দশ।।
শমশের খাঁর শরীর ভালো নেই। দুপুরে পাঙ্গাশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাবার পর থেকে পেটের ভেতর ভুটভাট শব্দ হচ্ছে। তার সাথে যোগ হয়েছে বুক থেকে গলা অবধি তীব্র একটা জ্বলুনি। স্ত্রী সুরজাহান একবার মিনমিন করে জিগ্যেস করেছিলেন বুকে গরম তেল মালিশ করে দেবেন কিনা। শুনেই তাঁর মেজাজটা ভাদ্র মাসের শুকনো বিলে লাফাতে থাকা কই মাছের মতো খলবল করে উঠলো। এই মহিলার কি কোনই মায়া দয়া নেই? কতোবার বলেছেন তরকারিতে ঝালটা একটু কম দিতে, কিন্তু কে শোনে কার কথা! মাছের ঝোল রাঁধতে গেলে সুরজাহান বেগমের আর হুশ থাকে না। আর রান্নাটাও এমন স্বাদের হয় যে গলা পর্যন্ত না খেয়ে ওঠে আসা মুশকিল। বুক জ্বালিয়ে দিয়ে এখন এসেছে তেল মালিশ করতে! মেজাজ কিছুটা ঠাণ্ডা হবার পর কোঁকাতে কোঁকাতে ডাক দিলেন,
“আসলাম, ওই আসলাম! হুইন্না যা।”
রান্না ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন সুরজাহান,
“কী অইছে, আমারে কইন। পুলায় বাড়িত নাই, দীগিত গ্যাছে গুসুল করতে।”
“হিয়াল মাইরা বিয়ালে গ্যাছেন তাইনে গুসুল করতে! হারাদিন করছেন কী? তারে কও ফণী মাস্টররে য্যান খবর দেয়।”
ফণী মাস্টার কাৎলাসেন প্রাইমারি স্কুলের গনিত শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি টুকটাক ডাক্তারি করেন। দেওয়ানগঞ্জের বাজারে তার একটা ওষুধের দোকান আছে। তবে বিক্রিবাট্টা হয়না বললেই চলে। কাঁচের আলমারিতে সাজিয়ে রাখা শিশি বোতলের ওষুধে গ্রামের মানুষের এখনও ভরসা জন্মায় নি। এই নিয়ে অবশ্য ফণী মাস্টার খুব একটা ভাবিত নন। দুপুরের খাওয়া শেষ করে ধবধবে সাদা ধূতি-পাঞ্জাবির উপর কালো স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে দোকানে চলে আসেন তিনি। ঝাপ খুলতে না খুলতেই শুরু হয়ে যায় মানুষের আসা যাওয়া। কেউ আসে গল্প করতে, কেউ রেডিও শুনতে, কেউ কেউ দাবার নেশায়। মোটের উপর ফণী মাস্টার ভালোই আছেন। স্কুলের পর ঘরে বসে থেকে ব্রাহ্মণীর খ্যাকানি শুনতে হচ্ছে না এতেই তিনি খুশি।
আসলাম খাঁ যখন দোকানে গিয়ে পৌছুলো ফণী মাস্টারের তখন মহা বিপদ। তাঁর রাজাকে তিন দিক থেকে চেপে ধরেছে ইনছান আলীর হাতি, নৌকা, এবং মন্ত্রী। এখান থেকে বেরিয়ে আসার মোক্ষম একটা উপায় তাঁর মাথায় আছে, কিন্তু বুঝতে পারছেন না সেই চালটা দেওয়া ঠিক হবে কিনা। ইনছান আলী দাপুটে মানুষ, ক্ষমতাবানদের সাথে সব খেলায় জিততে নেই। আসলাম খাঁকে দেখে যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে এলো ফণী মাস্টারের। নাক থেকে প্রায় পিছলে পড়া চশমাটাকে ঠেলে উপরে উঠিয়ে জিগ্যেস করলেন,
“অসুখ কার?”
“বাজানের। প্যাডত বেদনা।”
“তর মায় বুঝি মাছ রানছে?”
“হ কাহা।”
“কী মাছ?”
“পাঙ্গাশ, বিয়ান বেলায় হারান জ্যাডায় নিয়া আইছিলো।”
ফণী মাস্টারের চোখ চকচক করে ওঠে। খাঁ বাড়ির রান্নার খ্যাতি দেশ জোড়া। ইনছান আলী মুচকি হেসে বললেন,
“আইজ তাইলে আমি উডিগো মাস্টর। তুমি যাও, খাঁ বাড়িতে রুগী দেইখা আসো। আর হুনো, যাওনের আগে দুই দাগ ওষুধ নিজেও খাইও।”
ফণী মাস্টার মুখে তেলতেলে একটা হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
“ভাইজানের কতা হুন যে, হে হে হে।”
ইনছান আলী উঠে দাঁড়াতেই আসলাম খাঁ ত্রস্ত ভঙ্গিতে দরজা থেকে সরে গিয়ে বললো,
“সেলামালকি কাহা।”
“কিরে আসলাম, শহরথন কবে আইলি?”
“জে কাইল আইছি, হাইঞ্জা বেলায়।”
“তর কাহির লগে দেহা করস নাই কেন? জানলে কিন্তু রাগ করবো।”
যেতে যেতে পেছন ফিরে আসলামকে আরেকবার দেখলেন ইনছান আলী। কতো বড় হয়ে গিয়েছে ছেলেটা! দেখতে শুনতে বাপের মতোই, তবে স্বভাবে পুরো উল্টো।
আসলাম আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল, শমশের খাঁ ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। পাঙাশ মাছের ঝোল দিয়ে গলা পর্যন্ত ঠেসে ভাত খেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে ফণী মাস্টার যখন বিদেয় নিলেন তখন সন্ধ্যে হয় হয়। যাবার আগে বোতলে দাগ কেটে ওষুধ দিয়ে গিয়েছেন। সুরজাহান খাবার বেড়ে ছেলেকে ডাকতেই শমশের খাঁর ঘুম ভাঙলো। পেটের ব্যাথাটা তাঁর ফিরে এসেছে আবার। ব্যাথায় কোঁকাতে কোঁকাতে ঘর থেকে ডাক ছাড়লেন,
“সুরজান, ও সুরজান তুমার পুলায় কই? ফণী মাস্টররে নিয়া আইতে তার এতক্ষণ লাগে?”
“আইতাছি বাজান। কাহায় আইছিলো, ওষুধ দিয়া গেছে।”
বোতল খুলতেই কুৎসিত একটা গন্ধ এসে ধাক্কা মারলো আসলামের নাকে। মনে মনে প্রমাদ গুনলো সে। যে ওষুধের গন্ধ এমন তার স্বাদ না জানি কেমন হবে! ফণী মাস্টারের কাছে মানুষ যে যায় না সে কি আর এমনি!
এক দাগ ওষুধ ঢেলে শমশের খাঁর হাতে দিতেই নাক মুখ কুঁচকে খেঁকিয়ে উঠলেন তিনি,
“এইডা কী দিছস আমারে, বিষ?”
“ওষুধ, দুই দাগ কইরা দিনে তিনবার। চাইর দিনের ওষুধ।”
কোন মতে একবার গিলে দ্বিতীয়বার থুঃ থুঃ করে ফেলে দিলেন শমশের খাঁ।
আসলাম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলো বিছানার পাশে। শমশের খাঁ কুলি করে পেতলের চিলমচিতে পানি ফেলতেই সে বললো,
“বাজান, ওষুধ যদি না খান তাইলে…”
“তাইলে কী”
“আমি ভাবতেছিলাম……”
“কী ভাবতেছিলি? মুন্সির বাড়িত যাবি পানিপড়া আনতে! তুইন মনে করছস আমি বেক্কল, কিছু বুজিনা?”
মাথা সই করে উড়ে আসা চিলমচিটা কোনমতে এড়িয়ে তিন লাফে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আসলাম খাঁ। রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলেন সুরজাহান,
“হুদাই পুলাডারে গাইল পারলেন আফনে, দুফরথন অহনতুরি কিছু খায়নাই। আমি ভাত বাইড়া সালুন লইয়া বইয়া আছি, পুলায় আমার না খাইয়া বাইর অইয়া গেলো।”
“তর পুলায় উফাস যাইবো নারে সুরজান। নোয়াখাইল্লা বেডি তারে না খাওয়াইয়া ছাড়বো? নাহি তর পুলায় ফিরবো না খাইয়া? বেডির রান্না তরচে বালা।”
“আফনে জানলেন ক্যামনে? আফনের নাক দিয়া তো ওই বাড়ির বাতাসও ডুহে না।”
মেয়ে মানুষের সব কথার জবাব দিতে নেই। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলেন তিনি। ব্যাথাটা কমে আসছে দ্রুত। ফণী মাস্টারের ওষুধ পেটের ভেতর ঢুকে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সাহস করে আরেক দাগ খেয়ে নিলেন শমশের খাঁ। এই মুহূর্তে মনটা তাঁর বেশ দ্রবীভূত হয়ে আছে। ছেলের কাজ কারবারে তিনি দারুণ খুশি। যদিও মুখে সেটা কখনোই প্রকাশ করেন না। ধন্নার সাথে ঝোলানো ফুল ফুল নকশা তোলা আয়নাটার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসলেন তিনি। বিড়বিড় করে বললেন,
“ব্যাডাই একখান! পুলায় তর ব্যাডার গরের ব্যাডা রে সুরজান।”
হাঁস মুরগিগুলোকে খোঁয়াড়ে তুলে দিয়ে ভেতর বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিলেন আয়নাবানু। বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই, কিন্তু কিছু কিছু কাজ নিজের হাতে না করে তিনি শান্তি পান না। আধো অন্ধকারে মাধবদীঘির পার ঘেঁষে হেঁটে আসা দীর্ঘকায় মানুষটাকে দেখেই আনন্দে ঝলমল করে উঠলো তাঁর মুখ। হাতের কঞ্চি নামিয়ে রেখে ভেতর বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কোনাই গেলিরে ঝরোনা, তোর আসলাম বাই আইয়ের। জগে করি হানি আর তাল মিশরি লই আয়।”
এতো বছরেও এই অঞ্চলের ভাষায় সড়গড় হতে পারেননি তিনি।
দীঘির পার থেকেই চেঁচিয়ে উঠলো আসলাম খাঁ,
“কিরম আছো গো কাহিমা? ঝরোনারে কও আমার লাইগ্যা যেন দস্তরখান বিছায়। আমি কলপারথন আত দুইয়া আইতাছি।”
“এরে আসলাম, আবারো তুই বাসাত ঝগড়া করি আইসত?”
“কী যে তুমি কওনা কাহিমা! জগরার মাইদ্দে আমি নাই। বাজানে চিলমচি ফেইক্কা মারছিলো। আট্টু অইলেই কফাল ফাইট্টা যাইতো, বুজলা!”
“তোর মা আইজ্জাও সালনে ঝাল দি হালাইসে, হালায়নো?”
“হ গো কাহিমা।”
“যাওনের সমে ভাইজানের থুন হানি হড়া লোই যাইস।”
“তাইলেই অইছে, আমার আর বাইত যাওন লাগতো না।”
ঘরের ভেতরে দস্তরখান বিছিয়ে দিতে দিতে মুখ ভেংচি দিয়ে আনমনে বলে উঠলো ঝর্ণা,
“আ—মা—র আ—র বাইত যাওন লাগতো না! আইতে না আইতেই মুহ খালি যাওনের কতা। তাইনেরে কি কেউ দাওয়াত দিয়া আনছে?”
খাঁ বাড়ি থেকে এখানে আসতে হয় মাঠ পেরিয়ে। অনুর্বর মাঠ, ফসল তো দূরের কথা, গরু ছাগল চড়ে খাবে এমন ঘাসের দেখা মেলাও মুশকিল। সেখানে শুকনোর মৌসুমে রাজ্যের ধুলো আর বর্ষার দিনে থকথকে কাদা, সাপখোপের ভয়ে মাঠটা এড়িয়ে চলে সবাই। মাঠের ভেতর দিয়ে খাঁ বাড়ি পেরিয়ে দেওয়ানগঞ্জের বাজার পর্যন্ত একটা সড়ক ছিলো এক কালে। মাধবদের কালে। বাগান নিয়ে দ্বন্দ্বের দিনে লোক লাগিয়ে কেটে ফেলেছেন শমশের খাঁ। এসব অবশ্য অনেক আগের কথা। আয়নাবানু লোকমুখে শুনেছেন। সেই সড়ক আর নতুন করে গড়া হয়নি। এই বাড়ির মানুষেরা বাজারে যায় দুই মাইল পথ ঘুরে, উত্তরের খাল উজিয়ে।
সাপের ভয় আসলাম খাঁর নেই। মাঠটা পেরিয়ে কতো হাজার বার যে সে এই বাড়িতে এসেছে তার খবর জানেন কেবল আয়না বানু। প্রথম প্রথম শুধু হা করে তাঁর দিকে চেয়ে থাকতো ছেলেটা। নোয়াখালীর উচ্চারণ ধরতে পারতো না মোটেই। তিনি কথা বললেই খিল খিল করে হেসে উঠতো। আয়নাবানুর যে মাঝে মাঝে রাগ হতো না তা নয়। বেগমগঞ্জের ভাষা পুরো নোয়াখালীতে সমাদৃত। সেই ভাষা শুনে কেউ যে এভাবে খিলখিল করে হাসতে পারে এ তাঁর কল্পনারও অতীত ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের একটা শিশুর উপর কি আর রাগ করা যায়! তাছাড়া শিশুরা আর কিছু বুঝুক কি না বুঝুক, আদরটা ঠিক ঠিক বোঝে। আয়নাবনুর পায়ে পায়ে এঘর ওঘর ঘুরে ঘুরে বেড়াতো আসলাম। এই বাড়ির প্রতিটি কোন তার চেনা। ইনছান আলী দেখেও না দেখার ভান করতেন।
আসলামের এই বাড়িতে আসা যাওয়া নিয়ে শমশের খাঁ কম ঝামেলা করেননি। থানা পুলিশই বাকি ছিলো কেবল। কিন্তু একদিকে আয়নাবানুর আদর অন্যদিকে মা সুরজাহান বেগমের প্রশ্রয়, আসলামকে আটকে রাখে সাধ্য কার? একটা সময়ের পর থেকে শমশের খাঁও ভান করতেন না দেখার।
আয়নাবানু তখন নতুন জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছেন কেবল। ইনছান আলী মানুষটা একটু অন্য ধরনের। স্ত্রীকে ভালো যে বাসেন সেটা বোঝা যায়, কিন্তু সে ভালোবাসায় কোথায় যেন একটা আড়াল রয়েছে। ব্যাস্ত মানুষ তিনি, মাঝে মাঝেই বজরা নিয়ে দূর দূরান্তে চলে যান ব্যাবসার কাজে। মানুষটা কেন যে এতো পরিশ্রম করে! এই বিশাল বাড়ি, বিঘা বিঘা জমি-বাগান থাকতে দেশে দেশে ব্যাবসা করার দরকার কী?
বাড়ি ফেরার সময় বজরায় করে যেন গোটা পৃথিবীটা আয়নাবানুর জন্য তুলে আনতেন ইনছান আলী। শাড়িটা, গয়নাটা, আলতা, চুড়ি, কাজল………। একবার একটা কাপড় এনেছিলেন, লাল রঙের কাপড়টা চোখে পড়তেই এতো ভালো লাগলো! জিগ্যেস করাতে তিনি বলেছিলেন ঘাঘড়া-কাঁচুলি, কলকাতায় পাওয়া যায়। প্যাকেট খুলে চোখের সামনে সে কাপড় মেলে ধরতেই- হায়, হায়! লজ্জা! লজ্জা! এমন কাপড় কেউ পড়ে? সে বড় সুখের সময়। সেই দিনগুলোতে মানুষটার যেন ঘর ছেড়ে বের হবার কোন তাড়া থাকতো না।
কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ কী যেন হতো তাঁর। তখন দিনের পর দিন পড়ে থাকতেন বাইডাগ ঘরে। চোখ দুটো কেমন যেন রক্তজবার মতো লাল হয়ে যেতো। আয়নাবানুকে ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারতেন না। হম হম করে ভাত খেতেন, আর খেতে খেতে আয়নাবানুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলতেন,
“দুইজনের খাবার খাই গো আয়না, দুইজনের খাবার।”
মানুষটার কাছে যেতে খুব ভয় লাগতো তখন। আবার মায়াও লাগতো।
মাঝে মাঝে ভাইজান এসে দেখে যেতেন। কোন এক বিচিত্র কারণে তখন নুরু মুন্সিকে দেখলেই ভীষণ অস্থির হয়ে উঠতেন ইনছান আলী। বেশিক্ষণ তাঁর উপস্থিতি সহ্য করতে পারতেন না। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বের হতে থাকতো। নুরু মুন্সি চিন্তিত মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেন, যেতে যেতে বিড়বিড় করতেন,
“কীভাবে সম্ভব! কীভাবে!”
আয়নাবানু প্রথমে ভেবেছিলেন মৃগী রোগ। কিন্তু ভাইজান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সাথে সাথেই সুস্থ ইনছান আলী। টকটকে লাল চোখ দুটো ছাড়া অস্বাভাবিকতার কোন চিহ্নই আর তাঁর শরীরে নেই।
যেমন করে আসুখটা শুরু হতো ঠিক তেমন করেই হঠাৎ একদিন সুস্থ হয়ে উঠতেন ইনছান আলী। তারপর বজরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। কখনো এক সপ্তাহ, কখনো দুই, কখনো বা একমাস। একবার ফিরে এসেছিলেন একশো একত্রিশ দিন পর। ঝর্ণা তখন পেটে। ঝর্না জন্মাবার পর আর কখনো অসুস্থ হননি ইনছান আলী।
ভেতর বাড়িতে বসবার ঘরে আলো জ্বেলে আসলামের জন্য খাবার সাজাচ্ছে ঝর্ণা। প্রদীপের আলোয় চকচক করছে কিশোরীর স্বপ্নালু চোখ। সে চোখের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতায় বুক ভরে উঠলো আয়নাবানুর। এই মেয়ে তাঁর জীবনে সুখ এনে দিয়েছে। মেয়েকে হাতছাড়া করার কথা তিনি ভাবতেই পারেন না।
“অইছে কি কাহিমা? আমি ডাকতে ডাকতে অয়রান অইয়া গেলাম আর তুমি ওই পেত্নীর দিকে ফ্যালফ্যাল কইরা চাইয়া আছো!”
ভাবনার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন আয়নাবানু। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে সেদিনের সেই কথা না বোঝা ছেলেটা, সেই হাসি, সেই চোখ। আয়না বানু আসলামের একটা হাত ধরে ব্যাকুল কণ্ঠে বললেন,
“আঁরার হেত্নীরে তুই ঘরে নিবি আব্বাজান?”
আসলাম খাঁ স্তব্ধ। এভাবে সে কখনো ভাবেনি। ওদিকে ভেতর বাড়িতে দেড় সেরি একটা কাঁসার গ্লাস হাতে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকা পেত্নীটার বুকের ভেতরে যেন একশ হাজার ঢাক বেজে চলেছে- দিড়িম দিড়িম দিড়িম।
মন্তব্য
এখন ত আর কোন গল্প কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে সে সব কিছু মনে নেই; শুধু আপনার গল্প বলার টানে ঝরঝর করে পড়ে ফেলি। মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় - আচ্ছা, লেখক-ও কি গল্প বলার ঝোঁকে ঝরঝর করে লিখে চলেছেন - গল্প যেদিকে যায় যাক!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হা হা হা। গল্প তার লক্ষ্যেই ধাবমান এক লহমা। এটা হচ্ছে প্রথম ড্রাফট। পুরোটা শেষ হলে ঘষে মেজে ঠিক করে নেবো। আপাতত এমনভাবে পল্পটা বলছি যাতে পর্বগুলো ছাড়া ছাড়া ভাবে পড়লেও গল্পের একটা আমেজ খুঁজে পাওয়া যায়। আপনি পড়ছেন জেনে খুব ভালো লাগলো।
---মোখলেস হোসেন
আপনার লেখা পড়তে পড়তে নেশা লেগে যায়। দিলেনতো টিভি সিরিয়ালের মত মোক্ষম একটা জায়গায় টুবিকন্টিনিউড করে
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন