সেদিন বাড়ির অদুরেই
দেখা হয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী বন্ধু কর্কট রাশির
বরকত কবির সাথে, তবে সে
অপেশাদার।
কুশলাদি জানতে চাওয়ার আগেই সে উল্টিয়ে কলার
আমায় বলে, হেরে গেলে ভন্দু।
বিস্ময় ও গোসসায় আমি হয়ে উঠি কাতর
কিন্তু আমায় নিজের পক্ষ সমর্থনের কুন সুযুগই দেয় না নিষ্ঠুর
অপেশাদার কবিটি। বলে, পপিতা এখন আমার ফ্রেন্ড।
হয়ে যাই ভাষাহারা। নায়িকা পপিতা? অস্ফুটে শুধাই
তাকে, জবাবে বরকত কবি ঠাঠা হাসে পান খাওয়া দাঁতে
যেন একটি হারমনিয়াম।
তারপরে সে আমায় দেয় গঞ্জনা, বলে, জীবনে কি পেলি দুস্ত?
পপিতা আমার ফ্রেন্ড, ফেসবুকে সে রুজ আমায় মেসেজে পাঠায়
তার পোষ্টারের ছবি আর মিটিমিটি ইমটি চিমটি হাসি। আর তুই
পেলি হোসনে আরার নিপিড়ন।
তারপর আমার দুঃখে তারই আঁখি হয় ছলছল। বলে চল।
আলামিন ভাতের হোটেলে ঢুকে পর্দার আড়ালে বসে ভন্দু ভন্দু
আলাপন করি।
রামাদানে আলামিন ভাতের হোটেল যেন মহা ব্যাস্ত একটি পর্দা ঢাকা মরুদ্দান।
পরটা চিকেন ফ্রাই জিলাপি সমুচা সিংগারা পেয়াজুর সাথে রাশি রাশি বুট
আর বেগুনির পাশাখেলা। খানা বিনা কুন কথা নাই। তবে
টেবিলে নাই কুন পানির জগ। বরং ইতস্তত কয়েকটি যুবা
হেথা দিতেছে পাহারা। যদি কেউ ঘুনাক্ষরে খাইবার
করে অভিলাষ। উহারা তাহাকে দিবে বুঝাইয়া সংযম কি চিজ।
বরকত কবি উহাদের করে না পরোয়া। টেবিলে
বসিয়া সে বলে যায় তার সাথে পপিতার কি কি হয় না হয়
পপিতা নাকি একটি বতসর ধরে আছে তার ফ্রেন্ডলিষ্টে। মাঝে
মাঝে টুকিটাকি হাইহেলু হত বিনিময়। বরকত কবিতা দিলে পপিতা আসিয়া দিত লাইক।
ক্রমশ সে লাইক দিতে দিতে
একদিন লাভ দিয়া দেয় বরকত কবির একটি বড়দের কবিতায়।
তারপর আচমকা মধ্যরাতে বরকতের ফেসবুক জানলায় টুকা দিয়া বলেন পপিতা
ওগো আর যে পারছিনে।
তারপর কি থেকে কি হয়ে যায়, বরকতের মনে নাই ঠিক।
কিন্তু এ পর্যন্ত আটবার পপিতা উহাকে
বিকাশ করিতে বলে পাঠায়েছে কাতর মেসাজ। বলিয়াছে, ওগো
এখন কি হবে? আমার কাছে যে শুধু ডলার দিনার। কিন্তু উবার
চালক উহা নিতে চায় না যে? কিছু কর গো লক্ষীটি। তিন হাজার দেশী টাকা এখনই পাঠাও।
বলতে বলতে উত্তেজিত বরকত আমারে ধরিয়া বলে,
দুস্ত এসব কি হতেছে দুস্ত? এসব কিসের আলামত?
আমার সাজান জীবনটা যে তছনছ হয়ে গেল দুস্ত?
তুই কি জানিস ঐ জাফর মাষ্টার জবাব দেন যে এত ভাল ভাল কথা বলে অথচ সে পপিতার জন্য দেওয়ানা হইয়া যুবাকালে
বিষ খায়ে সুইসাইট করেছিল?
বরকত কবিকে আমি যতই বুঝাই উহা নায়ক জাফর কভু মাষ্টার জাফর নহে, আর হার্টেটাক কদাপি সুইসাইট নহে, কিন্তু সে অপেশাদার
মানতে চায় না, শুধু মেলিয়া সজল গোলগোল আঁখিদুটি
বলে, দুস্ত আমি এখন কি করিব বল? কি আছে ভবিষ্যতে?
জীবনের অর্থ কি যদি না পপিতা হয় ফ্রেন্ড হতে ফ্রেন্ডতর?
যদি না উহাকে পাই বাহুপাশে সামনাসামনি একটিবার
ফেসবুকের সীমানা ছাড়ায়ে
ক্রমাগত বিকাশের অনুরুধ ব্যাতিরেকে।
কত তাকে বলিলাম আসেন না ফুনে কথা বলি। কিম্বা ভিডিও চেট। হয় না সে রাজি।
ছলনাময়ী। বলে বরকত হাসে কবিদের হাসি (অপেশাদার)।
রূদ্ধবাক আমি
বুঝি না কি কব, শুধু কর্কট রাশির ঐ বরকত বকিয়া চলে,
বলে তুই দুই টাকার পেশাদার কবি হোসনে আরার পতি
তু কেয়া সমঝগে এইসব?
আমি তারে বুঝাতে গেলেই সে আস্তিন গুটায়ে বলে থাম
আমি চললাম
জানি না পপিতা মোর কুন জামে আটকায়ে আছে
যাই তারে করিগা বিকাশ। আর মনে রাখিছ
তুই হেরে গেলি। কারন পপিতা আমার ফ্রেন্ড। তর নহে।
এ বলে সে ছুটতে ছুটতে
আমার বাড়ির গলি বড় গলি বৃহত্তর গলি আর সড়ক ছাড়িয়ে
ভুলোক দুলোক ভেদি চলে যায় কুন সীমানার পারে
তাহার শরীর হতে এক্স-রে বিচ্ছুরন হতে থাকে ব্লেকহলের ন্যায়।
আলামিন হোটেলের মেনেজার আমার
বরাবর দুটি পেয়াজু বিক্রয়ে হয় না রাজি
বলে দুইটা ঘন্টা পরে যবে ইফতারি হবে, তখন পাবেন।
বিষাদের ভারে ভুখা পেটে
গুটি গুটি পায়ে হেঁটে ফিরে যাই আপন
নিতান্ত অপপিতা হাড্ডিগুস্ত রক্তচক্ষু বেলনঝাঁটার হোসনে আরার কাছে
আর ভাবি
আট বতসর আগে অপেশাদার বরকত কবি
এমনই বিকালে এসে কানতে কানতে বলেছিল
দুস্ত দুস্ত রেশমী কায়ছার মোর কবিতায় লাইক দিয়া ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিছে
বলছে যদি তাকে ভালবাসি তবে যেন আকসেপ্ট করি
আর ফ্লেক্সিলড করি তাকে আষ্টশ টাকা।
এসব কি হচ্ছে দুস্ত? এসব কিসের আলামত?
মন্তব্য
গল্প-১ঃ
এক আমলে সাপ্তাহিক বিচিত্রা/রোববার/পূর্বাণী/চিত্রালী/সন্ধানী/নিপুণ ইত্যাদির কোন কোনটাতে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন ছাপা হতো। বিজ্ঞাপনদাতাদের বড় অংশ ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা। যেসব প্রবাসীর বিজ্ঞাপনে ঠিকানা দেয়া থাকতো তাদের কাছে প্রায়ই বাংলাদেশ থেকে মাইয়া বা ছাইয়ারা ইনিয়ে বিনিয়ে নানা গল্প ফেঁদে টেকাটুকা চেয়ে পত্র লিখতো। কোন কোন সরলপ্রাণ প্রবাসী এভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অর্থ-সম্পদ তো বটেই প্রাণ হারাবার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
গল্প-২ঃ
পেশাদার কবিদের কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে নানা ফন্দিফিকির করে কবিপ্রেমপিয়াসী নারীদেরকে (বিশেষত প্রবাসী নারীদেরকে) প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। প্রতারিত নারী ফাঁদে পড়ে অর্থ-সম্পদ হারায় তো বটেই আত্মহত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
অপেশাদার কবি বরকতের কপালে যে কোন 'বরকত' থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। আগে তো তাকে পেশাদার কবি হতে হবে, তারপর সে পপিতা বা রেশমী কায়ছারের মন-ধন-জীবন-যৌবন সব লুট করতে পারবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনি কি মিষ্ট মিষ্ট কথা কয়ে পেশাদার কবিদের বদনাম করলেন?
ছি! ছি! পেশাদার কবির কবিতা পান করি, আর তার বদনাম করবো!! আমি অপেশাদার কবির বেকুবত্বের কথা বোঝাতে চাইলাম। নিচে দেখুন আবদুল্লাহ্ ভাইও অপেশাদার কবির বেকুবত্বের কথা বলেছেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আফসোস করিয়েন না। যতই কিল-ঘুষি মারুক আর তেল ছাড়া পরাটার বদলে শুস্ক রুটি খাওয়াক, হোসনে আরাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। আর বরকত কবির আপাত পপিতা ভাগ্যে ঈর্ষা বোধ করিবেন না। প্রেমের প্রাপ্তিতে তার ভাগ্যে জুটবে লবডঙ্কা, লোকসানের বিকাশই প্রায় অবধারিত।
আচ্ছা।
নতুন মন্তব্য করুন