• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

কালের কপোলতলে নয়নের জল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০২০ - ৩:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঠিক পাঁচ বছর আগে একবার মনস্থির করলাম, হিমালয়ের বরফ ছুঁয়ে দেখতে হবে। তখনও ভার্সিটি স্টুডেন্টের তকমা গায়ে, আয় খুব বেশী নয়। তবু ভাবলাম, জীবন আর কয়দিনের! ইচ্ছাগুলোর তালিকা করে ফেলে একে একে সব করে ফেলা যাক। সবচেয়ে কাছে হয় বঙ্গদেশের উত্তরে গেলেই। সিকিম বা সান্দাকফুতে সময়মত গেলেই বরফ মিলবে। এছাড়া যাওয়া যায় নেপাল, কিংবা উত্তরপ্রদেশের দেরাদূন। তবে ছাত্র মানুষ, বিমান ভাড়ার টাকা নেই। অনেক নীলনকশা করে প্ল্যান হল, দিল্লী থেকে শিমলা হয়ে মানালি, হিমালয়ের কোলের ভেতর একদম। ট্রেনে কয়েকদিনের জার্নি। ট্রেন যাবে কলকাতা থেকে ঝাড়খণ্ড, বিহারের মধ্য দিয়ে, লক্ষ্মৌ, আগ্রা হয়ে দিল্লী। আমি প্রকৃতিবিলাসী মানুষ, ইতিহাস বা স্থাপত্যকলা থেকে অনেক বেশী টানে নিসর্গ ও নির্জনতা। তাই কোনও প্লানই ছিল না যে দিল্লী, লক্ষ্মৌ, বা আগ্রায় থামার। চোখের সামনে শুধু হিমালয় আর তুষার!

ট্রেনের যাত্রা খারাপ ছিল না। এত দীর্ঘযাত্রায় কত রাজ্যের কতরকম মানুষ এসে সঙ্গী হল। ভারত বিশাল দেশ, বিচিত্র তার সংস্কৃতি আর মানুষ। সে গল্প অন্য সময়ের জন্য তোলা থাক। রাতে দিল্লী পৌঁছানোর কথা, পরদিন বিকাল চারটায় মানালির উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হবে এজেন্সির মাধ্যমে। যখন বিকালের আলো পড়ে আসছে, সাথের বন্ধু Nayan তার ফোনের জিপিএস ঘেঁটে বলল আগ্রার কাছাকাছি চলে এসেছি। রেললাইন নাকি তাজমহল থেকে বেশ কাছে, ট্রেন থেকে দেখা যাওয়ার কথা। পড়ন্ত বিকাল আমার খুব প্রিয় সময়, এমনিতেও দূরে তাকিয়ে থেকে সন্ধ্যা নামা দেখি। তাজমহলের কথা শুনে ট্রেনের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম ক্যামেরা হাতে। দেখা গেলে স্মৃতি ধরে রাখব। তারপর একসময় দূরে হালকা কুয়াশাঘেরা পটরেখায় সত্যিই দেখা দিল সেই পরিচিত অবয়ব, সন্ধ্যার কপোলতলে ছায়া-মৃদুজ্জ্বল, সে তাজমহল!

দৃশ্যপট থেকে তাজ হারিয়ে যেতেই, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। রাতটা দিল্লী না গিয়ে আগ্রায় নেমে পড়লে কেমন হয়? ভোরে তাজমহল কাছ থেকে দেখে, নিজেদের মত দিল্লী পরে যাওয়া যাবে। যদিও রিস্কি হয়, আগ্রায় থাকার কোনও প্ল্যান ছিল না, পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে দিল্লী না পৌঁছালে হিমালয় আর দেখা হবে না, এজেন্সির টাকাও মার যাবে। সাথের বন্ধুও দ্বিধায় পড়ে গেল। তবে পথের দূরত্ব, রুট, ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে আমার মনে হল এইটুকু ঝুঁকি নেওয়াই যায়, সব ঠিকঠাক থাকলে পরদিন দুপুরের মধ্যে ঠিকই দিল্লী পৌঁছাবো। ভাবার সময়ও নেই বেশী, ট্রেন ততক্ষণে আগ্রা স্টেশনে থেমে গেছে। তাড়াহুড়ো করে পিঠের বিশাল রুকস্যাক নিয়ে নেমে পড়লাম দুই বন্ধু।

আগ্রা সিন্ডিকেটের শহর। এখানে অটোওয়ালা, হোটেল, স্যুভনির শপ, রিকশা, সবই একে অপরের সাথে সিন্ডিকেটে জড়িত। একে অপরের কাছ থেকে কমিশন পায়। তাই চোখকান খোলা না রাখলে আর সতর্ক না হলে ঠকার চান্স বেশী। হোটেল খুঁজতে গিয়েই সে শিক্ষা হয়ে গেল। নীতিগত কারণে আমি একান্ত বাধ্য না হলে হিন্দী বলি না কক্ষনো। ইংলিশে বিভিন্ন হোটেলে মুলোমুলির পর হোটেল ভাড়া প্রায় তিনভাগের একভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছিলাম। আগ্রায় রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতাও তোলা থাক অন্য গল্পের জন্য। শুধু জানিয়ে রাখি, আমার বন্ধুর বড় শখ ছিল মোঘলাই বিরিয়ানী খাওয়ার, তো আগ্রার এক হোটেলে যে বিরিয়ানি মিলল, সেটা খাওয়ার পর তার সে শখ জন্মের মত মিটে যাওয়ার কথা! পরদিন খুব ভোরে সূর্য ওঠার আগেই গিয়ে হাজির হলাম তাজমহলের গেটে।

ঢোকার ফী তখন ছিল ভারতীয়দের জন্য কুড়ি টাকা, বিদেশীদের জন্য পাঁচশ টাকা। আমার চেহারা দেখে অবশ্য বিদেশী ভাবার কারণ নেই। সাথের বন্ধুর সাথে তাই একই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ছাত্র মানুষ, পাঁচশ টাকায় টিকেট কাটা কঠিন। অবলীলায় পার হয়ে গেলাম বিশ টাকা দিয়েই। লাল বেলে পাথরের গেট ও স্থাপনা পার হয়ে তাজমহলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

তাজমহল তখনও বেশ খানিকটা দূরে। মুঘলদের বিখ্যাত চার খোপের বাগান পার হয়ে তবে সেখানে পৌঁছাতে হবে। আমরা একদম প্রথম দলের দর্শনার্থী, তাই ভীড় কম। সূর্য তখন সবে সোনালি আলো নিয়ে উঁকি দিচ্ছে। তাজমহল শ্বেতশুভ্র মার্বেল দিয়ে তৈরি। তাই দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোর পার্থক্যের কারণে এর রঙ বদলে যায়। ভোরের সূর্যের আলো পড়ে তাজমহল তখন সোনার রঙ নিয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে ধীরে ধীরে, ভোরের কপোলতলে দীপ্ত স্বর্নোজ্জ্বল, সে তাজমহল!
এই সেই তাজমহল, লক্ষাধিক মানুষের বাইশ বছরের শ্রম আর এক সম্রাটের ইচ্ছা। শাহজাহান তার স্ত্রী মুমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে মার্বেলের এই বিশাল কারুকার্য তৈরির আদেশ দেন বলে ইতিহাসে ধরে নেওয়া হয়। শাহজাহানের আগ পর্যন্ত মুঘল স্থাপত্যে লাল বেলে পাথর ব্যবহার করা হত বেশী। যেমন, আগ্রা ফোর্ট, লালকেল্লা, ফতেহপুর সিকরি, হুমায়ূনের সমাধি ইত্যাদি। তবে শাহজাহান স্থাপত্যকলায় বিশেষ অনুরাগী ও সমঝদার ছিলেন। তিনিই প্রথম মার্বেল পাথরের ব্যবহাররীতি শুরু করেন। আর তার সর্বোচ্চ উৎকর্ষতার নাম, তাজমহল।

তাজমহল লুটের কবলে পড়েছে বারবার। যে জৌলুসে এর সূচনা হয়েছিল তার অনেকটাই হারিয়ে গেছে লুটেরাদের কবলে। কখনও ইংরেজ, কখনও বা স্বদেশীয় দস্যুদের হাতে লুণ্ঠিত হয়েছে এর বহুমূল্য সম্পদ। তাজমহলের ভেতরের মণিমুক্তা খচিত গালিচা, দেয়ালচিত্র, দেয়ালের মূল্যবান রত্ন হারিয়ে গেছে বহু আগেই। তাজমহলের বিশাল প্রধান ফটক ছিল রূপার তৈরি, সমাধির জালি ও প্রধান গম্বুজের শিখর নাকি সোনার ছিল একসময়। এখন ব্রোঞ্জ। ইংরেজ আমলে লর্ড বেণ্টিকের আমলে একবার এমনকি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তাজমহল ভেঙে এর মার্বেল কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়ার। তবে সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে না পাওয়ায় সেই কুচিন্তা থেকে সরে আসে বেন্টিক ও তার দলবল। আরেক ইংরেজ কার্জন ভাইসরয় থাকা অবস্থায় তাজমহলের ব্যপক সংস্কারকার্য হাতে নেন, বাগানটিও আবার সাজান। যদিও বাগানটা আমার ভাল লাগেনি। বিশেষ করে মূল গেট থেকে তাজমহল পর্যন্ত ফোয়ারার সারির পাশে যে লম্বা সরু গাছগুলো আছে, সেগুলো মুঘল স্থাপত্যের সাথে যায় না বলেই আমার মত। এছাড়া এই গাছগুলো গেট থেকে তাজমহলের বিশালত্বের দৃষ্টিরেখায়ও বাঁধার সৃষ্টি করে। জানি না এগুলো কার্জনের কাজ কিনা। কার্জন তাজমহলের মার্বেলের শিল্প দেখে এতটাই অনুপ্রাণিত ছিলেন যে কলকাতায় ইংরেজদের কীর্তিস্বরূপ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরির নির্দেশ দেন একইরকম মার্বেলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঁয়ষট্টির ভারত-পাক যুদ্ধ, ও একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাজমহল ঢেকে দেওয়া হয় ধাতব স্ট্রাকচার ও ক্যামোফ্লাজ দিয়ে যাতে শত্রুর বিমান বোমা হামলা না করতে পারে সহজে। তবে তেমন কোনও হামলা না হলেও, দূষণের হামলায় তাজমহল হয়েছে জর্জরিত। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিউশন, যমুনা নদীর বর্জ্য তাজমহলের ঝলমলে শরীর মলিন করেছে বারবার। মাঝে মাঝে ঘষামাজা চলে, আমরা যখন গিয়েছি তখনও এর দুটি মিনারে ঘষামাজা চলছিল। সেই ধাতব ফ্রেমে শত শত বাঁদরের ঝোলাঝুলি চলে!

একসময় তাজমহলের মূল বেদীতে পৌঁছলাম। গেলাম ভেতরেও। সেখানে সম্রাট ও মমতাজের সমাধির রেপ্লিকা রাখা আছে। মূল সমাধি বেজমেন্টে, সেখানে যাওয়া নিষেধ। তাজমহল যে কী বিশাল সেটা আসলে ছবিতে বোঝা কঠিন। উপরে উঠে তাজমহলের পিছনেই আছে যমুনা নদী, মৃতপ্রায়। আর তাজমহলের একদম সোজাসুজি নদীর ওপারে, ঠিক একই সরলরেখায় ও একই আয়তনে আছে আরও একটি বাগান ও কিছু ধ্বংসাবশেষ। অনেকে বলে শাহজাহান তাজমহলের অনুরূপ আরেকটি কালো তাজমহল বানাতে চেয়েছিলেন ওখানে। এর ঐতিহাসিক সত্যতা তেমন না থাকলেও, ঠিক একই সরলরেখায় একই বিস্তার নিয়ে তৈরি করা ওই জায়গা নিয়ে মুঘলদের যে কোনও প্ল্যান ছিল সেটা প্রশ্নাতীত।
আমাদের সময় কম, দিল্লী যাওয়ার তাড়া আছে। তার আগে যেতে হবে একবার আগ্রা ফোর্টে। প্রায় হাজার বছরের পুরনো এই ফোর্টেই শাহজাহান তার শেষ আট বছর বন্দী ছিলেন। বন্দী করেছিল নিজেরই ছেলে আওরঙ্গজেব। সেই বন্দীদশায় শাহজাহান দূর থেকে দেখতে পেতেন এই অমরকীর্তি তাজমহল। তার সঙ্গে দেখা করা ও সেবাযত্নের জন্য একজনই ছিলেন শুধু পাশে, তার ও মমতাজের বড় কন্যা জাহানারা। প্রেমের সমাধি হিসেবে খ্যাত তাজমহলের দিকে তাকিয়ে শাহজাহানের একবারও কি মনে পড়েছিল যে জাহানারার প্রেমিককে তিনি কীভাবে হত্যা করেছিলেন? জাহানারা আজীবন চিরকুমারী থেকে গিয়েছিলেন।
ফেরার সময় যখন শেষবারের মত ফিরে তাকালাম এই সৌধের দিকে, তখন সূর্য বেশ উজ্জ্বল। আগের স্বর্ণচ্ছটা মুছে ফেলে তাজমহলও তখন ধবধবে সাদা হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে। কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল, সে তাজমহল!

-সীমান্ত রায়


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

সুন্দর সব ছবি। আপনার ভ্রমণকাহিনী পড়ার আগ্রহ থেকে গেলো। আরো লিখবেন আশা করি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

ওডিন এর ছবি

দারুণ লাগলো।

সেই ছোটবেলায় আগ্রা গিয়েছিলাম। তখন তাজমহলের থেকে আগ্রা ফোর্টের শানশওকতই বেশি টেনেছিলো। আপনার লেখা পড়ে আবারও আগ্রা যাওয়ার আগ্রহ (আগ্রায় আগ্রহ ) জেগে উঠলো। :)

লেখালেখি আর ভ্রমণ, দুটোই জারি থাকুক।

সত্যপীর এর ছবি

তারপর দিল্লী কোথায় কোথায় ঘুরলেন? ফতেপুর সিক্রি যান নাই? বিস্তারিত লিখুন, পড়ি।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে, সেই সাথে নিজের প্রথম তাজমহল দেখার স্মৃতিও ফিরে এলো। ভ্রমণে নামলে এমন টুকটাক ঝুঁকি নিলেই অপূর্ব সব স্মৃতির জন্ম হয়। ভ্রমণ চালু থাকুক, সাথে লেখালেখি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চমৎকার। সীমান্ত পেরুতে আর লিখতে থাকুন।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।