প্রতিনায়কঃ একটি বিকল্পধারার পোস্টমর্টেম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২২/০৮/২০১৮ - ৬:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিনায়ক; আমাদের রক্তমাংসের জীবনে সমাজ নির্ধারিত বাঁধাধরা নিয়ম-নৈতিকতা ও ঔচিত্যবোধের বাইরে এদের অবস্থান। একক শব্দে ধারণাটাকে ধরতে এর চাইতে সুন্দর বাংলায়ন আর হয়না। সৃজনশীল শিল্পমাধ্যমে এদের আনাগোনা অবশ্যম্ভাবী না হলেও, দুর্লভ নয়।স্বাভাবিকভাবেই সমাজের দৃষ্টিতে তাদের ভাবমূর্তি ইতিবাচক নয়। ‘স্বাভাবিকতা’টাই যেখানে সমাজ নির্ধারিত, সেখানে এই নেতিবাচক সীদ্ধান্তটা ধ্রুব ভেবে নেবারও কারণ নেই। সাদাচোখে এরা ভিলেন, কিন্তু চিন্তার তারগুলোতে অনুরণন তুলতে তারা তুখোড়। কাহিনি শেষ করলেও মাথায় ধ্বনি তোলে বারবার।এই লেখাটিতে প্রচলিত চিন্তার ‘নায়ক’ আজ আমাদের ভিলেন।নায়ক শব্দটা আজ জনপ্রিয়ধারা শিল্পমাধ্যমের ছত্রিশ ইঞ্চি ছাতি, দীর্ঘাঙ্গ, বিদ্যাবুদ্ধির ইঁদুর দৌড়ে প্রথম দিকে থাকা, সঙ্গীত-নৃত্যকলা-সমরবিদ্যা প্রভূত আদা-কাঁচকলা ব্যঞ্জনে পথিকৃৎ, সুর ও অসুরচর্চায় সমপারদর্শী অতিমানুষটির জন্যেই তোলা থাক। ‘খল’ উপসর্গ খারিজ করে ‘প্রতি’র প্রতি আস্থা যদি রাখি, তবে বোধহয় ঐ চরিত্রের প্রতি আমাদের অনুদার মনের কদরটা প্রকাশ করা যায়। পাশাপাশি, ভালো খারাপ পূর্বফয়সালা বাদ দিয়ে, কাহিনিকা্রের ভেবে দেয়া চিন্তার বাইরেও উঁকি দেয়া যায়।
লেখাটি দুটো অংশে বিস্তৃত, প্রচেষ্টাটি হল দৃষ্টি ও প্রেক্ষাপটের ভিন্নতায় দুটো ঐতিহাসিক বিষয়ের অবলোকন। প্রথম আলোচনাটি প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণের দুজন অ্যান্টাগনিস্ট রাবণ ও মেঘনাদকে নিয়ে, প্রচলিত মতবিশ্বাসের বাইরে যেখানটিতে তাদের মর্যাদা বীরোচিত ও পাঠকপ্রিয় । দ্বিতীয় অংশ সাজানো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান খলনায়ক অ্যাাডলফ হিটলারকে নিয়ে রচিত কল্পসাহিত্য দিয়ে।

ইতিহাস লেখা হয়ে থাকে বিজয়ীর প্রেক্ষিতে।সবসময় যে সত্যের জয় হয় তা নয়,বরং জয়ীর টাই সত্য হয়ে ওঠে দিনে দিনে। বাকিরা কর্পূরের মতো উবে যেতে যেতে মিথে গিয়ে ঠেকে। (আধুনিক ইতিহাস লেখার পদ্ধতিটা উন্নত ও শ্রেয় হবে নিঃসন্দেহে। চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, তড়িৎ-গতির সামাজিকমাধ্যম এর জন্যে সিংহভাগ কৃতিত্ব পেতে পারে।) তাই বহুকাল আগের রচনা থেকে ; বিজয়ীর স্তোত্রগান রচয়িতাদের সৃষ্টিকর্মে প্রতিনায়ককে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো যখন ধর্মীয় মর্যাদায় লালিত কিংবা ধিকৃত হয়,তখন হাজার বছর ধরে লালিত, গেড়ে বসা ধারণার বাইরে যাওয়াটা দুঃসাধ্যই শুধু নয়, বিপজ্জনকও বটে। তবু মানুষের ভাবনা, প্রতিচিন্তা থেমে থাকেনি। কখনো সুস্পষ্টভাবে এসেছে, কখনোবা প্রতিকীরূপে। লালচুলো মৎস্যকন্যার গল্পে ছায়া হয়ে থাকেন যেমন ম্যারি ম্যাগদালিন। এভাবে প্রতিচিন্তাগুলো সৃজনসাহিত্যের আবরণে সুপ্ত নদীর মতো বয়ে চলে কালান্তরে।
রামায়ণ মহর্ষি বাল্মিকী রচিত রামচরিতকথা। লঙ্কাযুদ্ধে বিজয়ীশক্তি রামের বন্দনাবাক্য রামায়ণের মূল উপজীব্য। রামায়ণে রামকে হিরো আর রাবণকে ভিলেন করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু রচনার ফাঁকে ফাঁকে বাল্মিকী এমন কিছু কন্টেন্ট ঢুকিয়ে দিয়েছেন,এগুলো যেন বিরোধী শিবিরের মুখ ফসকানো প্রশংসা বাক্য। রামায়ণের কাহিনিকে যদি মানবিক বাস্তব ইতিহাসের সাথে মেলাবার চেষ্টা করি তবে কিন্তু ভিন্ন একটা চিত্র ভেসে ওঠে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর অমর মহাকাব্য ‘মেঘনাদ বধ’ এ রাবণকে প্রোটাগনিস্ট হিসেবে রূপায়ণ করেছেন, যেখানে ছত্রে ছত্রে রামশিবিরের চারিত্রিক খর্বতা প্রকাশিত হয়েছে। মেঘনাদ বধের আলোচনায় ঢোকার আগে মূল রামায়ণের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আবশ্যক। এই রচনাটি প্রচলিত মতবিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে লেখা , তাই প্রতিটি ঘটনার বস্তুবাদী ব্যাখ্যা অন্বেষণ আবশ্যক। যেকারণে রামায়ণ-কাহিনিতে রামকে রেখে আমরা রাবণকেই বীরোচিত করে দেখতে চাইছি,সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।

বাল্মিকীর রামায়ন রচনাকাল নিয়ে বহুমত আছে, মোটামুটি ১৫০০-৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ধরে নেয়া যায়। পৌরাণিক ব্যাখ্যামতে, পূর্বজীবনের দস্যু রত্নাকর পাপস্খলনের আশায় দৈব আশীর্বাদক্রমে রামের বীরত্বকাহিনি রচনার দায়িত্ব পান, দায়িত্বদাতা ব্রহ্মা ও নারদ। প্রচলিত ধর্মীয় মতানুসারে, বাল্মিকী ব্রহ্মার বরে রামের বীরত্বপূর্ণ কাহিনি অবলোকন করেন । কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাল্মিকী রচিত সংস্কৃত রামায়ণের বঙ্গীয়রূপ। শুধু ভাষান্তর নয়, কাহিনি, উপমা,লোকজ সংস্কৃতির প্রভাবে বাল্মিকী রচিত রামায়ণ থেকে এটি স্বতন্ত্র। হিন্দিতে তুলসীদাস রচনা করেন ‘রামচরিতমানস’। এভাবে ভারতীয় পুরাণগুলোর মতোই রামায়ণেরও অসংখ্য ভার্সন পাওয়া যায়,যেখানে কালক্রম ও কাহিনির ধাঁচে অনেক ভিন্নতা রয়েছে। সেখান থেকে নির্জলা সত্যটুকু বের করা খুবই দুষ্কর, একেক রেফারেন্সে ব্যাখ্যা একেকভাবে এসেছে, হাজার বছর ধরে মানুষের মনে লালন করে আসা এই কাহিনির ব্যাখ্যা গোষ্ঠী,স্থান এমনকি ব্যক্তিভেদেও পরিবর্তিত হয়েছে। ব্লগ,ফোরামে এধরণের মিথলজি সংক্রান্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যাগুলো অনেকাংশে যুক্তিময় হলেও একান্ত ব্যক্তিনির্ভর। লোককথায় লোকমানস ফুটে উঠবেই, সে স্বাধীনতাকে মমতাভরে পেতে নিয়েই এ লেখার অবতারণ। এত বেশি মতান্তর যে,প্রতিক্ষেত্রে তথ্যসূত্র উল্লেখ করাটা বাতুলতা। উদাহরণস্বরূপ, জাতিবিশেষে যে রামায়ণের কাহিনি বদলে গেছে সে দৃষ্টান্ত দিতে জৈন রামায়ণের কথা বলা যায়। জৈন রামায়ণ বাল্মিকীরটির থেকে কিছুটা ভিন্ন, এখানে রাম নয়,লক্ষণ রাবণকে খতম করে। এর পেছনের কারণ হিসেবে এমনটা বলে থাকেন অনেকে; রাম- রাবণ এই চরিত্রগুলো সমাজে ভালো খারাপ এর সহাবস্থানের বাইরে আর কিছু নয়। প্রজন্মক্রমে এই কাহিনিগুলো শুভ অশুভের প্রতীক বহন করে আসছে। রাম শুভত্বের প্রতীক, এমন দয়ার শিরোমণি কেউ রাবণকে হত্যার মত ভায়োলেন্স করবে ব্যাপারটা কি ভালো দেখায়? কাজেই খুনোখুনিটা লক্ষ্মণকে দিয়েই করিয়ে নেয়া যাক। তেমনি রামায়ণের মালয়, বৌদ্ধ ও ব্রহ্মদেশীয় সংস্করণেও ভিন্নতা দেখা যায়। তথ্যসূত্রময় অভিসন্দর্ভের দৃষ্টি নয়, লোকমানসের কল্পনাকে প্রশ্রয় দিয়েই এলেখার যাত্রা। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ আশ্রিত ব্যাখ্যায় ভিন্নচোখে তাকানোই এখানে উদ্দেশ্য।
পুরাণের কাহিনি এতোটাই বিবর্তিত হয়েছে যে রাম আর্য ছিলেন কিনা সে নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এর একটা কারণ রামের শ্যামারঙা মূর্তি। ভারত, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের মন্দিরে নানান রামায়ণ চরিত্রের ভাস্কর্য, মূর্তি দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রামের গাত্র নীলবর্ণ, তবে কি রামও স্থানীয়দের কেউ? এই যুক্তি থেকে অনেকে রাম-রাবণের যুদ্ধকে স্থানীয় মানুষদের গোত্রভিত্তিক সংঘর্ষ বলেন। এদিকে বংশবিচারে রাম আবার ক্ষত্রিয়। রাম ও শ্রীকৃষ্ণ জগতের পালনকর্তা বিষ্ণুর অবতার, তাই তাঁদের রঙও বিষ্ণুর রঙের অনুরূপ। এই যুক্তি অশ্বেত অনার্য রামের তত্ত্বকে বাতিল করে।
রামচন্দ্র আর্যসমাজের প্রতিনিধি, বিজিত আর্যদের স্তুতিগাথা হল রামায়ণ।বাল্মিকী যদি আর্যকবি হয়ে থাকেন তবে তাঁর আর্যজয়গান লেখার ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবে আসে। বাল্মিকী মুনি অনার্য নাকি আর্য ছিলেন সে নিয়ে তর্ক আছে বিশাল। কেউ বলেন, এত অসাধারণ কাব্য শিক্ষিত আর্য ছাড়া কি আর কারো পক্ষে লেখা সম্ভব? অনার্যদের মধ্যে কারুর সংস্কৃতে এতো দখল নিয়ে অলঙ্কারসমৃদ্ধ এই রচনা লেখা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু তারই কিছুকাল পরের আরেক কাব্যপ্রতিভা মহাকবি কালিদাস(১০০-৪০০ খ্রিস্টাব্দ) নিম্নবর্ণজাত ছিলেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত। নিম্নবর্গের হলে কালজয়ী কিছু করা সম্ভবনা এধারণার ব্যতিক্রম ঘটান তিনি। আবার রত্নাকর-জীবনের দস্যুপ্রবৃত্তি বাল্মিকীকে অনার্যের দিকে ঠেলে দেয় কিছুটা (আর্য হয়েও ডাকাতি করাটা কি অসম্ভব কিছু?)।
যাহোক, বাল্মিকী যে বর্ণেরই হোন না কেন দু’তরফ থেকেই তার আর্যবন্দনা লেখার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। উন্নাসিক আর্যসমাজের প্রতিনিধি একজন কবি তার বর্ণ নিয়ে গর্বকথা লিখবেন এমনটা অস্বাভাবিক নয় মোটেই। বিশেষ করে তারা যখন স্থানীয়দের প্রতি ঘৃণা ও অবজ্ঞা পোষণ করে। তাদের রচনায় স্থানীয়দের দস্যু, রাক্ষস,অসুর, দৈত্য ইত্যাদি নানান নেতিবাচক অ্যাট্রিবিউট আরোপন করে শ্লোকবাক্য লক্ষ করা যায়। যাযাবর আর্যগণ খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর আগে ভারতবর্ষে আসে। বহুলস্বীকৃত তত্ত্বমতে, তারা স্থানীয় আদিবাসীদের আক্রমণ করেনি বরং স্থানান্তর করে এখানে এসে বাস শুরু করে [১]। আর্যরা সংখ্যায় কম ছিল। এই অবস্থায় সংখ্যায় বেশি,শক্তিশালী স্থানীয়দের কীভাবে বশীভূত করল? হতে পারে পদ্ধতিটা কলম্বাসের রেড ইন্ডিয়ান বশীকরণের মতোই, ভেলকি দেখিয়ে। জ্ঞান-বিজ্ঞান,ধাতু-ব্যবহার, দর্শনশাস্ত্রের চর্চায় আর্যেরা এগিয়ে ছিল। তাই রামায়ণেও অধিকৃত অনার্যদের দাবিয়ে রাখার বা তাদের প্রতি আক্রোশপ্রসূত মনোভাব পোষণের ধারণাটা অমূলক নয়।

অনার্য বাল্মিকীর আর্যবন্দনা লেখার প্রতিও যুক্তি রয়েছে। আগেকার আমলে তৈলপ্রিয় রাজা-বাদশারা সভাকবিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন নিজেদের নিয়ে ভালো ভালো গুণগান রচনা করানোর জন্যে। বিভিন্ন ‘নামা’ ,’মঙ্গলকাব্য’ ও ‘চরিতকথা’য় এর ঢের উদাহরণ আমরা পাই (আজকের যুগে ব্যাপারটা বেড়েছে বই কমেনি!)
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বৈদিক যুগ থেকেই ভারতবর্ষে শ্রমবিভাজন শুরু হয় [২]। তখন জ্ঞানবিতরণ আলাদা পেশার রূপ লাভ করে, লোককবিরা প্রকৃতিযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃষ্ঠপোষকদের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভর হতে শুরু করেন। এখান থেকেই এ জনপদে শিল্পের পণ্য হয়ে ওঠার শুরু। রামায়ণ রচনা বৈদিক পিরিয়ডের মধ্যেই পড়ে, কোন আর্য পুরুষের স্পন্সরে অনার্য বাল্মিকী রামায়ণ লিখেছেন এমনটা হওয়াও অসম্ভব নয়।

যাইহোক, গ্রন্থ পড়ে এটুকু সুনিশ্চিত যে, আর্যরা এদেশের কালো-কুলো লোকেদের মোটেই পছন্দ করতোনা।
কাহিনি থেকে কিছু বয়ান দেয়া যাক;

পারিবারিক কূটনামি,রাজনীতি, গুটিবাজিতে ধরা খেয়ে রাম সস্ত্রীক গেলেন চৌদ্দ বছরের বনবাসে। ‘রামভাই’ লক্ষ্মণ চললেন সাথে (বেচারী ঊর্মিলা!ভাসুরকর্তার জন্যে চৌদ্দ বছর স্বামীবিহীন জীবন কাটালেন। তিনি একসাথে লক্ষণের ঘুমটাও ঘুমিয়ে দিতেন, যেন লক্ষ্মণ সীতাকে পুরোটা সময় রক্ষা করতে পারে।লক্ষ্মণবাবু ভ্রাতৃপ্রেমী হিসেবে হয়ে রইলেন জগদ্বিখ্যাত, স্ত্রীবঞ্চনাকারীর দিকটা কেউ চিন্তাই করলেন না।) পথিমধ্যে বনে রাবণের বোন শূর্পনখা রামকে দেখে মুগ্ধ হলেন, করলেন প্রেমনিবেদন। হাজার বছর আগের কাহিনি, এক অন্তঃপুরবাসিনী কোন একজন ভীনদেশী যুবককে নারীসুলভ জড়তা-সংকোচ ভেঙে প্রণয়-নিবেদন করলেন; “আধুনিকা যারে বল তারে আমি চিনি যে”। রাম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পাঠালেন লক্ষ্মণের কাছে, ফের লক্ষ্মণ আবার ঠেলে পাঠালেন রামের কাছে। ক্যান ভাই, এভাবে ঠেলাঠেলি করে মশকরা না করলে হতনা? রাগে শূর্পনখা সীতার ওপর চড়াও হতে চাইলেন।
‘এক পলকে প্রেম’ — মানবচরিত্রের এ অমোঘ,দুর্নিবার ব্যপারটি লক্ষ্মণ ভালোভাবে নিলেননা মোটেই, অবশ্য মানব কোথায়? এরা তো অসুর,দানব! কুলার মতো নখ যার, এমন ভয়ংকরী কেউ তার ‘রামভাই’ কে প্রেম-নিবেদন করে? এত বড় সাহস যে করে তাকে কী করা উচিৎ? বহুদূর ভবিষ্যতের জার্গন, ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’র দৃশ্যায়নে নেমে পড়লেন লক্ষ্মণ, শূর্পনখা বেচারীর নাসিকাকর্তন করে।অনার্য হয়ে আর্যপুরুষকে কামনা করা? একেবারে উচিৎ শাস্তি দিলেন ভাইয়ের ভাই।
শূর্পনখা অপমানিত,আহত হয়ে প্রতিশোধের আহ্বান করলেন ভাই রাবণের কাছে, বোনের অপমানের প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে গেলেন তিনি। লক্ষ্মণ ভ্রাতৃপ্রেমে ঘর-সংসার ত্যাগ করে বনবাস ধরলেন, এটা যদি প্রশংসনীয় হতে পারে তবে রাবণেরটি কেন নয়? ভাই রাবণ তো বোনের অপমান,আহত হবার প্রতিশোধ নিতেই সীতাহরণে প্রবৃত্ত হয়েছে।
এবার, কৌশলে রাবণ সীতাকে উঠিয়ে নিয়ে আসলেন বনকুটির থেকে। ফলে রাম সীতা উদ্ধারের জন্য লঙ্কাজয় করতে চাইলেন। এই অবতরণিকার পর শুরু মেঘনাদ বধ কাব্যের কাহিনিবিস্তার।
মেঘনাদ রাবণ ও মন্দোদরীর পুত্র, জন্মের সময় মেঘের স্বরে কান্না শুনে এই নাম রাখা হয়। বৈমাত্রেয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যু শুনে মেঘনাদ পিতা রাবণের কাছে ছুটে গেলেন যুদ্ধ-যোগদানের অনুমতি চাইতে। মাইকেলের কাব্যে মেঘনাদ সাহসী বীর, ভ্রাতৃপ্রেমী ও দেশপ্রেমিক। স্ব্দেশ আক্রান্ত দেখে বসে থাকেননি, বরং ভ্রাতৃহত্যার শোধ নিতে ছুটে গেছে্ন যুদ্ধক্ষেত্রে। বীর মেঘনাদ তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন যে, নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সম্পন্ন করে যুদ্ধযাত্রা করলে সে যুদ্ধে তিনি অজেয় থাকবেন। অতএব, দেবতারা ফন্দি আঁটতে থাকেন কীভাবে ফাঁকি দিয়ে মেঘনাদকে হত্যা করা যায়। লঙ্কাযুদ্ধে রাম-লক্ষণের বীরত্বের চাইতে বড় ভূমিকা দেখি মায়াদেবী ও ইন্দ্রদেবের ছলনার। দেবরাজ ইন্দ্র বেচারা এমনিতেই মেঘনাদের কাছে পরাজিত, সেই বিষে রামকে সর্বতোভাবে সাহায্য করলেন দেবতাসকল। মেঘনাদ বধ কাব্যের সর্গে সর্গে ইন্দ্র ও মায়াদেবীর চাতুরী দেখা যায়। যেমন দ্বিতীয় সর্গে, ইন্দ্র মহাদেব শিবের কাছ থেকে মেঘনাদ হত্যার অস্ত্র আনলেন , মায়াদেবীর মায়াবিস্তার করে চিত্ররথের মাধ্যমে সে অস্ত্র পাঠালেন লক্ষ্মণের কাছে। দেবতাদের এই উদ্যোগ রাক্ষসসেনাদের কাছ থেকে আড়াল করতে ইন্দ্র আকাশে করলেন মেঘবৃষ্টির সঞ্চার ।
এবারে ষষ্ঠ সর্গের দিকে একটু উঁকি মারি,
‘ঘরের শত্রু বিভীষণে’র সহায়তায়, মায়াদেবীর জাদুতে অদৃশ্য হয়ে, লক্ষ্মণ মেঘনাদের নিকুম্ভিলা যজ্ঞে উপস্থিত হলেন। যজ্ঞের মাঝেই লক্ষ্মণ নিজ পরিচয় দিয়ে যুদ্ধের আহবান জানালেন। মেঘনাদ এই দুর্লঙ্ঘ প্রাসাদে লক্ষ্মণের আগমন দেখে অবাক হলেন, কীভাবে সম্ভম এতো দুর্ধর্ষ বাধা অতিক্রম করে এখানে আসা? পরিচয় পেয়ে তাকে অতিথির সম্মান প্রদর্শন করে রাবণপুত্র জানালেন যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে রণে অংশগ্রহণ করার কথা, স্মরণ করিয়ে দিলেন ক্ষত্রিয়ের রীতি। কিন্তু লক্ষ্মণ সে সুযোগ দিতে নারাজ। বীর(!) লক্ষ্মণ নিরস্ত্র অবস্থাতেই বধ করতে চান মেঘনাদকে। মাইকেলের ভাষায়,”মারি অরি পারি যে কৌশলে”। এশুনে মেজাজ খারাপ হল মেঘনাদের, পূজার কোষা ছুড়ে মারলেন লক্ষণের দিকে। এই কোষার আঘাতেই তো লক্ষ্মণবীর চিৎপটাং। অজ্ঞান লক্ষণের দৈবঅস্ত্র খুলে নিতে গেলে আবারো মায়াদেবীই তাকে রক্ষা করেন। এবার মেঘনাদ অস্ত্রাগারের দিকে ছুটে গেলে তাকে বাধা দিয়ে দাঁড়ান কাকা বিভীষণ। মেঘনাদ বিভীষণকে দেখে সবকিছু বুঝতে পারলেন, “ এত ক্ষণে” — অরিন্দম কহিলা বিষাদে–

এতকিছুর পর কি খেলার আর মনমেজাজ থাকে? ইতোমধ্যে জ্ঞান ফিরে পেয়ে লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করেন।হাতের কাছে অস্ত্র না থাকায় পুজোর থালাবাসনই ছুঁড়ে দিতে থাকেন মেঘনাদ। আবারো সেসব থেকে একজন লক্ষ্মণকে রক্ষা করেন,কে করলেন আর নিশ্চয়ই বলে দিতে হবেনা! এইভাবে, কাপুরুষোচিত আচরণের চূড়ান্তটি দেখিয়ে লক্ষ্মণ অসহায় মেঘনাদকে হত্যা করলেন। বিভীষণ, মায়াদেবী, ইন্দ্রসহ সর্বতোভাবে সকল দেব-দেবতা পক্ষ নিয়ে,ছল চাতুরী করেই যদি হারাতে হবে, তবে সে ঢং কে যুদ্ধ বলার আর কী মানে থাকে?
মহাবীর মেঘনাদের মৃত্যুতে শোকাভিভূত হলেন পিতা রাবণ।যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে নিজেই চললেন ক্ষেত্রে, লক্ষ্মণকে হত্যা করতে। দেবতাসমাজ রাবণের ক্রোধ ও বীরত্বে আতঙ্কিত। রাবণ স্থির করলেন লক্ষ্মণ ছাড়া তিনি আর কাউকেই হত্যা করবেন না, পথিমধ্যে বাকিসবকে তাই হটিয়ে দিলেন। শক্তিশেলের আঘাতে হত্যা করলেন লক্ষ্মণকে, মহাদেবের অনুরোধে তিনি লক্ষ্মণের মৃতদেহকে টুকরো টুকরো করা থেকে নিরত হন। কিন্তু যার সাথে আছে দেবতা তার আবার কীসের মৃত্যু, কীসের পরাজয়? গন্ধমাদন পর্বতের বিশল্যকরণী লতা দিয়ে তৈরি মৃত্যুঞ্জয়ী অষুধে প্রাণ ফিরে পেলেন লক্ষ্মণ। অসহায় রাবণের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তাই,
“হায়, বিধি বাম মম প্রতি,
কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,
কে কবে শুনেছে লোক মরি পুনঃ বাঁচে?”
এই মহাকাব্য শুধু অমিত্রাক্ষর ছন্দে পুরাণকাহিনি বলে যাওয়া নয়, সেই সাথে এক উপেক্ষিত বীরগাথাও বটে। বাল্মিকী তার রামায়ণে রাবণ ও মেঘনাদের বীরত্বের প্রতি যে অবিচার করেছেন, তার মোক্ষম প্রতিরচনা মাইকেলের মেঘনাদ বধ।
রাবণ সম্পর্কে জনমানস পুরাণকাহিনি দিয়ে এতোটাই প্রভাবিত যে তার সৎগুণগুলোও ভুলভাবে প্রেজেন্ট করা হয়।চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিয়াল, কমিক প্রভৃতিতে রাবণের অবয়ব ভয়ঙ্করদর্শন গুণ্ডার মতো। রাবণকে বাল্মিকী রাক্ষস বলে অভিহিত করলেও তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই জ্ঞানী। তার দশানন নামটিও দশটি মাথার সমান জ্ঞানের প্রতীক বহন করে, দশমাথাযুক্ত কোন দানব নয়। ’লঙ্কায় যে যায় সে-ই রাবণ’; ক্ষমতার পালাবদল হয়, কিন্তু শাসকের আচরণে পরিবর্তন আসেনা। বর্তমান সমাজে সুপ্রচলিত এই চক্রাকার স্বৈরনীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে রাবণের নামটি চলে আসে। শত্রুর আক্রমণে মাতৃভূমি রক্ষায় বীরদর্পে অবতীর্ণ হওয়া, সুশোভিত লঙ্কার বর্ণনাশুনে অত্যাচারী স্বৈরশাসকের কথা মাথায় আসেনা। প্রবাদটিকে রাবণ বোধহয় দৈব অভিশাপেই ফেঁসে গেছেন!
রামায়ণকে অন্যদৃষ্টিতে বিশ্লেষণের আরেকটি অনন্য নিদর্শন লোকজ দার্শনিক আরজ আলীর প্রবন্ধ “রাবণের প্রতিভা”। আরজ আলী এই প্রবন্ধে রাবণ চরিত্রের,সেই সাথে রামায়ণের বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা করেছেন। মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার প্রবন্ধে তীক্ষ্ণ যুক্তিতে তিনি অনেক চমকপ্রদ দিক উন্মোচিত হয়েছে [৪]। ’রাবণসংহিতা’ নামক গ্রন্থের রচয়িতা রাবণ উদ্ভিদবিশারদও ছিলেন। খনার বছনে আছে,
“ডেকে কয় রাবণ, কলা-কচু না লাগাও শ্রাবণ।”
ভয়ালদর্শন রাক্ষসের সাথে রাবণের তুলনা দেয়া হয়েছে জনমনে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির জন্যেই।নাহলে ঋষি বিশ্রবার পুত্র, অন্যতম সপ্তর্ষি পুলস্ত্যের ভাই রাবণ কাঁচামাংসভোজী হবেন এমনটা কষ্টকল্পনীয়। পুষ্পকরথ,শক্তিশেল,অশোককাননের নির্মাতা রাবণ সামান্য হাঁড়ি পাতিলে রান্না করে খেতেননা ব্যাপারটা গোলমেলে খুবই।
সীতার সতিত্ব পরীক্ষার বিষয়ে রামচন্দ্রের চরিত্র-দৃঢ়তার অভাব চোখে লাগার মতো ।রাবণের অভিশাপ ছিল, তিনি যদি জোরপূর্বক কোন নারীকে অধিকার করতে চান তবে তাতে তার মৃত্যূ হবে। তবুও কেন সীতাকে সন্দেহ করা? রাম সস্ত্রীক অযোধ্যায় ফিরে আসার ২৭ বছর পরে, প্রজা অসন্তোষের মুখে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষায় নামতে বাধ্য করেন। প্রজারঞ্জনের জন্যে রাম স্ত্রীর প্রতি এতটা রূঢ় হলেন যে তাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হল? রামের পৌরুষ, রাম-সীতার সন্তান ইত্যাদি বিষয়েও তিনি চমৎকার ব্যতিক্রমী চিন্তার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি এই প্রবন্ধে।

রামায়ণে যে বানরবাহিনির কথা বলা হয়, সে সম্পর্কে সবচে’ যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আরজের বইতে। পুস্তক কাহিনি বা টেলিভিশন সিরিজে যেমনটা দেখানো হয়, সেই বানরবাহিনিকে দেখতে যে বানরের মতোই হতে হবে এমন কোন কথা নেই। সমাজবিজ্ঞানী মর্গান দলবদ্ধ মানবগোষ্ঠীকে কয়েক শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এগুলোর একটি পর্যায় হল গোত্র বা ক্ল্যান। এই ক্ল্যানের নামকরণ করা হয় সাধারণত কোন জন্তু,বৃক্ষ,প্রাণী ইত্যাদি থেকে। ভারতীয় উপমহাদেশে বাসরত অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ‘টোটেম’ ভিত্তিক নামকরণের প্রথা প্রচলিত আছে। ঠিক যেমনটা সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের পদবীতে দেখা যায়; সিংহ, নাগ, সেন (শ্যেন=বাজপাখি) ইত্যাদির মাঝে। এই তত্ত্বমতে ‘বানর’ও তেমনই একটা ক্ল্যান ছিল,। গোত্রের প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে তার গোত্রের টোটেমের নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। এখানেও কেসটা অনুরূপ। হনুমান,সুগ্রীব এরা ঐসব গোত্রের অধিকর্তা বা সর্দারগোছের কেউ, আর বালি হলেন ঐসব ট্রাইব এর রাজা।
রামায়ণের আরেকটা উল্লেখযোগ্য প্রতিরূপ সুকুমার রায়ের একটি নাটক, ‘লক্ষ্মণের শক্তিশেল’। পৌরাণিক চরিত্রদের দেবত্ব খারিজ করে তাতে মানবসত্ত্বা আরোপ করে হাস্যরসের মাধ্যমে কাহিনি পরিবেশন করেছেন রায়। যেখানে বিভীষণ, সুগ্রীব রাবণের আগমণে উল্টাদৌড় দেয়। জাম্বুবান বিশল্যকরণী লতার কথা হনুমানকে প্রেসক্রিপশনে লিখে দেয়।সুগ্রীবের মঞ্চাগমণ ঘটে ব্যান্ডেজ পায়ে বেঁধে!

যদি সে প্রলয়ঙ্কারী লঙ্কা যুদ্ধে রাবণ জয়ী হতেন, তবে সে ‘রাবণায়ণ’ টি কেমন হতো? এধরণের চিন্তা নতুনধারার সাহিত্যের জন্ম দেয়। সুনীল তাঁর অর্ধেক জীবনে লিখেছেন, মানুষের জীবন কতোগুলো দৈবক্রমিক ঘটনার সমাহার ছাড়া আর কিছু নয়। নিজের জীবনের উদাহরণ টেনে লিখেছেন অমোঘ,হাহাকার করা এক নিশ্চিত অনিশ্চয়তার কথা। ভেবে দেখুন তো, কী হতো যদি আমাদের বর্তমান পিতা-মাতার বিয়ে না হতো? আমরা কি আমরা থাকতাম? আমাদের চেহারা, চিন্তা-ভাবনা,আচরণ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালোবাসা সবই কি ভিন্ন হতো না? এলেখাটি পড়া শেষ করে “দূরছাই” বলা পাঠকটি হয়তো ভিন্ন নিউরোলজিকাল প্যাটার্নে চিন্তা করে আমোদিত হতে পারতেন! প্রতি মুহূর্তে কতো সম্ভাব্য ঘটনাবৈচিত্রের মধ্য দিয়ে আমরা এক গতিময় অনিশ্চয়তায় ধাবিত হচ্ছি। এই চিন্তাগুলো স্বর্গ-নরক, পারলৌকিক সুখ, জন্মান্তর ……কতো ধারণার জন্ম দিয়ে গেল! মানুষের এই বারাবাড়ি রকমের কল্পনাশক্তি নানান সাহিত্যকর্মের জন্ম দিয়েছে।ইতিহাসের কোন একটা ঘটনার ভিন্নরূপে আবির্ভাব বদলে দিতে পারে পুরো হোমো স্যপিয়েন্সের গতিপ্রকৃতি। ১৭৫৭ সালের কথাই ধরি, কিছু বিশ্বাসঘাতক নীরবে তার সেনাবাহিনি নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে লড়ে গেলে হয়তো দুশো বছরের পরাধীনতার ভার বইতে হতোনা। এর ঠিক একশো বছর পরেই যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রচলিত হয়ে যেত, তবে হয়তো দেবেন ঠাকুরের চতুর্দশতম সন্তানটিকে আমরা পেতামনা। ইতিহাস নিয়ে এই আলাপ অনেক বিলাপের জন্ম দিতে পারে , দিতে পারে স্বস্তিও। এই ‘এমন হলে কেমন হতো’ নিয়ে চিন্তার আভিধানিক নামটি হল Alternate History বা বিকল্পধারার ইতিহাস।

আগের ঘটনাটির হাজার বছর পর, আবির্ভূত হল এক উন্নাসিক এক আর্যপুত্র, অ্যাডলফ হিটলার। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মানুষদের একজন বললে তাকে ভুল হবেনা। অনার্যদের যেমন প্রাচীন বৈদিকেরা রাক্ষস,অসুর, দানবের আখ্যা দিয়েছে, এই ঊনমানবটিও তেমনি। এই মানবেতর উত্তরসূরিটি বৈদিক গ্রন্থ থেকেই খুঁজে নিয়েছে তার দলের প্রতীক স্বস্তিকা। ইহুদি, জিপসি, সমকামীদের নির্বিচারে, নিঃসংকোচে হত্যা করেছে। হিটলারকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। বিচিত্র টানাপোড়েনে তার উত্থান,পতনটিও তেমনি।তার নারকীয় তাণ্ডব, নির্মম গণহত্যা মানবসভ্যতার বুকে এক অমোচনীয় কালোদাগ । ধর্মের বাণী যুগে যুগে ধর্মরক্ষকেরা অপব্যবহার করে মানুষ হত্যা করেছে,করে যাচ্ছে।
ডারউইনের “ The fittest will always survive” কে ধারণ করে নিকৃষ্টতর মানবজাতিকে হত্যা করা জাস্টিফাই করেছে হিটলার। এর মধ্যে ইহুদিরা কিন্তু আবার মানুষও নয়! (“The Jews are undoubtedly a race, but they are not human.”[৩]) বিজ্ঞানের তত্ত্ব ব্যবহার করে মানুষ হত্যায় হিটলারই কি প্রথম?
স্তালিনের সাথে অনাক্রমণ চুক্তিতে যাবার আগে করার আগে তার বর্ণ চিহ্নিত করে নিয়েছিল হিটলার, ব্যক্তিগত চিত্রগ্রাহকের কাছ থেকে তোলা ছবিতে চুল,কান,মুখের গড়নের সূক্ষ্ম চিত্র বিশ্লেষণ করে! বিকল্পধারার ইতিহাস রচনায় হিটলারের ইহুদীবিদ্বেষ নানাভাবে এসেছে। নৈরাজ্যের বারোটি বছরে পৃথিবীর ৯০ লক্ষ ইহুদী নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল হিটলার। নাজি জার্মানির যুদ্ধে বিজয় খুব অসম্ভব কিছু ছিলনা। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল V2 রকেট যদি আর ছয়টা মাস আগে তৈরি হতো, তবে যুদ্ধের পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো। কী হতে পারতো যুদ্ধে নাজিবাহিনি বিজিত হলে? লেখকেরা নানাভাবে নাজিশাসিত বিশ্বের কল্পনা করেছেন।

রবার্ট হ্যারিসের Fatherland খুব আলোচিত একটি উপন্যাস।এখানে জার্মান রাইখের এক মধ্যবয়েসী পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে পুরো কাহিনি বিধৃত।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে যখন অক্ষীয়শক্তির বিজয় সুনিশ্চিত, তখন নাজিপার্টির মাথারা মিলে এক গোপন চক্রান্ত করে।হাইড্রিখ,হিমলার,গোয়েবল্‌স সব শীর্ষকুখ্যাতরাই জড়ানো কাহিনিতে।অন্যান্য চরিত্রও বিশ্বযুদ্ধচলাকালীন মন্ত্রী-আমলাদের নিয়েই, বাস্তব নথিপত্রের দোহাই নিয়েই লিখেছেন হ্যারিস সাহেব। পোল্যান্ড,জার্মানি, ফ্রান্স,অস্ট্রিয়ার সকল ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করার লোমহর্ষক পরিকল্পনা।এত গোপনীয়তার মাঝে এই প্ল্যান কার্যকর করা হয় যে সাধারণের কাছে এই খবরের লেশমাত্র ধারণাও থাকেনা। পুরনো নথি-পত্র ঘেঁটে অভাবনীয় সব তথ্য বের করে আনে নায়ক জেভিয়ার মার্চ। আমাদের গোয়েন্দাচরিত্রগুলোর মতো ভিক্টোরিয়ান মোরালিটিতেও আক্রান্ত নয়। এব্যাপারটা বাস্তবের সাথে আরো সঙ্গতিপূর্ণ করেছে। দিশি গোয়েন্দা-কাহিনিতে ভদ্রলোক অজ্ঞান করার উদ্দেশ্য নিয়ে পেছন থেকে মমতা মিশিয়ে পেপার ওয়েট দিয়ে বাড়ি দেন আর তাতে বেচারা ভুলে মরে যায়!এই কাহিনিতে প্রকৃত অর্থেই নির্মমতার আবহ;রক্ত,খুন,নাজিদের বীভৎসতা উঠে এসেছে।

স্টিফেন ফ্রাই, তার Making History বইয়ে হিটলারকে ইতিহাস থেকে মুছে দেন। তার উপন্যাসের নায়ক প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র, যার গবেষণার বিষয় হচ্ছে হিটলারের প্রাক্‌জীবন। সে ঘটনাক্রমে পরিচিত হয় এক পদার্থবিদের সাথে যার পিতা ছিল হিটলারের কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে্র অত্যাচারিত এ্কজন ইহুদি ডাক্তার। এই পদার্থবিজ্ঞানী আবার টাইম মেশিনের উদ্ভাবক।গল্পের নায়ক ও বিজ্ঞানী মিলে পরিকল্পনা করে অতীতে গিয়ে হিটলারকে প্রতিহত করার। প্ল্যান মোতাবেক নায়ক তার বায়োকেমিস্ট প্রেমিকার কাছ থেকে একটা পুরুষ জন্মনিরোধক বড়ি নিয়ে হিটলারের পিতাকে খাওয়ায়। সময় পরিক্রমা থেকে ফিরে এসে ছাত্রটি তার বন্ধুর কাছে জানতে চায় হিটলারের কথা। বন্ধুর নেতিবাচক উত্তরে জানায় এমন তো কারুর অস্তিত্ব তো নেই ; শুনে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে নায়ক । কিন্তু সে স্বস্তি বেশিক্ষণ টেকে না, যখন জানতে পারে নাজি পার্টির কথা, একে একে বেরিয়ে আসে ইহুদি-নিধন, ফ্যাসিবাদের রক্তহিম করা খবর। পরিবর্তিত এই ইতিহাসে হিটলারের জায়গাটি নেয় রুডলফ গ্লডার নামের এক শাসক; যে কিনা স্থিরতা, কূটবুদ্ধি, সমরনীতিতে হিটলারের চেয়েও এককাঠি সরেস! আয়রনিক হচ্ছে, পৃথিবী থেকে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করতে সে ঐ একই জন্মনিরোধকের আশ্রয় নেয়। পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার।

১৯৪৬ সালে জ্যাকন হুইন্সেল নামের এক ইহুদি ডাক্তার হিব্রুতে এক বই বের করেন, ইংরেজিতে যার মানে The Last Jew, আর কোন ভাষাতেই বইটির অনুবাদ হয়নি। এখানে দেখানো হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ের পর নাজিবাহিনির শতাব্দীব্যাপী দুঃশাসনকাল। যেখানে পুরো পৃথিবী নাজি স্বৈরশাসনে শাসিত।যুদ্ধজয়ের কয়েক শতাব্দী পরের কথা। মাদাগাস্কারে খুঁজে পাওয়া গেল বেঁচে থাকা সর্বশেষ ইহুদিকে। আসন্ন অলিম্পিক গেমসে জনসম্মুখে তাকে হত্যার মধ্যদিয়ে শুভসূচনা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু প্রকৃতি সেধে বসে বাধ, নেমে আসে আকস্মিক এক বিপর্যয়, চাঁদ ও পৃথিবী একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে আসাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় মানবসভ্যতা। কাব্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে,এই না-মানুষ যুগের অবসানে প্রকৃতির ভূমিকাই বুঝি মানবিক ছিল!

Philip K Dick এর Man in the high castle এর নামটি নাজি বিকল্পধারার ইতিহাসে শুরুর দিকেই চলে আসে।অ্যামেরিকা ব্রিটেনের লেখকেরা নাজিদের কাছ পরাজিত হতে বোধহয় একেবারেই স্বচ্ছন্দ নন।বেশিরভাগই তাদের কাহিনিতে সোভিয়েত পরাজয় দেখান, আর অ্যামেরিকা ব্রিটেনের সাথে শান্তিচুক্তি। ফিলিপের কাহিনি একটু ভিন্ন, পুরো বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত, প্যাসিফিক অব জাপান এবং দ্য গ্রেট নাজি রাইখ। প্রথম অংশটি পুরো অ্যামেরিকা ও জাপান ,অস্ট্রেলিয়া নিয়ে আর বাকি বিশ্বটুকু নাজি রাইখের নিয়ন্ত্রণে। এবার এই দুই পরাশক্তির মাঝে চলে শীতল স্নায়ুযুদ্ধ।কাহিনি যেমনই হোক, ইহুদিদের ব্যাপারে সবাই খড়্‌গহস্ত। জার্মানি প্রযুক্তির দিক থেকে জাপানের চেয়ে এগিয়ে, ১৯৬৩ সালের কাহিনিতেই জার্মানেরা মঙ্গল অভিযান চালায়। যুদ্ধে জার্মান প্রযুক্তির উৎকর্ষ, লেখকদের এদিকে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে। সম্প্রতি আমাজন একাহিনি নিয়ে ধারাবাহিক টেলিভিশন সিরিয়াল প্রকাশ করছে।

হিটলার ভারতীয় উপমহাদেশকে কেমন চোখে দেখত তা নিয়ে মতদ্বৈধ আছে।কেউ কেউ ধারণা করেন আর্যসভ্যতার উত্তরসূরী হিসেবে ভারতবর্ষ “এরিয়ান ক্লাস” বলে স্বীকৃতি পেত, স্বস্তিকার জন্মস্থান হিসেবেও। The Last article গল্পে, ভারতীয় প্রেক্ষাপটে নাজি শাসন এসেছে।বিংশ শতাব্দীর সেরা মিলিটারি বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মধ্যে এটি স্বীকৃত। যদিও এখানে হিটলার নয় বরং, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এসেছেন মূল চরিত্র হিসেবে। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশ আক্রমণ করেছে নাজিবাহিনি,তাদের উন্নত সমরশক্তির কাছে ব্রিটিশ আর্মি আত্মসমর্পণ করে। তখন গল্পে আবির্ভাব ঘটে গান্ধিজীর। অহিংস নীতিতে আন্দোলন চালিয়ে তিনি সদ্য দখলকৃত নাজিদের হাত থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে চান।গল্পে গান্ধীজির সত্যাগ্রহ নীতি নাজিদের টলাতে পারেনি, তিনি ও জওহরলাল নেহেরু নাজি মৃত্যুযজ্ঞের বলি হন। গল্পের ভাব অনেকটা এরকম, ব্রিটিশদের তবু দয়ামায়া আছে, তারা অহিংস আন্দোলনে গুলি করলেও শাসনপীড়নের নূন্যতম গ্লানিবোধটুকু রাখে। হাজারে হাজারে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের ফাঁসি দিয়ে দেয়াটা বোধহয় ওই গ্লানির মধ্যে পড়েনা!

চলচ্চিত্র, টিভি শো, নাটক, সিরিজেও হিটলারের বিকল্পধারার ইতিহাস উঠে এসেছে। এদের বেশিরভাগই উপন্যাসের চিত্ররূপ সংস্করণ। দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে Inglourious Busterds , Resistance , It happened here
উল্লেখযোগ্য।লিখিত সাহিত্যের তুলনায় চিত্ররূপ এখনো ঐ পর্যায়ে আসীন হতে পারেনি,বলা বাহুল্য। হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্র, এদের মধ্যে এক দুটি ছাড়া বাকিগুলো তেমন সাড়াও পায়নি দর্শক সমালোচকদের কাছ থেকে। Inglourious Basterds,ব্র্যাড পিট অভিনীত ডার্ক কমেডি জনরার চলচ্চিত্র। হিটলারকে হত্যা করতে অসংখ্য পরিকল্পনা করা হয়, এদের একটির রূপায়ন নিয়ে এর কাহিনি।

হিটলার সংক্রান্ত বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নিয়ে সবচে’ দুর্দান্ত থিম লেগেছে Max এর। এখানে হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধশেষে মনোবিপর্যয়ে পড়া এক সৈনিক, সেই সাথে একজন ভাল আঁকিয়ে। ইহুদিদের প্রতি এখানে সে কিছুটা মানবিক, তাদের গোষ্ঠীপ্রীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিকচর্চাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অ্যাপ্রিশিয়েট করে, কিন্তু আর্যরক্তের বিশুদ্ধতায় আবার বিশ্বাসী। উল্লেখ্য, মুভিটির লেখক পরিচালককে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়, ইতিহাসের অন্যতম দানবীয় চরিত্রটিকে ‘হিউম্যানাইজ’ করার অপবাদে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হাত হারানো এক ইহুদি চিত্রবিক্রেতা ম্যাক্স রথম্যান, আহত হবার পর ছবি আঁকার পরিবর্তে বিক্রেতার পেশা বেছে নেন।কপর্দকহীন হিটলারের চিত্রকর্ম তাকে হিটলারের চিত্রপ্রতিভার প্রতি নজর টানে।মূল চরিত্র এখানে ম্যাক্স, হিটলার প্রাসঙ্গিক চরিত্র হিসেবে এসেছে। ব্যাপারটা চলচ্চিত্রের চিন্তানন্দনতাকে বাড়িয়ে তোলে।বিস্তৃত চরিত্রের সর্বগ্রাসে আশপাশের ছোট অথচ ইনেভিটেবল চরিত্রগুলোকে অনালোকিত রাখাটা দেখে আমাদের চোখ যেখানে অভ্যস্ত।

হিটলার এখানে অসামাজিক, দুর্বোধ্য এক তরুণ। তার আঁকায় যুদ্ধংদেহী বীভৎসতা প্রকট , রক্তলালের ক্রূরতায় আক্রান্ত হয় ক্যানভাস-জমিন। ইহুদি চিত্রবিক্রেতা রথম্যান ও হিটলারের কথোপকথনের একটা অংশ তুলে দিচ্ছি। হিটলার অ্যান্টি-সেমিটিক জানার পরেও সে তার ভেতরের লালিত সততাকে শিল্পের আবরণে তুলে আনতে প্ররোচিত করে;
“Don’t kill for me, please. Just do what you do. Be anxious, be nervous, tell me you’re the unknown soldier come back to haunt us – with your brush, Hitler! With your brush – can you do that? ‘Cause that’s what you’ve got to do. You’ve got to take all this pent-up stuff you’re quivering with, and you’ve got to hurl it onto the canvas. It doesn’t have to be good and it doesn’t have to be beautiful, it just has to be true.”

শিল্পচর্চার শুভবোধটিই এখানে, মানুষ রক্তাক্ত না করেও ভালো-মন্দ,ঘৃণা, ধিক্কারের মতো নেতিবাচক আবেগগুলোর প্রকাশ করা যায়। বই, গান, চিত্র,ভাস্কর্য, চলচ্চিত্র — শিল্পের যেকোন মাধ্যম নিছক বিনোদনের উপকরণ নয়, ধ্বংসাত্মক, অর্থডক্স ভাবনা, বিরুদ্ধমত ও চিন্তাপ্রকাশের সুকোমল মাধ্যমও বটে। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত জ্ঞানের বিকাশ অব্যাহত আছে এই প্রশ্নবোধক চিহ্নটির চর্চার ফলে। সংস্কৃতি, লিঙ্গ, দর্শন , মতবাদ প্রভৃতির বৈচিত্র্যকে চর্চা শুধু এখন হোমো স্যাপিয়েন্সকে জানাবোঝার জন্যে নয়, টিকিয়ে রাখার জন্যেও জরুরী।
ভিন্নতা আছে দেখেই তো পৃথিবী এতো বিচিত্র সুন্দর।

[১]http://new.modernrationalist.com/2012/05/the-myth-of-the-aryan-invasion-of-india-ii/
[২] লোকায়ত দর্শন : দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, নিউ এজ পাবলিশার্স, কলকাতা।
[৩] Maus: A Survivor’s Tale, Art Spiegelman ; Penguin Books
[৪] রাবণের প্রতিভা, আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র ( প্রথম খণ্ড) , পাঠক সমাবেশ
এছাড়া, goodreads, নানান বই থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবন্ধ, quora,আন্তর্জালিক মাধ্যমের বিভিন্ন পর্যালোচনা,ব্লগ,ফোরাম, Wikipedia থেকে তথ্যসূত্র নেয়া হয়েছে।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

প্রিয় অতিথি,
লেখার শেষে নাম দেবেন এবং ফরম্যাটিঙে আরেকটু যত্নবান হবেন বলে আশা করি। লিখতে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

নিক দিতে তো চেয়েইছিলাম, কিন্তু একবার 'সংরক্ষণ' করে আজন্ম পাপ করেছি, আর এডিটের অপশন পাইনি। ফরম্যাটিং না করার জন্য দুঃখিত, আমি অভ্যস্ত হইনি এখনো...
--অনরণ্য

হাসিব এর ছবি

বিজ্ঞানের তত্ত্ব ব্যবহার করে মানুষ হত্যায় হিটলারই কি প্রথম?

জাপানিরা অয়গেনিকস চর্চায় ইউরোপিয়ানদের প্রায় সমবয়সী। তারা নাৎসিদের আগেই বিজ্ঞানের নামে হাত রাঙিয়েছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা। উচ্চারণটা ইউজেনিক্স নয়? গুগল তো তাই বলছে।
--অনরণ্য

হাসিব এর ছবি

মূল গ্রিক। উচ্চারণ ইউগেনেইস। ইংরেজি উচ্চারণ ইউজেনিক্স। জার্মান অয়গেনিক্স। আপনি যেটা উচ্চারণ করেন সেভাবেই লিখবেন।

হিমু এর ছবি

ইউজেনিক্সের বাংলাও আছে কিন্তু: সৌজাত্যবাদ

সত্যপীর এর ছবি

বিষয়বস্তু এবং লেখনশৈলীতে পাঁচতারা, লিখে চলুন হাত খুলে।

অল্টার্নেট হিস্ট্রি জনরাঁ আমি খুবই পছন্দ করি, যা হয়েছিল তার উপর ভিত্তি করে কী হতে পারত তা লেখা সহজ নয়। ম্যান ইন দ্য হাই কাসল আমি দুইবার দেখেছি।

The Last article গল্পে, ভারতীয় প্রেক্ষাপটে নাজি শাসন এসেছে।বিংশ শতাব্দীর সেরা মিলিটারি বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মধ্যে এটি স্বীকৃত।

এইটা নিয়ে একটা ছোট বুক রিভিউ দিবেন নাকি?

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ম্যান ইন দ্যা হাই ক্যাসল- এর বিশাল ফ্যান। ওরা খুবই দেরি করে একেকটা সিজন করছে। অন্যান্য টিভি সিরিজের মতো এটার সার্কুলেশন এতটা বেশি নয়। দেখা যাক, তিনে কী আসে!

এইটা নিয়ে একটা ছোট বুক রিভিউ দিবেন নাকি?

লেখাটার আমার বছর দুয়েক হবে বয়েস। তখনকার পড়া বইটি, নোট টোট কোথাও রেখেছি কি না তাও দেখতে হবে'খন!
--অনরণ্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

বাহ, চমৎকার লাগলো পড়তে। আরো লিখবেন আশা করি। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ,চেষ্টা করবো হাসি

এক লহমা এর ছবি

বিষয় এবং উপস্থাপনা - দুইই ভালো লেগেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, পড়ার জন্য হাসি
--অনরণ্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।