ক্ষুধার্ত অণুজীব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১০/০৮/২০২০ - ৫:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

করোনার প্রার্দুভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সমগ্র বাংলাদেশও যখন ঘরের মধ্যে বন্দি জীবন যাপিত করেছিল, এদেশের হতদ্ররিদ্র মানুষের মুখে শুধু একটাই কথা ছিল- "করোনায় মরতে রাজি, কিন্তু ক্ষুধার জ্বালায় নয়"। হয়ত তাই কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য তাঁর "হে মহাজীবন" কবিতায় লিখেছিলেন –

"ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।"

সাধারণত, একজন স্বাভাবিক মানুষ তিনসপ্তাহ অনাহারে কাটাতে পারে, অতঃপর ক্ষিদে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

অন্যদিকে দেখা যায় যে, সমুদ্র তলদেশে থাকা কিছু অণুজীব আমাদেরকে হারিয়ে প্রায় কোনো খাদ্য ছাড়াই দশকোটি বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সম্প্রতি ন্যাচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত প্রবন্ধে গবেষকরা প্রকাশ করেছেন যে, প্রাগৈতিহাসিক অতিকায় সরীসৃপের সময়কাল থেকে সমুদ্র তলদেশের নিচে সুপ্ত থাকা অণুজীবদের যদি সঠিক পরীক্ষাগার পরিবেশে সঠিক খাদ্য দেয়া হয়, তাহলে তারা পুনরুজ্জীবিত এবং সংখ্যায় বাড়তে সক্ষম।

১০১.৫ বছরের পুরোনো পলি থেকে পুনরুজ্জীবিত অণুজীবগুলোর বিবর্ধিত ছবি। (ছবিসূত্রঃ জ্যামস্টেক)

কয়েক দশক ধরে, বিজ্ঞনীরা পূর্ববর্তী জলবায়ু, ভূত্বক গঠনের পাত তত্ত্ব এবং গভীর সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সমুদ্র তলদেশের নিচ থেকে প্রাচীন পলির নমুনাগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকায় নতুন এই গবেষণায় জাপান এজেন্সি ফর মেরিন - আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (জ্যামস্টেক), ইউআরআই গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ওশোনোগ্রাফি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কোচি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপান মেরিন ওয়ার্কসের গবেষণা দলটি, দশ বছর পূর্বে দক্ষিণ প্রশান্ত বলয় অভিযানের সময় সমুদ্রের সর্বনিম্ন উৎপাদনশীল এবং স্ব‌ল্পতম পুষ্টিযুক্ত অংশ থেকে প্রাচীন পলিগুলো জড়ো করেছিলেন।

"আমাদের প্রধান প্রশ্নটি ছিল যে এই জাতীয় পুষ্টি সীমিত পরিবেশে জীবনের অস্তিত্ব আছে কিনা, নাকি এটি একটি প্রাণহীন অঞ্চল"-বলেছেন ইউকি মরোনো, এই প্রবন্ধের প্রধান লেখক এবং প্রবীণ বিজ্ঞানী (জ্যামস্টেক)।

তিনি আরো বলেন যে, আমরা জানতে চেয়েছিলাম যে আন্তিক খাদ্যের অনুপস্থিতিতে অণুজীবগুলো কতসময় ধরে জীবন বজায় রাখতে পারে।

সমুদ্রতলদেশে বিদ্যমান পলির স্তর গুলো সাধারণত সামুদ্রিক তুষার (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ক্রমাগত আসা জৈব বর্জিতাংশ), ধূলিকণা, বায়ু এবং সমুদ্র স্রোতে আসা কণা সমন্বয়ে সৃষ্টি।আর এই পলির পরতে জীবনের ক্ষুদ্র স্বরূপ যেমন অণুজীবগুলো আটকে পড়ে।

গবেষণা দলটি, জোয়েডেশ রেজোলিউশন নামক খননকারী জাহাজের ভেতর থেকে, সমুদ্রতলদেশ থেকে ১০০ মিটার নিম্নের এবং সমুদ্র্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,০০০ মিটার নিম্নের অসংখ্য পলির কেন্দ্রস্থল সংগ্রহ করেছিলেন। বিজ্ঞানীরা সমস্ত কেন্দ্রস্থলে অক্সিজেনের উপস্থিতি ছিল বলে দেখতে পেয়েছিলেন। যা থেকে ধারণা করা হয়, যেসব পলল ধীরে ধীরে প্রতি দশ লক্ষ বছরে এক মিটার বা দুইয়ের চেয়ে অনধিক হারে সমুদ্রতলদেশে পুঁজিত হয়, সেক্ষেত্রে অক্সিজেন সমুদ্রতল থেকে বেসমেন্ট পর্যন্ত সমস্ত পথে প্রবেশ করে, যা বায়ুজীবী অণুজীবগুলোর অস্তিত্ব ভূতাত্ত্বিক সময় থেকে লক্ষ লক্ষ বছর পর্যন্ত সম্ভপর করেছে।
গবেষণার ফলাফলে আরো দেখা যায়, জীবাশ্মে বিদ্যমান জীবনের চেয়ে পলিলে থাকা অণুজীব বেশি সময় বেঁচে থাকে এবং তারা বৃদ্ধিও বিভাজনে সক্ষম।

ইউ আর আই গ্রাজুয়েট স্কুল অফ ওশেনোগ্রাফির অধ্যাপক এবং গবেষণার সহ-লেখক স্টিভেন ডি’হন্ডট বলেছেন, "আমরা জানতাম যে মহাদেশগুলির নিকটে গভীর পলির মধ্যে জীবন ছিল"। তবে আমরা যা পেয়েছি তা হল সমুদ্রতল থেকে গভীর অন্তনির্হিত পাথুরে বেসমেন্ট সমস্ত জুড়েই জীবন ছিল।

তিনি আরো বলেন, ফলাফল দেখে আমি কিছুটা সংশয়ে ছিলাম, কিন্তু আমরা দেখেছি যে ১০১.৫ মিলিয়ন বছর আগের পলিতে জমে থাকা ৯৯.১ শতাংশ অণুজীব এখনো জীবিত এবং খাদ্য গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।

প্রাচীন জীবাণুসমূহের বিকাশ, নিপুণতার সাথে পরিবর্তন এবং বৈশিষ্ট্যযুক্ত করার সদ্যবিকশিত উন্নত দক্ষতার জন্য, গবেষকদল অনুরূপ প্রক্রিয়া ও তীরের ভূতাত্ত্বিক বিষয়ক অন্যান্য প্রশ্নগুলোর রহস্য উন্মোচনে প্রয়োগ করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

মরোনোর মতে, "সমুদ্রতলদেশে থেকে নিচে জীবাণুগুলির জীবনের গতি ওপরের চেয়ে ধীর এবং এরই জীবাণুগুলোর বিবর্তন এর গতিও মন্থর"। আমরা বুঝতে চাই এই প্রাচীণ জীবাণু গুলো কিভাবে বা বিকশিত হয়েছিল, তিনি বলেছেন।

এই গবেষণাটি প্রতীয়মান করে যে, সমুদ্র তলদেশের কাছাকাছি জায়গা পৃথিবীতে জীবনের সীমা সন্ধানের জন্য দুর্দান্ত স্থান।


পরিভাষা
Sediment-পলি,পলিল
Microbes- অণুজীব
Plate tectonics-ভূত্বক গঠনের পাত তত্ত্ব
Near-আন্তিক


সূত্রঃ
https://phys.org/news/2020-07-deep-sea-microbes-dormant-million.html
https://edition.cnn.com/2020/07/28/world/ancient-sea-microbes-survive-scn-trnd/index.html


পপি দেবী
অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ছবি: 
01/06/2007 - 1:46পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

ভালো লাগল। খুবই কৌতূহলোদ্দীপক পর্যবেক্ষণ। আরো লিখছেন ত?

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অণুজীববিজ্ঞান নিয়ে লেখার জন্য সচলায়তন চমৎকার জায়গা। সচলায়তনে স্বাগতম।

লেখা সুন্দর হয়েছে, সময় নিয়ে যত্ন করে লিখেছেন, বোঝা যায়। তবে পরের লেখাগুলোর জন্য বলি, কিছু বাক্য পড়তে কষ্ট হয়েছে, সম্ভবত সরাসরি অনুবাদ করেছেন বলে। আপনি হয়তো এরকম বাক্য প্রথমে নিজে বুঝে নিয়ে, নিজের মতো করে পাঠকের জন্য লিখতে পারেন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অঘটনঘটনপটীয়সী এর ছবি

গুছিয়ে লেখা।অনেক বড় মনে হয়েছিল প্রথমে,পড়তে গিয়ে বিরক্ত হইনি।লেখনির মধ্যে যত্ন,ধৈর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।আরো চাই এমন ব্লগ।

সোহেল ইমাম এর ছবি

চমৎকার লেখা। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

একটা প্রাসঙ্গিক কৌতূহল, যে অণুজীবগুলি কোনরূপ খাদ্যগ্রহন ছাড়াই দশ কোটি বছর বেঁচে আছে, এখন খাদ্য গ্রহনের পর তারা আরও কদিন বেঁচে থাকবে?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাহ, অণুজীব অনাজ্জদাকে ট্যাগাতে এসে দেখি উনি আগেই তশরিফ রেখে গেছেন।

সচলে বোধহয় বহুদিন পরে কেউ অণুজীব নিয়ে লিখলেন। আরো লিখুন! পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

খালি চেগিয়ে এসে টেগিয়ে গেলে হবে? নিজে লিখা ফাটায় ফেলে দেখায় দেন!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পাচনকর্ম সমাপ্ত। আসিতেছে গরম গরম।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।