গত ৩১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ আসবে মাংস, যাবে পোশাক থেকে জানা যায়, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মারকোসারভুক্ত চার দেশ, যথাক্রমে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে, সফর করে ব্রাজিলের সাথে বাণিজ্যঘাটতি হ্রাসের লক্ষ্যে সেখান থেকে গরুর মাংস আমদানি ও পোশাক রপ্তানি নিয়ে চিন্তা করছেন।
ব্রাজিলে গরুসহ মুরগি ও শূকরের মাংসের ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ জেবিএস এসএ নামে একটি কোম্পানির হাতে, যেটি পৃথিবীর বৃহত্তম মাংস প্রক্রিয়াকারক কোম্পানি। উইকিপিডিয়ায় তাদের ভুক্তিতে তাদের পরিচয় খানিকটা জানা যাবে। সম্প্রতি আমাজনে অভূতপূর্ব মাত্রার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জেবিএসের নাম ঘুরেফিরে উচ্চারিত হচ্ছে, কারণ ব্রাজিলের ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যের সাথে জেবিএসের অনৈতিক লেনদেনের সম্পর্কের কানাঘুষা রয়েছে, এবং আমাজন বন মূলত পোড়ানো হয় গরুর চারণক্ষেত্র তৈরির জন্য। এ গরুর মাংসই সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করা হয়। ব্রাজিলের গরুর মাংস আমদানি করলে পরোক্ষভাবে আমাজন বন উজাড়ে বিনিয়োগ করা হয়।
কিন্তু তার চেয়েও বড় সমস্যার কথা জানা যায় অক্টোবর ৪ ২০১৮ তারিখে রয়টার্সে প্রকাশিত এক সংবাদ, "U.S. arm of JBS recalls 6.5 million pounds of beef on salmonella risk" থেকে। রয়টার্স জানাচ্ছে, জেবিএসের মার্কিন শাখা দেশটির বাজার থেকে ৬৫ লক্ষ পাউণ্ড মাংস প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, কারণ এসব মাংসে মারাত্মক সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। মার্কিন কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির ১৬টি অঙ্গরাজ্যে কমপক্ষে ৫৭ জন মানুষ জেবিএসের মাংস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাংস প্রত্যাহারের খবর রটার পর সাও পাওলো পুঁজিবাজারে জেবিএসের শেয়ারের দর ৫% পড়ে যায়। রয়টার্স আরো জানাচ্ছে, ২০১৮ সালে বাজার থেকে জেবিএস এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মাংস প্রত্যাহার করলো।
চেরনবিল দুর্ঘটনার পর তেজষ্ক্রিয়তার আশঙ্কায় ডেনমার্কের ডানো গরুর দুধের বাজার পড়ে গিয়েছিলো, কিন্তু কানাঘুষা শোনা গিয়েছিলো, বাংলাদেশে সে দুধ পণ্যের নাম-মুদ্রা ছাড়া নানা খাতে বিক্রি হয়। জেবিএসের প্রত্যাহার করা মাংস এখন কোথায় কী অবস্থায় আছে, তা জানার উপায় নেই, কিন্তু বাংলাদেশে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শিথিল ও দুর্নীতির অভিযোগগ্রস্ত, তাই মানহীন বা জীবাণু-আক্রান্ত মাংস বাংলাদেশের বাজারে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েই যায়। দৈনিক প্রথম আলোর খবরে জানা যায়,
সফরে পোশাক রপ্তানি ও মাংস আমদানি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানা গেছে। তবে ওখান থেকে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
এ বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি পক্ষ জেবিএসের পণ্য ও ব্যবসা সংক্রান্ত খবরগুলো আমলে নিয়ে তদনুযায়ী কার্যকর সিদ্ধান্ত প্রাজ্ঞতার সাথে নেবেন বলে আশা রাখি। সাংবাদিকরা এ প্রসঙ্গে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেবেন আর বিষয়টি অনুসরণ করলে ভোক্তারা উপকৃত হবেন।
-হুমায়ূন কবীর
মন্তব্য
সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া না থাকলেও কোন দেশ থেকেই গরুর মাংস আমদানি করা একেবারেই উচিৎ নয়। বাংলাদেশের এ খাত এখন বিকাশমান, কোরবানির গরুর চাহিদা এখন দেশের গরু থেকেই মিটছে, ভারত গরুর চালান বন্ধ করাটা আমাদের জন্য শাপে বর হয়েছে। এমতাবস্থায় খামাখা বাইরে থেকে মাংস আমদানি করাটা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
উপকূলে যেসব চর জাগছে, সেখানে যদি মিঠাপানির আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে মহিষ চাষ করা সম্ভব। ঘাসখোর মহিষের মাংস দানাখোর গরুর মাংসের তুলনায় স্বাস্থ্যকর। মহিষের দুধের পনির জামদানির মতোই বাংলাদেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক স্বত্বযুক্ত পণ্য হওয়ার কথা; ঠিকমতো এর নাম রটাতে পারলে এটা আন্তর্জাতিক বাজারেও সমাদৃত হবে। পিৎজার মতো পনির-পুলি একটা স্বতন্ত্র ঝটপটি (fast food) হিসেবে জায়গা করে নিতে পারে। মাংস কারখানায় মহিষের রক্ত সংগ্রহ করে জমাট বাঁধিয়ে এবং হাড় গুঁড়ো করে মাছ বা মুরগির খাবারের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে (যদি ধর্মীয় কারণে কোনো বাধা না থাকে)। আর চামড়া তো আছেই।
মহিষ একটা সম্ভাবনাময় পশু। দেখতে সুন্দর নয় বলে মহিষের জনপ্রিয়তা নেই। অথচ চাইলে মহিষকে ঠিকমত বাজারজাত করা যায়। গরুর মাংস বলে যেসব দোকানী মহিষের মাংস খাওয়াচ্ছে তারা জাতির অপকার করছে মনে হয় না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মহিষকে শাড়ি পরিয়ে দিলে তার শৈল্লে অলৌকিক বিদ্যুৎ-হিল্লোল খেলে যেতে পারে।
বাংলাদেশে পাঁচতারকা হোটেল এবং কিছু বড় বড় রেস্তোঁরা বিফস্টেক জাতীয় আইটেমটা আমদানীকৃত মাংস দিয়ে রান্না করে বলে জেনেছি। তারা এটা গর্ব করে প্রচার করে। কিন্তু কোন দেশ থেকে আমদানী সেটা জানি না। ওটা তেমন বড় মাপের আমদানী হবার কথা না। এখন যদি ব্রাজিলের সাথে চুক্তি করে বড় মাপের আমদানী শুরু হয়, তাহলে তো এই আন্তর্জাতিক ভেজালে নিশ্চিতভাবে কুপোকাত হবো আমরা। অন্য দেশে প্রত্যাখ্যান হওয়া বাতিল মাল আমদানী করার জন্য আমাদের অনেক ব্যবসায়ী সুযোগের সন্ধানে থাকে। এ ধরণের বাণিজ্য চুক্তি ওই ব্যবসায়ীদের জন্য পোয়াবারো হবে। বন্দর কাস্টমস ম্যানেজ করে যে কোন জিনিস দেশে ঢুকিয়ে দেয়া তাদের জন্য ডালভাত।
দেশে এখন গরুর বাম্পার ফলন, এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানী করার জন্য কেন মন্ত্রীকে চুক্তি করতে হচ্ছে বুঝলাম না। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য আর কোন আইটেম পাওয়া গেল না? ব্রাজিল থেকে বড় অংকের তুলা আসতো একসময়, এখন কী সেটা বন্ধ?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নতুন মন্তব্য করুন