পটলদোষ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৫/২০১৮ - ৯:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেড়াতে যাচ্ছিলাম বউয়ের সাথে। বউয়ের বন্ধুবান্ধবীর একটি অনুষ্ঠানে, একসাথে হৈ চৈ আনন্দ যাত্রা। সেখানেই সেই ব্যাপারটির সুত্রপাত।

প্রথম দেখাতে খেয়াল করিনি অত। বাসে ওঠার সময় বউ তার বন্ধু বান্ধবীদের সাথে এক এক করে পরিচয় করাচ্ছিল, তখনই প্রথম দেখি ওকে এবং সৌজন্যের হাসি দিয়ে নিজের আসনের দিকে এগিয়ে যাই।

বাস থেকে নামার পর যখন নির্ধারিত স্থানে গিয়ে ব্যাগট্যাগ রেখে বসি তখন আমার সামনের একটা চেয়ারে এসে বসলো সে। এবার একটু ভালো করে তাকালাম। এই মুখটা আমার চেনা। মনে হচ্ছে কোথাও দেখেছি। নাকি সুন্দরী নারীদের দেখলে এমন চেনা মনে হয়?

চোখ সামলে নিজের কাজে মন দিলাম। মানে যে অনুষ্ঠানে এসেছি সেই অনুষ্ঠানে মগ্ন হয়ে গেলাম। আর বিশেষ কিছু ভাবনার ছিল না।

দুপুরে লাঞ্চ করার পর থেকে মাথা ধরেছে ভীষণ। সন্ধ্যা হতে হতে আরো বাড়লো যেন। অনুষ্ঠানে মন দিতে পারছি না। আলাদা হয়ে দোতলার একটা জায়গায় বসলাম যেখান থেকে স্টেজ দেখা যায়। নীচে বউ তার বান্ধবীদের সাথে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে হাসছে।

আমিও পাল্টা হাসি ছুড়ে দিচ্ছিলাম। তারপর চুপ করে বসে থাকলাম মাথাটা নড়াচড়া না করে। চেয়ারের পেছনে যে একটা পিলার আছে সে পিলারে মাথা ঠেকিয়ে রাখলাম ব্যথাটা কমানোর জন্য। তবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি চোখ বুজে ঘুমোবার চেষ্টা করছিলাম আসলে। কিন্তু চেয়ার থেকে পড়ে যাবার ভয়ে ঘুমটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। স্টেজের নাচগান দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে বউয়ের টেবিলের দিকে তাকাচ্ছিলাম। ওরাও খুব আনন্দ করছে।

হঠাৎ ওই টেবিলে আবির্ভাব ঘটলো ওর সেই বান্ধবীর। যাকে দেখে আমার খুব চেনা মনে হয়েছিল। আমি আবারো দেখলাম দূর থেকে। এবং আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম সেই মেয়েটিও আমার দিকে তাকাচ্ছে। সবাই যখন অনুষ্ঠানের দিকে মনোযোগী, সে যেন ওসব বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে খানিক পরপর। যদিও অনুষ্ঠান দেখতে বসেছে কিন্তু ওর বসার ভঙ্গি, মুখের অবস্থান সবই স্টেজের বিপরীতে এবং আমার দিকে তাকাবার অনুকূলে।

এবার আমি আরো একটু কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। আর কেউ আমাকে খেয়াল করছে কিনা সেদিকে সতর্ক থেকে মাঝে মাঝে ওদিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটি আমাকে লক্ষ্য করছে। সে জানে ওর বান্ধবীর বর আমি। সেই বান্ধবী ওরই পাশে বসা।

বান্ধবীকে এড়িয়ে তার বরের দিকে তাকানোর বিষয়টা একটু অন্যরকম লাগলো আমার কাছে। অনেকদিন পর কোন নারী আমার দিকে এভাবে তাকালো। মেয়েটা বেশী সুন্দরী। তবে শ্রেনী বিভাগে এই সুন্দরীরা অগ্রসর শ্রেনীর। এই শ্রেনীর মেয়েরা যৌবনে অনেক প্রেম করে। অনেক ঘটনা ঘটায়। আমি এমন মেয়ে আরো দেখেছি। এবং কিছুটা দূরে থেকেছি। এই মেয়েটাকে আমি কেন যেন একটু প্রশ্রয় দিলাম। ওর স্বামী আসেনি অনুষ্ঠানে। একা এসেছে চার পাঁচ বছরের একটা ছেলেকে নিয়ে। ছেলেটার দিকে তত মনোযোগী লাগলো না ওকে।

কিছুক্ষণ পর আমরা দুজনে একটা খেলায় মেতে গেলাম। অদৃশ্য একটা খেলা। আর কেউ জানে না। শুধু আমরা দুজন। হলভর্তি মানুষ। উৎসবে মত্ত। এর মধ্যে শান্ত হয়ে বসে থাকা দুজন মানব মানবী নীরবে দৃষ্টি বিনিময় করছে অজানা কোন কারণে।

মেয়েটার নাম আমি জানি না। ধরা যাক ওর নাম আঁখি। হ্যাঁ আঁখি আলমগীরের সাথে ওর চেহারার মিল আছে। কিছুক্ষণ পর আঁখি চেয়ার বদল করলো আমার বউয়ের সাথে। এবার খেয়াল করলাম ওরা দুজনে কথা বলছে। এতক্ষণ কথা বলেনি। কী বলছে কে জানে। কিন্তু আঁখিই কথার সুত্রপাত করেছে মনে হলো।

অনুষ্ঠান শেষের দিকে গড়ালো। আমি নীচে নেমে ওদের টেবিলে বসলাম বউয়ের পাশে। আমার সামনের চেয়ারেই বসা আছে আঁখি। কাছাকাছি দেখা হতে সে হাসলো, আমিও হাসলাম নিঃশব্দে। আর কারো সাথে বিশেষত অপরিচিত নারীর সাথে আমি এমন হাসি না। ওর সাথে হাসি বিনিময়টা স্বাভাবিক ঘটনা নয়, সেটা আমি জানি। পাশে বউ আছে, সে খেয়াল করেনি ভাগ্যিস। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে আরো কয়েকবার হাসি বিনিময় ঘটলো আমাদের।

বাড়ি ফেরার জন্য হল থেকে বের হলাম সবাই। বাইরে শীতল বাতাস। বাসে ওঠার জন্য হাঁটছি। এক পর্যায়ে সে আমার পাশাপাশি চলে এল হাঁটতে হাঁটতে। কোন কথা নেই। নীরবে হাটছি। সবাই হাটছে। তবু আমরা দুজনের হাটায় আলাদা একটা বৈশিষ্ঠ্য ছিল। হাওয়ায় খোলা চুল উড়ছিল ওর। অন্ধকারে আমার কাছে তার ঘ্রাণ ছুটে এল।

বাসে উঠে যেখানে বসলাম দুজনে তাতে দৃষ্টি বিনিময়ের বিশেষ সুবিধা হলো। যদিও আমার পাশেই বউ আছে, ওর একটু সামনের সিটে আঁখি বসা। তবু ওই সিটে বসে দুজনের দৃষ্টি বিনিময় করার একটা সুবিধাজনক কৌনিক অবস্থান আছে।

বাস চলতে শুরু করেছে। আঁখি বউয়ের সাথে কথা বলছে নানান বিষয়ে। আমার ধারণা কথা বলা একটা অজুহাত, আসলে আমার দিকে ঘুরে তাকাবার ছল। কেননা যতবার সে বউয়ের সাথে কথা বলছে, ততবার বউয়ের মাথার পাশ দিয়ে আমাকে দেখছে।

ভেবে ভালো লাগলো এই বুড়ো বয়সেও আমাকে কেউ দেখে। বউয়ের সাথে কথা বলতে হলে একটু মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে হয়, সে তাকানোয় আমার সাথে দেখা হয়। আমি ওদের কথার একটু আধটু শুনি। আঁখির সাথে আমার বউয়ের কোন ঘনিষ্টতা ছিল না। আজকেই ওরা ব্যক্তিগত বিষয়ে তথ্য আদানপ্রদান শুরু করেছে। কৌতুহলটা আঁখির পক্ষ থেকে। প্রথমে ফোন নাম্বার নিল বান্ধবীর। তারপর আঁখি খুব কৌশলে আমার সমস্ত তথ্য জেনে নিল দেখলাম। আমার গ্রামের বাড়ি, শহরের বাড়ি, কোথায় ফ্ল্যাট আছে, ইত্যাদি তথ্য বিনিময় হয়ে গেল দেখে আমি চোখ বন্ধ করেও হেসে দিলাম। মেয়েটা কেন এমন কৌতুহলী? শুধুই চোখের ভালো লাগা? নাকি অন্য কিছু? তবে আমারও যে ভালো লাগছে তাতে সন্দেহ নেই।

আঁখির দৃষ্টি বিনিময়ের সাথে বাইরের বাতাস যোগ হয়ে মাথাধরা অনেকটা প্রশমিত। চলতে চলতে একসময় গন্তব্য নিকটে চলে এসেছে। আমাদের নেমে যাবার সময় হয়ে এল। আমি উঠলাম হাতের জিনিসপত্র নিয়ে। বউ আমার আগে উঠে গিয়েছিল। আমি উঠে দাঁড়াতেই আঁখি আমার দিকে সরাসরি তাকালো। আবারো হাসলো। বিদায়ের হাসি।

এবার আঁখি সরাসরি হেসে মুখ খুললো- আবার দেখা হবে।
আমিও হাসিমুখে বললাম - বাসায় আসবেন সময় করে।

বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম বাসার দিকে। বউকে আমি ভীষণ ভালোবাসি কোন সন্দেহ নেই। তবু মেয়েটার দিকে আমার সুনজর পড়লো কী কারণে? বুকের ভেতর কেমন একটা রিনিরিনি সুখের বাজনা। মেয়েটাই কেন আমার প্রতি আগ্রহী?

অনুমান -১ : মেয়েটা ওর স্বামী নিয়ে সুখে নেই। সংসারে অশান্তিতে মেয়েটা কোথাও একটা বিকল্প আশ্রয়ের সন্ধানে আছে। প্রেম করে বিয়ে করছিল হয়তো। কিন্তু ব্যবসায়ী স্বামী খুব ব্যস্ত অন্য দিকে।

অনুমান-২ : মেয়েটা স্বভাব টাংকিবাজ। এমন সুন্দরী মেয়েরা কোন হ্যাণ্ডসাম পুরুষ দেখলে এমন মোহনীয় ভঙ্গীতে তাকায়। আমাকেও বাজিয়ে দেখেছে। বান্ধবীর স্বামী হলেও তাতে দ্বিধা করেনি।

আমার কেন যেন মনে হয়েছে মেয়েটার সাথে আমার আবারো দেখা হবে। আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরী হবে। আমি রাতে ঘুমোতে গিয়ে বারবার মেয়েটার হাসিমুখের ছবিটা ভেবেছি। কোন একটা পার্কে মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়েছে। আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বিনিময় করেছি। মেয়েটা আমার কাছে বন্ধু হবার প্রস্তাব দিয়েছে।

সকালে অফিসে ঢুকার কিছুক্ষণ পর একটা অচেনা নাম্বার থেকে যখন ফোন আসলো, আমি ফোন তুলে একটি নারীকন্ঠ শুনে চমকে গেলাম। এত তাড়াতাড়ি আমার নাম্বার যোগাড় করে ফেলেছে আঁখি। অথচ ওর নামটিও আমি এখনো যোগাড় করতে পারিনি। এমনও প্রেম হয়, সে যে চোখের ভাষায় কথা কয়.....এক সেকেণ্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে এতগুলো কথা ভেবে নিয়ে 'হ্যালো' বলে সাড়া দিতেই ওপার থেকে বলা হলো - "স্যার কয়েক মিনিটের জন্য কী সময় হবে? আমি সামিয়া বলছিলাম .....প্রোপার্টিজের পক্ষ থেকে, আমাদের কিছু ফ্ল্যাট....."

মেয়েটির কথায় আমি হুঁ হাঁ করে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু আমার মাথায় তখনো ঘুরছিল আঁখির টানা টানা ভুরুর হাসি মুখের চেহারাটা। মনে মনে বললাম- তুমি অ্যাপার্টমেন্ট কোম্পানীর বাহানা না করে সরাসরি আমাকে বলতে পারতে, যে কোন অজুহাতে তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাও!

মাঝে মাঝে মানুষ এভাবে নিজেকে মিথ্যে করে ভোলাতে পারে।

কত লোকের নাকি থাকে আলুর দোষ, আমার হলো পটল দোষ!

=================
-মাহবুব আলম


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অটল থাকুন। নইলে জীবন ভাজাভাজা হয়ে যাবে।

--মোখলেস হোসেন

মন মাঝি এর ছবি

যত দোষ পটল ঘোষ! মন খারাপ

****************************************

Pathok এর ছবি

বেশ বিরক্ত লাগলো পড়তে। এটা গল্প কি না বুঝলাম না, যদি গল্প হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিচ্ছি মূল উদেশ্য হাস্যরস সৃষ্টি করা, তাহলে বলতে হয় লেখাটা জমে নি। আর যদি হয় জীবন থেকে নেয়া তাহলে মেয়েদের দিকে তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসুক সেই কামনা করি। সচলায়তন ও লেখা প্রকাশের ক্ষেতরে আরেকটু যত্নবান হবে আশা করি।

মন মাঝি এর ছবি

আর যদি হয় জীবন থেকে নেয়া তাহলে মেয়েদের দিকে তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসুক সেই কামনা করি।

দু'জন কনসেন্টিং এ্যাডাল্টের মধ্যে রেসিপ্রোকাল ফ্লার্টিং-এর প্রসঙ্গে "মেয়েদের দিকে তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গি"-সংশ্লিষ্ট সমস্যাটা কি? এর মধ্যে "মেয়েদের দিকে তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গি"-তে কি খারাপ পাওয়া গেল? আর এরকম "তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গিতে" যদি "খারাপ" কিছু থাকেই, তাহলে একই কথা ঐ নারীটির ক্ষেত্রেও কেন প্রযোজ্য হবে না যেখানে তিনিও একই কাজ করছিলেন ? তাকেও কেন বলা হবে না - "পুরুষদের দিকে তাকানোর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসুক সেই কামনা করি।"? হাসি

****************************************

মন মাঝি এর ছবি

--ঘ্যাচাং--

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।