এক।।
ইকবাল সাহেবের তিন মেয়ে। তিনজনই অনিন্দ্য সুন্দরি। বড় মেয়েটির নাম মিথিলা।
আজ মিথিলার জন্মদিন। এই মুহূর্তে সে আলুথালু চুল নিয়ে বিছানার উপর বসে। পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কয়েকটি নতুন জামা, কিছু গোলাপ, আর কালো রঙের একটি বাক্স। ইকবাল সাহেব কয়েকবার এসে তাড়া দিয়ে গিয়েছেন। মিথিলার যেতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু উপায় নেই। এ বাড়ির এটাই নিয়ম।
বাক্সটার দিকে তাকালেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে। নবু আর নিরুর কী কপাল! নবু মানে নবনীতা, আর নিরু হচ্ছে নিরুপমা। দুবোন যমজ, মিথিলার চেয়ে তিন বছরের ছোটো। ওরা কখনো কালো বাক্সটা পায় না।
মিথিলাদের বাড়িটা খুব সুন্দর। বাড়ির সামনে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ, পেছনে রাতিয়ান নদী, আর দুপাশে বুনো জঙ্গল। তিরিশ বছর আগে শখ করে অনেক অনেক ফলের গাছ লাগিয়েছিলেন ইকবাল সাহেব। অযত্নে অবহেলায় সেই বাগানটাই রূপ নিয়েছে ঘন অরণ্যে।
কোন জামাটা পড়া যায়? নীল রঙের লেস লাগানো ফ্রক, নাকি আগুনে লাল স্কার্টটা? অবশ্য দুটোতেই মিথিলাকে মানাবে দারুণ। আর যাই হোক সাদা কিমোনোটা নয়। দেখলেই কেমন যেন ঘুম পেয়ে যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে ফ্রকটা তুলতে গিয়েই মেঝের কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা খুদে মানুষটাকে চোখে পড়লো।
মিথিলা অবাক হয়নি, আতংকে চিৎকারও করেনি। ৯২ কার্লাইল পার্কে কতো কিছুই তো ঘটে! দেড় ফুটি একটা মানুষ দেখে বিচলিত হবার কিছু নেই।
লোকটার গায়ের রঙ গোলাপি। লুদলুদে হলুদ একটা স্যুট পড়ে হাসি মুখে তাকিয়ে রয়েছে, যেন কতো দিনের চেনা। মিথিলার চোখে চোখ পড়তেই সে বললো,
“কিমোনোটাই ভালো হবে। সাদার উপর সবুজ পাতার নক্সাটা কেমন সুন্দর ফুটেছে দেখেছো? যেন তুষারে ছাওয়া কনিফারের সারি।”
এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো চুপ করে থাকা। জবাব দিলেই এরা পেয়ে বসে। পাত্তা না দিলে কিছুক্ষণ পর নিজে থেকেই চলে যাবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, সেই কিছুক্ষণটাই হাতে নেই।
মিথিলা শান্ত গলায় বললো,
“কিমোনো আমার পছন্দ নয়। তবে তোমার সদয় উপদেশের জন্য অনেক ধন্যবাদ। খুব খুশি হবো তুমি যদি এখন চলে যাও। আমার অনেক তাড়া।”
লোকটা যেন শুনতেই পায় নি। কোটের বোতাম থেকে বেরিয়ে আসা একটা সুতো আঙুল দিয়ে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বললো,
“অবশ্য লাল স্কার্টটাও খারাপ না। এই দেখো, কেমন অসভ্যের মতো নিজে নিজে বকে চলেছি! আমার নামটাই যে তোমাকে বলা হয় নি।”
নাম জিগ্যেস না করাটা কেমন দেখায়! মিথিলা অস্থিরতা লুকিয়ে জিগ্যেস করলো,
“কী নাম তোমার?”
“আমার নাম নিবুত। তুমি আমাকে চেনো না, আমিও তোমাকে চিনি না। হা হা হা।”
নিবুত তার কোটের সুতোয় আঙুল পেঁচিয়ে চলেছে। এবারে বেশ কঠিন গলায় মিথিলা বললো,
“আমি মিথিলা, এ বাড়ির বড় মেয়ে। তোমার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো। আমরা আরেকদিন কথা বলবো, কেমন?”
বোঝাই যাচ্ছে নিবুতের মন খারাপ করেছে বেশ। তারপরও মুখের হাসি হাসি ভাবটা ধরে রেখে বাম হাত দিয়ে এক, দুই, তিনবার তুড়ি বাজালো। যে জায়গায় সে দাঁড়িয়েছিলো সেই জায়গাটা এখন ফাঁকা।
মিথিলা কিমোনোটাই পড়বে বলে ঠিক করেছে। পরনের বাসি জামাটা খুলতে খুলতে থমকে দাঁড়ালো সে। কেমন শির শির একটা অনুভূতি হচ্ছে ঘাড়ের পেছনে। মনে হচ্ছে নিবুত বুঝি এঘরেই কোথাও লুকিয়ে। এভাবে কি পোশাক পাল্টানো যায়? লজ্জা! লজ্জা!
নবু-নিরুর ঘরটা মিথিলার ঘরের লাগোয়া। তবে দরকার না পড়লে খুব একটা যায় না সে। যদিও মাত্র তিন বছরের ছোটো, কিন্তু এমন আহ্লাদী দুই বোন, মনে হয় যেন সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পড়েছে এরা। ঘরে ঢুকলেই গায়ে জ্বালা ধরে যায়।
কয়েকটা টোকা দিতেই খিলখিল করতে করতে দরজা খুলে জড়িয়ে ধরলো দুই বোন। মিথিলার চুলে নাক ডুবিয়ে নিরু বললো,
“কী সুন্দর গন্ধ তোর চুলের দিদি! আমাদের ঘরের বাতাসে আবার মিলিয়ে না যায়, হি হি।”
আসলেই তাই। কী যে ছাই পারফিউম মাখে এরা!
“তোদের ঘরটা একটু ছাড়বি? আমি জামা পাল্টাবো।”
নবু আর নিরু একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আবারও খিলখিল করে হেসে উঠে। মিথিলার অসহ্য লাগে এই ন্যাকামি। এরা এতো হাসে কেন?
৯২ কার্লাইল পার্কে তখন আকাশ আলো করে চাঁদ উঠেছে, কাল পুর্নিমা।
দুই।।
অদ্ভুত একটা নদী রাতিয়ান, স্রোতশূন্য এবং শব্দহীন। দুপারের উঁচু গাছগুলোতে বাতাস আটকে যায় বলে ঢেউয়ের বালাই খুব একটা নেই। পানিতে প্রাণের স্পন্দন চোখে পড়ে হঠাৎ হঠাৎ, যখন ইতস্তত জমে থাকা শ্যাওলার ফাঁক দিয়ে বুড়বুড়ি কেটে যায় একটা দুটো মাছ। এমনকি আকাশ চিড়ে উড়ে চলা পরিযায়ী হাঁসেদেরও যেন অরুচি এই নদীর জলে।
বৈঠা থেকে শ্যাওলার গোছা সরিয়ে মিরাজ ভাবছিলো, এবারই প্রথম এবারই শেষ। এই ধ্যারধেরে এলাকায় আর কখনোই নয়। নেহাৎ সস্তায় পেয়ে গিয়েছে বলে আসা। উত্তরের কটেজগুলো হাতছাড়া হয়ে যায় এপ্রিলেই। এখন জুলাইয়ের শেষ সপ্তা। ফ্লাইয়ারে পাওয়া নাম্বারে ফোন করতেই বয়স্ক একজন ফোন ধরে বলেছিলো, জুলাইয়ের আঠাশ-উনত্রিশ-ত্রিশ ছাড়া খালি নেই। তবে থাকতে হলে আঠাশেই আসতে হবে। রাতিয়ানের পাড়ে গাড়ি রাখার ছাওনি রয়েছে, সেখান থেকে ঘণ্টা খানেক নৌকা বাইলেই কটেজ। নৌকার ভাড়া আলাদা। একে সস্তা, তার উপর বিদেশ বিভূঁইয়ে বাঙালি মালিকের কটেজ, মিরাজ খুশি মনেই রাজি হয়েছে।
জিপিএসএ এই এলাকার পথঘাট গুলো ভালো করে দেওয়া নেই। এটা অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। শহরের পার্ক হলে একটা কথা ছিল, বনে জঙ্গলে আর কয়জনই বা আসে। হাইওয়ের পর থেকে ইকবাল সাহেবের পাঠানো ম্যাপটাই ভরসা। মিরাজের তাতে কোন সমস্যা নেই, প্রতি গ্রীষ্মেই এমন দু তিনটে অ্যাডভেঞ্চারে যায় সে।
ম্যাপে দেখানো সরু পথটা খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি। তবে এবড়ো থেবড়ো আর আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালানো কি সহজ কথা! তার উপর সকালের ঝাড়া বৃষ্টিতে মাটি ভিজে একেবারে কাদা কাদা, গাড়ির একটা চাকা ওঠে তো আরেকটা ডেবে যেতে চায়। যেখানে দুপর দুপুর পৌঁছে যাবার কথা সেখানে রাতিয়ানের দেখা মিলেছে মাঝ বিকেলে।
নৌকা বাইতে বাইতে ছাউনিটার কথা মনে পড়লো মিরাজের। জঙ্গলের ভেতর এমন ঝকঝকে তকতকে জিনিস আশা করেনি সে। দেখলে মনে হয় যেন ক’দিন আগেই বানানো। ছাউনির উপরটা অ্যাসবেসটসের তৈরি। আজকাল আর এ জিনিস চোখে পড়েনা। পড়বার উপায় নেই। ক্যান্সারের ভয়ে দেশ থেকে অ্যাসবেসটস উঠে গিয়েছে অনেক বছর আগে।
ছাওনির পাশেই একটা গাছে হেলান দিয়ে ইকবাল সাহেব অপেক্ষা করছিলেন। টেলিফোনে গলা শুনে মনে হয়েছিলো ভদ্রলোকের বয়স নিদেন পক্ষে সত্তুরের উপর। সামনাসামনি দেখে অবশ্য পঞ্চাশের এদিক ওদিকই লেগেছে।
ইকবাল সাহেবকে দেখে যত না অবাক হয়েছিলো সে, তারচে বেশি অবাক হয়েছিলো তাঁর নৌকাটা দেখে।
মিরাজের থতমত চেহারা দেখে ইকবাল সাহেব হেসে বলেছিলেন,
“আগে কখনো চালাননি বুঝি!”
নৌকা সে চালিয়েছে বৈকি, তবে সেগুলো হয় ইঞ্জিনের, নয়তো পালের।
“প্রথম প্রথম সাবাই অবাক হয়। দু’দিন চালান, দেখবেন অন্য কিছুতে আর মন ভরবে না। এই ক্যানুটা আমি বিয়েতে উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। আমার স্ত্রী আবার ক্রি নেশনের মেয়ে কিনা। শ্বশুর মশাই গছিয়ে দিয়েছেন, কন্যা, কটেজ এবং ক্যানু। হা হা হা। চলুন, আপনার মালপত্র নামাই। ও হ্যাঁ, তার আগে এইখানটায় একটা টিপ সই দিয়ে দিন।”
“টিপ সই!”
“শ্বশুর কুলের ঐতিহ্য, ওঁরা তো আর লেখাপড়া জানতেন না।”
ক্যানু গুছিয়ে বৈঠা হাতে ইকাবাল সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছিলো মিরাজ। কিন্তু তিনি ততক্ষণে হন্তদন্ত হয়ে রওনা দিয়েছেন উল্টো পথে।
থমথমে রাতিয়ানের দিকে তাকিয়ে মিরাজের যে একটু কেমন কেমন লাগেনি তা নয়। এতোটা পথ একলা যেতে হবে! ক্যাম্পিং তার জন্য ডালভাত হলেও এই জায়গাটা ঠিক সুবিধার নয়!
পথের বাঁকে মিলিয়ে যেতে যেতে আর ফিরে তাকান নি ইকবাল সাহেব। শ্যাওলার জালে ক্ষণে ক্ষণে জড়িয়ে পড়া ক্যানু নিয়ে এগুতে এগুতে মিরাজের কেবলই মনে পড়ছে সেই অপস্রিয়মাণ কণ্ঠস্বর,
“কাম অন মিরাজ সাহেব। আপনি ইয়াং ম্যান। এখনই তো অ্যাডভেঞ্চারের বয়স! এতো ভাবছেন কেন? কেবল দেখবেন ক্যানুটা যেন ঘাটে ভালো করে বাঁধা থাকে। ফিরে আসার কিন্তু ওই একটাই ব্যাবস্থা। হা হা হা।”
দাঁড় বাইতে বাইতে সিগারেট খাওয়া অসম্ভব একটা কাজ। আপাতত বৈঠা দুটো ক্যানুতে রেখে একটা সিগারেট ধরিয়ে চিৎ হয়ে আকাশ দেখছে মিরাজ। মাথার উপরে যেন আরেকটা নদী, কেবল রঙটাই যা আলাদা। রাতিয়ানের পানি কালচে সবুজ, আর মাথার উপরে কালচে লাল। নদীর পানিতে সে লালের কোন প্রতিফলন নেই। ঘন শ্যাওলা শুষে নিয়েছে আকাশের আভা।
হাঁসেদের একটা ঝাঁক উড়ে আসছে উত্তর থেকে। সামনে থাকা হাসটা অনেক এগিয়ে, যেন সবাই মিলে তাড়িয়ে আনছে ওটাকে। হঠাৎ, খসে পড়া তারার মতো নেমে এলো সেই হাঁস, ঘুরতে ঘুরতে ঝুপ করে পড়লো ক্যানুর কিছুটা সামনে। হাঁসের দল ভ্রুক্ষেপহীন।
সিগারেট ফেলে উঠে বসলো মিরাজ। দশ বারোবার বৈঠা চালিয়ে পৌঁছে গেলো হাঁসটার কাছে। দেখেই বোঝা যায় মরে গিয়েছে ওটা। মিরাজ এগিয়ে চলে।
অনন্তকাল ধরে যেন রাতিয়ানের পানিতে আটকে রয়েছে মিরাজ। কোথায় সে কটেজ? ম্যাপ বলছে আর মাত্র একটা বাঁক। মিরাজ নিবিষ্ট মনে বৈঠা চালায়, পেছনে আকাশ আলো করা রুপোলী চাঁদ, রাতিয়ানের পানিতে তার ঘোলাটে সবুজ ছায়া! ক্যানুর খোলে পড়ে থাকা হাঁসটার চোখের মতো। মিরাজ ঠিক করেছে তীরে উঠে হাঁসটাকে গোর দেবে।
তিন।।
হাঁটাহাঁটি তাঁর পছন্দ নয়। কিন্তু একবার রাতিয়ান পেরিয়ে এলে না হেঁটে আর উপায় কী! ছাওনি থেকে একটু দক্ষিণে গেলেই মুজ ক্রিকের ঢাল। খুব বেশি হলে তিন কিলোমিটারের পথ, কিন্তু গাছ আর আগাছায় ছেয়ে থাকা নরম মাটিতে ভালো করে পা ফেলাই মুশকিল। জোরে হাঁটতে গেলে বরং পিছলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইকবাল সাহেব একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলেন। বেশিক্ষণ যে জিরোবেন সে উপায়ও নেই। আনোয়েতিনের যা বদ মেজাজ, দেরি হলে একটা ঝামেলা না বেঁধে যায়! মিরাজ যে কেন সময়মতো এলো না?
আনোয়েতিন রগচটা হলেও লোকটা সে ভালোই। ইকবাল সাহেব যে নির্দোষ এটা সে বোঝে, মানেও। কিন্তু আনোয়েতিন বুঝলে তো আর হবেনা, বিধান সে তো বিধানই। তবে এবারই শেষ। ভালোয় ভালোয় রাতটা কেটে গেলেই তাঁর মুক্তি। এগারোটা বছর যে কোন দিক দিয়ে চলে গেলো ভাবলে অবাক লাগে।
ইকবাল সাহেব হাঁটার গতি খানিকটা বাড়িয়ে দিলেন। আর বড়োজোর আধ ঘণ্টা। রাতিয়ানের শ্যাওলা কাটিয়ে মিরাজ বেশিদূর যেতে পারেনি নিশ্চয়ই।
মুজ ক্রিকের পেছনে এসে দাঁড়াতেই ঘড়ঘড় শব্দে জঙ্গলের বাঁ দিকের মাটি ফুঁড়ে একটা সিঁড়ি বেরিয়ে এলো। সিঁড়ির ধাপে ধাপে কাঁদা লেপ্টে রয়েছে। গুনে গুনে উনিশ ধাপ নামলে পরে আনোয়েতিনের কবর। আনোয়েতিন ক্রি নেশনের খাজাঞ্চি।
প্রথমে ছিল তিরিশ ধাপ। প্রতি বছর একটা করে কমতে কমতে এইবছর উনিশ। এমনটাই বলেছিলেন ইকবাল সাহেবের শ্বশুর।
বাজপাখির পালকে ছাওয়া মেপল পাতার টুপি মাথায় দিয়ে পেছন ফিরে দাঁড়িয়েছিলেন আনোয়েতিন। পায়ের শব্দে ঘুরে তাকাতেই কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন ইকবাল হাসান।
“এই যে, টিপ সই আর চুলের গোছা।”
“ছেলেটা টের পায়নি তো?”
“না না, টের পাবে কেন! ক্যানুতে নামার সময় আমি আলতো করে কেটে নিয়েছি।”
“আসতে এতো দেরি করলে কেন? পথ হারিয়ে ফেলেছিলে বুঝি? আমি কিন্তু বিধান মেনে চলা মানুষ। সময় মতো না এলে সিঁড়ির ধাপ যে একটা বেড়ে যেতো সে খেয়াল আছে?”
“দেরি কি আর ইচ্ছে করে করেছি আনোয়েতিন! ছেলেটা সময় মতো আসেনি। এদিকের বৃষ্টির গতিক তো তুমি জানোই, পথ ঘাট সব গুলিয়ে দেয়।”
“বৃষ্টি হয়েছে বুঝি? কতোদিন বৃষ্টি দেখিনা! আচ্ছা, ক্রিকটা কি আগের মতোই আছে? নাকি বুজে গিয়েছে এই সমাধির মতো?”
“কী যে বলো বুড়ো, ক্রিকের গায়ে তো আর অভিশাপ লাগেনি।”
“তোমার শ্বশুরটা বড়ই একরোখা ছিলো ইকবাল। নইলে এমন অভিশাপ কেউ দেয়! সে তো মরে খালাস। কিন্তু আমার মরেও শান্তি নেই। না পেরেছি মিলিয়ে যেতে, না হয়েছি ভুত। সারা বছর এখানে শুয়ে থাকি। বুকের উপর চাপ চাপ মাটি আর পোকা, পোকা আর মাটি। কেবল এই দুটো দিন হাত পা ছড়াতে পারি একটু। কিন্তু ওইটুকুই, এখান থেকে বের হতে পারিনা। ভুত হলে তাও এদিক সেদিক ঘুরে আসতে পারতাম। আচ্ছা, আমার কী দোষ বলো তো? আমি তো কেবল কবরটা খুঁড়তে তোমাকে একটু সাহায্য করেছিলাম। আটেপার লাশটা বয়ে এনেছিলে তুমি।”
“দেখো বুড়ো, লাশটা বয়ে আনলেও খুন যে আমি করিনি সে তুমি ভালো করেই জানো। আটেপা গলায় দড়ি দিয়েছিলো।”
“তোমার শ্বশুরকে কেন বলোনি সেটা? না হয় একটু রাগী, কিন্তু সে তো অবুঝ ছিলো না।”
“ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম মাটিচাপা দিয়ে মেয়েদের নিয়ে পালিয়ে যাবো। এই উপদেশটা তখন দিলেই ভালো করতে বুড়ো। তুমি, আমি, আমার মেয়েরা, সবাই বেঁচে যেতাম।”
“আমিও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ইকবাল। আসলে তোমাদের বিয়েটাই এতো ঝামেলার ছিলো, মাথাটা তাই ঠিকঠাক কাজ করেনি। যাই হোক, তোমাকে এগিয়ে দিই বরং। আর হ্যাঁ, কালো বাক্সটা আনতে ভুলো না যেন। বাক্সটাই আসল, ওটা না থাকলে এই টিপ সই আর চুলের গোছার কোন মূল্যই নেই।”
তিনটি ধাপ বাকি থাকতেই কুঁকড়ে গেলো আনোয়েতিন। তার বাড়িয়ে দেওয়া বাঁ পায়ের মাংস খুলে সাদা সাদা হাড় বেরিয়ে এসেছে, সে হাড়ে অজস্র ফাটল। বেচারা মারের চোটে মরার আগেই মরে গিয়েছিলো।
রাতিয়ানের তীরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আনমনা হয়ে গেলেন ইকবাল সাহেব। আচ্ছা, তিনি কি মৃত, নাকি জীবিত? এই যে চোখের সামনে দিন দিন বেড়ে উঠছে মিথিলা, নবনীতা আর নিরুপমা, ওরা?
আটেপার সাথে জড়িয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা ভেবে বুক ভার হয়ে আসে তাঁর। বেশ তো ছিলেন ঘুরে ফিরে। মাছে ভাতে বেড়ে ওঠা বাঙালির ছেলে হয়েও এই ঘোর উত্তরের দেশে বন-জঙ্গল-হ্রদের নেশায় কী দারুণই না কাটছিলো জীবন। আটেপা এসেছিলো সে উত্তুঙ্গ জীবনে এপ্রিলের প্রশান্তি নিয়ে। তবে প্রশান্তিও কখনো কখনো বড় একঘেয়ে ঠেকে। নইলে আটেপা অমন গলায় দড়ি দিতে যায়!
ঝোপের আড়াল থেকে ক্যানুটা ঠেলে নদীতে নামিয়ে দিলেন ইকবাল হাসান। রাতিয়ানের বদ্ধ পানিতে চাঁদের আলোয় একটা সরু পথ দেখা যায়। চারপাশের কালচে সবুজের বুক চিড়ে রুপোলী সে পথ চলে গিয়েছে ৯২ কার্লাইল পার্কের ঘাটে। মাথার উপর আকাশ আলো করা চাঁদ। কাল পূর্ণিমা। পূর্ণিমার আলোয় ইকবাল হাসানের ক্যানু চলে তরতর, এই পথটা কেবল তাঁরই জন্য।
চার।।
বোতামটা যে কোথায় হারালো!
একটাই মাত্র কোট নিবুতের। একটু ভালো জামাকাপড় না পড়লে ছোটখাটো এই মানুষটাকে কেউ পুঁছবে? অন্য কোন বাড়ি হলেও না হয় একটা কথা ছিলো, কিন্তু কার্লাইল পার্কের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা। এ বাড়ির অনুষ্ঠানে হেঁজিপেঁজি কেউ আসেনা। অবশ্য নিবুত নিজেও নেহাৎ ফেলে দেবার মতো কেউ নয়, রীতিমতো নিমন্ত্রিত হয়েই এসেছে সে। কিন্তু প্রথম দর্শন বলে কথা। ইকবাল হাসান মানুষটা কেমন কে জানে!
একজোড়া চোখের বড় শখ তার। এই চোখ দুটো অনেক পুরনো হয়ে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতেই ফিক করে হেসে ফেললো নিবুত। কী কপাল তার! দুটো চোখের জন্য এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে কিনা বিপদে পড়লো সেই চোখ নিয়েই! অন্ধকারে আর যাই হোক, একটা কালো বোতাম খুঁজে পাওয়া এদের কম্ম নয়, এমনকি আকাশে জ্বলজ্বলে একটা চাঁদ থাকলেও না।
অনুষ্ঠান মাঝরাতে, অন্য অতিথিরা এখনও এসে পৌছয়নি। নিবুত ভেবেছিলো বাড়ির লোকদের সাথে গল্পগুজব করে সময়টা কাটিয়ে দেবে। বড় মেয়েটার যা মেজাজ! বলতে গেলে একরকম তাড়িয়েই দিলো। কে জানে, ওই ঘরেই বোতামটা পড়লো কিনা! কিন্তু এখন আর ফিরে যাবার উপায় নেই। ইকবাল সাহেব ফিরে এসেছেন। নিবুত উদাস মনে নদীর দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
পৃথিবীর সব বাতাস যেন রাতিয়ানের এই পাড়ে। গায়ে কোট থাকলেও বোতাম খুলে যাওয়াতে হুহু করে ঢুকছে বাতাস। শীতে জুবুথুবু হয়ে হাঁটতে হাঁটতেই নিবুতের মনে হলো কী যেন একটা ঘ্যাঁচ করে এসে বিঁধে গেলো তীরের নরম মাটিতে। একেতো ঘন ঝোপঝাড়, তার উপর একশ আটত্রিশ বছরের পুরনো একজোড়া চোখ, নিবুত হাত দিয়ে ঝোপঝাড় সরিয়ে আরও খানিকটা এগিয়ে যেতেই দেখলো একটা নৌকা এসে ভিড়েছে ঘাটে।
অতিথিদের কেউ কি! নাহ, তাদের কি আর নৌকা লাগে? একটা ছেলে, জ্যান্ত একটা মানুষ! ছেলেটার হাতে কী যেন একটা দুলছে। আরেকটু কাছে যেতেই নিবুতের ঠাহর হলো, ওটা হাঁস। হাঁসটার গায়ে কী সুন্দর খয়েরি সাদা পালক। নিশ্চয়ই দারুণ ওম সে পালকের ভেতর!
অনভ্যস্ত হাতে ক্যানু চালিয়ে মিরাজের মেজাজ মোটামুটি আকাশে উঠে রয়েছে। পাটাতনে রাখা জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে সে মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। এসব কটেজে নিয়ে রাখতে গেলে কম করে হলেও দুটো ট্রিপ লাগবে। তার উপর বাম হাতে বইতে হচ্ছে একটা হাঁস, অযথাই। এখানেই কোথাও পুঁতে রেখে যেতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু বৈঠা দিয়ে তো আর পাথুরে মাটি খোঁড়া যায় না। মিরাজ কাঁধে ব্যাকপ্যাক আর ডানহাতে স্লিপিং ব্যাগটা নিয়ে ক্যানু থেকে নামলো।
এদিকটায় বড্ড বেশি বাতাস। যদিও শীত আসতে এখনও অনেক বাকি, কিন্তু ঠাণ্ডায় হাড় অবধি জমে যাচ্ছে। বাতাসটা রাতিয়ানে পাওয়া গেলে চাঁদ উঠার আগেই সে কার্লাইল পার্কে পৌঁছে যেতে পারতো। তাও ভালো যে পথ ভুল না করে ঠিক ঠিক এসে পৌঁছেছে। গিয়েই এক কাপ কফি খেতে হবে। কটেজে রান্নাঘর থাকার কথা, তবু সাবধানের মার নেই। পোর্টেবল স্টোভটা কোমরের বেল্টের সাথে ঝুলিয়ে রওনা হলো মিরাজ। বড়জোর বিশ মিনিটের হাঁটা।
হাঁসটা যেন নড়ে উঠলো একটুখানিক। থমকে দাঁড়াতে গিয়ে হাসি পেয়ে গেলো মিরাজের। কী সব আবোল তাবোল ভাবনা। একা একা বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালে এরকম অনেক কিছুই মনে হয়। নাহ, কফি না খেলে আর চলছে না।
অন্ধকারে দূর থেকে কটেজের আদলটাই চোখে পড়েছিলো কেবল। আকাশে চাঁদ থাকলেও সে আলোয় কটেজ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় ঠিক বোঝা যায়নি জায়গাটা এতো বড়। এটা কটেজ, নাকি প্রাসাদ! ইট পাথর দিয়ে বানানো না হলেও বেশ জাঁক আছে বাড়িটার। ভাগ্যিস ইকবাল সাহেব বুদ্ধি করে আলো জ্বালিয়ে রেখে গিয়েছেন। নইলে এই বিশাল বাড়ির প্রবেশপথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হতো। কাঠের বাড়ি, কাঠের বেড়া, কাঠের ফাঁকে কাঠের দরজা লুকিয়ে রয়েছে কাঠ হয়ে কাঠের ছায়ায়।
মিরাজ পা দিয়ে একটা ঠেলা দিতেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে খুলে গেলো সে দরজা।
ভেতরে নুড়ি পাথরে ছাওয়া একটা উঠোন। উঠোন পেরিয়ে ডেক। ডেকের উপর ছয় খুঁটিতে ছয়টি বাতি। সৌর বাতি! হবে নিশ্চয়ই। এই জঙ্গলে আর যাই হোক ইলেক্ট্রিসিটি থাকার কথা নয়।
পাঁচ।।
নবু-নিরুর এখন দম ফেলার ফুরসৎ নেই। এমনিতেই বিকেলটা নষ্ট হয়েছে দিদির মন খারাপের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে। দিদিটা যে কী! প্রত্যেক বছর এই একই যন্ত্রণা।
স্যাঁতসেঁতে তলকুঠুরিটা ঝেড়ে মুছে রাতের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা কি মুখের কথা? মাকালেমিকাবে স্বয়ং আসবেন। সাথে আসবেন আরও চার অতিথি। তাঁদের জন্য আসন তৈরি করা, ন্যাকড়া পুড়িয়ে কাজল বানানো, সে ন্যাকড়া আবার যেমন তেমন তেলে ভেজালে চলবে না, সদ্য মেরে আনা বিভারের চর্বি চাই; কাজ কি আর একটা দুটো!
একটা সময় ছিলো যখন ইকবাল সাহেব নিজে সমস্ত জোগাড় যন্ত্র করতেন। বড় হবার পর থেকে মেয়েরাই দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। মেয়েরা বলতে নবু আর নিরু। মিথিলা এসবের মধ্যে নেই। তার কাজ সবার শেষে। ইকবাল সাহেবের স্পষ্ট মনে আছে প্রথম দিনটির কথা। মিথিলার তখন ছয় বছর বয়স। নবু নিরুর তিন। লাল টুকটুকে একটা জামা পড়ে মিথিলা বসেছিলো আসরের মাঝখানে। ইকবাল সাহেব কালো বাক্সটা হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ,
“পারবে না তুমি মা?”
“তাহলে কি মা আসবে?”
“আসবে বৈকি! মেকালেমিকাবে চাইলে নিশ্চয়ই আসবে।”
ছয় বছরের শিশুর স্থৈর্য দেখে বিস্মিত না হয়ে পারেননি ইকবাল হাসান। হয়তো গায়ে ক্রি নেশনের রক্ত আছে বলেই!
ছাল ছাড়িয়ে বিভারটাকে পানিতে সেদ্ধ হতে দিয়ে ইকবাল সাহেব গেলেন নবু-নিরুর খোঁজে।
পথে দেখা হয়ে গেলো মিথিলার সাথে। সাদা কিমোনোতে পরীর মতো দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। ইকবাল সাহেব সস্নেহে জিগ্যেস করলেন,
“কী রে মা, তোর হোলো?”
“হ্যাঁ বাবা। নবু-নিরু কে দেখছি না যে?”
“ওরা নিশ্চয়ই তলকুঠুরিতে ব্যাস্ত। তুই এক কাজ কর, বাক্সটা নিয়ে নিচে চলে যা। ওদেরকে বলিস আমি তেলের বাটি নিয়ে নামছি।”
তলকুঠুরিটা বসবার ঘরের সিঁড়ির নিচেই। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই জলজ্যান্ত একটা ঘর লুকিয়ে রয়েছে কার্পেটের তলায়। কাছে যেতেই মৃদু একটা গুঞ্জন ভেসে এলো মিথিলার কানে। খুবই অস্পষ্ট, কিন্তু কান পেতে শুনলে বোঝা যায় দুটি তরুণী যেন খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ছে। বাবাকে কথাটা জানানো প্রয়োজন। নিচের শব্দ উপরে আসার কথা নয়।
মিথিলা উবু হয়ে বসে তিনবার টোকা দিতেই কারপেটের একটা দিক সরে গিয়ে এক চিলতে পথ বেড়িয়ে এলো। মিথিলা নামতে নামতে জিগ্যেস করলো,
“আমাকে কেমন দেখাচ্ছে রে?”
“সে তোমার বর এলেই জানতে পারবে দিদি, হিহি”
গায়ে জ্বালা ধরানো যতো কথা নবুর। মিথিলা রাগ চেপে বললো,
“বর হতে যাবে কোন দুঃখে? সব সময় এরকম ফাজলামো আমার ভালো লাগে না।”
“আমি কিন্তু মানুষটাকে দেখেছি দিদি। ক্যানু নিয়ে রাতিয়ানে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কী দারুণ দেখতে! তোর সাথে যা মানাবে না! হি হি।”
মিথিলার কেন যেন মানুষটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু উপায় নেই। এটাই নিয়ম। নবুর হাতে বাক্সটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“নিরুকে দেখছিনা, আসতে আসতেই তো ওর হাসি শুনলাম।”
“এই যে আমি, এখানে। হি হি।”
তলকুঠুরির ছাঁদে লাগানো ঝাড়বাতি থেকে ঝুলছে নিরু।
দুটোর ভেতর কোনটা যে বেশি বিচ্ছু! মিথিলা ভেবে ভেবে কুল পায় না।
“একটা মই নিয়ে নিলে কী হতো? পড়বিতো হুমড়ি খেয়ে।”
“পড়লে হবে কি শুনি? হাত পা খুলে যাবে? সে আবার লাগিয়ে নেবো নাহয়।”
তলকুঠুরিতে হেঁটে বেড়াতে মিথিলার বেশ লাগে। মা কক্ষনও আসতে দিতো না। বলতো- খবরদার মিথি, ওখানে মেকালেমিকাবে থাকে কিন্তু।
ছেলে ভুলানো গল্প সব। মেকালেমিকাবের তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই যে মিথিলাদের তলকুঠুরিতে লুকিয়ে থাকবেন। তখন অবশ্য সত্যিই মনে হতো।
উপর থেকে ঠক ঠক আওয়াজ হতেই নবু-নিরু দৌড়ে গেলো।
ইকবাল সাহেব ধোঁয়া ওঠা একটা বাটি নিয়ে নামতে নামতেই বললেন,
“নবু-নিরু, ন্যাকড়াগুলো ঝটপট ভিজিয়ে দে। হাতে সময় বেশি নেই। ছেলেটাকে দেখলাম তীরে এসে ভিড়েছে। মিথিলা মা, আমার কাছে এসে আলোটা একটু ধর তো। তলকুঠুরির দরজাটা ভালোমতো লাগছেনা। ঠিক না করলে আবার কী ঝামেলা হয় কে জানে।”
নবু-নিরু মেঝেতে আসন পেতে বসেছে। তাঁদের সামনে লাল নীল ন্যাকড়ার স্তূপ। তেলের বাটিতে ভেসে ভেসে উঠছে বিভারের চর্বি। মিথিলা কালো বাক্সটা বুকের সাথে চেপে ধরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ঘরের এক কোনে। ইকবাল সাহেব দরজাটা শেষ বারের মতো পরীক্ষা করে ভেতর থেকে টেনে দিলেন। এখন প্রহর অপেক্ষার।
৯২ কার্লাইল পার্কের আকাশে জ্বলজ্বল করে জেগে থাকা চাঁদটা থেকে থেকে লুকোচুরি খেলছে মেঘের সাথে।
---চলবে
মন্তব্য
বাব্বা! কেমন নিরীহ মুখ করে শুরু হয়েছিল গল্পটা। গড়াতে গড়াতে জটিলেশ্বর হয়ে উঠলো।
পড়ে ভালো লাগলো। পরের পর্ব আসুক জলদি জলদি।
পড়া= পরা, ব্যাস্ত=ব্যস্ত, সাবাই =সবাই, ইকাবাল=ইকবাল
ধন্যবাদ আয়নামতি।
অতিথি = অচল। সম্পাদনার সুযোগ নেই।
---মোখলেস হোসেন
অচলত্ব ঘুচল বলে! পীরসাহেব ফুঁ দিয়ে দিবেন নাকি এইবার?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আমার লেখায় সত্য খুঁজে পাবেন না এক লহমা। হে হে হে।
---মোখলেস হোসেন।
এত ডাকাডাকি কেন হোয়াই? আঁই কিচ্চি?
..................................................................
#Banshibir.
কিছু করেন নাই পীর সাহেব। এইবার করেন। লেখাটায় চোখ বুলাইয়া একটু ফুঁ দিয়ে দেন।
---মোখলেস হোসেন
আমার মনে পড়েনা হুমায়ুন আহমেদের পর আর সেবা প্রকাশনীর পর আর কারো লেখা এরকম টানটান উত্তেজনা নিয়ে পড়েছি। তবে মোখলেস ভাই এই গল্প শেষ না করে অন্য আরেকটা গল্প শুরু করলে আপনার উপর জঙ্গী হামলা চালাবো।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
দিলেন বলে একটা কথা! এবার আর আলসেমি করছি না। আর বিলম্ব না না আর বিলম্ব নয়।
---মোখলেস হোসেন
ভিতু পাঠক আমি, ক্যাটেগরিতে গল্প দেখে ঢুকেছিলাম। এখনতো ভয় লাগছে গল্পের শেষ চিন্তা করে আবার শেষটুকু জানার ইচ্ছে করছে। উভয় সংকট!
ধন্যবাদ উম্মেহাসিনা। শেষ টুকু আমি জেনে গিয়েছি। আপনাকেও জানিয়ে দেবো শিঘ্রি।
---মোখলেস হোসেন
ভাল লাগলো, পরের পর্ব আসুক শিঘ্র
ধন্যবাদ অভিজিৎ দাস। শিঘ্রিই আসবে।
--- মোখলেস হোসেন
কাঠের বাড়ি, কাঠের বেড়া, কাঠের ফাঁকে কাঠের দরজা লুকিয়ে রয়েছে কাঠ হয়ে কাঠের ছায়ায়
গল্পটা পড়া শুরু করে উঠে গিয়ে কাঠের মগে এক কাপ কফি নিয়ে এসে কাঠ হয়ে বসে এক নিঃশ্বাসে শেষ করে ফেললাম। পরের লেখায় অপেক্ষায়।
-জে এফ নুশান
ধন্যবাদ যে এফ নুশান। কাঠের কাপ শুনে মনে পড়লো আমার ছেলেকে কথা দিয়েছিলাম নারকেলের খোল দিয়ে কাপ বানিয়ে দেবো। নাহ, এবারে বানিয়ে ফেলতেই হবে।
---মোখলেস হোসেন
আপনারে আমার সত্যি-ই বলতে ইচ্ছে করে - এতদিন কোথায় ছিলেন! বনলতারা সব গেল কোথায়! এত এত গল্পের আয়োজনের লোকরে পায় না কেন তারা?
অঃটঃ - সুন্দরী কি বাতিল? সুন্দরি হলেই হবে?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই ধরনের মন্তব্য লালমোহন বাবুকেও ফেলুদার সাহস যোগায়। তবে দিন শেষে তো গাঙ্গুলিই, মিটার কি আর হয় সে? অনেক ধন্যবাদ এক লহমা, কিছুক্ষণ যে আকাশে হাঁটালেন সেই জন্য।
সুন্দরীই ভালো লাগে। কিন্তু আজকাল অনেক শব্দ হ্রস্বইকার দিয়ে লিখে লিখে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
---মোখলেস হোসেন
পড়তে খুব ভাল লাগল মোখলেস ভাই। তবে এইটা শেষ করবেন তো?
আপনার ফসল বিলাসী হাওয়ার অপেক্ষায় আমি কিন্তু এখনও বসে আছি। ওটা কি আর লিখবেন না?
ধন্যবাদ হাতুড়ি। এটা শেষ হয়ে রয়েছে। প্রথম পর্বটা নীড়পাতা থেকে সরে গেলেই দিয়ে দেবো। ফসল বিলাসী হাওয়ার শেষ অংশ লিখে ফেলেছি। এখন কাজ করছি মাঝখানটা নিয়ে। মনে হচ্ছে যেন গল্প নয়, সিনেমা বানাচ্ছি একটা। হা হা।
---মোখলেস হোসেন
গল্পটা পড়ে অনেক বছর আগে সেবা প্রকাশনীর পঞ্চরোমাঞ্চ ও ছয় রোমাঞ্চের গল্পগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। রহস্যগল্পের এমন স্বাদ পাইনি বহুকাল হলো। পরের পর্ব আসুক জলদি করে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী। এইমাত্র শেষ পর্বটা পাঠিয়ে দিলাম। এখন অপেক্ষা। কবে প্রকাশ হয়। আদৌ হয় কিনা!
---মোখলেস হোসেন
নতুন মন্তব্য করুন