পদার্থ বিজ্ঞানে ফি বছর নোবেল প্রাইজ দেয়ার রেওয়াজটা শুরু সেই ১৯০১ সাল থেকে, তারপর একে একে ২০৯ জন পদার্থবিদ বিজ্ঞানের এই সর্বোচ্চ পুরষ্কার প্রাপ্তির গৌরব অর্জন করেছেন । এই বিরল সম্মানার্থীদের তালিকা একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে ত্বত্তীয় পদার্থবিদদের চেয়ে গবেষক পদার্থবিদরাই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে। এ যাবত নোবেল প্রাপ্ত পদার্থবিদদের মোট ৭১.৩% গবেষক পদার্থবিদ, আর বাকিরা ত্বত্তীয় পদার্থবিদ (২৮.৭%)। কিন্তু এই সহজ সরল হিসেবে সম্প্রতি একটু গড়মিল দেখা দিয়েছে। এই আপেক্ষিক ব্যবধানটা একজন মহাকাশ বিজ্ঞানীর কাছে অতি তুচ্ছ আবার একজন পরমাণুবিদের নিকট অসীম সমতুল্য; সেই সাথে পদার্থ বিজ্ঞানে অবিরাম শ্রম দিয়েও অযত্নে পড়ে থাকা একটি গোষ্ঠীর অনেক আকাঙ্ক্ষিত সফলতা!! আইনস্টাইন, নীলস বোরের শক্তি-পরমাণুর রাজত্বে রামানুজনের মতো গণিতবিদ কিংবা চন্দ্রশেখরের মতো মহাকাশ বিজ্ঞানীর ঠাঁই হলেও কখনো দেখা মেলেনি একজন আপাদমস্তক ইঞ্জিনিয়ারের। ইঞ্জিনিয়ারিং মানে তো প্যান্টের জিপারের আপ এন্ড ডাউন, এটার জন্য কি আর নোবেল জোটে!! বোধকরি নির্বাচকদের এই ধারণা থেকেই কোন খাঁটি ইঞ্জিনিয়ারের কপালে কখনোই জুটেনি এই সৌভাগ্য।
এই দশকের শুরুতেও যা ছিল সুদূর কল্পণা, সেই কল্পণা ২০১৪ তে এসে সত্যি হয়ে যাবে তা কেউই ভাবতে পারেনি। গ্যালিয়াম নাইট্রাইড প্রসূত নীল আলোর জনক হিসেবে ইসামু আকাসাকি এবং হিরোশি আমানোর সাথে যুগ্মভাবে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী হন সুজি নাকামুরা। এই নাকামুরা সাহেবই প্রথম নোবেল জয়ী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ইতিহাসের খাতায় নাম লিখান। প্রশ্নটা হচ্ছে নাকামুরার আগে নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদদের কেউই কি ইঞ্জিনিয়ার ছিল না? উত্তর হচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ারিং অবশ্যই পড়েছে, এমন কি অপর দুই বিজয়ী আকাসাকি এবং হিরোশিও ছিলেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। কিন্তু বিএসসির সমাপ্তির পরে সবাই যখন ইঞ্জিনিয়ার তকমা বিসর্জন দিয়ে একাডেমিক গবেষকদের কুলীন খাতায় নাম লিখিয়েছে, নাকামুরা যোগ দিলেন কোম্পানির ছা-পোষা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। জাপানের তকুশিমা শহরে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আলোক নিঃসরণকারী ডায়োড (লাইট ইমিটিং ডায়োড-লেড) প্রস্তুতকারী নিখিয়া কর্পোরেশনে জীবনের ২২টি বছর মূল্যবান শ্রম এবং মেধা ব্যয় করেছেন নাকামুরা।
নিখিয়ায় চাকুরীকালীন একই শহরে অবস্থিত তকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ডক্টর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রকৌশলীদের পিএইচডি) সনদ অর্জন করেন নাকামুরা। আর এই পিএইচডি প্রাপ্তির ঘটনাটিও মজার এবং একই সাথে যুগান্তরী। ১৯৮৮ সালে আমেরিকায় একটি গবেষণা দলে যোগ দিতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন উনাকে কেউ গবেষক নয় সামান্য কারিগর (টেকনিসিয়ান) হিসেবেই মূল্যায়ন করছে এবং গবেষক হিসেবেও কোন বৈজ্ঞানিক প্রকাশনায় তার নাম যাচ্ছে না। এই ক্ষোভে দেশে ফিরে পিএইচডি করে গবেষকদের খাতায় নাম লেখানোর মনস্থির করলেন। সে সময় জাপানে কেউ পাঁচটি প্রকাশনা বের করতে পারলেই পিএইচডি পেতে পারতো, এর জন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার দরকার পড়তো না। এই সুযোগটিই কাজে লাগালেন নাকামুরা। কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা করবেন কিসের উপর!! নীল এলইডি'র মূল উপাদান নিয়ে তখন বৈজ্ঞানিক সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত। সিংহভাগ জিংক সেলেনাইডকেই মূল উপাদান ধরে কাজ করে যাচ্ছে আর হাতে গোণা মাত্র ৪-৫জন বিকল্প উপাদান হিসেবে গ্যালিয়াম নাইট্রাইডকে বিবেচনা করছে। একদম নতুন গবেষক হিসেবে নাকামুরা সংখ্যাধিক্যের প্রথম দলে নাম লেখানোর সাহসই করলেন না, বেছে নিলেন গ্যালিয়াম নাইট্রাইডকে। এখানেই তার পরিচয় ঘটে অধ্যাপক আকাসাকি এবং হিরোশির সাথে। আর এই তিন জন মিলেই বদলে দিলেন কৃত্রিম নীল আলোর আমূল বর্ণচ্ছটা।
আমরা যদি আমাদের ল্যাপটপের বা স্মার্ট ফোনের ব্যাবচ্ছেদ করি তাহলে দেখতে পাবো লক্ষ লক্ষ অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজান আচ্ছে। মোটা দাগে এই ডিভাইস গুলোকে ট্রানজিস্টর, সুইচ , আলোক নিঃসরণকারী ডায়োড বা লেড, লেজার, ফটোডিটেক্টর , লজিক ডিভাইস , মেমরি ডিভাইস ইত্যাদি নানা ভাগে ভাগ করা যায়। এই ডিভাইস গুলোর সবই অর্ধপরিবাহী দিয়ে বানানো হলেও প্রত্যেকটি ডিভাইস এর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কাঠামো ও কার্যকারিতা, আবার অর্ধপরিবাহীগুলোর নিজেদের গড়নে ও গুণাগুণেও রয়েছে যথেষ্ট ভিন্নতা। অবশ্য ছেলেবেলায় পড়ে আসা পর্যায় সারণি ঘাঁটলেই এদের প্রত্যেকটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কিছু অর্ধপরিবাহী মৌলিক আর কিছু যৌগিক। সিলিকন অর্ধপরিবাহীর কথা আমরা অনেকেই জানি, পর্যায় সারণির গ্রূপ IVA এর মৌল সিলিকন আধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স কে দিয়েছে নতুন মাত্রা। সিলিকন দিয়ে আমাদের স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপের লজিক ডিভাইস বা মেমোরি ডিভাইস তৈরি করা গেলেও আলোক নিঃসরণকারী ডিভাইস, এলইডি বা লেজার বানানোর জন্য সিলিকন মোটেও কোন কাজের অর্ধপরিবাহী না। আজ আমরা কথা বলব এমন একটি অর্ধপরিবাহী নিয়ে যাকে বলা হয় ভবিষ্যতের সিলিকন, এই অদ্ভুত, সুন্দর অর্ধপরিবাহীটির নাম গ্যালিয়াম নাইট্রাইড। পর্যায় সারণির গ্রূপ IIIA এর ধাতু গ্যালিয়াম আর গ্রূপ VA এর অধাতু নাইট্রোজেন কে সন্নিবেশ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারলেই গ্যালিয়াম নাইট্রাইড তৈরী করা সম্ভব ।গ্যালিয়াম নাইট্রাইড সংশ্লেষণের বা গ্রউথের রয়েছে নানবিধ কৌশল, সেসব কৌশল নিয়ে না হয় আরেকদিন আলোচনা করব।
আলোক ডিভাইস যেমন এলইডি/লেজার বানাতে হলে এই গ্যালিয়াম নাইট্রাইড আর তার ভাই -ব্রাদারদের কোন বিকল্প নেই। শুধু কি আলোক ডিভাইস, এই অর্ধপরিবাহী দিয়ে লজিক ডিভাইস, পাওয়ার ডিভাইস, হাই-ইলেক্ট্রন মবিলিটি ট্রানজিস্টর (হেমট ), সৌর কোষ (সোলার সেল), আলোক অনুঘটক (ফটো ক্যাটালিস্ট ) ইত্যাদি কত কিছুই না বানানো যায় ! গ্যালিয়াম নাইট্রাইড দিয়ে নীল আলো বানানোর সুবাদেই নাকামুরা ২০১৪ সালে নোবেল পুরষ্কার পান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এর মধ্যে কি এমন আছে যা অন্য কোনো অর্ধপরিবাহীর নেই, আর গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এ লাল, নীল, সাদা আলো আসবেই বা কোথা থেকে ??আলোক শক্তি আসলে ফোটন কণা বা শক্তির প্যাকেট (ঢাকা কলেজের সামাদ স্যার বলতেন ফোটন হচ্ছে মিলাদের প্যাকেট, ১ টা মিষ্টি , ১ টা শিঙ্গারা) ছাড়া আর কিছুই না, তবে ক্রমাগত ফোটন কণার যোগানের জন্য প্রয়োজন হয় ইলেকট্রন আর হোলের আলোকিত সন্নিবেশ বা মিল-মহব্বত (রেডিয়াটিভ রিকম্বিনেশন )। কেবল মাত্র ইলেকট্রন আর হোলের মিল-মহব্বত ঠিকঠাক মত হলেই আলোর দেখা মিলবে। গ্যালিয়াম নাইট্রাইড অর্ধপরিবাহীকে বাইরে থেকে একটু উত্তেজিত করলেই (ভোল্টেজ পার্থক্য) তা ক্রমাগত ইলেকট্রন আর হোলের সরবরাহ করে থাকে, আর সরাসরি শক্তিব্যবধান (ডিরেক্ট ব্যান্ডগ্যাপ) অর্ধপরিবাহী হওয়ায় কোনো ধরণের গন্ডগোল ছাড়াই পুরোপুরি শক্তির নিত্যতা সুত্র মেনে ক্রমাগত ফোটন বা আলোর যোগান দিতে পারে। কিন্তু এই ইলেকট্রন আর হোলের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটু কসরত করতে হয়, গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এর একটি অংশকে খুব নিয়ুন্ত্রিত উপায়ে n-টাইপ (নেগেটিভ টাইপ) বা ইলেকট্রনের ভান্ডার আর আরেকটি অংশকে p-টাইপ (পজিটিভ টাইপ) বা হোলের ভান্ডার বানানো হয়। আর গ্যালিয়াম নাইট্রাইড থেকে নির্গত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা রঙ নির্ভর করে অর্ধপরিবাহীর শক্তি-ব্যবধানের (যোজন ব্যান্ড এবং পরিবহন ব্যান্ডের শক্তি পার্থক্য) উপর। গ্যালিয়াম নাইট্রাইড অর্ধপরিবাহী সংকর মানে গ্যালিয়াম এর স্থলে কিছু ইনডিয়াম মিশিয়ে (ইনডিয়াম-গ্যালিয়াম-নাইট্রাইড) বা কিছু এলুমিনিয়াম যোগ করে (এলুমিনিয়াম -গ্যালিয়াম-নাইট্রাইড)খুব সহজেই এই অর্ধপরিবাহী সংকরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়ানো বা কমানো সম্ভব।
গ্যালিয়াম নাইট্রাইড অর্ধপরিবাহী সংকর এর এত এত ভাল গুণাবলী থাকলেও গ্যালিয়াম নাইট্রাইড থেকে আলো বের করা খুব খুব কঠিন ছিল। তাইতো বিজ্ঞানিরা গ্যালিয়াম নাইট্রাইড ছেড়ে এলুমিনিয়াম গ্যালিয়াম ফসফাইড দিয়ে লাল আর সবুজ আলো বানিয়েছিলেন। কিন্তু সাদা আলো পাওয়ার জন্য যে নীল আলো লাগবেই, পুরো পর্যায় সারণি ঘেঁটে মাত্র তিনটি যৌগিক পদার্থ পাওয়া গেলো যারা কিনা নীল আলোর সন্ধান দিতে পারে। নীল আলোর যোগান দাতা এই তিনটি পদার্থ, গ্যালিয়ামনাইট্রাইড, জিংক সেলেনাইড , সিলিকনকার্বাইড এর ম্যাটেরিয়াল গুনাগুনের অবস্থা ছিল শোচনীয় । তারপরও মন্দের ভাল হিশেবে জিঙ্ক সেলেনাইড এর দিকেই বিজ্ঞানীদের বেশি আগ্রহ ছিল।তাইতো সেসময়ের সবচেয়ে বড় সম্মেলন এ জিঙ্ক সেলেনাইড সম্পর্কিত বক্তৃতায় ৫০০ শতর বেশি বিজ্ঞানী হাজির হয়, ঠিক সেসময় গ্যালিয়াম নাইট্রাইড সম্পর্কিত বক্তৃতায় হাজির হন মাত্র ৫ জন (এর মধ্যে ৩ জন ছিলেন নাকামুরা, আমানো ও আকাসাকি)। তখন কি কেউ জানত ২৫ বছর পর এই তিনজন ই নোবেল পুরুষ্কার পেতে যাচ্ছেন !!
আজ যেখানে বিশ্বজুড়ে আমাদের মত নাদান গবেষকরা হর-হামেশা লাল-নীল আলোর বাতি বানাচ্ছে , সেখানে প্রায় ২৫ বছর আগে এই তিন জাপানি বিজ্ঞানি কি এমন করেছিলেন যাতে আলোর জগতে বিপ্লব সৃষ্টি হল, আমাদের বিদ্যুৎ খরচ অনেক কমে গেল, আমাদের টিভি, স্মার্ট ফোনের ডিসপ্লে এতটা ঝকঝকে হয়ে উঠল?? গ্যালিয়াম নাইট্রাইড থেকে লাল-নীল আলো বের করতে জাপানি এই তিন বিজ্ঞানি অসংখ্য সমস্যার সমাধান করেছেন। যার মধ্যে ২-৩ টি কারণকে মুল কারন হিসেবে ধরা হয়। আমি আগেও বলেছি যে ফোটন কণা তৈরি করতে গেলে ক্রমাগত ইলেকট্রন আর হোলের যোগান দেয়া প্রয়োজন। আর এই ইলেকট্রন আর হোলের যোগান নিশ্চিত করতে হলে অর্ধপরিবাহীর সাথে প্রয়োজন মত কিছুটা খাঁদ মিশিয়ে দিতে হয়, যাকে বলে ডোপিং । গ্যালিয়াম নাইট্রাইড কে সিলিকন দিয়ে ডোপ করে n-টাইপ বানান গেলেও মানে ইলেকট্রন তৈরি করা গেলেও, ম্যাগনেসিয়াম দিয়ে ডোপ করে কোন ভাবেই p-টাইপ বা হোল বানানো যাচ্ছিলো না। অনেক ঘেঁটেঘুটে এই তিন বিজ্ঞানী বের করলেন যে মেটাল-অর্গানিক-কেমিক্যাল -ভেপার-ডিপোজিশন নামক যেই যন্ত্র দিয়ে এই অর্ধপরিবাহী বানান হয় তার মধ্যেই রয়েছে অনেক অনেক হাইড্রোজেন, আর এই হাইড্রোজেন , ম্যাগনেসিয়াম কে পাওয়া মাত্রই ম্যাগনেসিয়াম-হাইড্রোজেন নামক যৌগ তৈরি করে, যার ফলে ম্যাগনেসিয়াম এর আর হোল তৈরি করা আর হয়ে উঠেনা (এ যেন শর্ষের মধ্যে ভূত থাকার মত অবস্থা)। যাই হোক, অনেক চেষ্টা তদবির (তাপ শোধন ) করে অবশেষে এই বাজে যৌগ থেকে হাইড্রোজেন সরানো গেল, আর সাথে সাথেই এই পৃথিবী নীল আলোর দেখা পেল। কিন্তু এই বহুল আকাঙ্ক্ষিত নীল আলো এতটাই নিভু নিভু ছিল যে এই তিন বিজ্ঞানির মনে কোন শান্তি ছিল না। তারা এবার লেগে পরলেন কি করে এই আলোকে আরও বেশি শক্তিশালী করা যায় বা কোয়ান্টাম দক্ষতা বাড়ানো যায় । এবার তারা দেখতে পেলেন শুধু গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এ ইলেকট্রন আর হোলের দেখা সাক্ষাত খুব ভাল হচ্ছিল না। ঠিক তখনি নাকামুরা সাহেব এর মাথায় এল চমৎকার এক বুদ্ধি, উনি শুধু শুধু গ্যালিয়াম নাইট্রাইড ইলেকট্রন আর হোলের দেখা সাক্ষাত না করিয়ে p-টাইপ গ্যালিয়াম নাইট্রাইড আর n-টাইপ গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এর মাঝে একটা ইনডিয়াম গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এর স্তর ঢুকিয়ে দিলেন, আর সাথে সাথেই নীল আলোর শক্তি গেল অনেক বেড়ে। এই বিশেষ স্যান্ডউইচ কাঠামোর নাম হল দ্বি-অসম কাঠামো বা ডাবল হেটেরো -স্ট্রাকচার । দ্বি-অসম কাঠামোতে ইলেকট্রন আর হোলের আলোক সন্নিবেশ এতটাই ভাল হল যে এই কাঠামোর কোয়ান্টাম দক্ষতা বেড়ে গেল অনেক, এর পেছনের কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল ইনডিয়াম গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এ রয়েছে কিছু স্থানীয় স্তর (লোকালাইজড স্তর) আর সেসব স্থানীয় স্তরে ইলেকট্রন আর হোলের আলোক সন্নিবেশ বেশ ভালই জমে উঠে। এরপর থেকে এই তিন বিজ্ঞানিকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি, লাল নীল আলো দিয়ে এ পৃথিবীতে একটা আলোকিত বিপ্লবই ঘটিয়ে দিয়েছিলেন বলা যায়।
বস্তু বিজ্ঞান তথা ম্যাটেরিয়ালস সাইন্স এবং তড়িৎ-কৌশলের মেলবন্ধনে যে নান্দনিকতার সৃষ্টি হয় তার -ই একটি চমৎকার উদাহরণ অর্ধপরিবাহী আলোক নিঃসরণকারী ডায়োড বা এলইডি।অর্ধপরিবাহী আলোক নিঃস্সরণকারী ডায়োড নিয়ে গবেষণা আরো অনেক বছর চলবে বলেই ধারণা। সেদিন আর বেশি দূরে নেই যখন আলো দিয়েই আমরা আমাদের সব তথ্য সরবরাহ করব।
শরীফ মোঃ সাদাফ
গবেষক,ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল, অটোয়া , কানাডা
[/justify][/center]
[/justify]
মন্তব্য
শরীফ, আপনি সচলায়তনে নিবন্ধন করে নিন, আর নিয়মিত লিখুন। আপনি কঠিন একটি বিষয়ে বিশেষায়িত শব্দগুলোকে বাংলায় পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, সেজন্যে সাধুবাদ জানবেন।
অনেক ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম। নিবন্ধন করব শীঘ্রই।
নাকামুরাদের পুরষ্কার পাবার খবরটা যখন রেডিওতে শুনি তখন যে এক বাক্য বলা হয়েছিল সেটা বুঝতে পারিনি। নীল আলোর ব্যাপারটা এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন সেটাও বুঝিনি। সেটা অনেক পরে পড়ে বুঝতে হয়েছে। আপনি সহজ ভাষায় ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন। এতে আরও অনেকের কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
'ইলেক্ট্রন হোল' নিয়ে মনে হয় আলাদা লেখা আসা দরকার। বাংলা ভাষায় এই মৌলিক বিষয়টা নিয়ে কোন লেখা চোখে পড়েনি। শরীফ, একবার চেষ্টা করবেন নাকি?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেক ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম। ইলেক্ট্রন-হোল নিয়ে বাংলায় লিখতে চেষ্টা করব। সাথে থাকবেন।
..................................................................
#Banshibir.
লেখা চমৎকার হয়েছে। বিজ্ঞান নিয়ে এইসব লেখা পড়লে মনে হয়, মানুষের সভ্যতা সত্যিই এগিয়ে চলেছে। আরো এই রকম লেখা পড়বার অপেক্ষায় রইলাম।
(এই লোককেও নিজের প্রাপ্য আদায় করার জন্য মামলা লড়তে হয়েছিল - দুনিয়া বড়ই অদ্ভুত!)
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেক ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম।
"তাপ শোধন" বলতে কি Heat Treatment বুঝিয়েছেন? Heat treatment এর এই তর্জমাটা দারুণ
আমার এই তাপ শোধন প্রক্রিয়াটার ব্যাপারে আগ্ৰহ হচ্ছে। ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রাইড থেকে হাইড্রোজেন তাড়ানোর জন্য কোন পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়েছিল?
Big Brother is watching you.
Goodreads shelf
"তাপ শোধন" বলতে আমি আসলে Thermal Annealing বুঝিয়েছি , যদিও Thermal Annealing , এক ধরনের Heat Treatment , অর্ধপরিবাহী ডিভাইস প্রক্রিয়াকরণে Annealing বেশ সমাদৃত।
একটু ভেঙে বলুন - Thermal Annealing-এর মাধ্যমে MgH2-থেকে H2-কে কীভাবে সরানো হয়?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেকদিন পর বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক একটা লেখা রসিয়ে উপভোগ করলাম। লেখার বিষয়বস্তু আগে থেকে জানা হলেও, স্রেফ আপনার লেখনির গুণেই...
নিয়মিত আরও অনেক বিষয়ে লিখুন।
experimental physicist এর বাংলা আপনি করেছেন গবেষক পদার্থবিজ্ঞানী। কিন্তু গবেষক 'রিসার্চার' অর্থে অনেক সাধারণ একটা শব্দ। তাত্ত্বিক পদার্থবীজ্ঞানিও একজন গবেষক। গবেষণায় লিপ্ত গণিতবিদও। সেক্ষেত্রে এটাকে 'নিরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানী' বা 'পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানী' বলা যায়।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
Experiment = পরীক্ষা
Audit = নিরীক্ষা
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেক ধন্যবাদ। চমৎকার বলেছেন। আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত,'নিরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানী' বা 'পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানী' আসলে বেশি যথাযথ।
নতুন মন্তব্য করুন