সুন্দরপুরে সন্দেহ (প্রথম কিস্তির পর)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২১/১২/২০১৮ - ৬:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছয়।।

উড়ানবিবির খালের গভীরতা বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেবার মতো। নড়বড়ে সাঁকোটায় পা রেখে থমকে দাঁড়ালো শামসুল। নাহয় নেবেই হারান মাঝি পাঁচটা টাকা। নিক, টাকা আজকে কোন সমস্যা নয়। হরি নারায়ণের দুইশ তিরিশ তো লুঙ্গির ভাঁজে আছেই। আজকে সাঁকোর চেয়ে নৌকাই ভালো। শামসুল জোর গলায় ডাক ছাড়লো,

“ও হারান কাহা, এই পারে আও।”

“কেলা, শামসুইল্লা নি?”

“হ গো কাহা। হুসেনপুর যাইবাম।”

“মাগনার মাইদ্দে আমি নাই। পুল পাড়াইয়া আয়।”

“মাগনার কতা কও কেন কাহা? পাঁচ টেহার জায়গায় নাইলে দশই দিয়াম।”

“নডির পুতে কয় কী? কার গরে সিন কাটছস?”

“কাহার কতা হুন যে!”

“আমি খাইতাম বইছি। খাইয়া ডাবুরে দুইডা টান দিয়া আইতাছি। টিক মাইরা বইয়া তাক।”

উড়ানবিবির খালে হারান মাঝির কথার উপর কথা চলেনা। শামসুল মরা তালগাছটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে চাদরের তলায় লুকানো বালাটার কথা। খুব ইচ্ছে করছে বের করে একনজর দেখে নিতে। হঠাৎ একটা শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো সে।

সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ পাতাল সুন্দরি এক মেয়ে।

শামসুল কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না। মানুষ এতো সুন্দর হয়!

গ্রামের বৌ ঝিদের মতো নয়, এমনকি ঢাকা শহরে মচমচ করে হেঁটে বেড়ানো মেয়েদের সাথেও কোন মিল নেই মেয়েটির। কিন্তু মনে হচ্ছে কতো দিনের চেনা, কোথায় যেন দেখেছে সে!

এভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। কিছু একটা বলা দরকার। মৃদু একটা কাশি দিয়ে শামসুল বললো,

“হুসেনপুর যাইবাইন?”

কোন জবাব নেই।

শামসুল আবার জিগ্যেস করলো,

“আফনের লগে কেউ নাই?

কোকিলের মতো মিষ্টি একটা কণ্ঠ ভেসে এলো বাতাসে।

“জেওরডা দ্যালাইন জে।”

জেওর, মানে জহরত! কিন্তু এ মেয়ে জানলো কেমন করে? নিশ্চয়ই হরি জ্যাঠার দোকান থেকে পালিয়ে আসার সময় কোনভাবে দেখে ফেলেছে। কতো মানুষই তো আসে স্টেশনে! শামসুল খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে বললো,

“কইন্যার কতা হুন জে! আমি গরিব মানুষ। বাফের জন্মে জেওর দেখছি!”

জবাবে মিষ্টি করে হাসলো মেয়েটি। তারপর বললো,

“কুনুসুম দ্যাহেন নাই! এই লন, পরান ভইরা দ্যাহেন।”

মেয়েটার ডান হাতের কব্জিতে ঝকমক করছে একটি সোনার বালা। দেখতে অবিকল হরি নারায়ণের বালার মতো।

দোকানের বাক্সে থাকা আর দশটা জিনিসের ভিড়ে হরি নারায়ণের বালাটার মূল্য সেভাবে বুঝতে পারেনি শামসুল। জিনিসটা সুন্দর লেগেছিলো, মনে হয়েছিলো দামি, বেচলে মোটা টাকা পাওয়া যাবে। এখন, এই অন্ধকার রাতে চাঁদের আলোয়, সোনার হাতে সোনার বালা চাক্ষুষ করে শামসুল বুঝতে পারছে কী অমূল্য জিনিসই না তার দখলে। সারা জীবন অপেক্ষা করলে এমন বস্তু মেলে।

জীবন গেলেও এই বালা সে হাত ছাড়া করবে না। অবশ্য জীবন যাবার কোন সম্ভাবনা এখানে নেই। কিছুক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করা ছাড়া কীই বা আর করতে পারে একটা মেয়ে! পাত্তা না দিয়ে সাঁকোর দিকে পা বাড়ালো শামসুল। এপারে থাকলে এখন শুধু শুধু ঝামেলা। হারান মাঝি কখন আসবে তার ঠিক নেই। তারচে বরং সাঁকো পেরিয়ে ওপার চলে যাওয়াই ভালো। অন্য বালাটার জন্য খুব আফসোস হচ্ছে তার, কিন্তু চোর হলেও জোর করে ছিনিয়ে নেয়ার সাহস কিংবা অভ্যাস কোনটাই শামসুলের নেই।

সাঁকোতে পা রেখেছে কি রাখেনি, মেয়েটা যেন বাতাসে ভেসে এসে সামনে দাঁড়ালো। মাথার কাপড় খসে গিয়ে উড়ছে তার রেশম রেশম চুল। হাতছোঁয়া দূরত্বে, কাঁধ থেকে পিছলে নামা শাড়ির আড়ালে যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে রূপকথার জুলেখা পরী। অবিকল সেই মুখ, সেই চোখ, চোখের চাহনি। ছায়াবাণী হলের নাইট শো কাঁপিয়ে দেয়া রূপনগর বইয়ের সেই আগুন গরম শরীর। শামসুলের আর পা চলেনা। মেয়েটা আরও কাছে এসে একেবারে তার শরীর ঘেঁষে দাঁড়ালো। আগুনের আঁচে যেন ঝলসে যাচ্ছে শামসুল।

হঠাৎ, উড়ানবিবির খালের খোলা প্রান্তরে গমগম করে উঠলো হারান মাঝির কণ্ঠ।

“নডির গরের নডি! যদি পুল পাড়াইয়াই যাবি তাইলে হুদাই আমারে ডাইক্যা আনলি ক্যান?”

বোধশূন্যের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শামসুল।

হারান মাঝি ঘাটের সাথে নৌকাটা বেঁধে শামসুলের কাছে এসে জিগ্যেস করলো,

“আরে ওই শামসুইল্লা, তব্দা মাইরা খাড়াইয়া রইছস ক্যান। তোর অইছে কী?”

কী যে হয়েছে সেটা বুঝতে পারলে শামসুল কি আর সাঁকোর বাঁশ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে?

“কতা কস না ক্যান?”

“কাহা, তুমি কি কিছু ঠাওর করছো?”

টলতে টলতে সাঁকো থেকে নেমে হারান মাঝির সামনে এসে দাঁড়ালো শামসুল।

ছেলেটা থর থর করে কাঁপছে। এই আলো আঁধারিতেও স্পষ্ট বোঝা যায় চোখ দুটো তার রক্তজবার মতো লাল। হারান মাঝির রাগ হয়, আবার মায়াও লাগে। আজকালকার ছেলে ছোকরাদের স্বভাব চরিত্রের কোন ঠিক নেই। হাতে দুটো পয়সা এলেই হয় গঞ্জের মেয়ে মানুষ, নইলে মদ গাঁজা। শামসুলকে ধরে ধরে নৌকার গলুইয়ে বসিয়ে দিয়ে হাতের হুঁকাটা এগিয়ে দিলো হারান মাঝি।

“ডাবুরের পানিত দুইডা চুমুক দিয়ালা।। নিশা বাইঙ্গা যাইবো। কী খাইছস রে বেক্কল, গাঞ্জা না চরস?”

আলগোছে সরিয়ে দেয় শামসুল।

“বুজলা কাহা, তারে দ্যাখলে তুমারো নিশা লাগবো।”

“কার কতা কস?”

“উড়ানবিবি গো কাহা। আমারে দ্যাহা দিয়া গেছেন।”

“কস কি! তিনায় দ্যাখতে কেমন?”

“অক্করে আসমানের পরী। বিলাই চউখ, লাম্ফা লাম্ফা চুল, পরনে বাতাসের লাহান ফিনফিনা শাড়ি। দুষ নিওনা কাহা, কইন্যার বুহর কতা আর কী কইবাম, য্যান পৌষ মাসের বিয়াইনে…।”

“মাসকান্দার বিলে হাতার দেওয়া পাতিআস।”

শামসুলের কথা শেষ হবার আগেই বিড়বিড় করে ওঠে হারান মাঝি। শামসুল চোখ গোল গোল করে বললো,

“তুমি জানলা ক্যামনে? তারে তুমি দ্যাখছো?”

হারান মাঝি কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকে। শামসুল আবারও জিগ্যেস করলো,

“ও কাহা, উড়ানবিবিরে তুমি দ্যাখছো?”

উড়ানবিবির গল্প তার পরদাদার আমলের। শামসুল যাকে দেখেছে সে অন্য আরেকজন। হারান মাঝি মাথা নিচু করে ভাবতে থাকে। ভাবতে ভাবতে ফিরে যায় চোদ্দ বছর আগের এক রাতে। নদীর উপর ব্রিজটা তখনো হয়নি। নিতান্ত বিপদে না পড়লে রাতবিরেতে উড়ানবিবির খাল পেরিয়ে হোসেনপুর যাবার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবে না। হারান মাঝি আর দশজনের মতো নয়। তার ছিলো বুক ভরা সাহস, আর প্রাণ উজাড় করা এক নেশা।

আকাশ ভরা জোছনা সেদিন। জোছনা রাতে চাঁদের আলোয় খালের পানিতে খলখল করে কই মাছের ঝাঁক। কায়দা করে বাইড় পেতে রাখলে ভরে ওঠে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। হারান মাঝি মালকোঁচা মেরে কসরত করছিলো সন্ধ্যে বেলায় পেতে রাখা আধামনি বাইড়টা কোনমতে তীরের মাটিতে আনার।

হঠাৎ নারী কণ্ঠের আর্ত চিৎকার শুনে তীরের নল খাগড়ার আড়াল থেকে উঁকি দিতেই চোখে পড়লো খালের দিকে ছুটে আসছে আসমানের পরীর মতো অপরূপা একটি মেয়ে। পড়নের ফিনফিনে শাড়ীর উপরটা খসে গিয়ে উড়ছে বাতাসে। পেছন পেছন ধাওয়া করে আসছে ষণ্ডা মতন একটি লোক। সাঁকোর কাছে পৌঁছেই মেয়েটির দম ফুরিয়ে গেলো। হাল ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে।

ষণ্ডামতন লোকটি কোন কথা না বলে মেয়েটিকে ইশারা করলো ঘাটের দিকে যেতে। সেখানে খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটি নৌকা। হারান মাঝির সাহস হয়না আড়াল থেকে বেরিয়ে রুখে দাঁড়ায়। নলখাগড়ার ঝোপে লুকিয়ে থেকে সে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখছে ধীর পায়ে মেয়েটির হেঁটে যাওয়া। যেতে যেতে একবার ফিরে তাকালো ষণ্ডা লোকটির দিকে। চন্দ্রালোকে ঝকমক করছে তার চোখ দুটো। কটা চোখের সে দৃষ্টিতে আর ভয় নেই, আতংক নেই, নেই বেদনার কোন চিহ্ন। নৌকায় উঠতে উঠতে কেবল একটা কথাই বলেছিলো মেয়েটি,

“মুন্সি বাড়ির কুত্তাডার দিলেও রহম আছে গো মাধব।”

সাত।।

হরি নারায়ণের যখন জ্ঞান ফিরলো, সুন্দরপুরে তখন শেষরাত। জ্ঞান ফিরেছে মশার কামড়ে। একটা দুটো নয়, ডজন ডজন মশা তার মুখের উপর রণক্লান্ত সৈন্যের মতো এলিয়ে, এদের আর উড়ে যাবার শক্তি নেই। মুখে হাত বোলাতেই চটচটে রক্তে ভরে গেলো হরি নারায়ণের আঙুলগুলো। কিন্তু মশার কামড় নিয়ে ভাববার মতো অবস্থায় সে নেই। পরপর দুটো ঘটনা ঘটে গিয়েছে রাতে, যার একটিও ঘটার কথা ছিলো না।

ঘটনার আকস্মিকতায় তখন জ্ঞান হারালেও এই মুহূর্তে মাথাটা তার টিউবওয়েলের পানির মতোই শীতল। আঙ্গুরি বেওয়া ম’রে গিয়ে পেত্নীই হোক, কি শাঁকচুন্নি, হরি নারায়ণের কাছে সেটা কোন বিষয় নয়। তাকে চিন্তায় ফেলেছে আঙ্গুরির হাতের সোনার বালাটা। বালা ছিলো দুটি, একটি হরি নারায়ণের কাছে, আরকেটি আসলাম খাঁর জিম্মায়। এই বালা দুটোকে নিয়ে একটি গল্প রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ ছাড়া সে গল্পের কথা এখন আর কেউ জানে না।

গল্পের সূত্রপাত আজ থেকে সত্তুর বছর আগে। মুন্সি বাড়ির প্রধান ইনছান আলি তখন কুড়ি বছরের টগবগে তরুণ। আসামের রাজধানী গৌহাটির অদূরে, নীলাচল পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কোন এক গ্রামে, গায়ে হাওয়া লাগিয়ে কেটে যাচ্ছে তার জীবন। শুয়ে বসে দিন কাটাতে কাটাতে একদিন তার মনে হলো এ জীবন অর্থহীন। বাড়ির কাউকে না জানিয়ে সে বেরিয়ে পড়লো নিরুদ্দেশের পথে।

ঠিক নিরুদ্দেশ বলা যাবেনা, কেননা তার ইচ্ছে নীলাচল পাহাড়ের অন্যপাশে কী আছে তা দেখার। লোকমুখে সে শুনেছে আশ্চর্য এক মন্দিরের কথা। প্রতি বছর আষাঢ় মাসে, মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর পানিতে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন ঘটে।

মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম শক্তি। লোকে বলে, আষাঢ় মাসে পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ঢলের সাথে নাকি মিশে থাকে দেবীর রক্ত। সে রক্তে লাল হয় নদীর পানি, পরিপুষ্ট হয় দুকুল।

ইনছান আলি কেমন করে কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহে পৌঁছে গিয়েছিলো সে ইতিহাস হরি নারায়ণের অজানা। সে কেবল জানে দেবীর গায়ের স্বর্ণালংকার চুরি করে করিমগঞ্জে চলে যায় ইনছান আলি, সেখান থেকে ভাটির পথ ধরে বিশ্বনাথ হয়ে শেষটায় ময়মনসিংহ। ততদিনে ব্যাবসা বাণিজ্য করে পাল্টে গিয়েছে ইনছান আলির দিন। তবে আর দশ জন ধনাড্য মানুষের মতো বেহিসেবি খরুচে সে নয়। সাদামাটা আড়ম্বরহীন জীবন তার। জনহিতৈষী এবং ধর্মপরায়ণ এই মানুষটাকে লোকে চেনে মুন্সি ইনছান আলি নামে।

এদিকে ভারতবর্ষ তখন উল্টে পাল্টে যাচ্ছে। শহর-বন্দর-গ্রাম জুড়ে কেবল মানুষের আসা যাওয়ার মিছিল। নারায়নমাধব অর্থাৎ হরি নারায়ণের ঠাকুর্দা সপরিবারে ময়মনসিংহের পাঠ চুকিয়ে চলে যাচ্ছেন আসামে। মাধবদের সেই বাড়িটাই আজকের মুন্সি বাড়ি।

---- চলবে

প্রথম কিস্তির লিংক
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/57288


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

চলতে থাকুক, সঙ্গে আছি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ এক লহমা। বেশিদিন চালাবো না। প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।

---মোখলেস হোসেন

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রথম পর্বটি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে পরের পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু এই পর্বটি এত ছোট হয়ে গেছে যে মন ভরেনি। মন খারাপ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এক লহমা এর ছবি

সহমত। কিন্তু যে যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে উনি লিখে চলেছেন তাতে যে কোন লেখার জন্য কুর্নিশ।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

মাথার যন্ত্রণার চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে ক্লান্তি। ধরুন আপনার চোখের পাতা সারাদিন পিটপিট করছে। একটা সময় যন্ত্রণা ছাপিয়ে আপনাকে গ্রাস করবে একটা অবসন্নতা। তখন কিচ্ছু করে ইচ্ছে করবে না। আমার টিনিটাসটাও ওইরকম। চব্বিশ ঘণ্টা পোকার ডাকাডাকিতে আমি জারপর নাই ক্লান্ত। বছর ঘুরে এলো, কিন্তু আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি।

---মোখলেস হোসেন

এক লহমা এর ছবি

এই অবসন্নতাকে আমি সামনে থেকে দেখেছি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুটির ক্ষেত্রে। পরিস্থিতি বাস্তবিক-ই কঠিন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী। আসলেই খুব ছোটো হয়ে গিয়েছে। তবে কি জানেন, লেখার পেছনে অনেক কারণের একটা হচ্ছে মানুষকে পড়ানো। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি দীর্ঘ লেখা লোকে পড়েনা। প্রথম পর্বটা বশী বড় হয়ে যাওয়ায় কেউ ছুঁয়েও দেখেননি। অবশ্য লেখার গুণগত মানও একটা বিষয়। যাই হোক আর এক কি দুই কিস্তিতেই শেষ করে দেবো।

---মোখলেস হোসেন।

আয়নামতি এর ছবি

প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্ব আসতে প্রায় এক মাসের একটা গ্যাপ পড়ে গেছে ভাইয়া। এতে করে হয় কি আবার একবার পরের পর্বে চোখ বুলিয়ে আসতে হয়। না, একদমই অভিযোগ করছি না। আর মন্তব্য থেকে যখন জানা হলো, আপনি টিনিটাসে আক্রান্ত তখন আগের কথাগুলো বলাও ঠিক হলো কিনা সেটাই বরং ভাবছি। একলহমাদার সাথে সহমত জানিয়ে আপনার লেখালেখির প্রতি কুর্নিশ। গল্পটা পাঠককে টেনে রাখার মোহ ছড়িয়ে এগোচ্ছে...সুন্দর সমাপ্তির আশায় থাকছি। শুভকামনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার অভিযোগ (মানে যে অভিযোগটা করেন নি) একেবারে ঠিক ঠিক। ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা লেখাগুলো পড়তে গেলে আমারও ওইরকমই লাগে আয়নামতি। তবে চেষ্টা করছি গতি বাড়ানোর।

---মোখলেস হোসেন

Sohel Lehos এর ছবি

আপনার অন্য লেখাগুলোর মতোই গোছানো এবং পরিণত। অন্য সবাই যা বলুক, আমার মতে অনেক বড় লেখা একবারে দেয়া উচিত নয়। অত ধৈর্যশীল পাঠক আজকাল কম। অল্প করে তাড়াতাড়ি করে দেয়াটাই ঠিক হবে। তবে সমস্যা হলো সচয়লায়তন অত্যন্ত কষ্টদায়ক রকম ধীর গতির। মূল পাতায় একটা লেখাই অনেক দিন থেকে থেকে যায়। মূল পাতা থেকে আগের লেখা না সরা পর্যন্ত আবার লেখাও দেয়া যায় না। যাহোক কারো লেখাতেই তেমন মন্তব্য করা হয় না। যদি পড়া হয় নিয়মিতই। আপনি ভাল লিখেন। লেখা চলুক।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

কী যে বলেন সোহেল লেহস! সচল যদি ধীর গতির হয় আমি তাহলে ইউক্যালিপ্টাস গাছের শাখায় ঠেস দিয়ে ঝিমুতে থাকা শ্লথ। আমার জন্য এই গতিই ঠিক আছে। দম নেয়ার সময় পাই। আপনি পড়েছেন জেনে খুশি হলাম।

---মোখলেস হোসেন

Sohel Lehos এর ছবি

উপরের মন্তব্যগুলো থেকে বুঝতে পারলাম আপনার টিনিটাস আছে। আপনি কি পড়ে গিয়ে কানে কিংবা মাথায় ব্যাথা পেয়েছিলেন। টিনিটাস যে কি কষ্ট দায়ক তা আমি জানি। আমার অতি পরিচিত জনের এই সমস্যা আছে। দিন রাত সর্বক্ষণ তার কানে পো পো শব্দ শুনে। বেচারা ঠিক মত ঘুমাতে পারে না। সারা রাত ফোনে ইউ টিউবে টিনিটাসের সাউন্ড থেরাপি শুনতে শুনতে ঘুমায়। আশা করি আপনার টিনিটাস সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। ভাল থাকুন।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার আশাবাদের জন্য ধন্যবাদ। তবে এই রোগ সারবার নয়। আপাতত এই নিয়েই সন্তুষ্ট আছি যে এর চেয়ে খারাপ কিছু হয় নি।

---মোখলেস হোসেন

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেকদিন পর এসে পরের কিস্তি পড়লাম, অসাধারণ। আপনার লেখা শান্তিতে পড়ার একটা ভালো উপায় প্রত্যেকটা কিস্তিকেই এইখানেই গল্পের শেষ ধরে নিয়ে পড়া। আপনার লেখা পয়সা খরচ করে বই কিনে পড়তে হচ্ছে না এইটাই বিশাল ব্যাপার। আপনার মত লেখার ক্ষমতা যার তার লেখা ফোকটে পড়ছি এটা কিভাবে হচ্ছে এটাই রহস্য। এখন প্রিয়লেখকের নাম জিজ্ঞেস করলে নির্দ্বিধায় বলি মোখলেস হোসেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

সংসারের নানান কাজে কোন দিক দিয়ে যে একটা মাস কেটে গেলো টেরই পাইনি। সচলে আসা হয় নি। লিখতেও বসিনি। আজ অনেকদিন পর পাঁচ ছয় পাতা লিখে সচলে দিলাম। আপনার কথাগুলো মিথ্যে হলেও আমি দারুণ অনুপ্রাণিত বোধ করি সোহেল ইমাম।

---মোখলেস হোসেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।