমি ওর তোলা প্রসঙ্গটা ফেইস করতে ভয় পাচ্ছিলে। কেন পাচ্ছিলে?”

সৌম্য আচমকাই চুপ মেরে গেলো।

“আমি-ই বলে দিচ্ছি। কারণ প্রসঙ্গটা বিয়ের দিকে যাচ্ছিল তাই। তুমি তো ওকে বিয়ে করতে চাও না। এক বাচ্চার মা একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করার মত বোকা তুমি নও। অথচ তুমি-ই গায়ে পড়ে ওকে তোমার জীবনে থেকে যেতে বলেছিলে। তুমি মিথ্যা বলেছো। দীপা তোমার কাছে একটা আশ্রয়ের মত। একটু সামলে উঠেই তুমি ওকে ফেলে চলে যাবে।”

সৌম্য এবারও চুপ। ভাষাপোকা বলে যায়-
“তবে এটাও ঠিক যে দীপাও তোমাকে ভালোবাসে না। ও এখনো ওর আগের স্বামীকে যাকে ও কথায় কথায় বাস্টার্ড বলে তাকে ভুলতে পারে নি। তুমি ওর কাছে নিঃসঙ্গতা দূরে ঠেলে রাখার একটা খেলনা ছাড়া আর কিছুই না।

“কী বলছো উল্টা পাল্টা! আমি কি বাচ্চা যে ও আমাকে খেলনা বানাবে আর আমি ওকে খেলতে দিব?” এবার জিজ্ঞেস না করে পারে না সৌম্য।
“তোমরা দু’জনেই দু’জনের খেলনা কেননা তোমাদের দু’জনেরই দু’জনকে প্রয়োজন। তোমার একটা সেইফ কম্প্যানি প্রয়োজন- এই নিঃসঙ্গ জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছো তুমি। আর দীপার প্রয়োজন সামাজিক স্থিতাবস্থায় ফিরে যাওয়ার একটা সাঁকো আর ওর ছেলের জন্য একটা সাইনবোর্ড। সিম্পল। আর সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে তোমরা দু’জনেই দু’জনকে মিথ্যা বলে যাচ্ছ।”

বাইরে রাতটা গাঢ় হতে থাকে।

“আর হ্যাঁ দীপা আরও মিথ্যে বলেছে। ওর বাবা’র শরীর এমন কিছু খারাপ না। এটা তোমার ওপর বিয়ের চাপ দেয়ার একটা কৌশল। এখানেই শেষ না, আরও আছে। দীপা মনে মনে তোমার মায়ের মৃত্যু চাইছে কারণ ও ভাবে ওর ছেলে সহ ওকে ছেলের বউ হিসেবে তোমার মা কখনোই মেনে নেবে না। অথচ দেখ রোমানা নামের যে মেয়েটাকে তুমি তোমার জীবনে ধরে রাখার কথা বলেছিলে, সেটা যদিও আরেকটা মিথ্যা কথা, তবে সে তোমাকে নিয়ে আজও ভাবে। তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে ও খুবই ভেঙে পড়েছিল। আরও শুনবে?”

“বাকি আছে নাকি এখনো কিছু?”

“বটেই আছে। তোমার প্রথম প্রেমিকা যে ধীরা সে-ও তোমাকে ভেবে অনেক ডিপ্রেশনে আছে। স্বামীটা ভালো পেয়েছে তবে তোমাকে সে ভুলতে পারছে না। মেয়েটা অনেক ভালোবাসতো। শুধু একটা ভালো জীবনের লোভে ও তোমাকে ছেড়ে গিয়েছিল। এটা তো তুমি জানতেই। অথচ ধীরা চলে যাবার পর তুমি নিজের সাথে এত নাটক করলে যে যেন তুমি ওকে ছাড়া বাঁচবেই না। আসলে তুমি এতদিনের পুরনো এই সম্পর্কে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলে। ও চলে যাবার পর তোমার নিজেকে ভারমুক্ত মনে হয়েছিল।

“তোমার কথা কি শেষ হয়েছে?”

“শেষ করছি রোমানাকে দিয়ে। মেয়েটা কিন্তু তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিল কিন্তু তোমাকে ওর অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াতে চায়নি। কিন্তু তুমি ওকে তোমার জীবনে থেকে যেতে বললেও ও যদি সত্যিই থেকে যেত তুমি কিছুদিন পরেই চলে যেতে ওকে ছেড়ে।”
ভাষাপোকা যেন দম দেয়ার জন্য কয়েক সেকেন্ড থামে। এরপর একগাদা বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করে-

“এবার তুমি-ই বল তোমাদের এই হাজার হাজার মিথ্যার ভার আমি আর আমার শব্দ-সৈন্যরা কেন বয়ে বেড়াব?”

“শব্দ-সৈন্য? তারা কারা?”

“এরা আমার সৈন্যবাহিনী। আমি হলাম মা-পোকা। সমগ্র ভাষা সত্ত্বাকে ধারণ করি আমি। আর আমার সৈন্যরা ছোট ছোট বোধগুলো ধারণ করে। এদের একেক জনের নাম “ভালোবাসা”, “আনন্দ”, “দুঃখ”…

“বাহ্‌! ভালো গপ্পো ফেঁদেছ। তা কী করে তোমার এই সৈন্যের বহর?”

“সব কিছুই করে। ইন ফ্যাক্ট তোমাদের মানবিক সম্পর্কগুলোকে ওরাই টিকিয়ে রাখে। যেমন তোমরা মানুষেরা যখন এক অন্যকে ভালোবাসার কথা বলো তখন আমি আমার ‘ভালোবাসা’ নামের যে শব্দ-সৈন্য আছে তাকে পাঠাই। মগজ থেকে তোমাদের মুখের বাতাসে।”

“একই সঙ্গে তো অনেকেই বলতে পারে ভালোবাসার কথা। তখন? এক সৈন্যকে কতজনের কাছে পাঠাও?”

“ওরা একই সময়ে থাকতে পারে অনেক জায়গায়। সেটা কোন সমস্যা না। আগেই বলেছি যে ভাষা শুধুই একটা ফর্ম না যার অস্তিত্ব শুধু একটা শরীরে আটকে থাকবে। তুমি আবারো কৌশলে প্রসঙ্গ ঘোরানোর চেষ্টা করছ… আমার প্রশ্নের উত্তর দাও…তোমরা কেন এত মিথ্যে বলো?

“জানি না।”

“জানো না মানে? তোমরা একেকটা মিথ্যা বলো আর আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। শুধু তাই না মুখে “ভালোবাসি না” বলে মনে মনে ভালোবাসা টাইপের জটিল অনুভূতির জন্য কোন শব্দ-সৈন্য তৈরি নেই আমার। তোমরা জটিল জটিল সব অনুভূতি তৈরি করো আর আমাদের সেগুলোর জন্য নতুন নতুন শব্দ-সৈন্য তৈরির চিন্তা করতে হয়। একবার ভেবে দেখেছো যে আমাদেরও রিসোর্সের লিমিটেশান থাকতে পারে”

আবার দম নিতে থামে ভাষাপোকা, এরপর বলে যায়-

“তোমরা দিন দিন আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছ। তোমাদের এই মিথ্যের কারণে আমার শব্দ-সৈন্যরা বিদ্রোহ করেছে। ওদের অভিজ্ঞতা থেকে ওরা দেখেছে যে তোমরা মানুষেরা সভ্যতার এই পর্যায়ে এসে কেউই আর সত্য বলোনা। তোমাদের আইনজীবী, ব্যবসায়ী, মন্ত্রী, প্রেমিক, শিল্পী, চোর, সাধু প্রত্যেকটা মানুষ এখন প্রতি মুহূর্তে মিথ্যে বলে যাছে অনর্গল। আইনজীবীরা অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য আদালতে মিথ্যা বলে, ব্যবসায়ীরা ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা রঙিন তরলকে খাঁটি ফলের জুস বলে চালায় আর বলে যে সেটা নাকি খুবই স্বাস্থ্যকর, মন্ত্রীরা সংসদে বসে বলে দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে অথচ দেশে অপরাধ, গুম, খুন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে…”

ভাষাপোকা একটু দম নিয়ে বলে যায়-

“আমার শব্দ সৈন্যরা বলেছে যে এভাবে তারা মিথ্যা ‘ভাব’ কে আর বহন করে যেতে পারবে না। এরকম মিথ্যার কালো শরীরকে ধারণ করতে করতে ওদের শরীর-আত্মাও কালো হয়ে যাচ্ছে। ওরা এই ভয়ঙ্কর অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চায়। আগামীকাল মগজের হেড কোয়ার্টারে এক জরুরী মত বিনিময় সভা ডাকা হয়েছে আমাকে প্রধান অতিথি করে। জানি না কী বলব ওদের। আমি তো চোখে অন্ধকার দেখছি…ভাষার সামনে তো কোন ভবিষ্যৎ -ই দেখছি না। এভাবে চলতে পারে না। তোমরা নিজেদের শোধরাও। কী হল?”

সৌম্য গভীর ঘুমে অচেতন। ওর নাক ডাকার শব্দ বিকট থেকে বিকটতর হচ্ছে।(চলবে)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

১ম পর্বের লিঙ্কঃ http://www.sachalayatan.com/guest_writer/56676

ধন্যবাদ

রাজিব মাহমুদ

সোহেল ইমাম এর ছবি

প্রথম পর্বটা পড়ে তেমন ভালো লাগেনি কিন্তু এই পর্বটা পড়ে কেন জানি আগ্রহী হয়ে উঠলাম। তৃতীয় পর্বের জন্য এখন অপেক্ষা। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

রাজিব মাহমুদ এর ছবি

সৎ ও আন্তরিক মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা, সোহেল ভাই। শেষ পর্বটা নিয়ে প্রচুর কাটাকাটি চলছে।

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনার কোন লেখা পেলে আগ্রহ নিয়েই পড়ি। দারুণ লেখেন আপনি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

রাজিব মাহমুদ এর ছবি

আপনার আগ্রহের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

রাজিব মাহমুদ এর ছবি

আপনার আগ্রহের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।