বিস্তারিত থাক
শুধু বলি, লিফ্টের ভিতরে আমরা তিনজন ঠেসাঠেসি, নিঃস্পন্দ নির্বাক।
হিংস্র পত্নী প্রাণপ্রিয়া হোসনে আরা অদূরে জ্বলন্ত চোখে কটমট
আমা পানে চেয়ে, বিড়বিড়ায়ে কী যেন চলিছে বলি।
তার পাশে ততোধিক জ্বলন্ত যুগল আঁখি পিটপিটায়ে চেয়ে আছে
নিতম্বিনী রাবেয়া পাটেল। হোসনে বিবির সে সহকর্মিনী। নিকটেই বাসা।
সুন্দরী। তনুটি খাসা।
আলগোছে দেখে লই, হোসনে আরা খন্তাখানি লগে লয়ে আনিয়াছে কি না।
নীরবতা ভেঙ্গে
গলা খাঁকরাইয়া বলি, এলিমেন্টারি ডিয়ার বিবি!
বলে গেছে শার্লক ভাই,
অসম্ভবরে বাদ্দিলে যা কিছু তলানি থাকে, আসল বেপারটা উহাই।
অকুস্থলে আছি আমরা তিনজন, আছে একটি সুডৌল নিতম্ব, আর
চিমটি একখানা
আছে একটি বন্ধ লিফ্ট, কারেন চলিয়া গিয়া এক মিনিট অন্ধকারখানা
জেনারেটরের তালে বাত্তি ফের জ্বলিতেছে, তার তলে মোরা
একে অপরের পানে ঝুটা ইলযাম দিয়া করিতেছি অন্যায্য নখড়া।
এ কেমন গ্রাম্য কদাচার?
এভাবে কি সত্য মিলে কভু, কভু চিনা যায় আসল বেপার?
নারী দুটি রক্তচক্ষু মেলে মোরে দেখে শুধু।
পাইপের অভাবে আমি একটি সিভিটা লয়ে মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ টানি
লিফ্টের ঠেসাঠেসি পরোয়া না করে করি কিছুক্ষণ পায়চারি
তারপরে বলি,
নিতম্বের কপিরাইট একান্ত রাবেয়া পাটেলের। আপাতত এটুকুই সত্য।
চিমটি তাতে কে দিয়াছে, আদৌ দিয়াছে কি না, সবই অনুমান।
এমনও তো হতে পারে, রাবেয়া পাটেল হুদাহুদি
অন্ধকারে “উফ এ কী” “উফ এ কী” বলে চিক্কুরিয়া
আলো ফিরে আসতেই আমা পানে চাহিল সন্দেহি?
তাছাড়া দাগদুগ কিছু চাক্ষুষ না দেখিলে প্রমাণই
চিমটি সত্য সত্য পড়িয়াছে তার নিতম্বে... নিশ্চিত কী করে জানি?
এ কথা বলিতে হোসনে আর রাবেয়া পাটেল
বন্ধ লিফ্টে উঠিল ফুকারি যেন বেগুনের বিয়েফেফ ভোজ্য তেল।
সান্ত্বনা গেলাম দিয়া যতক্ষণ শান্ত না হয় তারা
বলি, সবই সম্ভাবনা। দন্ত কিড়িমিড়ি দেয় হোসনে আরা।
আমি আরও কিছুক্ষণ
সিভিটা চাবাই। তারপর বলি, দেখ
লিফ্টের এক পাশে আমি, আমার দক্ষিণে
রাবেয়া পাটেল আর তার ডানে হোসনে আরা
গাদাগাদি ঠেসাঠেসি
আমি যদি হয়ে থাকি অপরাধী, তবে
রাবেয়া পাটেল কেন নিতম্বের দক্ষিণ গোলার্ধ লয়ে বেদনায় পেরেশান রবে?
তাছাড়া আমি তো কবি, তদুপরি পেশাদার, আমি কভু পারি
বেগানা নারীর সুদূর পাশ্চাত্যে অন্ধকারে অনুমতি ব্যতিরেকে চিমটি দিতে? কভু নাহি, এ তো এলিমেন্টারি।
নিতম্বিনী রাবেয়ার দক্ষিণ নিতম্ব ছিলো হোসনের নিকটে
আপাতত এটুকুই সত্য। আর বাদবাকি যাহা, কে জানে তাহার কতটুকু রটে, আর কত বটে?
এইটুকু বলিতেই নারী দুটি রাগে পড়ে ফেটে
হোসনে অভ্যাসবশে হোলস্টারে খোঁজে ঘরে ফেলে আসা খন্তাখানি
রাবেয়া পাটেল মুঠি পাকাইয়া করে ফোঁসফাঁস কিন্তু সন্দিহান চোখে চায় হোসনে পানে
আমি হাত তুলে বলি, কিন্তু উহা অসম্ভব।
হাজির তিনজনই আমরা নিষ্পাপ, তিনজনই ঘটনার শিকার।
হোসনে আর পাটেল কয় চিক্কুরিয়া, দোষখানি তবে কার? উত্তর এক্ষণ দিবি!
আমি খুলি দ্বিতীয় সিভিটা, বলি এলিমেন্টারি মাই ডিয়ার বিবি ও হাবিবি।
অন্ধকার লিফ্টে এসে সুন্দরীর নিতম্বে আঘাত
করতে পারে একমাত্র মোছাদের হাত।
নারী দুটি চেয়ে রয়, যেন তারা হারাল জবান
সান্ত্বনা দেই উহাদেরে। বলি তোমরা কী বা বুঝ, দিন্দুনিয়া কুথা গেছে আজ?
এ যে নিরাবেগ এস্পিওনাজ।
রাবেয়া পাটেল তুমি ফেঁসে গেছ নেতানিয়াহুর চালে
হয়ত ফেসবুকে তার নামে বলছ উল্টাপাল্টা
সেই রাগে সে হয়তো তেলাবিবে বসে দিছে মোছাদ লেলাইয়া।
শালার পুতেরা তাই আজ সাঁঝে আমাদের ফ্লেটবাড়ি এসে
করেছে এম্বুশ। অন্ধকারে চুপিসারে লিফ্টে ঢুকে চিমটি কেটে আবার পলাইয়া গেছে।
তারা তো এসবই করে। সারাদিন, সারা দুনিয়ায়। গুপ্তহত্যা, চোরচামারি, তুলকালাম সাঁস-বাহু...
আজ যদি যুক্তিতর্ক সুস্থ বিবেচনা বিশ্লেষণ প্রভৃতি না খাটান হত তবে আমারই ঘটিত বদনাম। মাঝখান দিয়ে বেঁচে যেত মোছাদ ও নেতানিয়াহু।
হোসনে ও রাবেয়া রহে নিরুত্তর, বিস্ফারিত আঁখি।
আমিও চুপচাপ থাকি।
এমন সময় আসে কারেন ফিরিয়া
থেমে যায় জেনারেটরের ঘটঘট।
বাতিখানি যায় নিভি।
অন্ধকারে দুটি নিদারুণ চটকনা এসে পড়ে মম দুই গালে
বুঝি না কে দিল, হাবিবি না বিবি।
লিফ্ট ও দিমাগের বাত্তি ফিরে এলে পরে নাকেমুখে পানি ছিটি সান্ত্বনা দেয় মোরে জালেম দু’নারী
এ তো এলিমেন্টারি।
মোছাদ দিয়াছে চিমটি, চটকনাও দিয়াছে আবার
অসম্ভবটা বাদ্দিলে যা কিছু তলানি থাকে, ঐটাই আসল বেপার।
=========================
নামঃ খেলায়েত
পেশাঃ কবি
মন্তব্য
ডিয়ার লর্ড
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লর্ডের কল বাতাসে নড়ে।
=======
নামঃ খেলায়েত
পেশাঃ কবি
এলিমেন্টারি ডিয়ার বিবি!
facebook
দারুন ।
যদিও বেক্তিগত জীবনে আমি একজন ক্লাস্ট্রোফোবিক মানুষ,উপরন্তু শ্রী এম নাইট শ্যামলাল প্রযোজিত ও পরিবেশিত 'ডেভিল' চলচ্চিত্র দেখার পরে লিফটে উঠতে আরো ভয় পাই, এরপরেও মোসাদহস্তে খেলায়েত কবির এই উৎপীড়নের কাব্য একেবারে স্বীয় মর্মমূলে গিয়ে শেলসম বিধলো।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
মারা গেলাম!
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
খুশবন্ত সিং এর ছড়ার কয়েকটি লাইন থেকে অনুপ্রাণিত মনে হয়। ছড়াটির নাম "ফরেইন হ্যান্ড"
https://books.google.com/books?id=mEVC3iNjd3AC&pg=PA130&lpg=PA130&dq=khushwant+singh+foreign+hands&source=bl&ots=a1ZS-VkBx6&sig=ACfU3U35ie_tLx6hBtgdofY_jMe46X4kow&hl=en&sa=X&ved=2ahUKEwi8kOrej6brAhWVhHIEHZPnDKUQ6AEwAXoECAQQAQ#v=onepage&q=khushwant%20singh%20foreign%20hands&f=false
অবিশ্বাস্য! মানে কবি প্রতিভা! সাথে এই হিউমার! পরাবাস্তব প্রায় ---
এক দফা এক দাবি - সচল হোক খেলায়েত কবি (পেশাদার)
আন্নে জ্য়াতা?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
শেষটা দারুণ জমিয়ে দিয়েছেন! ভীষণ ভালো লেগেছে!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অতি সঙ্গত কথা। এ বিষয়টার সুরাহা আগে হওয়া দরকার আগে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভালো লেগছে। শুভকামনা।
মোজাক্কির রিফাত
ভালো লেগেছে।ছন্দমিলও সুন্দর।
©অধীতি
নতুন মন্তব্য করুন